চরিত্র মানুষের মুকুট স্বরূপ। মানব জীবনের জন্য চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চরিত্র অর্থ-সম্পদ দিয়ে ক্রয় করার মতো কোন বস্ত্ত নয়। বরং তা জীবন চলার পথে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ সাধনার মাধ্যমে তিলে তিলে অর্জন করতে হয়। পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-গুরুজন সহ পরিচিত জনদের মাধ্যমে তা নির্ণীত হয়। তাদের সাথে চলাফেরা, লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা, ভালবাসা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধা, ধৈর্যশীলতার মত নানাবিধ কাজের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিচার-বিশ্লেষণে একজন ব্যক্তি সচ্চরিত্রবান হিসাবে চিহ্নিত হন। সচ্চরিত্রবান নামক সনদটি নিতে তাকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হন। অনেক দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা নীরবে সইতে হয়। বহু দিনের সাধনালব্ধ এই সনদটি আবার সামান্য ত্রুটির জন্য নিমিষেই চুরমার হয়ে যায় কাঁচের পাত্রের ন্যায়। দেখা যায়, কোন ব্যক্তি সচ্চরিত্রবান উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন, ক’দিন পর স্বীয় প্রবৃত্তি বা শয়তানের প্ররোচনার জালে জড়িয়ে বিভিন্ন হীন কর্মে লিপ্ত হয়ে মুহূর্তেই চরিত্রহীন বলে আখ্যায়িত হয়। সুতরাং নীচে নামাটা যত সহজ উপরে উঠা তত সহজ নয়।
ধরাপৃষ্ঠে মানুষ যখন সচ্চরিত্রের মত মহৎগুণ অর্জনে সক্ষম হবে তখন শান্তির সুবাতাস সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রবাহিত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হ’লেও সত্য যে, আমরা সচ্চরিত্রের সনদটি অর্জনের ব্যাপারে খুবই উদাসীন। তাই মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত উর্দূ কবি আল্লামা ইকবাল আক্ষেপ করে বলেন, মানুষ সূর্যের আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, মাটির মানুষ হয়ে বিচরণ করতে পারে চাঁদের রাজ্যে, অথচ সে এ পৃথিবীতে মানুষের মত হয়ে চলতে পারে না।[1]
আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের জন্য চরিত্রবান মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুন্দর সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত হ’ল সচ্চরিত্রবান মানুষ। মানুষকে চরিত্রবান হ’তে হ’লে শৈশবকাল হ’তে চেষ্টা করতে হয়, তাহ’লে উক্ত প্রচেষ্টা ফলপ্রসু হয়। এক্ষেত্রে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এদেশের মানুষের সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে সাংগঠনিক স্তরকে চারটি ভাগে বিভক্ত করেছে। বয়স্কদের মাঝে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’, যুবকদের মাঝে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’, মহিলাদের মাঝে ‘আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা’ এবং শিশু-কিশোরদের মাঝে ‘সোনামণি’ সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। চারটি স্তরই একই কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
তন্মধ্যে ‘সোনামণি’ শিশু-কিশোরদের সার্বিক জীবন সুন্দর করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। শিশুর চরিত্র নির্মল ও সুন্দর করার বাস্তব পদক্ষেপও রয়েছে ‘সোনামণি’ সংগঠনের কার্যক্রমে। এক্ষণে আমরা ‘শিশুদের চরিত্র গঠনে সোনামণি সংগঠনের ভূমিকা’ সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
‘সোনামণি’ সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হ’ল ‘শিশু-কিশোরদের মাঝে ইসলামী চেতনা সৃষ্টি ও তদনুযায়ী জীবন ও সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।[2] মূলতঃ চরিত্রবান হওয়া ছাড়া কোন ক্রমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব নয়। আর সচ্চরিত্রবান হওয়ার জন্য নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আদর্শের অনুসরণ করতে হবে। কেননা এ পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম ও অনুসরণীয় হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। মহান আল্লাহ তাঁর সুমহান চরিত্রের সনদ দিয়েছেন এভাবে, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘নিশ্চয়ই আপনি মহত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত’ (কলম ৪)।
