৩০ এপ্রি্ল সকাল ১০টা। ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর কার্যালয় বংশাল থেকে আমরা রওনা হ’লাম সাভারের উদ্দেশ্যে। গন্তব্য বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ ভবনধসের ঘটনায় ধংসস্তূপে পরিণত হওয়া রানা প্লাজা। দুর্ঘটনার ২দিন পর ২৬ এপ্রিল শুক্রবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুম‘আর খুৎবায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব মুছল্লীদেরকে সাভার ট্রাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহবান জানান। অতঃপর আলহামদুলিল্লাহ দু’দিনের নোটিশে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের তাৎক্ষণিক সহযোগিতায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সংগৃহীত হয়। সেই অর্থ সাভারের দুর্গত মানুষদের হাতে সরাসরি পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা ঢাকায় উপস্থিত হয়েছি। সফরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। সঙ্গে আছেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবং আত-তাহরীক সম্পাদক ড. সাখাওয়াত হোসাইন, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীনসহ ঢাকা ও নরসিংদী যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল।

ঢাকা শহরের দীর্ঘ যানজট কাটিয়ে যখন সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটে পৌঁছলাম তখন প্রায় দুপুর ১২-টা। ৮ তলা বিশিষ্ট এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের নিঃস্বার্থ সেবা দিয়ে হাসপাতালটি ইতিমধ্যেই দেশবাসীর নযর কেড়েছে। প্রবেশমুখে গাড়ি দাঁড়াতেই বেশ কিছু কৌতুহলী দৃষ্টি গাড়ির সামনের ব্যানারে পড়ল। কালো ব্যানারটিতে লেখা ‘সাভার দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের সাহায্যার্থে নিয়োজিত ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’। ‘আহলেহাদীছ’ শব্দটি দেখে ইডেন ও বদরুন্নেছা কলেজসহ বেশ কয়েকটি সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যাপিকা ও অধ্যাক্ষা জনৈকা ভদ্রমহিলা সামনে এগিয়ে এলেন এবং আবেগবশত বলে ফেললেন, ‘আমি তো আহলেহাদীছের একজন ফাইটার, আপনারা এসেছেন খুব ভাল লাগছে’। ইতিমধ্যে সেখানে ডা. আব্দুল জববার ভাই সহ সাভার উপযেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর কর্মী ভাইয়েরা উপস্থিত হয়েছেন। তাদেরকে নিয়ে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম হাসপাতালের পরিচালক জনাব ডা. এনামুর রহমানের চেম্বারে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর সাজেশন মোতাবেক দুর্গতদের জন্য করণীয় নির্ধারণ করব। কিন্তু তিনি উপস্থিত না থাকায় সেখান থেকে বের হয়ে রওনা হ’লাম ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত শত বছরের প্রাচীন অধরচন্দ্র মডেল হাইস্কুল মাঠের উদ্দেশ্যে।

