বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। তিনি মাত্র ২৩ বছরের প্রচেষ্টায় আরবের চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন। তৎকালীন পৃথিবীর মানুষ অবাক দৃষ্টিতে অবলোকন করেছিল সমাজ পরিবর্তনের এই দৃশ্য। বহু দোষে দুষ্ট মানুষগুলিকে মুহূর্তের মধ্যে সোনার মানুষে রূপান্তরিত করার চমৎকার পদ্ধতি। এমন একজন মহান ব্যক্তির চরিত্রকে দু’চার কথায় কলমের অাঁচড়ে তুলে ধরা সম্ভব নয়। যাঁর সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ رَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ ‘(হে মুহাম্মাদ) তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি’ (আম্বিয়া ১০৭)। তাঁকে আল্লাহ তা‘আলা উত্তম চরিত্রের নমুনা হিসাবে পাঠিয়েছেন। তিনি তাঁর চরিত্রের সনদ প্রদান করেছেন এভাবে- وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘অবশ্যই তুমি মহোত্তম চরিত্রে অধিকারী’ (কলম ৪)। আমরা জানি মহোত্তম চরিত্রের মানুষ ঐ ব্যক্তি, যিনি তার মন ও চরিত্রে, অভ্যাস ও আচরণে পূর্ণ ভারসাম্য রাখেন; যা অন্যকে দুঃখ-কষ্ট, অপবাদ অথবা নির্যাতন করার অনেক ঊর্ধ্বে। ব্যক্তি ও সমাজ গঠনে এর বিকল্প নেই। তাই মহান আল্লাহ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বিশ্ববাসীর জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (আহযাব ২১)। আর সেই আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই পৃথিবীবাসীর জন্য প্রভূত কল্যাণ নিহিত আছে। কিন্তু যখন তাঁর সম্পর্কে কেউ কুরুচিপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করে তখন তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। যাঁর চরিত্রে বিন্দু পরিমাণ কালিমা নেই তাঁর সম্পর্কে কটূক্তি করা কান্ডজ্ঞানহীন নরাধমের কাজ বৈকি?
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্লগ সাইটে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে যেভাবে কটূক্তি করা হচ্ছে তা মুসলিম জাতিকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের জন্য তা গভীর উদ্বেগের বিষয় বটে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচেছ এ দেশ যেন নাস্তিক্যবাদীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ব্লগে তাদের লাগামহীন বক্তব্য এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। দেশের সর্বত্র মানুষ ফুঁসে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী নিম্নে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে কটূক্তির যৎসামান্য চিত্র তুলে ধরা হ’ল।-
গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী রাজধানী ঢাকার জনৈক নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দার নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক অজানা নোংরা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্বভাব-চরিত্র এবং ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে অতি জঘন্য লেখা প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। পত্র-পত্রিকায় এ সকল কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হওয়ায় দেশব্যাপী এই নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবী এবং ঘৃণা ও নিন্দার ঝড় অব্যাহত রয়েছে। ঐ ব্যক্তি তার ব্লগে গত বছরের জুন মাস থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ‘মোহাম্মক’ (মহা-আহম্মক), উম্মতে মুহাম্মদীকে ‘উম্মক’ (উম্মত+আহম্মক), মোহরে নবুঅতকে রাসূল (ছাঃ)-এর কাঁধে খাদীজার পেন্সিল হিল জুতার আঘাতের চিহ্ন বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।[1]
আরেক নাস্তিক ব্লগার আসিফ তার ব্লগে রাসূল (ছাঃ)-কে নারী লুলুপ চরিত্রে চিত্রিত করতে চেয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)! জান্নাতে মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত হূরদের সম্পর্কেও সে অশালীন কথাবার্তা পরিবেশন করেছে। এমনকি সে, বিশ্ব জগতের একচ্ছত্র অধিপতি মহান আল্লাহকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে দ্বিধাবোধ করেনি।[2] তার ব্যবহৃত ভাষাগুলো এতটাই নোংরা যা উল্লেখ করার মত নয়।
ইতিপূর্বে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক পবিত্র কুরআনের ব্যাঙ্গাত্মক অনুবাদ করে ‘ছহি রাজাকারনামা’ নামক প্রবন্ধ লিখেন। তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা ফাতেহার প্রথম আয়াতের অনুবাদ ‘সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য’ এর পরিবর্তে লেখেন ‘সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের’। অপর একটি আয়াত ‘আমরা তোমরাই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই’ এর পরিবর্তে লিখেন, ‘আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা কর, আর রাজকারদের সাহায্য প্রার্থনা কর’। সূরা নাবার ৩১-৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পরহেযগার লোকদের জন্য রয়েছে মহা সাফল্য। (তা হচ্ছে) বাগ-বাগিচা, আঙ্গুর (ফলের সমারোহ)। (আরো আছে) পূর্ণ যৌবনা সমবয়সী সুন্দরী তরুণী’। তিনি এর ব্যাঙ্গ অনুবাদে লিখেছেন, ‘আর তাহাদের জন্য সুসংবাদ। তাহাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ’।[3] আনিসুল হকের এ লেখাটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালের ১২ এপ্রিল পূর্বাভাস পত্রিকায়। অতঃপর ১৯৯৩ সালে লেখাটি আনিসুল হকের ‘গদ্যকার্টুন’ বইতে স্থান পায়। ২০১০ সালে বইটি ‘সন্দেশ’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পুনরায় প্রকাশ করে।