এ আয়াতে মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ বলে অভিহিত করেছেন। অনুরূপভাবে তাঁর ছাহাবীগণের ঘোষণায়ও তাঁর চরিত্রের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে। যেমন আনাস (রাঃ) বলেন, خَدَمْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ سِنِيْنَ، فَمَا قَالَ لِى أُفٍّ، وَلاَ لِمَ صَنَعْتَ وَلاَ أَلاَّ صَنَعْتَ- ‘আমি একাধারে দশ বছর নবী করীম (ছাঃ)-এর খেদমত করেছি। কিন্তু তিনি কোন দিন আমাকে ‘উফ’ শব্দটি পর্যন্তবলেননি। এমনকি একাজটি কেন করেছ আর তা কেন করনি- এমন কথাও কোন দিন বলেননি।[3]
আনাস (রাঃ) আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম চরিত্রের মানুষ। একদা কোন এক কাজে আমাকে পাঠাতে চাইলেন। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যাব না। কিন্তু আমার মনের মধ্যে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে কাজের জন্য আমাকে আদেশ করেছেন, আমি সে কাজে অবশ্যই যাব। অতঃপর আমি বের হ’লাম এবং এমন কতিপয় বালকদের নিকট এসে পৌঁছলাম যারা বাজারের মধ্যে খেলাধুলা করছিল। এমন সময় হঠাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পিছন হ’তে আমার ঘাড় চেপে ধরলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি হাসছেন। তখন তিনি স্নেহের স্বরে বললেন, হে উনাইস! আমি তোমাকে যে কাজের জন্য আদেশ করেছিলাম সেখানে কি তুমি গিয়েছিলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এইতো আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।[4] তিনি আরো বলেন, আমার বয়স যখন আট বছর তখন রাসূল (ছাঃ)-এর খিদমতে যোগ দেই এবং দশ বছর যাবৎ তার খেদমত করেছি। কোন সময় কোন জিনিস নষ্ট হয়ে গেলেও তিনি আমাকে কখনো তিরস্কার করতেন না। যদি পরিবার বর্গের কেউ আমাকে তিরস্কার করতেন, তখন তিনি বলতেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা যা হওয়ার ছিল তা তো হবেই।[5]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, مَا ضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئًا قَطُّ بِيَدِهِ وَلاَ امْرَأَةً وَلاَ خَادِمًا إِلاَّ أَنْ يُجَاهِدَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَمَا نِيْلَ مِنْهُ شَىْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمَ مِنْ صَاحِبِهِ إِلاَّ أَنْ يُنْتَهَكَ شَىْءٌ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ- অর্থাৎ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থা ব্যতীত কখনো কাউকে নিজ হাতে প্রহার করেননি। নিজের স্ত্রীগণকেও না, খাদেমকেও না। আর যদি তাঁর দেহে বা অন্তরে কারো পক্ষ হ’তে কোন প্রকার কষ্ট বা ব্যথা লাগত, তখন নিজের ব্যাপারে সে ব্যক্তি হ’তে কোন প্রকারের প্রতিশোধ নিতেন না। কিন্তু যদি কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে বসত, তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে শাস্তি দিতেন’।[6]
আনাস (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) একটি নাজরানী চাদর গায়ে জড়িয়ে পথ চলছিলেন। পথিমধ্যে এক বেদুইন তার চাদর ধরে হেঁচকা টান দেয়। ফলে চাদরের টানে তাঁর গলায় দাগ পড়ে যায়। এরপর ঐ বেদুইন বলল, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! আল্লাহ তা‘আলার যে সকল সম্পদ আপনার হাতে আছে তা হ’তে আমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিন। তখন নবী করীম (ছাঃ) তার দিকে ফিরে তাকালেন এবং হেসে ফেললেন। অতঃপর তাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিলেন।[7]
