ভূমিকা :

যারা বিদ্যার অধিকারী এবং যারা বিদ্যার অধিকারী নয় তারা উভয়ে সমান নয়। যারা বিদ্যার অধিকারী তারা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। বিদ্যা ও প্রজ্ঞার অধিকারী যারা তারা প্রভূত কল্যাণ লাভ করেন। আমল শুরুর আগে দরকার তৎসম্পর্কিত বিদ্যা। ধর্মীয়, দৈহিক, মানসিক, আর্থিক ও বৈষয়িক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিদ্যা জানা একান্তই প্রয়োজন। ইসলাম একটি জীবনব্যবস্থার নাম। মুসলিম হিসাবে বেঁচে থাকতে এবং জীবন-যাপন করতে চাইলে তাই ইসলাম সংক্রান্ত বিদ্যা অর্জন ফরয। আরবী ফরয শব্দের অর্থ ‘আবশ্যিক’। এই ফরয বিদ্যা দু’ভাগে বিভক্ত। ফরযে কিফায়া ও ফরযে আইন। ফরযে কিফায়া সমষ্টিগত ফরয এবং ফরযে আইন ব্যক্তিগত ফরয। ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন-জীবিকার বিষয়সমূহ, মুসলিম মিল্লাত, সমাজ, রাষ্ট্র এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনার জন্য যে বিদ্যা না জানলে এগুলো অকার্যকর হয়ে পড়বে তা জানা ফরযে কিফায়া। অনেকটা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের এ বিদ্যা। সমাজের আবশ্যকীয় পরিমাণ মানুষকে এ বিদ্যা শিখতেই হবে। তবে প্রত্যেককে শিখতে হবে না। পক্ষান্তরে যে বিদ্যা ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যক্তিগত জীবন নির্বাহের জন্য আবশ্যক তা অর্জন করা ফরযে আইন। এ বিদ্যা মুসলিম নর-নারী মাত্রই শিখতে হবে। ঈমান-আক্বীদা এবং আমল ছহীহ-শুদ্ধ ও উন্নততর করা এবং বাতিলের আক্রমণ থেকে নিজেকে হেফাযতের লক্ষ্যে এ বিদ্যা জানা প্রয়োজন। এতদসম্পর্কে আমাদের কথা বলার আগে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ কী বলেছেন তা জানা সমীচীন হবে।

একজন মুসলিমের জন্য কতটুকু জ্ঞানার্জন করা ফরযে আইন?

একজন মুসলিমের ইসলাম মেনে জীবন যাপনের জন্য কতটুকু বিদ্যা অর্জন ফরযে আইন? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ইসলাম ওয়েব-এ বলা হয়েছে, ‘একজন মুসলিমের উপর ঐ পরিমাণ বিদ্যা অর্জন ফরযে আইন, যাতে তার আক্বীদা, ইবাদত এবং পেশা বা বৃত্তিগত দায়িত্ব পালন ছহীহ-শুদ্ধ হবে।

আল্লামা আখযারী তার ‘মুক্বাদ্দামা’ গ্রন্থে বলেছেন, মুকাল্লাফ বা আদিষ্ট ব্যক্তির উপর প্রথম ফরয নিজের ঈমান ছহীহ-শুদ্ধ করা। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমকে তার আক্বীদা ছহীহ-শুদ্ধ করার জন্য ঈমানের ছয়টি রুকন বা মৌল উপাদান জানতে হবে। তারপর এমন সব কিছু জানা, যাতে তার উপর অর্পিত ফরযে আইন দায়িত্বসমূহ সে সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে। যেমন ত্বাহারাত, ছালাত ও ছিয়ামের বিধি-বিধান।

দামেশকের বাসিন্দা শাফেঈ মাযহাবের আল্লামা ‘আলমাভী তার ‘আল-ইক্বদুত তালীদ’ গ্রন্থে বলেছেন, কালেমায়ে শাহাদত উচ্চারণ ও তার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার সত্যতা জ্ঞাপন করা এবং তার প্রতি সন্দেহমুক্ত ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বিশ্বাস বজায় রাখাই ঈমান-আক্বীদার ক্ষেত্রে যথেষ্ট। ঈমানের ছয়টি বিষয়ের দলীল-প্রমাণ দাখিল করা এখানে যরূরী নয়। কেননা মহানবী (ছাঃ) ইসলাম গ্রহণকালে আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর নবুঅতের প্রতি শাহাদত বা সাক্ষ্য উচ্চারণ ছাড়া আর কিছু তলব করতেন না। এ বিষয়ে আমাদের সালাফ, ফকীহবৃন্দ ও মুহাক্কিক বা গবেষক আলেমগণ একমত বলে তিনি যোগ করেছেন।

নিজের ইবাদত ছহীহ-শুদ্ধ করার জন্য তাকে জানতে হবে পবিত্রতা লাভের পদ্ধতি, ছালাত ও ছিয়াম আদায়ের পদ্ধতি ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে ছালাত আদায় করবে’।[1] যে ছাহাবী ছালাতে ভুল করেছিলেন তাকে তিনি বলেছিলেন,إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ، ‘যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে, তারপর কুরআন থেকে তোমার পক্ষে যতটুকু সহজ হয় ততটুকু পড়বে’।[2] হজ্জ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা আমার থেকে তোমাদের হজ্জের নিয়মাবলী শিখে নাও’।[3]

কোন বিষয় জটিল মনে হ’লে যিনি তা জানেন তার নিকট জিজ্ঞেস করে তাকে বিষয়টির সুরাহা করে নিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوْحِيْ إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ، ‘যদি তোমরা না জানো, তাহ’লে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর’ (নাহল ১৬/৪৩)। বিখ্যাত তাবেঈ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই বিদ্যা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয।

কাজেই যে ব্যক্তি তার দ্বীনী বিষয়ে কোন জটিলতায় পতিত হবে সে কোন জ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করে তা জেনে নিবে।[4]

প্রশ্ন দেখা দেয়, যখন কোন ব্যক্তি মুসলিম সমাজে জন্মগ্রহণ করে ও প্রতিপালিত হয় এবং মুসলিম সমাজেরই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণী থেকে শেষ শ্রেণী পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা লাভ করে তার এ শিক্ষা কি ফরযে আইন পরিমাণ জ্ঞান অর্জনে যথেষ্ট হবে? কতটুকু বিদ্যা অর্জনই বা ফরযে আইন?

