পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । শেষ পর্ব ।
ফরযে কিফায়া সংক্রান্ত আল্লাহর আহবানে উম্মাহর সকল সদস্যই শামিল :
পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আমরা অবগত হয়েছি যে, মুসলিম শাসকদের উপর অনেক বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সন্দেহ নেই যে, শাসক সহ তার মন্ত্রীবর্গ, উপদেষ্টামন্ডলী, ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ শাসন নামক যে আমানতের দায়িত্ব পেয়েছেন তা রক্ষা করা তাদের উপর ওয়াজিব। এতেও সন্দেহ নেই যে, কোন মুসলিম শাসক তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে সেজন্য তিনি পাপী হবেন। তবে আপন কর্তব্যে অবহেলায় যে শাসকই শুধু পাপী হবেন তা নয়; বরং জনগণও তাদের কর্তব্য পালন না করলে সমভাবে পাপী হবে। কেননা সকলেই যদি ফরযে কিফায়া তরক করে তবে সকলেই পাপী হবে। সুতরাং যখন কোন মুসলিম রাষ্ট্রে শত্রুপক্ষ আক্রমণ চালায় আর মুসলিম শাসক তা প্রতিরোধে এগিয়ে না আসে তখন সকল মুসলমানের উপর তাদের জান-মাল-ইযযত ও দ্বীন রক্ষার স্বার্থে ঐ শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিআক্রমণ ও যুদ্ধ করা ফরয হয়ে দাঁড়াবে।
কোন মুসলিম শাসক যদি ছালাত আয়োজনে আগ্রহ না দেখায়, জনগণের জন্য ইমাম-মুওয়াযযিন নিয়োগ না দেয়, মসজিদ নির্মাণ না করে তখন যে যে গ্রাম, শহর ও অঞ্চলে এমনটা ঘটবে সেই সেই স্থানের মুসলিমদের উপর শাসকের অবহেলিত ও উপেক্ষিত কাজগুলো বাস্তবায়ন করা ফরয হবে।
মৃত ব্যক্তির গোসল ও কাফন-দাফন করা, কুরআন শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা ইত্যাদি ফরয কাজও কোন রাষ্ট্রপ্রধান যদি বেকার ছেড়ে দেয় তাহ’লে তার ছেড়ে দেওয়ার দরুন জনগণ এগুলো পালন না করার কোন অজুহাত খাড়া করতে পারবে না। বরং তারা পরস্পরে সহযোগিতা করে এসব ফরয কাজ সম্পন্ন করবে। নতুবা তারা সকলেই দোষী ও পাপী হবে।
এসব কথার প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা যেসব আয়াতে এবং নবী করীম (ছাঃ) যেসব হাদীছে এসব ফরয কাজের আদেশ দিয়েছেন তাতে তিনি এবং তার রাসূল (ছাঃ) সবাইকে লক্ষ্য করে তা বলেছেন; শাসক-শাসিতের মাঝে কোন পার্থক্য করেননি। এসব ফরয সম্পাদনে আল্লাহ তা‘আলা শাসকের অনুমতি গ্রহণের শর্তও আরোপ করেননি।
বরং কোন শাসক যদি
এসব ফরযের কিছু কিছু অকার্যকর করে দেন তাহ’লে সেসব ক্ষেত্রে জনগণের জন্য
তার আনুগত্য করা জায়েয হবে না। পাঠক বলুন, যদি কোন শাসক কিংবা বিচারক
জনগণকে জুম‘আর ছালাত আদায় করতে নিষেধ করে এবং মসজিদগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়
তাহ’লে কি জনগণকে জুম‘আর ছালাত আদায়ে অক্ষম ধরে নিতে হবে? নিঃসন্দেহে
তাদেরকে অক্ষম ধরে নেওয়া হবে না। বরং তারা যদি ঐ শাসক ও বিচারকের কথা মান্য
করে জুম‘আ আদায় না করে তাহ’লে তারা পাপী হবে। কারণ,لَا طَاعَةَ
لِمَخْلُوْقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন
আনুগত্য নেই’।[1]
একই অবস্থা দাঁড়াবে, যদি শাসক জনগণকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে নিষেধ করেন কিংবা তার জন্য কোন ব্যবস্থা না নেন। তখন জনগণ ঐ ফরয পালন না করে বেকার বসে থাকায় আল্লাহর কাছে কোন ওযর পেশ করতে পারবে না। বরং তারা আল্লাহদ্রোহী ঐ যালেম শাসকের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেরাই সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে। তাদের জন্য ঐ শাসকের আনুগত্য করা হারাম হবে। কেননা এ সময় তার কথা মানলে আল্লাহর কথা অমান্য করা হবে। আর আল্লাহর কথা অমান্য করে সৃষ্টির কথা মান্য করার কোন সুযোগ নেই।
