পর্ব ১ । পর্ব ২। পর্ব ৩।  পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬। পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯। শেষ পর্ব।

বইয়ের নাম : সাহিত্য কণিকা  

দাখিল অষ্টম শ্রেণি, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ; বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত।

চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল কাসেম মিয়া ছাড়াও সংকলন, রচনা ও সম্পাদনা মোট ১০ জন অধ্যাপক।

১২০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে গদ্য মোট ১১টি। এর মধ্যে ৩ জন হিন্দু লেখক। আর কবিতা মোট ১১টি। এর মধ্যে ৬ জন হিন্দু কবি।

(১৩৬/১) পৃ. ১ অতিথির স্মৃতি -শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (জন্ম : হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ  ১৮৭৬; মৃত্যু : কলিকাতা ১৯৩৮)।

মন্তব্য : ‘অতিথির স্মৃতি’  গল্পে লেখক কুকুরের মনিবভক্তি প্রদর্শন করেছেন। সেই সাথে কুকুরটির সাথে বাড়ির মালি-বৌয়ের নিষ্ঠুরতা তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য কি শিক্ষণীয় রয়েছে? অথচ এখানে আবুল হায়ছাম মালেক ইবনুত তাইয়েহান ও তার অতিথি মুহাম্মাদ (ছাঃ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর শিক্ষণীয় ঘটনাটি তুলে ধরা যেত।[1]

তাছাড়া শরৎচন্দ্র ছিলেন একজন মুসলিম বিদ্বেষী লেখক। তিনি মুসলমানদের বাঙ্গালী মনে করতেন না। তার ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের ১ম পর্বে (১৯১৭ খৃ.) মুসলমান ও বাঙ্গালীকে পৃথক জাতি হিসাবে চিহ্নিত করে তিনি লিখেছেন, ‘ইস্কুলের মাঠে বাঙ্গালী ও মুসলমান ছাত্রদের ‘ফুটবল ম্যাচ’। সন্ধ্যা হয়-হয়। ...হঠাৎ ‘ওরে বাবা’ এ কি রে! চটাপট্ শব্দ এবং মারো শালাকে, ধরো শালাকে! ...মিনিট দুই-তিন। ...পাঁচ-সাতজন মুসলমান ছোকরা তখন আমার চারিদিকে ব্যুহ রচনা করিয়াছে পালাইবার এতটুকু পথ নাই। ...ঠিক সেই মুহূর্তে যে মানুষটি ...আমাকে আগলাইয়া দাঁড়াইল, সে ইন্দ্রনাথ’।[2]

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ১৯২৬ সালে ‘বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা’ শিরোনামে বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, ‘বস্ত্ততঃ মুসলমান যদি কখনও বলে, হিন্দুর সহিত মিলন করিতে চাই, সে যে ছলনা ছাড়া আর কি হইতে পারে, ভাবিয়া পাওয়া কঠিন। একদিন মুসলমান লুণ্ঠনের জন্যই ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল, রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য আসে নাই। সেদিন কেবল লুট করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, মন্দির ধ্বংস করিয়াছে, প্রতিমা চূর্ণ করিয়াছে, নারীর সতীত্ব হানি করিয়াছে। বস্ত্ততঃ অপরের ধর্ম ও মনুষ্যত্বের উপরে যতখানি আঘাত ও অপমান করা যায়, কোথাও কোন সঙ্কোচ মানে নাই। দেশের রাজা হইয়াও তাহারা এই জঘন্য প্রবৃত্তির হাত হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারে নাই। ঔরঙ্গজেব প্রভৃতি নামজাদা সম্রাটের কথা ছাড়িয়া দিয়াও যে আকবর বাদশাহের উদার বলিয়া এত খ্যাতি ছিল, তিনিও কসুর করেন নাই। আজ মনে হয়, এ সংস্কার উহাদের মজ্জাগত হইয়া উঠিয়াছে’।[3]

উক্ত ভাষণে তিনি মুসলমানদের সম্পর্কে ডাহা মিথ্যাচার করেছেন। সেই সাথে শত শত বছর যাবৎ মিলেমিশে বসবাসকারী হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ও বিভেদের বীজ বপন করেছেন। এগুলি শিক্ষার্থীদের শিখানোর পিছনে ভারতের মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য। সিলেবাস থেকে এইসব লেখনী অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

