১৯৭৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী। নির্ভেজাল তাওহীদের ঝান্ডাবাহী এদেশের একক যুবসংগঠন হিসাবে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ এক নতুন দিনের প্রত্যয়ী সূর্য নিয়ে বাংলাদেশের বুকে আত্মপ্রকাশ করল। দিগ্বিদিকশূন্য হক্বপিয়াসী তরুণ সমাজের হৃদয়াকাশে আলোকবর্তিকা হয়ে ‘যুবসংঘ’ ধীরে ধীরে শহর ও গ্রাম-গঞ্জের মানুষের নয়নের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে লাগল। বাতিলের বুকে কুঠারাঘাত করে সত্যের স্পর্ধিত প্রকাশ ঘটাতে খুব বেশী সময় নেয়নি সংগঠনটি। যার প্রমাণ দ্রুতই প্রকাশ পেল। প্রতিষ্ঠার দু’বছরের মধ্যে শিশু সংগঠনটির কার্যক্রম তখন অনেকটা গুছিয়ে এসেছে। সংগঠনের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ ক্রমবর্ধমান গণজাগরণের ধারা-উপধারাকে একই সূত্রে গ্রথিত করতে চাইলেন। যার সার্থক রূপায়ণ ঘটানোর জন্য অনেক বাধা-প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে অবশেষে রাজধানী ঢাকার বুকে প্রথম বড় আকারের গণজমায়েত করার সিদ্ধান্ত স্থির হল। লিফলেট-পোস্টারিং ছাড়াও তৎকালীন সময় আহলেহাদীছদের একমাত্র পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘আরাফাত’-এ তা ফলাও করে প্রচার করা হল। অবশেষে উপস্থিত হল সেই কাঙ্খিত দিন। ১৯৮০ সালের ৫ ও ৬ই এপ্রিল। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর ইতিহাসে সর্বপ্রথম তাবলীগী ইজতেমা। ঐতিহাসিক এই সম্মেলনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে তরুণ ও যুবকরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করলেন। সত্যের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মিছিলে তাদের এই অভূতপূর্ব আবেগ-অনুভূতির উচ্ছ্বাস যেন সুস্পষ্টভাবেই এ দেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের এক নবজোয়ারের  আগমনীবার্তা অনুরণিত করল।

এই সম্মেলনের পর সাংগঠনিক কার্যক্রম নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে হলেও পূর্ণগতিতে অব্যাহত রইল। তবে বার্ষিক ‘তাবলীগী ইজতেমা’র ধারাবাহিকতায় পড়ে যায় এক দীর্ঘ বিরতি। ইতিমধ্যে সুদীর্ঘ ১১টি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। অতঃপর ১৯৯১ সালের ২৫ ও ২৬শে এপ্রিল বৃহস্পতি ও শুক্রবার দ্বিতীয় বারের মত তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ততদিন সংগঠনের উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। দুঃখজনক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের গতিপথও তখন নতুনভাবে নির্ধারিত হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে ১৯৪৯ সালে মাওলানা আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কোরায়শী যে নওদাপাড়ার মাটিতে এক ঐতিহাসিক সমাবেশ করেছিলেন, সেখানেই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী’র দক্ষিণ পার্শ্বের বিস্তীর্ণ ময়দানে এই জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতি বৎসর বাংলাদেশের সর্বাধিক আহলেহাদীছ অধ্যুষিত এই রাজশাহীতে বিপুল সমারোহে তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আহলেহাদীছ মনীষীদের উপস্থিতি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাড়ী রিজার্ভ করে আসা কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শুধু সম্মেলনস্থল নয় বরং গোটা রাজশাহী মহানগরী যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তাওহীদ ও রিসালাতের মুহুর্মুহু শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। নির্ভীক উচ্চারণে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের বাস্তবভিত্তিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সম্মেলন শেষে আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ‘অহি’ ভিত্তিক জীবন পরিচালনার গভীর প্রেরণা ও ইস্পাত-কঠিন শপথ নিয়ে কর্মীরা আবার নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। গত ২১ বছর ধরে নিয়মিতভাবে এই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি হয়ে আসছে এ দেশের আহলেহাদীছদের এই বৃহত্তম মিলনকেন্দ্রে। নিম্নে মাসিক আত-তাহরীকের ‘ইজতেমা সংখ্যা’ উপলক্ষ্যে বিগত হওয়া তাবলীগী ইজতেমা সমূহের উপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হ’ল।    

১. ৫ ও ৬ই এপ্রিল, ১৯৮০ : আহলেহাদীছ আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৮০ সালের ৫ ও ৬ই এপ্রিল ছিল এক অবিস্মরণীয় দিন। ১ম দিন ৬ই এপ্রিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ’ শীর্ষক ইসলামী সেমিনার। রাবির সাবেক ভিসি ড. মুহাম্মাদ আবদুল বারী ছাহেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন মাননীয় যুবউন্নয়ন মন্ত্রী খোন্দকার আবদুল হামীদ। তবে শেষ মহূর্তে তিনি অনিবার্য কারণে উপস্থিত হ’তে পারেননি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে প্রথম সঊদী রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আবদুল হামীদ আল-খত্বীব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস ড. মুহাম্মাদ সিরাজুল হক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আফতাব আহমাদ রহমানী, ড. মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান, মাওলানা মুন্তাছির আহমাদ রহমানী, মাওলানা আবদুল্লাহ ইবনে ফযল, মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ খান রহমানী, সায়েন্স ল্যাবরেটরীর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মাদ আবদুর রহমান, ড. শাহ আবদুল মজীদ, এডভোকেট আয়েনুদ্দীন ও দেশের অন্যান্য খ্যাতিমান ওলামায়ে কেরাম ও সুধীমন্ডলী। সেমিনারে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। প্রবন্ধটি উপস্থিত সুধী মন্ডলী কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত হয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে ব্যাপকহারে বিলি করার প্রস্তাব করা হয়।

বলা বাহুল্য, সম্মেলন ও সেমিনারে ব্যাপকহারে যুবক ও সুধী সমাবেশ এবং পরিশেষে ঢাকার রাজপথে ট্রাক মিছিলে গগণবিদারী শ্লোগান ধ্বনি ও বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে সম্মিলিত ‘আমীন’-এর আওয়ায রাজধানীর বুকে আহলেহাদীছ আন্দোলনকে যেন নতুন প্রাণ দান করেছিল। ‘যুবসংঘ’ প্রতিষ্ঠার মাত্র দু’বছরের মধ্যে এ অনুষ্ঠান ছিল এক বিরাট সাফল্য।

২য় দিন বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘের ঐতিহাসিক ১ম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর ‘ঢাকা যেলা ক্রীড়া সমিতি’ মিলনায়তনে। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ‘বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস’-এর সভাপতি জনাব ড. মুহাম্মাদ আবদুল বারী। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপকহারে যুবসংঘের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, এটিই ছিল ঢাকায় আহলেহাদীছ মহল্লার বাইরে আহলেহাদীছদের আয়োজিত প্রথম প্রকাশ্য জাতীয় সম্মেলন।

২. ২৫ ও ২৬শে এপ্রিল ১৯৯১ : দীর্ঘ বিরতির পর রাজশাহী মহানগরীর আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার দক্ষিণ পার্শ্বের খোলা ময়দানে এক বৃহৎ প্যান্ডেলে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ২য় জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় (বর্তমানে উক্ত স্থানের উপর দিয়ে রাজশাহী মহানগরী বাইপাস সড়ক ও বিআরটিএ ভবন নির্মিত হয়েছে)। উক্ত সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হ’তে আহলেহাদীছ যুবসংঘের সদস্য, উপদেষ্টা ও সুধীবৃন্দ ছাড়াও বহু শুভানুধ্যায়ী যোগদান করেন। এমনকি সাতক্ষীরা, খুলনা ও পাবনা যেলা হ’তে ‘আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা’র বহু সদস্যা ও দায়িত্বশীল মা-বোন অংশগ্রহণ করেন। কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সুধী পরিষদের মাননীয় নায়েবে আমীর ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়ার অধ্যক্ষ শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সুধী পরিষদের মাননীয় আমীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক জনাব মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

দু’দিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমায় যে সকল ওলামায়ে কেরাম ভাষণ প্রদান করেন তাঁরা হলেন, মাওলানা আব্দুল মতীন কাসেমী (রাজশাহী), মাওলানা শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), যুবসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি (১৯৯১-৯৩ সেশন) আব্দুর রশীদ মাদানী (গাইবন্ধা), যুবসংঘের ঢাকা জেলার কর্মী মাওলানা আমানুল্লাহ, মাওলানা আবুল কাসেম সাবেরী (সাতক্ষীরা), মাওলানা শুয়াইবুর রহমান (রাজশাহী), মাওলানা আব্দুল লতীফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), মাওলানা আব্দুল মান্নান সালাফী (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) প্রমুখ। পরিস্থিতির জটিলতায় ইজতেমায় আসতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করে দিল্লী, কলিকাতা, নেপাল ও কুয়েতের মেহমানদের লিখিত চিঠি ইজতেমায় পড়ে শুনানো হয়েছিল।