এমনিভাবে যখন মুসলমানদের ইযযত-সম্পদ লুণ্ঠিত হবে, তাদের ইযযত ও সম্পদের উপর শত্রুপক্ষ আক্রমণ করে বসবে আর শাসক নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবেন তখন তিনি তাতে দোষী, নিষ্ঠুর ও গণবিরোধী হবেন বটে, কিন্তু জনগণের তাতে বসে থাকলে চলবে না; বরং তার আদেশ মানার তোয়াক্কা না করে তারা নিজেরাই বরং নিজেদের জান-মাল-ইযযত রক্ষায় কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এক্ষেত্রে শাসকের অবাধ্য হওয়াই বরং ফরয হবে।
একইভাবে সরকার কিংবা বিচারক যদি কুরআন শিক্ষাদান, শারঈ বিদ্যার প্রসার ঘটানো এবং মুসলিম শিশু-কিশোরদের সুন্দর ও কল্যাণমুখী চেতনায় গড়ে তোলার ব্যবস্থা না নেয় তখন জনগণ নিজেরাও এর ব্যবস্থা না নিলে আল্লাহর নিকট তারা পার পাবে না। তাদের উপরই তখন এসব কাজের রূপায়ন ফরয হয়ে দাঁড়াবে- যদিও তাতে বিদ্যমান শাসকের অবাধ্য হ’তে হয়। কেননা তার অবাধ্যতার মানেই তো এখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাধ্যতা।
অতএব একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, উম্মতের সকল সদস্যই শারঈ বিধানের আজ্ঞাধীন। সবাইকেই ফরযে আইন (ব্যক্তিগত ফরয)-এর মত ফরযে কিফায়া (সমষ্টিগত ফরয)ও সমানভাবে পালন করতে হবে। শাসনকর্তা এসব ফরয পালনে অবহেলা করলে জনগণের তাতে অব্যাহতি মেলার কোন সুযোগ নেই। বরং তারা যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি নারায এহেন যালেম সরকারের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং তাকে কিছু না বলে চুপ করে থাকে তাহ’লে তারা দোষী সাব্যস্ত হবে এবং ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি ভোগ করবে। এদের প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِيْنَ اتُّبِعُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ- ‘আর (স্মরণ কর) যেদিন অনুসরণীয়গণ তাদের অনুসারীদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে এবং তারা আযাবকে প্রত্যক্ষ করবে ও পরস্পরের সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/১৬৬)। তিনি আরও বলেছেন,وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيْعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَحِيْصٍ- ‘সবাই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবেই। সেদিন দুর্বলেরা ক্ষমতাবানদের বলবে, আমরা (দুনিয়াতে) তোমাদের অনুসারী ছিলাম। এখন তোমরা কি আমাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে কিছুমাত্র রেহাই দিতে পারবে? তারা বলবে, আল্লাহ আমাদের সুপথ দেখালে আমরাও তোমাদের সুপথ দেখাতাম। এখন আমরা দিশেহারা হই বা ধৈর্যধারণ করি সবই সমান। আমাদের এখন বাঁচার কোন পথ নেই’ (ইবরাহীম ১৪/২১)।
এ ধরনের আয়াত আরও অনেক আছে। এসব আয়াতে ফুটে উঠেছে যে, দুনিয়াতে যেসব শাসক ও নেতা আল্লাহর বিধান লংঘন করে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাধা দান করে তাদের যারা অনুসারী হয়ে দুনিয়ার জীবন কাটিয়ে যায় তারা ঐসব নেতার অনুসরণের দোহাই দিয়ে আল্লাহর নিকট মুক্তি পাবে না।
এত কথার পরও বিবেক-বুদ্ধিওয়ালা কেউ কি শরী‘আতের এমন বিধান দেখাতে পারবে যে, শাসনকর্তাগণ ফরযে কিফায়া ত্যাগ করলে সাধারণ জনগণের তা থেকে অব্যাহতি মিলবে? কিংবা তারা নিজেদের নিরূপায় ঠাউরে বেঁচে যাবে?
