মুখমন্ডলের হাড়ের ভিতরে কতগুলো ফাঁপা জায়গা আছে, যাকে সাইনাস বলে। কোন কারণে সাইনাসগুলির মধ্যে ঘা বা প্রদাহ হ’লে তাকে সাইনোসাইটিস বলে।
রোগের কারণ : দাঁত, চোখ, নাকের অসুখ থেকে সাইনোসাইটিস হ’তে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা এলার্জির কারণেও সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে।
লক্ষণ ও উপসর্গ : সাইনোসাইটিস রোগে প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়। এই ব্যথায় চোখের নীচ ও কপাল বেশী আক্রান্ত হয়। ব্যথা নাকের গোড়ায়, উপরের চোয়ালের উপরে ও মাথার পিছন দিকে যে কোন স্থানে হ’তে পারে। সকালে কম থাকে, দুপুরের দিকে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। আবার বিকেলের দিকে সামান্য কমে যায়। মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নীচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়, গা ম্যাজম্যাজে ভাব, জ্বর জ্বর ভাব থাকে, কোন কিছুতেই ভালো লাগে না এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। নাক বন্ধ থাকে। পরীক্ষা করলে নাকের ভেতর পুঁজ পাওয়া যেতে পারে। সাইনাস-এর এক্স-রে করলে সাইনাস ঘোলাটে দেখায়।
সাইনাসের ইনফেকশন : নাকের এলার্জি থাকলে, নাকের হাড্ডি বাঁকা থাকলে, নাকের ভেতর বাইরের কিছু ঢুকলে এবং এডিনয়েড (নাকের পেছনের টনসিল) বড় হ’লে, দাঁতের ইনফেকশন থেকে বা দাঁত তুলতে গিয়েও সাইনাসে ইনফেকশন হ’তে পারে। সাইনাসের হাড্ডি ফেটে গেলে এবং ময়লা পানিতে ঝাঁপ দিলে ঐ পানি নাকের ভেতর দিয়ে সাইনাসে ঢুকেও এ ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়াও অপুষ্টি, আবহাওয়া দূষণ এবং ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এই রোগ বেশী হয়।
সাইনোসাইটিস-এর জটিলতা : সাইনাসগুলো চোখ ও ব্রেইনের পাশে থাকে বলে সাইনাসের ইনফেকশন হ’লে তা চোখ এবং মস্তিষ্কেও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- অরবিটাল সেলুলাইটিস এবং এবসেস বা চোখের ভেতরের ইনফেকশন। মেনিনজাইটিস বা ব্রেইনের পর্দার প্রদাহ। এক্সট্রাডুরাল এবং সাবডুরাল এবসেস, অস্টিওমায়েলাইটিস (মাথার অস্থির প্রদাহ), কেভেরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস প্রভৃতি। তাই সাইনোসাইটিসের কারণে চোখের ভেতরে ইনফেকশন ঢুকে চোখটি নষ্ট করে দিতে পারে, আবার মাথার ভেতর ইনফেকশন ঢুকে মেনিনজাইটিস এমনকি ব্রেইন এবসেসের মত মারাত্মক জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।
চিকিৎসা : সাইনোসাইটিস নির্ণয়ে শুধু এক্স-রে করাই যথেষ্ট। এই রোগের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নাকের মধ্যে সাইনাসের বহির্গমনের রুদ্ধ পথগুলো খুলে দেয়ার মাধ্যমে সাইনাসের বহির্গমন পথকে সুগম রাখা এবং সাইনাসের ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করা। তাছাড়া চিকিৎসার মাধ্যমে ইনফেকশন জনিত ব্যথা থাকলে, তা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। তবে কোন কোন সময় যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়তে পারে। নাকের সমস্যা দূর করতে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। যে কোন সাইনোসাইটিসের চিকিৎসা প্রথমে ওষুধ দিয়ে করতে হয়। ওষুধে না সারলে অপারেশন করা লাগতে পারে। অপারেশনের সময় সাইনাস ওয়াশ করা হয়। বর্তমানে অপারেশনের পরিবর্তে অ্যান্ডোস্কোপিক সার্জারি বা ফাংশনাল অ্যান্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি করা হয়। যা অধিক কার্যকর এবং এতে রোগীর ভোগান্তিও কম হয়। যথা সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নিলে বিভিন্ন জটিলতা হ’তে পারে।