অতঃপর ২৬শে এপ্রিল শুক্রবার বাদ আছর নওদাপাড়া হ’তে রাজশাহী যেলা প্রশাসকের বাসভবন অভিমুখে ঐতিহাসিক গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবীতে আহলেহাদীছের এ ধরনের অভূতপূর্ব গণমিছিল শুধু রাজশাহী নয়, বরং দেশের ইতিহাসে ছিল প্রথম। নওদাপাড়া হ’তে রাজশাহী যেলা প্রশাসক-এর বাসভবন পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা ‘কুরআন-হাদীছ ছাড়া অন্য কিছু মানি না মানব না’ ‘মুক্তির একই পথ, দাওয়াত ও জিহাদ’ প্রভৃতি শ্লোগানে মুখরিত ছিল। বিভিন্ন যেলা হ’তে আগত কর্মীদের হাতে বিভিন্ন দাবী সম্বলিত ব্যানার শোভা পাচ্ছিল। মিছিল শেষে যুবসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ ও সহ-সভাপতি শেখ মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলাম মাননীয় যেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পৌঁছে দেন। অতঃপর ফেরার পথে পুরো মিছিল সেদিন মহানগরীর পদ্মা পাড়ের ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে মাগরিবের ছালাত আদায় করে। ছালাত শেষে মাননীয় আমীর ছাহেব কর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। এর আগে সাহেববাজার অতিক্রম করার সময় তিনি ট্রাফিক আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে উপস্থিত কর্মী ও জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করেন।

৩. ১২ ও ১৩ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯২ : ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ৩য় বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা রাজশাহীর আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। দেশী ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও এবছর করাচী দারুল হাদীছ রহমানিয়ার অধ্যক্ষ পাকিস্তানের খ্যাতনামা আলেম ও বাগ্মী শায়খ আবদুল্লাহ নাছের রহমানী সম্মেলনে যোগদান করেন। ‘জিহাদের ফযীলত ও গুরুত্বে’র উপরে তাঁর তেজোদীপ্ত ভাষণ যুবসংঘের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য, কর্মী ও সুধীবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ইজতেমা ’৯২-এর অন্যতম সেরা আকর্ষণ ছিল এ দেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের ৩টি প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন। (১) গাইবান্ধা সদরের খোলাহাটি গ্রামের গাযী শেখ এফাযুদ্দীন হক্কানী (১৩৩)-এর জিহাদী স্মৃতি লাল কাপড়ের জিহাদী ব্যাজ ও কাঠের খাপ সহ তরবারি। যার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে ৩৮ ইঞ্চি। মুজাহিদের পুত্র শেখ মূসা হক্কানী ও অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ উক্ত জিহাদী ব্যাজ ও তরবারি ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সুধী পরিষদের আমীর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবকে উপহার হিসাবে প্রদান করেন। (২) একটি জীর্ণ পুঁথি। যা একই যেলার সাঘাটা উপযেলাধীন ঝাড়াবর্ষা গ্রামের সমীরুদ্দীন, যমীরুদ্দীন ও জামা‘আতুল্লাহ নামক তিন সহোদর শহীদ ভাইয়ের স্মরণে তাঁদের ভাতিজা আবদুল বারী কাযী স্বহস্তে তৈরী কালি দিয়ে পুঁথি আকারে প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার শোকগাঁথা হিসাবে রচনা করেন। (৩) ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওযনের একটি তামার বদনা। যার মালিক ছিলেন সাতক্ষীরার বীর গাযী মাখদূম হুসাইন ওরফে মার্জ্জুম হোসেন (এসকল ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের বিস্তারিত আলোচনা মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের থিসিসে উল্লেখিত হয়েছে)

৪. ১লা ও ২রা এপ্রিল ১৯৯৩ : নওদাপাড়া মারকায সংলগ্ন ময়দানে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র ৪র্থ জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় সভাপতিত্ব করেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডঃ মুহাম্মাদ আবাদুল্লাহ আল-গালিব। বিভিন্ন যেলার কর্মীরা ট্রেন যোগে ও বাস রিজার্ভ করে বিপুল সমারোহে সম্মেলনে যোগদান করেন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব মিজানুর রহমান মিনু স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মেলনে যোগদান করেন। উপস্থিত জনতাকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এ মহান আন্দোলন একটি নিশ্চিত সম্ভাবনাময় আন্দোলন’। ইসলামের প্রকৃত রূপ দর্শনে তাঁর হৃদয়ে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার শাহ মুহাম্মাদ আবদুল মতীন (বগুড়া), মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রউফ (খুলনা), অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ (কুমিল্লা), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মাদ মঈনুদ্দীন আহমাদ খাঁন, তাওহীদ ট্রাষ্ট-এর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলিম (দিনাজপুর), মাওলানা শামসুদ্দীন (সিলেট), মাওলানা শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা) ও মাওলানা আব্দুছ ছামাদ (সাতক্ষীরা) প্রমুখ। দ্বিতীয় দিন ফজর পর্যন্ত ইজতেমা চলতে থাকে। উল্লেখ্য যে, এবারের ইজতেমায় পৃথক মহিলা প্যান্ডেলে বিভিন্ন যেলার আন্দোলন অন্তঃপ্রাণ মা-বোনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেন। উক্ত সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত প্রস্তাব ও দাবীসমূহ সরকার সমীপে স্মারকলিপি আকারে পেশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং রাজশাহী যেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তা সরকারের নিকট পেশ করা হয়।

৫. ২৪ ও ২৫শে মার্চ ১৯৯৪ : পূর্বের ন্যায় নওদাপাড়া মারকায সংলগ্ন ময়দানে ৫ম জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। যথারীতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের মাধ্যমে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনী ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ‘আল্লাহর নিরংকুশ তাওহীদ ও প্রিয়নবী (ছাঃ)-এর খালেছ ইত্তেবা প্রতিষ্ঠাই আহলেহাদীছ আন্দোলনের মূল দাবী। তিনি বলেন, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে তথা মুসলিম জীবনের সকল দিক ও বিভাগে রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্যের বিকল্প নেই। এ চরম সত্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়াই আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত যে, শিরক ও বিদ‘আতযুক্ত ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক করে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য নেই।

সম্মেলনে বিদেশী মেহমানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানের খ্যাতনামা বিদ্বান সিন্ধু জমঈয়তে আহলেহাদীছ এর সভাপতি আল্লামা বদিউদ্দীন শাহ রাশেদী, আল্লামা আব্দুল্লাহ নাছের রহমানী, ইরাকের ডাঃ আবু খুবায়েব ও সূদানের শায়খ আমীন আব্দুল্লাহ প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম। ইত্তেবায়ে সুন্নাতের অপরিহার্যতার উপর আল্লামা বদিউদ্দীন শাহ রাশেদীর তথ্যবহুল আলোচনা বিদ্বান মহলে চমক সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশী আলেমদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী (রাজশাহী), অধ্যক্ষ আব্দুছ ছামাদ (কুমিল্লা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা শামসুদ্দীন (সিলেট), মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলিম (ঢাকা), মাওলানা আবদুস সাত্তার ত্রিশালী (ময়মনসিংহ), মাওলানা শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), শায়খ আব্দুর রশীদ (গাইবান্ধা), মাওলানা আব্দুর রঊফ (খুলনা), মাওলানা আবদুছ ছামাদ (সাতক্ষীরা), অধ্যাপক আলমগীর হোসাইন (সিরাজগঞ্জ), অধ্যাপক শুজাউল করীম (বগুড়া), মাওলানা মুহাম্মাদ মকবুল হোসাইন (জামালপুর), মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সাত্তার (নওগাঁ) প্রমুখ।

দেশের বিভিন্ন যেলা হ’তে বাসে-ট্রেনে চড়ে অসংখ্য মানুষ উক্ত ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি সাংগঠনিক যেলার রিজার্ভ বাসে ‘জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা ’৯৪ সফল হউক’, মুক্তির একই পথ দাওয়াত ও জিহাদ’ ইত্যাদি শ্লোগানে সজ্জিত ব্যানার শোভা পায়। এছাড়া বিভিন্ন যেলা হ’তে আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থার শত শত মহিলাও ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন।

৬. ২৫ ও ২৬শে মার্চ ১৯৯৫ :  নওদাপাড়া মাদরাসা সংলগ্ন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা ও জাতীয় সম্মেলন। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে উক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য পেশ করেন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব- (ক) আহলেহাদীছ কি ও কেন? (খ) প্রচলিত ইসলামী আন্দোলন ও আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ, শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, অধ্যক্ষ আবদুছ ছামাদ (কুমিল্লা) মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলিম (ঢাকা), মাওলানা মুহাম্মাদ শামসুদ্দীন (সিলেট), শাহ মুহাম্মাদ আবদুল মতীন (বগুড়া), অধ্যাপক মুহাম্মাদ শুজাউল করীম (বগুড়া), আবদুর রশীদ (গাইবান্ধা) মাওলানা শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), মাওলানা আবদুস সাত্তার ত্রিশালী (ময়মনসিংহ), অধ্যাপক আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (সাতক্ষীরা), মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রউফ (খুলনা), মাওলানা আব্দুল্লাহ সালাফী (ভারত), মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ (সাতক্ষীরা), মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী (নওগাঁ), মাওলানা আব্দুর রাযযাক (গোদাগাড়ী), মাওলানা আব্দুর রাযযাক (নওদাপাড়া মাদরাসা), অধ্যাপক মুহাম্মাদ রেযাউল করীম (বগুড়া), মুহাম্মাদ হারূণ (সিলেট), শেখ মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা আব্দুস সোবহান (বগুড়া), মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম (যশোর) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম।