এ কথার উত্তর এই যে, শারঈ বিদ্যা দুই প্রকার। (১) ফরযে আইন, যা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। (২) ফরযে কিফায়া, সমাজের কিছু লোক শিখলে বাকি লোকেরা এই ফরয দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।

একজন মুসলিমের উপর যে পরিমাণ বিদ্যা অর্জন ফরযে আইন তা হ’ল- আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ সংক্রান্ত বিদ্যা, তাঁর কোন অংশীদার নেই, তাঁর সদৃশ ও সমতুল্য কেউ নেই; ঈমানের মৌলিক রুকনসমূহ কী কী, তাকে তা জানতে হবে। জানতে হবে সেসব ফরয বিধান যা স্থায়ীভাবে বান্দার উপর আদায় করা ফরয। যেমন ছালাত সংক্রান্ত বিদ্যা, মালদার ব্যক্তির উপর যাকাত সংক্রান্ত বিদ্যা, যিনি বেচা-কেনা করেন তার বেচা-কেনা সংক্রান্ত বিদ্যা ইত্যাদি। এমনিভাবে সকল হারাম জিনিস সংক্রান্ত বিদ্যা তাকে জানতে হবে। যেমন সূদ, ঘুষ, যুলুম ইত্যাদি সংক্রান্ত বিদ্যা।

আল্লামা ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, ‘বিদ্বানগণ এ কথায় একমত যে, এক ধরনের বিদ্যা রয়েছে যা শেখা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। আরেক ধরনের বিদ্যা রয়েছে যা শেখা ফরযে কিফায়া বা সমষ্টিগত ফরয, কোন স্থানের কেউ একজন তা শিখলে ঐ স্থানের সকল বাসিন্দার উপর থেকে ঐ ফরয রহিত হয়ে যাবে।

মূলতঃ ব্যক্তির উপর শরী‘আতের পক্ষ থেকে যে সকল ফরয আরোপিত হয়েছে সে সম্পর্কে তার অজ্ঞ থাকার কোন অবকাশ নেই। সেসব কিছু জানা তার জন্য ফরযে আইন। যেমন মুখে সাক্ষ্যদান ও অন্তর থেকে স্বীকৃতি দান যে, আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর সদৃশ ও সমতুল্য কেউ নেই। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কারও থেকে জন্ম নেননি এবং কেউ তাঁর সমকক্ষ নেই। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা, তাঁর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে। তিনি জীবিতকারী এবং মৃত্যুদানকারী, তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই।

দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছুই তাঁর জানা, উভয়ই তাঁর কাছে সমান। আসমান-যমীনের কোন কিছুই তাঁর কাছে লুক্কায়িত নেই। তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই গুপ্ত। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হ’ল, তিনি তাঁর গুণাবলী ও নাম সহকারে অনুক্ষণ বিদ্যমান। তার প্রথমত্বের যেমন সূচনা নেই তেমনি তাঁর শেষত্বের কোন অন্ত নেই।

একই সঙ্গে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা, রাসূল এবং শেষ নবী। আরও সাক্ষ্য দিতে হবে যে, আমলের প্রতিফল দানের জন্য মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ঘটবে এবং সেখানে সৎকর্মশীল সৌভাগ্যবান মুমিনগণ চিরস্থায়ী জান্নাতী হবে এবং কাফের দুর্ভাগা যারা আল্লাহর বিধান থোড়াই পরোয়াকারী, তারা জাহান্নামী হবে। এ সবই হক ও সত্য।

এ সাক্ষ্য দিতে হবে যে, কুরআন আল্লাহর কালাম বা বাণী। তার মধ্যে বর্ণিত সকল কথা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য। তার সব কিছুর উপর ঈমান রাখা অপরিহার্য এবং তার সুস্পষ্ট বিধি-বিধান অনুযায়ী আমল করতে হবে।

এ বিশ্বাস করতে হবে যে, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় ফরয। যেসব কিছু না হ’লে ছালাত পরিপূর্ণ হবে না সেসব বিষয় জানা ফরয। যেমন তাহারাত ও ছালাতের সকল হুকুম-আহকাম।

এ সাক্ষ্য দিতে হবে যে, রামাযানের ছিয়াম ফরয। যা না হ’লে ছিয়াম পূর্ণতা পাবে না এবং যা যা করলে ছিয়াম নষ্ট হয়ে যাবে তার সবই জানা ফরয।

অর্থশালী হ’লে তার উপর যাকাতের নিয়ম-কানূন শেখা ফরয। কখন তা ফরয হবে, কোন কোন সম্পদে ফরয হবে, কতটুকু বা কী পরিমাণ ফরয হবে, কাদের মধ্যে কীভাবে বণ্টন করতে হবে, কীভাবে নিয়ত করতে হবে ইত্যাদির বিদ্যা তাকে অবশ্যই জানতে হবে। হজ্জ ফরয হ’লে তাকে হজ্জের নিয়ম-কানূন সংক্রান্ত বিদ্যা শিখতে হবে।

