পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ ।
ভূমিকা :
দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের সার্বিক জীবন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর উপর ঈমান আনয়নই ইসলামের প্রধান স্তম্ভ। যার ঈমান বিশুদ্ধ নয়, তার সম্পূর্ণ জীবনটাই বৃথা। ভিত্তি ব্যতীত যেমন কোন ভবন নির্মাণ সম্ভব নয়, তেমনি বিশুদ্ধ ঈমান ব্যতীত নিজেকে প্রকৃত মুসলিম দাবী করাও অযৌক্তিক। কেননা ইহূদী, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ যাদেরকে আমরা কাফির বলে জানি তারাও আল্লাহকে বিশ্বাস করে। আবু জাহল, আবু লাহাব, ফেরাউন সকলেই আল্লাহকে বিশ্বাস করত। একেবারেই আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এমন নাস্তিক পৃথিবীতে থাকলেও তাদের সংখ্যা অতীব নগণ্য। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যদি তাদেরকে (কাফিরদেরকে) জিজ্ঞেস কর, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ। বল, সকল প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এ বিষয়ে অজ্ঞ’ (লোকমান ৩১/২৫)। আবার আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করি, তারাও আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। সুতরাং বুঝা গেল, আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেও এক শ্রেণীর মানুষ কাফির ও জাহান্নামী। পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে এক শ্রেণীর মানুষ মুসলিম ও জান্নাতী। তাই আমাদের ভালভাবে উপলব্ধি করতে হবে ঈমানের প্রকৃত স্বরূপ কি? এটা না বুঝার কারণেই আজ মুসলমানরা কাফিরদের ঈমানের সাদৃশ্য গ্রহণ করে ঈমানে ভেজাল ঢুকিয়েছে। নিম্নে কাফিরদের ঈমান ও মুসলমানদের ঈমানের পার্থক্য নিরূপণ করতঃ ঈমানের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরা হ’ল।-
মুসলমানদেরকে প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ : নিজেকে মুসলিম দাবী করলেই প্রকৃত মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়; বরং প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য ঈমানের বিশুদ্ধতা আবশ্যক। নিম গাছ লাগিয়ে আম ফলের আশা করা যেমন, ঈমানে ভেজাল ঢুকিয়ে নিজেকে প্রকৃত ঈমানদার ভাবা ঠিক তেমন। তাই তো মহান আল্লাহ ঈমানদারদেরকে প্রকৃত মুসলমান হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا ادْخُلُوْا فِيْ السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ-
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’ (বাক্বারাহ ২/২০৮)। তিনি অন্যত্র বলেন,
* লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; প্রধান দা‘ঈ, বাংলা বিভাগ, আল-ফুরক্বান সেন্টার, হূরা, বাহরাইন।
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا آمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيْدًا-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে বিশবাস স্থাপন কর আল্লাহর উপরে, তাঁর রাসূলের উপরে এবং ঐ কিতাবের উপরে যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রাসূলের উপরে এবং ঐ সকল কিতাবের উপরে, যা তিনি নাযিল করেছিলেন ইতিপূর্বে। আর যে কেউ অবিশ্বাস করে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর ও ক্বিয়ামত দিবসের উপর, সে দূরতম ভ্রষ্টতায় নিপতিত হ’ল’ (নিসা ৪/১৩৬)।
উল্লিখিত আয়াত দু’টির আলোকে ঈমানদারদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। (১) খাঁটি ঈমানদার (২) ভেজাল ঈমানদার। আয়াত দু’টিতে আল্লাহ তা‘আলা ভেজাল ঈমানদারদেরকে ঈমানের বিশুদ্ধতার মাধ্যমে পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশের নির্দেশ প্রদান করেছেন। কেননা অধিকাংশ মুসলমান আজ আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেও মুশরিক। আল্লাহ বলেন, وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُوْنَ ‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে। অথচ সেই সাথে শিরক করে’ (ইউসুফ ১২/১০৬)।
