আল্লাহর অশেষ রহমতে দেশবাসী রক্ষা পেল ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ও ‘জামালা’র মহাবিপদ থেকে
দেশবাসীর প্রবল উদ্বেগ-উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে দুর্বলভাবে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’। ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরীয় পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় উৎপত্তি হওয়া ‘জামালা’ ও ‘মহাসেন’ একসাথে শক্তি সঞ্চয়ের পর ‘জামালা’ স্বীয় স্থানেই অবস্থান করতে থাকে। কিন্তু ‘মহাসেন’ ২০০ কি.মি. ব্যাপ্তি নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা পেয়ে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। উপকূলবর্তী যেলাগুলিতে ৫ থেকে ৮ নম্বর পর্যন্ত বিপদ সংকেত দেখানো হয়। মসজিদে মসজিদে দো‘আ এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে দেশবাসী এ মহাবিপদ থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা জানাতে থাকে। অবশেষে আঘাত হানার পূর্বমুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে ১৬ মে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপকূলবর্তী যেলাগুলিতে হালকাভাবে আঘাত হেনে চলে যায়। আবহাওয়াবিদগণের মতে, একই সাথে যুগল ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি এশীয় অঞ্চলে নযীরবিহীন এবং বিশ্বেও বিরল ঘটনা। ঘূর্ণিঝড় দু’টির গতিমুখ ছিল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ও মায়ানমারের দিকে। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলে সংঘটিত এযাবৎকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশ উপকূলে তিন লাখের বেশী মানুষ নিহত হয়েছিল। বর্তমান ঘূর্ণিঝড় দু’টি ছিল তার চেয়ে বহুগুণ বেশী শক্তিশালী। আল্লাহর অশেষ রহমতে মূল আঘাত হানার আগেভাগেই ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বা গতিবেগ কমে যায়। ফলে জানমালের বড় রকমের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রেহাই পায় উপকূলবাসী। তবে এই সামান্য আঘাতেই বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০ জন নিহত, ১৫ সহস্রাধিক আহত এবং ৩০ সহস্রাধিক কাঁচা-পাকা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতিসহ লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দী রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ১২ তারিখের পত্রিকায় ঘূর্ণিঝড়ের খবর পাওয়ার দিন থেকে নওদাপাড়াস্থ মারকাযী জামে মসজিদে প্রতিদিন কুনূতে নাযেলা পাঠ করা হয় এবং আমীরে জামা‘আত আসন্ন মহা দুর্যোগ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচীতে পুলিশের নযীরবিহীন তান্ডব : স্তম্ভিত দেশবাসী
হাটহাজারী মাদরাসাকেন্দ্রিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা ইসলামী দাবী আদায়ের লক্ষ্যে লংমার্চ শেষে গত ৬ই এপ্রিল মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে বিশাল সম্মেলন করে। অতঃপর সেখানে ঘোষিত ১ মাসের কর্মসূচি পালনের পর গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি প্রদান করে। কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কওমী মাদরাসার ছাত্রসহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকায় এসে জমায়েত হন। ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে ছয়টি পয়েন্টে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ শুরু হয়ে সেদিন সকাল থেকেই। সড়কপথে রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় সরকারের উদ্যোগে। দুপুরের দিকে সরকার হেফাজতকে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দিলে হেফাজত কর্মীরা অবরোধ ছেড়ে দিয়ে দলে দলে মতিঝিল শাপলা চত্বর অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় সরকারী দলের ক্যাডাররা মতিঝিলমুখী মিছিলসমূহকে বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সংঘর্ষ নিয়স্ত্রণ করতে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ৪/৫ জন হেফাজত কর্মী। আহত হয় আরো বহু সংখ্যক। বিকালের দিকে হঠাৎ করেই একদল ছদ্মবেশী পাঞ্জাবী-টুপি পরিহিত ব্যক্তি এসে পল্টন মোড় ও আশপাশের বিভিন্ন দোকান ও অফিসে আগুন লাগিয়ে দিতে থাকে। বিজয়নগর সড়কে আইল্যান্ডের গাছগুলো কেটে ফেলে। এই নারকীয় তান্ডব যে সম্পূর্ণ পূর্ব-পরিকল্পিত এবং হেফাজতের উপর দোষ চাপানোর হীন অপকৌশল ছিল, তা ভিডিও ফুটেজ দেখে সবাই নিশ্চিত হয়। যদিও