৭. ৭ ও ৮ই মার্চ ১৯৯৬ : তাবলীগী ইজতেমা’৯৬ রাজশাহীর নওদাপাড়াস্থ মারকায সংলগ্ন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ইজতেমা শুরু হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শেষ দিন জুম‘আর ছালাতের পূর্বেই সমাপ্তি ঘোষণা করতে হয়। ইজতেমায় দেশী ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও বিদেশী আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন।

মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের পরে ইজতেমায় আরো ভাষণ প্রদান করেন মাওলানা শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুছ ছামাদ (সাতক্ষীরা), মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলিম (দিনাজপুর), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), মাওলানা মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা) ও অধ্যাপক আলমগীর হোসাইন (সিরাজগঞ্জ) প্রমুখ। বিদেশী মেহমানদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনা করেন শায়খ আব্দুল্লাহ সালাফী (ভারত) ও সামির আল-হিমছী (সিরিয়া)।

পরিশেষে বরাবরের মত তাবলীগী ইজতেমায় উপস্থিত লক্ষ জনতা কর্তৃক সমর্থিত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাসমূহ বিবেচনার জন্য দেশের সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণের নিকটে পেশ করা হয়।

৮. ২৭ ও ২৮শে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭ : নওদাপাড়া মাদরাসার উত্তর পার্শ্বের বিস্তৃত ময়দানে বাদ আছর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর উদ্বোধনী ভাষণের মধ্য দিয়ে তাবলীগী ইজতেমা’৯৭ -এর মূল কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলনের একটি অন্তর্নিহিত দাওয়াত আছে, যে দাওয়াতের অবচেতন জিজ্ঞাসা সকলেই বুঝাতে পারে না। একটি গভীর স্রোতস্বিনীর নীচ দিয়ে যেমন স্রোতের একটা গতি থাকে, যা উপর থেকে বুঝা যায় না, উত্তাল সাগরে যেমন জোয়ার-ভাটা টের পাওয়া খুব মুশকিল হয়, ঠিক তেমনি করে আহলেহাদীছ আন্দোলনের আবেদন জনগণের অন্তরের গভীরতম প্রদেশে এমনই সুনিশ্চিতভাবে গ্রথিত এবং প্রোথিত, যা বাহির থেকে বুঝা খুবই মুশকিল।

অতঃপর পূর্ব নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপরে সারগর্ভ বক্তব্যসমূহ পেশ করেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলিম (দিনাজপুর), অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ (কুমিল্লা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বাগেরহাট), মাওলানা মুহাম্মাদ শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ (সাতক্ষীরা), আব্দুর রহীম (বাগেরহাট), আব্দুস সাত্তার (নওগাঁ), আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী (ময়মনসিংহ), আব্দুর রশীদ (গাইবান্ধা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতীন (বগুড়া), প্রফেসর এ কে এম ইয়াকুব আলী (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম ও সুধীমন্ডলী।

বিদেশী মেহমানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শায়খ আব্দুল ওয়াহ্হাব খিলজী (ভারত), আবু আব্দুর রহমান (লিবিয়া), আব্দুল্লাহ মাদানী (নেপাল), আব্দুল মুন‘ইম (সঊদী আরব), আব্দুল মতীন সালাফী (ভারত) ও আব্দুল্লাহ সালাফী (ভারত) প্রমুখ। দীর্ঘদিন পর শায়খ আব্দুল মতিন সালাফীর বাংলাদেশে আগমন ছিল এই ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ।

আর একটি আকর্ষণীয় দিক ছিল যে, মুহতারাম আমীরে জামা‘আত কর্তৃক রচিত ডক্টরেট থিসিস (আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিত সহ)-এর সুপারভাইজার প্রফেসর ড. এ. কে. এম. ইয়াকুব আলীকে ইজতেমা কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। শেরোয়ানী, টুপী, লাঠি ও এক সেট বই সম্মাননা হিসাবে প্রদান করেন ‘আন্দোলন’-এর পক্ষ থেকে শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শায়খ আব্দুল্লাহ নাছের রহমানী, ভারতের পক্ষ থেকে আব্দুল মতীন সালাফী ও আব্দুল ওয়াহ্হাব খিলজী এবং নেপালের পক্ষ থেকে আব্দুল্লাহ মাদানী। এই সম্মাননা যেন প্রকারান্তরে সার্ক জামা‘আতে আহলেহাদীছের পক্ষ থেকে প্রদত্ত হয়, যা ইজতেমায় উপস্থিত লক্ষাধিক জনতা সানন্দচিত্তে অপার বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেন।

৯. ২৬ ও ২৭শে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮ : আবারও অযুত কণ্ঠে লক্ষ জনতার মুখে উচ্চারিত হল ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। অহি-র বিধান অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার আহবান জানিয়ে ৯ম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা উদ্বোধন করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। তিনি তাঁর সারগর্ভ ভাষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অপরিহার্যতা উল্লেখ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে আমাদের নেতা-নেত্রীরা আমাদের আদর্শ নয়। অর্থনৈতিক জীবনে আমাদের ধনকুবের পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীরা আমাদের আদর্শ নয়, ধর্মীয় জীবনে আমাদের পীর ছাহেবেরা, আমাদের কুতুবে যামানরা আমাদের আদর্শ নন। আমাদের আদর্শ একমাত্র নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। অতএব দল-মত নির্বিশেষে আসুন বাতিলের সাথে আপোষমুখী চিন্তা পরিত্যাগ করে নিরংকুশভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ার শপথ গ্রহণ করি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমলের দূর্গ হিসাবে গড়ে তুলি।’

অতঃপর নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপরে সারগর্ভ বক্তব্যসমূহ পেশ করেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলিম (দিনাজপুর), অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুর রঊফ (খুলনা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বাগেরহাট), মাওলানা মুহাম্মাদ শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ (সাতক্ষীরা), আব্দুর রহীম (বাগেরহাট), আব্দুস সাত্তার (নওগাঁ), আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী (ময়মনসিংহ), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ক্বারী গোলাম মোস্তফা (ঢাকা), মোশাররফ হোসেন আকন্দ (ঢাকা), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম। এছাড়া মুহাতারাম আমীরে জামা‘আতের বড় ভাই সাবেক মুসলিম লীগ নেতা আব্দুল্লাহিল বাকী (সাতক্ষীরা) এক নাতিদীর্ঘ ওজস্বিনী ভাষণ প্রদান করেন।

বিদেশী মেহমানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আবু আব্দুর রহমান (লিবিয়া), আবু ছাবিত ছালিহ মুহাম্মাদ (সঊদী আরব), শায়খ আবু আব্দুল্লাহ (ইরাক), আবু খুবায়েব (ইরাক), আলী আব্দুল করীম (সুদান), শাযলী আবু আনাস (সুদান), শায়খ আব্দুল্লাহ নাছের রহমানী (পাকিস্তান), আব্দুল্লাহ সালাফী (ভারত) ও আব্দুল্লাহ আব্দুত তাওয়াব (নেপাল) প্রমুখ।

১০. ১৮ ও ১৯ শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ : এ বছর অনিবার্য কারণে চিরাচরিত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের পরিবর্তে শুক্রবার ও শনিবার তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পূর্ববর্তী বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবারে উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী। এই প্রথম নওদাপাড়া, রাজশাহীতে স্থাপিত নবনির্মিত ট্রাক টার্মিনালের বিশাল খোলা ময়দানে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ফলে সুশৃংখলভাবে সার্বিক আয়োজন সুসম্পন্ন হয়। দেশের অন্যূন ৪০টি যেলা থেকে আগত লক্ষাধিক কর্মী ও সাধারণ শ্রোতাদের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব দৃপ্তকণ্ঠে যাবতীয় ত্বাগূত বর্জন এবং সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আজকে আমাদের সমাজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ত্বাগূতের জয়ধ্বনি চলছে। আর বাংলার আহলেহাদীছরা তা দেখে চুপচাপ বসে আছে। আমাদের সচেতন হ’তে হবে। আমাদের সচেতনতার সময় এসেছে। আমরা অচেতন মানুষের ভিড় চাইনা। আমরা চাই এমন একদল সচেতন মুত্তাকী পরহেযগার ও যোগ্য মানুষ, যারা এদেশের সমাজ জীবনে বিপ্লব নিয়ে আসবে। আগে ব্যক্তি, তারপর পরিবার, এভাবেই সমাজ তথা রাষ্ট্র পরিবর্তন হবে’।

ইজতেমায় এবারেই প্রথমবারের মত পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য আলাদা প্যান্ডেল করা হয়। এছাড়া পেশাজীবি এবং মহিলাদের জন্য বিশেষ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরিশেষে জাতির উদ্দেশ্যে ৯ দফা প্রস্তাবনা পেশের মাধ্যমে ২ দিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটে।            

নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপরে সারগর্ভ বক্তব্য পেশ করেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলিম (দিনাজপুর), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বাগেরহাট), মাওলানা মুহাম্মাদ শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), আব্দুর রহীম (বাগেরহাট), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), মোশাররফ হোসেন আকন্দ (ঢাকা), মাওলানা মুছলেহুদ্দীন (ঢাকা), আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম (ঠাকুরগাঁও), মাওলানা আমানুল্লাহ (পাবনা), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা),  মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হালীম (সাতক্ষীরা) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম।

বিদেশী মেহমানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আবু আব্দুর রহমান (মুদীর, ইহয়াউত তুরাছ আল-ইসলামী, ঢাকা), আবু ফুযালা (লিবিয়া), আহমাদ আলী আর-রূমী (সঊদী আরব), শায়খ আহমাদ আশ-শায়খ (সঊদী আরব), শায়খ রহমাতুল্লাহ নাযির খান (মুদীর, হায়আতুল ইগাছা, সঊদী আরব), শায়খ মানছূর আব্দুর রহমান আল-কাযী (নায়েবে মুদীর, হারামাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সঊদী আরব), শায়খ হুসাইন আব্দুল্লাহ আল-ইয়ামী (সঊদী আরব), মুবারক ইবরাহীম আল-খালেদী, আত-ত্বাইয়েব বু মে‘রাফ প্রমুখ।

১১. ১৬ ও ১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০০১ : এবারের ইজতেমা হরতালের কারণে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবারে শুরু হয়। নওদাপাড়া, রাজশাহীর ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে আয়োজিত ইজতেমার উদ্বোধনী ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ‘পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে মানুষের সার্বিক জীবনকে আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহী পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে পরিচালনার গভীর প্রেরণাই হ’ল আহলেহাদীছ আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি। দেশে যে রাজনীতি, অর্থনীতি, শাসননীতি চালু আছে তা এক কথায় অনৈসলামী পদ্ধতি। যার ফলে সমাজের সর্বত্র অশান্তির দাবানল।’ তিনি দেশের সর্বত্র শান্তি-শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের আপামর জনসাধারণ এবং সরকারী ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ অহি-র বিধানের কাছে ফিরে আসার উদাত্ত আহবান জানান।

নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপরে সারগর্ভ বক্তব্য পেশ করেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ (কুমিল্লা), অধ্যাপক রেযাউল করীম (বগুড়া), মাওলানা মুহাম্মাদ শিহাবুদ্দীন সুন্নী (গাইবান্ধা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), মাওলানা মুছলেহুদ্দীন (ঢাকা), আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম (ঠাকুরগাঁও), মাওলানা আমানুল্লাহ (পাবনা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বাগেরহাট), অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), ড. লোকমান হোসেন (কুষ্টিয়া), ড. ওমর ফারূক (রাজশাহী), মুহাম্মাদ হারূণ (কুমিল্লা), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুল মালেক (ঝিনাইদহ), অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা),  মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হালীম (সাতক্ষীরা) মাওলানা বদরুয্যামান (সাতক্ষীরা), গোলাম আযম (নাটোর) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম।

ইজতেমার ২য় দিন বিশেষ যুবসমাবেশ, মহিলা সমাবেশ, সোনামণি সমাবেশ এবং ওলামা ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

১২. ২৮ই ফেব্রুয়ারী ও ১লা মার্চ ২০০২ : ৩য় বারের মত নওদাপাড়া, রাজশাহীর ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে তাবলীগী ইজতেমার আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ গতানুগতিক কোন আন্দোলন নয়। বরং এ আন্দোলন মানুষকে মানুষের রচিত বিভিন্ন মাযহাব ও তরীক্বার বেড়াজাল হ’তে মুক্ত করে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ার আহবান  জানায়। এ আন্দোলন সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলাদলি, মাযহাবী ফের্কাবন্দী ও পীর-মুরীদীর ভাগাভাগি ভুলে গিয়ে নিঃশর্তভাবে কেবলমাত্র পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নির্দেশকে মাথা পেতে নেওয়ার ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্য কামনা করে। এজন্য আজকের এই মহা সম্মেলনের একটাই মূল বক্তব্য হ’ল : ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। তিনি উক্ত লক্ষ্য হাছিলের জন্য নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক সমাজ বিপ্লবের উদ্দেশ্যে সকলকে ইমারতের অধীনে জামা‘আতবদ্ধ হওয়ার জন্য আহবান  জানান।

অতঃপর আমন্ত্রিত অতিথি ও বক্তাদের বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতাসমূহ শুরু হয়। একে একে বক্তব্য রাখেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), মাওলানা মুছলেহুদ্দীন (ঢাকা), আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম (ঠাকুরগাঁও), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বাগেরহাট), অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), ড. লোকমান হোসেন (কুষ্টিয়া), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুল মালেক (ঝিনাইদহ), শায়খ আব্দুর রশীদ (গাইবান্ধা), মাওলানা কফীলুদ্দীন (গাযীপুর), অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হালীম (সাতক্ষীরা), হাফেয আব্দুল আলীম (যশোর), মাওলানা বদরুয্যামান (সাতক্ষীরা), মাওলানা মুরাদ বিন আমজাদ (খুলনা), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (টাঙ্গাইল), মাওলানা ইবরাহীম (বগুড়া) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম। বিদেশী মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইহয়াউত তুরাছ, ঢাকা অফিসের মুদীর শায়খ আব্দুল বার্র আহমাদ আব্দুল লতীফ নাছির (জর্ডান)। 

ইজতেমার ২য় দিন পৃথক পৃথক প্যান্ডেলে যুবসমাবেশ, মহিলা সমাবেশ এবং ওলামা ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে মূল স্টেজে অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় ‘সোনামণি সংলাপ’। এবারের ইজতেমায় দিনাজপুর থেকে আগত জনৈক হিন্দু ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা ও গাজীপুর থেকে আগত ৪ ব্যক্তি আহলেহাদীছ হওয়ার ঘোষণা দেন। সুদূর সাতক্ষীরা থেকে সাইকেলযোগে ১০ ব্যক্তির ইজতেমায় অংশগ্রহণ ছিল এক চমকপ্রদ ঘটনা। পরিশেষে সরকারের উদ্দেশ্যে দশ দফা প্রস্তাবনা পেশের মাধ্যমে সম্মেলনের কার্যক্রমের যবনিকাপাত ঘটে। 

১৩. ১৩ ও ১৪ই মার্চ ২০০৩ : তাবলীগী ইজতেমার জন্য প্রায় স্থায়ী ময়দান হিসাবে পরিণত হওয়া নওদাপাড়া, রাজশাহীর ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে বরাবরের মত তাবলীগী ইজতেমা আয়োজিত হয়। উদ্বোধনী ভাষণে আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, আহলেহাদীছ-এর দাওয়াত কোন দলীয় দাওয়াত নয়, এটি নির্ভেজাল ইসলামের দাওয়াত। ইসলাম যেমন একটি পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত, আহলেহাদীছ আন্দোলন তেমনি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দাওয়াত। এ আন্দোলন সকল বনু আদমকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কর্তৃক সর্বশেষ অহি-র মাধ্যমে প্রেরিত চূড়ান্ত সত্য ও কল্যাণের দিকে ফিরে যাওয়ার আহবান জানায়। তিনি বলেন, অহি-র বিধান হল বিশ্ববিধান। অতএব সেই অহির-র বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিবেদনকারী ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ বিশ্বমানবতার মুক্তির আন্দোলন’।

সম্মেলনের ২য় দিন জঙ্গীবাদী অপতৎরতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আজ সশস্ত্র জিহাদের জোশ সৃষ্টি করে কিছু তরুণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চলছে। কারা এদের পিছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে, কারা এদেরকে অর্থ ও অস্ত্র দিচ্ছে, আসল তথ্য বের করে আনুন! তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় তরুণ সমাজকে সতর্ক করে বলেন, হে তরুণ সমাজ! নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। ইসলামের নামে ইসলামের শত্রুদের সৃষ্ট চক্রান্তজালে পা দিয়ো না’। 

ইজতেমায় পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত অনুযায়ী বক্তব্য পেশ করেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), মাওলানা মুছলেহুদ্দীন (ঢাকা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম (ঠাকুরগাঁও), মাওলানা আমানুল্লাহ (পাবনা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বাগেরহাট), অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), ড. লোকমান হোসেন (কুষ্টিয়া), ড. মুযাম্মিল আলী (কুষ্টিয়া), শায়খ আব্দুর রশীদ (গাইবান্ধা), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), ড. ইকরামুল ইসলাম (রাজশাহী), হাফেয আব্দুছ ছামাদ (ঢাকা), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), ক্বামারুযযামান বিন আব্দুল বারী (জামালপুর), আব্দুল ওয়াদূদ (কুমিল্লা), আযীযুর রহমান (যশোর), মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হালীম (সাতক্ষীরা), মাওলানা মতীউর রহমান (সাতক্ষীরা), মাওলানা যাকারিয়া (টাঙ্গাইল), হাফেয আব্দুল আলীম (যশোর) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম। বিদেশী মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইহয়াউত তুরাছ, ঢাকার সহকারী পরিচালক আবু আনাস শাযলী রাফ‘আত ওছমান (সুদান)।

