৩১শে ডিসেম্বর প্রতিটি সৌর বর্ষের শেষ দিন। এদিন দিবাগত রাতকে ইংরেজীতে ‘থার্টি-ফার্স্ট নাইট’ বলা হয়। এই বিদায়ী রাত্রির ১২-টা ১ মিনিটে ইংরেজী ক্যালেণ্ডারের হিসাবে পরবর্তী নববর্ষ শুরু হয়। যদিও চান্দ্র বর্ষ হিসাবে দিন গণনা শুরু হয় প্রতিদিন সূর্যাস্তের পর হ’তে।
‘থার্টি ফার্স্ট’ বলে কোন আনন্দ রাতের খবর এদেশের মানুষ জানত না।  বিগত কয়েক বছর যাবত এটি রাজধানীতে দেখা যাচ্ছে এবং রাতটি নতুন আঙ্গিকে জাতির সামনে আবির্ভূত হচ্ছে। বলা যায় রীতিমত একটা ভয়ংকর রাত। এ রাত এখন আনন্দ-ফূর্তির নামে পুরোদস্তুর একটা জংলী রাতে পরিণত হয়েছে। সংসারের দায়িত্বহীন কিছু তরুণ-তরুণী ও আর্থিক দুশ্চিন্তাহীন কিছু ফূর্তিবাজ মানুষ এ রাতের প্রধান নট-নটী। বাপের পাঠানো টাকায় যারা নিশ্চিন্তে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে, তাদের একাংশ এ রাতে নেচে-গেয়ে ফূর্তি করে এমন পর্যায়ে চলে যায়, যা মনুষ্যত্বের সীমানা পেরিয়ে জন্তু-জানোয়ারকেও হার মানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এ রাতের শিকার জনৈকা বাঁধনের শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিগত সরকারের আমলে সারা দেশে তোলপাড় হয়েছিল। বর্তমান সরকার এগুলিকে নিষিদ্ধ করছেন না, তবে যাতে আনন্দ-ফূর্তি ঠিক থাকে, কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে না যায়, সেজন্য পুলিশ প্রটেকশন দিচ্ছেন। রসগোল্লা আলগা রেখে মাছি তাড়ানোর জন্য কর্মচারী নিয়োগ করা যেমন বোকামী, থার্টি ফার্স্ট নাইটের আনন্দ-ফূর্তির অনুষ্ঠানের বৈধতা অব্যাহত রেখে তার বাড়াবাড়ি বন্ধ করার জন্য পুলিশ নিয়োগ করা অনুরূপ বোকামী বৈ কিছুই নয়। 
অন্যবারের চেয়ে এবারের বিষয়টি অতীব দুঃখবহ। কারণ একদিকে ইরানের গত ২৬শে ডিসেম্বরের ভয়াবহ ভূমিকম্পে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ও লক্ষ লক্ষ আহত ও আশ্রয়হারা মানুষের আহাজারিতে বিশ্ব চেতনা সেখানে থমকে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে ২৫শে ডিসেম্বরে পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশের ১৫ জন কৃতি সামরিক কর্মকর্তার লাশ ৩১শে ডিসেম্বর দিবাগত সন্ধ্যা রাতে ঢাকার মাটি স্পর্শ করছে। দেশবাসী শোকে মুহ্যমান। সরকার এদিন জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন। অথচ সবকিছু মানবিক আর্তিকে দলিত-মথিত করে এ রাতেই রাজধানীসহ বড় বড় মহানগরী ও পর্যটন নগরীগুলিতে চলছে থার্টি-ফার্স্ট নাইটের নামে নানাবিধ আনন্দ-ফূর্তির অনুষ্ঠান ও রাতভর হৈ-হুল্লোড় আর ক্যাসেট ও মাইকবাজির অত্যাচার। তাই একে ‘থার্টি-ফার্স্ট নাইট’ না বলে ‘ফষ্টি-নষ্টি নাইট’ বলাই যথার্থ হবে। পাশ্চাত্যের জান্তব সভ্যতার অংশবিশেষ হ’ল এই কথিত ‘থার্টি-ফার্স্ট নাইট’ ও ‘ভ্যালান্টাইন্স ডে’ বা ‘ভালোবাসা দিবস’। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংস্কৃতি এগুলিকে অস্বীকার করে। মানবতা বিধ্বংসী এইসব অপসংস্কৃতি থেকে জাতিকে রক্ষা করার প্রধান দায়িত্ব সরকারের এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও  ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের। জানিনা সরকারী দল ও মন্ত্রী মহোদয়গণ গোপনে এগুলির সমর্থক কি-না। নইলে এগুলি বন্ধ করার মত শক্তি-সাহস বা ক্ষমতা কোনটাই তো তেমন চোখে পড়ে না। 
আমাদের বক্তব্য হ’ল : এই ধরনের যাবতীয় নগ্ন সংস্কৃতি নিষিদ্ধ করে সরকারী নির্দেশ জারি করতে হবে এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্বল সরকার নয়, শক্ত সবল ও সাহসী সরকার চাই। দুর্নীতি ও অপসংস্কৃতি পরস্পরে মাসতুতো ভাই। দু’টোকে বারিত করার জন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইসলামী সংস্কৃতিতে বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের কোন বিধান নেই। প্রতি রাতেই আমরা মৃত্যুবরণ করি। প্রতি প্রত্যুষেই আমরা নতুন জীবন পেয়ে আল্লাহ্র নিকটে সিজদায় লুটিয়ে পড়ি ও তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। অতঃপর তাঁর তাওফীক কামনা করে দিবসের কর্তব্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করি। এজন্যেই ঘুমাতে যাবার সময় বলি- বিসমিকাল্লা-হুম্মা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি মরি ও বাঁচি’। প্রত্যুষে যখন ঘুম থেকে উঠি, তখন বলি, আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়ানা বা‘দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি আমাকে মৃত্যু দানের পরে জীবন দান করেছেন এবং তাঁর দিকেই হবে আমাদের পুনরুত্থান’।  