গীবত একটি ভয়াবহ কবীরা গুনাহ। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য গীবত বা পরিন্দা হারাম করেছেন। কারণ গীবতের মাধ্যমে অপর ভাইয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। তবে কতিপয় ক্ষেত্রে গীবত হারাম নয়। ইমাম হায়তামী (রহঃ) বলেন, নিরুপায় হয়ে গেলে বেঁচে থাকার তাকীদে যেমন সাময়িকভাবে মৃত প্রাণী ও শূকরের গোশত খাওয়া জায়েয, ঠিক তেমনি মুসলমানদের বৃহত্তর কল্যাণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েয।[1] ইমাম নববী, গাযালী, শাওক্বানী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম বৈধ গীবতের ছয়টি ক্ষেত্র বর্ণনা করেছেন। আলোচ্য নিবন্ধে সেই ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করা হ’ল।-
১. যালেমের যুলুম প্রকাশ করার ক্ষেত্রে :
ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য যালেমের অত্যাচারের বিষয় প্রকাশ করা মাযলূমের জন্য জায়েয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالًا، ‘হক্বদারের জন্য কথা বলার অধিকার আছে’।[2] মহান আল্লাহ বলেন,لَا يُحِبُّ اللهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ وَكَانَ اللهُ سَمِيْعًا عَلِيمًا، ‘আল্লাহ কোন মনদ কথা প্রকাশ করা পসনদ করেন না। তবে যে অত্যাচারিত হয় (তার কথা স্বতন্ত্র)। আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (নিসা ৪/১৪৮)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ও হাসান বছরী (রহঃ) বলেছেন, এখানে মন্দ কথা প্রকাশ করার অর্থ হ’ল- যালেমের বিরুদ্ধে বদদো‘আ করা বৈধ। তবে মাযলূম যদি ধৈর্যধারণ করে সেটাই উত্তম।[3]
ইমাম ইবনু জারীর তাবারী (রহঃ) বলেন, এই আয়াতের অর্থ হ’ল- আল্লাহ বদদো‘আ করা অপসন্দ করেন, তবে মাযলূমের বদদো‘আকে অপসন্দ করেন না।[4] আশ-শানক্বীতী (রহঃ) বলেন, আয়াতেই ইঙ্গিত রয়েছে যে, বদাদো‘আ করার চেয়ে যালেমকে ক্ষমা করে দেওয়াই উত্তম।[5]
ইমাম বাগাভী (রহঃ) বলেন, فَيَجُوزُ لِلْمَظْلُومِ أَنْ يُخْبِرَ عَنْ ظُلْمِ الظَّالِمِ وَأَنْ يَدْعُوَ عَلَيْهِ، ‘যালেমের অত্যাচারের খবর প্রকাশ করা এবং তার জন্য বদদো‘আ করা মাযলূমের জন্য জায়েয। কেননা আল্লাহ বলেন,وَلَمَنِ انْتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِهِ فَأُولَئِكَ مَا عَلَيْهِمْ مِنْ سَبِيلٍ، ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেয়, তাদের বিরুদ্ধে দোষারোপের কোন পথ নেই’ (শূরা ৪২/৪১)।
ইমাম শাওক্বানী (রহঃ) বলেন, অত্র আয়াতে যালেমের যুলুম প্রকাশ করার বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, যালেম ব্যক্তির অন্যান্য দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা জায়েয; বরং তার যুলুমটুকু প্রকাশ করা জায়েয। মূলতঃ এখানে অত্যাচারের বিষয় প্রকাশ করার বৈধতা দিয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি দয়া প্রদর্শন করেছেন। আর সেটা হ’ল- যদি মাযলূমের জন্য নির্যাতনের বিষয় প্রকাশ করা জায়েয না হ’ত, তবে সে যালেমের জন্য বদদো‘আ করত। আর যালেমের বিপক্ষে সেই বদদো‘আ অবশ্যই কার্যকর হয়ে যেত। সুতরাং মাযলূম যদি ন্যায় বিচারের জন্য স্বীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায়, তবে যালেম ব্যক্তি দুনিয়াতেই তার শাস্তি পেয়ে যাবে এবং সে হয়ত তার যুলুম থেকে ফিরে আসবে। ফলে পরকালের শাস্তি থেকে সে মুক্তি পেয়ে যাবে।[6]
শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি অপর কোন ভাইকে কষ্ট দেয়, তার সম্পদ আত্মসাৎ করে অথবা অন্য কোন মাধ্যমে তার প্রতি যুলুম করে। আর সেই মাযলূম ব্যক্তি যদি মনকে হালকা করার জন্য তার পরিবার, স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু-বান্ধবের কাছে সেই যুলুমের কথা প্রকাশ করে, তবে তাতে কোন দোষ নেই। কেননা যালেম ও মাযলূমের মাঝে কোন পর্দা নেই।[7]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘মাযলূম ব্যক্তির জন্য তার ওপর চলা যুলুম বন্ধ করার উদ্দেশ্যে বাদশাহ, বিচারক বা ন্যায়বিচার প্রদানে সক্ষম ব্যক্তির নিকট যুলুমের বিবরণ প্রকাশ করা জায়েয। অর্থাৎ তার এই ধরনের কথা বলা জায়েয যে, অমুক আমার উপর যুলুম করেছে, আমার অধিকার নষ্ট করেছে বা জোরপূর্বক আমার থেকে এই বস্ত্ত ছিনিয়ে নিয়েছে ইত্যাদি’।[8] হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের দোষ বর্ণনা করলে সেটা গীবত হিসাবে গণ্য হয় না- (১) অত্যাচারী শাসক, (২) প্রকাশ্য পাপাচারী এবং (৩) বিদ‘আতী’।[9] কেননা অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার নমুনা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগেও পাওয়া যায়। যেমন জাবির (রাঃ) বলেন, সা‘দ ইবনুর রবী‘ (রাঃ)-এর স্ত্রী সা‘দের ঔরসজাত তার দুই মেয়েসহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরা সা‘দ ইবনুর রবী‘র দুই মেয়ে। এদের বাবা ওহোদের যুদ্ধে আপনার সাথে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। এদের চাচা এদের সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে এবং এদের জন্য কিছুই রাখেনি। আর সম্পদ না থাকলে এদের বিয়ে দেওয়াও তো সম্ভব হবে না। তিনি বললেন, এ বিষয়টি আল্লাহই সমাধান করে দিবেন। অতঃপর এরই পরিপ্রেক্ষিতে সূরা নিসাতে মীরাছ বণ্টন বিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হয়।[10] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য যালেমের নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া জায়েয।
আরেকবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে আমাকে খুব কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَتَاعَكَ إِلَى الطَّرِيقِ، ‘তুমি ফিরে গিয়ে তোমার ঘরের আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে রাখ’। অতএব সে ফিরে এসে তার ঘরের আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দিল। এতে তার ঘরের সামনে লোকজন জড়ো হ’ল। তারা জিজ্ঞেস করল, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমার প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়। আমি তা নবী কারীম (ছাঃ)-এর নিকট বললে তিনি আমাকে ঘরের আসবাবপত্র বাইরে ফেলে রাখতে বলেন। তখন লোকজন সেই যুলুমকারীকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, اللَّهُمَّ العَنْه اللَّهُمَّ اخْزِه، ‘হে আল্লাহ! তার উপর অভিসম্পাত কর, হে আল্লাহ! তাকে লাঞ্ছিত কর’। বিষয়টি প্রতিবেশী জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে এসে বলল, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর শপথ! আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিব না’।[11] এই হাদীছের ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেন,هذا من الأدلة على جواز الغيبة في بعض الحالات، وهو هنا في الشكوى لدفع الظلم وصد التعدي، وفي استشارة الإمام والعالم في الأمور الاجتماعية، ‘কতিপয় ক্ষেত্রে গীবত করা যে বৈধ, এই হাদীছটি তার অন্যতম দলীল। আর সেটা হ’ল যুলুম-নির্যাতন প্রতিহত করা ও সীমালংঘন বন্ধের জন্য অভিযোগ উত্থাপন করা। আর সামাজিক বিষয়ে আলেম ও নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য’।[12]
তবে যালেমের যুলুম প্রকাশ করতে গিয়ে যেন সীমালংঘন না হয়ে যায় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الْمُسْتَبَّانِ مَا قَالَا فَعَلَى الْبَادِئِ، مَا لَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُومُ، ‘গালিদাতাদের মধ্যে প্রথম গালিদাতার উপর যাবতীয় গালির পাপ বর্তাবে, যতক্ষণ না অত্যাচারিত ব্যক্তি সীমালংঘন করে’।[13] এই হাদীছের মাধ্যমে দু’টি বিষয় প্রমাণিত হয়- প্রথমত, মাযলূম যদি যুলুমের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে, তবে শুধু গালিদাতা বা অত্যাচারী ব্যক্তি একাই পাপী হবে না; বরং মাযলূম ব্যক্তিও পাপী হবে।[14] দ্বিতীয়ত, যতটুকু গালি দেওয়া হয়েছে, ততটুকুই প্রত্যুত্তর করা জায়েয। অর্থাৎ নির্যাতনের সমপরিমাণ প্রতিবাদ করা জায়েয, এর বেশী নয়।[15]
আওফ (রহঃ) বলেন, একবার আমি মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ)-এর কাছে গিয়ে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের ব্যাপারে অনেক সমালোচনামূলক কথা বললাম। তিনি বললেন, আল্লাহ ন্যায়বিচারকারী। তিনি হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ থেকে যেভাবে প্রতিশোধ নিবেন, ঠিক তেমনিভাবে তার গীবতকারী থেকেও প্রতিশোধ নিবেন। ক্বিয়ামতের দিন যখন তুমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, তখন তোমার এই ছোট্ট গুনাহটি হাজ্জাজের বড় গুনাহের মোকাবিলায় কঠিন শাস্তির কারণ হবে।[16]
২. মুসলিম সমাজকে সতর্ক ও নছীহত করার ক্ষেত্রে :
মুসলিম ব্যক্তিকে অনিষ্টকারিতা থেকে সতর্ক ও সাবধান করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দোষ বর্ণনা করা বৈধ। ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গনীমতের মাল বণ্টন করলেন। তখন আনছারদের মধ্যকার এক মুনাফিক লোক বলল, وَاللهِ مَا أَرَادَ مُحَمَّدٌ بِهَذَا وَجْهَ اللهِ، ‘আল্লাহর কসম! এ কাজে মুহাম্মাদ আল্লাহর সন্তুষ্টি চাননি। তখন আমি এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এ কথা জানালাম। এতে তাঁর চেহারার রং পাল্টে গেল। তিনি বললেন, رَحِمَ اللهُ مُوسَى، لَقَدْ أُوذِيَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ ‘আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর উপর দয়া করুন। তাঁকে এর থেকেও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে, তবুও তিনি ধৈর্য অবলম্বন করেছেন’।[17] এই ঘটনার পর থেকে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সেই আনছারী থেকে কোন হাদীছ বর্ণনা করেননি।[18] ইমাম বুখারী (রহঃ) এই হাদীছের আলোকে বলেন, বন্ধু-বান্ধব ও ভাই-বোনদের সম্পর্কে কেউ যদি কোন অন্যায় সমালোচনা করে তবে সেটা তাদের জানিয়ে দেওয়া কর্তব্য।[19] অনুরূপভাবে যায়েদ ইবনে আরক্বাম (রাঃ) মুনাফেক্ব নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলে দিয়েছিলেন।[20]