উপরোক্ত হাদীছগুলো থেকে এটাই প্রতিভাত হয় যে, রাসূল (ছাঃ) পৃথিবীতে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। চারিত্রিক দিক দিয়ে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর আদর্শ গ্রহণ করার মধ্যেই মুসলিম জাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই ‘সোনামণি’ সংগঠনের মূলমন্ত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে নিজেকে গড়া’।[8] উক্ত মূলমন্ত্র নিম্নোক্ত আয়াতের আলোকে গ্রহণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ২১)। ‘সোনামণি’ সংগঠন প্রতিটি শিশুকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর চরিত্রে গড়ে তুলতে চায়। এজন্য সোনামণির ৫টি নীতিবাক্যের (খ) নম্বরে বলা হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সর্বোত্তম আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করি’।[9]
‘সোনামণি’ সংগঠন ঘোষণা করেছে যে, প্রত্যেক সোনামণিকে নবী করীম (ছাঃ)-এর আদর্শে নিজেকে গড়তে হবে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁকেই সর্বোত্তম আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। কেননা তাঁর আদর্শ মান্য করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, قُلْ أَطِيْعُوْا اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ، ‘হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহকে মান্য কর ও রাসূলের অনুসরণ কর। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নেও তাহ’লে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে ভালবাসেন না’ (আলে ইমরান ৩১-৩২)।
আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ- ‘রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং তিনি যা নিষেধ করেন তা বর্জন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর’ (হাশর ৭)।
তিনি আরো বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوْا اللهَ وَأَطِيْعُوْا الرَّسُوْلَ وَأُوْلِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে মান্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আর তোমাদের মধ্যকার নেতাকেও মান্য কর। যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মাঝে মতনৈক্যের সৃষ্টি হয় তাহ’লে বিবদমান বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও’ (নিসা ৫৯)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلاَ تُبْطِلُوْا أَعْمَالَكُمْ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং তদীয় রাসূলের। আর তোমাদের আমলগুলো ধ্বংস করে দিও না’ (মুহাম্মাদ ৩৩)।
উক্ত আয়াতগুলো থেকে সহজেই অনুমিত হয় যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর অনুসরণের মধ্যেই মুসলিম জাতির কল্যাণ নিহিত। পক্ষান্তরে তাঁর অনুসরণ না করলে আমল বরবাদ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও তাঁর অনুসরণের জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى- ‘আমার সকল উম্মতই জান্নাতে যাবে কেবলমাত্র অস্বীকারকারী ব্যতীত। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অস্বীকারকারী কে? উত্তরে তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার অবাধ্যতা করবে সে অস্বীকারকারী’।[10]
অন্যত্র তিনি বলেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ! যদি এখন মূসা (আঃ) প্রকাশিত হন। আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ কর তাহ’লে তোমরা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হবে। মূসা (আঃ) পুনরায় যদি জীবিত হন আর আমার নবুওয়াত কাল পেয়ে যান তাহ’লে তিনি আমারই অনুসরণ করবেন।[11]
তিনি আরো বলেন, لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ- ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকটে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এমনকি সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তর হব’।[12]
সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে মানব জাতির মুক্তি। তাঁর হুবহু অনুসরণ করেই ছাহাবায়ে কেরাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। তাই আমরা সোনামণি শিশু-কিশোরদেরকে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আদর্শে গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্যেই সোনামণির মূলমন্ত্র ও নীতিবাক্য সমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘সোনামণি’র পাঁচটি নীতিবাক্যের (গ) নম্বরে বলা হয়েছে- ‘নিজেকে সৎ ও চরিত্রবান হিসাবে গড়ি তুলি’।[13] অর্থাৎ সোনামণির প্রত্যেক সদস্য সৎ ও চরিত্রবান হিসাবে জীবন গঠনে সচেষ্ট থাকবে। কেননা সচ্চরিত্রই হচ্ছে পুণ্য। যা আদর্শ মানুষ, সমাজ ও জাতি গঠনের মূল উপাদান। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِيْ صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَن يَّطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ- ‘পুণ্য হ’ল উত্তম স্বভাব বা চরিত্র। আর পাপ হ’ল যে কাজ তোমার অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করে এবং তুমি ঐ কাজটি জনসমাজে প্রকাশ হওয়াটা অপসন্দ কর’।[14] অর্থাৎ চরিত্রের মাঝেই রয়েছে পুণ্য বা কল্যাণ। বস্ত্ততঃ সমাজে উত্তম তারাই যাদের চরিত্র ভাল। চরিত্রবান মানুষকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ভালবাসে। পক্ষান্তরে দুশ্চরিত্রের লোককে সকলেই ঘৃণার চোখে দেখে। সুতরাং সমাজের মানুষের কাছে প্রিয় পাত্র হওয়ার জন্য উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। উত্তম চরিত্রের মানুষ সবচেয়ে ভাল। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, خِيَارُكُمْ أَطْوَلُكُمْ أَعْمَارًا وَأَحْسَنُكُمْ أَخْلاَقًا- ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় যার বয়স বেশী ও চরিত্র ভাল’।[15] তিনি আরো বলেন, إِن مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا- ‘তোমাদের মধ্যে আমার নিকটে প্রিয় সে ব্যক্তিই যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’।[16] মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি একদা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সর্বোত্তম জিনিস কোন্টি যা মানব জাতিকে দেয়া হয়েছে? তিনি বললেন, الْخُلُقُ الْحَسَنُ ‘উত্তম চরিত্র’।[17]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদর্শে শিশু-কিশোরদের জীবন গঠনের জন্য দরকার যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ মানুষকে বিভিন্ন বিষয় বুঝতে সহজ করে দেয়। জটিল কোন বিষয়ও আয়ত্ত্ব করতে সহজ করে দেয়। তাই শিশুদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ। যেমন ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সন্তানদের প্রশিক্ষণের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন। পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লিখিত হয়েছে, رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ العَزِيْزُ الحَكِيْمُ ‘হে আমাদের রব! তাদের প্রতি তাদের জাতির মধ্য হ’তেই এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই আপনি বড় শক্তিমান ও বিজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ১২৯)।
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে মহানবী (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে ব্যক্তি কুরআন নিজে শিক্ষা করে এবং তা অপরকে শিক্ষা দেয়।[18] প্রশিক্ষণের গুরুত্ব উপরের আলোচনা থেকে সহজেই অনুমিত হয়। তাই সোনামণির চার দফা কর্মসূচীর তৃতীয় দফা হ’ল- তারবিয়াত বা প্রশিক্ষণ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদেরকে চরিত্রবান ও যোগ্য করে গড়ে তোলা।[19]
ওমর ইবনু আবু সালমা (রাঃ) বলেন, كُنْتُ غُلاَمًا فِيْ حِجْرِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَتْ يَدِيْ تَطِيْشُ فِي الصفحة. فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سم الله وكل يَمِيْنِكَ وكل مِمَّا يَلِيْكَ- ‘আমি শৈশবে রাসূল (ছাঃ)-এর গৃহে ছিলাম। আমার হাত খাবার পাত্রের চতুর্দিকে যাচ্ছিল। তখন রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, ‘বিসমিল্লাহ’ বল, ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হ’তে খাও’।[20] এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, শিশুকে সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।