৭ একর আয়তন বিশিষ্ট অধরচন্দ্র স্কুলের বিশাল মাঠটি যেন শরণার্থী শিবির। তার দক্ষিণে আমগাছের নিচে অবস্থিত অস্থায়ী তথ্যকেন্দ্রটি ঘিরে রয়েছে কান্নাবিধুর শতসহস্র মুখ। এই পরিবেশে ঢুকতে স্বভাবতঃই মনটা বিষাদে ভরে উঠল। স্কুলের বারান্দায় রক্ষিত সদ্য উদ্ধার হওয়া দু’টি লাশকে ঘিরে একদল মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। বিশাল মাঠ জুড়ে নিখোঁজদের সন্ধানে আসা আত্মীয়-স্বজনদের ভিড়। তাদের হাতে নিখোঁজ আত্মীয়দের ছবি। বিদ্যালয়ের সদর ফটকের দেয়ালে এতটুকু স্থান ফাঁকা নেই। সর্বত্রই ‘সন্ধান চাই’ শিরোনামে নিখোঁজদের নাম-ঠিকানা ও ছবি সম্বলিত লিফলেট সাঁটানো। এরা হয়তো জানে যে, এই লিফলেট পড়ে দেখার সময় কারো নেই। কিন্তু তবুও প্রাণান্ত চেষ্টা, যদি কোনভাবে কেউ তাদের সন্ধান  এনে দিতে পারে। কোন টিভি সাংবাদিক এলেই তারা ছবি নিয়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ক্যামেরার সামনে। আমাদের সাতক্ষীরার একজন সন্ধানপ্রার্থীর দেখা পেলাম। কোন আর্থিক সাহায্য চান না তিনি, কেবল চান তার হারানো আত্মীয়টির জন্য একটুখানি দো‘আ। সাংবাদিকসহ সরকারী ও বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবকদের তাবু দেখলাম বেশ কয়েকটা। বিনামূল্যে খাবার ব্যবস্থা, ফ্রি মোবাইল কল করা, এমার্জেন্সি চিকিৎসার জন্যও বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব মানবিক তৎপরতা দেখে বেশ ভাল লাগল। মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিলের পশ্চাতে ‘মানুষ মানুষের জন্য’- আপ্তবাক্যটিই এখন অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে জীবন্ত বস্ত্ত। সাধারণ মানুষের এভাবে এগিয়ে আসার কারণে দুর্গতের সীমাহীন কষ্ট কিছুটা হ’লেও লাঘব হয়েছে।

কয়েকজনের সন্ধানপ্রার্থীর সাথে কথা হ’ল, কিছু আর্থিক সাহায্যও দেয়া হ’ল। একটি স্বেচ্ছাসেবী দলের সদস্য খুলনার তেরখাদার ভাই রাসেল চমৎকারভাবে তাদের কিছু উদ্যোগের কথা আমাদের শোনালেন। তার মতে, এখানে সাহায্য আসছে অনেক। কিন্তু সরকারীভাবে কোন সমন্বিত ব্যবস্থাপনা না থাকায় তা সঠিক জায়গায় পৌঁছতে পারছে না। এজন্য তারা মূলতঃ সমন্বয়ের কাজটিই করার চেষ্টা করছেন।

অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বেরিয়ে আমরা পার্শ্ববর্তী সাভার উপযেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ করলাম। কমপ্লেক্সের পরিচালক  ডা. মোশাররফ  হোসাইন  আমাদেরকে  খুব আন্তরিকভাবে ব্রিফিং করলেন এবং দুর্গতদের কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে পরামর্শ দিলেন। সেই সাথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের একটা বিস্তারিত তালিকাও আমাদেরকে দিলেন। সেই তালিকা মোতাবেক আমরা যে সব ওয়ার্ডে রোগীরা আছেন সেখানে গেলাম। একে একে তাদের খোঁজ-খবর নেয়া ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করা সম্পন্ন হ’ল। রানা প্লাজার এক হাযারেরও বেশী আদম সন্তান যে বিভীষিকাময় মৃত্যুর শিকার হয়েছে, তাদেরই একজন হ’তে পারত এদের কেউ। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু তাদের চোখে-মুখে এখনও আতংক ভর করে আছে। হয়তবা সেই ভয়াবহ মুহূর্তগুলো মনের গহীনে বার বার তাড়া করে ফিরছে। কিংবা মন পড়ে আছে সে সব সহকর্মীদের জন্য যাদের লাশ অদ্যাবধি ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনা। খেটে খাওয়া এই মানুষগুলোর চেহারায় তাই কোন দীপ্তি নেই। তবুও কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলাম বেঁচে যাওয়ার ইতিহাস। কেউ বলতে পারল, কেউ পারল না। কেবল অস্ফুটে দু’একটা কথা বলেই নিষ্পলক চেয়ে থাকল কিংবা ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। সেখানে আহতদের আর্থিক সহযোগিতা এবং সান্ত্বনা দিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম।