মুসলমানকে সতর্ক ও নছীহত করার সাথে কয়েকটি বিষয় সংশ্লিষ্ট।[21] তন্মধ্যে কতিপয় দিক নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-
ক. জারাহ ওয়াত তা‘দীল :
হাদীছের ছহীহ-যঈফ, মুত্তাছিল-মুনক্বাতি‘, মারফূ‘-মাওকূফ, খবরে ওয়াহিদ, শায-গারীব প্রভৃতি সাব্যস্ত করার জন্য হাদীছ বর্ণনাকারীদের জীবনী ও দোষ-গুণ পর্যালোচনা করা হয়। আর রাবীদের জীবনী পর্যালোচনার শাস্ত্রকে উছূলে হাদীছের পরিভাষায় ‘জারাহ ওয়াত-তা‘দীল’ বলা হয়। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘হাদীছ বর্ণনাকারীর ব্যাপারে শরী‘আত সম্মত কোন অভিযোগ থাকলে তা সকলকে জানিয়ে দেওয়া শুধু জায়েযই নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমতে ওয়াজিব’।[22] অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে দোষ বর্ণনা না করলে ব্যক্তি পাপী হবেন। কারণ এর ফলে মুসলমানদের মাঝে যঈফ ও জাল হাদীছের সয়লাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন,
أَنَّ الإِسْنَادَ مِنَ الدِّينِ، وَأَنَّ الرِّوَايَةَ لَا تَكُونُ إِلَّا عَنِ الثِّقَاتِ. وَأَنَّ جَرْحَ الرُّوَاةِ بِمَا هُوَ فِيهِمْ جَائِزٌ، بَلْ وَاجِبٌ. وَأَنَّهُ لَيْسَ مِنَ الْغِيبَةِ الْمُحَرَّمَةِ، بَلْ مِنَ الذَّبِّ عَنِ الشَّرِيعَةِ الْمُكَرَّمَةِ.كما قال مُحَمَّد بْن سِيرِينَ؛ قَالَ: إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِينٌ. فَانْظُرُوا عَمَّنْ تَأْخُذُونَ دِينَكُمْ، وقال عَبْدُ اللهِ بْنُ الْمُبَارَكِ: الْإِسْنَادُ مِنَ الدِّينِ، وَلَوْلَا الْإِسْنَادُ لَقَالَ مَنْ شَاءَ مَا شَاءَ.
‘নিশ্চয়ই সনদ (হাদীছের রাবীদের পরম্পরা) দ্বীনের অংশ বিশেষ। বিশ^স্ত বর্ণনাকারী ছাড়া কারো থেকে হাদীছ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর বর্ণনাকারীদের মাঝে বিদ্যমান দোষ-ত্রুটি সমালোচনা করা শুধু জায়েযই নয়; বরং ওয়াজিব। এটা হারাম গীবতের পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং এটা ইসলামী শরী‘আত পবিত্র ও স্বচ্ছ রাখার অন্যতম উপায়। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেন, ‘সনদ যাচাইয়ের জ্ঞান হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং তোমরা ভালোভাবে খেয়াল কর- কার কাছ থেকে তোমারা তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছ’। অনুরূপভাবে আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, ‘সনদ হচ্ছে দ্বীনের অংশ। যদি ইসনাদ না থাকত, তাহ’লে মানুষ যা ইচ্ছা তা-ই বলত’।[23] ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘গীবত করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। তবে বৃহত্তর কল্যাণের জন্য এই বিধানের ব্যতিক্রম হ’তে পারে। যেমন- হাদীছের শুদ্ধাশুদ্ধির জন্য রাবীদের সমালোচনা ও নছীহতের জন্য দোষ বর্ণনা করা বৈধ’।[24]
খ. বিবাহের ব্যাপারে পাত্র-পাত্রীর ত্রুটি প্রকাশ করা :
বিবাহের উদ্দেশ্যে কোন ছেলে বা মেয়ের সম্পর্কে কিছু জানতে চাওয়া হ’লে তাদের দোষ-গুণ খোলাখুলি বলে দেওয়া যরূরী। দুশ্চরিত্র ও বদগুণের অধিকারী পাত্র-পাত্রী থেকে সতর্ক করা কর্তব্য। অন্যথা পরবর্তীতে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হ’তে পারে। সেজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে কেউ এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে তিনি স্পষ্টভাবে পাত্র-পাত্রীর দোষ বলে দিতেন। যেমন ফাতেমা বিনতে ক্বায়েস (রাঃ) ও তার স্বামী আবূ আমর ইবনে হাফস (রাঃ)-এর মাঝে যখন তালাক হয়ে যায়, তখন তিনি ইদ্দত পালনের জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-এর ঘরে অবস্থান করেন। ইদ্দত পালন শেষে মু‘আবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান ও আবূ জাহাম তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। তখন ফাতেমা বিনতে ক্বায়েস (রাঃ) এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরামর্শ চাইলে তিনি বললেন,أَمَّا أَبُو الْجَهْمِ فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ عَنْ عَاتِقِهِ وَأَمَّا مُعَاوِيَةُ فَصُعْلُوكٌ لَا مَالَ لَهُ انْكِحِي أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ، ‘আবূ জাহাম এমন লোক যে তার কাঁধ থেকে লাঠি নামিয়ে রাখে না (অর্থাৎ স্ত্রীকে মারধর করে)। আর মু‘আবিয়া তো নিঃস্ব তার কোন সম্পদ নেই। তুমি বরং উসামা ইবনু যায়েদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও’। ফাতেমা (রাঃ) বলেন, প্রথম পর্যায়ে উসামাকে আমার পসন্দ হ’ল না। কিন্তু তিনি আমাকে পুনরায় উসামাকে বিয়ে করার পরামর্শ দিলেন। তখন আমি উসামার সঙ্গেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’লাম। বিয়ের পর দেখলাম, আল্লাহ তার মাঝে আমার জন্য বিরাট কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। আর আমি তার স্ত্রী হওয়ার কারণে সবার কাছে ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হয়েছি’।