নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল। নারিকেলের ইংরেজি নাম Coconut। নারিকেলের বহুবিধ ব্যবহারের জন্য নারিকেল গাছকে কল্পবৃক্ষ বলা হয়। ঔষধি গুণসম্পন্ন পানীয় হিসাবে ব্যবহারের পাশাপাশি নারিকেল দিয়ে বিভিন্ন রকম সুস্বাদু খাদ্য তৈরি হয় যেমন- পিঠা, মোয়া ইত্যাদি।

সার প্রয়োগ :

নারিকেল গাছের গোড়ায় মাটিতে পানি ও খাবার কম থাকলে কচি ডাব ঝরে পড়ে। পটাশিয়ামের অভাবে কচি ডাব বেশী ঝরে। এক্ষেত্রে মাটিতে পটাশিয়াম ও নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করতে হবে। নারিকেল গাছের গোড়ায় চারদিকে ১.৮ মিটার দূরে বৃত্তাকার গর্ত করে ইউরিয়া ৪ কেজি, এমওপি ৬ কেজি, টিএসপি ১ কেজি এবং সামান্য লবণ দিতে হবে। তবে লবণাক্ত এলাকায় লবণ দেয়া যাবে না।

আগাছা নিড়ানি :

নারিকেল গাছের কিছু নিয়মিত পরিচর্যা করলে গাছের পুষ্টি উপাদানে ভারসাম্য আসে, পোকা ও রোগবালাই কম হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে আছে নিয়মিত নারিকেল গাছ বাছাই বা গাছ ঝাড়া, সুষম সার ও সেচ প্রয়োগ, ইঁদুর দমন এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা।

ঝুনা নারিকেল বা ডাব সংগ্রহের সময় গাছের মাথা পরিষ্কার করে দেয়া ভালো। সাথে সাথে মরা ও হলুদ পাতা ফেলে দিতে হবে।

পোকামাকড় :

ক) নারিকেল গাছ ও ফলের জন্য ক্ষতিকর হ’ল পোকামাকড়, রোগবালাই ও ইঁদুর। পোকামাকড়ের মধ্যে আছে প্রধানত গন্ডার পোকা, লাল কেড়ি পোকা ও উইপোকা।

খ) গন্ডার পোকা ও লাল কেড়ি পোকা গাছের মাথায় আক্রমণ করে কচি অংশে ছিদ্র করে ভেতরের নরম অংশ খেতে থাকে। ফল গাছের মাথায় অসংখ্য ছিদ্র দেখা যায়।

গ) আক্রমণ বেশী হ’লে গাছের মাথা শুকিয়ে যায় ও গাছ মারা যায়। লাল কেড়ি পোকার ছিদ্রের মুখে বাদামী চটচটে গদের আঠার মতো রস গড়িয়ে পড়ে ও চিবানো কাঠের গুড়া দেখা যায়।

ঘ) কান্ডের গায়ে কান পাতলে কড় কড় শব্দ শোনা যায়। সামান্য বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ে। বছরের যে কোন সময় এসব পোকা আক্রমণ করতে পারে।

ঙ) তবে উইপোকা চারার জন্য লাগানো নারিকেল ও কচি গাছকে বেশী আক্রমণ করে। অনেক সময় নারিকেল গাছের কান্ডে ঢিবি তৈরি করে কান্ডের যে অংশে ঢিবি করে সেই অংশ দুর্বল হয়ে গাছ ভেঙ্গে যায়।

পোকামাকড় দমন :

ক) বাগান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে বিশেষ করে গোবরের গাঁদা ও ময়লার স্তূপ পরিষ্কার করে সেখানে ৬০ সেন্টিমিটার বা ২৪ ইঞ্চি বা ১ ফুট গভীর করে ফুরাডান ও জি ১০ থেকে ১২ গ্রাম দিলে গন্ডার পোকা বা লাল কেড়ি পোকা দমন হয়।