‘সোনামণি’ সংগঠনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আদর্শ জাতি গঠন করা। এজন্য শাখা সংগঠনের এক পর্যায়ে বলা হয়েছে, ‘বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসলামী আদব ও আচরণ শিক্ষার ব্যবস্থা করা’।[21] ‘সোনামণি’ কেন্দ্রের দায়িত্ব-কর্তব্যের অন্যতম হচ্ছে, ‘শিশু কিশোরদের চরিত্র গঠন মূলক অনুষ্ঠানাদির ব্যবস্থা করা’।[22]
‘সোনামণি’র পাঁচটি নীতিবাক্য ও দশটি গুণাবলীর প্রতিটিই শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনমূলক। প্রবন্ধের কলেবরের দিকে খেয়াল রেখে দশটি গুণাবলীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হ’ল। সোনামণি গুণাবলীর দু’নম্বরে বলা হয়েছে, ‘মাতা-পিতা, শিক্ষক ও মুরববী, পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলমানকে সালাম দেওয়া ও মুছাফাহা করা। মুসলিম-অমুসলিম সকলের সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করা’।[23] সকলকে সালাম দিতে হবে মর্মে হাদীছে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন কাজ সর্বোত্তম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَّمْ تَعْرِفْ- ‘তুমি অন্যকে (দরিদ্রকে) খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম প্রদান করবে’।[24] আর মুছাফাহা সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন দু’জন মুসলমান পরস্পর একত্রিত হয়ে মুছাফাহা করে, তখন তাদের দু’জনের পৃথক হওয়ার পূর্বেই উভয়কে ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।[25]
তিন নম্বর গুণাবলীতে বলা হয়েছে, ‘ছোটদের স্নেহ করা ও বড়দের সম্মান করা। সদা সত্য কথা বলা, সর্বদা ওয়াদা পালন করা ও আমানত রক্ষা করা’।[26]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا وَيَعْرِفْ شَرَفَ كَبِيْرِنَا ‘যে ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের অধিকার সম্পর্কে ভ্রুক্ষেপ করে না (অর্থাৎ বড়দের সম্মান করে না), সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[27]
নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেন, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে ভালবাসার আন্তরিক কামনা করে অথবা এই কামনা-বাসনা করে যে, তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) ভালবাসবেন, সে যেন সদা সত্য কথা বলে, যদি আমানত রাখা হয় তাহ’লে যেন যথারীতি ফেরৎ দেয় এবং প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করে’।[28] অন্য হাদীছে মিথ্যা কথা বলা, ওয়াদা বা অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ও আমানতের খেয়ানত করাকে মুনাফিকের চিহ্ন বলে অভিহিত করা হয়েছে।[29]
ছয় নম্বর গুণাবলীতে বলা হয়েছে, ‘সেবা, ভালবাসা ও আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেকে আদর্শ হিসাবে গড়ে তোলা’।[30] মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা পীড়িত অবস্থায় ছিল, অথচ তুমি তার সেবা করনি। তুমি যদি তার সেবা করতে তাহ’লে তার নিকট আমাকে পেতে’।[31] প্রতিটি সোনামণি এ গুণাবলী অর্জন করে পরবর্তী জীবন গঠন করতে পারলে তাদের দ্বারা আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব।