বরাবরের মত পৃথক পৃথক স্থানে যুবসমাবেশ, মহিলা সমাবেশ ও ওলামা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং মূল স্টেজে সোনামণিদের আয়োজনে মাদকবিরোধী একটি আকর্ষণীয় সংলাপ পরিবেশিত হয়। গতবারের মত এ ইজতেমাতেও আমীরে জামা‘আতের বক্তব্যের পর স্টেজে এসে বিভিন্ন যেলার ২০ জন পুরুষ এবং মহিলা প্যান্ডেলে বেশ কয়েকজন মহিলা আহলেহাদীছ হওয়ার ঘোষণা দেন।

১৩. ১লা ও ২রা এপ্রিল ২০০৪ : ১৪শ বার্ষিক সম্মেলন যথারীতি রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্রের খরতাপে প্রচন্ড দাবদাহ সহ্য করে দেশের প্রায় সবকটি যেলা থেকে হাযার হাযার কর্মী ও সুধী ইজতেমায় উপস্থিত হন। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় উপস্থিতি প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় প্যান্ডেলে জায়গা সংকুলান হয়নি। উদ্বোধনী ভাষণে আমীরে জামা‘আত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ৫১২ বছর পূর্বে তথা ১৪৯২ খৃষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল নযীরবিহীন প্রতারণার মাধ্যমে খৃষ্টানরা ৭ লক্ষ মুসলিম নর-নারী ও শিশুকে নিরস্ত্র অবস্থায় জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। আজও তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলিম নিধন ও মুসলিম দেশসমূহের উপর সাম্রাজ্যবাদী দখল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ইহুদী-খৃষ্টান ও ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী লবীই আজকের পৃথিবীর শান্তি বিনষ্টকারী সেরা সন্ত্রাসী লবী। তিনি বলেন, মুসলিম নেতৃবৃন্দ আর কতকাল তাদের প্রতারণার ফাঁদে April fools' হয়ে থাকবেন? তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহর করুণ পরিণতি হেদায়াতের মূল উৎস পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মহান শিক্ষা হ’তে দূরে থাকারই ফল।

অতঃপর ১ম ও ২য় দিন বাদ এশা পূর্ণাঙ্গ ভাষণে তিনি যথাক্রমে ‘আহলেহাদীছ’-এর পরিচিতি এবং ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর সমাজ সংস্কার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন।

অতঃপর পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত অনুযায়ী বক্তব্য পেশ করেন শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), ড. মুছলেহুদ্দীন (ঢাকা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বাগেরহাট), অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), ড. লোকমান হোসেন (কুষ্টিয়া), ড. মুযাম্মিল আলী (কুষ্টিয়া), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলমগীর হুসাইন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), ড. ইকরামুল ইসলাম (রাজশাহী), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম (রাজশাহী), মাওলানা বদরুয্যামান (সাতক্ষীরা), মাওলানা কফীলুদ্দীন বিন আমীন (গাযীপুর), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (ঢাকা), হাফেয আখতার (নওগাঁ), হাফেয আব্দুল আলীম (যশোর), মুহাম্মাদ ইবরাহীম (রংপুর) প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম। বিদেশী মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইহয়াউত তুরাছ, ঢাকার সহকারী পরিচালক আবু আনাস শাযলী রাফ‘আত ওছমান (সুদান)।

নিয়মিত প্রোগ্রাম ওলামা সমাবেশ, যুবসমাবেশ, মহিলা সমাবেশ ছাড়াও এবার ইজতেমার ২য় দিন দারুল ইমারতে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত তাঁর বক্তব্যে আহলেহাদীছ আন্দোলনের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করে বলেন, ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহপ্রেরিত সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। অতএব ইসলামকে সকল সমস্যায় একমাত্র সমাধান হিসাবে গ্রহণ করতে হবে এবং প্রচলিত দ্বি-মুখী চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে ইসলামী আইন ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।

উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্র থেকে ইজতেমার খবর একাধিকবার প্রচারিত হয়।

এবারের ইজতেমায় প্রথমবারের মত ফরিদপুরের আটরশি থেকে ৩০ জন ভাই গাড়ী রিজার্ভ করে সম্মেলনে যোগদান করেন। যারা প্রায় সকলেই ইতিপূর্বে আটরশি পীরের মুরীদ ছিলেন। কাফেলার প্রধান জনাব আব্দুছ ছামাদের পিতা স্বয়ং আটরশি পীরের দীর্ঘদিনের খাদেম ছিলেন। ‘আত-তাহরীক’ পত্রিকাসহ সংগঠনের অন্যান্য বই-পত্রের মাধ্যমে ছহীহ আক্বীদার সন্ধান পেয়ে তারা যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত থেকে তওবা করে আহলেহাদীছ হন। ইজতেমায় এসে তারা মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের হাতে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা ও মেহেরপুর থেকে মোট ৩২ জন কর্মী সাইকেলযোগে একটানা প্রায় ৩০০-৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইজতেমায় যোগদান করেন।    

১৪. ২৪ ও ২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৫ : রাজশাহীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে আয়োজিত এবারের তাবলীগী ইজতেমার নির্ধারিত দিন ছিল ২৪ ও ২৫ শে ফেব্রুয়ারী। কিন্তু ইজতেমার মাত্র ২দিন পূর্বে ২২শে ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দারুল ইমারত আহলেহাদীছ থেকে অকস্মাৎ বিনা ওয়ারেন্টে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবসহ নায়েবে আমীর শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নূরুল ইসলাম এবং ‘যুবসংঘ’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক এ এস এম আযীযুল্লাহকে। পরদিন প্রশাসন তাবলীগী ইজতেমার উপর ১৪৪ ধারা জারি করে। ইজতেমা প্যান্ডেলে যেয়ে পুলিশ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং অর্ধনির্মিত প্যান্ডেল ভেঙ্গে দিয়ে সবকিছু উঠিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করে ডেকোরেটর কর্মীদের। নওদাপাড়া মারকায ও পাশর্ববর্তী এলাকাসমূহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাবের যুদ্ধংদেহী মহড়ায় ঘেরাও হয়ে পড়ে। নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয় দারুল ইমারত আহলেহাদীছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েন। এমন অস্থির হতবুদ্ধিকর মুহূর্তেও যথারীতি ইজতেমা আয়োজনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি এবং গ্রেফতারির হুমকি প্রদান করা হয়। ফলে সার্বিক প্রস্ত্ততি সম্পন্নের পরও তাবলীগী ইজতেমা বাতিল হয়ে যায়। ইতিমধ্যে নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় দেশজুড়ে আহলেহাদীছদের মাঝে এক বিরাট আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে অনেক মানুষ ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে বেদনাহত চিত্তে ফিরে যান।

১৫. ১৬ ও ১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০০৬ : পূর্ববর্তী বছর সরকারের রুদ্র রোষে ইজতেমা বাতিল হওয়ার পর পুণরায় রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়াস্থ ট্রাক টার্মিনালে ১৬শ বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার আয়োজন করা হয়। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ১ বছর যাবৎ কারাবন্দী থাকায় এবং বিগত বছর ইজতেমা বাতিল হয়ে যাওয়ায় এবারের ইজতেমায় বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মত জনসমাগম হয়। উদ্বোধনী ভাষণের পূর্বেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ইজতেমা ময়দান। লক্ষাধিক কর্মী ও সুধীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও মুহুর্মুহু তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয় নওদাপাড়ার আকাশ-বাতাস। চতুর্দিকে এক স্বর্গীয় আভা ছড়িয়ে পড়ে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অমিয় সুধা পানের উদগ্র বাসনা এবং ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সীমাহীন নির্যাতনের শিকার মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব সহ ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবীতে দেশের প্রায় সকল যেলা থেকে হাযার হাযার মহিলা-পুরুষ কর্মী ও সুধী রিজার্ভ বাস ও অন্যান্য যানবাহনে করে ইজতেমায় যোগদান করেন। শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতি বিশাল ইজতেমা ময়দানের প্রতিটি প্রান্তকে গভীর শূন্যতার ছায়ায় আচ্ছাদিত করে রেখেছিল। কিন্তু আবেগাপ্লুত জনতার হৃদয় নিংড়ানো তাকবীর ধ্বনি আর নেতৃবৃন্দের মুক্তির শ্লোগানে ইজতেমা ময়দান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা মুখর হয়ে উঠে। ফজরের জামা‘আতে নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য ‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করা হয়।