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুন উল্লিখিত আয়াত সমূহের প্রতি, আল্লাহ ঈমানদারদেরকেই পূর্ণ মুসলিম হওয়ার, ঈমান আনয়নের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক। তাই মুসলমান নাম ধারণ করলেই খাঁটি মুসলমান হওয়া যায় না। খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য ঈমানের বিশুদ্ধতা অতীব যরূরী। তাই তো মুসলমানদের ৭২ দল যাবে জাহান্নামে, শুধুমাত্র একটি দল যাবে জান্নাতে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوْا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ-
‘বনু ইস্রাঈল ৭২ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল, আর আমার
উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা
বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার
ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে (তারাই জান্নাতে যাবে)’।[1]
অতএব আসুন! আমরা আমাদের ঈমানকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিই। যদি কোন ক্ষেত্রে আমাদের ঈমান কাফিরদের ঈমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়, তাহ’লে অবশ্যই তা সংশোধন করে রাসূল (ছাঃ)-এর ঈমানের অনুকরণ করি।
ঈমানের আভিধানিক অর্থ : الإيمان من الأمن ضد الخوف والشك ‘ঈমান অর্থ নিশ্চিন্ত বিশ্বাস, যা ভীতি ও সন্দেহের বিপরীত’। সন্তান যেমন পিতা-মাতার কোলে নিশ্চিন্ত হয়, মুমিন তেমনি আল্লাহর উপরে ভরসা করে নিশ্চিন্ত হয়।
ঈমানের পারিভাষিক অর্থ :
اَلإيْمَانُ هُوَ اَلتَّصْدِيْقُ بِالْجِنَانِ وَالْإِقْرَارُ بِاللِّسَانِ وَالْعَمَلُ بِالْأَرْكَانِ يَزِيْدُ بِالطَّاعَةِ وَيَنْقُصُ بِالْمَعْصِيَةِ، اَلْإِيْمَانُ هُوَ الْاَصْلُ وَالْعَمَلُ هُوَ الْفَرْعُ-
‘হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের নাম হ’ল ঈমান। যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং গোনাহে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ঈমান হ’ল মূল এবং আমল হ’ল শাখা’।
সংজ্ঞা বিশ্লেষণ :
(১) اَلتَّصْدِيْقُ بِالْجِنَانِ তথা অন্তরে এক আল্লাহকে বিশ্বাস করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوْا وَلَكِنْ قُوْلُوْا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيْمَانُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ وَإِنْ تُطِيْعُوْا اللهَ وَرَسُوْلَهُ لَا يَلِتْكُمْ مِنْ أَعْمَالِكُمْ شَيْئًا إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ-
‘আরব বেদুঈনরা বলে, আমরা ঈমান আনলাম। তুমি বল, তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বল, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি মাত্র। কারণ ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, তবে তোমাদের কর্মফল সামান্য পরিমাণও নিষ্ফল করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১৪)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অন্তরকে ঈমানের প্রধান স্থান বলে উল্লেখ করেছেন। অন্তর থেকে আল্লাহকে বিশ্বাস না করলে সে যতই ভাল কাজ করুক না কেন, এতে সে মুসলিম হ’তে পারবে না।
(২) وَالْإِقْرَارُ بِاللِّسَانِতথা মুখে আল্লাহর উপরে ঈমানের স্বীকৃতি দেওয়া : শুধু অন্তরে আল্লাহকে বিশ্বাস করলেই তাকে ঈমানদার বলা যাবে না; বরং মৌখিকভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوْا أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ.