এনাম মেডিকেল থেকে পশ্চিমে প্রায় এক কিঃমিঃ দূরত্বে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে দুর্ঘটনাস্থল রানা প্লাজার অবস্থান। সেখানে পৌঁছে গাড়ি থেকেই দেখতে পেলাম সেই ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপ। সামনের অংশে ভেঙে পড়া ছাদগুলো স্লাইস্ড পাউরুটির মত একটার পর একটা পড়ে আছে। মাঝে সামান্য ফাঁক-ফোকরও যেন নেই। মাত্র ২০১০ সালে নির্মিত ৯ তলা ভবনটি ধসে প্রায় গুড়ো হয়ে গেছে। নেমে এসেছে ৩ তলা সমান উচ্চতায়। দুই পার্শ্বে গায়ে গায়ে লেগে থাকা ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হ’লেও প্রায় অক্ষতই দেখাচ্ছে। পুরো এলাকা কর্ডন করে রেখেছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকার্য চলছে খুব ধীরলয়ে। রাস্তার অপরপার্শ্বে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা এবং সাধারণ জনতার ভিড়। তখনও কয়েকশ’ লাশ ধ্বংসস্তূপের ভিতরে চাপা পড়ে আছে। সেই গন্ধে ভারী হয়ে আছে আকাশ-বাতাস। মৌন, বিধ্বস্ত রানা প্লাজার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিজোড়া পাথরের মত স্তব্ধ হয়ে রইল কতক্ষণ। কত যে করুণ আর্তনাদ মিশে আছে এর প্রতিটি বালুকণায়! কত স্বপ্নের যে সমাধি ঘটেছে ভেঙে পড়া ছাদগুলোর নীচে! মনের কানে ভেসে আসছে কংক্রীটের ফাঁদে বেঘোরে আটকে পড়া সুজন, শাহিনাসহ নাম না জানা অসংখ্য মানুষের শেষ চিৎকার! যারা বাঁচার প্রবল আকুতি নিয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে করতে শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়েছে। আর ভাবতে পারলাম না। গাড়ি ঘুরিয়ে সেখান থেকে ফিরে এলাম।

যোহরের ছালাত আদায় করার পর দুপুরের খাওয়া-দাওয়া হ’ল উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আলহাজ্জ আশরাফুল ইসলামের বাড়ীতে। নতুন কয়েকজন আহলেহাদীছ ভাই এখানে উপস্থিত হ’লেন। তাদের উপর নির্যাতনের ইতিহাস শুনলাম। অতঃপর অত্র এলাকায় ‘আন্দোলনে’র অগ্রগতি সম্পর্কে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা হ’ল। আছরের ছালাতের পর পুনরায় এনাম মেডিকেলে এসে পৌঁছলাম। পরিচালক ডা. এনামুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ হ’ল। খুব ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ। তিনি বললেন, গত এক সপ্তাহ যাবৎ আমাদের উপর যে অবস্থা যাচ্ছে তাতে দিন-রাত্রি সমান হয়ে গেছে। আমীরে জামা‘আত দুর্গতদের চিকিৎসায় তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের নিঃস্বার্থ খেদমতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানালেন এবং দো‘আ করলেন। পরিচালক ছাহেব বললেন, মেডিকেলের পক্ষ থেকে প্রতিদিন আহতদের জন্য কেবল আহার খরচই যোগাতে হচ্ছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। তাই আমীরে জামা‘আতের নির্দেশে হাসপাতাল ফান্ডেও নগদ অর্থ প্রদান করা হ’ল।