ব্লগাদের এরূপ কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য পত্রিকায় পর্যায়ক্রমে প্রকাশ হ’তে থাকলে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের শাস্তির দাবীতে শুরু হয় বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের আন্দোলন। ফলে রাষ্ট্রপক্ষ তাদেরকে চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান কমিটির কাছে আইটি বিশেষজ্ঞসহ কয়েকজন আলেম যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীন ইসলামবিদ্বেষী অন্যতম ব্লগার। আশ্চর্যজনক হ’লেও সত্য, এযাবৎকালের নাস্তিকদের মধ্যে আসিফই একমাত্র নাস্তিক, যে নিজেকে খোদা দাবী করেছে। মসজিদ সম্পর্কে সে লিখেছে, ‘ঢাকা শহরের সব মসজিদকে পাবলিক টয়লেট বানানো উচিত’ (নাউযুবিল্লাহ)![4]
ইতিপূর্বে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ মানিকগঞ্জ যেলার ঘিওরের ত্বরা জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত মজুমদার দশম শ্রেণীতে পড়ানোর সময় বলেন, ‘কুরআন শরীফ মানুষের বানানো সাধারণ একটি বই। মুহাম্মাদ একজন অপবিত্র মানুষ। তার মায়ের বিয়ের ৬ মাস আগেই মুহাম্মাদের জন্ম হয়। (নাউযুবিল্লাহ)! অবশ্য পরবতীর্তে জনরোষে পড়ে তিনি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।[5] মহানবী (ছাঃ)-এর কার্টুন পুনঃপ্রকাশ করে মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে অনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিল ডেনমার্কের পত্রিকা পলিতিকান।[6]
এসব নাস্তিক ব্লগারদের বাংলাদেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে দেশের অগণিত মুসলমান বিক্ষোভ, মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। প্রথম পর্যায়ে প্রশাসন ও সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও অতি সম্প্রতি দু’একজন ব্লগারকে গ্রেফতার করেছে। তাদের অনেকেই এখনো গলাবাজি অব্যাহত রেখেছে। তারা তথাকথিত মুক্তমনা, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার দোহাই পেড়ে এসব নোংরা কাজের স্বীকৃতি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে তাদেরই তল্পিবাহক প্রগতিশীল কথিত বুদ্ধিজীবী নতুন প্রজন্মের গণজাগরণের ধুয়া তুলে তাদের সাফাই গাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের নাস্তিক্যবাদকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য নানান ফন্দি-ফিকির অাঁটছে। কেউ আবার ধর্মনিরপেক্ষতার তকমা লাগিয়ে সবকিছুই ঠিক প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টায় গলদঘর্ম।
নাস্তিক-মুরতাদদের ব্যাপারে শারঈ বিধান : ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে কেউ মুরতাদ তথা নাস্তিক হয়ে গেলে অথবা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করলে ইসলামে তার শাস্তি হ’ল মৃত্যুদন্ড। যেহেতু সে ধর্মত্যাগী কাফের হিসাবে গণ্য হবে (তওবাহ ৬৫-৬৬)। ছাহাবীগণসহ সর্বযুগের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে ঐ ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।[7] তবে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের (কারতুবী)। এ দায়িত্ব পালন না করলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হবে। ঐ ব্যক্তি তওবা করলে তার তওবা কবুল হবে। কিন্তু মৃত্যুদন্ড বহাল থাকবে। এটাই হ’ল বিদ্বানগণের সর্বাগ্রগণ্য মত।[8] রাসূল (ছাঃ)-কে গালিদাতা জনৈক ইহুদীকে এক মুসলিম শ্বাসরোধ করে হত্যা করলে রাসূল (ছাঃ) তার রক্তমূল্য বাতিল করে দেন।[9]
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে এদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُوْلُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوْضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ. لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوْا مُجْرِمِيْنَ
‘আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলে দেবে-আমরা তো শুধু আলাপ-আলোচনা ও হাঁসি-তামাসা করছিলাম; তুমি বলে দাও, তবে কি তোমরা আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি হাসি-তামাসা করছিলে? তোমরা ওযর-আপত্তি পেশ কর না, তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করছ; যদিও আমি তোমাদের কতককে ক্ষমা করে দেই, তবুও কতককে শাস্তি দিবই, কারণ তারা অপরাধী ছিল’ (তওবা ৯/৬৫-৬৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُونَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوْا أَوْ يُصَلَّبُوْا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيْهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلاَفٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি (ফিতনা) সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে। অথবা একদিকের হাত ও অপরদিকের পা কেটে ফেলা হবে, অথবা নির্বাসনে পাঠানো হবে। এটা তো ইহলোকে তাদের জন্য ভীষণ অপমান, আর পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তি রয়েছে’ (মায়েদা ৫/৩৩)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যদি তাদের কোন ব্যক্তি ধৃত হওয়ার আগে তওবা করে, তবে এ ধরনের তওবা করার কারণে শরী‘আতের যে নির্দেশ তার প্রতি ওয়াজিব হয়ে যায়, তা মাফ হয় না’।[10] অপর এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْدَ إِيْمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُوْلٰئِكَ هُمُ الضَّالُّوْنَ.