[25]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, فِيهِ دَلِيلٌ عَلَى جَوَازِ ذِكْرِ الْإِنْسَانِ بِمَا فِيهِ عِنْدَ الْمُشَاوَرَةِ وَطَلَبِ النَّصِيحَةِ وَلَا يَكُونُ هَذَا مِنَ الْغِيبَةِ الْمُحَرَّمَةِ بَلْ مِنَ النَّصِيحَةِ الْوَاجِبَةِ، ‘পরামর্শ ও উপদেশ দেওয়ার সময় মানুষের মাঝে বিদ্যমান ত্রুটির বর্ণনা দেওয়া যে বৈধ, এই হাদীছে তার দলীল বিদ্যমান। এটা হারাম গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না; বরং এটা আবশ্যিক নছীহতের অন্তর্ভুক্ত’।[26]
গ. মন্দ ব্যক্তি থেকে সতর্ক করা :
মন্দ স্বভাবের ও অনিষ্টকারী থেকে মুসলিম ব্যক্তিকে সতর্ক করা ঈমানের দাবী। এক্ষেত্রে ঐ খারাপ লোকের দোষ-ত্রুটি বলে দেওয়া গীবতের মধ্যে শামিল হবে না। যেমন, একজন দ্বীনদার ব্যক্তিকে যদি দেখা যায়- তিনি পথভ্রষ্ট, ফাসেক ও গুনাহগারের বাড়িতে আসা-যাওয়া করছেন। আর এতে আশঙ্কা রয়েছে, তার মধ্যে গুনাহ ও বিদ‘আতের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। তবে সেই ব্যক্তিকে সতর্ক করার জন্য ঐ পাপী লোকের দোষ বর্ণনা করা কর্তব্য। যাতে তিনি সেই পাপী ব্যক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত না হন। অনুরূপভাবে কেউ যদি কোন দুষ্টমতি, চোর, ব্যভিচারী, মদ্যপ লোককে ভৃত্য রাখতে চায়, তবে মনিবকে সতর্ক করে সেই ভৃত্যের দোষ উল্লেখ করা বৈধ। তদ্রূপ কেউ যদি কোন অসৎ-খেয়ানতকারী লোকের সাথে ব্যবসা করতে চায় অথবা তার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে চায় অথবা তাকে কর্মী হিসাবে নিয়োগ দিতে চায়, সেই ব্যক্তি থেকে সতর্ক করার জন্য গীবত করা জায়েয।[27]
ঘ. দুষ্টমতি আলেম ও বিদ‘আতী থেকে সতর্ক করা :
বর্তমান সময়ে দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানুষ তিনটি বিষয়কে বেশী প্রাধান্য দেয়- (১) অনলাইন বা অফলাইনে আলেম ও আলোচকদের বক্তব্য শোনা, (২) দ্বীনী মজলিসগুলোতে অংশগ্রহণ করা এবং (৩) ইসলামী বইপত্র অধ্যয়ন করা। নিঃসন্দেহে এগুলো ইলম অর্জনের উপকারী মাধ্যম। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেসব আলেমের বক্তব্য শুনছে, যাদের মাহফিলে যোগদান করছে এবং যাদের লেখা বইপত্র পড়ছে, তারা যদি বিদ‘আতী ও পথভ্রষ্ট হয় এবং জনগণ তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ে, তবে জনগণকে সেই পথভ্রষ্ট-বিদ‘আতী আলেম থেকে সতর্ক-সাবধান করা দ্বীনদার আলেমদের ওপর ওয়াজিব। এক্ষেত্রে সেই বিদ‘আতী পথভ্রষ্ট আলেমের শারঈ ত্রুটি-বিচ্যুতি লোকসম্মুখে তুলে ধরা গীবতের মধ্যে শামিল হবে না। কারণ একজন মুসলিমের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হ’ল তার দ্বীন। কিন্তু তিনি যদি সেই দ্বীন ভুলভাবে শিখেন, তবে তার দুনিয়া-আখেরাত উভয়টাই বরবাদ হয়ে যাবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পথভ্রষ্ট আলেমকে উম্মতের জন্য হুমকি স্বরূপ মনে করতেন। তিনি বলেন, إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الأَئِمَّةَ الـمُضِلِّينَ، ‘আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদেরকেই ভয় করি’।[28] যিয়াদ ইবনু হুদায়র (রহঃ) বলেন, একদিন ওমর (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, هل تعرفُ ما يَهْدمُ الإسلامَ؟ ‘তুমি কি বলতে পারো, কোন্ জিনিস ইসলাম ধ্বংস করবে? আমি বললাম, আমি বলতে পারি না। তখন তিনি বললেন,يَهْدِمُهُ زَلَّةُ العالِمِ، وجدالُ الـمُنافقِ بالكتابِ، وحُكمُ الأئمَّةِ المضلِّينَ، ‘আলেমদের পদস্খলন, আল্লাহর কিতাব নিয়ে মুনাফিক্বদের তর্ক-বিতর্ক এবং পথভ্রষ্ট শাসকদের শাসনই ইসলামকে ধ্বংস করবে’।[29]
ছাহাবীদের যুগের দু’জন চিহ্নিত মুনাফিক্বের ব্যাপারে সতর্ক করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন,مَا أَظُنُّ فُلاَنًا وَفُلاَنًا يَعْرِفَانِ مِنْ دِينِنَا شَيْئًا، ‘আমার মনে হয় না অমুক ও অমুক ব্যক্তি আমাদের দ্বীন সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে’।[30]
