(৪) সামাজিক দায়িত্বশীলতার দক্ষতা (Scoial Responsibily Skill) :

সামাজিক দায়িত্বশীলতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ব্যক্তিক এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যকে সম্মান করা। নিজ আচরণের সামাজিক পরিণতি সম্পর্কে সংবেদনশীল হওয়া এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। সামাজিক সম্প্রীতি, ভাতৃত্ব ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আবশ্যক। সাধারণভাবে শিক্ষার প্রভাবে মানুষ সামাজিক দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু ক্রমেই বস্ত্তবাদিতা, ভোগপ্রবণতা এবং মৃত্যু পরবর্তী জবাবদিহিতা সম্বন্ধে উদাসীনতা বৃদ্ধির কারণে মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যায় এবং সামাজিক দায়িত্ব লোপ পায়। ফলে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা, সামাজিক নিপীড়ন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অস্থিতিশীলতা, অশান্তি, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বহির্বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়িত্বকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে, যাতে ছাত্রদের মাঝে সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়।

সামাজিক দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। সামাজিক দ্বন্দ্ব সর্বব্যাপী। সর্বস্তরে চলছে ব্যাপক সামাজিক নিপীড়ন ও অশান্তি। আমাদের সমাজের বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়িত্বকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সমাজের উপকার হবে বলে আশা করা যায়।

বাস্তবায়ন কৌশল : (১) যেকোন নতুন চিন্তাকে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সেই চিন্তাকে প্রমোট করতে হয়, যাতে সকলে ভালোভাবে তা অবগত হয়, আগ্রহী হয়ে উঠে এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ফলে তারা আইডিয়াটিকে বাস্তবায়ন করার জন্য সৃজনশীলতা ও অধ্যাবসায়ের সাথে চেষ্টা করে যাবে। তাই সামাজিক দায়িত্ব ও দক্ষতাকেন্দ্রিক ‘লার্নিং আউটকাম’টি ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্যদের মাঝে প্রমোট করতে হবে। শিক্ষকরা বিভিন্ন চলমান কোর্সে সৃজনশীলতার সাথে সামাজিক দায়িত্বকে হাইলাইট করে নানা রকমের চর্চা ও অনুশীলনী উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করবেন। এক্ষেত্রে কেইস স্টাডিজ, বিশেষ বক্তব্য, সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রজেক্টগুলোতে শিক্ষা সফর ইত্যাদি করা যেতে পারে। প্রয়োজনে ‘সামাজিক দায়িত্ব দক্ষতার’ বিষয়টিকে একটি অধ্যায় হিসাবে কোন মানানসই কোর্সে সংযোজন করা যেতে পারে অথবা একে একটি স্বতন্ত্র কোর্স হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

(২) সামাজিক দায়িত্ব ও দক্ষতাকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে প্রয়োগ করার জন্য কতগুলো সুনির্দিষ্ট মূল্যায়নকারী মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। যেগুলোর মাধ্যমে ছাত্রদের দ্বারা সম্পাদিত সামাজিক দায়িত্ব সংক্রান্ত বিষয় মূল্যায়ন করা হবে। যেমন- (১) কোন একটি কাজ, সিদ্ধান্ত বা পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত সামাজিক দায়িত্ব এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের উপর সম্ভাব্য প্রভাব কতটা আন্তরিকতার সাথে শনাক্ত করতে পারছে (২) কতটা স্বচ্ছতার সাথে যুক্তিসঙ্গত সামাজিক মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস বুঝতে সক্ষম হচ্ছে (৩) কোন নীতি বা কাজের সামাজিক প্রভাব কতটা স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারছে এবং (৪) সামাজিক দায়িত্ব সংক্রান্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বের ব্যাপারে কতটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে।