কাল ও স্থান ভেদে বিধি-বিধানের পরিবর্তন :
একটি বিষয় আছে, যা অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষিতজনেরা বুঝে উঠতে পারে না। তা হ’ল, কাল ও স্থানভেদে বিধিবিধানের পরিবর্তন। সুতরাং অবস্থা অনুসারে বিধি-বিধান নির্ণয় করতে হবে। কোন সময় একটা বিধান ফরয হবে- আবার কোন সময় তা ফরয থাকবে না। অনুরূপ কোন স্থানে ফরয হবে তো অন্য স্থানে হবে না। উদাহরণ হিসাবে হিজরতের কথা বলা যায়। যে সময়ে যে স্থানে আল্লাহর বিধান পালন সম্ভব হবে না সে স্থান থেকে ঐ সময়ে মুসলমানদের জন্য হিজরত করা ফরয হবে। কিন্তু যে স্থানে এমন সমস্যা নেই সেখান থেকে হিজরত ফরয নয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ هِجْرَةَ، وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ ‘মক্কা বিজয়ের পর কোন হিজরত নেই। তবে জিহাদ ও নিয়ত রয়েছে’।[2] মক্কা বিজয়ের আগে মক্কা থেকে হিজরত ফরয ছিল। কেননা সেখানে মুসলমানদের দমিয়ে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল। তারা ইসলামের নিদর্শন মূলক আমলগুলো প্রকাশ্যে করতে পারত না। কাফেররা তাতে বাধা দিত। কিন্তু কাফেরদের এহেন বাধায় দ্বীনের বিধান পালন না করে বসে থাকাকে আল্লাহ তা‘আলা মোটেও গ্রাহ্য করেননি। কেবল দুর্বল নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওযর তিনি গ্রাহ্য করেছেন। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ قَالُوْا فِيْمَ كُنْتُمْ قَالُوْا كُنَّا مُسْتَضْعَفِيْنَ فِي الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيْهَا فَأُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءَتْ مَصِيْرًا، إِلَّا الْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ حِيْلَةً وَلَا يَهْتَدُوْنَ سَبِيْلًا-
‘যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছিল, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করার পর বলে, তোমরা কিসে ছিলে (অর্থাৎ মুসলিম না মুশরিক?)। তারা বলবে, জনপদে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলবে, আল্লাহর যমীন কি প্রশস্ত ছিল না যে তোমরা সেখানে হিজরত করে যেতে? অতএব ওদের বাসস্থান হ’ল জাহান্নাম। আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান। অবশ্য পুরুষ, নারী ও শিশুদের মধ্যে যারা অসহায়, যারা কোন উপায় বের করতে পারে না এবং কোন পথও জানে না তারা ব্যতীত’ (নিসা ৪/৯৭-৯৮)।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মক্কার মুসলিমরা মক্কা বিজয়ের পূর্বে অসহায় ছিল। তার প্রমাণ আল্লাহর বাণী-وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيْرًا- ‘আর তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছ না? অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা ফরিয়াদ করে বলছে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই অত্যাচারী জনপদ থেকে আমাদের বের করে নাও এবং তোমার পক্ষ হ’তে আমাদের জন্য অভিভাবক নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ হ’তে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও’ (নিসা ৪/৭৫)।