‘নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপনের পর অবিশ্বাসী হয়েছে, তৎপর অবিশ্বাসে তারা আরো বেড়ে গেছে, তাদের ক্ষমা প্রর্থনা কখনই পরিগৃহীত হবে না এবং তারাই পথভ্রষ্ট’ (আলে ইমরান ৩/৯০)।
আলোচ্য আয়াত সমূহ দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে কটূক্তিকারী ও নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তি হ’ল মৃত্যুদন্ড। তাদের এ শাস্তি মওকূফের কোন সুযোগ নেই। তারা মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি চাইলে তাদেরকে ক্ষমা করতে পারেন। এতে করে তাদের পরকালীন শাস্তি আল্লাহ মওকূফ করবেন। তবে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে দুনিয়াবী শাস্তি তথা মৃত্যুদন্ড বহাল থাকবে। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, ইকরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَحْرَقَ نَاسًا ارْتَدُّوْا عَنِ الإِسْلاَمِ فَبَلَغَ ذَلِكَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَمْ أَكُنْ لأَحْرِقَهُمْ بِالنَّارِ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تُعَذِّبُوْا بِعَذَابِ اللهِ. وَكُنْتُ قَاتِلَهُمْ بِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ بَدَّلَ دِيْنَهُ فَاقْتُلُوْهُ.
অর্থাৎ ‘ইকরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ঐ সব লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন, যারা মুরতাদ হয়েছিল। এ সংবাদ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, যদি আমি সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে তাদের আগুনে পুড়াতে দিতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিও না। অবশ্য আমি তাদেরকে আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করতাম। কেননা তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে’।[11]
এ হাদীছ থেকে বুঝা যায়, আলী (রাঃ) মুরতাদদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। অবশ্য ইবনু আববাস (রাঃ) আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করাকে পসন্দ করেননি। তবে তিনিও মৃত্যুদন্ডের পক্ষেই রায় দেন। দুনিয়াতে তাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ. ‘কেউ যদি দ্বীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে’।[12] অন্যত্র তিনি বলেন
لاَ يَحِلُّ دَمُ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّى رَسُولُ اللهِ إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ الثَّيِّبُ الزَّانِى وَالنَّفْسُ بِالنَّفْسِ وَالتَّارِكُ لِدِينِهِ الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ.
‘ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’। তবে তিনটি কারণে মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালাল- (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা করা এবং (৩) যে ব্যক্তি দ্বীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলিম জামা‘আত থেকে বেরিয়ে যায়’।[13] অন্যত্র তিনি বলেন,
لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ رَجُلٌ زَنَى بَعْدَ إِحْصَانٍ فَإِنَّهُ يُرْجَمُ وَرَجُلٌ خَرَجَ مُحَارِبًا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّهُ يُقْتَلُ أَوْ يُصْلَبُ أَوْ يُنْفَى مِنَ الأَرْضِ أَوْ يَقْتُلُ نَفْسًا فَيُقْتَلُ بِهَا.