(৩) বর্তমানে চলমান বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা রয়েছে, যেগুলো মূলতঃ সামাজিক দায়িত্ব পালনের ঘাটতির কারণে উদ্ভূত হয়েছে। যেমন পথশিশু, ভিক্ষুক, অবহেলিত বিকলাঙ্গ নাগরিক, পরিত্যক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, সড়কের বিশৃঙ্খলা, যত্রতত্র ময়লা ফেলা, সরকারী সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ ও নানা রকম হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা, নানা প্রকার সামাজিক নিপীড়ন, ফুটপাথ ও রাস্তা দখল ইত্যাদি বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের দ্বারা বিভিন্ন প্রজেক্ট করানো যেতে পারে। এছাড়াও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা যায়, আলোচক এনে তাদের বক্তব্য শুনার ব্যবস্থা করা যায় বা এইসব সমস্যা সংক্রান্ত স্থানে শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা করা যায়। উপরন্তু ছাত্রদেরকে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রগুলিতে স্বেচ্ছাসেবী পরিষেবা দিতে অনুপ্রাণিত করা যায়। এরকম নানামুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রদের মাঝে সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং সেসব পালনে উদ্বুদ্ধ করে যেতে হবে।

(৫) নৈতিক দায়িত্বের দক্ষতা  (Ethical Responsibility Skill) :

নৈতিক দায়িত্বের দক্ষতা হচ্ছে কোন একটি ক্ষেত্র বা প্রসঙ্গের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং প্রতিষ্ঠিত একাধিক নীতি এবং মূল্যবোধ সনাক্ত, ব্যাখ্যা ও কাজে পরিণত করার ক্ষমতা। সমাজের অখন্ডতা, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্য নাগরিকদের নৈতিক দায়িত্ব পালন অপরিহার্য। সাধারণত ব্যক্তিগত লাভের জন্য নৈতিক দায়িত্বের প্রতি অবহেলা করা হয়। চরম বস্ত্তবাদের সাথে নৈতিক দায়িত্বের একটা পরস্পরবিরোধী সম্পর্ক আছে। কেননা চরম বস্ত্তবাদ চর্চা ব্যক্তিগত লাভকে অন্যের ভোগান্তির বিনিময়ে হ’লেও মুখ্য করে তুলে এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে ভুলিয়ে দেয়। সমাজে আজ নৈতিক দায়িত্বের অধঃপতন সর্বত্র দৃশ্যমান। অনৈতিকতা যেন একটি সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। সমাজিক অখন্ডতা, শান্তি, স্থিতিশীলতা, ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা প্রায় বিলুপ্তির পথে। অতীতে শিক্ষা প্রক্রিয়ার প্রভাবে শিক্ষিত নাগরিকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নৈতিকতাবোধ এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হ’তেন। কিন্তু আজ শিক্ষিত সমাজের মাঝেই সর্বাধিক নৈতিক দায়িত্বের স্খলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নৈতিক দায়িত্ববোধের দক্ষতাকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে ব্যাবহার করে ছাত্রদের নৈতিক দায়িত্বের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও নৈতিক দায়িত্বের দক্ষতাকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে শনাক্ত করে এই ব্যাপারে ছাত্রদের অবগতি, আগ্রহ ও প্রয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। নৈতিক দায়িত্বের দক্ষতাকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার একটি উদাহরণ হচ্ছে ‘শিক্ষার্থীরা প্রদত্ত সমাধানগুলিতে নৈতিক বিবেচনার সাথে রায় প্রয়োগের ক্ষমতা রাখে’।

বাস্তবায়ন কৌশল : (১) নৈতিক দায়িত্ববোধকে সকল স্টেকহোল্ডার যেমন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের কাছে প্রমোট করে এই ধারণার গুরুত্ব সম্পর্কে সকলকে অবহিত এবং আগ্রহী করে তুলতে হবে। উপরন্তু ক্লাসরুমের শিক্ষা কার্যক্রমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্বের বিষয়টি হাইলাইট করতে হবে বিভিন্ন উপায়ে। যেমন আলোচনা, কেইস স্টাডিজ, সৃজনশীল অনুশীলনী, কোন কোর্সের সাথে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করা বা একটি নতুন কোর্স চালু করা ইত্যাদি।