যে মুসলমান দৈনিক রাতে ও সকালে এই দো‘আ পড়ে ও তার প্রভুর নিকটে জীবনের হিসাব পেশ করে, তার জন্য প্রতি রাতই বিদায়ী রাত ও প্রতিটি দিনই নতুন দিন। দিবস ও রাত্রির সৃষ্টিকর্তা  হ’লেন আল্লাহ। উভয়টির জন্য পৃথক কর্মসূচী ও কর্ম পরিধি প্রদান করেছেন আল্লাহ। সূর্যকে দিবসে এবং চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজিকে রাত্রিতে মাখলূক্বাতের সেবার জন্য তিনিই নিয়োজিত করেছেন। পানিতে-ভূমিতে ও অন্তরীক্ষে সৃষ্ট সকল মাখলূক্বাতকে তিনি মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এসব কিছুই বান্দার প্রতি তাঁর অফুরন্ত দয়ার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তাঁর এই সৃষ্টি কৌশলে কোন ত্র“টি কেউ খুঁজে পাবে না (মুল্ক ৬৭/৩)। কারু কল্যাণ বা অকল্যাণ করার ক্ষমতা দিবস বা রাত্রির নেই। সেকারণ কোন দিন বা রাতকে, কোন সময় বা মুহূর্তকে শুভ বা অশুভ বলে গণ্য করার কোন যৌক্তিকতা নেই। হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সময়কে গালি দিয়ো না। আমিই সময়’ অর্থাৎ কালের স্রষ্টা। আমার হাতেই সকল ক্ষমতা। আমিই রাত্রি ও দিবসকে যেভাবে চাই আবর্তন করি’।  তাই ইসলামী শরী‘আতে বর্ষবরণের বা বর্ষ বিদায়ের বা কোন দিবস পালনের কোন বিধান নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম এরূপ কিছু করেছেন বলে জানা যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্ম দিবস, নবুঅত প্রাপ্তি দিবস, মি‘রাজ দিবস, মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত দিবস, বদর দিবস, মক্কা বিজয় দিবস, তাঁর মৃত্যু দিবস প্রভৃতি স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলি তাঁর যুগে, খেলাফতে রাশেদাহ্র যুগে কিংবা উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে কখনোই পালিত হয়নি। এগুলি বিধর্মীদের দেখাদেখি মুসলিম উম্মাহ্র কোন কোন অঞ্চলে বিশেষ করে উপমহাদেশীয় মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে মাত্র।
অতএব শুধু থার্টি-ফার্স্ট নাইটে নয়, বরং দূরদর্শী মানুষের জন্য প্রতি রাত্রিতেই আগামীকাল সুন্দর জীবনের হিসাব করা উচিত। আমাদের আয়ুষ্কাল খুবই সামান্য। তাই জীবনের প্রতিটি সেকেণ্ড ও মিনিটকে হিসাব করে কাজে লাগাতে পারলেই ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে উন্নতি আসবে, নইলে নয়। আল্লাহ আমাদের তরুণ-তরুণীদের ও সমাজ নেতাদের সুমতি দান করুন এবং আমাদের সকল গুনাহ-খাতা মাফ করে সুন্দর মানুষ হবার তাওফীক দান করুন- আমীন।






পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আহলেহাদীছ কখনো জঙ্গী নয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জবাবদিহিতার অনুভূতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কারা সংস্কারে আমাদের প্রস্তাব সমূহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানব জাতির ভবিষ্যৎ কি গণতন্ত্রে? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বর্বর ইস্রাঈলী হামলা; ফিলিস্তীনের বিজয় আসন্ন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
গণজোয়ার ও গণঅভ্যুত্থান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নিউজিল্যান্ড ট্রাজেডী : চরমপন্থার পরাজয় ও মানবতার বিজয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আত-তাহরীক : যাত্রা হ’ল শুরু (৩য় সংখ্যা)
উত্তরাঞ্চলকে বাঁচান! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শিশু আয়লানের আহবান : বিশ্বনেতারা সাবধান! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংবিধান প্রণয়ন প্রসঙ্গে - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.