আসামের চিঠি
আমার নাম এ. কে. মহিউদ্দীন আহমাদ। আমার বাড়ী ভারতের আসাম রাজ্যের হাইলাকান্দি যেলাতে। ভারতের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত আমাদের অঞ্চলটিকে বরাক উপত্যকা বলা হয়। হাইলাকান্দি, শিলচর ও করিমগঞ্জ এই তিনটি যেলা নিয়েই গঠিত বরাক উপত্যকা। করিমগঞ্জেই বাংলাদেশের সীমানা। বরাক উপত্যকার জনসংখ্যা ১৫ লক্ষের অধিক। তার মধ্যে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ মুসলমান। দুঃখের বিষয়, এখানকার মুসলমানরা ঈমান-আক্বীদা ও আমল-আখলাকে শতকরা ৯৯ শতাংশই দেওবন্দী ও বেরেলভী মতবাদে বিশ্বাসী। দেওবন্দীরা নিজেদেরকে সংস্কারপন্থী ও বেরেলভীদেরকে বিদ‘আতী মনে করেন। দেওবন্দীদের মধ্যেও আবার তিনটি গ্রুপ আছে। আনুমানিক তিন থেকে চার শত লোক আছেন জামায়াতে ইসলামী। আমার পারিবারিক আক্বীদা অনুযায়ী আমি প্রথমে বেরেলভী পন্থী ছিলাম। পরে সংস্কারপন্থী দল হিসাবে দেওবন্দী পীরের কাছে মুরিদ হ’লাম। বই পড়ার খুবই অভ্যাস ছিল। সেহেতু মওলানা আব্দুর রহীমের ‘সুন্নাত ও বিদ‘আত’ বইটি পড়ে বুঝতে পারলাম দেওবন্দী-বেরেলভী সবাই বিদ‘আতী। তখন থেকেই জামায়াতে ইসলামীর বই-পুস্তক পড়া শুরু করলাম এবং তাদের প্রোগ্রামে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। তখন আমার কাছে কেবল জামায়াতে ইসলামীই পূর্ণ মুসলমান দল বলে মনে হ’ল। প্রায় পাঁচ বৎসর জামায়াতে কাজ করার পর ওরা আমাকে ‘রুকন’ হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিল। আমি ব্যস্ততার কারণে কিছু সময় চাইলাম। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবাণী, তিনি আমাকে হেদায়াতের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। আজ থেকে প্রায় দু’বছর আগে একদিন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই পেয়ে যাই ‘আত-তাহরীক’ ও ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকা। আমার জীবনের সমস্ত কিছুকেই বদলে দিল এই দু’টি পত্রিকা। ভাল করে বুঝতে পারলাম যে, আমি আসল জিনিষের নাগাল পেয়ে গেছি। সেই থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় দু’শোর বেশী বই-পুস্তিকা ডাউনলোড করে পড়লাম এবং পত্রিকা দু’টি নিয়মিত পড়তে থাকলাম। এমন এক পরিস্থিতিতে পড়লাম কাকে কি বলব কিছুই ঠিক করতে পারি না। আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করে প্রায় ছয়-সাত মাস পরে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলাম যে, আমি আহলেহাদীছের সন্ধান পেয়েছি। তোমরা কি দেখবে আমি কি সংগ্রহ করেছি? বেশীর ভাগ বন্ধু ‘আহলেহাদীছ’ শব্দটি কি বুঝল না এবং তাদের মধ্যে কোন উৎসাহ জাগল না। পাঁচ-ছয় জনকে কিছু বই-পুস্তক দেওয়া শুরু করলাম। তারাও আমার মত উৎসাহী ছিল বলে বিষয়টি বুঝতে পারল এবং গ্রহণ করে বলল, তুমিতো আসল ইসলামের ঠিকানা পেয়ে গেছ। তন্মধ্যে একজন টাইটেল মাদ্রাসার মুহাদ্দিছ আমার বাড়ীতে আসা-যাওয়া করতেন। তিনি বেরেলভীদের মাদ্রাসায় চাকরী করতেন। কিন্তু চিন্তাধারা ছিল জামায়াতী। তাই তার সঙ্গে আলোচনা করায় তিনি কিছুটা উৎসাহী হ’লেন। এই সুযোগে তাকে আমি কিছু বই ও পত্রিকা দু’টি নিয়মিত দেওয়া শুরু করলাম। আল্লাহ পাক তাকেও হেদায়াত দিয়েছেন এবং তিনিও তার মাদ্রাসায় খুব সতর্কতার সাথে প্রচার শুরু করেছেন। এখন তাদেরকে নিয়ে বই-পুস্তক পড়াশুনা ও আলোচনা করছি। আগে আমরা আহলেহাদীছ নাম শুনেছি, দেওবন্দী, বেরেলভী ও জামায়াতী আলেমদের মুখে খুব খারাপ ভাবে। কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি একমাত্র আহলেহাদীছরাই পূর্ণ মুসলমান।
পত্রিকা দু’টির মাধ্যমেই আপনাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। খুব ইচ্ছা হচ্ছে একবার আপনাদের দেশ সফর করার এবং আপনাদের কাছ থেকে কিছু বই-পুস্তক ও হিকমত শিখে নেওয়ার জন্য। বিশেষ করে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ছাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর পরামর্শ, দো‘আ ও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য। আল্লাহ সুযোগ করে দিলে অবশ্যই আসব আমার আক্বীদা-বিশ্বাস ও আমলের ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ও পরিচিত হওয়ার জন্য। এজন্য আল্লাহ্র নিকট তাওফীক কামনা করছি।
পরিশেষে আল্লাহ যেন আমাদেরকে হেদায়াতের উপর অটল রাখেন, সবার নিকট এ দো‘আ কামনা করছি।
এ.কে. মহিউদ্দীন আহমাদ
হাইলাকান্দি, আসাম, ভারত।
[আমরা সম্মানিত পত্র লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তাঁকে ও তাঁর সাথীদেরকে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের উপর অটল থাকার তাওফীক দানের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র নিকটে প্রার্থা করছি। -সম্পাদক]