(২) ছাত্রদের নৈতিক দায়িত্বের দক্ষতা বৃদ্ধির পদ্ধতিকে কার্যকরী করার জন্য অগ্রগতির মূল্যায়ন করা অপরিহার্য। সেজন্য বিভিন্ন সৃজনশীল প্রজেক্ট করাতে হবে এবং সেগুলোকে নির্ধারিত মানদন্ড দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়নকারী মানদন্ডের উদাহরণ হ’ল- (ক) ছাত্ররা প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে বিশদভাবে পুরো নৈতিক দ্বনদ্ব কতটা স্পষ্ট করে বর্ণনা করতে পারছে (খ) পরিণতি বিবেচনা করে ঠিক কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা কতটা যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারণ করতে পারছে (গ) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সকল স্টেকহোল্ডারদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করতে পারছে কতটুকু (ঘ) বহু সংখ্যক বিকল্প সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে সেগুলোর প্রতিটিকে সচেতনভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে কতটুকু এবং (ঙ) যৌক্তিক এবং ব্যবহারিক বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সুফারিশ কতটা স্পষ্ট হয়েছে। মূলতঃ এগুলো আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক, ছাত্র ও পরিচালকগণ ঠিক করবেন।

(৩) ছাত্রদেরকে নৈতিকতা সম্বন্ধে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ক্লাসের বাইরে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। যেমন আলোচনা সভা, সেমিনার, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। এগুলো কর্তৃপক্ষ, ছাত্র বা উভয়ের উদ্যোগে হ’তে পারে। 

(৬) তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা (Information Technology Skill) :

তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা হ’ল- প্রযুক্তি সম্পর্কিত ব্যবহার, এডমিনিস্ট্রেশন, ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, আর্কিটেকচার এবং ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত দক্ষতা, জ্ঞান এবং মেধা। বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তথ্য-প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগাযোগ, ডেটা এনালাইসিস, ডেটা ম্যানেজমেন্ট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, গ্রাহক বা ক্লায়েন্ট সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সকল কাজে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ হয়ে থাকে। সেজন্য বহির্বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তথ্য-প্রযুক্তি দক্ষতা একটা কমন ‘লার্নিং আউটকাম’। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতাকে একটা ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে হাইলাইট করা যায়, যাতে করে তারা প্রফেশনাল বা অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে আইটি প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। 

বাস্তবায়ন কৌশল : (১) আজকের দুনিয়ায় তথ্য-প্রযুক্তির গুরুত্ব সম্ভবতঃ প্রত্যেকেরই জানা আছে। তারপরও এটিকে ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমের টিচিং এবং লার্নিং কার্যক্রমে প্রযুক্তি দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও প্রযুক্তি দক্ষতা শেখানো হচ্ছে না তাদের শুরু করা দরকার। তা না হ’লে গ্রাজুয়েটরা জীবন চলার ক্ষেত্রে দুর্বল থেকে যাবে। প্রযুক্তি দক্ষতার উপর কোন কোর্স ছাত্রদের জন্য আবশ্যক করা যেতে পারে। তাছাড়াও বিভিন্ন কোর্সে প্রযুক্তি দক্ষতার প্রয়োগের চর্চা করানো যেতে পারে। ঊপরন্তু ‘লার্নিং আউটকামে’র চিন্তা মাথায় রেখে নানা ধরনের সৃজনশীল অনুশীলনী, প্রজেক্ট, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি করানো যেতে পারে।

(২) এই ‘লার্নিং আউটকামে’র অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে যেটা হবে কোর্স মূল্যায়ন বহির্ভূত। সেজন্য নির্দিষ্ট মানদন্ড নির্ণয় করতে হবে, যা দ্বারা ছাত্রদের করা বিশেষ এসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করা হবে। যেমন- (ক) সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কী পরিমাণে কম্পিউটার ভিত্তিক প্রডাক্টিভিটি টুলস ব্যবহার করতে পারছে (খ) কতটা ব্যাপকভাবে কম্পিউটার ভিত্তিক প্রডাক্টিভিটি টুলস সৃজনশীলতার সাথে ব্যবহার করতে পারছে (গ) ইন্টারনেট এবং অন্যান্য অনলাইন উৎস ব্যবহার করে কতটুকু তথ্য সংগ্রহ এবং শেয়ার করতে পারছে (ঘ) যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্রযুক্তি কতটা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারছে এবং (ঙ) তথ্য-প্রযুক্তির মূল্য ও গুরুত্ব কতটা উপলব্ধি করতে পারছে।