বামপন্থী মিডিয়া সম্পূর্ণ মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। সারাদিন টান টান উত্তেজনায় অতিবাহিত হওয়ার পর সন্ধ্যার মধ্যে হেফাজতের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণার কথা থাকলেও পরবর্তীতে হেফাজতে ইসলাম দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেয়। রাত ৮টার দিকে হেফাজতের আমীর আল্লামা মুহাম্মাদ শফী সমাবেশ মঞ্চের দিকে অগ্রসর হওয়ার কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তাজনিত কারণে আবার লালবাগ মাদরাসাস্থ কার্যালয়ে ফিরে যান। এরপরই হেফাজত নেতারা সেখানে সকাল পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
হেফাজতের এই ঘোষণায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে সরকার। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী একদিন পূর্বে হেফাজতের কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে সমর্থন দিলে সরকার প্রমাদ গুণতে থাকে। ফলে রাত ১০টার দিকে হেফাজতকে শাপলা চত্বর ত্যাগের জন্য সরকার আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু হেফাজত নেতারা তাদের অবস্থান বিন্দুমাত্র নড়চড় হবে না মর্মে ঘোষণা দিলে সরকার পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সাড়ে সাত হাযার সদস্যকে মাঠে নামায় যুদ্ধংদেহী মূর্তিতে। অতঃপর রাত আড়াইটার দিকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে চালানো হয় সেই পৈশাচিক আক্রমণ ‘অপারেশন ফ্লাশআউট’। শাপলা চত্বরকে ৩ দিক থেকে ঘিরে এবং ১টি দিক খোলা রেখে সরকার ঘূমন্ত, ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত জনতার উপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। মুহুর্মুহু গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস সেল ও গরম পানির হামলার মুখে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে শাপলা চত্বর খালি হয়ে যায়। পড়ে থাকে যত্রতত্র শত শত আহত-নিহত মানুষের রক্তাক্ত দেহ, আর বিক্ষোভকারীদের ফেলে যাওয়া স্যান্ডেল আর ব্যাগপত্র। শাপলা চত্বর তখন স্রেফ যুদ্ধবিধ্বস্ত রণাঙ্গন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালো রাতের পরে সাধারণ জনগণের উপর কোন সরকারের এমন ভয়ংকর প্রাণঘাতি আক্রমণ নযীরবিহীন। পরবর্তীতে আত্মরক্ষার জন্য লুকিয়ে থাকা আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষকে যেভাবে হাত উঁচু করে কিংবা কান ধরে বের করে নিয়ে আসা হয়, তা এদেশের ইতিহাসে এক জঘন্য ঘটনার অবতারণা করে। আলেম-ওলামাদের বেইজ্জতি করার এমন দুঃসহ দৃশ্য এ দেশে আর কখনো দেখা যায়নি। নিহতের সংখ্যা নিয়ে শুরু হয় এক নাটক। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়, ঐ রাতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয় হাযার হাযার নিহত হয়েছে এবং সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাকে করে তুলে বহু লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এমন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে আল-জাযীরার অনুসন্ধানী রিপোর্টেও লাশ গুমের প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। স্বতন্ত্র সংস্থাসমূহের মতে এ ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে এবং অনেকের লাশ গুম করা হয়েছে।
পরদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে জনগণের সংঘর্ষ হয় এবং হতাহত হয় বহু মানুষ। ঐ দিন বিকালে আল্লামা শফীকে জোরপূর্বক ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো রাত হিসাবে চিহ্নিত হল ৬ মে ২০১৩। দেশে দেশে মুসলিম নিধনের করুণ দৃশ্য দেখে এতদিন ব্যথিত হত এ দেশের মুসলমানরা। আজ নিজ দেশে সে দৃশ্য দেখে তারা স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। পুলিশী আতংকে দেশের মসজিদ-মাদরাসাসমূহ এখন নিরাপত্তাহীন। কওমী মাদরাসার কয়েক লক্ষ ছাত্র-শিক্ষক সহ সাধারণ দাঁড়ি-টুপিওয়ালারা মানুষ সদা সন্ত্রস্ত্র। কখন কাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় কিংবা রাস্তা-ঘাটে হেনস্থা করা হয় সেই ভীতিতে সবাই তটস্থ। সারা দেশে যত দ্রুততায় আন্দোলনটি সাড়া ফেলেছিল ততোধিক নিষ্ঠুরতা দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় একে থামিয়ে দেয়া হল। এর মাধ্যমেই হয়ত থমকে গেল বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে গড়ে উঠা এই ইতিহাস সৃষ্টিকারী গণআন্দোলনটি। যদিও হেফাজত নেতারা পুনরায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন।
