(১) আদার রসের উপকারিতা
১. আদার রস খেলে আহারে রুচি আসে এবং ক্ষুধা বাড়ে।
২. আদার রসে মধু মিশিয়ে খেলে কাশি সারে।
৩. আদা মল পরিষ্কার করে।
৪. আদার রসে পেটব্যথা কমে।
৫. আদা পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি বাড়ায়।
৬. আদা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
৭. আদার রস শরীর শীতল করে।
৮. আদা রক্তশূন্যতা দূর করে।
(২) ডায়াবেটিস চেনার উপায়
১. গলা শুকিয়ে যাওয়া, বারবার পানির পিপাসা, পানি খেলেও পিপাসা না মেটা।
২. বারবার ক্ষুধা লাগা। কোন কারণ ছাড়াই ওযন কমে যাওয়া।
৩. চোখে দেখতে অসুবিধা।
৪. শরীরের কোথাও কেটে গেলে কিংবা আঘাত পেলে তা দ্রুত সারে না।
৫. মেয়েদের মাসিকের সমস্যা দেখা দেওয়া।
৬. বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রবণতা।
৭. ওযন অতিরিক্ত বেড়ে গেলেও ডায়াবেটিস হ’তে পারে।
৮. ৩৫ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত ডায়াবেটিসের চেকআপ করা যরূরী।
৯. ডায়াবেটিস আছে কি-না তা জানার জন্য ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট যরূরী। এছাড়া ব্লাড সুগার পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা দ্বারাও জানা যাবে ডায়াবেটিস হয়েছে কি-না।
(৩) ক্যান্সারমুক্ত জীবনের জন্য ৯টি অভ্যাস
১. অধিক হারে টাটকা শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করা।
২. অধিক আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
৩. ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা।
৪. ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার অধিক গ্রহণ করা।
৫. শরীরের ওযন নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
৭. ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
৮. পান, জর্দা, তামাক সেবন বন্ধ করা।
৯. আচার, কাসন্দ, শুঁটকি এবং লবণ দেয়া মাছ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
(৪) ক্যান্সার প্রতিরোধে পালং শাক
শাক-সবজি খাওয়ার কথা শুনলেই বাচ্চাদের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মতো অবস্থা হয়। অন্যদিকে পালং পনির বা পালংয়ের স্যুপ খাই আমরা সবাই। তবে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন পালং শাক খাওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই প্রয়োজন।
পালং শাকের খাদ্যগুণ :
প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে কার্বোহাড্রেট থাকে প্রায় ৩.৬ গ্রাম, প্রোটিন থাকে ১.৫ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ০.১ থেকে ১.০ গ্রাম। এছাড়া ভিটামিন-A, ভিটামিন-B, ভিটামিন-C, ভিটামিন-E, ভিটামিন-K রয়েছে। ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, প্যাটি অ্যাসিডও থাকে।
উপকারিতা :
পালং শাক পেট পরিষ্কার রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া পালং শাক রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায়। ক্যানসার প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসাবে পালং শাক অপরিহার্য। পালং শাকের রস দিয়ে গারগেল করলে গলা জ্বালা কমে যায়। হার্টের অসুখেও যথেষ্ট উপকারী। কিডনিতে পাথর থাকলে, তা গুঁড়ো করতে সাহায্য করে। দেহ ঠান্ডা ও স্নিগ্ধ রাখতে পালং শাক অতি প্রয়োজনীয়। অনেকের মেদ বৃদ্ধি ও দুর্বলতায় হাফ ধরে, তাদের পালং পাতার রস খেলে উপকার হয়। পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কাঁকড়া বিছে, বোলতা, মৌমাছি, ভোমরা ও বিষাক্ত পোকা হুল ফোটালে বা কামড় দিলে পালং শাকের শেকড় বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও যন্ত্রণা কমে যায়। ডায়াবেটিক রোগীদের পালং শাক খাওয়া দরকার। তবে যাদের ইউরিক অ্যাসিড আছে, তাদের জন্য পালং শাক খাওয়া একদমই উচিত নয়।
(৫) মেদ কমাতে কাঁচা পেপে
পেঁপের রয়েছে নানা গুণ। মেদ সমস্যায় কাঁচা পেঁপে সালাদ হিসাবে খেলে উপকার পাওয়া যায়। পেটের গোলমালে পেঁপে খেলে উপকার হয়। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেঁপেতে ক্যারোটিন অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ক্যালরির পরিমাণ বেশ কম থাকায় মেদ সমস্যায় পেঁপে খেলে ফল পাওয়া যায়। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে।
সালাদে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে টমেটো, শসা, গাজর, কাঁচামরিচ, পিঁয়াজ, লেটুসপাতা স্থান পায়। এসব সবজির মিশ্রণে তৈরী সালাদে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’র পরিমাণ থাকায় এ ধরনের সালাদ এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। তবে সালাদে কাঁচা পেঁপে মেশানো হ’লে তা আরও উপকারী হয়। কারণ পেঁপেতে থাকে প্রচুর পরিমাণ পেপসিন। এই পেপসিন হজমে সাহায্য করে। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। কাঁচা পেঁপের কষ বাতাসার সঙ্গে খেলে লিভার সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর হয়। এর সঙ্গে ক্ষুধা বাড়ে এবং জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। অপরদিকে পেঁপের রসে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাশয়, অশ্ব, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সক্ষম। পেঁপে খেলে শরীর থেকে দূষিত বায়ু সহজেই বেরিয়ে যায়। কাঁচা পেঁপের তরকারি পথ্যের কাজ করে।