ডা. এনামের পরামর্শ মোতাবেক আমরা রোগীদের হাতে হাতে নগদ অর্থ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। হাসপাতালের দু’জন ইন্টার্নী ডাক্তার এবং দু’জন এটেনডেন্ট আমাদেরকে রোগীদের কাছে নিয়ে গেলেন। প্রথমেই গেলাম আইসিইউতে। তখনও সেখানে ১৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন। ভিতরে ঢোকার পর সবচেয়ে মুমূর্ষ রোগী খুলনার পাখী বেগমের কাছে আমাদের নিয়ে যাওয়া হ’ল। উদ্ধারের সময় কংক্রিটের বীমের নিচে আটকে যাওয়ায় তার দু’পা উরু থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। তার অবস্থা দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখা গেল না। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে গেল। অঙ্গচ্ছেদের বেদনায় তার বিবর্ণ চেহারা দুশ্চিন্তার কালো মেঘে ঢাকা। আত-তাহরীক সম্পাদক মহোদয় তার হাতে টাকা তুলে দেয়ার সময় কিছু কথা বলতে চাইলেন। কিন্তু মুদ্রিত চোখে বিড়বিড় করা ছাড়া কোন উত্তর এল না। বাকি ১৮ জন রোগীদের অধিকাংশেরই হাত বা পা কেটে ফেলা হয়েছে। তারও আগে তাদেরকে লড়াই করতে হয়েছে ধ্বংসস্তূপের সংকীর্ণ কুঠুরীতে সহকর্মীদের মৃত লাশের সাথে টানা ২/৩দিন অভুক্ত অবস্থায় আটকে থাকার ভয়ংকরতম মুহূর্তগুলোর সাথে। তাদের মুখ থেকেই শুনতে চেয়েছিলাম সেই অভিজ্ঞতার কথা। কিন্তু সাহস হ’ল না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত পাখী বেগমের (৩০) সেই অভিজ্ঞতা এমনই মর্মন্তুদ ও হৃদয়স্পর্শী- ‘আমার ওপর একটি বীম পড়িছিল। আমিই উদ্ধারের লোকদের বললাম, আমার দুইটা পা কেটে হ’লেও বাঁচাও। তারা বলল, ‘তোমার স্বামী তাহ’লে তোমারে দেখবে না।’ আমি বললাম, না দেখুক। আমার বাচ্চা দুইটার মুখ না দেখে আমি মরব না। তখন ইনজেকশন দিয়েই দুই পা কাটছে, তা-ও ব্যথা পুরাই পাইছি। পা কাটার পর রক্ত আর মানাচ্ছে না। সাদা কাপড়ে তখন কাটা দুই পা পেঁচায় আমারে নিয়া আসছে হাসপাতালে’।

৩৬ ঘন্টা লড়াইয়ের পর উদ্ধার পাওয়া নড়াইলের লাবনীকেই (২২) কেবল দেখা গেল বেডে বসে থাকতে। অনেকটা সুস্থ। উদ্ধারের সময় তারও বাম হাত কনুইয়ের উপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছিল। কিন্তু হাত হারানোর বেদনা নিয়েও সে হাস্যোজ্জ্বল। হয়তবা এত বিরাট ধকলের পরও শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে অবিশ্বাস্যভাবে জয়ী হওয়া এবং প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হ’তে পারার চাপা আনন্দে।

মাথায় আঘাত পাওয়া বেশ কয়েকজন তখনও পর্যন্ত অচেতন। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা ২০/২২ বছরের এমনই এক যুবকের মা হিসাবে দাবী করছেন দু’জন মহিলা। ফলে তার জন্য প্রদত্ত সাহায্যগুলো জমা নিচ্ছেন হাসপাতালের নার্সরা।

আইসিইউ থেকে বের হয়ে অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতে প্রবেশ করলাম। একে একে সবার কাছেই যাওয়া হ’ল। কারো হাত-পা মারাত্মকভাবে ছিলে গেছে। কেউ মস্তিষ্কে, কোমরে কিংবা কোন জয়েন্টে তীব্রভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। এসময় ইন্টার্নী ডাক্তার দু’জন আমাদের খুব সহযোগিতা করলেন। ঘন্টাখানেকেরও বেশী সময় ধরে এনাম হাসপাতালের বিভিন্ন তলায় চিকিৎসাধীন ২১৪ জনের প্রত্যেককেই কম-বেশী আর্থিক সাহায্য করা সম্ভব হ’ল। অনেকে আবেগাপ্লুত হ’ল, অনেকে অনুযোগ করল। দো‘আ চাইল কেউ কাতরভাবে। সবমিলিয়ে ভয়ংকর মৃত্যুকূপ থেকে বেঁচে ফিরে আসার স্বস্তি থাকলেও অনিশ্চিত ভবিষ্যত আর নিহত সহকর্মীদের হারানোর শোকে বিষণ্ণ সবাই।

ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলাম। মাগরিবের ছালাত আদায় করা হ’ল পার্শ্ববর্তী এক মসজিদে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল (নিটোর)। সাভারের সাথীদের বিদায় জানিয়ে গন্তব্যে রওনা হ’লাম। উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর অর্থ সম্পাদক ডা. আব্দুল জাববার ভাইকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে হয়। সারাদিন তিনি আমাদের যাবতীয় বিষয় তত্ত্বাবধান করেছিলেন। এছাড়া মুরববী আশরাফুল ইসলাম (৭৬), নতুন আহলেহাদীছ নাছীরুদ্দীন (৬০) ছাহেব সহ আরো যারা ছিলেন তাদের আন্তরিকতা ভোলার নয়। আল্লাহ তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

পঙ্গু হাসপাতালে পৌঁছতে রাত প্রায় ৮-টা বেজে গেল। সেখানে ডা. আব্দুল মালেক ভাই আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি কিছু দিক-নির্দেশনা দিলেন এবং রোগীদের অবস্থা পরিদর্শন করাতে নিয়ে গেলেন। ৭৫ জন আহত লোক এখানে চিকিৎসাধীন। অনেকেরই ভাঙ্গা পা রড দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উরু পর্যন্ত পা কাটা যন্ত্রণাকাতর একটি মেয়েকে দেখে এগিয়ে গেলাম। পাশেই তার ভাই বসা। বলল, তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল ২য় দিন। ছয় তলায় দুই ছাদের মধ্যবর্তী এক ফুট ব্যবধানের মধ্যে সে আটকা পড়েছিল। সেখান থেকে একটি সংকীর্ণ পথে ছাদের নীচে জ্যাক লাগিয়ে প্রায় ২৫ ফুট ক্রলিং করে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন দুই সাহসী উদ্ধারকর্মী। এসময় একটি বীমের নীচে আটকে থাকা তার বাম পা কোন ক্রমেই বের করা যাচ্ছিল না। অবশেষে পাটি কেটে ফেলতে হয়। দিনাজপুরের এই অষ্টাদশী প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুর্দশা দেখে নিজেকে ধরে রাখা ছিল খুব কষ্টকর।

ডা. আব্দুল মালেকের কাছে জানতে পারলাম, বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা প্রতিদিনই আসছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সহযোগিতা করছে। আমরা নিজেরাও দেখলাম, ছোট ছোট নাম-পরিচয়হীন সংস্থাও নিজেদের কর্মীদের ১ দিনের বেতনের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতে এসেছেন এখানে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ক্লাবের পক্ষ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এসে যে যেভাবে পারছে স্বেচ্ছাসেবার কাজ করছে। মানুষের বিপদের মুহূর্তে মানুষ এগিয়ে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক মূল্যবোধটুকুও যে আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিক বস্ত্তবাদী ও যান্ত্রিক পৃথিবীতে কিছু সংখ্যক মানুষের মাঝে আজও এই মূল্যবোধের অস্তিত্ব প্রকৃতপক্ষে আছে বলেই হয়ত পৃথিবী টিকে আছে। আজ সারাদিন এই মূল্যবোধের অনুশীলন দেখেছি সব জায়গায়। রানা প্লাজা ট্রাজেডি পরিদর্শনে এসে এই একটি জিনিসই খুব প্রশান্তিতদায়ক মনে হয়েছে।