উদ্বোধনী ভাষণে সংগঠনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমীর ডঃ মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন জ্বালাময়ী ভাষায় বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন এবং ছহীহ হাদীছের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বাস্তবায়নের এক দৃপ্ত কাফেলার নাম। বর্তমান হানাহানির বিশ্বে অহি-র বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণই কেবলমাত্র শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। তিনি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারীবার্তা উচ্চারণ করে বলেন, ‘আল্লাহর আইন’ প্রতিষ্ঠার নামে যারা দেশে ভয়াবহ নৈরাজ্য ও নাশকতা চালাচ্ছে, তারা ইসলামের অনুসারী নয় বরং এরা ইসলামের শত্রু, দেশ ও জাতির দুশমন। তিনি এধরনের চরমপন্থী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহবান এবং এদের নেপথ্য নায়কদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক  শাস্তির দাবী জানান। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, বোমাবাজদের ধরার নামে নিরপরাধ আলেমদেরকে হয়রানি করে সরকার চরম অন্যায় করেছে। এজন্য সরকারকে অবশ্যই দুঃখজনক পরিণামফল ভোগ করতে হবে। তিনি অবিলম্বে আমীরে জামা‘আতের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানিয়ে বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এবং ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র কঠোর অবস্থান জাতির কাছে আজ অত্যন্ত পরিষ্কার। তদুপরি সরকার নিরপরাধ আহলেহাদীছ নেতৃবৃন্দকে এক বছর যাবৎ নির্মমভাবে হয়রানি করে চলেছে। তিনি মুহতারাম আমীরে জামা‘আতসহ গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবীতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীকে আহবান  জানান। এ সময় উপস্থিত জনতার মুহুর্মুহু শ্লোগানে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়।

অতঃপর ইজতেমায় পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ের উপর বক্তব্য পেশ করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), মাওলানা এস.এম. আব্দুল লতীফ (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা গোলাম আযম (গাইবান্ধা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (রাজশাহী), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), ডঃ মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), ‘যুবসংঘ’-এর ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ), সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদূদ (কুমিল্লা), প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুযাফফর বিন মুহসিন (রাজশাহী), মাওলানা সাঈদুর রহমান (রাজশাহী), মাওলানা আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম (ঠাকুরগাঁও), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা মুনীরুদ্দীন (খুলনা), মাওলানা কফীলুদ্দীন বিন আমীন (গাযীপুর), হাফেয আখতার মাদানী (নওগাঁ), মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী (নওগাঁ), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (টাঙ্গাইল), মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন (কুমিল্লা), মুহাম্মাদ তাসলীম সরকার (কুমিল্লা), মাওলানা ইবরাহীম বিন রইসুদ্দীন (বগুড়া), মাওলানা আবুবকর ছিদ্দীক (রাজশাহী), মাওলানা মুরাদ বিন আমজাদ (খুলনা), মাওলানা আব্দুল আলীম (ঝিনাইদহ), মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হালীম (সাতক্ষীরা), হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মা‘ছূম (ঢাকা), মাওলানা বদরুযযামান (সাতক্ষীরা) প্রমুখ। 

এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের জ্যেষ্ঠ পুত্র আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ. কে. এম. খায়রুযযামান লিটন এবং ‘বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব মিজানুর রহমান মিনু (এমপি)।

পরিশেষে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের মুক্তির দাবীসহ ১০ দফা প্রস্তাবনা সরকারের নিকট পেশ করা হয়।

১৬. ১ ও ২ মার্চ ২০০৭ : ১৭শ বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা যথারীতি রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়ায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক কর্মী ও সুধী ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার ফজরের কিছু পূর্বে শুরু হওয়া ঝড়ে স্থানীয় ট্রাক টার্মিনালে নির্মিত ইজতেমার প্যান্ডেল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বৃষ্টিতে মাঠ প্লাবিত হয়ে যায়। সারাদিন কর্মীদের প্রচেষ্টায় পুনরায় প্যান্ডেল ঠিক করে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু খারাপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে ২য় দিন সকালে ইজতেমার কার্যক্রম দারুল হাদীছ বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে স্থানান্তর করা হয়।

১৬ মাস কারাঅন্তরীণ থাকার পর সদ্য কারামুক্ত অধ্যাপক নূরুল ইসলামের স্বাগত ভাষণ ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমীর শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফীর উদ্বোধনী ভাষণের মধ্য দিয়ে তাবলীগী ইজতেমার কার্যক্রম যথারীতি শুরু হয়। অতঃপর পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর নায়েবে আমীর ডঃ মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন (ঢাকা), অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা কফীলুদ্দীন (গাযীপুর), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা মুনীরুদ্দীন (খুলনা), হাফেয আখতার মাদানী (নওগাঁ), আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হালীম (সাতক্ষীরা), ইবরাহীম বিন রইসুদ্দীন (বগুড়া), আবু বকর ছিদ্দীক্ব (রাজশাহী), সাইফুল ইসলাম ইসলাম বিন হাবীব (ঢাকা) মাওলানা সাঈদুর রহমান (রাজশাহী) ও মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী)।

বক্তাগণ সবাই মূলতঃ মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের মুক্তির দাবীতে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকটে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের আশু মুক্তি দাবী করে বলেন, বিগত সরকার জাতির সাথে জঘন্য প্রতারণার মাধ্যমে তাঁকে গ্রেফতার করে যারপরনাই হয়রানি করেছে। গোটা আহলেহাদীছ জামা‘আতকে অন্যায়ভাবে সন্ত্রস্ত করেছে। কিন্তু অদ্যাবধি তাঁর বিরুদ্ধে আরোপিত কোন অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হয়নি। এরপরও বিনা বিচারে দীর্ঘ দুই বছর যাবত তাঁকে বন্দী রাখা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। তারা অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবী জানান।

অবশেষে জুম‘আর ছালাতের পর এক সংক্ষিপ্ত সমাপনী ভাষণের মাধ্যমে ইজতেমা মুলতবী ঘোষণা করা হয়। ঝড়-বৃষ্টি থেকে আশ্রয় গ্রহণের জন্য চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল ব্যবস্থাপনা থাকায় উপস্থিত মহিলা-পুরুষ সকলেই এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। কিন্তু কারো মুখে ছিল না কোন অভাব-অভিযোগের কথা। বরং হাসিমুখে এ দূর্যোগঅবস্থাকে স্বাভাবিকভাবেই বরণ করে নেন কেবল ঈমানী তাকীদে। হক্বের পথে অবিচল থাকার জন্য যে দৃঢ় মনোবৃত্তি, যে ত্যাগ-তিতীক্ষা ও অগাধ নিষ্ঠার প্রয়োজন তার এক অসাধারণ চিত্রই বরং ফুটে উঠেছিল এই দুর্যোগমুহূর্তে। যাবতীয় কষ্ট ছাপিয়ে সকলের মনেই যেন কেবল আমীরে জামা‘আতের মুক্তি না হওয়ার বিষয়টি আকুলি-বিকzুল করছিল।

১৭. ২৮ ও ২৯শে ফেব্রুয়ারী ২০০৮ : ১৮শ’ বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা এবার রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে নওদাপাড়াস্থ ট্রাক টার্মিনালের পরিবর্তে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান মহিলা সালাফিয়া মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী ভাষণে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমীর শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন নতুন কিছু নয়। বরং এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছে রাসূল (ছাঃ)-এর যুগ থেকে। রাসূলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী হক্বপন্থী এই জামা‘আত প্রতি যুগেই সক্রিয় থেকেছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই ক্রমধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন কোন গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির চিন্তাধারা প্রসূত আন্দোলন নয়। বরং এ আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী তাদের সার্বিক জীবন পরিচালনার আন্দোলন। তিনি বলেন, এ আন্দোলন জিহাদের নামে দেশবিরোধী অপতৎপরতার তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানায়। তিনি দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী ‘আন্দোলন’-এর মুহতারাম আমীর প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর জন্য সকলের নিকট দো‘আ কামনা করেন এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে মুক্তি দানের জন্য তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।

দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমায় পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ের উপর বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর নায়েবে আমীর ডঃ মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন (ঢাকা), অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), মাওলানা গোলাম আযম (গাইবান্ধা), মাওলানা এস. এম. আব্দুল লতীফ (সিরাজগঞ্জ), ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি এ এস এম আযীযুল্লাহ (সাতক্ষীরা), মাওলানা আবু তাহের (গাইবান্ধা), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আনীসুর রহমান (ময়মনসিংহ), এ্যাডভোকেট যিল্লুর রহমান (সাতক্ষীরা), আত-তাহরীক সম্পাদক ডঃ মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা কফীলুদ্দীন বিন আমীন (গাযীপুর), মাওলানা বেলালুদ্দীন (পাবনা) মাওলানা মুনীরুদ্দীন (খুলনা), হাফেয আব্দুছ ছামাদ মাদানী (ঢাকা), মাওলানা সাঈদুর রহমান (রাজশাহী), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), হাফেয আব্দুল আলীম (ঝিনাইদহ), মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হালীম (সাতক্ষীরা), মাওলানা আবুবকর ছিদ্দীক (রাজশাহী), মাওলানা বদরুযযামান (সাতক্ষীরা), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (টাঙ্গাইল), মাওলানা রফীকুল ইসলাম (রাজশাহী), মাওলানা আব্দুল মালেক (টাঙ্গাইল), হাফেয মাওলানা আব্দুল হামীদ (ঢাকা) প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন আমীরে জামা‘আতের জ্যেষ্ঠপুত্র আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব।

এবারের ইজতেমায় পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের উপচে পড়া ভীড় ছিল লক্ষ্যণীয়। ফলে পৃথকভাবে নির্মিত দু’টি প্যান্ডেলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে মারকায কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।