সাত নম্বর গুণাবলীতে বলা হয়েছে, ‘বৃথা তর্ক, ঝগড়া, মারামারি এবং রেডিও-টিভির বাজে অনুষ্ঠান ও অসৎ সঙ্গ এড়িয়ে চলা’।[32] প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির কাজ হ’ল উত্তম কথা বলা নতুবা চুপ থাকা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[33] আল্লাহ বলেন, وَأَطِيعُوْا اللهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوْا ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। আর পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদ করবে না’ (আনফাল ৪৬)। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘কোন ব্যক্তির পেটকে কদর্য পুঁজ দ্বারা পরিপূর্ণ করা, যে পুঁজ শরীর নষ্ট করে দেয়, তা (চরিত্র বিধ্বংসী অশ্লীল) কবিতা, গান দ্বারা ভর্তি হওয়া অপেক্ষা উত্তম’।[34] সৎসঙ্গ গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও’ (তওবা ১১৯)। শিশুদের চরিত্রবান হিসাবে গড়ে তুলতে চাইলে অবশ্যই তাদেরকে সৎসঙ্গীর সাথে চলাফেরা করাতে হবে।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, لَمْ يَكُنْ فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا وَلاَ صَخَّابًا فِى الأَسْوَاقِ وَلاَ يَجْزِى بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَصْفَحُ- অর্থাৎ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশোভন কথা বলার চেষ্টাও করতেন না। তিনি হাট-বাজারে শোরগোলকারী ছিলেন না এবং তিনি মন্দের প্রতিশোধ মন্দের দ্বারা নিতেন না; বরং তা ক্ষমা করে দিতেন এবং উপেক্ষা করে চলতেন’।[35]
আট নম্বর গুণাবলীতে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর ব্যবহার করা’।[36] এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[37] তিনি আরো বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ ‘ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, যার অত্যাচার, অনিষ্ট ও উৎপীড়ন-নিপীড়ন থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়’।[38] শিশুদেরকে এসব গুণাবলী অর্জনের তাকীদ করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের নৈতিক চরিত্র গঠনে ‘সোনামণি’ এক অতুল্য প্লাটফরম। একে পরশ পাথর বললেও অত্যুক্তি হবে না। কেননা ‘সোনামণি’র সদস্য হয়ে একজন শিশু জ্ঞান লাভ করে কিভাবে বাড়ীতে প্রবেশ করতে হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা দিনের কাজগুলি কিভাবে সুচারুরূপে সুসম্পন্ন করতে হয়; ছোট-বড় সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-গুরুজন সবার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়; টেলিফোন রিসিভ করে বা কল করে কি বলতে হয়; এসব সে অতি সহজেই রপ্ত করে। সাথে সাথে সততা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী ও অঙ্গীকার রক্ষা, দায়িত্ব সচেতন ও কর্তব্য পালনে তৎপর হয়ে ওঠে। এক কথায় মানবীয় সকল সৎগুণাবলীর সমাবেশ ঘটে তার মাঝে। তাই ‘সোনামণি’ এদেশের এক অনন্য শিশু-কিশোর সংগঠন; যা দেশ ও জাতির সেবায় সতত নিয়োজিত।
শেষকথা : মহানবী (ছাঃ) তমসাচ্ছন্ন জাহেলী যুগে মনুষত্য বিকিয়ে পশুত্ববরণকারী মানুগুলোর হৃদয়ের গহীনে সচ্চরিত্রের কিরণ জ্বেলে একেকজনকে হীরার টুকরায় পরিণত করেছিলেন। ঘোর অন্ধকার দূর করেছিলেন ইসলামী আদর্শের কেতন উড়িয়ে। শত-সহস্র বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে অগ্রসর হয়েছিলেন চূড়ান্ত লক্ষ্য পানে। কালজয়ী আদর্শে গড়ে তুললেন নিবেদিত প্রাণ এক ঝাঁক মুসলিম সৈন্য বাহিনী। বিশ্ববাসীকে চমকে দিলেন, দ্রুত গতিতে মানুষগুলোর পরিবর্তন দেখিয়ে। জাতিকে উপহার দিলেন অকল্পনীয় এক আদর্শ সমাজ। আর এতসব কিছু করেছিলেন আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রের উন্নতি সাধন করেই। তাই বলা যায়, চারিত্রিক উন্নতি ছাড়া কোন জাতির উন্নতি সাধিত হ’তে পারে না। এ প্রসঙ্গে প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট লুথার কিং যথার্থই বলেছেন, The Prosperity of a Country dose not consists in its fabulous wealthor magnificent buildings, but in its men of education culture and character. ‘বিপুল সম্পদ ও মনোরম প্রাসাদের মধ্যে কোন দেশের উন্নতি নিহিত থাকে না; বরং তা নির্ভর করে শিক্ষা-দীক্ষায় ও উন্নত চরিত্রবান অধিবাসীদের উপর’।[39] ইমাম গাযযালী বলেন, আল-কুরআন ও হাদীছ দ্বারা ইসলাম ব্যক্তি চরিত্রে যে সকল গুণাবলীর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে, তাহ’ল চারিত্রিক আদর্শ। কোন দেশ বা জাতি যতক্ষণ পর্যন্ত নৈতিক মূল্যবোধের বা আদর্শের ভিত্তিতে নিজের জীবনযাত্রা নির্বাহ করবে, তারা ততদিন ধ্বংস প্রাপ্ত হবে না। এটাই আল্লাহর চিরন্তন বিধান।[40]
