বিগত বছরগুলিতে
অব্যাহত ধর-পাকড়, মিথ্যা মামলা ও গুম-খুন-অপহরণের দেশব্যাপী আতঙ্কময়
পরিবেশের মধ্যে ৩০শে ডিসেম্বর সম্পন্ন হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এতে সরকারী দলের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। দলগতভাবে
আওয়ামীলীগ ২৫৯টি আসনে, মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টি ২২টি আসনে এবং বিএনপি
৬টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। বাকীগুলো পেয়েছে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। অতঃপর গত
৬ জানুয়ারী’১৯ রবিবার ৪৭ সদস্যের মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে। এতে ২৪জন
পূর্ণমন্ত্রী, ১৯জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। এ মন্ত্রীসভায়
এবার ৩১জন আছেন নূতন এবং বর্ষিয়ান মন্ত্রীগণ সহ পুরানো ৩৬জন বাদ গেছেন।
মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় উপদেষ্টা আছেন পূর্বের ৫ জন। যারা বেতন-ভাতা সহ
অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন। এবারে নতুন যোগ হ’লেন বেক্সিমকো শিল্প গ্রুপের
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব সালমান এফ রহমান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর
‘বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক’ উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন।
ইতিপূর্বে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ‘বেসরকারী খাত বিষয়ক’ উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি
অবৈতনিক হবেন। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় গতবারের ন্যায়
এবারও প্রধানমন্ত্রীর ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক’ উপদেষ্টা পদে
নিযুক্ত হয়েছেন। তিনিও হবেন অবৈতনিক। তবে খন্ডকালীন।
এবারের মন্ত্রী পরিষদে মহাজোটের শরীকদের মধ্য থেকে কাউকে রাখা হয়নি। ফলে জাতীয় পার্টির ২২ জন সহ অন্য শরীকদের বিরোধী আসনে বসতে হবে। হুসায়েন মুহাম্মাদ এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা করা হয়েছে। গত সংসদে তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ দূত’ এবং তাঁর দল থেকে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী। অন্যদিকে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ছিলেন বিরোধী দলের নেত্রী। গণতান্ত্রিক বিশ্বে যা ছিল এক বিরল ঘটনা।
এবারের নির্বাচনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই যে, এবারই প্রথম সরকারী দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য সকল নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হ’তে যাচ্ছে। ফলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। যা জাতির জন্য এক অশনি সংকেত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছে ২২ জন। আহত হয়েছে শত শত দলীয় কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের কথিত নির্বাচনে ২ জন প্রিজাইডিং অফিসার সহ নিহত হয়েছিল ৫৭ জন। আর তখন বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করায় সরকারী দল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসন সহ ২৩৪টি আসনে বিজয়ী হয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। এবারের নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী দল প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলামী দল সমূহের কেউ কোন আসন পায়নি। ‘হাত পাখা’ নিয়ে নির্বাচনকারী চরমোনাই পীর ছাহেবের দল ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন’-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস বলেন, ৩০শে ডিসেম্বরের তামাশাকে নির্বাচন বললে গোনাহ হবে’। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় এবারের নির্বাচনী মাঠের চিত্র ছিল নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের মতে এক কথায় অভাবনীয় ও অচিন্তনীয়। যা ইতিপূর্বে কেউ কখনো দেখেওনি, ভাবেওনি।
বিগত ৪ঠা নভেম্বর’১৮ ‘হেফাজতে ইসলাম’ কর্তৃক রাজধানীতে আয়োজিত ‘শুকরানা মাহফিলে’ তাদের দাবী মতে উপস্থিত ১০ লক্ষ আলেমের পক্ষ থেকে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম বিখ্যাত আলেম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরীর পুত্র মুফতী রূহুল আমীন প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমী জননী’ উপাধি দেন। অতঃপর তিনি সহ বিভিন্ন ইসলামী ঐক্যজোটের আলেমদের প্রতিনিধি দল সমূহ প্রধানমন্ত্রীর নিকট বারবার ধর্ণা দিয়েও একটি আসনেও মনোনয়ন পাননি। অথচ কওমী সমর্থকদের ভোট তিনি ঠিকই পেয়ে গেছেন। তাই সরকারী দলের সেক্রেটারী ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন, শেখ হাসিনা হ’লেন ‘গণতন্ত্রের জাদুকর’।