(৩) ছাত্রদের তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে ক্লাসরুমের বাইরে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। যেমন ওয়ার্কশপ, ট্রেনিং, শর্ট কোর্স, প্রাক্টিক্যাল, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি। বিভিন্ন সেন্টার বা ল্যাবরেটরীর মাধ্যমে এসব করানো যেতে পারে।

(৭) নেতৃত্বের দক্ষতা (Leadership Skill) :

নেতৃত্বের দক্ষতা হচ্ছে এমন এক দক্ষতা, যার দ্বারা অন্যান্য ব্যক্তি, দল বা গোটা সংস্থাকে পরিচালনা, প্রভাবিত বা গাইড করা হয়। এটা নানা উপায়ে কার্যকরী হ’তে পারে। যেমন অথোরিটির মাধ্যমে, বল প্রয়োগ দ্বারা, শাস্তির ভয় দেখিয়ে বা প্রেরণামূলক উপায়ে। সাধারণভাবে সবচেয়ে টেকসই এবং উপকারী হচ্ছে প্রেরণামূলক উপায়ে নেতৃত্বের দক্ষতা বাস্তবায়ন করা। নেতৃত্বের দক্ষতার প্রয়োগ বা ব্যবহার সাধারণত যে কোন স্তরে বা ক্ষেত্রে হ’তে পারে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। কেননা নেতৃত্বের দক্ষতা তার দলের সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা বের করে আনতে পারে এবং দলের সম্মিলিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। যেকোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা, সফলতা এবং প্রবৃদ্ধি অনেকাংশে নেতৃত্বের দক্ষতার উপর নির্ভরশীল।[1] তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতৃত্ব দক্ষতার উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যক্তি-সমাজ উভয়ের জন্য কল্যাণকর। দেশের ধর্মীয় বা সাধারণ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেতৃত্বের দক্ষতাকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ নির্ধারণ করে ছাত্রদের নেতৃত্ব দক্ষতাকে বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা চালাতে পারে। নেতৃত্ব দক্ষতাকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে উপস্থাপন করার একটি উদাহরণ হচ্ছে ‘নেতৃত্বের দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হওয়া’।

বাস্তবায়ন কৌশল : (১) নেতৃত্বের দক্ষতাকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রথমে এই ধারণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ছাত্র, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত এবং অনুপ্রাণিত করতে হবে। শ্রেণীকক্ষের চলমান বিভিন্ন কোর্সে নেতৃত্বের দক্ষতা বিষয়ক একটি অধ্যায় সংযোজন করা যেতে পারে বা নেতৃত্ব দক্ষতার উপর স্বতন্ত্র কোর্স চালু করা যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সৃজনশীল অনুশীলনী, প্রজেক্ট, রোল প্লে, নেতৃত্ব সিমুলেশন, এসাইনমেন্ট, গেস্ট লেকচার, টীম প্রজেক্ট, নেতৃত্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও প্রদর্শন ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

(২) ছাত্রদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য তাদের করা বিশেষ প্রজেক্ট বা এসাইনমেন্ট মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। যেমন- (ক) নেতৃত্বের আনুপূর্বিক বিশ্লেষণ এবং সমস্যার বিবরণ কতটা গ্রহণযোগ্যতার সাথে করা হয়েছে (খ) নেতৃত্বের পরিস্থিতি বিষয়ক পর্যাপ্ত যোগাযোগ করা হয়েছে কি-না (গ) জ্ঞানীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যক্তি এবং দলের জন্য কার্যক্রমের প্রস্তাবনা কতটা তৈরি করতে পেরেছে (ঘ) নেতৃত্বের ক্ষমতা প্রয়োগ এবং দলের আনুগত্য কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছে (ঙ) সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের সমাধান কতটা কার্যকারিতার সাথে করতে পেরেছে (চ) সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পেরেছে এবং (ছ) উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন দল তৈরিতে কতটা সফল হয়েছে।

(৩) ক্লাসরুমের বাইরে নেতৃত্বের দক্ষতা ‘লার্নিং আউটকামের’ চর্চা নানাভাবে হ’তে পারে। যেমন স্টুডেন্ট সোসাইটি, স্টুডেন্ট ক্লাব, দলভিত্তিক প্রজেক্ট, গ্রুপভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম, কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদি। শিক্ষক ও ছাত্ররা মিলে বিভিন্ন সৃজনশীল অনুশীলনী, প্রজেক্ট, রোল প্লে ইত্যাদি কাজ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যেতে পারে।

