মাত্র তিন
থেকে সাত দিনের মধ্যে রাজধানী ঢাকাকে যানজট মুক্ত করার কেŠশল উদ্ভাবন
করেছেন গবেষক ঢাকার খিলগাঁও বেঙ্গল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ
এমএফএ চৌধুরী। এর জন্য নতুন করে কোন অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হবে না।
গবেষকের দাবী, তার উদ্ভাবিত কৌশল অবলম্বন করলেই দুর্বিষহ যানজট থেকে মুক্ত
হবে রাজধানী। এই কৌশল যানজটপ্রবণ অন্যান্য সড়কেও ব্যবহার করা যাবে। তিনি
বলেছেন, উদ্ভাবিত কৌশল ব্যবহার করতে শুধু ট্রাফিক পুলিশ নিযুক্ত করে কিছু
রাস্তাকে একমুখী করে, কিছু ক্ষেত্রে চৌরাস্তা বন্ধ করে, কিছু ক্ষেত্রে রোড
ডিভাইডারের দৈর্ঘ্য কমিয়ে বা বাড়িয়ে, দুই পাশের রাস্তার প্রশস্ততা
অস্থায়ীভাবে কম-বেশী করা প্রয়োজন হবে। এতে করে মাত্র তিন থেকে সাত দিনের
মধ্যে যানজট মুক্ত রাজধানী দেখা যাবে।
গবেষক এমএফএ চৌধুরী এর আঘে নদীভাঙন রক্ষায় একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন। তার উদ্ভাবন কাজে লাগিয়ে অনেক এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে। তিনি বলেন, যানজটমুক্ত শহর গড়ায় তার উদ্ভাবিত পদ্ধতির নাম ‘চৌধুরী ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম’ (সিটিসি)। এই পদ্ধতিতে বিদ্যমান ফ্লাইওভার ও ইউলুপ এমনভাবে সমন্বয় করা হয়েছে, যেন রাস্তায় কোন প্রকার যানজট না থাকে। তিনি বলেন, সিটিসি তিনটি ধাপ নিয়ে গঠিত। প্রথম ধাপ, মধ্যম ধাপ ও উচ্চতর ধাপ। বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করে, সেসব দেশে প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করে তিন দিনে যানজটের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ কমানো যাবে। তারপর মধ্যম ধাপ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সবার শেষে ধীরে ধীরে উচ্চতর ধাপ বাস্তবায়ন করতে হবে। গবেষক এমএফএ চৌধুরী তার উদ্ভাবিত পুরো কৌশল গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে রাযী নন। তবে সরকার চাইলে তিনি তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি বিনামূল্যে দিতে প্রস্ত্তত আছেন। তিনি বলেন, সিটিসি পদ্ধতি প্রয়োগ করলে পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো জানবেই না, যানজট বলে কোন সমস্যা ছিল।
ঢাকার তীব্র যানজট সম্পর্কে গবেষক এমএফএ চৌধুরী বলেন, সড়কে অতিরিক্ত যানবাহন, দ্রুতগতির সঙ্গে ধীরগতির যানবাহন চলাচল, ট্রাফিক আইন অমান্য, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং, ট্রাফিক পদ্ধতি আধুনিকায়ন না করা, অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণই যানজটের কারণ। তার মতে, ফ্লাইওভার দিয়ে দ্রুত এসে গাড়িগুলো যেখানে নামছে, সেখানে আগে যে গাড়িগুলো ছিল, সেগুলোর সঙ্গে মিলে গাড়ির সংখ্যা চোখের পলকে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ঐ স্থানে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, যানজটের আরেকটি বড় কারণ সড়কে-মহাসড়কে ঘন ঘন চৌরাস্তা। চৌরাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে এসে যানবাহন থামে। বিপুল যানবাহনের কারণে ট্রাফিক পুলিশ চারটি রাস্তার মধ্যে একটি একটি করে রাস্তার যানবাহনকে ছাড়ছে, ফলে অন্য তিনটি রাস্তার যানবাহন থেমে থাকছে। এভাবে যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়।
যানজট নিরসনে তার উদ্ভাবিত সিটিসির মধ্যম ধাপ সম্পর্কে বলেন, বিদ্যমান চৌরাস্তাগুলো উন্মুক্ত রেখে ও ট্রাফিক সিগন্যাল বহাল রেখে বেশি যানবাহন চলাচল করে, এমন রাস্তায় একটি ফ্লাইওভার বা ক্রস আকারে পৃথকভাবে দু’টি ফ্লাইওভার করতে হবে। ফ্লাইওভারের আকার হবে অত্যন্ত ছোট। শুধু রাস্তার অপর পাশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করা হবে। ইঞ্জিন চালিত যানবাহন ফ্লাইওভার ব্যবহার করলেও ইঞ্জিনবিহীন যানবাহন ট্রাফিক সিগন্যাল অনুসরণ করবে।
সিটিসি পদ্ধতির উচ্চতর ধাপ বাস্তবায়ন সম্পর্কে গবেষক এমএফএ চৌধুরী বলেন, এক লাইনে পরপর প্রায় ১১টি চৌরাস্তা (স্থান ভেদে চৌরাস্তার সংখ্যা কম-বেশী হ’তে পারে) বন্ধ করে শুধু রাস্তার অপর পাশে যাওয়ার জন্য এক থেকে ১১টি ছোট ফ্লাইওভার ৫০০ থেকে এক হাযার মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দু’টি ইউলুপ ব্যবহার করা হবে। ইউলুপ দুটি কাছাকাছি হ’লে ইউলুপের গোড়ায় যানজট সৃষ্টি হ’তে পারে। এখানে কোন ট্রাফিক পুলিশ ও ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির প্রয়োজন হবে না। গাড়ি কোথাও না থেমে সব সময় চলমান থাকায় কোন যানজট হবে না। ফলে এই খাতে বাতির মূল্য, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, বিদ্যুৎ খরচ ইত্যাদি বাবদ বার্ষিক কয়েক শত কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। উচ্চতর ধাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনটি ধাপকে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করে যানজট সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা যাবে। সরকার চাইলে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে যানজট সমস্যা থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।
সম্প্রতি বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো‘আয্যম হোসেন এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, যানজটের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ফলে বছরে ৩৭ হাযার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
[আমরা গবেষকের গবেষণাকে স্বাগত জানাই এবং সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহবান জানাই (স.স.)]