বিগত দিনসমূহে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এবং তার সহযোগী ও সমমনা লেখক ও বক্তাদের লেখনী ও বক্তৃতাসমূহের মাধ্যমে এবং সুসংগঠিত দাওয়াতের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে বাংলাভাষী মুমিন নর-নারীদের মধ্যে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী জীবন গড়ার যে চেতনা ও জাযবা সৃষ্টি হয়েছে এবং দলে দলে মানুষ যেভাবে এ দাওয়াত কবুল করে ধন্য হচ্ছে, সেই পবিত্র স্রোতকে রুখে দেওয়ার জন্য বিরোধীরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তাদের একটি নতুন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ‘প্রশিক্ষণ কোর্স’ নামে। উদ্যোগটা খুবই ভাল ছিল, যদি নেগেটিভ লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত না হ’ত। উক্ত মর্মের দাওয়াতনামাটি হুবহু নিম্নে প্রদত্ত হ’ল-

‘লা-মাযহাবী, তথাকথিত আহলে হাদীস ফিৎনা প্রতিরোধে পথ ও পন্থা এবং ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব ও কর্তব্য’ শীর্ষক তিন দিন ব্যাপী

প্রশিক্ষণ কোর্স

মুহতারাম

জনাব খতীব/ইমাম সাহেব

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

বাদ সালাম মসনুন, আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে, যুগে যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য ও বিভক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলাম বিরোধী অপশক্তির বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সময়ে লা-মাযহাবী-গাইরে মুকাল্লিদ, তথাকথিত আহলে হাদীস ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তেমনি একটি ভয়ঙ্কর ফিৎনার নাম। যে ফিৎনার মূল লক্ষ্যই হলো আহলে হক উলামায়ে কেরাম এবং আকাবের-আসলাফ থেকে মুসলিম জনসাধারণকে বিচ্ছিন্ন করে ধর্মবিমুখ করা। ভয়াবহ এ ফিৎনা সম্পর্কে সর্বস্তরের মুসলমানদের অভিহিত করতঃ এই ফিৎনা থেকে রক্ষা করা আহলে হক উলামায়ে কেরামের ঈমানী দায়িত্ব। যা সময়ের অপরিহার্য দাবীও। এই ফিৎনার মোকাবেলা করতে হলে জানতে হবে তাদের উদ্ভট, বানোয়াট দাবী ও দলীলের দাঁতভাঙ্গা জবাব এবং এই ফিৎনা প্রতিরোধের সঠিক পথ ও পন্থা।

এ লক্ষ্যে দেশের উলামায়ে কেরাম, মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতীবগণের জন্য আগামী ২৭, ২৮, ২৯ মার্চ ২০১৪ইং বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার প্রত্যহ বাদ আসর হতে রাত দশটা পর্যন্ত মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ বসুন্ধরা ঢাকায় ‘লা-মাযহাবী ফিৎনা প্রতিরোধে পথ ও পন্থা এবং ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব ও কর্তব্য’ শীর্ষক তিন দিন ব্যাপী ‘প্রশিক্ষণ কোস’ অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল­াহ।

এতে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন দারুল উলূম দেওবন্দের স্বনামধন্য ফাজিল, আকাবিরে দারুল উলূম দেওবন্দের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী গাইরে মুকালি­দ ফিৎনা প্রতিরোধের সফল প্রশিক্ষক ও মুনাযির হযরতুল আল­াম মুফতী সায়্যিদ মুহাম্মদ মাসূম সাকিব মুরাদাবাদী কাসেমী (দা.বা.)। এতে আপনি ও মসজিদের খতীব ও ইমাম সাহেবসহ যথাসময়ে অংশগ্রহণ করতঃ গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে অবগতি লাভ করায় সচেষ্ট হবেন বলে আমরা আশাবাদী।

সালামান্তে

মুফতী আব্দুর রহমান

প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক

মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

[বিঃদ্রঃ এই বিশেষ দাওয়াতনামা শুধুমাত্র ওলামায়ে কেরাম, সম্মানিত ইমাম ও খতীব সাহেবদের জন্য প্রযোজ্য]

উপরের দাওয়াতনামায় স্পষ্ট যে, মুফতী ছাহেবরা বড়ই ক্ষিপ্ত হয়েছেন। আমরা সবাইকে করজোড়ে নিবেদন করব, অহেতুক যিদ ও হঠকারিতা করবেন না। বরং নিজেদের ভুলগুলো স্বীকার করে নিন। সত্যকে কবুল করে নিন। অন্যকেও সত্য কবুলে উদ্বুদ্ধ করুন। তাতে দুনিয়া ও আখেরাতে আপনারা ভাল থাকবেন। নইলে আপনার কারণে যদি কেউ সত্য কবুলে বিরত থাকে, তাহ’লে কিয়ামতের দিন আপনাকেই দায়ী হতে হবে এবং অন্যদের বোঝা আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে।