সাভারে ভয়াবহ ভবন ধ্বস :
নিহতের সংখ্যা ১১২৭, আহত ২৫০০
গত ২৪শে এপ্রিল ঢাকার সাভারে ঘটে গেল ইতিহাসের ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনা। সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত ৯ তলা (৩৫ হাযার স্কয়ার ফিট) বিশিষ্ট রানা প্লাজা শতাধিক দোকান ও ৫টি গার্মেন্টসের সাড়ে তিন হাযার শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। ভবনধ্বসে এত করুণ ও হৃদয়বিদারক মানবিক বিপর্যয় দেশবাসী ইতিপূর্বে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। ঘটনার দু’দিন আগে উক্ত ভবনে ফাটল ধরায় সেদিন সকাল সাড়ে ৮-টা পর্যন্ত পোশাকশ্রমিকেরা আতঙ্কে ভবনে প্রবেশ করেননি। কিন্তু পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ ‘ভবনের কিছু হয়নি’, ‘কাজ না করলে চাকুরী থাকবে না’ ইত্যাদি হুমকি-ধমকি দিয়ে কাজে যোগ দিতে শ্রমিকদের বাধ্য করে। ইতিমধ্যে সকাল পৌনে ৯-টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যেক তলায় অবস্থিত জেনারেটরগুলো স্টার্ট নিলে পুরো বিল্ডিং কেঁপে ওঠে এবং মুহূর্তের মধ্যে এক একটি তলা ধ্বসে পড়তে থাকে। ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় রানা প্লাজা। ধূলোয় আচ্ছন্ন যায় আশপাশের এলাকা। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় জনগণ উদ্ধারকার্য শুরু করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্টের কর্মীরা উদ্ধার অভিযানে যোগদান করে। শুরু হয় জীবিত-মৃত উদ্ধারের শাসরুদ্ধকর অভিযান। ২০ দিনের (২৪ এপ্রিল হ’তে ১৩ মে) উদ্ধার অভিযানে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৪৩৮ জনকে এবং মৃত উদ্ধার করা হয়েছে ১১১৫ জনকে। হাসপাতালে মারা যাওয়া ১২ জন সহ মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১২৭। ভবনটির মালিক সোহেল রানা সহ ৫টি কারখানার সকল মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রানা প্লাজা ট্রাজেডি বিশ্বের সমস্ত মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। ২০০১ সালের ১১ই সেন্টারে (১/১১) নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র টুইন টাওয়ার ট্রাজেডীর পর ভবনধ্বসে নিহতের সংখ্যা সারাবিশ্বে এটাই সর্বোচ্চ। এছাড়া এই দুর্ঘটনা বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম শিল্পবিপর্যয় হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
কিছু অলৌকিক ঘটনা :
নিজ হাতে নিজের হাত-পা কাঁটা, পানির অভাবে নিজ দেহে ক্ষত সৃষ্টি করে রক্ত পান করা, দু’পা উরু পর্যন্ত কেটে বের করা সহ বহু হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম দিয়েছে সাভার ট্রাজেডী। এছাড়াও সেখানে কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন-
১. ঘটনার ১০০ ঘন্টা পর জীবিত বের করা হয় মাননিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপক সাদিককে। তিনি জানান, তার পাশে তিনটি পানির বোতল ছিল। অল্প অল্প করে সেই পানি পান করে সাদিক নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। সেই লোকগুলো বোতল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকটা উন্মাদের মতো আচরণ করছিল। আতঙ্ক, ক্ষুধা আর অক্সিজেনের অভাবে মানুষ কিভাবে তিলে তিলে মরে, তা তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন।
২. শাহীনার হৃদয়বিদারক মৃত্যু সাভার ট্রাজেডীতে দেশবাসীর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি ঘটনা। ৩ দিন পর খুঁজে পাওয়া শাহীনা তার দেড় বছরের একমাত্র সন্তানকে দেখার জন্য বার বার বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। উদ্ধারকারীরা দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে শেষ মুহুর্তে সামান্য ভুলের জন্য অকুস্থলে আগুন ধরে যায়। ফলে স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধারকর্মী ইঞ্জিনিয়ার এযায সহ কয়েকজন অগ্নিদগ্ধ হন। পরের দিন পুণরায় প্রচেষ্টা চালিয়ে শাহীনার মৃত লাশ উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত ইঞ্জিঃ এযাযুদ্দীনকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর পর তিনি সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
