বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সেক্স ফেরোমন যাদুর ফাঁদ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সবজি ফসল সুরক্ষায় কীটনাশকের পরিবর্তে দিন দিন ‘সেক্স ফেরোমন’ ফাঁদের ব্যবহার বাড়ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ‘অপরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ’ এ ধারণায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পর বিষমুক্ত সবজি ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে তারা ফেরোমন ফাঁদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সমাদৃত সেক্স ফেরোমন ফাঁদের সফল প্রয়োগ করে অনেক সবজি চাষী লাউ, ঝিঙে, করলা ও বেগুন উৎপাদন করেছেন। বর্তমানে ফেরোমন ট্রেপের সহজলভ্যতা কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধির বড় কারণ। কেননা আগে ফেরোমন ট্রেপ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হ’তে সংগ্রহ করতে হ’ত। এখন স্বল্পমূল্যে ঈশ্বরগঞ্জ সদরের কীটনাশকের দোকানে পাওয়া যায়। এতে ফলন ভাল হয়। ফাঁদের কারিগরি দিক প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায়, বড় প্লাস্টিক বৈয়ামের মাঝামাঝি দুই পাশে বড় ছিদ্র রেখে নিচে সাবান মিশ্রিত পানির ওপরে সুতায় বাঁধা ও ঝুলানো টি বেগ সদৃশ রাসায়নিক মিশ্রিত গন্ধযুক্ত ফেরোমনের ট্রেপ। মুখ লাগানো বৈয়ামের উপরিভাগে সুতার অপর প্রান্ত বাঁধা। জানা যায়, বেগুন, লাউ, করলাসহ সবজি ফসল ছিদ্রকারী স্ত্রী প্রজাতির পোকার শরীরের গন্ধ ও ফেরোমন ফাঁদে ব্যবহৃত রাসায়নিকের গন্ধ একই রকম। যে কারণে ফাঁদ থেকে নিঃসৃত গন্ধকে স্ত্রী পোকার গায়ের গন্ধ ভেবে জৈবিক টানে পুরুষ পোকা বৈয়ামের ভিতরে ঢুকে হন্যে হয়ে স্ত্রী পোকার অন্বেষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বৈয়ামের নিচে রক্ষিত সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে ফসল ছিদ্রকারী পুরুষ মাছি  পোকা মারা যায়। তিন দিন পর পর পানি পাল্টালে ভাল ফল পাওয়া যায়। কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা সাময়িক স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায় এবং কয়েকদিন পর কীটনাশকের তেজষ্ক্রিয়তা কমে গেলে পুনরায় ফসলে আক্রমণ করে। আর ফেরোমন ফাঁদে পুরুষ পোকা মারা যাওয়ায় পোকার বংশবিস্তার হয় না। এর ব্যবহারে বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগের দরকার হয় না। এতে একদিকে  অর্থের সাশ্রয় ও অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায়। ফসলে কীটনাশকের ব্যবহার একদিকে যেমন ব্যয়বহুল তেমনি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করা দরকার। কেননা মাত্র ১৫০ টাকা মূল্যের ৫টি ফেরোমন ট্রেপ ব্যবহারে কৃষক তার সবজি ফসলকে পুরো মৌসুমের জন্য সুরক্ষা দিতে পারে।

আঙ্গুর চাষ করে স্বাবলম্বী

আঙ্গুর চাষের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে নওগাঁয়। নওগাঁর মাটিতে উৎপাদিত আঙ্গুর অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য যে কোন দেশ থেকে আমদানীকৃত আঙ্গুরের চেয়ে মিষ্টি ও সুস্বাদু। শিক্ষিত বেকার যুবক সালাহুদ্দীন উজ্জল আঙ্গুর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আঙ্গুর চাষে উৎসাহিত হয়ে সরাসরি অস্ট্রেলিয়া থেকে চারা সংগ্রহ করেন এক বছর পূর্বে। তিন বিঘা জমির একাংশে সাড়ে ৩শ’ আঙ্গুর গাছের চারা লাগিয়েছেন। এ বছর গাছগুলোতে আঙ্গুর ধরতে শুরু করেছে। বছরে গাছগুলোতে দুইবার ফল ধরবে। প্রতিবার একটি গাছে কমপক্ষে ২০ কেজি করে ৪০ কেজি আঙ্গুর পাওয়া যাবে। সাড়ে ৩শ’ গাছের মধ্যে যদি কমপক্ষে ২শ’ গাছে আঙ্গুর ধরে তাহ’লে আঙ্গুর পাওয়া যাবে ৮ হাযার কেজি। বর্তমানে যার বাজার মুল্য প্রতি কেজি ১২৫ টাকা হিসাবে কমপক্ষে বিক্রি মূল্য আসবে ১০ লাখ টাকা। এটি প্রথম বছরের হিসাব। পরের বছরগুলোতে এই হিসাব আরও বেশী হবে। এ আঙ্গুর খুব সুস্বাদু। বিদেশ থেকে আনা বাজারে যে আঙ্গুরগুলো পাওয়া যায় সেগুলো থেকে স্বাদে ও মিষ্টতায় কোন অংশে কম নয়। সবচেয়ে বড় কথা এই বাগানের আঙ্গুর একবারে ফর্মালিনমুক্ত। কাজেই এ আঙ্গুর চাষে স্থানীয় অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন। উজ্জল কেবল আঙ্গুর চাষই করেননি একই জমির একটি অংশে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং স্থানীয় রাবি-৩ জাতের স্ট্রবেরি চাষও করেছেন। স্ট্রবেরি বিক্রি করে বছরে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা আয় করেছেন। তিনি জমির কিছু অংশে পরীক্ষামূলকভাবে মসলা জাতীয় ফল কালো অ্যালাচ চাষ করেও সফলতা অর্জন করেছেন।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.