হাসান বছরী (রহঃ) বলেন, বিদ‘আতী ব্যক্তির সমালোচনা করা হারাম গীবতের পর্যায়ভুক্ত নয়।[31] একবার আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,الرجل يصوم ويصلي ويعتكف أحب إليك أو يتكلم في أهل البدع؟ ‘যে ব্যক্তি ছিয়াম রাখে, ছালাত আদায় করে এবং ই‘তিকাফ করে, সেই লোক আপনার কাছে বেশী পসন্দনীয়, নাকি যে বিদ‘আতীদের সম্পর্কে কথা বলে, সেই লোক আপনার কাছে বেশী প্রিয়’? জবাবে তিনি বলেন, ‘সেই ব্যক্তি যখন ছালাত-ছিয়াম ও ই‘তিকাফে রত থাকে, তখন সেই আমলটা শুধু তার নিজের জন্যই সম্পাদিত হয়। কিন্তু যখন সে বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন সেখানে গোটা মুসলিম জাতির কল্যাণ নিহিত থাকে। আর এটাই অধিকতর উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ’।[32]
সালাফগণ বিদ‘আতী ও প্রবৃত্তিপরায়ণ আলেমদের থেকে জাতিকে সতর্ক করতেন। আবু কিলাবা (রহঃ) বলেন,لا تُجَالِسُوا أهل الأَهْوَاءِ وَلا تُجَادِلُوهُمْ فَإِنِّي لاَ آمَنُ أَنْ يَغْمِسُوكُمْ فِيْ ضَلالَتِهِمْ أَوْ يَلْبِسُوا عَلَيْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ، ‘তোমরা প্রবৃত্তির অনুসারীদের সঙ্গে উঠাবসা করো না এবং তাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ো না। কেননা আমার ভয় হয় যে, তারা তোমাদেরকে গোমরাহীর মধ্যে ডুবিয়ে দিতে পারে অথবা তোমাদের জানা-শোনা বিষয়ে তোমাদেরকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিতে পারে’।[33] ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) তার ছাত্রকে উপদেশ দিয়ে বলেন,صاحب البِدعة لا تأمَنه على دِينك، ولا تشاوِره في أمرك، ولا تجلِس إليه، ‘আমি তোমার দ্বীনের জন্য বিদ‘আতী ব্যক্তিকে নিরাপদ মনে করি না। আর তোমার কোন বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করবে না এবং তার কাছে বসবেও না’।[34]
তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, কোন ব্যক্তি, শাসক ও আলেমের সমালোচনা যেন অবশ্যই সংশোধনমূলক ও ইনছাফপূর্ণ হয়। অর্থাৎ তারা তাদের বক্তৃতা, লেখনি ও কর্মকান্ডে দ্বীনের ব্যাপারে যতটুকু ভুল করেছেন, কেবল ততটুকুর সমালোচনা করে সঠিক বিষয় পরিবেশন করা কর্তব্য। সেই সমালোচনা যেন কোনভাবেই হিংসামূলক এবং ব্যক্তিগত চরিত্রে আক্রমণমূলক না হয়ে যায়। এমন হ’লে আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী হবে।
৩. ফাসেক ব্যক্তির প্রকাশ্য পাপের বর্ণনা দিতে :
সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা প্রকাশ্যে পাপ কাজ করে এবং তারা সেই পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় না। আর মানুষও তাদের গুনাহ সম্পর্কে অবগত থাকে। এমন মন্দ লোকের দোষ বর্ণনা করা হারাম নয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে মানুষকে সতর্ক করার জন্য এদের দোষ-ত্রুটি বলে দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। একবার এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ائْذَنُوا لَهُ، فَبِئْسَ ابْنُ العَشِيرَةِ، ‘তাকে অনুমতি দাও। সে তার বংশের নিকৃষ্ট সন্তান’। কিন্তু যখন লোকটা ভিতরে প্রবেশ করে, তখন নবী করীম (ছাঃ) সেই লোকের সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বলেন। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি এই লোকের ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। এখন আপনি তার সাথে নম্রভাবে কথা বললেন! জবাবে তিনি বললেন, أَيْ عَائِشَةُ، إِنَّ شَرَّ النَّاسِ مَنْزِلَةً عِنْدَ اللهِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ فُحْشِهِ، ‘হে আয়েশা! আল্লাহর কাছে মর্যাদায় নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার অশালীন ব্যবহার থেকে বাঁচার জন্য মানুষ তার সংসর্গ পরিত্যাগ করে’।[35] এই হাদীছের মাধ্যমে ইমাম বুখারী ফাসাদ ও সংশয় সৃষ্টিকারীর গীবত জায়েয হওয়ার দলীল নিয়েছেন। তিনি এই হাদীছটি নিম্নের পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন,ما يجوز من اغتياب أهل الفساد والريب، ‘ফাসাদ ও সন্দেহ সৃষ্টিকারীদের গীবত করা জায়েয’।[36]
আব্দুল হক্ব দেহলভী (রহঃ) বলেন, فيه دليل على جواز الغيبة للفاسق المجاهر ليتقي الناس من شره، ‘এই হাদীছে দলীল রয়েছে যে, প্রকাশ্যে গুনাহকারী ব্যক্তির অনিষ্টকারিতা থেকে মানুষকে সর্তক করার জন্য গীবত জায়েয’।[37] ইমাম শাওক্বানী (রহঃ) বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে দোষ বর্ণনা করা তখনই জায়েয হবে, যখন এর দ্বারা মানুষকে সর্তক করার উদ্দেশ্য থাকবে’।[38]
হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ثَلَاثَةٌ لَا غِيبَةَ لَهُمُ: الْإِمَامُ الْخَائِنُ، وَصَاحِبُ الْهَوَى الَّذِي يَدْعُو إِلَى هَوَاهُ، وَالْفَاسِقُ الْمُعْلِنُ فِسْقَهُ، ‘তিন শ্রেণীর লোকের নিন্দা করা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়- (১) খেয়ানতকারী শাসক, (২) প্রবৃত্তির অনুসারী, যে তার স্বীয় প্রবৃত্তির দিকে অপরকে আহবান জানায়, (৩) পাপিষ্ট ব্যক্তি, যে তার পাপাচার প্রকাশ করে বেড়ায়’।[39]