তাকে হারাম ও মাকরূহ বিষয়াবলী সম্পর্কিত বিদ্যা জানতে হবে, যাতে সেসব থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। যেমন যেনা-ব্যভিচার, মদ পান, শূকরের গোশত খাওয়া, মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া, সকল প্রকার নাজাসাত, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সূদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, লোকের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা, যে কোন প্রকার যুলুম-নির্যাতন করা, (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা কিছু নিষেধ করেছেন তা করলে যুলুম করা হবে)। মা, বোন, মেয়ে ও তাদের সাথে উল্লেখিত মহিলাদের বিবাহ করা, অন্যায়ভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করা, এমনিতর যা কিছু কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাতের ইজমা মূলে হারাম কিংবা মাকরূহ সেগুলোর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এমনিভাবে ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল বিষয় তাকে জানতে হবে। এক্ষেত্রে অজ্ঞ থাকার কোন অযুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।[5]

ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেন, কিছু বিদ্যা অর্জন ফরযে আইন এবং কিছু বিদ্যা অর্জন ফরযে কিফায়া । দ্বীনের যে সকল বিষয় ব্যক্তির উপর ফরয সেগুলো প্রতিষ্ঠা বা কার্যকর করার জন্য যেসব বিদ্যা জানা প্রয়োজন সেগুলো অর্জন করা ফরযে আইন। যেমন ছালাত, ওযূ, ছিয়াম ইত্যাদি। কেননা যিনি ছালাতের শর্তাদি ও রুকনসমূহ জানবেন না তার পক্ষে ছালাত সঠিকভাবে কায়েম সম্ভব হবে না। এখানে কেবলমাত্র বাহ্যিক বা চোখে ধরা পড়ে এমন হুকুম-আহকাম জানার কথা বলা হচ্ছে। সেসব খুঁটিনাটি মাসআলা-মাসায়েল নয়, যা সাধারণ মানুষের জানার দরকার পড়ে না। যদি তার যাকাত দেওয়ার মতো সম্পদ থাকে তবে তাকে যাকাতের বাহ্যিক বিধি-বিধান জানতে হবে।

আর যিনি বেচাকেনা তথা ব্যবসায়িক কারবারে জড়িত তাকে ব্যবসায়ের বিধি-বিধান জানতে হবে। এমনিভাবে যিনি যে পেশায় যুক্ত তাকে সেই পেশার মাসআলা-মাসায়েল জানতে হবে। এখানেও বাহ্যিক মাসআলা-মাসায়েল বা বিধি-বিধান জানা উদ্দেশ্য। উক্ত সকল পেশার বিরল শাখা-প্রশাখা ও তার খুঁটিনাটি মাসআলা-মাসায়েল জানা ফরযে আইন নয়।[6]

ফরযে কিফায়া ও ফরযে আইন পরিমাণ বিদ্যা সম্পর্কে মনীষীদের কথা আলোচনার পর আমাদের কথা এই যে, কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র মুসলিম সমাজে প্রতিপালিত হ’লেই তিনি যে তার জন্য আবশ্যক পরিমাণ ফরযে আইন বিদ্যা শিখে ফেলবেন এমনটা ভাবা ঠিক নয়, যেমনটা বাস্তবেও দৃশ্যমান। কোন সমাজে প্রচলিত ইসলামী শিক্ষার কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত রূপরেখা ফরযে আইন পরিমাণ বিদ্যা কাভার করে কি-না তা যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষা রাখে। যদি ঐ পাঠ্যক্রম ফরযে আইন পরিমাণ বিদ্যা কাভার করে তবুও একজন ছাত্র শুধু ঐ পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাশ করে গেলেই যে তার ফরযে আইন পরিমাণ বিদ্যা অর্জিত হয়ে যাবে এমন দাবী করা চলে না। হ’তে পারে শিক্ষার্থীর মন ভিন্ন কিছুতে মশগূল ছিল, পাঠ্যক্রম হাছিলে সে কোনই মনোযোগ দেয়নি। আবার এমনও হ’তে পারে যে, সে যা শিখেছিল তা ভুলে গেছে।

মোটকথা, মুসলিম সমাজে প্রতিপালিত হওয়া কিংবা মুসলিমদের কারিকুলামে পরিচালিত মাদ্রাসায় পড়ার অযুহাত দেখিয়ে ফরযে আইন পরিমাণ বিদ্যা শেখায় কোন ঘাটতি বা ত্রুটি আইনসিদ্ধ করা যাবে না। আসলে ফরযে আইন পরিমাণ বিদ্যা শেখা এবং হাতে-কলমে তার চর্চা ও আমল অব্যাহত রাখতে হবে।[7]

উপরোক্ত আলোচনায় নিম্নলিখিত যে তিনটি বাক্য রয়েছে তা ব্যক্তিগতভাবে একজন মানুষের জন্য কতটুকু বিদ্যা অর্জন ফরযে আইন তার সূত্র। বাকি আলোচনা সূত্রের ব্যাখ্যা এবং বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য উদাহরণ হিসাবে আলোচিত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এ সূত্র ধরে হিসাব করলে প্রত্যেকেই নিজের উপর কী কী বিষয়ক জ্ঞান কতটুকু অর্জন ফরয, তা হিসাব করতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ، ‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয।[8]

মনে রাখতে হবে, ঈমান-আক্বীদা, ইবাদত-বন্দেগী ও অন্যান্য যা-ই ফরয রয়েছে সেই ফরযের মধ্যে আবার যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, হারাম, মাকরূহ ইত্যাদি নানা হুকুম-আহকাম রয়েছে তা সহ সেগুলো জানতে হবে। কেননা ওগুলো মেনে আমল করলে তবেই না তা ছহীহ-শুদ্ধ হবে।

উপরের সম্মানিত বিশেষজ্ঞ আলেমগণ সূত্র উল্লেখের সাথে উদাহরণ হিসাবে ঈমান-আক্বীদা, ইবাদত-বন্দেগী ও পেশাগত আমলের কথা বলেছেন। আমরা তৎসঙ্গে হাক্কুল ইবাদ তথা মানুষের অধিকার, আদব-আখলাক বা আচরণগত বিদ্যা এবং হালাল-হারাম শেখা যে যরূরী সে কথাও বলতে চাই। কেননা এগুলোর সাথেও ফরযে আইন জড়িয়ে আছে।

দ্বীন শিক্ষার ব্যাপারে বর্তমান সামাজিক অবস্থা :

আমাদের সমাজে ফরযে আইন পরিমাণ বিদ্যার হাল-হাক্বীক্বত কেমন কী রয়েছে তা একটু সংক্ষেপে তুলে ধরা যাক। এ সমাজে আমাদের জন্ম, এ সমাজেই আমরা বেড়ে উঠেছি। সমাজের সুযোগ-সুবিধা যেমন আমরা পেয়েছি এবং পাচ্ছি, তেমনি সমাজের যা দেওয়ার ছিল কিন্তু দেয়নি তাও আমরা জানি। এমনই একটি বিষয় যা আমাদের পরিবার ও সমাজ মোটেও গ্রাহ্য করে না বা আবশ্যিক বলে মনে করে না, তা হচ্ছে হাতে-কলমে ইসলাম সংক্রান্ত বিদ্যা শিক্ষাদান ও গ্রহণ। আমাদের পরিবারগুলো খুব বেশী হ’লে দেখে দেখে শাব্দিক উচ্চারণে কুরআন পড়া শেখায়, আর কোন কোন সমাজ মসজিদে অনুরূপভাবে কুরআন শেখার ব্যবস্থা রাখে। বিষয়টা তাদের কাছে ঐচ্ছিক। সমাজস্থ সকল পরিবারের সদস্যগণ কুরআন পড়ছে কি-না তার খবর সমাজের নেতৃস্থানীয়রা নেন না। আরবী শব্দ উচ্চারণের বাইরে কুরআনের অর্থ যে মাতৃভাষায় শেখা যরূরী, সে কথাও তারা মন থেকে একটু ভাবেন না। যে ইমাম বা মাওলানা ছাহেব ছেলে-মেয়েদের পড়ান তিনিও কুরআনের অর্থ বুঝার প্রতি খুব একটা তাকীদ দেন না।

ধনী হোক কিংবা দরিদ্র হোক স্কুল-কলেজ কিংবা মাদ্রাসায় সন্তানদের পড়ানোর প্রতি পরিবারগুলোর ঝোঁকের কোন অন্ত নেই। কিন্তু যে ফরযে আইন পরিমাণ ইসলামী শিক্ষা না হ’লে পরিবারের সদস্যদের ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপন সম্ভব হবে না এবং পরকালে যে তারা মহাক্ষতি হ’তে বাঁচতে পারবে না সে বিষয়ে তাদের উদাসীনতা একেবারেই অচিন্তনীয় ও অভাবনীয়। কিন্তু বাস্তবে তাই হচ্ছে। মহান আল্লাহ বলেন,قُلِ اللهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًا لَهُ دِيْنِيْ، فَاعْبُدُوْا مَا شِئْتُمْ مِنْ دُوْنِهِ قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِيْنَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلَا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِيْنُ، ‘বল, আমি আল্লাহর ইবাদত করি তাঁর জন্য আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে। অতএব তোমরা তাঁকে ছেড়ে যাকে খুশী ইবাদত কর। তুমি বলে দাও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা নিজেদের ও নিজেদের পরিবারবর্গের সর্বনাশ করে ক্বিয়ামতের দিন। মনে রেখ, সেটাই হ’ল সুস্পষ্ট সর্বনাশ’ (যুমার ৩৯/১৪-১৫)

জনৈক বেদুঈন এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, أَىُّ الْمُؤْمِنِينَ أَكْيَسُ، ‘সর্বাধিক বিচক্ষণ মুমিন কে? তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُ، ‘যে মুমিন মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং পরকালীন জীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে’।[9]

আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি যে, আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আখেরাতে শুভ ফল লাভের উদ্দেশ্যে কাজ করছি? নাকি দুনিয়া লাভই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য? আমাদের এহেন আচরণের জন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন,بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا، وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى ‘বস্ত্ততঃ তোমরা দুনিয়াবী জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখেরাত হ’ল উত্তম ও চিরস্থায়ী’ (আ‘লা ৮৭/১৬ ও ১৭)

আমরা না পারিবারিকভাবে আমাদের উপর অর্পিত ফরযে আইন পরিমাণ দায়িত্ব কী কী তার শিক্ষা পাচ্ছি, না সমাজের কোন ব্যবস্থা এ সম্পর্কে আছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে ইসলামী ধারায় জীবন যাপন করেন, কিন্তু তাদের ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান খুব বেশী বলে মনে হয় না। তাহারাত, ছালাত, ছিয়াম, যিকির ইত্যাদি আমল পালনে তাদের কুরআন -হাদীছ সম্পর্কিত জ্ঞানের স্বল্পতা একটু লক্ষ্য করলেই ধরা পড়ে।

প্রথমেই ঈমান-আক্বীদার কথা আলোচনা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، ‘এমন কোন মানব শিশু নেই যে ফিতরাতের তথা ধর্ম বা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে না। তারপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদী অথবা খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজারী করে তোলে’।[10]