‘আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল’।[2] অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) মৌখিকভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমানের স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত তাকে ঈমানদার হিসাবে গণ্য করেননি; বরং তার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন।
(৩) وَالْعَمَلُ بِالْأَرْكَانِ তথা কর্মে বাস্তবায়ন : আন্তরিক বিশ্বাস এবং মেŠখিক স্বীকৃতি দিলেই প্রকৃত মুসলিম হওয়া যাবে না; বরং বিশ্বাস ও স্বীকৃতির সাথে সাথে আল্লাহর যাবতীয় বিধান সাধ্যমত মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ- الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ- أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيْمٌ-
‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যখন তাদের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তর সমূহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। যারা ছালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমরা যে জীবিকা দান করেছি, তা থেকে খরচ করে। এরাই হ’ল সত্যিকারের মুমিন। এদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে উচ্চমর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রূযী’ (আনফাল ৮/২-৪)। তিনি অন্যত্র বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ-
‘তারাই মুমিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ’ (হুজুরাত ৪৯/১৫)।
উল্লিখিত আয়াত সমূহে আল্লাহ তা‘আলা ছালাত ও যাকাত আদায়কারীকে এবং জান-মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীকে প্রকৃত মুমিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং আল্লাহর বিধান কর্মে বাস্তবায়ন না করলে সে প্রকৃত মুমিন নয়।
(৪) يَزِيْدُ بِالطَّاعَةِ وَيَنْقُصُ بِالْمَعْصِيَةِ তথা আল্লাহর আনুগত্যে ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং গোনাহে হ্রাসপ্রাপ্ত হয় : অর্থাৎ ভাল কাজে ঈমান বৃদ্ধি হয় এবং পাপের কাজে ঈমান কমে যায়। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَّعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ-
‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যখন তাদের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তর সমূহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’ (আনফাল ৮/২)। তিনি অন্যত্র বলেন,
وَمَا جَعَلْنَا أَصْحَابَ النَّارِ إِلَّا مَلَائِكَةً وَّمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ إِلَّا فِتْنَةً لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيَسْتَيْقِنَ الَّذِيْنَ أُوْتُوْا الْكِتَابَ وَيَزْدَادَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِيْمَانًا-
‘আমরা ফেরেশ্তাদেরকে করেছি জাহান্নামের প্রহরী; কাফিরদের পরীক্ষা স্বরূপই আমরা তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি যাতে কিতাবীদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে এবং ঈমানদারদের ঈমান বৃদ্ধি হয়’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩১)। তিনি অন্যত্র বলেন,
وَإِذَا مَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُوْلُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيْمَانًا فَأَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ- وَأَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ-
‘আর যখন কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের মধ্যেকার কিছু (মুশরিক) লোক বলে, এই সূরা তোমাদের মধ্যেকার কার ঈমান বৃদ্ধি করল? বস্ত্ততঃ যারা ঈমান এনেছে, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দ লাভ করেছে। পক্ষান্তরে যাদের অন্তরে রোগ আছে, এটি তাদের নাপাকির সাথে আরও নাপাকি বৃদ্ধি করেছে এবং তারা কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে’ (তওবা ৯/১২৪-১২৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الإِيْمَانَ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কাউকে ভালবাসে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই ঘৃণা করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দান করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই দান করা থেকে বিরত থাকে, সে ব্যক্তি ঈমানকে পূর্ণতা দান করে’।[3] তিনি অন্যত্র বলেন,أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ إِيْمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا ‘ঈমানে পরিপূর্ণ মুমিন হ’ল, যার চরিত্র উত্তম’।[4] একদা ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) আদী ইবনু আদী (রহঃ)-কে পত্র লিখেছিলেন এই বলে যে,