‘কোন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল’। তবে তিনটির মধ্যে যে কোন একটির কারণে তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল- (১) যদি কেউ বিবাহ করার পর যেনা করে, তবে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে; (২) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবে, তাকে হত্যা করা হবে, অথবা শূলে চড়ানো হবে, অথবা দেশান্তর করা হবে এবং (৩) যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করবে, তার জীবনের বিনিময়ে তাকে হত্যা করা হবে’।[14] আলোচ্য হাদীছদ্বয়ে তিনটি কারণে কোন মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা বৈধ প্রমাণিত হয়। ১. বিবাহিত ব্যভিচারী ২. হত্যার পরিবর্তে হত্যা ও ৩. ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হওয়া।
আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কটূক্তিকারীর বিধান : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় যুগের নাস্তিক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কটূক্তিকারী কা‘ব বিন আশরাফকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন । জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কা‘ব বিন আশরাফকে হত্যা করার জন্য কে প্রস্ত্তত আছ? কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, তাহ’লে আমাকে কিছু প্রতারণাময় কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ বল। অতঃপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) কা‘ব বিন আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূল [ছাঃ]) ছাদাক্বাহ চায়। সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কা‘ব বিন আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরবর্তীতে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আমরা তাঁর অনুসরণ করছি। পরিণাম কী দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই সঙ্গ ত্যাগ করা ভাল মনে করছি না। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক্ব বা দুই ওসাক্ব খাদ্য ধার চাই।... কা‘ব বলল, ধার তো পাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, কী জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আপনি আরবের একজন সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কিভাবে আমাদের স্ত্রীদের বন্ধক রাখব? তখন সে বলল, তাহ’লে তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কী করে বন্ধক রাখি? তাদেরকে এই বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক্ব বা দুই ওসাক্বের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য খুব লজ্জাজনক বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্র-শস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে, অস্ত্রশস্ত্র। শেষে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ তার কাছে আবার যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন।
এরপর তিনি কা‘ব বিন আশরাফের দুধ ভাই আবূ নায়লাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকটে গেলেন। কা‘ব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে উপরতলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্ত্তত হ’ল। তখন তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এই তো মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং আমার ভাই আবূ নায়লা এসেছে। আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে, কা‘বের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি, যা থেকে রক্তের ফোঁটা ঝরছে বলে মনে হচ্ছে। কা‘ব বিন আশরাফ বলল, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং দুধ ভাই আবূ নায়লা (অপরিচিত কোন লোক নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলেও তার যাওয়া উচিত। বর্ণনাকারী বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে গেলেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আমর কি তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফিয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জনকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, যখন সে (কা‘ব বিন আশরাফ) আসবে তখন আমি তার মাথার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা অাঁকড়ে ধরেছি, তখন তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। অতঃপর কা‘ব চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আজকের মত এত উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। কা‘ব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধি ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুঁকতে অনুমতি দিবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তার মাথা শুঁকলেন এবং সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তারা তাকে হত্যা করল। এরপর নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে এ খবর দিলেন’।[15] এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কেউ নবী করীম (ছাঃ) সম্পর্কে কোন ব্যাঙ্গাত্মক কথা বা কটূক্তি করলে তাকে হত্যা করতে হবে। তবে এ মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ইসলামে রাষ্ট্র প্রধানের সিদ্ধান্তে তার সেনাবাহিনী বা তার নিয়োগকৃত লোক তাকে হত্যা করবে। এ হাদীছে বর্ণিত কা‘ব বিন আশরাফ বনু কুরায়যা গোত্রের একজন কবি ও নেতা ছিল। যে বিভিন্ন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে বিদ্রূপাত্মক কথা প্রচার করত। এমনকি সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের স্ত্রী-কন্যাদের সম্পর্কেও কুৎসিত অশালীন উদ্ভট কথা রচনা করত। এ সকল কর্মকান্ডে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে অবশেষে তৃতীয় হিজরী সনের রবীউল আওয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহকে নির্দেশ দেন তাকে হত্যা করার।[16] অপর একটি হাদীছে এসেছে,
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى أَبِى رَافِعٍ الْيَهُودِىِّ رِجَالاً مِنَ الأَنْصَارِ، فَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَتِيكٍ، وَكَانَ أَبُو رَافِعٍ يُؤْذِى رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَيُعِينُ عَلَيْهِ.