ইসলামের নামে আপনাদের মাযহাবী রাজনীতিকরা সরকারী ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের নেতৃবৃন্দের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারা নির্যাতন করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের সভাগুলি আপনারা দলীয় লোকদের দিয়ে ও প্রশাসনকে প্রভাবিত করে বাধা দিচ্ছেন। নতুন আহলেহাদীছদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছেন। সমাজচ্যুত করছেন। দৈহিক নির্যাতন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানোর চেষ্টা করছেন। এখন আবার ইমাম ও খতীবদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এটাই কি আপনাদের দ্বীনী দায়িত্ব! দেশের হাযার হাযার মানুষ বেদ্বীন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি নাস্তিক, মুরতাদ ও খ্রিষ্টান হয়ে যাচ্ছে, তাদের রক্ষার জন্য আপনাদের কোন প্রশিক্ষণ কোর্স তো দেখা যায় না! কেউ খৃষ্টান হলে আপনারা তো ক্ষিপ্ত হননা। অথচ একজন মুমিন ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল শুরু করলেই আপনারা ক্ষিপ্ত হন কেন? এভাবে কি সত্যসেবী মুমিনকে ঠেকানো সম্ভব? কখনোই সম্ভব হবে না ইনশাআল্লাহ। অতএব হিংসা-বিদ্বেষ ছেড়ে পরস্পরে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করুন। নিজেদের বানানো মাযহাবী বেরিকেড ভেঙ্গে সালাফে ছালেহীনের সহজ-সরল পথে ফিরে আসুন। সঠিক দ্বীনের নামে দ্বীনদারদের দ্বীন থেকে দূরে ঠেলে দিবেন না। আসুন সবাই আমরা প্রকৃত অর্থে ভাই-ভাই হয়ে যাই! তাতে সমাজে সত্যিকারভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে আপনাদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি ভবিষ্যদ্বাণী পেশ করতে চাই। যেখানে তিনি বলেন, ‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’ (মুসলিম হা/১৯২০)

‘বড় পীর’ বলে খ্যাত শায়খ আবদুল ক্বাদির জীলানী (রহঃ) ‘নাজী’ ফেরক্বা হিসাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বর্ণনা দেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিদ‘আতীদের ক্রোধ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,  ‘জেনে রাখ যে, বিদ‘আতীদের কিছু নিদর্শন রয়েছে, যা দেখে তাদের চেনা যায়। তাদেরদের সেই লক্ষণ হ’ল আহলেহাদীছদের গালি দেওয়া ও বিভিন্ন বাজে নামে তাদেরকে সম্বোধন করা। এগুলি সুন্নাতপন্থীদের বিরুদ্ধে তাদের দলীয় গোঁড়ামী ও অন্তর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন কিছুই নয়। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্য কোন নাম নেই একটি নাম ব্যতীত। সেটি হ’ল ‘আহলুল হাদীছ’। বিদ‘আতীদের এই সব গালি প্রকৃত অর্থে আহলেহাদীছদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন মক্কার কাফিরদের জাদুকর, কবি, পাগল, মাথা খারাপ, গায়েবজান্তা প্রভৃতি গালি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য প্রযোজ্য ছিল না’ (আব্দুল ক্বাদির জীলানী, কিতাবুল গুনিয়াহ ওরফে গুনিয়াতুত ত্বালেবীন (মিসর: ১৩৪৬ হিঃ ১/৯০ পৃঃ)

আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং যাবতীয় ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে পরকালে জান্নাতুল ফেরদাঊস লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন!






পীরতন্ত্র! সংশয় নিরসন (পূর্বে প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
পীরতন্ত্র : সংশয় নিরসন - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
ছাহাবায়ে কেরাম কি আমাদের আদর্শ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? (২য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পরিচয় - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
গোপালপুরের নব আহলেহাদীছদের উপর নির্যাতিত - জামীলুর রহমান - কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা
রাজনীতি করুন, ইসলামের অপব্যাখ্যা করবেন না - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
উলুল আমর-এর সঠিক ব্যাখ্যা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
ইছলামী জামাআত-বনাম আহলেহাদীছ আন্দোলন - মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী
সঊদী আরবের সঙ্গে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালনের পক্ষে-বিপক্ষে বাহাছ; বিপক্ষ দলের বিজয়
মক্কা-মদীনার বাইরে আলেম নেই? - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : হিজড়া পশু কুরবানী করা যাবে কি না?
বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ের পরিচয় (৫ম কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আরও
আরও
.