সকল মুফাসসির একমত যে, الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا এখানে মক্কা নগরীকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং মক্কা বিজয়ের আগে সেখান থেকে মদীনায় হোক কিংবা অন্যত্র হোক হিজরত করা ফরয ছিল। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর সেখান থেকে হিজরত মুবাহ কিংবা মাকরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখুন, কিভাবে সময়ের পরিবর্তনে বিধানের পরিবর্তন ঘটে। হিজরতের ফরযত্ব কিন্তু এখনও বাকী রয়েছে। তবে তা এক স্থানে আছে অন্য স্থানে নেই- এক সময়ে আছে অন্য সময়ে নেই। একই কথা আরও অনেক বিধানে প্রযোজ্য। যেমন সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা, শাসকের অনুমতি গ্রহণ করা বা না করা, শত্রুদেশে গমন করা না করা ইত্যাদি।
আফসোস! অনেক আলেম ও শিক্ষার্থী ফৎওয়া দেন আর ভাবেন, এ ফৎওয়া প্রতিটি যুগ, প্রতিটি স্থান এবং প্রতিটি গোত্র ও প্রজন্মের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কোন বিশেষত্ব কিংবা ব্যতিক্রমের ধার তারা ধারেন না। যেমন আমাদের আলোচ্য পুস্তিকার মুফতীদের প্রশ্নোত্তরে ঘটেছে।
এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই মাশাআল্লাহ এমন দেশে বাস করেন যেখানে শারঈ বিধান কার্যকর রয়েছে। যেমন সে দেশে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ জারি আছে, ছালাত কায়েমের ব্যবস্থা আছে, শারঈ বিদ্যা শিক্ষণ-শিখনের ব্যবস্থা আছে, মৃতদের দাফন, মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি যা যা দ্বীন সংক্রান্ত শাসকের দায়িত্ব তার সবই বিদ্যমান রয়েছে।
ফলে তাদের
যখন জিজ্ঞেস করা হয় মুসলমানদের জন্য কি উল্লিখিত কাজগুলো সম্পাদনের জন্য
কোন সংগঠন বা দল গঠন করা জায়েয আছে? তখন তারা ফৎওয়া দেন যে, শাসকের অনুমতি
ছাড়া কোন সংগঠন বা দল গঠন জায়েয নেই। তারা ভুলে যান, কিংবা জানেনই না যে,
এমন অনেক দেশ আছে যার শাসকেরা এসব বিধান পালন তাদের দেশে হারাম করে রেখেছে।
জনগণ তা পালন করতে গেলে তারা বাধা সৃষ্টি করে। অনেক দেশের শাসক শারঈ
বিধানাবলির কানাকড়ি মূল্যও দেয় না।[3]
তাহ’লে কি এসব অত্যাচারী, স্বৈরাচারী শাসকদের অধীন দেশে মুসলমানরা চুপ করে বসে থাকবে? তারা কি এসব ফরয পালন করবে না? মুসলিমরা কি ইসলামের ভূমিকে আল্লাহর শত্রুদের হাতে তাদের যা খুশি তাই করার জন্য ছেড়ে দেবে? (আমাদের) শাসকরা তো এসব শত্রুর জন্য তাদের দরজা খুলেই রেখেছে। যেমন আফগানিস্তানের বাদশাহ যহির শাহ নাস্তিক কম্যুনিস্টদের জন্য তার দেশ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তারা ইসলামী আফগানিস্তানকে নাস্তিক কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলে। সেখানে কুফরী ও নাস্তিকতার আইন চালু করা হয়।
তাহ’লে কি মুসলমানরা চুপ করে বসে থাকবে? নাকি তাদের সাধ্যমত নিজেদের সন্তান-সন্ততি এবং জান-মাল-ইযযত রক্ষার চেষ্টা করবে? নাকি তারা রাষ্ট্র প্রধান, অনাগত মাহদী অথবা ঈসা মাসীহের জন্য অপেক্ষা করবে?
