শীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

শীতকালে অনেকেরই বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে। একটু সতর্ক থাকলে এগুলো যেমন প্রতিরোধ করা যায়, তেমনি আক্রান্ত হয়ে গেলে প্রতিকারও সহজ হয়। অন্যথা সমস্যাগুলো কষ্ট দিতে পারে, ভোগান্তিও বেড়ে যেতে পারে।

সর্দি-কাশি :

শীতকালে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি হওয়া অতিসাধারণ অথচ বিরক্তিকর একটি রোগ। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগ সংক্রমিত হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয় রাইনো ভাইরাসের মাধ্যমে। ঘন ঘন হাঁচি হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, সঙ্গে একটু-আধটু কাশি ও সামান্য জ্বর এগুলো সর্দির লক্ষণ।

সাধারণত সপ্তাহ খানেকের মধ্যে রোগটি ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে রোগের জটিলতা দেখা দেয়। শিশুদের ফুসফুসে ইনফেকশন হয়ে ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়া, মধ্যকানের প্রদাহ ইত্যাদি হ’তে পারে। বড়দের হ’তে পারে সাইনোসাইটিস।

চিকিৎসা : সাধারণত সপ্তাহ খানেকের মধ্যে রোগটি কোন ওষুধ ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তবে অধিকমাত্রায় পানি পান তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া নাকের সর্দি নিয়মিত পরিষ্কার করে নাসারন্ধ্র খোলা রাখতে হবে। ঘরে সিগারেটের ধোঁয়া বা রান্নাবান্নার ধোঁয়া এই রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। নাক থেকে পানি ঝরা কমাতে প্রয়োজন অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ। আর ব্যথা ও জ্বরের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। শিশুদের ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়াসহ যেকোন জটিলতায় অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হ’তে হবে।

প্রতিরোধ : নিয়মিত হাত ধোয়া, কনুই ভাঁজ করে তাতে হাঁচি দেওয়া, তা না হ’লে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দেওয়া, নাক ঝেড়ে যেখানে-সেখানে নাকের ময়লা না ফেলা ইত্যাদি। সর্দি প্রতিরোধে এসব পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা :

রোগটি ফ্লু নামেও বেশ পরিচিত। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এটি ভাইরাসজনিত একটি রোগ; তবে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে আলাদা। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে এ রোগ হয়। শরীরে জীবাণু ঢোকার এক থেকে চার দিনের মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, খুসখুসে কাশি, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, বমি, দুর্বলতা ইত্যাদি। সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণগুলো গুরুতর। বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে রোগটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার তাদেরকে দুর্বলও করে ফেলে। এটি থেকে সাইনোসাইটিস, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদিও হ’তে পারে।

চিকিৎসা : ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। হাঁচি-কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন এবং জ্বর ও শরীর ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। সেকেন্ডারী ইনফেকশন হয়ে সাইনোসাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি হ’লে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন পড়ে; সঙ্গে প্রচুর পানি বা তরল খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক।

প্রতিরোধ : ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধ করা যরূরী। সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে রোগটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে অনেকাংশে। প্রতিরোধ করা যেতে পারে টিকার মাধ্যমেও। তবে টিকা দিতে হবে প্রতিবছরই। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস তাদের গঠন প্রায়ই পরিবর্তন করে এবং বিবর্তিত হয়।

গলায় খুসখুসি :

ঠান্ডার জন্য গলা খুসখুস করে এবং কাশি হয়। অনেক সময় জীবাণুর সংক্রমণ হয়। তখন একটু জ্বরও হয়। হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গড়গড়া করলে উপকার পাওয়া যাবে। গলায় যেন ঠান্ডা লাগতে না পারে, সে জন্য মাফলার জড়িয়ে রাখা ভালো।

হাঁপানী :

শীতকালে অ্যালার্জি জনিত হাঁপানীর প্রকোপ বেড়ে যায়। শীতের শুষ্ক মৌসুমে আমাদের চারপাশে পরিবেশে অ্যালার্জেন ও শ্বাসনালীর উত্ত্যক্তকারী কিছু বস্তু বেশি থাকে। ঘরের ভেতরে থাকে ঘরোয়া জীবাণু মাইট, ছত্রাক ও পোকামাকোড়ের বিষ্ঠা। তাছাড়া শীতের দিনে ঘরের দরজা-জানালা অন্য মৌসুমের চেয়ে একটু বেশীই বন্ধ রাখতে হয় বলে ঘরের রান্নাবান্নার ধোঁয়া আটকা পড়ে বেশী। মাটি ও বাতাসে ফুলের রেণু ও ধুলাবালি থাকে খুব বেশী। এসবের কারণেই শীতকালে হাঁপানি বেড়ে যায়।

প্রতিরোধ: বাড়িঘরের অ্যালার্জেন- যেমন ঘরদোরের ধূলা বালি, মাইট ইত্যাদি ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরে আলো-বাতাস বইতে দিতে হবে। বাইরে চলাচলের সময় মুখোশ ব্যবহার করতে হবে। ঘন ঘন স্বাভাবিক পানি পান করতে হবে। তবে গরম পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে শ্বাসনালিতে তৈরি হওয়া শ্লেষ্মা পাতলা থাকবে। তাতে কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কিছু ওষুধ সেবন করেও হাঁপানী সাময়িক প্রতিরোধ করা গেলেও মূলতঃ উপরোক্ত নিয়মগুলি সর্বদা মেনে চললে স্থায়ীভাবে হাঁপানী প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

[সংকলিত






আরও
আরও
.