পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । শেষ পর্ব ।
নেতৃবৃন্দের কথা শোনা ও আনুগত্য করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ সমূহ :
১৪- عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصُّبْحَ ذَاتَ يَوْمٍ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا، فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيْغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ، وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا؟ فَقَالَ: أُوصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِيْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ، فَتَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ-
১৪. ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে ফজরের ছালাত পড়ালেন। অতঃপর আমাদের
দিকে মুখ ফিরিয়ে এমন মর্মস্পর্শী বক্তব্য প্রদান করলেন যে, তাতে চোখ দিয়ে
অশ্রু প্রবাহিত হ’ল এবং অন্তর ভীত হ’ল। তখন একজন ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)! এ যেন বিদায়ী ভাষণ! আপনি আমাদেরকে কি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছেন?
তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি অর্জনের এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা
শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি। যদিও তিনি কোন নিগ্রো দাস হন। কারণ
তোমাদের মধ্যে যে আমার পরে জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখবে। সুতরাং
তোমরা আমার ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা মাঢ়ির দাঁত
দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। আর তোমরা ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি করা হ’তে বিরত
থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[1]
১৫- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ رَأىَ مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ إِلاَّمَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً-
১৫. ইবনু আববাস (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের
মধ্যে অপসন্দনীয় কোন কিছু দেখবে, সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কারণ যে ব্যক্তি
জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়ে গেল অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, সে
জাহেলিয়াতের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল’।[2] বুখারী ও মুসলিমের অন্য বর্ণনায়
রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا
فَلْيَصْبِرْ، فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ
مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের কোন কিছু অপসন্দ করবে, সে
যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি শাসকের আনুগত্য থেকে এক বিঘত পরিমাণ
বের হয়ে গেল, সে জাহেলিয়াতের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল’।[3]
১৬- عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ اِلَجَمَاعَةَ فَمَاتَ مِيْيَةً جَاهِلِيَّةً، وَ مَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضِبُ لِعَصَبِيَّةٍ أَوْ يَدْعُوْا لِعَصَبِيَّةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبِيَّةً فَقُتِلَ فَقِتْلَتُهُ جَاهِلِيَّةٌ وَ مَنْ خَرَجَ مِنْ أُمَّتِىْ يَضْرِبُ بِرَّهَا وَ فَاجِرَها وَلاَيَتَحَاشُ مِنْ مُوْمِنِهَا وَلاَيَفِىْ لِذِىْ عَهْدٍ بِعَهْدِهِ فَلَيْسَ مِنِّىْ وَ لَسْتُ مِنْهُ.
১৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (নেতার) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল ও
জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হল, অতঃপর মারা গেল, সে জাহেলিয়াতের উপরে মৃত্যুবরণ
করল। আর যে ব্যক্তি এমন পতাকাতলে যুদ্ধ করে, যার হক ও বাতিল হওয়া সম্পর্কে
তার স্পষ্ট জ্ঞান নেই। বরং সে দলীয় প্রেরণায় ক্রুদ্ধ হয়, দলীয় প্রেরণায়
লোকদের আহবান করে ও দলীয় প্রেরণায় মানুষকে সাহায্য করে, অতঃপর নিহত হয়।
এমতাবস্থায় সে জাহিলেয়াতের উপরে নিহত হয়। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের
জামা‘আত থেকে বের হয়ে তাদের ভাল-মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করবে,
মুমিনকেও রেহাই দিবে না এবং যার সাথে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তার প্রতিশ্রুতিও
রক্ষা করবে না, সে আমার উম্মত নয় এবং আমিও তার কেউ নই’।[4]
১৭- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: مَنْ نَزَعَ يَداً مِنْ طَاعَةٍ أَوْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً-
১৭. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে তার হাত গুটিয়ে নিল অথবা জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে গেল, সে জাহেলিয়াতের উপরে মৃত্যুবরণ করল’।[5]
১৮- عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ وَاسْتَذَلَّ الْإِمَارَةَ لَقِيَ اللهَ وَلَا حُجَّةَ لَهُ-
১৮.
হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে
শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং ইমারতকে লাঞ্ছিত
করল, সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার পক্ষে কোন
দলীল-প্রমাণ থাকবে না’।[6]
১৯- عَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيْعَةَ، عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً، وَمَنْ نَكَثَ الْعَهْدَ وَمَاتَ نَاكِثاً لِلْعَهْدِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ-
১৯. আমের ইবনু রাবী‘আহ হ’তে বর্ণিত, তিনি নবী করীম
(ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আত
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, সে জাহেলিয়াতের উপরে মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি
অঙ্গীকার ভঙ্গ করল এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, সে
ক্বিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার কোন দলীল-প্রমাণ থাকবে না’।[7]
আমের ইবনু রাবী‘আহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
سَتَكُونُ أُمَرَاءُ بَعْدِىْ يُصَلُّوْنَ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا وَيُؤَخِّرُوْنَ عَنْ وَقْتِهَا فَصَلُّوْهَا مَعَهُمْ، فََإِنْ صَلَّوْهَا لِوَقْتِهَا وَصَلَّيْتُمُوْهَا مَعَهُمْ فَلَكُمْ وَلَهُمْ وَإِنْ أَخَّرُوهَا عَنْ وَقْتِهَا وَصَلَّيْتُمُوهَا مَعَهُمْ فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ، مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ نَكَثَ الْعَهْدَ فَمَاتَ نَاكِثاً لِلْعَهْدِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ-
‘অচিরেই আমার পরে এমন নেতৃবৃন্দ হবে যাদের কেউ যথা সময়ে ছালাত আদায় করবে এবং কেউ দেরীতে ছালাত আদায় করবে। অতএব তোমরা তাদের সাথে ছালাত আদায় কর। যদি তারা যথাসময়ে ছালাত আদায় করে এবং তোমরাও তাদের সাথে ছালাত আদায় কর, তাহ’লে তোমাদের এবং তাদের সবার জন্যই ছওয়াব রয়েছে। আর তারা যদি নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরীতে ছালাত আদায় করে এবং তোমরাও তাদের সাথে ছালাত আদায় কর, তাহ’লে তোমরা ছওয়াব পেয়ে যাবে এবং দেরী করার গুনাহ তাদের উপর বর্তাবে। যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, সে জাহেলিয়াতের উপরে মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি অঙ্গীকার ভঙ্গ করল এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ থাকবে না’।[8] এ হাদীছের সনদে আছেম ইবনু ওবায়দুল্লাহ নামক রাবী থাকায় হাদীছের সনদ যঈফ। কিন্তু এর পক্ষে বহু শাহেদ (সমর্থক হাদীছ) থাকায় হাদীছটি হাসান। ইবনু আদী বলেন, তার বর্ণিত হাদীছ লেখা যায়।
২০- عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا، فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ-
২০. আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ
বের হয়ে গেল, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের গন্ডি ছিন্ন করল’।[9] আলবানী (রহঃ) বলেন, ইবনু ওমর ও হারেছ আশ‘আরী বর্ণিত হাদীছ এই হাদীছের শাহেদ হওয়ায় হাদীছটি ছহীহ।[10]
২১- عَنِ الْحَارِثِ الأَشْعَرِىِّ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: إِنَّ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ...، (فذكر الحديث) وفيه- (قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم): أَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ، اللهُ أَمَرَنِى بِهِنَّ: بِالْجَمَاعَةِ وَالسَّمْعِ وَالطَاعَةِ وَالْهِجْرَةِ، وَالْجِهَادِ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ الْجَمَاعَةِ قِيْدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَى أَنْ يَرْجِعَ، وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ، فَإنَهُ مِنْ جُثَي جَهَنَّمَ. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَإِنْ صَلَّى وَ صَامَ؟ قَالَ: وَإِنْ صَلَّى وَ صَامَ، فَادْعُوْا بدعوي الله الَّذِيْ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ عِبَادَ اللهِ-
২১. হারেছ আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহ্ইয়া ইবনু
যাকারিয়া (আঃ)-কে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন... (অতঃপর দীর্ঘ হাদীছ
উল্লেখ করেন)। তাতে রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি
বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, আল্লাহ আমাকে যেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন (১)
জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা (২) আমীরের নির্দেশ শ্রবণ করা (৩) তাঁর আনুগত্য
করা (৪) হিজরত করা ও (৫) আল্লাহর পথে জিহাদ করা। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত
থেকে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়ে গেল, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের গন্ডি ছিন্ন
করল যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে ব্যক্তি মানুষকে জাহেলিয়াতের দিকে আহবান
জানাল, সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত হ’ল। তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ)! যদিও সে ছালাত আদায় করে এবং ছিয়াম পালন করে? তিনি বললেন, যদিও সে
ছালাত আদায় করে এবং ছিয়াম পালন করে। অতএব তোমরা আল্লাহর প্রদত্ত নামে ডাকো।
যিনি তোমাদেরকে মুসলিমীন, মুমিনীন ও ইবাদুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) নামে