খ) আক্রান্ত গাছের ছিদ্রে শিক ঢুকিয়ে বা খুচিয়ে পোকা মারতে হবে। ছিদ্রে আলকাতরা বা তারপিন ঢেলে কাদা দিয়ে ছিদ্র মুখ বন্ধ করে দিলে ভেতরের পোকা মারা যায়।

গ) এতে যদি পোকা দমন না হয় তাহ’লে ২ মিলিলিটার বা ৪ ফোঁটা ডাইক্রোমেন ১০০ ইসি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে বা ৫.৭ সিসি বা ১১ ফোঁটা বাইড্রিন ৮.৫ ডবি­উপি ৬ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ঘ) উইপোকার জন্য কড়া রোদ উঠলে নারিকেলের বীজতলার মাটি ওলটপালট করে দিতে হবে। নারিকেলে বাগানে উইয়ের আক্রমণ দেখা দিলে জমি প্লাবিত করে রাখলে উইপোকা মারা যায়।

ঙ) এছাড়াও নারিকেলের বীজতলায় লাগানোর সময় ও মূল জমিতে নারিকেলের চারা লাগানোর সময় এবং মূল জমিতে নারিকেলের চারা লাগানোর আগে ১ শতাংশ জমির মাটির সাথে ৪ গ্রাম বাইফেনথ্রিন ২০ ডব্লিউপি মিশিয়ে দিলে উইপোকার আক্রমণ কম হয়।

রোগ-বালাই নিরাময় :

ক) নারিকেলের প্রধান রোগের মধ্যে আছে কুঁড়ি পচা, কান্ডের রস ঝরা ও পাতায় দাগ পড়া। কুঁড়ি পচা রোগ হ’লে গাছের মাথার সবচেয়ে কচিপাতাগুলো শুকিয়ে যায়।

খ) পাতা প্রথমে ধূসর বাদামী ও পরে গাঢ় বাদামী হয়ে গোড়ার দিকে ভেঙ্গে পড়ে। আক্রান্ত জায়গা থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হয় এবং জায়গাটি আঠার মত দগদগে দেখায়।

গ) গাছের আগার একেবারে মাঝের নরম কুঁড়ি পাতাটি পচে যায়, অবশেষে গাছ মরে যায়। একইভাবে নারিকেল, কাদি, কুঁড়ি প্রভৃতির গোড়া আক্রান্ত হয় ও ভেঙ্গে পড়ে।

ঘ) কান্ডের রস ঝরা রোগে গাছের কান্ড লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। ঐ ফাটা জায়গা দিয়ে লালচে বাদামী রঙের রস ঝরতে থাকে।

ঙ) রস ঝরার কিছু দিনের মধ্যে আবার তা শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। এই ফাটা জায়গা আস্তে আস্তে পচতে শুরু করে।

চ) এছাড়া পাতার দাগ পড়া রোগে নারিকেলের পাতায় বিভিন্ন আঁকারের ধূসর-সাদা দাগ পড়ে। কয়েকটি দাগ মিলে বড় দাগের সৃষ্টি হয়।

ছ) আক্রমণ বেশী হ’লে পাতা শুকিয়ে যায়। কুঁড়ি পচা বা পাতার রোগ দেখা দিলে গাছের মাথা পরিষ্কার করে মাথায় মিশ্রণ ছিটাতে হবে।

জ) অথবা ৪০ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ বা কপার অক্সিক্লোরাইড কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউপি ১২ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।

ঝ) কান্ডের রস ঝরলে ফাটা ও পচা অংশ পরিষ্কার করে বোর্দো মিশ্রণ ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর লাগাতে হবে। মিশ্রণের সাথে যেকোন কীটনাশক মিশিয়ে ফাটা অংশে লাগালে ভালো হয়।

বাংলাদেশে নারিকেলের ফলন অত্যন্ত কম। প্রতি বিঘা জমিতে বছরে গড়ে প্রায় ৪০০ কেজি নারিকেলের ফলন হয়।

\ সংকলিত \







আরও
আরও
.