পলিপাস নাসারন্ধ্রের রোগ। এটি একটি অতি পরিচিত সমস্যা। এ রোগে সাধারণত সর্দি লেগে থাকে ও প্রচুর হাঁচি হয়। বিভিন্ন কারণে এ রোগ হ’তে পারে। নিম্নে এ রোগের কারণ ও চিকিৎসা উল্লেখ করা হ’ল।-
পলিপাস কি : মানবদেহের রক্তের ইসনোফিল ও সিরাম আইজিই’র পরিমাণ বেড়ে গেলে ঠান্ডা, সর্দি, হাঁচি লেগে থাকে এবং নাকের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিগুলোতে অ্যালার্জিক প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ঝিল্লি থেকে আস্তে আস্তে এক ধরনের গোশতপিন্ড বাড়তে থাকে। প্রথমে এটা মটরশুটির মতো হয়। আস্তে আস্তে বড় হয়ে আঙ্গুরের মতো হয় এবং নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এটিকে Nasal Polip বা নাকের পলিপাস বলে। এটি এক বা দুই নাকেও হ’তে পারে। এ রোগ মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের অধিক হ’তে দেখা যায়। অনেক সময় ন্যাজাল পলিপাস থেকে রক্ত বের হ’তে দেখা যায়। কোন কোন সময় নরম, নীল বর্ণ, মসৃণ শ্বেতময় ও পুঁজময় ক্ষত হ’তে দেখা যায়।
তবে নাক বন্ধ থাকা মানেই পলিপাস নয় এবং নাক বন্ধ অবস্থায় এর মধ্যে পিন্ডাকৃতির কিছু দেখলেই তা পলিপাস নয়। আবার সব ধরনের পিন্ডই পলিপাস নয়। এজন্য সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে পলিপাস কি-না নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা করা উচিত।
পলিপাসের প্রকারভেদ : নাকের পলিপাস দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- ক. ইথময়ডাল পলিপাস, যা এলার্জির কারণে হয় এবং দুই নাকে হয়। এটা মধ্যম বয়সে দেখা যায়। খ. এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপাস, যা ইনফেকশনের কারণে হয় এবং এক নাকে হয়। এটা শিশু বা কিশোর বয়সে দেখা যায়।
পলিপাস হওয়ার কারণ : নাসারন্ধ্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি হ’তে উদ্ভুদ হয়। নাসিকা প্রদাহ বৃদ্ধির কারণেও হ’তে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যালার্জিজনিত কিংবা দীর্ঘমেয়াদী নাক ও সাইনাসের প্রদাহই এর প্রধান কারণ। এক-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে সঙ্গে হাঁপানিও থাকে। দুই শতাংশ ক্ষেত্রে ঋতু পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জি দায়ী। অনেক সময় বংশানুক্রমিকও হ’তে পারে।
লক্ষণ : এ রোগে নাসারন্ধ্রের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। বারবার হাঁচি, সর্দি থাকা, নাক দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরা, নাক বন্ধ থাকা, নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেওয়া, নাক চুলকানো, নাকে ব্যথা, মাথাব্যথা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, জ্বর জ্বর অনুভূতি, অরুচি, নাক ডাকা, শরীর শুকিয়ে যাওয়া ও কখনো নাকের গোশতপিন্ড বাইরে বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
হোমিও চিকিৎসা : রোগীকে এইসব Blood-এর IGE, Esonophil, ESR এবং X-ray-PNS, Nasopharonix করার পরে নিশ্চিত হয়ে লক্ষণ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। যেমন- S.Nit, S.Cab, Thuga, Lemna, Natmur, Aurum met ইত্যাদি ঔষধগুলি লক্ষণ ভেদে সেব্য। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে কোন প্রকার অস্ত্রপচার ছাড়াই নাকের পলিপাস ও সাইনোসাইটিস থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ।
এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা : অপারেশন করলে সাধারণত নাকের পলিপাস ভাল হয়ে যায়। তবে এই পলিপাস বার বার হ’তে পারে এবং প্রয়োজনবোধে কয়েকবার অপারেশন করা লাগতে পারে। এলার্জি থেকে দূরে থাকলে এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। বিনা অস্ত্রপচারে পলিপাসের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয়। তবে অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের ফলে পলিপাসের ফোলা ভাব কিছুটা কমে আসতে পারে। এছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে নাকে ব্যবহার করা হয়, এতেও পলিপাসের আকার ছোট হয়ে আসতে পারে। আধুনিক পদ্ধতিতে অস্ত্রপচারে নিরাময়ের হার বেশ ভালো।
সতর্কতা : সব ধরনের অ্যালার্জিটিক খাদ্য পরিহার, ঠান্ডা লাগা ও ধূলাবালি থেকে সাবধান থাকতে হবে। প্রথম অবস্থায় পলিপাসের চিকিৎসা না নিলে পরবর্তী সময়ে সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে সাইনোসাইটিস ও এজমা দেখা দেয়।
\ সংকলিত \