(১৩৭/২) পৃ. ৬  বাঙালির বাংলা  -কাজী নজরুল ইসলাম (জন্ম : চুরুলিয়া, বর্ধমান ১৮৯৯; বাকশক্তি রহিত ও মস্তিষ্ক বিকৃতি : ১৯৪২; মৃত্যু : ঢাকা ১৯৭৬)।

‘বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে- ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালির মত জ্ঞান-শক্তি ও প্রেম-শক্তি (ব্রেন সেন্টার ও হার্ট সেন্টার) এশিয়ায় কেন, বুঝি পৃথিবীতে কোন জাতির নেই। কিন্তু কর্ম-শক্তি একেবারেই নেই বলেই তাদের এই দিব্যশক্তি তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে’।

মন্তব্য : এগুলি স্রেফ অতিশয়োক্তি এবং অনৈতিহাসিক। বাংলা ভাষা বাঙালীর কাছেই আছে। দখলদার ইংরেজ এ ভাষা তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারেনি। আর ‘জ্ঞান-শক্তি ও প্রেম-শক্তি’ কমবেশী সকল জাতির মধ্যেই আছে। ‘কিন্তু কর্ম-শক্তি একেবারেই নেই’ কথাটি আদৌ সঠিক নয়। সেটা হ’লে তো দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হ’ত না।

(১৩৮/৩) ‘বাঙালির হৃদয় ব্রহ্মময় কিন্তু দেহ ও মন পাষাণময়’।

মন্তব্য : এর দ্বারা লেখক কি বুঝাতে চেয়েছেন, তিনিই ভাল জানেন। কেননা হৃদয় ও মন দু’টি দুই রকম হওয়া অসম্ভব। আর ‘ব্রহ্মময়’ কথাটি শিরকী পরিভাষা। যা আল্লাহ নামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও টীকাকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, বাঙালির ‘মাথা ও হৃদয় পরমেশ্বরের রূপে পরিপূর্ণ’। অথচ মুসলমানের নিকট ঈশ্বর ও পরমেশ্বর বলে কিছু নেই। তাদের নিকট আল্লাহ একমাত্র উপাস্য। তিনি লিখেছেন, ‘দেহ ও মন কর্মের ক্ষেত্রে পাষাণের মত কঠিন। আপন কর্ম সম্পাদনে তারা নির্ভীক এবং একনিষ্ঠ’। ব্যাখ্যাটি লেখক কাজী নজরুল ইসলামের বক্তব্যের বিপরীত। কেননা তিনি নিবন্ধের শুরুতে বলেছেন, বাঙালির ‘কর্ম-শক্তি একেবারেই নেই’।

তাছাড়া বক্তব্যগুলি বাস্তবতার বিরোধী। কেননা কপটতা  ও একনিষ্ঠতা সব জাতির মধ্যেই রয়েছে। জগৎশেঠ ও মোহনলাল দু’জনে বাঙালী হ’লেও ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন অনুষ্ঠিত পলাশীর যুদ্ধে তাদের প্রথমজন ছিল কপট ও দ্বিতীয়জন ছিলেন একনিষ্ঠ। অতএব ঢালাওভাবে সব বাঙালীকে এক করে দেখার উপায় নেই। নজরুল নিজেই ছিলেন বাঙালী এবং তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ কর্মশক্তির অধিকারী।     

(১৩৯/৪) ‘এই হিমালয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুনি-ঋষি-যোগীরা সাধনা করেছেন। এই হিমালয়কে তাঁরা সর্ব দৈব-শক্তির লীলা-নিকেতন বলেছেন’।

মন্তব্য : এগুলি অবাস্তব কথা। মুনি-ঋষি-যোগীরা মুসলমানদের জন্য আদর্শ মানুষ নন। তাদের প্রসঙ্গ এদেশের সিলেবাসে টেনে আনার কোন প্রয়োজন ছিল না। আর হিমালয় পর্বত মানুষের কল্যাণের জন্য আল্লাহর এক অনন্য সৃষ্টি। তার নিজস্ব কোন শক্তি নেই আল্লাহর হুকুম ছাড়া। অথচ মুনি-ঋষিদের নামে তাকে ‘দৈবশক্তির লীলা নিকেতন’ বলে এদেশের শিক্ষার্থীদের মুখস্ত করানো মুসলিম শিক্ষার্থীদের আক্বীদা-বিশ্বাসে ছুরিকাঘাত করার শামিল। অতএব ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে (১৯৪২ খৃ.) লেখা নজরুলের এই নিবন্ধে এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুই শিক্ষণীয় নেই। কুচক্রীরা তাদের হীন স্বার্থে নজরুলের অন্যান্য লেখনী বাদ দিয়ে এটিকে বাছাই করেছে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঈমান হরণ করার জন্য।

