নারী আমাদের মা, মেয়ে, বোন ও স্ত্রী। এদের স্নেহ-মমতা ও ভালবাসা এবং স্ত্রীর সাহচর্য, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা ব্যতীত পুরুষ অচল। মানব সমাজের প্রাথমিক ইউনিট হ’ল পরিবার। যা একজন পুরুষ ও নারীর মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এই পরিবার থেকেই বেরিয়ে আসে ভবিষ্যৎ বংশধর। তারাই আলোকিত করে পরিবার এবং পরিচালিত করে সমাজ ও সভ্যতা। এখানে কারু প্রতি সামান্যতম অবমাননা ও বঞ্চনা পরিবারে ধস নামাবে। ফলে নেমে আসবে পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয়। আজকের সমাজে সেটাই দেখা যাচ্ছে প্রকটভাবে। সর্বত্র নারীর প্রতি অবমাননা ও তার উপর সহিংসতা চলছে অবিরতভাবে ক্রমবর্ধমান হারে। দেশে আইন-আদালত সবই আছে। নেই কেবল আল্লাহ্র বিধান ও তার যথাযথ প্রয়োগ। ফলে নারী এখন ইবলীসের সবচেয়ে অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে। নিম্নে এর কারণসমূহ এবং প্রতিকার বর্ণিত হ’ল।-

(১) নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় : পুরুষ তার স্ত্রী ব্যতীত অন্য সব নারীর প্রতি দৃষ্টি অবনত রাখবে এবং নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। আর আল্লাহ সবার কর্মকান্ড সম্পর্কে সম্যক অবহিত’ (নূর ২৪/৩০)। অন্যদিকে নারী তার স্বামী ব্যতীত অন্য সব পুরুষের প্রতি দৃষ্টি অবনত রাখবে এবং তার লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে (নূর ৩১)। তার সর্বাঙ্গ সতরের অন্তর্ভুক্ত। কেবল সাংসারিক কাজকর্ম, ওযূ ও চিকিৎসার মত প্রয়োজনে হাত ও পায়ের পাতা এবং চেহারা খুলবে (আবুদাঊদ হা/৪১০৪)। কিন্তু পরপুরুষের সামনে সেটাও নিষিদ্ধ। এমনকি হজ্জের সময়ও নারী তার চেহারাসহ সর্বাঙ্গ ঢাকবে (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২৬৯০)। সে এমনভাবে চলবে না যাতে তার গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় (নূর ৩১)। এগুলি হ’ল আল্লাহ্র বিধান। সমাজে অনেক পুরুষ ও নারী আল্লাহ্র উক্ত বিধান মানেন না। ফলে ক্রমেই পশুত্ব মাথা চাড়া দিচ্ছে ও মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসন, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু ডিগ্রীধারী নরাধমের হাতে নারী নিগ্রহ সবচেয়ে বেশী হচ্ছে। বকধার্মিক কিছু লোক ধর্মের অপব্যাখ্যা করে পর্দানশীন ছাত্রীদের বোরকা ও নেকাব খুলতে বাধ্য করছে। কেউ নেকাব পরা ওয়াজিব না মুস্তাহাব তাই নিয়ে মতভেদ করছে। এভাবে তারা ছাত্রীদের উপর মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এমনকি তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছে। কখনো জঙ্গী জুজুর ভয় দেখিয়ে, কখনো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনীতির ভয় দেখিয়ে তারা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে নারীর শাসন চলা সত্ত্বেও এ ধরনের নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত এদেশে নারীর কোন নিরাপত্তা নেই। নির্যাতনকারী এইসব শিক্ষিত লোকেরা বলেন, বাড়ীতে তোমাদের বাপ-ভাই নেই? আমরা তো তোমাদের বাপ-ভাইয়ের মত। নেকাব না খুললে তোমাদের আমরা চিনব কিভাবে? তুমি জঙ্গিও তো হ’তে পার’। রে মূর্খ শিক্ষক! ছাত্রী চেনার মত এতটুকু জ্ঞান তোমার না থাকলে এ মহতী পেশায় তুমি এসেছ কেন? তোমার বেহায়া স্ত্রী, অর্ধনগ্ন যুবতী মেয়ে বা বোনকে অন্য পুরুষের সাথে খোলামেলা গল্পরত দেখলে তুমি খুশী হও কি? তোমার টাইট-ফিট ছাত্রী ও নারী সহকর্মীরা কি তোমার সামনে ফ্রি হতে পারে? জিজ্ঞেস করে দেখ তোমার মত বেহায়া শিক্ষকের ও কর্মকর্তার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ কতটুকু? অতএব নারী ও পুরুষের আল্লাহ প্রদত্ত ‘ড্রেসকোড’ পরিবর্তন করলেই শয়তানের খপ্পরে পড়তে হবে। মনে রেখ, মুমিন নর-নারীর নিকট আখেরাতই মুখ্য। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জন্য তারা কখনোই চিরস্থায়ী আখেরাতকে বিসর্জন দিবে না। ফেরাঊন আল্লাহ্র গযবে ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু তার সতীসাধ্বী স্ত্রী আসিয়া ফেরাঊনের হাতে নিহত হ’লেও জান্নাতে চিরশান্তির গৃহলাভে ধন্য হয়েছে। বাংলাদেশে এমন আল্লাহভীরু ছাত্রী ও মহিলার অভাব নেই, যারা তোমাদের মত ফেরাঊনদের চাইতে আল্লাহকে বেশী ভয় করে। আর আল্লাহই তাদের জন্য যথেষ্ট। অতএব আল্লাহ্র হুকুম মেনে দ্রুত তওবা কর (নূর ৩১)