৪. ফৎওয়া চাওয়া বা প্রদান করার ক্ষেত্রে :
ফৎওয়া গ্রহণের উদ্দেশ্যে গীবত করা বৈধ। যেমন আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা বিনতে উতবা একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيحٌ، لَا يُعْطِينِي مِنَ النَّفَقَةِ مَا يَكْفِينِي وَيَكْفِي بَنِيَّ إِلَّا مَا أَخَذْتُ مِنْ مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمِهِ، فَهَلْ عَلَيَّ فِي ذَلِكَ مِنْ جُنَاحٍ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আবূ সুফিয়ান কৃপণ মানুষ। সে আমার ও আমার সন্তানাদির প্রয়োজনীয় ভরণপোষণ দেয় না। ফলে আমি তার অজান্তে তার সম্পদ থেকে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকি। এতে কি আমার কোন পাপ হবে?’ জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,خُذِي مِنْ مَالِهِ بِالْمَعْرُوفِ مَا يَكْفِيكِ وَيَكْفِي بَنِيكِ، ‘তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ন্যায়সঙ্গতভাবে ততটুকু গ্রহণ কর’।[40] এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে হিন্দা তার স্বামীর দোষ বললেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটাকে গীবত মনে করেননি এবং তাকে বাধাও দেননি। কারণ এখানে হিন্দা তার স্বামীর ত্রুটি প্রকাশ করেছেন ফৎওয়া জানার জন্য।[41] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, ফৎওয়া জানার জন্য গীবত করা বৈধ।
৫. মন্দ প্রতিহত করা ও পাপীকে সৎপথে ফিরিয়ে আনা :
কারো মধ্যে যদি শরী‘আত বহির্ভূত কোন মন্দ কাজ বা স্বভাব পরিলক্ষিত হয়, তবে সেই মন্দ বিষয়টি দূর করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তির দোষের কথা উল্লেখ করা জায়েয। তবে শর্ত হ’ল- এমন ব্যক্তির কাছে সেই দোষ-ত্রুটি বলে দেওয়া জায়েয, যিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সংশোধন করতে পারবেন। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, কাউকে তার বদ অভ্যাস বা দূষণীয় বিষয় থেকে রক্ষা করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে অন্য কারো সাহায্য নেওয়ার উদ্দেশ্যে গীবত করা জায়েয। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অভিযুক্তকে মন্দাচার ও পাপ থেকে ফিরিয়ে রাখতে সক্ষম, তার কাছে এ কথা বলা যাবে যে, ‘অমুকের কার্যকলাপ এরকম, তাকে একটু সতর্ক করে দিন’। তবে এসব শুধু তাকে তার নিষিদ্ধ ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃত্ত করার উদ্দেশ্যেই হ’তে হবে। অন্যথা সেটা হারাম গীবত হবে।[42]
অনুরূপভাবে সংশোধনের মানসিকতা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অধঃস্তন কোন লোকের গর্হিত কাজের বর্ণনা দেওয়া জায়েয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এক সফরে ছিলেন। সাথে মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও ছিল। ইবনে উবাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের নিয়ে অনেক কটূ মন্তব্য করে। আর সেটা যায়েদ ইবনে আরক্বাম (রাঃ) শুনে ফেলেন এবং তৎক্ষণাৎ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অবগত করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যাপারটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইবনে উবাইকে ডাকেন। কিন্তু সে সরাসরি বিষয়টি অস্বীকার করে বসে। পরে আল্লাহ মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করে সূরা মুনাফিকূন নাযিল করেন।[43] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মন্দ প্রতিহত করার জন্য ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির কাছে কারো দোষ বর্ণনাতে কোন পাপ নেই।[44]
মন্দ প্রতিহত করার আরেকটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে ‘আমল বিল মা‘রূফ ও নাহি আনিল মুনকার’। আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে একবার ওমর (রাঃ) ওছমান (রাঃ)-কে সালাম দেন। কিন্তু ওছমান (রাঃ) অন্যমনস্ক থাকার কারণে তার সালামের জবাব দিতে পারেননি। অর্থাৎ তিনি খেয়ালই করেননি যে, কেউ তাকে সালাম দিয়েছে। এদিকে ওমর (রাঃ) সরাসরি আবুবকর (রাঃ)-এর কাছে এসে ওছমান (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এরপর আবুবকর (রাঃ) তাদের মাঝে ব্যাপরটি মীমাংসা করে দেন।[45] ইমাম শাওক্বানী বলেন, ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ এ দু’টি ভিত্তির উপরেই দ্বীন ইসলাম টিকে আছে। সমাজে যদি এই দু’টি বিষয় ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে, তবে সেখানে দুনিয়াবী কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি পরকালীন কল্যাণ সুনিশ্চিত হবে। কিন্তু সমাজের লোকদের মাঝে যদি আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের গুণ না থাকে, তবে সমাজ ভেঙ্গে পড়বে। সুতরাং বৃহত্তর কল্যাণের জন্য এই দু’টি ক্ষেত্রে গীবত করা জাযেয’।[46]