সরকারী অবহেলা আর সমন্বয়হীনতার কথা শুনলাম সবার মুখে মুখে। দুর্ঘটনার ১ ঘন্টার মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশ উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে উদ্ধারকার্যে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে চাইলেও সরকার নাকি ‘ইমেজ’ রক্ষার জন্য তাদেরকে অনুমতি দেয়নি। ভাল কথা, এতই যদি আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে সামান্য অক্সিজেন, টর্চলাইট, গ্রীল/কংক্রিট কাটার, এয়ার ফ্রেশনার, গ্লোভসের জন্য সাধারণ মানুষকে প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ এত নাস্তানাবুদ হয়ে ছুটোছুটি করতে হ’ল কেন? সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এত এত বিজ্ঞাপন দিতে হ’ল কেন? এমনকি দুর্ঘটনার ৩/৪ দিন পরও কেন খন্তা, শাবল হাতে সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করতে হ’ল? সরকারের কাজটা কি তাহ’লে? সরকারের এই অবহেলা ও সমন্বয়হীনতার ফলে বহু আটকে পড়া মানুষকে সময়মত উদ্ধার করা যায়নি। মাত্র একটি বিল্ডিং-এর ধ্বংসস্তূপ সরাতে যে আনাড়ীপনার প্রদর্শনী করা হ’ল, তাতে ভবিষ্যতে যদি কখনো এদেশে ভূমিকম্প হয়, তবে তা যে কি প্রলংকরী পরিণাম বয়ে আনবে আল্লাহই ভাল জানেন।

পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার সময় আমীরে জামা‘আত বললেন, আমরা এখন স্থায়ীভাবে ‘দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল’ খুলব। যা দিয়ে যতটুকু সম্ভব আমরা অসহায় শ্রমিক পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের জন্য স্থায়ী কোন অবলম্বন করে দেব ইনশাআল্লাহ।         

ফেরার পথে বার বার মনে পড়ছিল ফেলে আসা দুর্গতদের কথা। চোখে ভাসছিল নিখোঁজদের সন্ধানে পাগলের মত ঘুরে বেড়ানো আত্মীয়-স্বজনের করুণ মুখচ্ছবি। মনে পড়ছিল সে সব পরিবারের কথা, যারা নিজেদের প্রাণাধিক প্রিয় আপনজনদের হারিয়ে আজ দিশেহারা। মনে পড়ছিল সেই সব মানুষদের কথা যারা নিজেদের আরাম-আয়েশ ভুলে দিন-রাত সেখানে স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্নভাবে। সাভার ট্রাজেডিকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ ও পুঁজিপতিদের যে নির্মম অমানবিকতার প্রকাশ ঘটেছে, তার বিপরীতে সমাজের বৃহত্তর অংশের মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকা শাশ্বত মানবতাবোধের মাধুর্যপূর্ণ দিকটি বড় তাৎপর্যপূর্ণভাবে ফুটে উঠেছে। দেশের সাধারণ মানুষ সকলেই সাধ্যমত কোন না কোনভাবে এগিয়ে এসেছেন দুর্গতদের সহযোগিতায়। না পারলে কমপক্ষে দো‘আটুকু করেছেন। এই মানবতাবোধ যেন সার্বজনীনভাবে টিকে থাকে, সর্বত্র যেন মানবিক সুষমার কাছে পাশবিক নোংরামির পরাজয় ঘটে-এই কামনাই বেরিয়ে এল দীর্ঘশ্বাসের সাথে।  

যেসব অর্থলিপ্সু ও রক্তশোষক পুঁজিপতিদের পাপের শিকার হয়েছে এই খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষগুলো, যাদের কারণে এই মর্মান্তিক প্রাণসংহারী  ট্রাজেডির  জন্ম  হ’ল,  তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, এটাই দেশবাসীর প্রাণের দাবী। যাতে আর কোন বনু আদমকে এমন বিভীষিকাময় মৃত্যুর শিকার না হ’তে হয়। সাথে সাথে যারা এ ঘটনায় সহায়-সম্বল, জীবন-জীবিকা হারিয়ে কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছে এবং আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তারা যেন আবার বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পায়-সে দায়িত্ব সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি সহস্রাধিক বনু আদম যারা সেখানে ধুঁকে ধুঁকে করুণ মৃত্যুর শিকার হয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ রাববুল আলামীন ক্ষমা করে দিন এবং শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করুন এই কামনাই করছি।