নামকরণ করেছেন’।[11]
জামে‘ তিরমিযীতে হাদীছটির পূর্ণরূপ এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ الْحَارِثِ الأَشْعَرِىِّ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: إِنَّ اللهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بَنِىْ إِسْرَائِيْلَ أَنْ يَعْمَلُوْا بِهَا، وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا، فَقَالَ عِيْسَى: إِنَّ اللهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بَنِى إِسْرَائِيْلَ أَنْ يَعْمَلُوْا بِهَا، فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ وَإِمَّا أَنَا آمُرُهُمْ، فَقَالَ يَحْيَى: أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِىْ بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِىْ أَوْ أُعَذَّبَ، فَجَمَعَ النَّاسَ فِىْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَامْتَلأَ الْمَسْجِدُ، وَقَعَدُوْا عَلَى الشُّرَفِ، فَقَالَ: إِنَّ اللهَ أَمَرَنِىْ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوْا بِهِنَّ. أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوْا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ فَقَالَ: هَذِهِ دَارِى وَهَذَا عَمَلِى فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَىَّ فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّى إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُوْنَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ؟ وَإِنَّ اللهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلاَ تَلْتَفِتُوْا، فَإِنَّ اللهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِىْ صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ، وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِىْ عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيْهَا مِسْكٌ، فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا، وَإِنَّ رِيْحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ، وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَأَوْثَقُوْا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوْهُ لِيَضْرِبُوْا عُنُقَهُ، فَقَالَ: أَنَا أَفْدِيْهِ مِنْكُمْ بِالْقَلِيْلِ وَالْكَثِيْرِ. فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوْا اللهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِىْ أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِيْنٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذَلِكَ الْعَبْدُ لاَ يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلاَّ بِذِكْرِ اللهِ، قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللهُ أَمَرَنِى بِهِنَّ...(فذكره).
‘হারেছ আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহ্ইয়া ইবনু
যাকারিয়া (আঃ)-কে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন তিনি সে অনুযায়ী আমল
করেন এবং বানী ইসরাঈলকে সে অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দেন। তিনি তদনুযায়ী
আমল করতে বিলম্ব করছিলেন, তখন ঈসা (আঃ) তাকে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে
পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আপনি সে অনুযায়ী আমল করেন এবং বানী
ইসরাঈলকে সে অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দেন। আপনি তাদেরকে নির্দেশ দেন
অন্যথা আমি তাদেরকে নির্দেশ দিব। তখন ইয়াহইয়া (আঃ) বললেন, আপনি যদি আমার
পূর্বে নির্দেশ দেন তাহ’লে আমি আমাকে মাটির নিচে দাবিয়ে দেওয়ার অথবা আমাকে
শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা করছি। অতঃপর তিনি লোকদেরকে বায়তুল মাক্বদাসে সমবেত
করলেন। মসজিদ ভরে গেলে তারা বারান্দায় বসল। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা
আমাকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে আমি সে অনুযায়ী আমল করি এবং
তোমাদেরকে সে অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দেই। তন্মধ্যে প্রথমটি হ’ল তোমরা
কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আল্লাহর সাথে
অংশীদার স্থাপনকারীর উদাহরণ সে ব্যক্তির ন্যায়, যে তার সম্পদের খাঁটি সোনা ও
রূপা দিয়ে একটি দাস ক্রয় করে তাকে বলল, এটা আমার ঘর আর এগুলো আমার কাজ।
তুমি এ কাজগুলো করবে এবং এর প্রাপ্য আমাকে বুঝিয়ে দিবে। সে কাজ করতে থাকল
এবং মালিক ব্যতীত অন্যকে এর সুফলাদি দিতে থাকল। তোমাদের কে খুশি হবে যে তার
দাস এরূপ হোক? ২. আল্লাহ তোমাদেরকে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব
তোমরা ছালাত আদায়কালে এদিক-সেদিক তাকাবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর
মুখমন্ডল বান্দার মুখমন্ডলের দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন যতক্ষণ না বান্দা
এদিক-সেদিক তাকায়। ৩. আমি তোমাদেরকে ছিয়াম পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি। ছিয়াম
পালনকারীর উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে একটি দলের সাথে অবস্থান করছে আর
তার সাথে রয়েছে সুগন্ধিযুক্ত একটি থলে। সবাই সেটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে অথবা
সেটি সবাইকে তার প্রতি আকৃষ্ট করছে। আর ছিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ মিশকে
আম্বরের সুগন্ধি অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অতি পবিত্র। ৪. আমি তোমাদেরকে
ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিচ্ছি। ছাদাক্বাকারীর উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায়,
যাকে শত্রুরা পাকড়াও করে তার ঘাড়ের সাথে হাত বেঁধে ফেলেছে এবং তাকে হত্যার
জন্য বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। তখন সে বলল, আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে আমার
কম-বেশী সমস্ত সম্পদ তোমাদেরকে দিচ্ছি। অতঃপর সে মালের বিনিময়ে নিজেকে
ছাড়িয়ে নিল (অনুরূপ ছাদাক্বাকারী ছাদাক্বা করার মাধ্যমে নিজেকে বিপদমুক্ত
করে)। ৫. আমি তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির করার নির্দেশ দিচ্ছি। যিকিরকারীর
উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যার শত্রুরা দ্রুততার সাথে তার পিছু ধাওয়া করেছে
অতঃপর সে একটি সুরক্ষিত দুর্গে গমন করে নিজেকে তাদের থেকে রক্ষা করল।
তদ্রূপ কোন বান্দা আল্লাহর যিকর ব্যতীত নিজেকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করতে
পারে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ
দিচ্ছি, যা আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন’ (অতঃপর তিনি পূর্বের কথাগুলো
উল্লেখ করলেন)।[12]
২২- عَنْ عَرْفَجَةَ بْنِ شُرَيْحٍ الأَشْجَعِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: إِنَّهُ سَتَكُوْنُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُّفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيْعٌ، فَاضْرِبُوْهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ-
২২. আরফাজা ইবনু শুরাইহ আল-আশজাঈ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘অচিরেই নানা প্রকার ফিৎনা-ফাসাদের উদ্ভব ঘটবে। যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ উম্মতের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তোমরা তরবারী দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে। সে যেই হোক না কেন’।[13] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
عَنْ عَرْفَجَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيْعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُرِيْدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ فَاقْتُلُوْهُ-
আরফাজা
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,
‘তোমরা এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি
তোমাদের কাছে এ উদ্দেশ্য আগমন করে যে, সে তোমাদের (ঐক্যের) বন্ধনকে ভেঙ্গে
দিবে অথবা তোমাদের জামা‘আতকে বিচ্ছিন্ন করবে, তাহলে তোমরা তাকে হত্যা
করবে’।[14]
২৩- عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ، وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ، وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ، وَتَلْعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ. قُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَفَلاَ نُنَابِذُهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ قَالَ: لاَ مَا أَقَامُوْا فِيْكُمُ الصَّلاَةَ، وَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْ وُلاَتِكُمْ شَيْئًا تَكْرَهُوْنَهُ، فَاكْرَهُوا عَمَلَهُ وَلاَ تَنْزِعُوا يَدًا مِنْ طَاعَةٍ-
২৩. আওফ ইবনু মালেক আল-আশজাঈ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে। তারা তোমাদের জন্য প্রার্থনা করে এবং তোমরাও তাদের জন্য প্রার্থনা কর। পক্ষান্তরে তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এমন সময় আমরা কি তাদেরকে প্রতিহত করব না? তখন তিনি বললেন, না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে ছালাত কায়েম রাখবে। আর যখন তোমাদের শাসকদের মধ্যে কোন অপসন্দনীয় কাজ দেখবে, তখন তোমরা তাদের সে কাজকে ঘৃণা করবে এবং তাদের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেবে না’।[15] মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
قَالُوْا قُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَفَلاَ نُنَابِذُهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ قَالَ: لاَ مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ، لاَ مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ، أَلاَ مَنْ وَلِىَ عَلَيْهِ وَالٍ، فَرَآهُ يَأْتِى شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِى مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلاَ يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ-
ছাহাবীগণ বলেন, আমরা বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা কি এমন সময় তাদেরকে (তরবারী দ্বারা) প্রতিহত
করব না? তখন তিনি বললেন, না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে ছালাত কায়েম
রাখবে। না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে ছালাত কায়েম রাখবে। সাবধান!
কোন ব্যক্তিকে কারো উপর আমীর নিযুক্ত করা হলে। অতঃপর সে তাকে আল্লাহর
অবাধ্যতামূলক কোন কিছু করতে দেখলে, সে যেন তার আল্লাহর অবাধ্যতার কাজগুলোকে
ঘৃণা করে এবং অবশ্যই তার আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে না নেয়’।[16]
২৪- عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: سَتَكُوْنُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُوْنَ وَتُنْكِرُوْنَ، فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِىَ وَتَابَعَ. قَالُوْا: أَفَلاَ نُقَاتِلُهُمْ؟ قَالَ: لاَ مَا صَلَّوْا-
২৪.
