ইসলামের খিদমতে একনিষ্ঠভাবে নিয়োজিত ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুখপত্র মাসিক আত-তাহরীক।
এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। এজন্য অপরিমেয় কৃতজ্ঞতা জানাই পরম করুণাময়
আল্লাহর দরবারে। এরপর গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই এর প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব মহোদয়কে। আরও কৃতজ্ঞতা জানাই যারা এই মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এর সঙ্গী হওয়ার ব্রত গ্রহণ করেছেন।
আত-তাহরীক মানুষকে ডাকে হক্বের দিকে, আল্লাহর দিকে, যে পথ সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের সে পথের দিকে। কে কখন কিভাবে এর ডাকে বা আহবানে সাড়া দিয়েছেন, তা অজ্ঞাত। তবে যে কেউ, যে কোন সময়ে এর ছোঁয়া লাভ করেছেন তিনি একে সাদরে ও সাগ্রহে বরণ করে নিয়েছেন। এর সুফল নিয়ে আলোচনা করেছেন পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে, বন্ধু মহলে, আত্মীয়-স্বজনের মাঝে, আরও অনেক জায়গায়। বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই ও বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আত-তাহরীক তার লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলেছে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে লিখিত ও তথ্য সমৃদ্ধ এর প্রতিটি লেখায় থাকে নির্ভেজাল তাওহীদ ও রিসালাতের অমূল্য শিক্ষা।
আত-তাহরীক-এর সম্পাদক মন্ডলী, লেখকবৃন্দ ও পাঠক সবাই একই আদর্শের অনুসারী। তারা তাওহীদ ও রিসালাতের প্রচার-প্রসারে নিবেদিতপ্রাণ। তারা সবাই একই প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ তথা দ্বীন প্রচারের বলিষ্ঠ সৈনিক। এই নির্মোহ, নিষ্কাম শ্রমটুকু প্রদানে কেউই কার্পণ্য করেন না, বরং সকলেই স্বেচ্ছায়, সাগ্রহে এবং আল্লাহর সন্তোষ ও সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশায় তা ব্যয় করেন। বিশেষ করে এর এজেন্ট ও গ্রাহকদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। আত-তাহরীক-এর দ্রুত সম্প্রসারণে ও প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমার ধারণা এজেন্টগণ আত-তাহরীক-এর গ্রাহক বা পাঠক সংগ্রহে ব্যর্থ হননি, বরং অনেকেই নিয়মিত গ্রাহক বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছেন। কারণ আত-তাহরীক গভীর মনোযোগে যে পড়েছে, সেই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, গ্রাহক ও পাঠক হয়েছে। ফলে অনেক দুর্বল মানুষও আত-তাহরীকের ছত্রছায়ায় এসে সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছে। অনুপ্রেরণা লাভ করেছে স্বীয় ঈমান-আমল সংশোধনের।
অবশ্য আত-তাহরীক-এর সম্পাদকমন্ডলী ও পরিচালনা পরিষদের নিঃস্বার্থ ও নিবিড় তৎপরতা, আন্তরিকতাপূর্ণ কর্মকান্ড ও প্রচেষ্টায় পত্রিকাটি ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র দেশময় ও দেশের বাইরেও। মাত্র ২০০০ (দুই হাযার) কপি নিয়ে যার যাত্রা শুরু, তার প্রচার সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তেইশ হাযারে উন্নীত হয়েছে। ফালিল্লাহিল হামদ। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে আত-তাহরীক-এর প্রচার সংখ্যা ৫০ (পঞ্চাশ) হাযারে পৌঁছে যাবে ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ১৩টি দেশে আত-তাহরীক পৌঁছে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারাবিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে এটি পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাই আমরা বলতে পারি আত-তাহরীক-এর নির্ভেজাল দাওয়াত পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বময়।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বাণীকেই উপজীব্য করে ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয় আত-তাহরীক-এর পথচলা। সেই থেকে অদ্যাবধি তার চলার গতি থেমে যায়নি, শ্লথ হয়নি, অব্যাহত আছে এবং থাকবে অনন্তকাল এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। আল্লাহর কাছে দো‘আ করি, আল্লাহ আত-তাহরীককে কবুল করুন এবং এর চলার পথকে সুগম ও নিষ্কণ্টক করুন, নিরন্তর হক্বের পথে একে জারী রাখুন।- আমীন!
