বুকজ্বলা বা ‘হার্ট বার্ন’ ব্যাপারটি হার্ট বা হৃদযন্ত্রের কোন সমস্যা নয়। বুক থেকে গলা পর্যন্ত জ্বলুনির মতো অস্বস্তি হ’ল হার্ট বার্ন। পাকস্থলী ও খাদ্যনালি এ দু’টোর সংযোগস্থলে রয়েছে একটি রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক। পাকস্থলীর অম্ল যদি সেই রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক দিয়ে গলিয়ে খাদ্যনালি বেয়ে উপরের দিকে উঠে এবং খাদ্যনালিকে উত্তেজিত করে, তাহ’লে বুকজ্বলা হয়। যেসব কারণে বুকজ্বলা বাড়তে পারে, তা নিম্নরূপ-

অতিভোজ : এক সঙ্গে অনেক খাবার খেয়ে ফেলা বুকজ্বলার কারণ হ’তে পারে। খাওয়ার পরিমাণ কমানোর জন্য ছোট ছোট প্লেটে খাওয়ার অভ্যাস করা ভাল।

চর্বিবহুল খাবার : "Tell me what to eat if I have Acid refluxy" গ্রন্থের প্রণেতা ম্যাগি বলেন, ‘চর্বিবহুল খাবার পাকস্থলীতে দীর্ঘ সময় থাকে, আর যত দীর্ঘ সময় থাকবে, অস্বস্তি তত বেশি হবে’। এতে বুকজ্বলা অনেক বাড়ে।

অম্ল জাতীয় খাবার : অম্ল জাতীয় খাবার, যেমন টমেটো, টমেটো সস, সালসা, সাইট্রাস ফল, কমলালেবু, জাম্বুরা, গ্রেপফ্রুট খালি পেটে খেলে অনেক সময় ঢেঁকুর ওঠে ও বুকজ্বলা হয়।

ঝাল মসলাযুক্ত খাবার : ঝালমসলাযুক্ত খাবার, হট সস বুকজ্বলা ঘটায়। হট ঝাল খাবার ও পেপারমিল্ট শীতল ঝাল মাঝে মধ্যে খাদ্যনালির রন্ধ্রনিয়ন্ত্রককে শিথিল করে ঘটায় বুকজ্বলা। আবার রসুন ও পেঁয়াজ ঝাল বা তেমন মসলাযুক্ত খাবার না হ’লেও বুকজ্বলা ঘটায়।

চকলেট বুকজ্বলা বাড়ায় : চকলেটে রয়েছে ক্যাফিনের ন্যায় উদ্দীপক দ্রব্য। ক্যাফিন বুকজ্বলার জন্য দায়ী হ’তে পারে। চকলেট খাওয়া বাদ না দিতে পারলেও কম খেতেই হবে।

যেসব পানীয় বুকজ্বলা উসকে দেয় : কফি, ক্যাফিনযুক্ত চা, কোলা, অন্যান্য কার্বনেটেড পানীয় এবং মদ পানীয় বকুজ্বলা বৃদ্ধি করে। ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পাকস্থলীতে অম্লরস ক্ষরণ উদ্দীপিত করে এবং মদ্যজাতীয় পানীয় খাদ্যনালির রন্ধ্রনিয়ন্ত্রককে শিথিল করে বুকজ্বলা ঘটায় ও কোমল পানীয়র সোডা পেট ফাঁপায়, তা থেকে বুকজ্বলা বাড়ে।

বুকজ্বলা কমাতে করণীয় : চর্বি খাওয়া কমাতে হবে। প্রিয় খাবারগুলো যে একেবারে বাদ দিতে হবে, তা নয়। এদের ভিন্নভাবে রান্না করলে বা প্রস্তুত করলে বুকজ্বলা প্রশমিত থাকবে। কিছু খাবার তেলে না ভেজে, সেঁকে, আগুনে ঝলসে, গ্রিল করে বা রোস্ট করে খাওয়া যায়। রান্নার রকমফের ঘটিয়ে বুকজ্বলা কমানো যায় এবং স্বাস্থ্যও ভাল হয়।

বুকজ্বলা রোধ করতে হ’লে এমন সব পানীয় নির্বাচন করতে হবে, যেগুলো হিসহিসে, গ্যাসযুক্ত নয়। যেমন হার্বাল টি, দুধ বা শুধু পানি। খাদ্যের সঙ্গে পানি পান করলে পাকস্থলীর অম্লরসও লঘু হবে; বুকজ্বলাও কমবে। টমেটো, কমলা বা লেবুর রস পরিহার করা ভাল।

ঝালগরম খাবার খেলেও ঝাল কমিয়ে আনতে হবে। মরিচ-মসলা কম খেতে হবে। খাবারে যোগ করতে পারেন পুদিনাপাতা, ধনেপাতা। এতে খাবার সুস্বাদু হবে।

ম্যাগি বলেন, আহারের পর চুইংগাম চিবানো ভাল। এতে লালাক্ষরণ বেশি হয়, পাকস্থলীর অম্লরস প্রশমিত হয়, পাকস্থলীর খাবার দ্রুত অন্ত্রনলে যেতে থাকে।

খাওয়ার পরপরই শুয়ে না পড়ে ডিনারের তিন ঘণ্টা পর শোয়া ভাল। ধূমপান করলে স্থূলদেহীদের বুকজ্বলা বেশি হয়। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য ধূমপান বর্জন আবশ্যক। বুকজ্বলা দীর্ঘস্থায়ী হ’লে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ আবশ্যক।

রক্ত বাড়ায় লালশাক

হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ লালচে গোলাপি লালশাক আমাদের দেশের অতি পরিচিত। শাকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রক্ত তৈরী করে। খাবার চিবাতে সক্ষম এমন শিশুদের জন্য লালশাক ভীষণ উপকারী। কারণ শিশুদের প্রচুর পরিমাণে আয়রণ ও আয়োডিন দরকার হয় । আর লালশাক আয়রণের উৎকৃষ্ট উৎস। শিশুর পেটের ও হজমশক্তির অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে হবে। বাড়ন্ত শিশু ও পূর্ণ বয়স্কদের জন্যও এ শাক উপকারী। অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ মানে লো ব্লাড প্রেশার, দুর্বলতা, ক্রমশঃ শক্তি কমে যাওয়া, ডায়াবেটিস রোগী, অস্টিও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লালশাক অপরিসীম ভূমিকা পালন করে।

গর্ভবতী অবস্থা থেকে শিশুর জন্ম ও মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত লালশাক ভীষণ যরূরী। তবে খেয়াল রাখতে হবে গর্ভবতী বেশির ভাগ মায়ের প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে। তাই দুপুরে শাক খাওয়াই ভাল। কারণ ইনটেসটাইন, অর্থাৎ খাবার হজমকারী যরূরী নালিবিশিষ্ট অঙ্গ অধিক রাতে কাজ করে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচল থাকে বেশি। আর রাতে শাক পরিহার করাই ভাল।

মেনোপোজ বা মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া নারীদের হাড় দুর্বল হয়ে আসে। ত্বক ও চুলে আসে বৈরী ভাব। ভংগুর হ’তে থাকে নখ। শরীরে দেখা দেয় আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। লালশাক এ অবস্থায় হ’তে পারে অতীব উপকারী। এ শাক দেহে রক্ত বাড়ায় এবং ত্বক, চুল ও নখের পুষ্টি জোগায়। পুষ্টিমূল্য বিচারে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য লালশাক উপকারী।






আরও
আরও
.