বারা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু আতীককে আমীর বানিয়ে তার নেতৃত্বে কয়েকজন আনছার ছাহাবীকে ইহুদী আবু রাফে‘র (হত্যার) উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আবু রাফে‘ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদেরকে সাহায্য করত’।[17] তারা রাতের বেলা তার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে খুন করে।[18]
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَنَّ أَعْمَى كَانَتْ لَهُ أُمُّ وَلَدٍ تَشْتُمُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم وَتَقَعُ فِيهِ فَيَنْهَاهَا فَلاَ تَنْتَهِى وَيَزْجُرُهَا فَلاَ تَنْزَجِرُ ... قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَنَا صَاحِبُهَا كَانَتْ تَشْتِمُكَ وَتَقَعُ فِيكَ فَأَنْهَاهَا فَلاَ تَنْتَهِى وَأَزْجُرُهَا فَلاَ تَنْزَجِرُ وَلِى مِنْهَا ابْنَانِ مِثْلُ اللُّؤْلُؤَتَيْنِ وَكَانَتْ بِى رَفِيقَةً فَلَمَّا كَانَتِ الْبَارِحَةَ جَعَلَتْ تَشْتِمُكَ وَتَقَعُ فِيكَ فَأَخَذْتُ الْمِغْوَلَ فَوَضَعْتُهُ فِى بَطْنِهَا وَاتَّكَأْتُ عَلَيْهَا حَتَّى قَتَلْتُهَا. فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَلاَ اشْهَدُوا أَنَّ دَمَهَا هَدَرٌ.
ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন এক অন্ধ ব্যক্তির একটি দাসী ছিল। সে নবী করীম (ছাঃ)-এর শানে বেয়াদবীসূচক কথাবার্তা বলত। অন্ধ ব্যক্তিটি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতেন, কিন্তু সে তা মানত না। সে ব্যক্তি তাকে ধমকাত, তবু সে তা থেকে বিরত হ’ত না। এমতাবস্থায় এক রাতে যখন ঐ দাসী নবী করীম (ছাঃ)-এর শানে অমর্যাদাকর কথাবার্তা বলতে থাকে, তখন ঐ অন্ধ ব্যক্তি একটি ছোরা নিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে, যার ফলে ঐ দাসী মারা যায়। এ সময় তার এক ছেলে তার পায়ের উপর এসে পড়ে, আর সে যেখানে বসে ছিল, সে স্থানটি রক্তাক্ত হয়ে যায়। পরদিন সকালে এ ব্যাপারে যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আলোচনা হয়, তখন তিনি সকলকে একত্রিত করে বললেন, আমি আল্লাহর নামে শপথ করে এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই এবং এটা তার জন্য আমার হক্ব স্বরূপ। অতএব যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করেছে, সে যেন দাঁড়িয়ে যায়। অন্ধ লোকটি তখন লোকদের সারি ভেদ করে প্রকম্পিত অবস্থায় নবী করীম (ছাঃ)-এর সামনে গিয়ে বসে পড়ে এবং বলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছাঃ)! আমি তার হন্তা। সে আপনার সম্পর্কে কটূক্তি ও গালি-গালাজ করত। আমি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতাম ও ধমকাতাম। কিন্তু সে তার প্রতি কর্ণপাত করত না। ঐ দাসী থেকে আমার দু’টি সন্তান আছে, যারা মনি-মুক্তা সদৃশ এবং সেও আমার খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু গত রাতে সে যখন পুনরায় আপনার সম্পর্কে কটূক্তি ও গাল-মন্দ করতে থাকে, তখন আমি আমার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং ছোরা দিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে তাকে হত্যা করি। তখন নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক যে, ঐ দাসীর রক্ত ক্ষতিপূরণের অযোগ্য বা মূল্যহীন’।[19] এ হাদীছ দ্বারাও প্রতীয়মান হয় যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর নামে ব্যাঙ্গ বা কটূক্তিকারীর শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে, আবু মূসা (রাঃ) বলেন,
فَلَمَّا قَدِمَ عَلَيْهِ (أبو موسى) مُعَاذٌ قَالَ انْزِلْ. وَأَلْقَى لَهُ وِسَادَةً فَإِذَا رَجُلٌ عِنْدَهُ مُوثَقٌ قَالَ مَا هَذَا قَالَ هَذَا كَانَ يَهُودِيًّا فَأَسْلَمَ ثُمَّ رَاجَعَ دِينَهُ دِينَ السُّوءِ. قَالَ لاَ أَجْلِسُ حَتَّى يُقْتَلَ قَضَاءُ اللهِ وَرَسُولِهِ. قَالَ اجْلِسْ نَعَمْ. قَالَ لاَ أَجْلِسُ حَتَّى يُقْتَلَ قَضَاءُ اللهِ وَرَسُولِهِ. ثَلاَثَ مَرَّاتٍ فَأَمَرَ بِهِ فَقُتِلَ ثُمَّ تَذَاكَرَا قِيَامَ اللَّيْلِ فَقَالَ أَحَدُهُمَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ أَمَّا أَنَا فَأَنَامُ وَأَقُومُ أَوْ أَقُومُ وَأَنَامُ وَأَرْجُو فِى نَوْمَتِى مَا أَرْجُو فِى قَوْمَتِى.