ধর্মের নামে অধর্ম
জুম‘আর ছালাতের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে আম চত্বরের দিকে যাচ্ছিলাম। নওদাপাড়া বাজারের নিকটে আসতেই দেখি ট্রাক ও মোটর সাইকেলের বহর। ট্রাকের আরোহী উঠতি বয়সের তরুণ এবং সাথে দু’একজন টুপি-দাড়িওয়ালা মানুষ। সহসা মনে পড়ে গেলো আজ ১২ই রবীউল আওয়াল। এজন্য এই মিছিলের আয়োজন। মহানবী (ছাঃ)-এর প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের নবোদ্ভাবিত প্রয়াস। ওরা নাম দিয়েছে ‘ঈদে মীলাদুন্নাবী’। এদিনটি তাদের ভাষায় সকল ঈদের সেরা ঈদ। ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর-এর চেয়ে এই ঈদের মাহাত্ম্য অনেক বেশী বলে তারা মনে করে। যদিও এগুলি বিদ‘আত বৈ কিছুই নয়। কিন্তু তারা বোঝে না বা মানে না যে, এটি একটি নিকৃষ্ট বিদ‘আত, যা ইসলাম সমর্থন করে না। এটি ধর্মের নামে প্রকাশ্য অধর্ম। এ সকল অনৈসলামিক কর্মকান্ড দেখে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ভ্রান্তির বেড়াজালে বেড়ে উঠছে নানা রকম প্রশ্নবিদ্ধ মন ও মানসিকতা নিয়ে।
কিছুদিন পূর্বে আমাদের বাড়ির পার্শ্বে জনৈক উচ্চ শিক্ষিত ভদ্রলোক বাড়ি তৈরী করলেন। বাড়ি তৈরী সম্পন্ন হ’লে তিনি আমার বাসায় দাওয়াত দিতে আসলেন। বললেন, আগামীকাল আমার বাড়ি উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে একটি মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি। অবশ্যই আসবেন। ভদ্রলোককে যথেষ্ট বুঝালাম, মীলাদ মাহফিল করা বিদ‘আত। তিনি বললেন, এটি তো তেমন খারাপ নয়। আমি যতই বুঝালাম, তিনি কিছুতেই বুঝতে চাইলেন না, বরং ঘটে গেল উল্টা। সে দিনের পর থেকে তিনি আমার সাথে সালাম-কালাম পর্যন্ত বন্ধ করে দিলেন। এভাবেই চলছে ইসলামের নামে অনৈসলামিক কর্মকান্ড।
আরেক দিনের ঘটনা সেদিন ছিল তথাকথিত শবেবরাতের দিন। প্রতিদিনের মত সকাল বেলা গৃহ পরিচারিকা বাসায় প্রবেশ করে কোন আয়োজন না দেখে অবাক বিস্ময়ে বলল, একি আপনাদের বাসায় হালুয়া রুটি তৈরী হবে না? আমরা জবাবে বললাম, না, এগুলো করা ঠিক নয়। তখন সে রাগত স্বরে বলল, আপনাদের ধার্মিক বলেই জানি। অথচ আজ শবেবরাত পালন করবেন না? আমরা তাকে বার বার বুঝাতে চাইলাম যে, এটি একটি বিদ‘আত, ইসলাম একে সমর্থন করে না ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত সে আমাদের প্রতি এক মন্তব্য ছুড়ে দিল, আমরা নাকি গন্ডমূর্খ, বক ধার্মিক। একজন অশিক্ষিত কাজের মহিলা। পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতও পড়ে না। এ ব্যাপারে তার কোন মাথা ব্যথাও নেই। অথচ শবেবরাতের মত বিদ‘আতী অনুষ্ঠান পালনের জন্য সে মরিয়া। এরকম শত শত অনৈসলামিক কর্মকান্ড সমাজে চালু আছে ইসলামের নামে, ধর্মের ছদ্মাবরণে। এসব নোংরা বিদ‘আতী ক্রিয়াকলাপ থেকে আমাদের যেমন বিরত থাকতে হবে, তেমনি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে বিদ‘আতের মরণ ছোবল থেকে। শুধু তাই নয়, সঠিক ইসলামকে সকলের মাঝে পৌঁছে দিয়ে ইসলাম বিরোধী সকল অপকর্ম বন্ধ করতে হবে। আর একাজটিই করছে মাসিক আত-তাহরীক। বহু দুর্গম পথ মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে এ আপোষহীন মাসিক পত্রিকা। সমাজ সংস্কারের ব্রত নিয়ে ধর্মের নামে সকল অধর্মের মূলোৎপাটন করে সঠিক ধর্মবিশ্বাস ও কর্ম প্রচার করছে। অতএব হে আত-তাহরীক! তুমি এগিয়ে চল, দুনিয়ার হক্ব পিয়াসী মানুষ আছে তোমার সাথে। বিশ্বে হাযারো হক্ব সন্ধানীর অকৃত্রিম দো‘আ ও ভালবাসা তোমার চলার পথকে করে দেবে নির্বিঘ্ন-নিষ্কণ্টক। তোমার জন্য প্রভুর সকাশে আমাদের হৃদয় নিংড়ানো দো‘আ, আল্লাহ তুমি আত-তাহরীককে কবুল কর; একে দীর্ঘজীবি কর- আমীন!!
মুহাম্মাদ মুবীনুল ইসলাম
প্রভাষক, আত্রাই অগ্রণী ডিগ্রী কলেজ
মোহনপুর, রাজশাহী।