إِنَّ لِلْإِيْمَانِ فَرَائِضَ وَشَرَائِعَ وَحُدُوْدًا وَسُنَنًا، فَمَنِ اسْتَكْمَلَهَا اسْتَكْمَلَ الإِيْمَانَ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَكْمِلْهَا لَمْ يَسْتَكْمِلِ الإِيْمَانَ-
‘ঈমানের কতগুলো ফরয, কতগুলো হুকুম-আহকাম,
বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করে তার ঈমান
পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না’।[5]
উল্লিখিত দলীল সমূহ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নেকীর কাজে মুমিনের ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে পাপের কাজে ঈমান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يَزْنِى الزَّانِى حِيْنَ يَزْنِى وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهْوَ مُؤْمِنٌ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় মুমিন থাকে না। মদ্যপায়ী তা পানরত অবস্থায় মুমিন থাকে না। চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না। কোন লুটতরাজকারী লুটতরাজকালে মুমিন থাকে না, এমতাবস্থায় লোকজন তার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে’।[6] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا زَنَى الْعَبْدُ خَرَجَ مِنْهُ الإِيْمَانُ فَكَانَ فَوْقَ رَأْسِهِ كَالظُّلَّةِ فَإِذَا خَرَجَ مِنْ ذَلِكَ الْعَمَلِ عَادَ إِلَيْهِ الإِيْمَانُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন বান্দা যেনা করতে থাকে তখন তার থেকে
ঈমান বের হয়ে তার মাথার উপর ছায়ার ন্যায় অবস্থান করতে থাকে। অতঃপর যখন সে
উক্ত যেনার কাজ থেকে বিরত হয় তখন ঈমান তার নিকট ফিরে আসে’।[7]
(৫) اَلْإِيْمَانُ هُوَ الْاَصْلُ وَالْعَمَلُ هُوَ الْفَرْعُ তথা ঈমান হ’ল মূল এবং আমল হ’ল শাখা : কেউ আল্লাহর যে কোন বিধানকে অস্বীকার করলে সে অবশ্যই ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে; মুখেও নিজেকে মুসলিম বলে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কর্মে বাস্তবায়ন করে না। তাকে যেমন ঈমানদার বলা যাবে না। তেমন তাকে হত্যাযোগ্য কাফির হিসাবেও গণ্য করা যাবে না। বরং তাকে দাওয়াত দিয়ে সংশোধন করতে হবে। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ।
উল্লেখ্য যে, খারেজীরা বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও কর্ম তিনটিকেই ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করে। ফলে তাদের মতে কাবীরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং তাদের রক্ত হালাল’। যুগে যুগে সকল চরমপন্থী ভ্রান্ত মুসলমান এই মতের অনুসারী।
পক্ষান্তরে মুরজিয়ারা কেবল বিশ্বাস অথবা স্বীকৃতিকে ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করে। যার কোন হ্রাস-বৃদ্ধি নেই। তাদের মতে, আমল ঈমানের অংশ নয়। ফলে তাদের নিকট কাবীরা গোনাহগার ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন। আবুবকর (রাঃ) ও অন্যদের ঈমান সমান’। আমলের ব্যাপারে সকল যুগের শৈথিল্যবাদী ভ্রান্ত মুসলমানরা এই মতের অনুসারী।
খারেজী ও মুরজিয়া দুই চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী মতবাদের মধ্যবর্তী হ’ল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ। যাদের নিকট বিশ্বাস ও স্বীকৃতি হ’ল মূল এবং কর্ম হ’ল শাখা। অতএব কাবীরা গোনাহগার ব্যক্তি তাদের নিকট যেমন হত্যাযোগ্য কাফের নয়, তেমনি পূর্ণ মুমিনও নয়। তাদেরকে হত্যা না করে দাওয়াত দিতে হবে।