এ হাদীছে সন্তানদের উপর মাতা-পিতার যে বিশাল প্রভাব রয়েছে তার প্রমাণ মেলে। পিতা-মাতা সন্তানকে যে ধর্মে চায় সে ধর্মে গড়ে তুলতে পারে। সাধারণত সবাই বাপ-দাদার ধর্মেই সন্তানদের বড় করে। হাদীছটিতে মুসলিমদের কি কোন শিক্ষা আছে? হ্যাঁ অবশ্যই আছে। হাদীছ অনুসারে মাতা-পিতা তাদের সন্তানদের যেমন ইহুদী-খৃষ্টান বানাতে পারে তেমনি সক্রিয় অথবা নিষ্ক্রিয় মুসলিমও বানাতে পারে। যে মুসলিম মাতা-পিতা নিজেরা সক্রিয় বা অভ্যস্ত (প্রাক্টিসিং) মুসলিম তারা সন্তানদের অভ্যস্ত (প্রাক্টিসিং) মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার চেতনা লালন করতে পারে এবং সেজন্য অবিরত চেষ্টা করতে পারে। পক্ষান্তরে ইসলামী বিধি-বিধান পালনে যারা নিষ্ক্রিয় মুসলিম তারা তাদের সন্তানদের ইসলাম সম্পর্কে নিষ্ক্রিয় রাখতে একই ধরনের ভূমিকা রাখে। কারণ অধিকাংশ মুসলিম অবচেতন মনে নিজেদের বাপ-দাদা থেকে প্রাপ্ত ইসলাম মেনে চলে, তার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর ইসলামের মিল থাকুক কিংবা না থাকুক। আদিকাল থেকে মানুষ এমনটাই করে চলেছে। তাদের এ স্বভাব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, বরং আমরা তারই অনুসরণ করব যার উপরে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি। যদিও তাদের বাপদাদারা কিছুই জ্ঞান রাখতো না এবং তারা সুপথপ্রাপ্ত ছিল না’ (বাক্বারাহ ২/১৭০)

মুসলিম হিসাবে আমাদের ঈমান জন্মসূত্রে প্রাপ্ত। এটা যে চর্চার বিষয় এবং এর উপর স্বতন্ত্রভাবে অনেক বই-পুস্তক লেখালেখি প্রয়োজন তা যেন আমরা ভুলে গিয়েছি। আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদে ঈমানের পর নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর রিসালাতের উপর ঈমান আনা দ্বিতীয় যরূরী বিষয়। তাঁর উপর ঈমান আনার অর্থ অন্তর থেকে বিশ্বাসের সাথে তাঁর আদর্শ অনুসরণকে জীবনের ব্রত বানিয়ে নেওয়া। কিন্তু নবী করীম (ছাঃ) সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি এবং জানতেও আমাদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। তাঁর সম্পর্কে না জানলে, তাঁর জীবনী পাঠ না করলে, তাঁর হাদীছ না পড়লে তাঁর আদর্শ অনুসরণ তো আমাদের পক্ষে খুব একটা সম্ভব হবে না। মুসলিম নর-নারী, ছোট-বড় যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বেরিয়ে আসবে আমাদের রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনী পাঠের পরিমাণ কত কম! হাদীছের বই আমরা কী পরিমাণ পড়ি! যাঁকে চিনি না, জানি না তাঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকার এবং তাঁকে অনুসরণের দাবী করা শুধু মুখের কথা ছাড়া আর কী হ’তে পারে?

ঈমানের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল আখেরাত। আমাদের এ জীবনই শেষ নয়, বরং মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাদের আখেরাতের জীবন শুরু হয়ে যায়। কুরআন ও সুন্নাহ বলে দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং তা সুখ-দুঃখের মিশ্রণ। এ জীবনের আক্বীদা ও আমলের হিসাব আখেরাতে কড়ায়-গন্ডায় দিতে হবে মহান আল্লাহর দরবারে। সেখানে কেউ কাউকে সাহায্য করবে না। সবাই আত্মরক্ষার্থে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। সেদিন যাতে সবাই মুক্তি পায় সেজন্য মুক্তির পথ দেখাতে আল্লাহ তা‘আলা পাঠিয়েছেন তাঁর রাসূল এবং নাযিল করেছেন কুরআন। রাসূলের জীবনাদর্শ আছে হাদীছে, আর কুরআন তো জীবন্ত গ্রন্থ হিসাবে আমাদের মাঝে বিদ্যমান।

কুরআনই বলছে,يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَلَدِهِ وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَالِدِهِ شَيْئًا إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا، ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং ভয় কর সেই দিনকে, যেদিন পিতা তার পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্র তার পিতার কোন কাজে আসবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে’ (লোকমান ৩১/৩৩)

কিন্তু আমরা মনে হয় দুনিয়াকেই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছি। চায়ের দোকান থেকে অফিস-আদালত, খেলার মাঠ থেকে বাজার-ঘাট, স্কুল-কলেজ সর্বত্রই দু’পাঁচজন মানুষ জমায়েত হ’লে তাদের আলোচনার পুরোটাই জুড়ে থাকে দুনিয়ার কথা। কালে-ভদ্রে কেউ হয়ত ধর্মের কথা, আখেরাতের কথা বলে; কিন্তু তা মনে দাগ কাটে না। মসজিদ, মাদ্রাসা ও ওয়ায মাহফিলে আখেরাতের যৎসামান্য যে আলোচনা হয় তা দুনিয়ার আলোচনার তুলনায় নেহায়েৎ অকিঞ্চিৎকর।

দুনিয়াতে কে ক্ষমতাবান হ’ল, কার কী সুযোগ-সুবিধা মিলল, কার কোন বড় চাকরী মিলল, কার অর্থ-বিত্তের বাড়-বাড়ন্ত হ’ল, কে বিপদে পড়ল, কার ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, ওর এত হ’ল আমার কিছুই হ’ল না, ওর ছেলে-মেয়ে পড়া লেখায় কত এগিয়ে, আমারগুলো গোবর গনেশ, কার উপরি আয় ভাল, কাকে কীভাবে জব্দ করা যায়, এ জাতীয় আলোচনা করে, আর আড্ডা দিয়ে আমরা আমাদের সময় পার করি। দুনিয়ার সুযোগ-সুবিধাকে আমরা বড় করে দেখি। আখেরাতের কথা ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে ও সমষ্টিগতভাবে আমরা কমই ভাবি। দুনিয়াতে সুখে-দুখে যেভাবেই বাঁচি আমরা ক’বছর বাঁচব? অথচ আখেরাতের জীবনের কোন শেষ নেই। আখেরাতের চিরস্থায়ী সেই জীবনে নিজেকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের মহাশাস্তি থেকে রক্ষা করা এবং সবাইকে জান্নাতের লোভনীয় পুরস্কার হাছিলের জন্য ঈমান-আমলে উদ্বুদ্ধ করাই তো বুদ্ধিমান মানুষের কাজ হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা তেমন কোন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারছি না। আখেরাতে বিশ্বাস যেমন ফরযে আইন তেমনি আখেরাতের বিষয়াবলী চর্চাও ফরযে আইন।