‘সোনামণি’ সংগঠন শিশু-কিশোরদের পুরো জীবনই মহানবী (ছাঃ)-এর আদর্শে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ অব্যাহত রেখেছে। শিশুদের চরিত্র গঠনে ‘সোনামণি’ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ‘সোনামণি’র লক্ষ্য উদ্দেশ্য, মূলমন্ত্র, কর্মসূচী, কার্যক্রম, পাঁচটি নীতিবাক্য ও দশটি গুণাবলী যার সুস্পষ্ট প্রমাণ। সোনামণির গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আদর্শ চরিত্রবান জাতি গঠনই এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন -আমীন!
ইমামুদ্দীন
কেন্দ্রীয় পরিচালক, সোনামণি ও সহকারী শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, অনুবাদ: মুহাম্মাদ যইনুল আবেদীন, প্রবন্ধ : একটি আদর্শ সমাজের সন্ধানে, মাসিক অগ্রপথিক (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯৭ইং), ঈদ-ই মিল্লাদুন্নবী সংখ্যা, পৃঃ ২৮১।
[2]. গঠনতন্ত্র, (রাজশাহী : সোনামণি, ৩য় সংস্করণ, ২০১০), পৃঃ ৪।
[3]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮০১।
[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮০২।
[5]. বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান হা/১৪২৯; মিশকাত হা/৫৮১৯, সনদ ছহীহ।
[6]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১৮।
[7]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮০৩।
[8]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ৪।
[9]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ১৩।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/৭২৮০।
[11]. দারেমী, মিশকাত হা/১৯৪, সনদ ছহীহ।
[12]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী, হা/১৫।
[13]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ১৩।
[14]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৩।
[15]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৪।
[16]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫০৭৫।
[17]. বায়হাক্বী, ছহীহ তারগীব ২৬৫২; মিশকাত হা/৫০৭৮; হাদীছ ছহীহ।
[18]. বুখারী, মিশকাত হা/২১৯০।
[19]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ৫।
[20]. মুত্তাফাক্ব আলাই, মিশকাত হা/৪১৫৯।
[21]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ৬।
[22]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ৮।
[23]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ১৪।
[24]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/২৮।
[25]. ছহীহ আবূদাঊদ, হা/৫২১২।
[26]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ১৪।
[27]. ছহীহ তিরমিযী হা/২০০২, আবুদাঊদ, হা/৪১৩৪।
[28]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৯৯০, সনদ হাসান।
[29]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৩৩।
[30]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ১৪।
[31]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮০১।
[32]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ১৪।
[33]. ছহীহ বুখারী হা/৬০১৭।
[34]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৬১৫৪-৫৫।
[35]. তিরমিযী হা/১৯৭৫, সনদ ছহীহ।
[36]. গঠনতন্ত্র, পৃঃ ১৪।
[37]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৫৯৮৪।
[38]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৬০১৬।
[39]. সৈয়দ বদরুদ্দোজা, হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) তার শিক্ষা ও অবদান, (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯৭ইং), পৃঃ ১০৪।
[40]. ইমাম গাযযালী, খুলুকে মুসলিম, অনুবাদ মাওলানা মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ (ঢাকা : নওমুসলিম কল্যাণ সংস্থা, ৫ম সংস্করণ, ১৯৯০ইং), পৃঃ ৬৬।