(১৪০/৫)  পৃ. ৭   ‘বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান’।

মন্তব্য : এর দ্বারা লেখক এদেশকে সকল ধর্মের মিলনস্থল বুঝাতে চাইলেও বাংলা ভাষা ‘সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান’ নয়। ‘ঐশীশক্তি’ বলতে ঐশ্বরিক শক্তি বুঝায়। মুসলমানরা ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান। তারা ঈশবর বা ঈশ্বরী বলে কাউকে কল্পনা করেনা। আর কুরআন-হাদীছের ভাষাই তাদের ঈমানী শক্তিকে বলীয়ান করে। আরবী ভাষায় তাদের নাম, সালাম, আযান, ছালাত ও ইবাদত সমূহ তাদেরকে বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক পরিচিতি ও নিঃস্বার্থ মহববতের বাহন হিসাবে কাজ করে। ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি তাদের মধ্যে মহাশক্তির উদ্বোধন ঘটায়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তাদের হৃদয়ে বিশ্বজয়ী ঈমানী তেয সৃষ্টি করে। এই তেয ও শক্তিলাভ কোন সৃষ্টবস্ত্তর নামে নয়। জয় শ্রীরাম বা জয় হিন্দ নামেও নয়। অতএব ভাষা নয়, বরং আদর্শ হ’ল সকল ঐক্যের মূল।

(১৪১/৬)  পৃ. ১২ পড়ে পাওয়া -বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০, ঝাড়খন্ড, ভারত)।

মন্তব্য : গল্পটি শিক্ষণীয়, কিন্তু পুরাটাই হিন্দুয়ানী ধাঁচে লেখা। আর গল্পের মূল চরিত্র বিধু, সিধু, নিধু, তিনু, বাদল ছাড়াও ইদিরভীষণ, চন্ডীমন্ডপ, নাটমন্দির, আজ্ঞে, অদেষ্ট, ঠাকুরমশাই, বোষ্টম, কাকাবাবু, দন্ডবৎ, সাষ্টাঙ্গে প্রণাম ইত্যাদি ভাষা মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া সামান্য ঘটনাটি ইনিয়ে-বিনিয়ে পাঁচ পৃষ্ঠা লম্বা করার কারণ সম্ভবতঃ এটাই যে, শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে হিন্দুয়ানী ভাষা ও শব্দগুলি গেঁথে দেওয়া। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

(১৪২/৭) পৃ. ২০ তৈলচিত্রের ভূত -মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম : ঝাড়খন্ড ১৯০৮; মৃত্যু : কলিকাতা ১৯৫৬)।

মন্তব্য : এ গল্পে বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ বলে গল্পের ‘নগেন’ বিশ্বাস করলেও এ যুগের ছোট্ট খোকনরাও তা বিশ্বাস করেনা। অতএব সমাজে ভূতের কুসংস্কার দূর করার জন্য এরূপ হিন্দুয়ানী গল্প না দিলেও চলত।  

(১৪৩/৮) পৃ. ৩৪ আমাদের লোকশিল্প  -কামরুল হাসান (জন্ম: কলকাতা ১৯২১; মৃত্যু: ঢাকা ১৯৮৮)।

‘কাপড়ের পুতুল তৈরী করা আমাদের মেয়েদের একটি সহজাত শিল্পগুণ’।

মন্তব্য : এগুলি হিন্দু মেয়েদের হ’তে পারে, মুসলমান মেয়েদের নয়।

(১৪৪/৯) পৃ. ৪১ সুখী মানুষ -মমতাজ উদ্দীন আহমদ (জন্ম: পশ্চিমবঙ্গ ১৯৩৫; মৃত্যু: ঢাকা ২০১৯)।

‘এই তোমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করছি’

মন্তব্য : মুসলমান কেবল আল্লাহর নামে শপথ করে। কারু মাথায় হাত দিয়ে নয়।

(১৪৫/১০) পৃ. ৪৮-৪৯  শিল্পকলার নানা দিক   -মুস্তাফা মনোয়ার (১৯৩৫, ঝিনাইদহ, কবি গোলাম মোস্তফার কনিষ্ঠ পুত্র)।