নিঃসন্দেহে এমতাবস্থায় তাদের উপর নিজেদের জান-মাল-ইযযত ও দ্বীন রক্ষার্থে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ফরয হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করে তারা কাজ করবে। আল্লাহ বলেন, وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ ‘আর আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন, যে আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও মহা পরাক্রান্ত’ (হজ্জ ২২/৪০)।
আল্লাহ তা‘আলা এ সাহায্য করে দেখিয়েছেন। তোমরা দেখ কীভাবে আল্লাহ তাদের সাহায্য করেছেন, যারা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করেছেন ও তার বিধান ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন এবং নিজেদের জীবন ও সম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছেন।
আরও দেখুন কিভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ ব্যক্তিকে উত্তর দিয়েছিলেন, যে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কোন লোক যদি আমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নিতে আসে তবে আমি কী করব? তিনি বললেন, তুমি তাকে বাধা দেবে। সে বলল, সে যদি বাধা না মানে? তিনি বললেন, তুমি তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সে বলল, যদি আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, সে জাহান্নামে যাবে। সে বলল, আর যদি সে আমাকে হত্যা করে? তিনি বললেন, তুমি জান্নাতে যাবে।[4] দেখুন কিভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ ব্যক্তিকে উপদেশ দিলেন। তার উপর যে কোন অবস্থায় নিজেকে রক্ষা করা ফরয। কোন শাসকের অনুমতি কিংবা কোন ক্ষমতাধরের দয়া-অনুগ্রহের অপেক্ষা তাকে করতে হবে না।
আবার এতেও কোন সন্দেহ নেই যে, হানাদার কাফের বাহিনীকে প্রতিরোধ করা যদি জামা‘আত বা দল ও নেতা ছাড়া একাকী সম্ভব না হয় তাহ’লে সেখানে জামা‘আত বা দল গঠন করা ওয়াজিব হবে। কেননা এ সূত্র তো আগেই বলা হয়েছে যে, যা না হলে কোন ওয়াজিব পালন সম্ভব হয় না তা করা ওয়াজিব।
অনুরূপভাবে শাসকরা যে যে ফরযে কিফায়া নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে সেগুলো সম্পর্কে নীরব থাকা এবং দেশ ও সমাজ থেকে সেগুলোকে উৎখাত হতে দেওয়া জায়েয হবে না। বরং সেজন্য জামা‘আতবদ্ধ হয়ে তা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হওয়া ওয়াজিব হয়ে দাঁড়াবে।
এমনকি শাসক একজন মুসলিম হ’লেও যদি ফরযের সময় সংকীর্ণ এবং বস্ত্ত দ্রুত লয়যোগ্য হয় তাহ’লে সেক্ষেত্রে তার অনুমতির অপেক্ষা করাও বৈধ হবে না। যেমন লাশ দাফন, জুম‘আ-জামা‘আত কায়েম, মসজিদ পাকা করা, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি।
আবার কোন মুসলিম জনপদ শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হ’লে যে এলাকা আক্রান্ত হবে ঐ এলাকার অধিবাসীদের উপরই প্রথমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ওয়াজিব হবে। পরে শাসক ও অন্যান্যরা এসে তাদের সাহায্যে হাত মিলাবে। কিন্তু উক্ত পরিস্থিতিতে মুসলমানদের জন্য যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এবং ইসলামী জনপদকে ইসলামের শত্রুদের হাতে ছেড়ে দেওয়া জায়েয হবে না।
অথচ কী আশ্চর্য! কিছু কিছু শিক্ষার্থী ফৎওয়া দিতে গিয়ে নিজেরাও ভুল করে এবং অন্যদেরও ভুলের শিকার বানায়। তারা বলে যে, না! না!! এসব ফরয পালনে জামা‘আত বা দল গঠন আদৌ জায়েয নয়। যেমনটা আমরা আগেও বলে এসেছি।