উম্মু সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
‘অচিরেই এমন কতক আমীরের উদ্ভব ঘটবে, যাদের কিছু ভাল কাজের কারণে তোমরা
সন্তুষ্ট হবে এবং তাদের কিছু খারাপ কাজের কারণে তাদেরকে অপসন্দ করবে। যে
ব্যক্তি তাদের স্বরূপ চিনল সে মুক্তি পেল এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরোধতা করল
সে নিরাপত্তা লাভ করল। কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের পসন্দ করল এবং তাদের
অনুসরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হ’ল)। তারা বললেন, আমরা কী তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করব না? তিনি বললেন, না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ছালাত কায়েম রাখবে’।[17]
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ وَمَنْ
أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ (وزاد في اخره) أَىْ مَنْ كَرِهَ بِقَلْبِهِ
وَأَنْكَرَ بِقَلْبِهِ - ‘যে ব্যক্তি তাদের অপসন্দ করল সে নিরাপত্তা লাভ
করল এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরোধিতা করল সে মুক্তি লাভ করল। (বর্ণনার শেষে
রয়েছে) অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা ঘৃণা করল এবং হৃদয় থেকে বিরোধিতা
করল।[18] প্রখ্যাত তাবেঈ কাতাদা (রহঃ) বলেন, يَعْنِى مَنْ أَنْكَرَ
بِقَلْبِهِ وَمَنْ كَرِهَ بِقَلْبِهِ- ‘যে ব্যক্তি হৃদয় থেকে বিরোধিতা করল
এবং অন্তর থেকে ঘৃণা করল’ (সে নাজাত পেল)।[19] অনুরূপ বর্ণনা মুসলিম, তিরমিযী, আবুদাউদ ও বায়হাকীতেও আছে।[20]
হেশাম (রহঃ) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন,فَمَنْ أَنْكَرَ بِلِسَانِهِ فَقَدْ
بَرِئَ وَمَنْ كَرِهَ بِقَلْبِهِ فَقَدْ سَلِمَ- ‘যে ব্যক্তি বক্তব্যের
মাধ্যমে প্রতিবাদ করল সে নাজাত পেল। আর যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ঘৃণা করল সে
নিরাপত্তা লাভ করল’।[21] হাসান (রহঃ) বলেন, فَمَنْ أَنْكَرَ بِلِسَانِهِ
فَقَدْ بَرِئَ وَقَدْ ذَهَبَ زَمَانُ هَذِهِ وَمَنْ كَرِهَ بِقَلْبِهِ
فَقَدْ جَاءَ زَمَانُ هَذِهِ- ‘যে ব্যক্তি মুখ দ্বারা বাধা দিল সে মুক্তি
পেল। অবশ্য মুখে প্রতিবাদ করার যুগ চলে গেছে। আর যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা
ঘৃণা করল (সে নাজাত পেল)। অবশ্য এর সময় চলে এসেছে’।[22]
২৫- عَنْ اَبِيْ وَائِلٍ بْنِ حُجْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَأَلَ سَلَمَةُ بْنُ يَزِيْدَ الْجُعْفِىُّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا نَبِىَّ اللهِ! أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُوْنَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُوْنَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَأَعْرَضَ عَنْهُ ثُمَّ سَأَلَهُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ ثُمَّ سَأَلَهُ فِى الثَّانِيَةِ أَوْ الثَّالِثَةِ فَجَذَبَهُ الأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ، وَقَالَ: اِسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوْا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ-
আবু ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালামা ইবনু ইয়াযীদ আল-জু‘ফী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এ মর্মে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর নবী (ছাঃ)! যদি আমাদের উপর এমন শাসকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তারা তাদের হক আমাদের কাছে দাবী করে কিন্তু আমাদের হক তারা দেয় না। এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে কি করতে বলেন? তিনি তার উত্তর এড়িয়ে গেলেন। তিনি আবার তাঁকে প্রশ্ন করলেন, আর তিনি এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন আশ‘আছ ইবনু কায়েস (রাঃ) তাকে (সালামাকে) টান দিয়ে বললেন, তোমরা শুনবে এবং আনুগত্য করবে। কেননা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে’।[23] তোমরা শুনবে এবং আনুগত্য করবে... এ কথাগুলো আশ‘আছ ইবনু কায়েস (রাঃ)-এর নয় বরং কথাগুলো স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)-এর। যেমন অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اِسْمَعُوا وَأَطِيعُوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা শুনবে এবং আনুগত্য
করবে। কেননা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে এবং
তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে’।[24] ইমাম বায়হাকীর সুনানুল কুবরাতে অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যেখানে কথাগুলো রাসূল (ছাঃ)-এর বরাতে বর্ণনা করা হয়েছে।[25]
২৬- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : سَتَكُوْنُ أَثَرَةٌ وَأُمُوْرٌ تُنْكِرُوْنَهَا، قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ! فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ : تُؤَدُّوْنَ الْحَقَّ الَّذِىْ عَلَيْكُمْ، وَتَسْأَلُوْنَ اللهَ الَّذِىْ لَكُمْ-
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘অচিরেই স্বজনপ্রীতি প্রকাশ পাবে এবং এমন সব
কর্মকান্ড ঘটবে, যা তোমরা অপসন্দ করবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ)! সে অবস্থায় আমাদের কী করতে বলেন? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমাদের উপর
অর্পিত দায়িত্ব তোমরা পালন করবে এবং তোমাদের প্রাপ্যের জন্য আল্লাহর কাছে
প্রার্থনা করবে’।[26]
২৭- عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ: ثَلاَثَةٌ لاَ تَسْأَلْ عَنْهُمْ رَجُلٌ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ وَعَصَى إِمَامَهُ وَمَاتَ عَاصِيْاً وَأَمَةٌ أَوْ عَبْدٌ أَبَقَ فَمَاتَ وَامْرَأَةٌ غَابَ عَنْهَا زَوْجُهَا قَدْ كَفَاهَا مُؤْنَةَ الدُّنْيَا فَتَبَرَّجَتْ بَعْدَهُ فَلاَ تَسْأَلْ عَنْهُمْ-
২৭. ফাযালাহ ইবনু
ওবায়েদ হ’তে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘ধ্বংসে নিপতিত তিন প্রকার লোক সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞেস কর না। (১)
এমন লোক যে মুসলমানদের জামা‘আত ত্যাগ করল, তার নেতার অবাধ্য হ’ল এবং
অবাধ্য অবস্থায় মারা গেল। (২) এমন দাস বা দাসী যে (তার মালিকের নিকট থেকে)
পলায়ন করল, অতঃপর মারা গেল। (৩) এমন স্ত্রী যার স্বামী তার কাছে নেই এবং সে
তার দুনিয়ার যাবতীয় খরচ যথাযথ বহন করে। অথচ সে তার অনুপস্থিতে (অন্যের
সামনে) নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে। অতএব তুমি এ সকল ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের
সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর না’।[27]
২৮- عَنْ عُبَاَدَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: دَعَانَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَبَايَعْنَاهُ، فَقَالَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، فِى مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا، وَيُسْرِنَا، وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَأَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ، إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا، عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ-
২৮. ওবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের আহবান করলেন। আমরা তাঁর কাছে বায়‘আত করলাম। তিনি (ওবাদা) বলেন, আমরা যে সকল বিষয়ে তাঁর কাছে বায়‘আত করেছিলাম সেগুলো হ’ল- আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে-অপসন্দে, সুখে-দুঃখে এবং আমাদের উপরে কাউকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে আমীরের কথা শুনব ও মেনে চলব। আমরা নেতৃত্ব নিয়ে পরস্পর ঝগড়া করব না। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা (আমীরের মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী না দেখবে (ততক্ষণ তোমরা তার আনুগত্য করতে থাকবে), যে বিষয়ে তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল-প্রমাণ রয়েছে’।[28] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ عُبَاَدَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ بَايَعْنَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِيْ الْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ، وَأَلاَّ َنُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ وَ أَنْ نَقُوْمَ اَوْ نَقُوْلَ بِالْحَقِّ حَيْثُمَا كُنَّا وَلاَنَخَافُ فِىْ اللهِ لَوْمَةَ لاَئِمٍ-
ওবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এই মর্মে বায়‘আত করেছিলাম যে, আমরা
আনন্দে-অপসন্দে আমীরের কথা শুনব ও মেনে চলব। আমরা নেতৃত্ব নিয়ে পরস্পর ঝগড়া
করব না। আর যেখানেই থাকি সর্বদা সত্যের উপর অটল থাকব বা সত্য কথা বলব এবং
আল্লাহর হুকুম মেনে চলার ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরওয়া করব না’।[29]
২৯- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ، فِيْمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ-
২৯.