‘শিল্পকলা চর্চা সকলের পক্ষে অপরিহার্য’।

মন্তব্য : এটি সকলের পক্ষে অপরিহার্য নয়। বরং মানুষের আক্বীদা পরিচ্ছন্ন করাটাই সকলের জন্য অপরিহার্য। কেননা আক্বীদা অনুযায়ী শিল্পকলার বিকাশ ঘটে। যেমন মুসলিম শিল্পীরা কোন প্রাণীর ছবি অাঁকেনা বা মূর্তি গড়েনা। অন্যেরা সেটা করে। ছবিতে একটি আবক্ষ মূর্তি দেখা যায়। যা রাখা ঠিক হয়নি।

(১৪৬/১১) পৃ. ৫৩ মদিনার পথে -মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী (বাঁশদহা, সাতক্ষীরা ১৮৯৬-১৯৫৪)।

মন্তব্য : উক্ত গল্পে হিজরতের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে মক্কায় আবু জাহলের ষড়যন্ত্র কাহিনী, আবুবকর কন্যা আসমার মুখে আবু জাহলের থাপ্পড় মারা, পথিমধ্যে সুরাক্বার মুসলমান হয়ে যাওয়া, ৭০ জন সঙ্গীসহ বুরায়দার মুসলমান হওয়া এবং মাথার পাগড়ি নিজের বর্শাফলকে গেঁথে রাসূল (ছাঃ)-এর রক্ষী হিসাবে সঙ্গে চলা ইত্যাদি বক্তব্যগুলি সঠিকভাবে প্রমাণিত নয়।[4]

(১৪৭/১২) পৃ. ৬০ বাংলা নববর্ষ -শামসুজ্জামান খান (জন্ম : মানিকগঞ্জ ১৯৪০ খৃ.)।

‘পহেলা বৈশাখে বাঙালির নববর্ষ উৎসব।...বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব’।

মন্তব্য : পহেলা বৈশাখ হিন্দু বা মুসলিম বাঙালী কারুরই নববর্ষ নয়। বাংলা সনের গণনা শুরু হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসনারোহণের বছর ৯৬৩ হিজরী মোতাবেক ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ হ’তে। ঐ সময় ছিল হিজরী সনের মুহাররম মাস ও বাংলাদেশে ছিল শকাব্দের দ্বিতীয় মাস বৈশাখ মাস। সেকারণে বাংলাদেশে নতুন বাংলা সনের প্রথম মাস হিসাবে নির্ধারণ করা হয় বৈশাখ মাসকে। যদিও শকাব্দের প্রথম মাস শুরু হয় পহেলা চৈত্র হ’তে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বাধীনতার পর হ’তেই বাংলা সনের পরিবর্তে শকাব্দ ব্যবহার করে আসছেন। ফলে ঢাকায় যেদিন ১লা বৈশাখ হয় কোলকাতায় সেটা হয় তার পরের দিন।

নববর্ষ বা বর্ষবরণ ইসলামী সংস্কৃতির বিরোধী। এটি আদৌ আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব নয়। বরং মুসলমানের জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা। আর তাদের সাপ্তাহিক ঈদ হ’ল জুম‘আর দিন। আরও রয়েছে, বার্ষিক হজ্জের দিন ও তার পরের আইয়ামে তাশরীক্বের ৩ দিন। এই সাত দিন ব্যতীত মুসলমানের জন্য আর কোন জাতীয় উৎসব নেই।

(১৪৮/১৩) পৃ. ৬২ ‘আমানিও নববর্ষের একটি প্রাচীন আঞ্চলিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। এটি প্রধানত কৃষকের পারিবারিক অনুষ্ঠান। চৈত্র মাসের শেষ দিনের সন্ধ্যারাতে গৃহকর্ত্রী এক হাঁড়ি পানিতে স্বল্প পরিমাণ অপক্ব চাল ছেড়ে দিয়ে সারারাত ভিজতে দেন এবং তার মধ্যে একটি কচি আমের পাতাযুক্ত ডাল বসিয়ে রাখেন। পয়লা বৈশাখের সূর্য ওঠার আগে ঘর ঝাড়ু দিয়ে গৃহকর্ত্রী সেই হাঁড়ির পানি সারা ঘরে ছিটিয়ে দেন। পরে সেই ভেজা চাল সকলকে খেতে দিয়ে আমের ডালের কচি পাতা হাঁড়ির পানিতে ভিজিয়ে বাড়ির সকলের গায়ে ছিটিয়ে দেন। তাদের বিশ্বাস, এতে বাড়ির সকলের কল্যাণ হবে। নতুন বছর হবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির’।

