লো কার্বডায়েট মানে যে খাদ্যতালিকায় খুব কম কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকে। বিগত কয়েক দশক ধরে এই ডায়েট বেশ জনপ্রিয়। এতে কার্বোহাইড্রেট কম এবং প্রোটিন বেশী থাকে। এ ধরনের খাদ্যতালিকায় সাধারণত গোশত, মাছ, ডিম, বাদাম, বীজ, শাক-সবজি, ফল এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেশী থাকে।

কিটোজেনিক ডায়েট : খুব কম শর্করা, উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েট হ’ল কিটো ডায়েট। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে এই খাদ্যতালিকা বেশ জনপ্রিয়। এটি ওযন ও ক্ষুধা কমায়। কিটোডায়েটে কার্বোহাইড্রেট ৫০ গ্রামের কম থাকে, কখনো ২০-৩০ গ্রামও থাকতে পারে।

জিরো কার্ব : কিছু লোক তাঁদের ডায়েট থেকে সব শর্করা বাদ দিতে চান। এতে সাধারণত প্রাণিজ খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। জিরো কার্বডায়েটে ভিটামিন সি ও ফাইবারের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হয়। এ কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ততটা ভালো নয়।

লো কার্বডায়েটে যাওয়ার আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক হ’তে হবে : উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনীর সমস্যা থাকলে কোন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • কার্বোহাইড্রেট হ’ল প্রাথমিক জ্বালানী, যা পেশি ও মস্তিষ্কের শক্তি জোগায়। লো কার্বডায়েটে পেশির দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অমনোযোগিতা এবং পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। খেলাধুলা বা কায়িক পরিশ্রম বেশী করা ব্যক্তিদের এ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করা উচিত নয়।
  • কম কার্বোহাইড্রেটের ডায়েট গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানের সময়, শৈশবকালে বা প্রাক্-কৈশোর বয়সের জন্য উপযুক্ত নয়।
  • শরীরে কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি হ’লে কিটোসিস হ’তে পারে। কার্বোহাইড্রেটের অভাব হ’লে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ (শক্তি) থাকে না। ফলে শরীর ফ্যাট বার্ন করতে শুরু করে। যখন ফ্যাট বেশী বিপাক হয়, তখন যকৃৎ কিটোন নামের এক ধরনের অম্ল তৈরি করে। অতিরিক্ত মাত্রায় কিটোন তৈরি হ’লে শরীরে সোডিয়াম ও পানির ঘাটতি দেখা দেয়। একে বলে কিটোসিস। এ সমস্যায় ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা দেখা দিতে পারে। সতর্ক না থাকলে তা জটিল আকার ধারণও করতে পারে।

শীতে পা ফাটার সমস্যা

শীত এলেই অনেকেরই পা ফাটা শুরু হয়। শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে, বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এ কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। কখনো পা এত বেশী ফেটে যায় যে ব্যথা বা জ্বালা করে, ক্ষত হয়, ফাটা ত্বক দিয়ে রক্তপাত হয়। ফাটা ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণও হ’তে পারে।

কারও কারও ক্ষেত্রে শীতে পা ফাটার সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে। যেমন সোরিয়াসিসের রোগীদের পা ফাটা শীতকালে বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস, বিশেষ করে ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ু জটিলতায় পায়ে রক্ত চলাচল কমে যায়। নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুরোগেও ত্বক বেশী শুষ্ক হয়। থাইরয়েডের রোগীদেরও এমনটা বেশী হয়।