(৮) বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দক্ষতা (Global Perspective Skill) :

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে শনাক্ত, বিশ্লেষণ ও অন্তর্ভুক্ত করার দক্ষতাকে বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দক্ষতা বলা হয়। মূলতঃ পরিবহন এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিতে অগ্রগতি হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ, সংস্থা এবং সরকারগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং সংহতকরণের প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হয়ে চলেছে। এখন প্রতিটি দেশ ও সমাজ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। অর্থনীতি, ব্যবসা, শিল্প, ভোগ্যপণ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা, রাজনীতি, আইন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি, অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, জীবনাচার, ফ্যাশন, বিনোদন, খেলা-ধুলা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, খাদ্য, কৃষি, সেবাখাত, দর্শন, বিশ্বদর্শন, মিডিয়া ইত্যাদি প্রায় সবকিছুই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত।[2]

তাই শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যাতে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে কার্যকরীভাবে বিবেচনায় নিতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি শিক্ষার্থীদের অধিকতর চৌকস ও পারদর্শী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দক্ষতাকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ নির্ধারণ করে এর যথাযথ চর্চা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে পারে, যাতে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বিষয়গুলি চিহ্নিত করা এবং বিবেচনা করার ক্ষমতা অর্জন করে।

বাস্তবায়ন কৌশল : (১) বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দক্ষতা ও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপকতা, অনিবার্যতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে ছাত্র, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত ও আগ্রহী করে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্লাসরুমে ছাত্রদের মাঝে এই দক্ষতা সৃষ্টির জন্য নানামুখী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন আলোচনা, সৃজনশীল কেইস স্টাডিজ, বিশেষ প্রজেক্ট, গেস্ট লেকচার, ফিল্ড ট্রিপ, নির্দিষ্ট কোর্সে একটি অধ্যায় সংযোজন, নতুন কোর্স অফার ইত্যাদি। শিক্ষকরা সৃজনশীলতার সাথে বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কৌশল উদ্ভাবন করবেন এবং ব্যবহার করবেন।

(২) অন্যান্য সকল ‘লার্নিং আউটকামের’ মতো বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দক্ষতার ‘লার্নিং আউটকাম’ মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে, যার দ্বারা ছাত্রদের করা বিশেষ প্রজেক্ট বা এসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করার মাধ্যমে ছাত্রদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। যেমন- (ক) সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন সম্পর্কে কতটা সচেতনতা প্রদর্শন করতে পেরেছে (খ) বিশ্বায়নকে প্রভাবিত ও পরিচালনা করার শক্তিগুলিকে কতটা শনাক্ত করতে পেরেছে (গ) বৈশ্বিক সমস্যাগুলিকে কতটা দক্ষতার সাথে এবং নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে পেরেছে (ঘ) প্রাসঙ্গিক বৈশ্বিক সমস্যাগুলি কতটা গভীরতার সাথে এবং ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছে এবং (ঙ) সিদ্ধান্ত এবং সুফারিশ কতটা উন্নত এবং সৃজনশীল হয়েছে।

(৩) বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দক্ষতার ‘লার্নিং আউটকামকে’ বাস্তবায়নের জন্য শ্রেণীকক্ষের বাইরেও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ও প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনে নানামুখী কার্যক্রম চালাতে হবে। যেমন স্টুডেন্ট সোসাইটি, আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, মানানসই প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড ট্রিপ, উপযুক্ত এবং প্রাসঙ্গিক ভিডিও প্রদর্শন, গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। শিক্ষকরা ও ছাত্ররা এ ব্যাপারে সৃজনশীলতার সাথে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

(৯) দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা (Teamwork Skill) :

দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা হ’ল এমন গুণাবলী এবং ক্ষমতা যা কোন ব্যক্তিকে কথোপকথনে, প্রকল্পের কাজে, সভায় বা অন্যান্য সহযোগিতামূলক কাজের সময়ে অন্যের সাথে ভালভাবে কাজ করতে সক্ষম করে তোলে। এই দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির থাকতে হয় ভাল যোগাযোগ করার ক্ষমতা, সক্রিয়ভাবে অন্যের কথা শ্রবণের অভ্যাস, দায়বদ্ধতা এবং সততা। জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকে অন্যের সাথে পাশাপাশি কাজ করতে হয়। এসময় সহানুভূতিশীলতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে পারলে নিজেরও উপকার হয় এবং দলের বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। একটি স্বাস্থ্যকর ও উচ্চ-কার্যকরী কর্মস্থল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উন্নতমানের প্রতিষ্ঠানগুলি টীম ওয়ার্ক দক্ষতার উপর জোর দিয়ে থাকে।[3] বহির্বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি টীম ওয়ার্ক স্কিলকে একটি ‘লার্নিং আউটকামের’ পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে থাকে। উক্ত দক্ষতাকে ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার একটি উদাহরণ হচ্ছে দলের মাঝে কার্যকরভাবে কাজ করার ক্ষমতা রাখা’।

বাস্তবায়ন কৌশল : (১) দলবদ্ধভাবে কাজ করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্যদের বোঝাতে হবে। একে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ হিসাবে ব্যবহার করে চর্চা করতে পারলে কি কি উপকার হবে সেটাও প্রমাণ করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য শ্রেণীকক্ষে বিভিন্ন সৃজনশীল কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেমন বিশেষ প্রজেক্ট, রোল প্লে, সিমুলেশন, টীম ওয়ার্ক, প্রাসঙ্গিক পড়া উপকরণ অন্তর্ভুক্তকরণ, টীম সম্পর্কিত কেইস স্টাডিজ ইত্যাদি। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের অনেক সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে।

(২) শিক্ষার্থীরা বিশেষ প্রজেক্ট বা টার্ম পেপার করবে, যার মাধ্যমে ছাত্রদের দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা অর্জনের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের মানদন্ড হ’তে পারে এরূপ- (ক) দলের শেখার প্রক্রিয়াটিতে সহায়তা করার জন্য সর্বদা একজন ছাত্র নিজেকে কতটা প্রস্ত্তত দেখাতে পারছে (খ) দলের শিক্ষার পরিবেশকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত উপাদান কতটা নিয়ে আসতে পারছে (গ) অন্যদের কাছে বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করার জন্য সর্বদা সক্রিয় থাকতে পারছে কতটুকু (ঘ) দলের মাঝে নতুন অন্তর্দৃষ্টি সরবরাহ করতে পারছে কতটা (ঙ) দলের মিটিং-এ নিয়মিত যোগ দিতে পারছে কতটা (চ) দলের সদস্যদের সাথে সর্বদা একটি ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়া করতে পারছে কতটা এবং (ছ) একটি স্পষ্ট, ইতিবাচক এবং কেন্দ্রীভূত যোগাযোগ পদ্ধতির অধিকারী হ’তে পেরেছে কতটা।

(৩) ক্লাসরুমের বাইরেও ছাত্রদেরকে নানা রকম গ্রুপ প্রজেক্ট-এ জড়িত করতে হবে। যেমন সমাজ সেবা, স্বেচ্ছাসেবা মূলক কার্যক্রম, ক্ষুধার্ত বা বিপদগ্রস্তদের জন্য সামাজিক কোন আয়োজন, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক প্রোগ্রাম ইত্যাদি।

(১০) পরিবেশগত দায়িত্বশীলতার দক্ষতা (Environmental Responsibility Skill) :

পরিবেশগত দায়িত্বশীলতার দক্ষতা হচ্ছে এমন প্রয়োজনীয় জ্ঞান, সক্ষমতা, মূল্যবোধ এবং মনোভাব যার দ্বারা একজন ব্যক্তি এমন সমাজ নির্মাণে আগ্রহী ও কার্যকারী ভূমিকা পালনে নিয়োজিত থাকে, যে সমাজ পরিবেশের উপর মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রভাবকে হ্রাস করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এনভারমেন্টাল সেনসিটিভিটির অবর্তমানে মানুষের উৎপাদন ও ভোগের কার্যক্রম নেতিবাচকভাবে আমাদের সামগ্রিক পরিবেশকে যেমন মাটি, বাতাস, পানি, প্রাণী জগত, উদ্ভিদ জগত, স্বাস্থ্য, খাদ্য ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে। টেকসই সমাজ ও পরিবেশ বিনষ্ট হয়। ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবন-যাপন ব্যাহত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে।[4]