চিকিৎসকরা ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের কাঁচা পেঁপের তরকারি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অপরদিকে কাঁচা পেঁপের কষ ঘা শুকাতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে লিভারের জটিল সমস্যা দূর করে। পাচন শক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন কাঁচা পেঁপের তরকারি বা পাকা পেঁপে খাওয়া শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে পেঁপে অন্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর। পাকা পেঁপে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ। কাঁচা পেঁপেতেও ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি’ এবং ভিটামিন ‘সি’ আছে। এছাড়া কাঁচা বা পাকা পেঁপেতে লৌহ ও ক্যালসিয়াম আছে। পেঁপে কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
পেঁপের ঔষধি গুণ সমূহ
রক্ত আমাশয় : প্রত্যেহ সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।
ক্রিমি : যে কোন প্রকারের ক্রিমি হ’লে পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘণ্টা পরে উষ্ণ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।
আমাশয় : আমাশয় ও পেটে যন্ত্রণা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রণা এবং আমাশয় কমে যাবে।
যকৃত বৃদ্ধিতে : এই অবস্থায় ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠাতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি সারাদিনে ৩ বার খেতে হবে। ৪/৫ দিন পর থেকে যকৃতের বৃদ্ধিটা কমতে থাকবে। তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২ দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
ক্ষুধা ও হজম শক্তিতে : প্রত্যেক দিন সকালে ২/৩ ফোঁটা পেঁপের আঠা পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ক্ষুধাও বেড়ে যাবে এবং হজমও ঠিকভাবে হবে।
পেট ফাঁপায় : কয়েক টুকরো পাকা পেঁপের শাঁষ, সামান্য লবণ এবং একটু গোলমরিচের গুড়া এক সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা পেট ফাঁপার উপশম হয়।
প্রবল জ্বরে : দেড় চামচ পেঁপে পাতার রস এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এতে জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রণা, শরীরে দাহ কমে যাবে। জ্বর কমে গেলে আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
মাসিক ঋতু বন্ধে : যাদের মাসিক ঋতু বন্ধ হওয়ার সময় হয়নি অথচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা যেটুকু হয় তা না হওয়ারই মত, সেক্ষেত্রে ৫/৬ টি পাকা পেঁপের বিচি গুড়া করে রোজ সকালে ও বিকালে দু’বার পানিসহ খেতে হবে। এর ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই মাসিক স্রাব ঠিক হয়ে যাবে। তবে অন্য কোন কারণে এটা বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
দাদে : যে কোন প্রকারের দাদ হোক না কেন, কাঁচা পেঁপের/গাছের আঠা ঐ দাদে লাগিয়ে দিতে হবে। একদিন লাগিয়ে পরের দিন লাগাতে হবে না, এরপরের দিন আবার লাগাতে হবে। এইভাবে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে।
একজিমায় : যে একজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে ওটার চামড়া উঠতে উঠতে পাতলা হয়ে যায়।
উকুন হ’লে : ১ চামচ পেঁপের আঠা, এর সঙ্গে ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হয়। তারপর ঐ পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এইভাবে একদিন অন্তর একদিন বা ২ দিন লাগালে উকুন মরে যায়।
(৬) সম্পূর্ণ ফ্যাটমুক্ত দেশি ফল সফেদা
সফেদা একটি দেশি মৌসুমি ফল। এ ফলের রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুণ। এটি সম্পূর্ণ ফ্যাটমুক্ত একটি মিষ্টি ফল।
সফেদার ঔষধি গুণ : সফেদায় আছে ফাইবার, পলিফেনলিক যৌগ ও ভিটামিন সি- যা আমাদের দেহকে নীরোগ রাখতে সহায়তা করে। সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস, যা হাড়ের গঠন মযবূত করে। সফেদা কনজেশন এবং কাশি উপশম করতে সাহায্য করে।
সফেদার অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান প্রদাহজনিত সমস্যা সমাধান করে। অর্থাৎ গ্যাসট্রিটিস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সফেদায় বিদ্যমান ভিটামিন-এ, চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। রাতকানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ওযন কমাতে সাহায্য করে। সফেদা নিয়মিত খেলে স্থুলতাজনিত সমস্যার সমাধান হয়। সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ, যা দেহে শক্তি প্রদান করে।
শুধুমাত্র সফেদা ফলে নয়। সফেদা গাছের পাতারও ঔষধি গুণ রয়েছে। সফেদা গাছের পাতা ছেঁচে সদ্য ক্ষত হওয়া স্থানে দিলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হয়। সফেদা ডায়রিয়াবিরোধী উপাদান হিসাবে কাজ করে ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।
সফেদা ফলে স্নায়ূ শান্ত এবং মানসিক চাপ উপশম করার ক্ষমতা রয়েছে। ডাক্তাররা অনেকেই অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিকে সফেদা ফল খেতে উপদেশ দেন। এতে অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার সমস্যা কমায়। তবকে বয়সের ছাপ দূর করে। ফুসফুস ভালো রাখে। সফেদার বীজের নির্যাস কিডনি রোগ সারাতে সাহায্য করে। সফেদা হজমে সাহায্য করে। অর্ধেক পাকা সফেদার পানি ফুটিয়ে কষ বের করে ব্যবহারে ডায়রিয়া ভালো হয়।
সফেদার পুষ্টি গুণ : ১০০ গ্রাম সফেদায় আছে ৮৩ গ্রাম ক্যালরি, ৩.৯ গ্রাম মিনারেল, ৫.৬ গ্রাম ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট এবং ১৪.৭ গ্রাম ভিটামিন।
উল্লেখ্য, সফেদা গাছের ছাল ও পাতা সমান উপকারী।
[সংকলিত]