পরদিন সাভারের রাজাসনে সাংগঠনিক সফরে গিয়ে আমীরে জামা‘আত উপস্থিত সুধীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে সরকারের প্রতি দাবী জানিয়ে বলেন, বিধ্বস্ত রানা প্লাজার স্থলে মসজিদ বা স্মৃতিসৌধ না বানিয়ে নতুন একটি ব্যবসায়িক ভবন নির্মাণ করা হোক এবং এর মালিকানা দেয়া হোক নিহত-আহতদেরকে। যার আয় থেকে তাদের পরিবার-পরিজনকে ভরণ-পোষণ করা হবে। প্রয়োজনে এই ভবনের একটি ফ্লোর নির্মাণের ব্যয়ভার আমরাই সংগঠনের পক্ষ থেকে বহন করব ইনশাআল্লাহ। তার প্রস্তাব সম্বলিত ব্যানার সংগঠনের নাম দিয়ে পরদিনই রানা প্লাজা, অধরচন্দ্র স্কুল মাঠ সহ সাভারের প্রাণকেন্দ্রসমূহে টানিয়ে দেয়া হয়। 

পরিশেষে না চাইলেও দেশীয় রাজনীতির নিকৃষ্ট হালচাল নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয়। সমগ্র দেশবাসী দেখেছেন, এত বড় মানবিক বিপর্যয়ের পরও এদেশের দায়িত্বশীলরা কি জঘন্য রাজনীতির খেলায় মেতেছিলেন। একজনের মন্তব্য ছিল, এই বিপর্যয়ে দেশের সকল মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ জেগে উঠলেও জাগেনি কেবল দু’টি শ্রেণীর মধ্যে-রাজনীতিবিদ আর সাংবাদিক। এই ট্রাজেডীর মূল নায়ক যে সোহেল রানা, তার শাস্তি নিশ্চিত করার পরিবর্তে সে কোন দলের অনুসারী তা নির্ধারণে জাতীয় সংসদকে পর্যন্ত বিতর্ক সভার আয়োজন করতে হয়! স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থাকেন সেই বিতর্কের মূল ভূমিকায়! এই হ’ল আমাদের বাংলাদেশ। জানা গেছে, রানা প্লাজা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মিত হয়েছে। সরকারী বিধি মোতাবেক নির্ধারিত বিল্ডিং কোডের কোন নিয়মই সেখানে মানা হয়নি। মানা হবে কেন? সরকারী দলের সমর্থক হওয়ার অর্থ যে যাবতীয় অন্যায়, অপকর্মের ফ্রি লাইসেন্স পাওয়া। এই নোংরা দলীয় রাজনীতির খেলা যতদিন থাকবে, মনুষ্যত্বের অধঃপতন ততদিনই ঘটতে থাকবে। এ থেকে নিস্তার পাওয়ার কোন উপায় নেই।

উদ্ধারকার্যের শেষ দিন শোনা গেল ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে সোহেল রানার কার্যালয় থেকে বিদেশী পিস্তল, চাইনিজ কুড়াল, রামদা ও ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কি? আমাদের সরকার ও  প্রশাসন বহু অনুসন্ধান চালিয়েও যে এদের বিরুদ্ধে কোন মামলা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই এত বড় হত্যাযজ্ঞের অপরাধে অপরাধী হবার পরও তাদের কোন শাস্তি হবে না, এমনকি সর্বশেষ এই মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারের পরও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হবে না। কেননা তারা যে সরকারী দলের পোষা মাস্তান। অথচ একই সময়ে ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে যে, নিরীহ-নিরপরাধ পথচারীকে আটকে অস্ত্র আর মাদক আইনে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে পুলিশ। কেননা তাদেরকে আটকে নির্বিবাদে অর্থবাণিজ্য চালানো যায়। তাদেরকে নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত করে দিলেও দুনিয়ার কেউ কিছু বলবে না। অথচ এই মদ্যপ সন্ত্রাসীরা? এরা লোক দেখানো জেল খেটে খুঁটির জোরে আবারও দোর্দন্ড প্রতাপে সমাজে ফিরে আসবে এবং আমাদেরই ভোট নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিশিষ্ট জননেতা হিসাবে জাতীয় সংসদে ষোল কোটি মানুষের একজন সুযোগ্য আইন প্রণেতার পদ অলংকৃত করবে! এটাই গণতন্ত্রের নিষ্ঠুর বাস্তবতা!