আব্দুললাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির (নেতার
নির্দেশ) শ্রবণ করা এবং তার আনুগত্য করা অপরিহার্য কর্তব্য। চাই সে নির্দেশ
তার পসন্দ হোক বা অপসন্দ হোক, যতক্ষণ না তাকে আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ
দেয়া হয়। যখন আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হবে, তখন আমীরের কথা শ্রবণ
করা ও তার আনুগত্য করার বাধ্যবাধকতা নেই’।[30]
৩০- عَنْ عَلِىٍّ بْنِ اَبِيْ طاَلِبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: بَعَثَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم سَرِيَّةً فَاسْتَعْمَلَ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ، وَأَمَرَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ، فَغَضِبَ فَقَالَ: أَلَيْسَ أَمَرَكُمُ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ تُطِيعُونِى؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَاجْمَعُوا لِى حَطَبًا، فَجَمَعُوا، فَقَالَ أَوْقِدُوا نَارًا. فَأَوْقَدُوهَا، فَقَالَ: ادْخُلُوهَا فَهَمُّوا، وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يُمْسِكُ بَعْضًا، وَيَقُولُونَ فَرَرْنَا إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم مِنَ النَّارِ، فَمَا زَالُوا حَتَّى خَمَدَتِ النَّارُ، فَسَكَنَ غَضَبُهُ، فَبَلَغَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوْفِ-
৩০. আলী ইবনু আবী ত্বালেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদল প্রেরণ করলেন এবং একজন আনছারী ব্যক্তিকে তাদের আমীর নিযুক্ত করে সৈন্যবাহিনীকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি (আমীর) তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, নবী করীম (ছাঃ) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তারা বলল, হ্যঁা। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার জন্য কাঠ সংগ্রহ করো। তারা কাঠ সংগ্রহ করল। তিনি বললেন, তোমরা আগুন জ্বালাও। তারা আগুন জ্বালাল। এরপর তিনি বললেন, তোমরা তাতে প্রবেশ করো। এরপর যখন তারা প্রবেশ করতে উদ্যত হ’ল, তখন একে অপরকে অাঁকড়ে ধরল। তাদের কেউ কেউ বলল, আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্যই তো আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর অনুসরণ করেছি। তাদের এসব কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ আগুন নিভে গেল এবং তার (আমীরের) ক্রোধও প্রশমিত হ’ল। এ ঘটনার সংবাদ নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, যদি তারা আগুনে প্রবেশ করত, তাহ’লে কিয়ামত পর্যন্ত তারা সেখান থেকে বের হ’ত না। আনুগত্য কেবলমাত্র ভাল কাজেই হয়ে থাকে।[31] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
فَقَالَ لِلَّذِيْنَ أَرَادُوْا أَنْ يَدْخُلُوْهَا: لَوْ دَخَلُوْهَا لَمْ يَزَالُوْا فِيْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَقَالَ لِلآخَرِينَ: لاَ طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوْفِ-
‘যারা
আগুনে প্রবেশ করার ইচ্ছা করেছিল তাদের উদ্দেশ্যে রাসূল (ছাঃ) বললেন, যদি
তারা তাতে প্রবেশ করত, তাহ’লে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করত।
আর অন্যদের উদ্দেশ্য তিনি বললেন, আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই।
আনুগত্য কেবলমাত্র ভাল কাজে’।[32]
[চলবে]
ড. হাফেয বিন মুহাম্মাদ আল-হাকামী
অধ্যাপক, হাদীছ বিভাগ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
[1]. আহমাদ হা/১৭১৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২; আবুদাউদ হা/৪৬০৭; তিরমিযী হা/২৬৭৬; ছহীহাহ হা/২৭৩৫; মিশকাত হা/১৬৫।
[2]. বুখারী হা/৭০৫৩; মুসলিম হা/১৮৪৯; মিশকাত হা/৩৬৬৮।
[3]. বুখারী হা/৭০৫৩; মুসলিম হা/১৮৪৯।
[4]. মুসলিম হা/১৮৪৮; আহমাদ হা/৭৯৩১; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৪৮; ছহীহাহ হা/৯৮৩; নাসাঈ হা/৪১১৪; মিশকাত হা/৩৬৬৯।
[5]. আহমাদ হা/৬১৬৬; ইবনু হিববান হা/৪৫৭৮; মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৫১১; আবু আ‘ওয়ানা হা/৭১৫৫, সনদ ছহীহ।
[6]. হাকেম হা/৪০৯; আহমাদ হা/২৩৩৩১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/ ৯১২৮, সনদ ছহীহ। হাকেম ও আল্লামা যাহাবী বলেন, হাদীছ ছহীহ। শু‘আইব আরনাউত বলেন, হাসান।
[7]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৩৭৭৯; আবু ইয়া‘লা হা/৭২০৩ আহমাদ হা/১৫৭১৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/ ১৮১৯।
[8]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৩৭৭৯; আবু ইয়া‘লা হা/৭২০৩; আহমাদ হা/১৫৭১৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮১৯।