মন্তব্য : এসব উদ্ভট ও অপ্রচলিত অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের শিখানোর কোন প্রয়োজন নেই। এর মাধ্যমে বোর্ডের সিলেবাসকে হিন্দুয়ানী কুসংস্কার সমূহ প্রচারের বাহনে পরিণত করা হয়েছে মাত্র। যা নিঃসন্দেহে অন্যায়।

(১৪৯/১৪) পৃ. ৬৫  সৃজনশীল প্রশ্ন

এখানে সীমা ও চৈতি দুই বান্ধবী। তারা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরে রমনার বটমূলে যাচ্ছে। সেখানে খালাতো বোন তন্বীর সাথে দেখা। ...চৈতি মনের আনন্দে গেয়ে উঠল,

তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষূরে দাও উড়ায়ে,

বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।

মন্তব্য : লেখক এখানে কোন মুসলিম শিক্ষার্থীর নাম খুঁজে পাননি। তাদেরকে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার রমনা বটমূলে। গান গাওয়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের শিরকী কবিতা দিয়ে। এগুলির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম শিক্ষার্থীদের কি শিক্ষণীয় রয়েছে? নাকি তাদেরকে ইসলামী আক্বীদা থেকে বিচ্যুত করাই লক্ষ্য।

(১৫০/১৫) পৃ. ৬৭ বাংলা ভাষার জন্মকথা -হুমায়ুন আজাদ (মুন্সিগঞ্জ, ১৯৪৭-২০০৪)।

‘বেদের শ্লোকগুলো পবিত্র বিবেচনা করে তার অনুসারীরা সেগুলো মুখস্থ করে রাখত’।

মন্তব্য : ভাষা আল্লাহর সৃষ্টি। এর নিত্য নতুন বৈচিত্র্যটাও আল্লাহর সৃষ্টি। তাই বেদের শ্লোক ইত্যাদি উৎস সন্ধান করা এবং বর্তমান বাংলা ভাষাকে পিছন দিকে ফিরিয়ে নিয়ে শুদ্ধ করার চেষ্টা পন্ডশ্রম মাত্র। বরং ভাষাকে নিত্য নতুন বৈচিত্র্য যোগে সমৃদ্ধ করাই উত্তম।

(১৫১/১৬) পৃ. ৭১ বঙ্গভূমির প্রতি -মাইকেল মধুসূদন দত্ত (জন্ম সাগরদাঁড়ি, যশোর ১৮২৪; মৃত্যু কলিকাতা ১৮৭৩)।

    ‘রেখো,  মা,  দাসেরে মনে,  এ মিনতি করি পদে’।

মন্তব্য : জন্মভূমির প্রতি আকর্ষণ মানুষের স্বভাবজাত। কিন্তু জন্মভূমির কোন জীবন নেই। আর সে কাউকে মনে রাখতে পারে না। উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। বরং মানুষের যাবতীয় চাওয়া-পাওয়া হবে স্রেফ আল্লাহর  নিকট। যিনি বঙ্গভূমি সহ পূরা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টিকর্তা। শিক্ষার্থীদেরকে এগুলি শিখানোর মাধ্যমে তাদেরকে তাওহীদ থেকে বিচ্যুত করে শিরকের অনুসারী বানানোর চক্রান্ত করা হয়েছে মাত্র।

(১৫২/১৭)  পৃ. ৭৫  দুই বিঘা জমি   -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নমঃ নমঃ নমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি...

অবারিত মাঠ, গগন ললাট চুমে তব পদধূলি

মন্তব্য : ৭২ লাইনের এ বিশাল কাহিনী- কবিতাটি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে রাখা উচিৎ ছিল। কবিতাটি নিঃসন্দেহে শিক্ষণীয়। তবে ভাষার মারপ্যাঁচে মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে শিরকের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যেমন ‘নমঃ নমঃ নমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি’। এগুলি তাওহীদের আক্বীদা বিরোধী। কেননা মুসলমান কেবল আল্লাহর নিকট সিজদা করে, অন্য কিছুতে নয়। তারা কারু পায়ে চুমু দেয় না  বা পদধূলি নেয় না। তাছাড়া একজন দাড়িওয়ালা মানুষকে অত্যাচারী জমিদারের ছবি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি একজন মুসলমানের ছবি। এর দ্বারা সুন্নাতকে এবং মুসলিম জাতিকে কটাক্ষ করা হয়েছে।

