দুর্নীতি শব্দটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। এর আগে এককভাবে কোন শব্দ এমন প্রসিদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায় না। কারণ বোধ হয় একটাই যে, দুর্নীতি বিষয়টি আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রত্যেকের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হস্তক্ষেপে অনেক স্বাস্থ্যবান দুর্নীতির অকাল মৃত্যু হয়েছিল। অনেক জনদরদী খ্যাত, গণতন্ত্রের বিখ্যাত সব নেতা-নেত্রী অসৎ পয়সাকড়ি বাদ দিয়ে দিন, সপ্তাহ, মাস গুণছিল শ্রীঘরে বসে। অনেক উদীয়মান নেতা স্বপ্ন দেখা ভুলতে বসেছিল। ফলে আমাদের মধ্য থেকে হারাতে যাচ্ছিল অনেক ফুলের মত চরিত্র, সত্যের পথে নির্ভীক, জনগণের দুঃখ-দুর্দশায় একনিষ্ঠ অংশীদার (?) এমন অনেক নেতৃবর্গ। তারা টের পাননি দেশ ও জাতির মুখ ও সমৃদ্ধির কথা ভাবতে ভাবতে কিভাবে নিজেরাই সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন। অনেকে নিজেদের সম্পদের পরিমাণও জানতেন না। পরবর্তীতে জেনে অনেকে যে অাঁতকেও উঠছেন, সে কথাও জোর দিয়ে বলা যায়। সেই অর্থে বলা যায়, জাতির কর্ণধারদের যদি দুর্নীতির কারণে দমন করতে হয়, তাহ’লে দুর্নীতি শব্দটি তো তারকা খ্যাতি পেতেই পারে।

দেশ স্বাধীনের পর প্রথমে সামরিক শাসন পরে স্বৈরশাসনের মূল উপজীব্য কি ছিল তা নতুন প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট। কিন্তু দীর্ঘকাল হ’তে চলে আসা বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে মূল রশদ ছিল দুর্নীতি তা এখন দিবালোকের মত পরিষ্কার। গণতান্ত্রিক শাসনামলে দুর্নীতিতে এদেশ কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকলেও দুর্নীতিলব্ধ মুনাফার অধিকাংশই কিন্তু লুটেছেন শীর্ষস্থানীয় কিছু রাজনীতিবিদ। জনসাধারণ দুর্নীতির মাধ্যমে এই পুকুর চুরির বিষয়টি বুঝতে পারলেও তাদের করার কিছু নেই। দুর্নীতিই যে ‘অদৃশ্য ভুত’-এর বেশে গণতন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি একথা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই।

দেশের প্রধান দু’টি দল ও তাদের নেতৃবৃন্দ তাদের পারস্পরিক কোন্দল রেষারেষির ফল কতটুকু নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করেছেন জানি না। তবে একথা সত্য যে, দেশের জনগণকেই এর মূল্য দিতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। রাজনীতিবিদদের উগ্র রাজনৈতিক রোষাণলে কত জীবন, স্বপ্ন আর আশা-আকাংখার সমাধি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস এবং বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধে থমকে দাঁড়িয়েছে নাগরিক জীবন, ধ্বংস হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো। কিন্তু এসবের নীরব দর্শক হয়ে জনগণ কেবল প্রত্যক্ষ করছে। কারণ তাদের করার কিছু নেই। যারাই ক্ষমতায় গেছেন, আলাউদ্দীনের চেরাগ ধরা দিয়েছে তাদের হাতে। মুখে জনগণের মেজর নানাবিধ বুলি আর অন্তরে দুর্নীতি নিয়ে তারা চলে গেছেন জনগণের নাগালের বাইরে। বিরোধীদল রাস্তা-ঘাট করে বেড়িয়েছে মিছিল-মিটিং। একঘেয়েমি কাটাতে ডাক দিয়েছে হরতাল-অবরোধের। আমাদের দেশে জনগণই ক্ষমতার উৎস নামে বহুদলীয় গণতন্ত্রের এই তো হ’ল চিরাচরিত দৃশ্য।

একটা প্রবাদ প্রায়ই শোনা যায়। তাহ’ল ‘রাজনীতি নয়, পেটনীতি’। রাজনীতিবিদ হ’ল নেতাদের পোশাকি নাম।  আর তাদের মূল কাজ হ’ল নিজের পেট পূর্ণ করা। তাদের পেটেরও আয়তন বা সীমা-পরিসীমা নির্ণয় করাও কঠিন। তাদের কুকীর্তি (দুর্নীতির ভাষায় সুকীর্তি) দেশকে বারংবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন সহ যে সামগ্রিক অবকাঠামোর অবনতি ঘটিয়েছে, এই জাতি কোন দিনে তা পূরণ করতে পারবে না।

বন্যা, প্লাবন ও ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের মানুষ যখন অসহনীয় বিপর্যয়ের মুখে পড়ে, প্রিয়জন ও সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় যখন তাদের দিন কাটে। গায়ে কাপড় থাকে না, ঘরে খাবার থাকে না, অনেকের মাথা গোজার ঠাইও থাকে না, খোলা আকাশের নীচে রাত্রি যাপন করতে বাধ্য হয়, তখন এই দুর্যোগকবলিত মানুষদের নিয়ে দেশের একশ্রেণীর নেতারা ব্যবসা ফেদে বসেন। দুর্গত মানুষের জন্য আগত ত্রাণ ও বৈদেশিক সাহায্য ভাগ-বাটোয়ারায় মেতে ওঠেন অনেকেই। অবশেষে এসব সাহায্যের ছিটে-ফোঁটাই ঐসব অসহায় মানুষদের ভাগ্যে জোটে। ফলে দুস্থরা, ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে আরো অভাব-অনটনে পড়ে। অন্যদিকে এদেশের একশ্রেণীর নেতা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে ওঠেন। এই হ’ল আমাদের দেশের গণতন্ত্রের আসল চেহারা। সুতরাং এদের এসব কর্মকান্ডকে রাজনীতি না বলে পেটনীতি বলাই শ্রেয়। ফলে দেশের জনগণ যারা রাজনীতিকে পেটনীতি নয়; বরং রাজক্ষমতাকে আমানত হিসাবে নিতে পারে তাদেরই ক্ষমতায় দেখতে চায়। ইসলামই পারে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে, পারে দেশ ও জাতির সত্যিকার কল্যাণের পথ দেখাতে। সুতরাং আসুন, আমরা ইসলামকেই আমাদের দেশ ও জীবন চলার সংবিধান হিসাবে গ্রহণ করি। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!!

মুহাম্মাদ আহসান হাবীব

মিয়াপুর, চারঘাট, রাজশাহী।






আরও
আরও
.