৩. বিস্ময়কন্যা রেশমা : ঘটনার ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপযেলার কাশিগাড়ি গ্রামের মৃত আনছার আলীর ১৯ বছরের মেয়ে রেশমা। কয়েক পিস বিস্কুট ও কয়েক বোতল পানি খেয়ে এ দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন তিনি আল্লাহর বিশেষ রহমতে। খোঁজ পাওয়ার পর পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় তাকে। এ সময় রানাপ্লাজার আশপাশে দেখা যায় অভুতপূর্ব দৃশ্য। হাযার হাযার মানুষ আল্লাহর কাছে দো‘আ করছেন। কেউবা আনন্দে কাঁদছেন। তারপর যখন উদ্ধারকর্মীরা তাকে বাইরে বের করে আনলেন, আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠল। মানুষ যেন আল্লাহর অসীম কুদরত স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করল।
নতুন প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হ’লেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক স্পীকার আব্দুল হামিদ। প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান গত ২০ মার্চ ইন্তেকাল করার এক সপ্তাহ আগে থেকেই স্পীকার পদে অধিষ্ঠিত থাকার সুবাদে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। অবশেষে দীর্ঘ ৪২ বছর যাবৎ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী মো. আবদুল হামিদই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট পদ অলংকৃত করলেন। সংবিধান অনুযায়ী শপথ গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগ করে আসা এই নেতার অবস্থান দলের মধ্যে যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তা বুঝা যায়। তিনি সহজ-সরল, সদালাপী, কৌতুকপ্রিয়, সজ্জন ও বন্ধুবৎসল হিসাবে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেন, এমন এক সময়ে আমি দায়িত্ব পাচ্ছি, যখন রাষ্ট্রের জন্য ক্রান্তিকাল চলছে। আল্লাহ জানেন কী করে ইয্যতের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব’।
বিদেশ
গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দীপিছু দৈনিক ব্যয় ২ লাখ টাকা
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কারাগার বলা হচ্ছে গুয়ানতানামো বে কারাগারকে। কিউবায় অবস্থিত মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন এই কারাগারে বর্তমানে প্রত্যেক বন্দীর পিছনে বার্ষিক ব্যয় হচ্ছে ৯ লাখ ৩ হাযার ৬১৪ মার্কিন ডলার। এই হিসাবে বন্দীদের মাথাপিছু দৈনিক ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাযার ডলারে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ টাকা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থার কারাগারগুলোতে বার্ষিক ব্যয় হয় ৬০ থেকে ৭০ হাযার মার্কিন ডলার। আর সব ধরনের কারাগার মিলে গড়ে বার্ষিক ব্যয়ের পরিমাণ ৩০ হাযার ডলার। অন্যদিকে গুয়ানতানামো বে কারাগারের বার্ষিক ব্যয় ৯ লাখ ৩ হাযার ৬১৪ ডলার।
এক হিসাবে দেখা যায়, গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দীদের জন্য বছরে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, সেই অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্যের বয়স্কদের খাবার সরবরাহ করা যায়। উল্লেখ্য, প্রায় ১১ বছর আগে জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে কিউবায় স্থাপন করা হয় এই কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার।
সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষে ২ লাখ ৬০ হাযার মানুষের প্রাণহানি
২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সোমালিয়ায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে শিশু ও নারীসহ প্রায় ২ লাখ ৬০ হাযার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। জাতিসংঘের নতুন এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির মূল কারণ হিসাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছে সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত কোন পদক্ষেপ নিলে এ ধরনের মহাবিপর্যয় ঘটতো না বলে মনে করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, সোমালিয়ার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছে দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪.৬% মানুষ। এর মধ্যে ৫ বছরের নিচে ১০% শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে দেশটি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নড়েচড়ে বসলেও তার আগে তারা ছিল অনেকটাই নির্বিকার। ২০১০ সালে দেশটিতে প্রচন্ড খরা দেখা দেয়ার পর বহু মানুষ অভুক্ত ছিল। তখন যথাযথ পদক্ষেপ নিলে দেশটিতে এ দুর্যোগ নেমে আসতো না। গত ২৫ বছরের ইতিহাসে দেশটিতে এটি অন্যতম ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঘটনা বলে দাবী করেছেন গবেষকরা।