সময়ের ব্যবধানে রানা প্লাজার এই মর্মন্তুদ হত্যাযজ্ঞকে প্রাকৃতিক নিয়মেই মেনে নেয়া যায়, দুর্গত মানুষদের জন্য ত্রাণ ও আর্থিক সাহায্য নিয়ে যেতে পেরে কিছুটা হ’লেও হৃদয়কোণে একটু পরিতৃপ্তির পরশ পাওয়া যায়। কিন্তু চোখের সামনে মানুষ যেভাবে এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বলি হচ্ছে, প্রতিনিয়ত যেভাবে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার দৃশ্য দেখতে হচ্ছে, তা কতদিন সহ্য করা যায়? কিন্তু না, কিছুই করার নেই। কোন প্রতিকার না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হৃদয়ে গুঞ্জরিত প্রবল আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ সবকিছুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চাইলেও কিছুই করণীয় নেই আমজনতার। এমনকি টু শব্দটিও না। অদৃশ্য এক সিস্টেমে সবাই বন্দী।

ক্ষমতার পালাবদলে যে সরকারই আসুক না কেন, এই দৃশ্যই ধারাবাহিক নিয়মে মঞ্চস্থ হ’তে থাকবে। মানবরচিত এই সিস্টেমে ক্রমাগত নেতার পরিবর্তন হবে কিন্তু নীতির একচুল পরিবর্তন হবে না। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এটাই এখানে চিরন্তন সত্য। প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে। কৌতুকের বিষয় এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার পরিবর্তন আমরা শতকরা আশি ভাগ জনগণই কামনা করি। কিন্তু সমাধানে যেতে চাই না। কারণ সমাধান যে একটাই-ইসলাম! মানবজাতির চিরমুক্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন। পৃথিবীতে একজন মুচি-মেথরের দাসত্ব করতেও আমরা দ্বিধাবোধ করবো না, ইট-কাঠ-পাথরের মিনার বানিয়ে তার সামনে নির্বোধের মত মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকতেও আমাদের বিবেকে বাঁধবে না; কিন্তু যিনি সেই দাসত্বের একমাত্র হকদার সেই বিশ্ব চরাচরের মহান অধিপতির দাসত্ব করতে আমরা প্রস্ত্তত নই। এটাই মানবজাতির রূঢ় বাস্তবতা। সুতরাং যতদিন আমরা আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দাসত্বে ফিরে যেতে না পারছি, যতদিন অহি-র বিধানের অভ্রান্ত সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করতে না পারছি, ততদিন পৃথিবীজুড়ে যতই গণতন্ত্রের চর্চা হোক কিংবা তথাকথিত যত চিত্তাকর্ষক ও গণবান্ধব মতবাদই আবিষ্কৃত হোক না কেন, ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির কোন ব্যত্যয় ঘটবে না। কাংখিত ন্যয়বিচার ও মানবাধিকারের স্বপ্নও বাস্তবে কখনো ধরা দেবে না। শাসকেরা রক্ত শোষণ করেই চলবে, শোষিতরা রক্তের যোগান দিতেই থাকবে। রানা প্লাজায় কিংবা শাপলা চত্বরে। যুগ থেকে যুগান্তরে।






আরও
আরও
.