যে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস না করলে মুসলিম হওয়া যায় না : প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য তিনটি ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা আবশ্যক। (১) ةوحيد الربوبية (তাওহীদুর রুবূবিয়াহ) তথা রব হিসাবে আল্লাহকে এক মানা (২)ةوحيد الألوهية/العبادة (তাওহীদুল উলূহিয়াহ/ইবাদত) তথা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক মানা ও (৩) توحيد الأسماء والصفات (তাওহীদুল আসমা ওয়াছ ছিফাত) তথা আল্লাহর নাম সমূহ ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁকে এক মানা। কেউ উল্লিখিত তিনটি ক্ষেত্রের কোন একটিতে আল্লাহকে এক না মানলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। কাফিররা শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রে (রুবূবিয়াহ) আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু দ্বিতীয় (ইবাদত) ও তৃতীয় ক্ষেত্রে (আসমা ওয়াছ ছিফাত) আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করে না। তাই তারা কাফির ও জাহান্নামী। নিম্নে উল্লিখিত তিন প্রকার তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।
(১) ةوحيد الربوبية (তাওহীদুর রুবূবিয়াহ) : এটা হ’ল, إفراد الله عز وجل بالخلق، والملك، والتدبير ‘আল্লাহকে সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, মালিক এবং নিয়ন্ত্রক হিসাবে বিশ্বাস করা’।[8] যেমন-
(ক) إفراد الله بالخلق তথা সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহকে এক মানা : অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। বরং তিনিই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন,
ذَلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيْلٌ-
‘তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। অতএব তোমরা তার ইবাদত কর। তিনি সকল বস্ত্তর তত্ত্বাবধায়ক’ (আন‘আম ৬/১০২)। তিনি অন্যত্র বলেন, أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ‘সাবধান! সৃষ্টি ও আদেশের মালিক কেবল আল্লাহ’ (আ‘রাফ ৭/৫৪)। তিনি অন্যত্র বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُؤْفَكُوْنَ-
‘হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ব্যতীত কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হ’তে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন ইলাহ নেই। সুতরাং কোথায় তোমরা বিপথে চালিত হচ্ছ’? (ফাতির ৩৫/৩)।
কারো মনে প্রশ্নের উদয় হ’তে পারে, যুগে যুগে মানুষ মোটর সাইকেল, বাস, ট্রাক, বিমান, রকেট ইত্যাদি তৈরী করেছে। ভবিষ্যতে আরো আশ্চর্যজনক অনেক কিছুই তৈরী করবে। তাহ’লে কি মানুষকে দুনিয়াবী এ সকল বস্ত্তর সৃষ্টিকর্তা বলা যায় না? উত্তরে বলা যায়, মানুষ মূলতঃ সৃষ্টিকর্তা নয়। সে আল্লাহর সৃষ্ট বস্ত্তকে এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত করে। সে উদ্ভাবক মাত্র। প্রকৃত স্রষ্টা আল্লাহ। আর এই নতুন নতুন আবিষ্কারের জ্ঞানও আল্লাহ প্রদত্ত।
আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে কাফিরদের বিশ্বাস : কাফিরেরা সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করে। ফেরাউন, আবু জাহল, আবু লাহাব সকলেই আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করত। আল্লাহ বলেন,
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُوْلُنَّ اللهُ فَأَنَّى يُؤْفَكُوْنَ- اللهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ إِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ- وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُوْلُنَّ اللهُ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ-
‘যদি তুমি তাদেরকে (কাফিরদেরকে) জিজ্ঞেস কর, কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং চন্দ্র-সূর্যকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন? অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ। তাহ’লে তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে? আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা সীমিত করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। যদি তুমি তাদেরকে (কাফিরদেরকে) জিজ্ঞেস কর, আকাশ হ’তে বৃষ্টি বর্ষণ করে কে ভূমিকে জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা অনুধাবন করে না’ (আনকাবূত ২৯/৬১-৬৩)।
(খ) إفراد الله بالملك তথা সবকিছুর মালিক হিসাবে আল্লাহকে এক বিশ্বাস করা : আসমান-যমীন এবং তার মধ্যে যা কিছু রয়েছে এসব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ‘আসমান ও যমীনের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহই’ (আলে ইমরান ৩/১৮৯)।
কারো মনে প্রশ্নের উদয় হ’তে পারে যে, মানুষও তো বাড়ী, গাড়ী সহ অনেক কিছুর মালিক হয়ে থাকে। তাহ’লে মানুষকে কি মালিক বলা যায় না?