(১৫৩/১৮) পৃ. ৮৬  নারী  -কাজী নজরুল ইসলাম

মন্তব্য : উক্ত কবিতার ছবিতে নারী কোদাল দিয়ে মাটি কাটছে। আর একজন নারী ও পুরুষ ঝুড়িতে করে মাটি বহন করছে। এই ছবি দিয়ে উভয়ের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই সেটা বুঝানো হয়েছে। অথচ এটা একটি মারাত্মক ভুল ব্যাখ্যা। পুরুষ নির্মাণ শ্রমিক হ’তে পারে, নারী নয়। নারীর কাজ ঘরে পর্দার মধ্যে, পুরুষের কাজ বাইরে। একই কাজ সবাই করার নাম সাম্য নয়। বরং এতে পরস্পরের স্বভাবগত কর্ম বণ্টনের উপর হস্তক্ষেপ করা হয়। আর এটাই বাস্তব যে, চাকুরীজীবী পুরুষ ৮ ঘণ্টা পর ছুটি পেলেও সংসারের গৃহিণী কখনো কখনো ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন। ঘুমানোর সময়টুকুও পান না। অতএব উক্ত কবিতায় ছবির মাধ্যমে সাম্যের  অপব্যাখ্যা করা হয়েছে মাত্র। ইসলাম নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার মধ্যেই নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সাম্য ও সমানাধিকার নির্ভর করে। সেই সাথে নির্ভর করে সামাজিক শান্তি ও অগ্রগতি।

(১৫৪/১৯) পৃ. ৯০ আবার আসিব ফিরে  -জীবনানন্দ দাশ (জন্ম : বরিশাল, ১৮৯৯; মৃত্যু : কলিকাতা ১৯৫৪)

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়

হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;

হয়তো ভোরে কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে

কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়;

হয়তো বা হাঁস হবো- কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,

মন্তব্য : অত্র কবিতায় হিন্দুদের পুনর্জন্মের ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রচার করা হয়েছে। যা তাওহীদের আক্বীদার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ হ’ল জীবের মৃত্যুর পর তার আত্মা পুনরায় নতুন দেহে পরিভ্রমণ করা। হিন্দু পন্ডিতগণ জন্মান্তরবাদের ধারণায় মনে করেন, পরকাল বলতে কিছু নেই। বরং মানুষ তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করার জন্য বারবার এ দুনিয়াতে বিভিন্নরূপে ও বিভিন্ন বেশে আবির্ভূত হয়ে থাকে। কোন মানুষ যদি অতি ঘৃণিত কোন কুকর্ম করে মারা যায়, তাহ’লে তার আত্মাটি কুকুর-বিড়ালের দেহ ধারণ করে পুনর্জন্ম লাভ করে এবং আমৃত্যু মানুষের তিরষ্কার ভোগ করে। আবার এমনও পাপ আছে, যার কর্মফল ভোগ করার জন্য সে বৃক্ষলতা হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে। ফলে কুঠারের আঘাতে অথবা জ্বালানীরূপে দগ্ধীভূত হয়ে তার পূর্ব কর্মফলের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করে। আর এ শাস্তি ভোগ করাই হ’ল নরক লাভ করা।  পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি ভাল বা পুণ্যের কাজ করে, তাহ’লে মৃত্যুর পর তার আত্মাটি আরো ধনী, সুখী কিংবা রাজা-বাদশা হয়ে জন্মলাভ করে। এ সুফল ভোগ করাটাই হিন্দুদের দৃষ্টিতে স্বর্গ লাভ করা।

এসব ভ্রান্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধেই আল্লাহর পক্ষ হ’তে ইসলামে আখেরাত বিশ্বাসকে অপরিহার্য করা হয়েছে। যেখানে সৎকর্মের পুরস্কার হিসাবে জান্নাত এবং অসৎকর্মের শাস্তি হিসাবে জাহান্নাম অপরিহার্য। যদি না আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।

(১৫৫/২০) পৃ. ৯৮ নদীর স্বপ্ন  -বুদ্ধদেব বসু (জন্ম : কুমিল্লা ১৯০৮; মৃত্যু : কলিকাতা ১৯৭৪)