মূলতঃ তাদের এহেন ভুল ফৎওয়া দানের পেছনে রয়েছে তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, অদূরদর্শিতা, চার পাশের মুসলমানদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞতা, স্বদেশের বৃত্তে আবদ্ধ থাকা, অন্য দেশের মানুষের জীবন যাত্রার খোঁজখবর না রাখা, মুসলমানদের দ্বীনের প্রতি অনুরাগী করে তোলার কলা-কৌশল অনুশীলনের অভাব; গৌরব, বিজয় ও ক্ষমতা অর্জনের পন্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা না করা ইত্যাদি।
আবার ‘স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুসারে বিধি-বিধান পাল্টে যায়’- এই মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রেখে ফৎওয়া না দেওয়াও তাদের এহেন ভুলের একটি বড় কারণ। যাহোক, তারা সকল কালে, সকল স্থানে এ ফৎওয়া সমভাবে প্রযোজ্য হবে মনে করে তা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, তা তাদের দেশের জন্য উপযোগী হ’লেও অন্য অনেক দেশের জন্য উপযোগী নয়।
ইসলামী বিশ্বে সংগঠন ও দলের উপকারিতা :
যারা কোন ফরযে কিফায়া সম্পাদনের জন্য একতাবদ্ধ হওয়া এবং জামা‘আত বা দল গঠন করা হারাম বলে ফৎওয়া দেন তারা যদি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও দলের কর্মতৎপরতার ব্যাপক উপকারিতা ও সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করতেন, প্রবৃত্তির দাসত্ব ও গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হ’তেন, বিশাল বিশ্বের আনাচে-কানাচে কোথায় কী ঘটছে সে সম্বন্ধে অজ্ঞতার পর্দা নিজেদের চোখের উপর থেকে সরাতে পারতেন এবং দৃষ্টি নাক বরাবর সীমাবদ্ধ না রেখে দূর পর্যন্ত প্রসারিত করতে পারতেন তাহ’লে কখনই তারা এমন বাতিল ফৎওয়া ও ভিত্তিহীন কথার দিকে পা বাড়াতেন না।
সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, জুম‘আ-জামা‘আত কায়েম, উত্তমভাবে যাকাত আদায় ও বণ্টন, সুন্নাত মুতাবেক সমবেতভাবে হজ্জ সম্পাদন, আল্লাহর শত্রুদের সাথে যুদ্ধ, যালিমদের প্রতিরোধ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী কাফির ও যালিম রাষ্ট্রনায়কের মুখোমুখি দাঁড়ানো, দুর্বল মুসলমানদের উদ্ধার করা ইত্যাদি বহুবিধ ফরযে কিফায়ার জন্য জামা‘আতের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা অনস্বীকার্য।
কিন্তু মুসলিমদের জন্য এসব সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা কেবল তারাই অস্বীকার করতে পারে, যাদের গুণাবলী আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। নচেৎ আমাদের যুগে এসব ইসলামী দল ও ইসলামী মিশনই আল্লাহর পথে আহবান (দাওয়াত) ও ইসলাম প্রচারের কাজ করে চলেছে এবং অর্থ ব্যয়, লেখালেখি, তলোয়ার চালনা, বক্তৃতা-বিবৃতি ইত্যাদির মাধ্যমে জিহাদ বা সংগ্রামের গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
এই যে, আফগান মুজাহিদরা বিশ্বের এক অতি বড় স্বৈরাচারী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করল, তাতে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠা বিভিন্ন দলের কর্মতৎপরতার ফলেই। তারা ত্যাগ ও কুরবানীর নিয়তে দলবদ্ধ হয়েছিল এবং আল্লাহর রাহে জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছিল বলেই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মত একটি পরাশক্তিকে পদানত করা সম্ভব হয়েছিল। এই মুজাহিদরা যা করেছে, তা একটি জামা‘আত বা দল, একজন আমীর বা দলনেতা, একটি নিযাম বা নীতিমালা, একটি কর্মপরিকল্পনা, শারঈ ইমারত বা নেতৃত্ব এবং বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে করা কি আদৌ সম্ভব ছিল? এদের জন্য কি তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতির অপেক্ষায় থাকা ফরয ছিল? সেই রাষ্ট্রপ্রধান বা ইমামই বা কোথায় যার জন্য তারা অপেক্ষা করত?
