আল্লাহ
তা‘আলা তাঁর বান্দার জন্য যেসব নে‘মতের ব্যবস্থা করেছেন তন্মধ্যে ফল-ফলাদি
অন্যতম। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর কোন না কোন ফলের সমারোহ থাকলেও
জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস আসে নানা প্রজাতির রসালো ফলের সুবাস নিয়ে। ষড়ঋতুর এদেশে
গ্রীষ্মকালের তীব্র তাপদাহের সময় এসব ফল মানুষকে স্বস্তি দেয়। বাযারে ফলের
দোকানে, রাস্তার ধারে থরে থরে সাজানো থাকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস,
কালোজাম, বাঙ্গিসহ নানা রকম রসালো ফল।
এসব রসাল ফল শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এগুলো পানি, খাদ্য-আঁশ ও প্রাকৃতিক চিনিরও উৎস। সব মিলিয়ে এই ফলগুলো শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বেশ সহায়ক। কাজেই করোনা ভাইরাসের এই সংক্রমণের সময় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু মৌসুমী ফল অবশ্যই রাখুন। আসুন জেনে নেই এ সময়ে আসা ফলসমূহ শরীরের জন্য কি কি উপকার বয়ে আনে।
আম : আম কাঁচা-পাকা উভয় অবস্থাতেই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। বরং পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের পুষ্টিগুণই বেশী। যারা ওযন কমাতে চান, তাদের জন্য আদর্শ ফল কাঁচা আম। আমে বিদ্যমান ক্যারোটিনয়েডগুলো কোলন ও ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে। আমের পটাশিয়াম, খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। পাকা আম রক্তে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এক দিন পরপর দৈনিক শর্করার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আম খেতে পারেন।
জাম : কালো জামে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সময় জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রবণতা বাড়ে, জামে এটি দূর হয়। জামের ভিটামিন এ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গে স্নায়ুগুলোকে কর্মক্ষম রেখে দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বাড়ায়। এর মধ্যস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। পটাশিয়াম উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি-রেডিক্যাল কমিয়ে ত্বকের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। জামের খনিজ লবণ হাড়কে শক্তিশালী ও মযবূত করতে সাহায্য করে। শর্করা কম থাকায় এবং খাদ্য-আঁশের উপস্থিতির কারণে কালো জাম খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিনই কালো জাম খেতে পারেন। এছাড়া জামে কম পরিমাণে ক্যালোরী থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যারা ওযন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তাদের খাদ্য তালিকায় থাকতে পারে জাম।
কাঁঠাল : পৃথিবীতে যত রকমের ফল উৎপন্ন হয় তার মধ্যে আকারের দিক থেকে কাঁঠাল সবচেয়ে বড়। কাঁঠাল নানা গুণে গুণান্বিত এবং বহুবিধ ব্যবহারে অন্য কোন ফল এর সমকক্ষ নেই। এটি একটি উচ্চ ক্যারোটিন সমৃদ্ধ ফল, যাতে শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন সি, বি ও পটাশিয়াম যেমন আছে। তেমনি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থও প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। বিশেষ করে কাঁঠালের বীজ পুষ্টিমানের দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ এবং সবজি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এমনকি কাঁঠালের ফেলে দেয়া অংশও উন্নতমানের পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মধ্যস্থিত উপদানের কারণে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটা চোখ ভালো রাখে, দাঁতের মাড়ি শক্তিশালী করে, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এর ভিটামিন সি সর্দি-কাশি প্রতিহত করে, খাদ্য-আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
লিচু : মিষ্টি গন্ধ ও স্বাদের রসাল ফল লিচুতে রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। এছাড়া এই ফলে বিদ্যমান বি ভিটামিনগুলো বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করতেও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লিচুর খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো রোগপ্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আনারস : আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে, হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ক্ষুধাবর্ধক হিসাবে কাজ করে এবং রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিন্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হ’তে পারে। ফলে রক্ত শোধনে এই ফল ভূমিকা রাখে।
বাঙ্গি : বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি এবং সি বিদ্যমান। এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ত্বক ভালো রাখে, চুল পড়া প্রতিরোধ করে, হজমে সাহায্য করে, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে, অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামন্দ্যা, হাড়ের ভঙগুরতা রোধ করে। কোলস্টেরল মুক্ত। তাই বাঙ্গি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। এতে চিনির পরিমাণ খুব কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও বাঙ্গি যথেষ্ট উপকারী।
উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা যায় যে, এসব সুস্বাদু ফল যেমন মানুষের খাবারের চাহিদা মেটায়, তেমনি তা শরীরকে সুস্থ রাখতে, বিশেষত গ্রীষ্মকালীন এ সময়ে দেখা দেওয়া নানা রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। তাই মৌসুমী ফল-ফলাদি খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের যত্নবান হ’তে হবে। সাথে সাথে বান্দার জন্য আল্লাহ তা‘আলার এসব অনুগ্রহের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
\ সংকলিত \