[9]. আবুদাউদ হা/৪৭৫৮; হাকেম হা/৪০১; আহমাদ হা/২২৯৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪১০; ছহীহ তারগীব হা/৫ যিলালুল জান্নাহ হা/৮৯২; মিশকাত হা/১৮৫।
[10]. আলবানী, তাখরীজুস সুন্নাহ ২/৪৩৪।
[11]. তিরমিযী হা/২৮৬৩; আহমাদ হা/১৭৮১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭২৪; যিলালুল জান্নাহ হা/১০৩৬; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৮৯৫; হাকেম হা/১৫৩৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৪৯৪; ছহীহ তারগীব হা/১৪৯৮; মুসনাদু ত্বায়ালেসী হা/১১৬১।
[12]. তিরমিযী হা/২৮৬৩; আহমাদ হা/১৭৮১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭২৪; যিলালুল জান্নাহ হা/১০৩৬; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৮৯৫; হাকেম হা/১৫৩৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৪৯৪; ছহীহ তারগীব হা/১৪৯৮; মুসনাদু ত্বায়ালেসী হা/১১৬১, আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেন, সনদ ছহীহ (তাখরীজুস-সুন্নাহ লি ইবনু আছেম ২/৪৯৬।
[13]. মুসলিম হা/১৮৫২; আবুদাউদ হা/৪৭৬২; আহমাদ হা/১৮৩২১; ইবনু হিববান হা/৪৪০৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩৯৩; নাসাঈ হা/৪০২১; যিলালুল জান্নাহ হা/১১০৬: মিশকাত হা/৩৬৭৭।
[14]. মুসলিম হা/১৮৫২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৪৪; ইরওয়া হা/২৪৫২; মু‘জামুল কাবীর হা/৩৬৫; আবু আ‘ওয়ানা হা/৭১৪০; মিশকাত হা/৩৬৭৮, সনদ ছহীহ।
[15]. মুসলিম হা/১৮৫৫; দারেমী হা/২৭৯৭; ছহীহাহ হা/৯০৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৫৮; যিলালুল জান্নাহ হা/১০৭১: মিশকাত হা/৩৩৭০, হাদীছ ছহীহ।
[16]. মুসলিম হা/১৮৫৫; দারেমী হা/২৭৯৭; ছহীহাহ হা/৯০৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৫৮; যিলালুল জান্নাহ হা/১০৭১: হাদীছ ছহীহ।
[17]. মুসলিম হা/১৮৫৪; আহমাদ হা/২৬৫৭১; ছহীহাহ হা/৩০০৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬১৮; ইবনু হিববান হা/৬৬৫৮; আবু আ‘ওয়ানা হা/৭১৬২; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৮৪৫১, হাদীছ ছহীহ।
[18]. মুসলিম হা/১৮৫৪-৬৩।
[19]. আবুদাউদ হা/৪৭৬১; বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫০২; সুনানুল কুবরা হা/১৬৩৯৮।
[20]. মুসলিম হা/১৮৫৪; তিরমিযী হা/২২৬৫; আবুদাউদ হা/৪৭৬১; বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫০২; সুনানুল কুবরা হা/১৬৩৯৮।
[21]. আবুদাউদ হা/৪৭৬০।
[22]. বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫০২; সুনানুল কুবরা হা/১৬৩৯৮।
[23]. মুসলিম হা/১৮৫৪; তিরমিযী হা/২১৯৯; ছহীহাহ হা/৭১৭৬; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫০০, হাদীছ ছহীহ।
[24]. তিরমিযী হা/২১৯৯; ছহীহাহ হা/৭১৭৬; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫০০; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৬৪০১; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৮৪১৬; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৯১১৪; মিশকাত হা/৩৬৭৩, হাদীছ ছহীহ।
[25]. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৬৪০১।
[26]. বুখারী হা/৩৬০৩; মুসলিম হা/১৮৪৩; তিরমিযী হা/২১৯০; আহমাদ হা/৪০৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬২০; ইবনু হিববান হা/৪৫৮৭; ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৯।
[27]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯০; হাকেম হা/৪১১; আহমাদ হা/২৩৯৮৮; ইবনু হিববান হা/৪৫৫৯; ছহীহাহ হা/৫৪২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৫৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৮৮৭।
[28]. বুখারী হা/৭০৫৫,৭০৫৬; মুসলিম হা/১৭০৯; নাসাঈ হা/৪১৪৯; ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৬; আহমাদ হা/২২৭৩১; ছহীহাহ হা/৩৪১৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৩০৩; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৬৩৩০; মিশকাত হা/৩৬৬৬।
[29]. বুখারী হা/৭১৯৯, ৭২০০; মুসলিম হা/১৭০৯; নাসাঈ হা/৪১৪৯; ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৬; মিশকাত হা/৩৬৬৬, তবে এগুলো বুখারীর শব্দ।
[30]. বুখারী হা/৭১৪৪; মুসলিম হা/১৮৩৯; আবুদাউদ হা/২৬২৬; ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৪; নাসাঈ হা/৪২০৬; আহমাদ হা/৪৬৬৮; তিরমিযী হা/১৭০৭; ছহীহাহ হা/৭৫২; মিশকাত হা/৩৬৬৪।
[31]. বুখারী হা/৪৩৪০; মুসলিম হা/১৮৪০; আবুদাউদ হা/২৬২৫; নাসাঈ হা/৪২০৫; আহমাদ হা/১০১৮; আবু আ‘ওয়ানা হা/৭১১৭; ইবনু আবী শায়বা হা/৩৪৩৯৫; বাযযার হা/৫৮৯।
[32]. বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০; আবুদাউদ হা/২৬২৫; নাসাঈ হা/৪২০৫।