আখেরাতের জ্ঞান চর্চা করলেই না আখেরাত আমাদের সামনে আলোকিত হয়ে উঠবে। কুরআন ও হাদীছে আখেরাত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। আমরা যেন তা চর্চা করতে পিছপা না হই।

আজ আমাদের মাঝে খুন-যখম, ব্যভিচার-ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, সূদ, ঘু্ষ, মদ, জুয়া, ভেজাল-নকল, চোরাকারবারী, যুলুম-নির্যাতন, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ লোলুপতা, অপরের সম্পদ আত্মসাৎ, ব্যাংক থেকে কিংবা কারও থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা, মানুষের অধিকার প্রদানে কার্পণ্য, বয়স্কদের প্রতি অযত্ন দিনকে দিন যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে আখেরাতে যে আল্লাহর সামনে আমাদের হিসাব প্রদানের জন্য দাঁড়াতে হবে এবং এসব অন্যায়ের ক্ষমা না মিললে জাহান্নামে যেতে হবে সে বিশ্বাস আমাদের আছে বলে আমাদের কাজে-কর্মে প্রতীয়মান হয় না। আমাদের মুসলিম পরিচয় যেন দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। মুসলিম হয়ে এবং মুসলিম সমাজে বসবাস করে আমরা আজ ইসলামে নিষিদ্ধ অসৎকাজ কীভাবে নির্বিকার চিত্তে করে চলেছি এবং কীভাবে সৎকাজ পরিত্যাগ করে চলেছি তা মনে হয় আমরা একটুও ভাবি না। ঈমানী দুর্বলতা ও নিষ্ক্রিয়তার ফলেই আমাদের আমলগত দুর্বলতা ও নিষ্ক্রিয়তা তৈরি হয়েছে। এহেন অবস্থা কি আমাদের একদিনে তৈরি হয়েছে? মহান আল্লাহর কাছে সকাতর প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এহেন অবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামের সঠিক রূপে আমাদের ফিরিয়ে নেন। ঈমানী ও আমলগত দুর্বলতা কাটাতে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ময়দানে নামার তাওফীক দেন।

আমাদের সমাজের দিকে তাকালে আজ দেখা যাবে, ইসলামী বিধান না মানার ছড়াছড়ি। ছালাত আদায় আমাদের কাছে যেন আজ একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যার মনে চায় ছালাত আদায় করে, যার মনে চায় না আদায় করে না। যে চায় দু’এক ওয়াক্ত পড়ে, যে চায় পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত আদায় করে। কিন্তু ছালাত আদায় করা লোকের থেকে না আদায় করা লোকের সংখ্যা দুঃখজনকভাবে বেশী। এতে মা-বাবা কিংবা পরিবারের কারও মাথাব্যথা আছে বলে লক্ষ্য করা যায় না। আমাদের অধিকাংশ ছালাত আদায়কারী ছালাত আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সূরা এবং দো‘আ-কালাম যে তাজবীদের নিয়মে পড়েন না বা পড়তে পারে না তার সত্যতা যে কেউ খুঁজে দেখতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে ছালাত আদায় করবে’।[11]

হাদীছ ও ফিক্বহের গ্রন্থগুলোতে তাঁর শেখানো ছালাত আদায়ের পদ্ধতি অনুপুঙ্খ বর্ণিত আছে। ছাহাবীদের থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর দেখানো রীতিতে ছালাত আদায়ের পদ্ধতি জানেন এবং আমল করেন এমন মানুষও কম নন। তাঁর বর্ণিত নিয়মে ছালাত আদায় শেখা ফরযে আইন। কিন্তু মসজিদের অধিকাংশ মুছল্লীকে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে তারা এমন কোন আলেম থেকে ছালাত শেখেনি কিংবা তার ছালাত আদায় সঠিক হয় কি-না তা যাচাই করেনি। শেখার কোন গরযও তারা অনুভব করে না।

প্রতি বছর রামাযান মাসে আমরা ছিয়াম পালন করি। কিন্তু ছিয়াম ফরয হওয়ার পরও যে বহু সংখ্যক মুসলিম ছিয়াম পালন করে না, সে কথাও সত্য। ছিয়াম রাখলে কী উপকার, আর না রাখলে কী ক্ষতি সে বিদ্যা জানা ফরযে আইন। ছিয়াম ভঙ্গের কারণ, কীভাবে ছিয়াম ভাঙলে শুধু কাযা ফরয হবে এবং কখন কাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই ফরয হবে তা প্রত্যেক ছিয়াম পালনকারীর জানা আবশ্যক। ছিয়াম পালনে আগ্রহী হ’তে এর ফযীলত বা পুরস্কার জানাও যরূরী। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে সচেতনতার তেমন পরিচয় দিতে পারিনি। পরিবারে ছিয়ামের মাসআলা-মাসায়েল ও ফযীলতের আলোচনা কমই হয়।