মন্তব্য : প্রথমে ৮৪ লাইনের এই বিশাল কবিতা আদৌ পাঠ্য করা উচিৎ হয়নি। কেননা এতে কিশোর মনে শুরুতেই অনীহা বোধ সৃষ্টি করবে। দ্বিতীয়তঃ অত্র কবিতায় পিতা-মাতা ও বড় বোনকে লুকিয়ে নৌকায় পালিয়ে যাওয়া শেখানো হয়েছে। আর এর মধ্যে কল্পনা শক্তি প্রসার ঘটার কিছু নেই।

পরিশেষে বলব, দাখিল অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য বই হিসাবে নির্ধারিত ১২০ পৃষ্ঠার ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার কোন পরিকল্পনা দৃষ্ট হয়নি। 

নবম-দশম শ্রেণি

বইয়ের নাম : বাংলা সাহিত্য দাখিল নবম-দশম শ্রেণি, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ; বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত।

২৪৫ পৃষ্ঠার এ বইয়ে গদ্য ৩১টি। এর মধ্যে ১১টির লেখক হিন্দু। আর কবিতা ৩১টি। এর মধ্যে ১২টির লেখক হিন্দু। লেখক ও সংকলক ৬ জন এবং সম্পাদক ২ জন সহ মোট আটজন অধ্যাপক।

(১৫৬/১) পৃ. ১১ সুভা   -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বোবা সুভাষিনী (সুভা) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সে যে বিধাতার অভিশাপ স্বরূপে তাহার পিতৃগৃহে আসিয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছে একথা সে শিশুকাল হইতে বুঝিয়া লইয়াছিল’।

মন্তব্য : বাক প্রতিবন্ধী সন্তান আল্লাহর অভিশাপ নয়। বরং সে পিতা-মাতা ও সুস্থ সন্তানদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তারা তার প্রতি উত্তম আচরণ করে কি-না, আল্লাহ সেটাই পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষা সমাজ ও সরকার সকলের প্রতি হয়ে থাকে।

(১৫৭/২) পৃ. ৩১ অভাগীর স্বর্গ -শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

মন্তব্য : শরৎ যুগের হিন্দু জমিদারদের শোষণ-নির্যাতনের সামাজিক পরিবেশ এ যুগে নেই। তাই এই প্রবন্ধে এ যুগের তরুণ শিক্ষার্থীদের কোন শিক্ষণীয় নেই। বরং তারা এগুলি পড়লে স্বার্থপর হয়ে উঠতে পারে। দ্বিতীয়তঃ এইরূপ নোংরা সামাজিক পরিবেশ মুসলমানদের মধ্যে আগেও ছিল না, এখনও নেই। অতএব এইসব গল্প থেকে ছোটদের দূরে রাখাই কর্তব্য।

                                                                                                                                                                                                               (চলবে)


[1]. মুসলিম হা/২০৩৮ ; তিরমিযী হা/২৩৬৯; মিশকাত হা/৪২৪৬; তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা, সূরা তাকাছুর ৮ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[2]. শ্রীকান্ত, প্রথম পর্ব (১৯১৭), পরিচ্ছেদ-১, পৃ. ২; গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স (সপ্তদশ মুদ্রণ) ২০৩-১-১ কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট ... কলিকাতা - ৬।

[3]. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা, পরিচ্ছেদ-১, পৃ. ৩; ১৯২৬ সালে ‘বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা’ শিরোনামে বাঙলা প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ। পরে তা ‘হিন্দু সংঘ’ পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯৩৩ সালে।

[4]. দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ২৩২-৩৭ পৃ.।





মানবাধিকার ও ইসলাম (১৪তম কিস্তি) - শামসুল আলম
পুলছিরাত : আখেরাতের এক ভীতিকর মনযিল (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য - ইহসান ইলাহী যহীর
শারঈ মানদন্ডে ঈদে মীলাদুন্নবী - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
অহীভিত্তিক তাওহীদী চেতনা - আব্দুল মান্নান-এম.এম. এম.এ, মান্দা, নওগাঁ।
পিতা-মাতার উপর সন্তানের অধিকার (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ শফীকুল আলম
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
মানবাধিকার ও ইসলাম (২য় কিস্তি) - শামসুল আলম
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৩য় কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (২য় কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (৪র্থ কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আরও
আরও
.