৬. কারো পরিচয় বর্ণনার ক্ষেত্রে :
সমাজে এমন অনেক লোক আছে, যারা মন্দ নামে বা উপাধিতে পরিচিত। আর সেই মন্দ নাম বা উপাধিটি এমন স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, সম্বোধিত ব্যক্তি এটাকে অপসন্দ করে না এবং এর দ্বারা সম্বোধন করলে সে মনও খারাপ করেন না। এমন পরিস্থিতিতে সেই সকল উপনামে সম্বোধন করা জায়েয। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, فإذا كان الإِنسان معروفاً بلقب: كالأعمش، والأعرج، والأصمّ، والأعمى، والأحول، والأفطس، وغيرهم، جاز تعريفه بذلك بنيّة التعريف، ويحرمُ إطلاقُه على جهة التنقص ولو أمكن التعريف بغيره كان أولى ‘মানুষ যদি কোন অপসন্দনীয় নামে পরিচিতি লাভ করে, তবে তার পরিচয় দানের জন্য এসব নামে ডাকা জায়েয। যেমন ল্যাংড়া, বধির, অন্ধ ইত্যাদি। তবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এসব নামে ডাকা অকাট্যভাবে হারাম। যদি এ সকল বিশেষণ ব্যতীত তাদের চেনার অন্য কোন উপায় থাকে, তবে তা অবলম্বন করা শ্রেয়’।[47] মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে একজন অন্ধ ছাহাবীর কথা বলেছেন, عَبَسَ وَتَوَلَّى، أَنْ جَاءَهُ الْأَعْمَى ‘ভ্রূকুঞ্চিত করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল। এজন্য যে, তার নিকটে একজন অন্ধ লোক এসেছে’ (আবাসা ৮০/১-২)। অত্র আয়াতে ‘অন্ধ লোক’ বলতে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।[48] ছাহাবীদের মাঝে লম্বা হাত বিশিষ্ট একজন ছাহাবী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ‘যুল ইয়াদাইন (ذُو الْيَدَيْنِ)’ বা ‘লম্বা হাতওয়ালা’ বলে ডাকতেন।[49] এর মাধ্যমে বোঝা যায়, প্রসিদ্ধ লক্বব বা উপনামে ডাকা দোষের নয়।
ইমাম বুখারী ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দিয়েছেন,قول الرجل فلان جعد أسود أو طويل قصير يريد الصفة ولا يريد الغيبة ‘গীবতের উদ্দেশ্যে নয়; বরং পরিচয় দানের জন্য কোন ব্যক্তির এরূপ বলা- অমুক কৃষ্ণকায়, খর্বাকৃতির বা দীর্ঘদেহী’।[50] ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,أَنَّ اللَّقَبَ إِنْ كَانَ مِمَّا يُعْجِبُ الْمُلَقَّبَ وَلَا إِطْرَاءَ فِيهِ مِمَّا يَدْخُلُ فِي نَهْيِ الشَّرْعِ فَهُوَ جَائِزٌ أَوْ مُسْتَحَبٌّ وَإِنْ كَانَ مِمَّا لَا يُعْجِبُهُ فَهُوَ حَرَامٌ أَوْ مَكْرُوهٌ إِلَّا إِنْ تَعَيَّنَ طَرِيقًا إِلَى التَّعْرِيفِ بِهِ حَيْثُ يَشْتَهِرُ بِهِ وَلَا يَتَمَيَّزُ عَنْ غَيْرِهِ إِلَّا بِذِكْرِهِ وَمِنْ ثَمَّ أَكْثَرَ الرُّوَاةُ مِنْ ذِكْرِ الْأَعْمَشِ وَالْأَعْرَجِ وَنَحْوِهِمَا وَعَارِمٍ وَغُنْدَرٍ وَغَيْرِهِمْ، ‘উপনাম যদি এমন হয় যে, সম্বোধিত ব্যক্তি সেই ডাকে খুশি হন এবং সেটা যদি শারঈ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে না পড়ে, তবে সেই উপনামে ডাকা জায়েয। আর সেই উপনাম যদি তিনি অপসন্দ করেন, তাহ’লে সেই নামে ডাকা হারাম হবে। কিন্তু ঐ ব্যক্তি যদি তার পরিচিতির জন্য অন্য কোন নাম নির্দিষ্ট করেন, যে নামে তিনি বিখ্যাত হয়ে গেছেন এবং যে নাম উল্লেখ করলে অন্যদের থেকে তাকে আলাদাভাবে চেনা যায়, তাহ’লে এমন নামে সম্বোধন করাও জায়েয। এই মূলনীতির ভিত্তিতে অনেক রাবীর নাম এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আ‘মাশ (কানা, ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন), আ‘রাজ (ল্যাংড়া), ‘আরিম (কঠোর), গুনদার (মোটাসোটা) প্রভৃতি’।[51]
উক্ত লক্ববগুলোর মাধ্যমে যথাক্রমে সুলাইমান ইবনে মেহরান আল-আ‘মাশ (৬১-১৪৮হি.), হুমাইদ ইবনে ক্বায়েস আল-আ‘রাজ (মৃ. ১৫০হি.), মুহাম্মাদ ইবনে ফযল আরিম (মৃ. ২২৩হি.), মুহাম্মাদ ইবনে জা‘ফর গুনদার (মৃ. ১৯৩) প্রমুখ রাবীদের বুঝানো হয়েছে। ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, নিন্দার উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে পরিচয় দেওয়ার জন্য এসব নাম ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।[52]
বৈধ গীবতের ক্ষেত্রে সতর্কতা :
বৈধ গীবতের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা যরূরী। নতুবা হারাম গীবতের মধ্যে ঢুকে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। বৈধ গীবতের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তা হ’ল।-
মহান আল্লাহ আমাদেরকে হারাম গীবত থেকে দূরে রাখুন। বৈধ গীবতের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের তাওফীক্ব দান করুন। অপরের দোষ-ত্রুটি দেখে নিজেকে সংশোধন করার তাওফীক দান করুন- আমীন!