অর্থাৎ যখন মু‘আয তার কাছে উপস্থিত হন, তখন তিনি তাকে বসার জন্য অনুরোধ করেন এবং তার জন্য একটি বালিশ রেখে দেন। এ সময় মু‘আয (রাঃ) তার নিকট বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এই ব্যক্তি কে? তখন আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, এই ব্যক্তি আগে ইহুদী ছিল, পরে ইসলাম কবুল করে, এরপর সে ঐ অভিশপ্ত (ইহুদী) ধর্মে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করেছে। তখন মু‘আয (রাঃ) বলেন, আমি ততক্ষণ বসব না, যতক্ষণ না এই ব্যক্তিকে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করা হবে। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ এরূপই হবে, আপনি বসুন। তখন মু‘আয (রাঃ) তিন বার এরূপ বললেন, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত বসব না, যতক্ষণ না এই ব্যক্তিকে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করা হবে। এরপর আবূ মূসা (রাঃ) হত্যার নির্দেশ দেন এবং তা কার্যকর করা হয়। পরে তারা রাত্রি জাগরণ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন। তখন তাদের একজন, সম্ভবত মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, আমি রাতে ঘুমাই ও উঠে ছালাতও আদায় করি; অথবা আমি রাতে উঠে ছালাত আদায় করি এবং ঘুমাইও। আর আমি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করার জন্য যেরূপ ছওয়াবের আশা করি, ঐরূপ ছওয়াব আমি ঘুমিয়ে থাকাবস্থায়ও আশা করি।[20] আবু মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, قَدِمَ عَلَىَّ مُعَاذٌ وَأَنَا بِالْيَمَنِ وَرَجُلٌ كَانَ يَهُوْدِيًّا فَأَسْلَمَ فَارْتَدَّ عَنِ الإِسْلاَمِ فَلَمَّا قَدِمَ مُعَاذٌ قَالَ لاَ أَنْزِلُ عَنْ دَابَّتِى حَتَّى يُقْتَلَ. فَقُتِلَ. قَالَ أَحَدُهُمَا وَكَانَ قَدِ اسُْتِيْبَ قَبْلَ ذَلِكَ. অর্থাৎ আমি যখন ইয়ামেনের শাসনকর্তা, তখন মু‘আয (রাঃ) আমার নিকট আসেন। এ সময় একজন ইহুদী মুসলমান হয়, পরে ইসলাম পরিত্যাগ করে। সে সময় মু‘আয সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন, যতক্ষণ না এ ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে, ততক্ষণ আমি আমার বাহন থেকে অবতরণ করব না। এরপর তাকে হত্যা করা হয়’।[21]
হাদীছদ্বয় থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ধর্মত্যাগী তথা মুরতাদদের শাস্তি হ’ল মৃত্যুদন্ড। যা রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর করা হবে। যদি রাষ্ট্রের সরকার তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে বিলম্ব করে তাহ’লে মুসলিম জনগণ ন্যায়সঙ্গতভাবে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। আর যদি রাষ্ট্রপক্ষ তাদের শাস্তির বিষয়ে গড়িমসি করে তাহ’লে ন্যায়ানুগভাবে সরকারকে একাজে বাধ্য করতে হবে। আর এ গুরু দায়িত্ব পালন করবেন সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণ। আর এটাই মূলত ঈমানের দাবী।
সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকলকে নিরাপত্তা দান করেন। কিন্তু তিনি চারজন পুরুষ এবং দু’জন নারী সম্পর্কে বলেন, তাদেরকে যেখানেই পাবে হত্যা করবে; যদিও তারা কা‘বার পর্দা ধরে থাকে। তারা হ’ল ইকরামা ইবনে আবু জাহল, আব্দুল্লাহ ইবনে খতল, মিকইয়াস ইবনে সুবাবা, আব্দুল্লাহ ইবনে সা‘দ ইবনে আবু সারাহ। আব্দুল্লাহ ইবনে খতলকে কা‘বার গিলাফের সাথে লাগা অবস্থায় পাওয়া গেল এবং তাকে হত্যা করার জন্য দু’ব্যক্তি ছুটে গেল। একজন হ’ল, সা‘ঈদ ইবনু হুরায়স অন্যজন হ’লেন আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)। সা‘ঈদ ছিলেন যুবক, তিনি আগে গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। আর মিকইয়াস ইবনে সুবাবাকে লোকেরা বাজারে পেল এবং তাকে হত্যা করল। আর