আমার নিজ যেলা জামালপুরের পার্শ্ববর্তী শেরপুরে কর্মরত অবস্থায় জনৈক ডাক্তার ফরহাদ হোসাইনের সাথে পরিচয় হয়। তার কাছে গেলে তিনি আমাকে কুরআনের উল্লেখযোগ্য কিছু আয়াত ও হাদীছ পড়তে বলেন। যা পাঠে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তাহ’লে কি আমরা ভুল পথে আছি? অতঃপর আমি আমার গ্রামের ইমাম ছাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ইমাম ছাহেব! ছহীহ বুখারীর প্রথম খন্ডে দেখলাম বুকে হাত বাঁধতে হবে, সশব্দে আমীন বলতে হবে, রাফঊল ইয়াদায়েন করতে হবে। কিন্তু আমরা তা করি না কেন? ইমাম ছাহেব তখন আমাকে এই সকল বই পড়তে নিষেধ করলেন। এতে আমার জানার আগ্রহ আরো তীব্র হ’ল। ছহীহ হাদীছ থেকে সুস্পষ্ট দলীল পেয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে আমি বুকে হাত বাঁধা, রাফঊল ইয়াদায়েন করা, সশব্দে আমীন বলা শুরু করে দিলাম। এক পর্যায়ে গ্রামে গুঞ্জন উঠল আমি নাকি কাদিয়ানী হয়ে গেছি! এসব কথা আববা-আম্মার কানেও গেল। আববাকে বুঝাতে পেরেছিলাম যে, আমি প্রমাণ ছাড়া কোন কথা বলি না। কিছুদিন পরেই আববা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। আববাকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসী করুন- আমীন! কিন্তু আম্মাকে বুঝাতে পারি না। এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন। কিন্তু বলেন, আমার কাছে গ্রামের মানুষের আজেবাজে মন্তব্য যেন না আসে।
সর্বশেষ ঘটনা ঘটে গত ঈদুল ফিতরের ছালাতে। বৃষ্টির কারণে ঈদের ছালাত পড়ছিলাম মসজিদে। আমি প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর দিলাম, পরের রাক‘আতে যখন কিরাতের আগেই পাঁচ তাকবীর দিলাম তখন আমার দুই পাশের দু’জন ছালাতের মধ্যেই যেন কিছু বলবে মনে হ’ল। অতঃপর ছালাত শেষ হ’ল, খুৎবা শেষ হ’ল এবং দীর্ঘ এক মুনাজাত হ’ল। কিন্তু আমি মুনাজাত করি নাই। ছালাত পড়াচ্ছিলেন আমার চাচাত ভাই। সে কউমী মাদরাসায় লেখাপড়া করে। ছালাত শেষ করে বাড়িতে আসলাম। জানতে পারলাম, আমাকে নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে, আমার চাচাত ভাইকে লোকেরা বলছে, তোমারই ভাই এভাবে ছালাত আদায় করে, তুমি কিছু বল না কেন? ঐ দিন শুক্রবার আমার সেই ভাই জুম‘আর ছালাত আদায় করালো। মসজিদে দু’টি খুৎবা দেওয়ার আগে আরেকটি খুৎবা বাংলায় দেওয়া হয়। সেই খুৎবায় গ্রামবাসীর মন জয় করার হীন মানসে বলল, আহলেহাদীছের নামে যত ইচ্ছা মিথ্যা কথা এবং আমি ভুল পথে আছি বলে খুৎবায় তিরষ্কার করল। অতঃপর মসজিদ থেকে বের হয়ে আমার চাচাত ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সে বলে, হাত বাঁধার নিয়ম বুকের উপরেও আছে, নাভির নিচেও আছে। নাভির নিচে রাখাই ছহীহ। তখন আমি বললাম, তোর মা অর্থাৎ আমার চাচী বুকে হাত বাঁধে কেন? সে বলে, মেয়েরা বুকে হাত বাঁধবে। তখন আমি বললাম, আমার দু’টি প্রশ্ন- (১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোথায় বলেছেন, পুরুষরা নাভির নিচে হাত বাঁধবে, আর নারীরা বুকে বাঁধবে। (২) ঈদের তাকবীর সংখ্যা সম্পর্কে ইবনু মাজাহ ও আবূদাঊদে ৩০টি হাদীছ দেখালাম, তুই আমাকে একটি হাদীছ দেখাবি যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছয় তাকবীরে ঈদের ছালাত আদায় করেছেন? গ্রামবাসীর কাছেও প্রশ্ন দু’টি দেওয়া আছে প্রায় এক মাস হয়ে গেল। কোন উত্তর আজো পাইনি। আমি বলেছি, সঠিক উত্তর দেখাতে পারলে মেনে নেব। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!!
মুহাম্মাদ এনামুল হক
বকশীগঞ্জ, জামালপুর।