(২) নারীর ক্ষমতায়ন : এই শ্লোগান নারীকে মাথা থেকে পায়ের নীচে ছুঁড়ে ফেলেছে। আগে নারী ছিল শ্রদ্ধার পাত্রী। সে কখনো বাসে-ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকতো না। সবাই তাকে সম্মান করে সীট ছেড়ে দিত। তার পাশে কোন পরপুরুষ বসতো না। এভাবে পুরুষেরাই তাদের সম্মান করত ও তাদের অধিকার আদায় করে দিত। কিন্তু এখন অধিকার আদায়ের জন্য নারীদের মিটিং-মিছিল করতে হয়। পুলিশের পিটুনি ও বুটের লাথি খেতে হয়। কারণ সে আজ পুরুষের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ আল্লাহ পুরুষকে বানিয়েছেন কর্তৃত্বশীল (নিসা ৪/৩৪)। সেই সাথে সন্তানের জান্নাত নির্ধারণ করেছেন তার মায়ের পদতলে (নাসাঈ হা/৩১০৪)। স্বামী ও স্ত্রী প্রত্যেককে করেছেন সংসারের দায়িত্বশীল। স্বামী ভরণ-পোষণ করবে ও বাহির সামলাবে। স্ত্রী সন্তান পালন করবে ও ঘর সামলাবে। নারী তার মূল দায়িত্বের বাইরে প্রয়োজনে পূর্ণ পর্দা ও নিরাপত্তার মধ্যে কোন হালাল পেশা গ্রহণ করতে পারে। এই স্বভাবধর্ম থেকে বের করে এনে ক্ষমতায়নের সুঁড়সুড়ি দিয়ে যখন নারীকে পুরুষের প্রতিযোগিতায় দাঁড় করানো হয়েছে, তখনই ঘটেছে যত বিপত্তি। মনে রাখতে হবে যে, নারীর হাতে পিস্তল ও রাইফেল দিয়েও তাদের ইযযত রক্ষা করতে পারছে না শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা। অতএব কিছু নারীকে এমপি-মন্ত্রী বানানোর নাম ক্ষমতায়ন নয়, বরং তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসনে বসানোই হ’ল প্রকৃত ক্ষমতায়ন। আর সেটা কিভাবে সম্ভব, তা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র চাইতে ভাল আর কে জানবে?

(৩) প্রগতিবাদ : কিছু নারী প্রগতির নামে বেহায়াপনায় আনন্দ পায়। অতঃপর পুরুষ যখন তাকে টীজ করে, ধর্ষণ করে, হত্যা করে, তখন চারদিক থেকে হায় হায় রব ওঠে। অথচ আসল কারণ যে সে নিজেই, সেটা কেউ দেখেন না। খোসাহীন আমে মাছি বসবেই। পর্দাহীন নারীর প্রতি পরপুরুষ প্রলুব্ধ হবেই। এই অমোঘ সত্যকে উপেক্ষা করে যারা প্রগতির দোহাই দিয়ে নারীকে নগ্ন বানিয়ে দর্শন লালসা চরিতার্থ করে, তারা পশুর চাইতে অধম। এরাই নারীর আসল দুশমন। অথচ আত্মসম্মান বোধহীন নারীরা নিজেরাই নিজেদেরকে পরপুরুষের ভোগ্যবস্ত্ততে পরিণত করছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। অতএব নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করার জন্য আল্লাহ্র বিধান পূর্ণরূপে অনুসরণ ও তাঁর দন্ডসমূহ প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন -আমীন! (স.স.)

দ্রষ্টব্য : ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ পৃঃ ৫৬।






আহলেহাদীছ তাবলীগী ইজতেমা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সামাজিক অস্থিরতা ও তা দূরীকরণের উপায় সমূহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিশ্বজিৎ ও আমরা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শিক্ষার মান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নেপালের ভূমিকম্প ও আমাদের শিক্ষণীয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আসামে মুসলিম নিধন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শান্তি ও সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জবাবদিহিতার অনুভূতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আন্তঃধর্ম শান্তি সম্মেলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শেয়ার বাজার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংবিধান পর্যালোচনা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হিংসা ও অহংকার সকল পতনের মূল - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.