যাকাত আদায়ও আমরা খুব যে হিসাব-কিতাব করে করি এবং প্রাপকদের অধিকার হিসাবে সসম্মানে তাদের হাতে তুলে দেই এমন চিত্র যাকাত আদায়কারী ভাই-বোনদের কমজনই দাবী করতে পারেন। যাকাত ফরয হয়েছে অথচ দেন না, এমন মুসলিমের সংখ্যা যাকাতদাতাদের থেকে বেশী বৈ কম নয়। ওশর বা জমির ফসলের যে যাকাত আছে তা আমরা একরকম জানিই না কিংবা জানলেও ভুলে গেছি।

হজ্জ শেষে নামের সাথে আলহাজ্জ/হাজী লেখার আগ্রহ আমাদের খুব বেশী। কিন্তু হজ্জের মাসআলা-মাসায়েল জানা এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতিতে হজ্জ হ’ল কি-না তা জানার বিষয়ে আমাদের তেমন আগ্রহ নেই। অথচ হজ্জ সম্পর্কে তিনি বলে গেছেন, خُذُوْا عَنِّى مَنَاسِكَكُمْ ‘তোমরা আমার থেকে তোমাদের হজ্জের নিয়মাবলী শিখে নাও’।[12]

দো‘আ-দরূদ, যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদত-বন্দেগীতেও আমাদেরকে রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকা জানার কথা, যাতে আমরা বিদ‘আতে জড়িয়ে না পড়ি।

পেশাগত বিদ্যার দু’টি দিক রয়েছে। প্রথম দিক ঐ পেশার সাথে জড়িত হালাল-হারাম এবং শারঈ আদেশ-নিষেধ কী আছে কিংবা না আছে তা জানা। দ্বিতীয় দিক নিজ নিজ পেশা সংক্রান্ত মৌলিক-অমৌলিক বিদ্যা অর্জন, যাতে পেশাগত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করা যায় এবং প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে তার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটান যায়। আমাদের সমাজের মানুষকে পেশাগত বিদ্যার দ্বিতীয় দিকটি অর্জনে যথেষ্ট তৎপর দেখা যায়। কিন্তু ঐ পেশার সাথে জড়িত ইসলামী কী কী বিধি-নিষেধ আছে তা জানতে খুব কম লোককেই আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। যেন তা কোন জানার বিষয় নয়।

হাক্কুল ইবাদ তথা মানুষের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞানার্জন আমাদের জন্য আরেকটি যরূরী বিষয়। আমার নিকট কোন লোকের কী অধিকার বা পাওনা আছে তা যদি আমি জানি তাহ’লেই কেবল আমি তা পূরণে এগিয়ে আসব। আর যদি তা কিছুই না জানি তাহ’লে তো আমার পক্ষে তাদের অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হবে না। কারও প্রাপ্য অধিকার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমি যদি পরিশোধ না করি তাহ’লে আমাকে অবশ্যই গোনাহগার হ’তে হবে। এজন্য কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত মানবাধিকার সম্পর্কে জানা ফরযে আইন। এসব অধিকারের মধ্যে আছে দ্বীনী অধিকার, স্নেহ-শ্রদ্ধা ও ভালবাসা লাভের অধিকার, আর্থিক অধিকার, আখলাক বা আচরণিক অধিকার, খেদমতজনিত অধিকার, শিক্ষণ-শিখনের অধিকার ইত্যাদি।

আদব-আখলাক বা আচরণের কথা কুরআন-হাদীছে গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। মূলতঃ ইসলাম মানব জীবনের সঙ্গে জড়িত সকল দিকের বিধি-বিধানের নাম। ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার হচ্ছে প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য একজন মুসলিমকে তার দৈনন্দিন জীবনে আবশ্যিকভাবে মেনে চলা নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান, দো‘আ ও যিকির-আযকার ইত্যাদির সমষ্টি।

একইভাবে ইসলামী আদব মানুষের বস্ত্তগত, মনস্তাত্বিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সকল দিক জূড়ে আছে। প্রত্যেক হাদীছ গ্রন্থে ‘কিতাবুল আদাব’ বা ‘শিষ্টাচার’ কিংবা ‘কিতাবুল বিররি ওয়াছ-ছিলাহ’ বা ‘সদাচরণ ও সম্পর্ক তৈরী’ শিরোনামে অধ্যায় রয়েছে। ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ বা অনন্য শিষ্টাচার নামে হাদীছের একটি বড়সড় গ্রন্থই সংকলন করেছেন। আদবের উদাহরণ অনেক। যেমন আল্লাহ তা‘আলার সাথে বজায় রাখা আদব, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে মেনে চলা আদব, কুরআন ও সুন্নাহর সাথে আদব, মাতা-পিতার সাথে আদব, স্বামী-স্ত্রীর সাথে আদব, সন্তানের সাথে আদব, প্রতিবেশীর সাথে আদব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে আদব, জনসাধারণের সাথে আদব, গৃহে প্রবেশ ও গৃহ থেকে বের হওয়ার আদব, পানাহারের আদব, হাঁচি ও হাই তোলার আদব, ওয়াশরুম ব্যবহারের আদব, গোসলের আদব, ঘুমানো ও ঘুম থেকে জাগার আদব, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজ-সজ্জার আদব, পথের আদব, মসজিদের আদব, মজলিসের আদব, সফরের আদব, কেনা-বেচার আদব, অফিস-আদালতের আদব, শিক্ষক-ছাত্রের আদব, উপকারীর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপনের আদব ইত্যাদি। এগুলোর প্রত্যেকটির সাথে অনেক আদব জড়িয়ে আছে। শিশুকাল থেকে যদি পরিবারের ছোটদের ইসলামী আদবে অভ্যস্ত করা যায় তবে তারা বড় হয়ে ইসলামী আদবের সকল দিক আয়ত্বে এগিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।