এসব কোন কারণ না থাকলে সাধারণ কিছু যত্নেই পা ফাটা রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রধান কাজ হ’ল পায়ের ত্বক শুষ্ক হ’তে না দেওয়া। তাই ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। কুসুম গরম পানি ও হালকা সাবান দিয়ে পা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। তারপর তোয়ালের সাহায্যে চাপ দিয়ে শুকিয়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগান। প্রয়োজনে দিনে দু’তিনবার এটা করা লাগতে পারে। গোসল করার পর একবার পায়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগান। সাদা পেট্রোলিয়াম জেলি, ল্যাকটিক অ্যাসিড, লিকুইড প্যারাফিনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার এক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে আরো দ্রুত কাজ করে। এছাড়া পা পরিষ্কার করতে হালকা স্ক্রাবার ব্যবহার করা যায়। এতে মরা ত্বক ও টিস্যু উঠে আসবে। তবে খুব জোরে বা শক্ত কিছু, যেমন পাথর দিয়ে ঘষা যাবে না। এতে ত্বক ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এছাড়া কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ঘরোয়া পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে পায়ের ফাটা গোড়ালির সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যেতে পারে। যেমন-

নারকেল ও কলার ফুট মাস্ক :

পা ফাটার সমস্যা মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে এই ফুট মাস্কটি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সমস্যার সমাধান হবে খুব দ্রুত।

উপকরণ : টুকরো করে কাটা কলা, লম্বা করে কাটা ৩-৪ টুকরো নারকেল।

পদ্ধতি : একটি কলা টুকরো করে নিয়ে এর সঙ্গে টাটকা ৩-৪ টুকরো নারকেল একসঙ্গে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন বা ভাল করে বেটে নিন। এরপর এটি পায়ের ফাটা জায়গায় ভাল করে লাগিয়ে নিন। প্যাক শুকিয়ে গেলে সামান্য উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি হাতের কাছে নারকেল নাও পান তবে একটি কলা চটকে নিয়ে তাতে ২-৩ চামচ নারকেল তেল দিয়ে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করেও লাগাতে পারেন।

চাল বাটা ও তেল :

পা ফাটার সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে প্রাকৃতিক স্ক্রাবার ব্যবহার। ঘরোয়াভাবে তৈরি এই স্ক্রাবটি প্রতিদিন ব্যাবহার করে খুব দ্রুত পা ফাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

উপকরণ : ২-৩ চামচ চাল, অলিভ অয়েল, সাদা ভিনেগার ও মধু।

পদ্ধতি : প্রথমে চাল একটু ভিজিয়ে রেখে ভাল করে বেটে নিন। খুব মিহি করে বাটবেন না। এরপর এর সঙ্গে ৩ চামচ ভিনেগার আর ২ চামচ মধু দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন।

এবার একটি বড় পাত্রে সামান্য উষ্ণ গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভেজা পায়ে ঘন পেস্টটি ভাল করে মালিশ করুন। মালিশ করার পর ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর সামান্য উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ভাল করে পা মুছে নিন। এরপর সামান্য অলিভ অয়েল গরম করে নিয়ে পায়ে মালিশ করুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এই প্যাক ব্যবহার করলে পা ফাটায় দ্রুত ভাল ফল পাবেন।

গ্লিসারিন ও গোলাপ পানির ফুট মাস্ক :

ফাটা গোড়ালি সমস্যায় প্রাথমিক পর্যায়ে এই ফুট মাস্ক ব্যবহার করে দ্রুত উপকার পাওয়া যেতে পারে।

উপকরণ : লবণ, লেবুর রস, গ্লিসারিন, গোলাপ পানি ও সামান্য উষ্ণ পানি।

পদ্ধতি : একটি বড় পাত্রে ২ লিটার সামান্য উষ্ণ গরম পানি নিয়ে তাতে ১ চামচ লবণ, ১টি গোটা লেবুর রস, ১ কাপ গোলাপ পানি দিয়ে এতে অন্তত ১০-১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর খসখসে কিছু একটা দিয়ে যেমন, পেডিকিউরের পিউমিস স্টোন দিয়ে পায়ের গোড়ালি ভাল করে ঘষে শক্ত, মোটা ও মরা চামড়া তুলে পা ধুয়ে ফেলুন। এরপর ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ গ্লিসারিন ও ১ চামচ গোলাপ পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে পায়ে লাগান। এভাবে সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে সামান্য উষ্ণ গরম পানি দিয়ে পা ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.