আমরা আজ যে বিশ্বে বাস করছি সেখানে আপনারা আমাকে কি এমন একজন ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান দেখাতে পারবেন, যিনি এমন পদাধিকারী? আর ঐ পদাধিকারী রাষ্ট্রপ্রধান থেকে অনুমতি নিয়ে যে সকল মুসলিম দল এখন আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে- তারা যুদ্ধ শুরু করতে পারবে?
আমরা প্রত্যেকেই কি আমাদের সেই সকল তরুণের জন্য গৌরব বোধ করি না- যারা ইউরোপ আমেরিকার মত প্রতীচ্যের দেশ থেকে আমাদের মাঝে ফিরে আসে, যারা বস্ত্তবাদী শিক্ষার সাথে সাথে দ্বীনী বা শারঈ বিদ্যাও ব্যাপকভাবে লাভ করেছে। তারা বরং মুসলিম দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকেও বেশ কয়েকগুণ বেশী ধর্মীয় বিদ্যা অর্জন করে থাকে। শুধু তাই নয়; বরং তাদের চরিত্র ও বোধ-বুদ্ধিও আমাদের হাতে প্রতিপালিতদের থেকে অনেক উন্নত। আমরা কি এজন্যেও গৌরববোধ করতে পারি না যে, এসব তরুণ যেসব অমুসলিম দেশ থেকে এসেছে সেসব দেশে তারা অনেক ফিৎনা-ফাসাদ, আযাব-গযব ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও সত্যের পথে শুধু অবিচলই থাকেনি বরং সত্যকে বিজয়ী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
না জেনে-বুঝে এসব ফৎওয়াদাতাকে আমি জিজ্ঞেস করছি, এসব যুবক কি ঐসব সুগঠিত সংগঠন সমূহের ফসল নয়, যাদের একজন নেতা, একজন পরিচালক, একটি নীতিমালা, একটি অর্থ সংস্থান এবং একটি অনুশীলিত সুসংহত কর্মসূচী আছে?
আপনারাই বলুন, এই যুবকরা যদি গোঁফখেজুরে সেজে থাকত, তারা যদি শুধু তাদের পাঠ্যপুস্তকে নিমগ্ন থাকত অথবা শুধুই ওয়ায-নছীহত শুনত, কিছুই না করত তাহলে কি এই বিপুলসংখ্যক আদম সন্তান ইসলামের ছায়াতলে আসত? সর্বত্র কি ইসলামী সেন্টার স্থাপিত হ’ত? বিভিন্ন অঞ্চলে মসজিদ তৈরী হ’ত? গির্জাসমূহ মসজিদে রূপান্তরিত হ’ত? দ্বীনী বিদ্যা ও ফিক্বহ চর্চার জন্য কি পাঠচক্র গড়ে উঠত?