মালয়েশিয়ায় নির্বাচন : নাজীব রাযাক পুনরায় নির্বাচিত
গত ৫ মে অনুষ্ঠিত মালয়েশিয়ার ১৩তম জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে আবারও ক্ষমতাসীন হ’লেন ৫৬ বছর যাবৎ ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল ফ্রন্ট-এর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ড. নাযীব রাযাক। মোট ২২২টি আসনের মধ্যে ১৩৩টিতে জয়লাভ করেছে তাঁর দল। আশা করা হয়েছিল যে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহীমের পাকতান রাকাইয়াত দল প্রথমবারের মত ক্ষমতায় আসবে এবং বদলে দিবে মালয়েশিয়ার ইতিহাস। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল সকল জল্পনা-কল্পনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করল। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর শুরু হয় বারিসান ফ্রণ্টের অগ্রযাত্রা। বলা যায়, বারিসান বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক জোট। মালয়েশিয়ার মতো একটি জটিল সমাজব্যবস্থায় এ ধরনের জোটের শাসন খুবই বিরল ঘটনা। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৭ সালের ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর কিং আবদুর রহমান এবং ১৯৮১ সাল থেকে আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ড. মাহাথির মুহাম্মদের নেতৃত্বে বহু ধর্ম-বর্ণের মধ্যে যে সম্প্রীতি গড়ে উঠেছে তা এই নির্বাচনের পর কতটুকু অটুট থাকবে, তা নিয়েও দেশের অভিজ্ঞ মহল শঙ্কিত ছিলেন। অনেকে মনে করেছিলেন, বিরোধী জোট যদি নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহ’লে দেশ বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়ে যাবে। কারণ উভয় দলের নির্বাচনী প্রচারণা ছিল মারমুখো ও বিদ্বেষপূর্ণ। তবে নির্বাচনের ফলাফল সকলের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।
এক দেহে দুই প্রাণ: বিচিত্র জীবনের রূপকথার বাস্তবতা
একই দেহে দু’টি প্রাণ। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা অ্যাবি ও ব্রিটানি হেনসেল। যমজ এ দুই বোনের বয়স ২৩ বছর। তবে অন্য যমজদের মতো তারা ভিন্ন শরীরের অধিকারী নয়। একই শরীর, কিন্তু মাথা দু’টি। শরীরের অভ্যন্তরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও জোড়ায় জোড়ায়। তাদের শরীরে রয়েছে দু’টি ফুসফুস, দু’টি হৃদযন্ত্র বা হার্ট, দু’টি পাকস্থলী, একটি লিভার ও একটি জননেন্দ্রিয়। ছোটবেলা থেকেই নিজেদের শরীরকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা শিখেছে অ্যাবি ও ব্রিটানি। অ্যাবি শরীরের ডান অংশ ও ব্রিটানি বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের দু’জনের শরীরের তাপমাত্রাও ভিন্ন। মজার ব্যাপার হ’ল, তাদের উচ্চতায়ও রয়েছে ভিন্নতা। অ্যাবির উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি ও ব্রিটানির উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। ভারসাম্য রক্ষায় ব্রিটানিকে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে হয়। দিব্যি ভালভাবে বেঁচে রয়েছে তারা। অন্য আর ১০ জনের মতো তারাও উচ্ছ্বল ও তারুণ্যে ভরপুর। যমজ এ দুই বোন বেথেল ইউনিভার্সিটি থেকে দু’টি ভিন্ন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি পর্যন্ত নিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসাবে দু’বোনই এর মধ্যে তাদের নতুন ক্যারিয়ারের পথে হাঁটছে। তবে বেতনের ক্ষেত্রে খুব একটা পার্থক্য বোধ হয় থাকছে না। অ্যাবি বলেছিল, আমরা একজনের বেতন পাব। কারণ আমরা একজনের কাজ করতে পারি। তবে দু’জনের ভিন্ন ডিগ্রি থাকায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে দু’জনের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিই যে কাজে আসবে, তাতে তাদের কোন সন্দেহ নেই। ব্রিটানি বলেছিল, একজন পড়াবে ও আরেকজন ক্লাস মনিটরিং করবে ও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেবে। সে অর্থে আমরা একজনের চেয়ে বেশি কাজ করতে পারি। তাদের পসন্দ ও স্টাইলেও রয়েছে ভিন্নতা। ব্রিটানি উঁচু স্থানে উঠতে ভয় পায়। কিন্তু অ্যাবি নয়। অ্যাবির পসন্দের বিষয় গণিত ও বিজ্ঞান। ব্রিটানির পসন্দ শিল্পকর্ম। এভাবেই নানা বৈচিত্র্যে কাটে এ দুই যমজ বোনের প্রতিটি দিন। জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অ্যাবি ও ব্রিটানিকে বহুদূর নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা আপনজনদের।