হালাল-হারামের জ্ঞান অর্জনও ফরযে আইন। আক্বীদা ও ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হ’ল ‘তাওকীফ’। অর্থাৎ আক্বীদা ও ইবাদতের গোটা নকশা কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত হ’তে হবে। এরই নাম তাওকীফ। কুরআন ও সুন্নাহতে তুলে ধরা আক্বীদা ও ইবাদতই কেবল হালাল। যে আক্বীদা ও ইবাদত কুরআন ও সুন্নাহতে নেই কিংবা নিষিদ্ধ তা হারাম। আক্বীদা ও ইবাদত ব্যতীত অন্য সকল কিছুর ক্ষেত্রে মূলনীতি হ’ল তা ‘মুবাহ’ বা হালাল। তবে কুরআন ও সুন্নাহ যে সকল বস্ত্ত, প্রাণী, কাজ-কর্ম ও আচরণ হারাম ঘোষণা করেছে ব্যতিক্রম হিসাবে সেগুলো কেবল হারাম ও নিষিদ্ধ। কাজেই মুসলিম মাত্রেই আক্বীদা ও ইবাদতে হালাল-হারাম সংক্রান্ত বিদ্যা শেখা ফরয। এ বিদ্যা জানা থাকলে হারাম আক্বীদা ও ইবাদত থেকে সে বাঁচতে পারবে। অনুরূপভাবে কোন কোন বস্ত্ত, প্রাণী, কাজ-কর্ম ও আচরণ হারাম তা জানা থাকলে হালাল বস্ত্ত, প্রাণী, কাজ-কর্ম ও আচরণ নিয়ে তাকে ভাবতে হবে না। কেননা হালাল বস্ত্ত, প্রাণী, কাজকর্ম ও আচরণের সংখ্যা অগণিত। পক্ষান্তরে হারাম বস্ত্ত, প্রাণী, কাজ-কর্ম ও আচরণের সংখ্যা সীমিত। তার জ্ঞান আয়ত্ব করা জটিল নয়।

ইসলাম তো মুজাহাদা বা চেষ্টা-সাধনার নাম। চেষ্টা করেই ইসলাম অর্জন করতে হবে, চেষ্টা করেই ইসলামের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى، ‘আর মানুষ কিছুই পায় না তার চেষ্টা ব্যতীত’ (নাজম ৫৩/৩৯)। অবশ্য চেষ্টার মধ্যে ভালো-মন্দ উভয়ই শামিল। ইসলামের পুরোটাই ভালো ও মঙ্গলময়। কিন্তু এই ভালোটা লাভের জন্য উক্ত আয়াত অনুসারে বান্দার চেষ্টার বিকল্প নেই। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ، ‘আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমরা আমাদের পথ সমূহের দিকে পরিচালিত করব। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীলদের সাথে থাকেন’ (আনকাবূত ২৯/৬৯)। অন্য আয়াতে এসেছে,وَجَاهِدُوا فِي اللهِ حَقَّ جِهَادِهِ ‘আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যথার্থ জিহাদ’ (হজ্জ ২২/৭৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন, وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِي طَاعَةِ اللهِ، ‘মুজাহিদ সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যের সাধনায় নিজের মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে’।[13]

সুতরাং দ্বীনী বিদ্যা শিখতে চেষ্টা সাধনা না করে আমরা যেন অলসতা ও উদাসীনতার আবর্তে পড়ে দ্বীনকে হারিয়ে না ফেলি। যদিও মুসলিম পরিবারে জন্মসূত্রে মুসলিম হওয়ার মূল্যকে অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে আমাদের নির্বিকার ভাব ও উদাসীনতাকেও উপেক্ষা করা চলে না। আমাদের ইসলাম পালনের দুর্গতি দেখে মনে আফসোস জাগতে পারে। কিন্তু কাজ না করে শুধু আফসোসে আমরা রেহাই পাব কি?

‘শহীদী ঈদ’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের এহেন অবস্থার জন্য দুঃখ করে বলেছেন,

খা’বে দেখেছিলেন ইব্রাহিম-

‘দাও কুরবানী মহামহিম’।

তোরা যে দেখিস দিবালোকে

কি যে দুর্গতি ইসলামের’!

হায় আফসোস! আমাদের হুঁশ কবে ফিরবে!


[1]. বুখারী হা/৭২৪৬।

[2]. বুখারী হা/৭৫৭।

[3]. মুসলিম হা/১২৯৭; নাসাঈ হা/৩০৬২; মিশকাত হা/২৬১৮

[4]. খত্বীব বাগদাদী, আল-ফাকীহু ওয়াল মুতাফাক্কিহ দ্র.।

[5]. ইবনু আব্দিল বার্র, জামেউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী, ১/৫৬।

[6]. নববী, রওযাতুত ত্বলেবীন ১০/২২২-২৩।

[7]. ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং ৪৪৯৯০২ (islamweb.net)।

[8]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮।

[9]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯, ছহীহাহ হা/১৩৮৪

[10]. বুখারী হা/১৩৫৮; মিশকাত হা/৯০।

[11]. বুখারী হা/৭২৪৬

[12]. মুসলিম হা/১২৯৭, নাসাঈ হা/৩০৬২; মিশকাত হা/২৬১৮

[13]. আহমাদ হা/২৪০০৪; ছহীহাহ হা/৫৪৯।






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
ঈদে মীলাদুন্নবী - আত-তাহরীক ডেস্ক
ঈমানের গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
রামাযানকে আমরা কিভাবে অতিবাহিত করব? - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
আদালত পাড়ার সেই দিনগুলি - শামসুল আলম
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
জিহাদের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ আমল সমূহ - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
যিলহজ্জ মাসের ফযীলত ও আমল - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
সঠিক আক্বীদাই পরকালীন জীবনে মুক্তির উপায় - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
নফসের উপর যুলুম - ইহসান ইলাহী যহীর
পরকালে পাল্লা ভারী ও হালকাকারী আমল সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ইয়াতীম প্রতিপালন - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আরও
আরও
.