গত ৮ই নভেম্বর বিচারপতি জাফর আহমাদের একক বেঞ্চ মাদক মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত শর্ত সমূহ পূরণ সাপেক্ষে এই রায় দেন। আইনজীবীদের মতে, মাদকের মামলায় হাইকোর্টে এ ধরনের রায় এটাই প্রথম।

শর্তগুলি হ’ল, (১) দন্ডিত ব্যক্তি তার ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মাকে নিয়মিত সেবা করবে। (২) তার দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে। (৩) আইনানুগ বয়স হওয়ার আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে না। (৪) তার আচরণ ভালো হ’তে হবে এবং অন্য কোন অপরাধের সাথে জড়িত হ’তে পারবে না। দেড় বছর যদি সে নিয়মিতভাবে এসব শর্ত পালন করে চললে তার বাকি সাজা এবং জরিমানা মওকূফ করা হবে। নইলে তাকে কারাগারে যেতে হবে এবং পূরা পাঁচ বছর সাজা ভোগ করতে হবে।

প্রবেশন অধ্যাদেশ ১৯৬০ অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদফতরে একজন প্রবেশন কর্মকর্তা এসব শর্ত পালনের বিষয় নযরদারী করবেন। এগুলো ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কি-না, সে বিষয়ে তিনি আদালতে নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন দিবেন।

এর আগে মাগুরায় মাদক মামলায় অভিযুক্ত ৯ জন এখন বই পড়া, সিনেমা দেখা ও গাছ লাগানোর শর্ত পূরণ করছেন। চাচির ওপর হামলাকারী এক আসামী প্রবেশন শর্ত পূরণ করায় খালাস পায়। কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত আগস্টে ভিসা প্রতারকের ছয় মাসের সাজা ১২টি শর্তে স্থগিত করা হয়। বই পড়া, ৪০টি গাছ রোপণ ও নেশা না করার মতো শর্ত দেন আদালত। গত অক্টোবরে একই আদালত মাদক মামলায় তিন আসামীকে আগামী ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত মাদকবিরোধী প্রচারণা এবং স্কুলের বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ কিনে দেওয়ার মতো শর্তে সাজা স্থগিত করেন।

ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় প্রবেশনের ব্যাপক অনুশীলনের সুযোগ রয়েছে। যদিও এদেশে এটির প্রচলন বিরল। কমিউনিটির স্বার্থে বিনা বেতনে কাজ করা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক কোর্স সম্পন্ন করা, কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি নেওয়ার মতো বিষয় প্রবেশন আইনের আওতাধীন। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশন আইন প্রথম প্রবর্তন করে ভারত ১৯৫৮ সালে। এর দুই বছর পরে পাকিস্তানও এটি অনুসরণ করে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৩ সালে আইনটিকে হাল-নাগাদ করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আইনটির যথাপ্রয়োগ বাংলাদেশের কোন সরকারের আমলেই ঘটেনি। এখন যখন এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে, তখন এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আমরা আশা করব।

[আইনজীবীদের বলব, দয়া করে ২য় হিজরীতে অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ তথা বদরের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির শর্ত হিসাবে মাথা প্রতি ১০ জনকে লেখা-পড়া শিখানোর বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি অধ্যয়ন করুন! (দ্র. হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৩১৫ পৃ.)  (স.স.)]






আরও
আরও
.