তাই দেশের ধর্মীয়-সাধারণ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এনভারমেন্টাল রেস্পন্সিবিলিটি স্কিলকে একটি ‘লার্নিং আউটকাম’ ঠিক করে এর পদ্ধতিগত চর্চা চালু করতে পারে, যাতে করে আমাদের শিক্ষার্থীরা পরিবেশগত দায়িত্বশীলতার দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং যেকোন উৎপাদন বা ভোগ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পরিবেশের উপর প্রভাব বোঝা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে’।

বাস্তবায়ন কৌশল : (১) সকল স্টেকহোল্ডার যেমন শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, দাতাসদস্য প্রমুখদের কাছে এনভারমেন্টাল রেস্পন্সিবিলিটি স্কিল বা পরিবেশ বিষয়ক দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে এবং প্রমোট করতে হবে। যাতে করে তারা আগ্রহের সাথে এই ‘লার্নিং আউটকামটিকে’ প্রয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। শ্রেণীকক্ষে এ ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যকীয়। যেমন বিভিন্ন চলমান কোর্সের আলোচনায় উক্ত দক্ষতাকে হাইলাইট করা, এ বিষয়ক ম্যাটেরিয়াল অন্তর্ভুক্ত করা, প্রয়োজনবোধে পরিবেশের দায়িত্ব বিষয়ক অধ্যায় সংযোজন করা, পরিবেশ সংক্রান্ত কোন অবস্থা পরিদর্শন বা এ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড ট্রিপ করানো, পরিবেশ বিষয়ক এক্সপার্টদের গেস্ট লেকচারার হিসাবে নিয়ে আসা, সৃজনশীল প্রজেক্ট করানো ইত্যাদি।

(২) ছাত্ররা পরিবেশগত দায়িত্বশীলতার দক্ষতা কতটা অর্জন করতে পারছে সেটা মূল্যায়ন করার জন্য তাদেরকে দিয়ে বিশেষ সৃজনশীল প্রজেক্ট করাতে হবে। সেইসব প্রজেক্ট মূল্যায়নের জন্য বিশেষ মানদন্ড নির্ধারণ করে নিতে হবে। যেমন (ক) পরিবেশগত সমস্যা ও প্রাসঙ্গিক আইন কতটা বুঝতে পারছে এবং সে ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে পারছে (খ) বর্তমানের চাহিদা পূরণ করার সময় ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সক্ষমতার প্রতি কতটা সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করতে পারছে (গ) বিভিন্ন পরিবেশ সংক্রান্ত প্রোগ্রাম যেমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রোগ্রাম, শক্তি সংরক্ষণ, কাগজবিহীন অফিস, সবুজ বিক্রেতা, প্ল্যান্টে বিনিয়োগ, মানুষের শক্তি সংরক্ষণ, টেকসই পরিবহন ইত্যাদি কতটা প্রমোট করতে পেরেছে (ঘ) মানুষকে পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে কতটা সচেতন করতে পারছে এবং (ঙ) পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব কমানোর সৃজনশীল ও কার্যকরী পদক্ষেপ কতটা নিতে পেরেছে। 

(৩) ক্লাসের বাইরে ছাত্রদেরকে বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডে নিয়োজিত করতে হবে। যেমন রিসাইক্লিং, এনার্জি সংরক্ষণ, কাগজের ব্যবহার কমানো, গাছ লাগানো, অর্গানিক ও সবুজ পণ্যসমূহ প্রমোট করা, পুনরায় ব্যবহার উৎসাহিত করা, প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিবেশ সংরক্ষণে দায়িত্ব পালন সম্পর্কে আলোচনা সভা করা, যত্রতত্র ময়লা নিক্ষেপ বিরোধী অভিযান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের এনে তাদের বক্তব্য শ্রবণ ইত্যাদি। এছাড়া ছাত্র ও শিক্ষকরা নিজেরাই নানা ধরনের সৃজনশীল কর্মকান্ড উদ্ভাবন করতে পারবে।