১৮. ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ : দীর্ঘ চার বছর পর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড: মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব -এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এবারের তাবলীগী ইজতেমায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাযার হাযার কর্মী ও সুধী বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। জনসমুদ্রে পরিণত হয় ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকা। সরকারের মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ৩ বছর ৬ মাস ৬ দিন কারাবন্দী অবস্থায় থেকে মুক্তিলাভের পর এটিই ছিল তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম তাবলীগী ইজতেমা।

মুহতারাম আমীরে জামা‘আত উদ্বোধনী ভাষণে দীর্ঘ ৪ বছর পর পুনরায় তাবলীগী ইজতেমায় যোগদান করতে পারায় মহান আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করেন। অতঃপর ২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী ১৫তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার আগের দিন গভীর রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কেন্দ্রীয় ৪ নেতার গ্রেফতার ও ৩ বছর ৬ মাস ৬ দিন কারাভোগের স্মৃতিচারণ করেন। সাথে সাথে তারপর থেকে বিভিন্ন যেলার প্রায় ৪০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারা নির্যাতনের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, কেবল আমার উপরেই ৬টি যেলায় মোট ১০টি মিথ্যা মামলা চাপানো হয়। যার ৪টি আজও বিচারাধীন। সেদিনের সেই আতংকময় পরিবেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘আন্দোলন’, ‘যুবসংঘ’ ও ‘সোনামণি’-এর নেতা-কর্মীরা যেভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে অব্যাহত রেখেছিলেন এবং আমাদের কারামুক্তির জন্য অসংখ্য মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন, বক্তৃতা-বিবৃতি ও সভা-সম্মেলন করে যুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন, দেশ-বিদেশের যে সকল ভাই ও বোনেরা আমাদের জন্য সময়-শ্রম, অর্থ, মেধা ও পরামর্শ দিয়ে সাধ্যমত যে যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন এবং আমাদের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আকুতিভরা প্রার্থনা করেছেন, তাদের সবার প্রতি আমি কারা নির্যাতিতদের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি এবং আল্লাহর নিকট তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান কামনা করছি।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে পোশাকে আমি জেলখানায় গিয়েছিলাম, সেই পোশাকেই আমি আপনাদের সামনে উদ্বোধনী ভাষণে হাযির হয়েছি। কিন্তু আমাদের উপর যারা অত্যাচার করেছিল আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আমাদের বের হবার আগেই তারা জেলখানায় প্রবেশ করেছেন। অতএব হে নেতারা সাবধান হয়ে যাও! আল্লাহকে ভয় করো’।

অতঃপর যথারীতি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা রাখেন অধ্যাপক নূরুল ইসলাম (কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, ‘আন্দোলন’) অধ্যাপক মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম (যশোর), মাওলানা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ (রাজশাহী), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), ডঃ মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা) ও মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), প্রফেসর শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান, প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মুয্যাম্মিল আলী মাওলানা আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম (ঠাকুরগাঁও), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), ড. এ. এস. এম. আযীযুল্লাহ (কেন্দ্রীয় সভাপতি, ‘যুবসংঘ’), শিহাবুদ্দীন আহমাদ (পরিচালক ‘সোনামণি’), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (ঢাকা)। এতদ্ব্যতীত বক্তব্য রাখেন মাওলানা রফীকুল ইসলাম (রাজশাহী), মাওলানা আবুবকর (রাজশাহী), মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-মামূন (নরসিংদী), মাওলানা মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা বদরুযযামান (সাতক্ষীরা) প্রমুখ। এছাড়া অতিথি বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম, এনটিভির ইসলামী অনুষ্ঠান বিভাগের পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ।

মাওলানা আবুল কালাম আযাদ প্রথমবারের মত এই ইজতেমায় যোগদান করে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে যেয়ে বলেন, আমি মনে করি সর্বাগ্রে আক্বীদার সংশোধন প্রয়োজন। কারণ আক্বীদাই হ’ল মানব জীবনের প্রকৃত ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন, যারা আহলেহাদীছ তারা শিরক ও বিদ‘আত হ’তে মুক্ত মানুষ। অন্য কারো মধ্যে এটা প্রতিরক্ষার সুন্দর ব্যবস্থা নেই, যেমনটি আহলেহাদীছদের মধ্যে রয়েছে। তাই আপনাদের দায়িত্ব হবে এদেশের ১৪ কোটি মানুষের কাছে ছহীহ আক্বীদার দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহ আপনাদেরকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর যোগ্য নেতৃত্ব হচ্ছে আল্লাহর সবচেয়ে বড় নে‘মত। সেটি কালে-ভদ্রে মানুষ পেয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই পায় না। সেটি আল্লাহ আপনাদের উপহার দিয়েছেন। এটি যাতে কলুষিত না হয়, সে জন্য আপনাদের শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এখানে এসে বুঝতে পারলাম আপনারা কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করে গণতান্ত্রিক রাজনীতির আশ্রয় গ্রহণ করতে চান। যদি তাই হয় তাহলে আপনারা ভুল করবেন। কেননা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র একটি দুনিয়াবী মতবাদ মাত্র। ইতিহাসে দেখা যায় কোন মানবরচিত মতবাদ দুইশত বছরের বেশী টিকে থাকেনি। আমিও ধারণা করি মানব রচিত অন্যান্য মতবাদের মত গণতন্ত্রও বর্তমান বিশ্বে আর মাত্র ৬০-৭০ বছর খুব জোর টিকে থাকবে। তারপর এই পৃথিবী থেকে অন্যান্য মতবাদের মত গণতন্ত্র উচ্ছেদ হবে। কিন্তু এলাহী বিধান কিয়ামত পর্যন্ত স্বগৌরবে আপন মহিমায় উড্ডীন থাকবে।

তাবলীগী ইজতেমা হ’তে ফেরার পথে ১৪ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকাল পৌনে ৭-টায় রাজশাহীর পুঠিয়া থানাধীন ঝলমলিয়ার নিকটে সেনবাগ নামক স্থানে সকাল বেলার ঘনকুয়াশায় দ্রুতগামী ট্রাকের সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় সাতক্ষীরার মুছল্লীবাহী ৫৬নং গাড়ীটি। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বাসের চালক কালিগঞ্জের সাতপুর গ্রামের হাফীযুল ইসলাম রিপন (৩০)। এছাড়া পুঠিয়া থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর মৃত্যুবরণ করেন সাতক্ষীরার বাঁকাল নিবাসী মুহাম্মাদ মুযাফফর ঢালী (৫৫) এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পথে মারা যান তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৪৫)। গুরুতরভাবে আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হয় আরো ২১ জন। যাদের অধিকাংশের হাত-পা ভেঙ্গে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান মারাত্মকভাবে যখম হয়। ফলে সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে কর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। এই প্রথম ইজতেমায় আগত কোন গাড়ি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় নিপতিত হয়।

১৯. ১লা ও ২রা এপ্রিল ২০১০ : ২০তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা বিভিন্ন বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও কুচক্রী মহলের সীমাহীন ষড়যন্ত্রের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে প্রথম নির্ধারিত তারিখ ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারীর পরিবর্তে ১ ও ২ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে নওদাপাড়াস্থ ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এবারে মূল ইজতেমাস্থল পরিবর্ধন করে পরিকল্পনা মাফিক মূল প্যান্ডেল থেকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দূরে মহিলা মাদরাসা ময়দানে মহিলা প্যান্ডেল করা হয় এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়।

মুহতারাম আমীরে জামা‘আত উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, আজ পৃথিবীর দিকে দিকে মুসলিম নির্যাতন চলছে। অথচ তাদেরই করায়ত্ব মিডিয়াগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। জঙ্গী জঙ্গী বলে ধোয়া তুলছে। ইহুদী-খৃষ্টানরা মুসলিম ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তীনের উপর হামলা করে লক্ষ লক্ষ মা-বোন এবং নিষ্পাপ শিশুদেরকে হত্যা করছে। অথচ তাতে তারা জঙ্গী হয় না; কিন্তু ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তীনের মানুষ একটা ঢিল মারলে তারা জঙ্গী হয়ে যায়। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের ২০ আগষ্টে দিল্লী বাহিনী কাশ্মীর দখল করে নিল। আর এর প্রতিবাদে কাশ্মীরীরা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করলে তারা হয়ে গেল জঙ্গী। পৃথিবীর সর্বত্র দ্বীনদার মুসলমানদের জঙ্গী বলে তাদের উপর হামলা করার জন্য যে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষকে মানুষের পূজা করতে বলি না। আমরা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করতে বলি। সারা পৃথিবী জুড়ে দ্বন্দ্ব চলছে যে, আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, না মানুষ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক? এ দ্বন্দ্বের যেদিন ফায়ছালা হবে সেদিন আহলেহাদীছ আন্দোলন পৃথিবীব্যাপী তার জয়ের চেহারা দেখবে ইনশাআল্লাহ। আমরা ততদিন পর্যন্ত ক্ষান্ত হব না যতদিন না দেখব যে, বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা বিরাজ করছে। আমরা ততদিন পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না, ক্লান্ত হব না, যতদিন না দেখব যে, আমার নবীর রেখে যাওয়া নবুওয়াত ও রেসালত, কুরআন ও হাদীছ সম্মানের সাথে প্রতিটি ঘরে ঘরে বরিত ও পালিত হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত সেটা না হবে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রতিটি কর্মী যেখানেই থাক, সব জায়গায় সে একই দাওয়াত দিয়ে যাবে যে, আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সার্বিক জীবন গড়ি।