জবাবে বলব, আসমান-যমীন এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে এর প্রকৃত মালিক আল্লাহ। মানুষের মালিকানা প্রকৃত মালিকানা নয়। কেননা মানুষ চাইলেই তার মালিকানাধীন সম্পদ নষ্ট করতে পারে না। সে চাইলেই তার নিকটে গচ্ছিত টাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে পারে না। যদি কেউ তার সম্পদ অযথা নষ্ট করে তাহ’লে পরকালে এর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আল্লাহকে সবকিছুর মালিক হিসাবে কাফিরদের বিশ্বাস : কাফিররা আল্লাহকে সবকিছুর মালিক হিসাবেও বিশ্বাস করে। আল্লাহ বলেন,
قُلْ مَنْ بِيَدِهِ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيْرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ- سَيَقُوْلُوْنَ لِلَّهِ قُلْ فَأَنَّى تُسْحَرُوْنَ-
‘জিজ্ঞেস কর, সবকিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে? যিনি আশ্রয় দেন ও যার উপরে আশ্রয়দাতা কেউ নেই, যদি তোমরা জান। সত্বর তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তাহ’লে কিভাবে তোমরা জাদুগ্রস্ত হচ্ছ?’ (মুমিনূন ২৩/৮৮-৮৯)।
(খ) إفراد الله بالتدبير তথা সব কিছুর নিয়ন্ত্রক বা পরিচালক হিসাবে আল্লাহকে এক মানা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يَّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يَّدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللهُ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُوْنَ-
‘তুমি জিজ্ঞেস কর, কে তোমাদেরকে আকাশ ও ভূমি থেকে রিযিক দিয়ে থাকেন। কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃত হ’তে এবং কে মৃতকে জীবিত হ’তে বের করে আনেন এবং কে সবকিছু পরিচালনা করেন? নিশ্চয়ই তারা বলবে, আল্লাহ। অতএব তুমি বল, তাহ’লে কেন তোমরা তাঁকে ভয় কর না’? (ইউনুস ১০/৩১)।
উল্লিখিত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহই সবকিছু পরিচালনা করে থাকেন। আর এটাও প্রমাণিত হ’ল যে, কাফিররা আল্লাহকে সবকিছুর পরিচালক হিসাবে বিশ্বাস করে।
সম্মানিত পাঠক! বুঝা গেল, আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টিকর্তা, সব কিছুর মালিক ও পরিচালক হিসাবে বিশ্বাস করার নাম ةوحيد الربوبية (তাওহীদুর রুবূবিয়াহ)। ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বেŠদ্ধ প্রায় সকলেই এ প্রকার তাওহীদে বিশ্বাস করে। আল্লাহর রুবূবিয়াতে বিশ্বাস করে না এমন নাস্তিক পৃথিবীতে থাকলেও তাদের সংখ্যা অতীব নগণ্য। এক্ষেত্রে মুসলমানদের আক্বীদার সাথে অধিকাংশ কাফিরের মিল রয়েছে। কিন্তু কাফিরেরা রুবূবিয়্যাতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করলেও ইবাদতের ক্ষেত্রে আললাহকে এক বলে বিশ্বাস করতে পারেনি। বরং তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে বিভিন্ন কিছুকে শরীক করেছে। তারা কেউ মূর্তিপূজার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করতে চাচ্ছে, আবার কেউ লিঙ্গ পূজা, গোপূজা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করতে চাচ্ছে। আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَا إِلَى اللهِ زُلْفَى-
‘যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, (তারা বলে) আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছিয়ে দিবে’ (যুমার ৩৯/৩)।
[চলবে]
[1]. তিরমিযী হা/২৬৪১; মিশকাত হা/১৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৪৩; তারাজু‘আতুল আলবানী হা/১১।
[2]. বুখারী হা/২৫; মুসলিম হা/২১; মিশকাত হা/১২।
[3]. আবুদাঊদ হা/৪৬৮১; মিশকাত হা/৩০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৮০।
[4]. আবুদাঊদ হা/৪৬৮২; তিরমিযী হা/১১৬২; মিশকাত হা/৫১০১; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৩০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৮৪।
[5]. বুখারী, ঈমান অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১।
[6]. বুখারী হা/২৪৭৫; মুসলিম হা/৫৭; মিশকাত হা/৫৩।
[7]. আবুদাঊদ হা/৪৬৯০; তিরমিযী হা/২৬২৫; মিশকাত হা/৬০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫০৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৬।
[8]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, আল-ক্বাওলুল মুফীদ ‘আলা কিতাবিত তাওহীদ ১/৯।