ইকরামা ইবনে আবু জাহল জাহাজে আরোহণ করে সুমদ্র পার হ’তে গেলে জাহাজ তুফানের কবলে পড়ল। জাহাজের লোক বলল, এখন তোমার একনিষ্ঠ ভাই আব্দুল্লাহকে ডাক। কেননা তোমরা যে মূর্তির পূজা কর তারা তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারবে না। ইকরামা বলল, আল্লাহর কসম! যদি সুমদ্রে তিনি ব্যতীত আমাকে আর কেউ রক্ষা করতে না পারেন, তাহ’লে স্থলভাগেও তিনি ছাড়া আমাকে আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ওয়া‘দা করছি, যদি তুমি আমাকে এই মুছীবত হ’তে নাজাত দাও তবে আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হব এবং তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করব। আমার ধারণা তিনি আমায় ক্ষমা করবেন এবং রহম করবেন। পরে তিনি এসে মুসলমান হয়ে যান। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সারাহ ওছমান (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে লুকিয়ে থাকলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লোকদের বায়‘আতের জন্য আহবান করলেন, তখন ওছমান (রাঃ) তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট হাযির করে দিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আব্দুল্লাহর বায়‘আত গ্রহণ করুন। তিনি মাথা উঠিয়ে তিনবার আব্দুল্লাহর প্রতি তাকালেন। তিনবারের পর তার বায়‘আত গ্রহণ করলেন। এরপর তিনি ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন বুদ্ধিমান লোক ছিল না যে, যখন আমি তার বায়‘আত গ্রহণ করছিলাম না, তখন এসে তাকে হত্যা করত? ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছঃ)! আপনার মনের কথা আমরা কি করে জানব? আপনি চক্ষু দ্বারা কেন ইশারা করলেন না? তিনি বললেন, নবীর মর্যাদার অনুকূল নয় যে, বাহ্যত চুপ থেকে চোখে ইঙ্গিত করবে’।[22] নবী করী (ছাঃ)-কে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়ার ফলে তাদের এ পরিণাম ভোগ করতে হয়েছিল।
শেষকথা :
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এদেশের শতকরা নববই ভাগ জনগণই ধর্মপ্রাণ মুসলিম। এদেশের স্বাধীনতার প্রেরণাই ছিল ‘ইসলাম’ একথা চির সত্য। এদেশের হাযার হাযার মুসলিমের তপ্ত লহু স্বাধীনতার চেতনায় মিশে আছে। স্বাধীনতাপূর্ব থেকে বর্তমান অবধি প্রতিটি মোড় পরিবর্তনকারী ক্ষেত্রেই মুসলিম জনগণ সর্বাগ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে। কাংখিত লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে তারা কুণ্ঠিত হয়নি। স্বীয় ঈমান-আক্বীদা নিয়ে সগৌরবে মুসলিম হিসাবে স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের তাকীদেই তারা এসব করেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ভারত থেকে দু’বাংলার ভাগ হওয়ার পিছনেও একই চেতনা কার্যকর। দুঃখের বিষয় হ’লেও সত্য যে আজ সেই কাংখিত বাংলাদেশকে মস্তিষ্কপ্রসূত বস্ত্তবাদী দর্শনের গোলক ধাঁধাঁয় ফেলে নাস্তিক্যবাদকে উসকে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একশ্রেণীর কথিত বুদ্ধিজীবী প্রগতিশীলতার বুলি আওড়িয়ে মগজ ধোলাইয়ে সদা ব্যস্ত রয়েছে।
কিন্তু তারা কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেছে দাউদ হায়দারের পরিণতির কথা? সালমান রুশদীর অপমানকর অবস্থা। নিজ জন্মভূমিতে যার ঠাঁই হয়নি। তসলীমা নাসরীনের বেদনা-বিধুর জীবন যাপনের করুন চিত্র? বেঁচে থেকেও যে আজ প্রায় মৃত জীবন যাপন করছে। নিজ দেশ ও স্বজন ছাড়া হয়ে এদেশ-ওদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিনদেশের দয়ায় দু’মুঠো খাবার গিলছে। এরা তো মুসলিম ঘরেরই সন্তান ছিল। কিন্তু কেন তাদের এ করুণ পরিণতি? কারণ একটাই ইসলামের অবমাননা করা। বর্তমান সময়ের নাস্তিক ব্লগার ও তাদের দোষররা এত তাড়াতাড়ি এ ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। তসলীমা নাসরীনের ইসলাম অবমাননার কারণে এদেশে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দরের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সর্বস্তরের মুসলিম জনগণ প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। সামান্য সময়ের ব্যবধানে তাকে চিরদিনের জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। শ্লোগানে শ্লোগানে বাংলার আকাশ-বাতাশ মুখরিত করে তুলেছিল। রাজপথে সে সময়ের তেজোদ্দীপ্ত ঈমানদারদের প্রতিবাদী কণ্ঠের ‘লিল্লাহি তাকবীরে’র মুর্হুমুর্হু প্রতিধ্বনি আজো যেন শুনা যায়। সেদিনের প্রতিবাদী মুসলিম জনগণের অধিকাংশ এখনো বেঁচে আছেন। সেদিন নাস্তিকদের দেয়া আঘাতে তাদের কলিজায় যে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল, সে ক্ষতের দাগ এখনো শুকায়নি।
এরই মধ্যে আবার নাস্তিকদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা। একে সরকার শক্ত হাতে দমন করতে না পারলে শেষ পরিণতি খুবই ভয়াবহ হবে। কারণ এটি কোন দলীয় ইস্যু নয়। এই ইস্যু সকল মুসলিম জনগণের ধর্মীয় ব্যাপার; ঈমানের ব্যাপার। ইসলাম অবমাননাকারীদের এসব কটূক্তি প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। যে ক্ষত এমনিতেই শেষ হবার নয়। কতৃপক্ষের উচিত কালক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব এদের উপযুক্ত বিচার করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা। অন্যথা মুসলিম জনগণের ফেলে আসা অতীতের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ও ধূমায়িত ক্ষোভ রাজপথে আবার বিষ্ফোরিত হবে! বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল তার সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না। সময় এসেছে নাস্তিকদের সুষ্ঠু বিচার করে তাদের সে বক্তব্য জাতির কাছে সত্য প্রমাণ করার। নিজেদের অবস্থান জনগণের নিকট পরিষ্কার করার। লাখো তাওহীদী জনতা তারই অপেক্ষায় রয়েছে। নতুবা তারা ফুঁসে উঠলে তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া আরো জটিল হবে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমীন!
সহকারী শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. মাসিক আত-তাহরীক, এপ্রিল ২০১৩ইং, পৃঃ ৪৩।
[2]. দৈনিক আমার দেশ, ২ এপ্রিল ২০১৩ইং, পৃঃ ২, কলাম ৫।
[3]. দৈনিক আমার দেশ, ২৮ মার্চ ২০১৩ ইং, পৃঃ ৪, কলাম ৫।
[4]. দৈনিক আমার দেশ, ২ এপ্রিল ২০১৩ইং, পৃঃ ১, কলাম ৬।
[5]. মাসিক আত-তাহরীক, এপ্রিল ২০১০, পৃঃ ৪১-৪২।
[6]. মাসিক আত-তাহরীক, এপ্রিল ২০১০, পৃঃ ৪২।
[7]. ইবনু তায়মিয়াহ, আছ-ছারেমুল মাসলূল ২/১৩-১৬।
[8]. ওছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ৬/৫৩।
[9]. আবূদাঊদ হা/৪৩৬১, ৪৩৬৩, নাসাঈ হা/৪০৭৬)। বিস্তারিত দ্রঃ মাসিক তাহরীক, এপ্রিল ২০১৩, প্রশ্নোত্তর নং ৩১/২৭১, পৃঃ ৫৪।
[10]. আবূদাঊদ হা/৪৩৭২, সনদ হাসান।
[11]. বুখারী হা/৩০১৭; আবূদাঊদ হা/৪৩৫১; ইবনু মাজাহ হা/২৫৩৫; তিরমিযী হা/১৪৫৮; নাসাঈ হা/৪০৬০; মিশকাত হা/৩৫৩৩।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/২৫৩৫; নাসাঈ হা/৪০৫৯, সনদ ছহীহ।
[13]. আবুদাঊদ হা/৪৩৫২; ইবনু মাজাহ হা/২৫৩৪; তিরমিযী হা/১৪০২, সনদ ছহীহ।
[14]. আবূদাঊদ হা/৪৩৫৩; মিশকাত হা/৩৫৪৪, সনদ ছহীহ।
[15]. বুখারী হা/৪০৩৭; মুসলিম হা/১৮০১।
[16]. দ্রঃ তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বাংলা বুখারী ৪/৪৪ পৃঃ, ৪০৩৭ নং হাদীছের টীকা।
[17]. বুখারী হা/৪০৩৯।
[18]. বুখারী হা/৪০৩৮।
[19]. আবূদাঊদ হা/৪৩৬১; নাসাঈ হা/৪০৭০, সনদ ছহীহ।
[20]. আবূদাঊদ হা/৪৩৫৪, সনদ ছহীহ।
[21]. আবূদাঊদ হা/৪৩৫৫, সনদ ছহীহ।
[22]. নাসাঈ হা/৪০৬৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭২৩, সনদ ছহীহ।