অতঃপর পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর দলীলভিত্তিক জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), অধ্যাপক মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম (যশোর), মাওলানা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ (রাজশাহী), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), কুমিল্লা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহ, সাতক্ষীরা যেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (কেন্দ্রীয় সভাপতি, যুবসংঘ), ড. এ. এস. এম. আযীযুল্লাহ (সাতক্ষীরা), মুযাফফর বিন মুহসিন (রাজশাহী), ‘সোনামণি’র পরিচালক শিহাবুদ্দীন আহমাদ (বগুড়া), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), মাওলানা রফীকুল ইসলাম (রাজশাহী), মাওলানা আবুবকর (রাজশাহী) প্রমুখ। 

২০. ১৭ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১১ : ২১তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে অনুষ্ঠিত হয়। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এবারের তাবলীগী ইজতেমায় মুছল্লীদের অংশগ্রহণ ছিল বিগত বিশ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। ফলে প্যান্ডেল উপচে খোলা আকাশের নীচে বসে প্রচন্ড শীতে কষ্ট স্বীকার করে বক্তব্য শুনতে হয়েছে বহু শ্রোতাকে। মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল ধারণাতীত। ফলে ইজতেমার ২য় দিন উভয় প্যান্ডেলই নতুনভাবে বাড়াতে হয়। গতবারের মতই মহিলা প্যান্ডেল করা হয় মহিলা সালাফিয়া মাদরাসা ময়দানে এবং স্টেজ থেকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। দেশের সকল প্রান্ত থেকে আসা হক্বপিয়াসী মানুষের ঢলের মাঝে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শিরক অধ্যুষিত অঞ্চল চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে আগত রিজার্ভ বাসটি, যা ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে যে কোন ইজতেমায় আসা প্রথম কোন গাড়ী।     

মুহতারাম আমীরে জামা‘আত তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে Islam এবং Secular দাওয়াতের মধ্যে সংঘাত চলছে। অপরদিকে আমরা যারা ইসলামী দাওয়াত দিচ্ছি, আমাদের মধ্যে সংঘাত চলছে Pure এবং Popular-এর। আর Popular এবং Secular মিলিতভাবে Pure দাওয়াতকে গলা টিপে হত্যা করতে চাচ্ছে। তাই আমাদের ও আমাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও সরকারী নির্যাতন এরই ধারাবাহিকতা মাত্র।

তিনি বলেন, পিওর ইসলামের সাথে পপুলার ও সেক্যুলারের এই সংঘাত বিগত যুগেও ছিল, বর্তমানেও রয়েছে এবং আগামী দিনেও থাকবে। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পিওর ইসলাম কিয়ামত অবধি টিকে থাকবে এবং এ দাওয়াতই আল্লাহর নিকটে কবুল হবে। আহলেহাদীছ আন্দোলন এই পিওর ইসলামের দাওয়াত নিয়েই ময়দানে কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ সহায় হলে এ দাওয়াত পৃথিবীর বুকে একদিন আপন মহিমায় বিজয়ীর দন্ড হাতে নেবেই ইনশাআল্লাহ। এজন্য তিনি প্রত্যেককে স্ব স্ব আক্বীদা ও আমলের উপর দৃঢ় থেকে দাওয়াতের ময়দানে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান।

অতঃপর পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর একে একে দলীলভিত্তিক বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), অধ্যাপক মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম (যশোর), ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), মুযাফফর বিন মুহসিন (রাজশাহী), ড. এ. এস. এম. আযীযুল্লাহ (সাতক্ষীরা), ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ), ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), মাওলানা আমানুল­াহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (ঢাকা), মাওলানা মুহাম্মাদ ছফিউল্ল­াহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী (নওগাঁ), মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), মাওলানা রফীকুল ইসলাম (রাজশাহী), মাওলানা আবুবকর ছিদ্দীক (রাজশাহী), মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম (কুমিল­া), মাওলানা বদরুযযামান (সাতক্ষীরা), আব্দুর রশীদ আখতার (মেহেরপুর), আব্দুল্লাহ যামান (কিশোরগঞ্জ) প্রমুখ।

দীর্ঘ ২১ বছরের ধারাবাহিকতায় ২২তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা’১২ অনুষ্ঠিত হ’তে যাচ্ছে এবার ২৩ ও ২৪শে ফেব্রুয়ারী। ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়ে গেল প্রায় সিকি-শতাব্দীকাল। দীর্ঘ এই যাত্রাকালে বহু মানুষ এখানে সত্যের খোঁজে এসে সত্যপথের পথিক হয়ে ধন্য হয়েছেন। সুদূর সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশালের অজপাড়াগায়ে আজ এ ইজতেমার দাওয়াত পৌঁছে গিয়েছে। ফরিদপুরের আটরশির পীরভক্তরা শিরক-বিদ‘আতের জঞ্জাল ছিন্ন করে মুক্তির পথে ছুটে এসেছেন। আবার বিপরীত চিত্রে আমরা দেখেছি নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অনেকেই এ পথ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন, বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে ব্যর্থ হয়ে আন্দোলনের মূলসূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে গেছেন অনেক সাধারণ কর্মী, এমনকি সংগঠনের অগ্রবর্তী পতাকাবাহীদেরও অনেকে পথচ্যুত হয়েছেন, আবার দুনিয়ার বুক থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেছেন অনেকে, যাদের সরব উপস্থিতি একসময় ইজতেমার ময়দানকে মুখরিত করে রাখত। আজ তারা উপস্থিত নেই, কিন্তু হক্বের পথে তাওহীদের নিশান উড়িয়ে যে তাবলীগী ইজতেমার যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল তার সহযাত্রীর সংখ্যায় কখনই ভাটার টান পড়েনি। বরং বৃদ্ধি পেয়েছে শত শত গুণে, প্রসারিত হয়েছে দিগ্দিগন্তের প্রান্তে প্রান্তে। নবপ্রাণের ছোঁয়ায় নবজোয়ারের মূর্ছনায় প্রতিবারই উদ্বেলিত হয়েছে ইজতেমার প্রাঙ্গন। হক্বপিয়াসী মানুষের একান্ত আপন গন্তব্য হয়ে উঠেছে এই ইজতেমা। যেখানে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিশুদ্ধ শ্বেতশুভ্র আলোকমালায় পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জাগতিক শত ব্যস্ততা ফেলে তারা এখানে ছুটে আসেন ব্যাকুলচিত্তে।

আল্লাহর অশেষ রহমত যে বাংলার বুকে নিরংকুশ তাওহীদী দাওয়াতের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে তিনি এই তাবলীগী ইজতেমাকে অদ্যাবধি নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকিয়ে রেখেছেন। শুধু তা-ই নয়, আপন স্বকীয়তা নিয়ে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের মাধুর্যে তাবলীগী ইজতেমা আজ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। নির্ভেজাল তাওহীদের অনুসারীদের এই ইজতেমার সাথে এ দেশের আর সকল ইজতেমার যে মৌলিক পার্থক্য তা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্নদ্রষ্টা মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের কণ্ঠেই ফুটে উঠেছে ২০০৩ সালের ইজতেমার উদ্বোধনী ভাষণে-‘শেষনবীর রেখে যাওয়া অহি-র বিধান অনুযায়ী নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গড়ে তোলাই এ আন্দোলনের কর্মীদের একমাত্র সাধনা। আর এটাই তো অন্যান্যদের তাবলীগী ইজতেমার সাথে অত্র তাবলীগী ইজতেমার বৈশিষ্ট্যগত ও আদর্শগত পার্থক্যের মানদন্ড।’

রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে নওদাপাড়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই ঐতিহ্যবাহী তাবলীগী ইজতেমা আরও কতকালব্যাপী স্থাায়ত্ব পাবে তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু আগামী দিনের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখার এক বৃহৎ উদ্দীপনাকেন্দ্র হিসাবে এ ইজতেমা যুগ যুগ ধরে স্বমহিমায় টিকে থাকুক এটাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা। আল্লাহর রহমত থাকলে এবং বাংলার বুকে আহলেহাদীছ আন্দোলনের যে জোয়ার উঠেছে তা বাধাপ্রাপ্ত না হলে এই ইজতেমা হয়ত আপন মহিমায় অব্যাহত থাকবে অনির্দিষ্টকাল ধরে। ইনশাআল্লাহ! আর পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নিঃশর্ত অনুসারীদের চক্ষুশীতলকারী মিলনকেন্দ্র হিসাবে উত্তরোত্তর এ দেশের মানুষকে ন্যায় ও সত্যের বিশুদ্ধ বার্তা পৌঁছে দিতে থাকবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন আহলেহাদীছ আন্দোলনের জন্য এ ইজতেমাকে কবুল করে নিন এবং এর মাধ্যমে অহি-র বিধান তথা সত্য ও ন্যায়ের চিরন্তন আলোকমশালকে এ দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্র প্রজ্জ্বলিত করার তাওফীক দান করুন। আমীন!        






আরও
আরও
.