উপসংহার :

আলোচ্য প্রবন্ধে সবধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘লার্নিং আউটকামসের’ গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সহজ কথায়, ‘লার্নিং আউটকামস’ একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অতি প্রয়োজনীয় ও সার্বজনীন দক্ষতাকে সকল ধারা যেমন সায়েন্স, আর্টস, কমার্স বা কওমী, আলিয়া মাদ্রাসা সহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের মাঝে তাদের স্ব স্ব কারিকুলাম ও প্রোগ্রামের কাঠামোর মধ্য দিয়েই ডেভেলপ করানো সম্ভব। এইসব দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ছাত্ররা অধিকতর দক্ষতার সাথে নিজেদের ও সমাজের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

এইসব দক্ষতাগুলো যখন ‘লার্নিং আউটকামস’ হিসাবে নির্ধারণ করা হবে তখন এগুলির চর্চা শক্তিশালী ও বেগবান হবে। ‘লার্নিং আউটকামস’ হিসাবে এগুলোর ব্যবহার ৭ম বা ৮ম শ্রেণী থেকে পিএইচ.ডি পর্যন্ত চলমান থাকতে পারে। বাইরের দেশে শিক্ষার সর্বস্তরে এক্রিডিটেশন (সত্যায়ন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এইসব ‘লার্নিং আউটকামসের’ চর্চা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যেহেতু এক্রিডিটেশন প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত কার্যকরীভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়, তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি স্বেচ্ছায় ‘লার্নিং আউটকামসের’ চর্চা শুরু করে উপকৃত হ’তে পারে। প্রথমে চার থেকে ছয়টি ‘লার্নিং আউটকামস’ সিলেক্ট করে সেগুলি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা যেতে পারে। যতই এসবের চর্চা হবে ততই এসবের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকবে; ছাত্র ও শিক্ষকদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকবে; শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা, ভাবমূর্তি ও সুনাম বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক প্রভাব সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ। 

প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া

প্রফেসর (অবঃ), লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা; কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম এ্যান্ড মিনারেলস্, সঊদী আরব; সুলতান ক্বাবূস ইউনিভার্সিটি, ওমান।


[1]. মাইকেল ডি. ম্যামফোর্ড ও অন্যান্য, ‘নেতৃত্বের দক্ষতা : উপসংহার এবং ভবিষ্যত দিকনির্দেশ’ [দ্বিমাসিক লিডারশীপ কোয়াটার্লী ১১:১ (২০০০)], পৃ. ১৫৫-১৭০।

[2]. রবার্ট জি. হ্যানভে, ‘একটি অর্জনযোগ্য বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ’, (থিওরী ইনটু প্র্যাকটিস ২১.৩ (১৯৮২) : ১৬২-১৬৭।

[3]. রিচার্ড এল. হিউজেস ও স্টিভেন কে জোনস, ‘কলেজ শিক্ষার্থীদের দলবদ্ধ কাজে দক্ষতা বিকাশ এবং মূল্যায়ন’, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার জন্য নতুন দিকনির্দেশ সমূহ ২০১১.১৪৯ (২০১১) : ৫৩-৬৪

[4]. এইচ হাঙ্গারফোড এবং আর বেন পাইটন. ‘নাগরিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত : পরিবেশগত পদক্ষেপ’, বর্তমান ইস্যুগুলি ৪০০:১৬৬ (১৯৮০)






বিষয়সমূহ: শিক্ষাব্যবস্থা
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
পিতা-মাতার সাথে আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করার বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মানবসম্পদ উন্নয়নে ইমামদের ভূমিকা - জামীলুর রহমান - কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা
মানবাধিকার ও ইসলাম (৭ম কিস্তি) - শামসুল আলম
হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে তাবলীগী ইজতেমার ভূমিকা - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
জীবনের খেলা ঘরে - মাওলানা মুহিউদ্দীন খান - প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, মাসিক মদীনা
রাসূল (ছাঃ)-এর উপর শত্রুদের নির্যাতন ও পরিণাম - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মাদায়েন বিজয় - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আরও
আরও
.