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. ইবনু হাজার হায়তামী, আয-যাওয়াজির ‘আন ইক্বতিরাফিল কাবায়ির ২/১১।
[2]. বুখারী হা/২৩০৬; মুসলিম হা/১৬০১; মিশকাত হা/২৯০৬।
[3]. তাফসীর কুরতুবী ১/৬।
[4]. তাফসীরে তাবারী ৯/৩৪৩।
[5]. শানক্বীতী, আয্ওয়াউল বায়ান ৬/৩৫৭।
[6]. মুহাম্মাদ শাওক্বানী রাফ‘উর রীবাহ আম্মা ইয়াজূযু ওয়া মা-লা ইয়াজূযু মিনাল গীবাহ, তাহক্বীক্ব ও তাখরীজ: মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আশ-শায়বানী (কুয়েত: মারকাযুল মাখতূত্বাত, ৪র্থ সংস্করণ, ১৪১৪হিঃ/ ১৯৯৩খ্রিঃ) পৃঃ ২৩-২৪।
[7]. তাফসীরুল ওছায়মীন (হুজুরাত-হাদীদ), পৃঃ ৫৫।
[8]. নববী, আল-আযকার, পৃঃ ৩৪০; রিয়াযুছ ছালিহীন, পৃঃ ৪২৫।
[9]. সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফিলীন, পৃঃ ১৬৭।
[10]. আবূদাঊদ হা/২৮৯১; তিরমিযী হা/২০৯২, সনদ হাসান।
[11]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৫, সনদ হাসান ছহীহ।
[12]. হুসাইন আওদা আল-আওয়াইশাহ, শারহু ছহীহিল আদাবিল মুফরাদ, ১/১৫২।
[13]. মুসলিম হা/২৫৮৭; মিশকাত হা/৪৮১৮।
[14]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৭/৩০২৮।
[15]. ওছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালিহীন ৬/২২২।
[16]. গাযালী, ইইয়াউল উলূমিদ্দীন ৩/১৫৩।
[17]. বুখারী হা/৬০৫৯।
[18]. কুররাতু আইনিল মুহতাজ ২/৩১৪।
[19]. নববী, আল-আযকার, পৃঃ ৩৪২।
[20]. বুখারী হা/৪৯০৩; মুসলিম হা/২৭৭২।
[21]. ড. সাঈদ ইবনে আলী আল-কাহতানী, আ-ফাতুল লিসান ফী যূইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, পৃঃ ২৮।
[22]. আল-আযকার, পৃঃ ৩৪১।
[23]. মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ, ১/১২, ১৪।
[24]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ৭/৩৮০।
[25]. মুসলিম হা/১৪৮০; আবূদাঊদ হা/২২৮৪; মিশকাত হা/৩৩২৪।
[26]. শারহুন নববী আলা মুসলিম ১০/৯৭।
[27]. গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, ৩/১৫২; আল-আযকার পৃঃ ৩৪১।
[28]. তিরমিযী হা/২২২৯; আবূদাঊদ হা/৪২৫২, সনদ ছহীহ।
[29]. দারেমী হা/২১৪; মিশকাত হা/২৬৯, সনদ ছহীহ।
[30]. বুখারী হা/৬০৬৮।
[31]. হেবাতুল্লাহ লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ১/১৫৮।
[32]. ইবনে তাইমিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ২৮/২৩১।
[33]. ইবনু সা‘দ, আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৭/১৩৭।
[34]. লালকাঈ, শারহু উছূলিল ই‘তিক্বাদ, ১/১৩৬।
[35]. বুখারী হা/৬০৫৪,৬১৩১; মুসলিম হা/২৫৯১।
[36]. আব্দুল্লাহ বিন ছালেহ আল-ফাওযান, মিনহাতুল আল্লাম ফী শারহি বুলূগিল মারাম, ১০/২৪১।
[37]. লুম‘আতুত তানক্বী‘ ৮/১৫০।
[38]. শাওক্বানী, রাফউর রীবাহ, পৃঃ ৩৯।
[39]. আহমাদ ইবনে হাম্বল, আয-যুহদ, পৃঃ ২৩৪ ।
[40]. বুখারী হা/৫৩৬৪; মুসলিম হা/১৭১৪।
[41]. তাফসীরে কুরতুবী ১৬/৩৩৯; ইহয়াউ ‘উলূমিদ্দীন, ৩/১৫২।
[42]. আল-আযকার, পৃঃ ৩৪০।
[43]. বুখারী হা/ ৪৯০৩; মুসলিম হা/২৭৭২।
[44]. শাহুন নববী, ২৭৭২ নং হাদীছের আলোচনা দ্রষ্টব্য। ওছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালিহীন, ২/১৪১।
[45]. আহমাদ ১/২০১; হা/২০। শু‘আইব আরনাউত্ব, সনদ ছহীহ।
[46]. রাফউর রীবাহ, পৃঃ ২৫-২৬।
[47]. নববী, আল-আযকার, পৃঃ ৩৪২।
[48]. তাফসীরে কুরতুবী ১৯/২১১; তাফসীরে ইবনে কাছীর ৮/৩২০; ফাৎহুল কাদীর ৫/৪৬২ এবং অন্যান্য তাফসীর।
[49]. বুখারী হা/৪৮২; মুসলিম হা/৫৭৩; মিশকাতা হ/১০১৭।
[50]. আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ২৬৪।
[51]. আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ১০/৪৬৮।
[52]. তাফসীরে কুরতুবী ১৬/৩৩০; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২১/২৭২।
[53]. হুসাইন আল-আওয়াইশাহ, হাছাইদুল আলসুন, পৃঃ ৮৯-৯০।