এবার আসুন, আমরা ইসলামী বিশ্বের দিকে তাকাই। অধিকাংশ ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকার তার মিডিয়াকে দ্বীনী পরিবেশ নষ্ট ও দ্বীনকে ধ্বংস করার কাজে লাগিয়ে রেখেছে। তারা চাইছে, জনগণ দ্বীন পালনে তৎপর না হোক। আপনাদের আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন, আপনাদের চারপাশের যে যুবকেরা রয়েছে তারা কি তাদের দ্বীন অাঁকড়ে ধরে আছে? তাদের নবীর সুন্নাত দাঁতে কামড়ে পড়ে আছে? তারা কি অন্যায় ও বাতিলের মুকাবিলার জন্য কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে? এসব দেশে বরং ইসলামী দলগুলোই ইসলামের জন্য যা কিছু করছে।
আফসোস! শত আফসোস!! সরকারী যেসব ধর্মীয় সংস্থা রয়েছে তাদের অধিকাংশ থেকে এমন সব মানুষ তৈরী হচ্ছে যারা তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস বদলে ফেলেছে এবং দ্বীনী চেতনা বিনষ্ট করে ফেলেছে। তারা যখন যেমন তখন তেমন সাজে সাজছে। তাদের অবস্থা ‘যস্মিন দেশে যদাচার, কাছা খুলে নদী পার’-এর মত। তারা প্রতিটি দলের সাথে ওঠা-বসা করে এবং তাদের আল্লাহর পথে থাকার সার্টিফিকেট দেয়- তা ঐ সব দলের লক্ষ্য ও কর্মসূচী যাই হোক না কেন। তারা অন্যদের জাগতিক স্বার্থে নিজেদের দ্বীনের নিন্দা-মন্দ বা দুর্নাম করতেও কুণ্ঠিত হয় না। ফলে সৃষ্টিকুলের মধ্যে এসব দরবারী আলেমদের থেকে খারাপ ও দুশ্চরিত্রের লোক আপনি আর দ্বিতীয় পাবেন না। যদি আল্লাহর দ্বীনী বিষয় এসব সরকারী প্রতিষ্ঠানের ধর্মের ধ্বজাধারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হ’ত তাহ’লে দ্বীনের একটা রগও যিন্দা থাকত না এবং তার একটা প্রদীপও প্রজ্জ্বলিত থাকত না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা যুগের পরিক্রমায় এমন সব বান্দা নির্বাচন করেন যারা তার দ্বীনের পতাকা সব সময় উড্ডীন রাখতে সচেষ্ট থাকেন। আল্লাহর পথে চলতে তারা কোন ভৎর্সনাকারীর ভৎর্সনার পরোয়া করেন না।
আর এভাবে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বীনের জন্য পসন্দ করছেন তারা মূলতঃ দ্বীনী প্রচেষ্টার ফসল। এই দ্বীনী মহতী কাজই তো জান-প্রাণ দিয়ে আঞ্জাম দিয়ে চলেছে ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিনণ দাওয়াতী সংগঠন। আল্লাহর অনুগ্রহে এরাই হবে সেই আদর্শ কুরআনী প্রজন্মের প্রথম নমুনা- যাদের বিষয়ে অচিরেই আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখাবেন। যেমন আল্লাহ বলেন, وَلَيَنْصُرَنَّ اللهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ‘আর আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন, যে আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও মহা পরাক্রান্ত’ (হজ্জ ২২/৪০)।
[চলবে]
[1]. বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০; আহমাদ হা/৩৩৭১৭; তাবারানী হা/৩৮১; মুসনাদে তায়ালিসী হা/১১১; হাকেম হা/৫৮৭০।
[2]. বুখারী হা/১৮৩৪।
[3]. অনেক দেশের সরকার তাদের স্বার্থে যতটুকুতে আঘাত লাগে না ততটুকু ধর্ম-কর্ম করতে দেয়। অনেক দেশে যুবসমাজ যাতে দ্বীন বিমুখ হয় সেজন্য পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ও প্রাচ্যের শিরক ও নাস্তিকতাপূর্ণ সংস্কৃতি চালু করে রেখেছে। ইসলাম পালন তাদের দৃষ্টিতে জামা‘আতবদ্ধ নয়; বরং ব্যক্তিগত ব্যাপার। জামা‘আতবদ্ধ হ’তে গেলেই তারা নির্যাতনের শিকার হয়। এসব দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইসলামী বিধান কি হবে এটি একটি বড় জিজ্ঞাসা- অনুবাদক।
[4]. মুসলিম হা/১৪০।