স্বদেশ
রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্লগে জঘন্য লেখা প্রকাশ ও দেশব্যাপী নিন্দার ঝড়
সম্প্রতি ঢাকার মীরপুরে রাজীব হায়দার শোভন নামক জনৈক ব্লগারের নিহত হবার পর তার বিরুদ্ধে ব্লগে রাসূল (ছাঃ)-এর স্বভাব-চরিত্র এবং ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে অতি জঘন্য লেখা প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। পত্র-পত্রিকায় এ সকল কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হওয়ায় দেশব্যাপী এই নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবী এবং ঘৃণা ও নিন্দার ঝড় অব্যাহত রয়েছে। ঐ ব্যক্তি তার ব্লগে গত বছরের জুন মাস থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ‘মোহাম্মক’ (মহা-আহাম্মক), উম্মতে মুহাম্মাদীকে ‘উম্মক’ (উম্মত+আহাম্মক), মোহরে নবুঅতকে রাসূল (ছাঃ)-এর কাঁধে খাদীজার পেন্সিল হিল জুতার আঘাতের চিহ্ন ইত্যাদি বলে নিকৃষ্ট প্রচারণা চালাচ্ছে। এতদ্ব্যতীত ছালাত, ছিয়াম, ঈদ মুবারক সহ ইসলামের অন্যান্য বিষয়ে নোংরা মন্তব্যসমূহ প্রচার করছে।
উল্লেখ্য যে, ইন্টারনেটে বাংলাভাষায় সর্বপ্রথম ব্লগিং-এর চর্চা শুরু হয় ২০০৬ সালে ‘সামহোয়্যার ইন ব্লগ’-এর মাধ্যমে। মুক্ত লেখালেখি ও মতপ্রকাশের জায়গা হিসাবে এই ব্লগগুলি তরুণসমাজে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু মুক্ত মতপ্রকাশের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর ব্লগার দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র হনন এবং ইসলামী আইন ও বিধানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণা চালাতে থাকে। শুধু তাই নয় অধিকাংশ ব্লগ এসব অশ্লীলভাষী নাস্তিক ব্লগারদের কেবল সুযোগই দেয়নি; বরং সহযোগিতা করেছে। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ প্রচারে শীর্ষস্থানীয় সামহোয়্যার ইন ব্লগ, আমার ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, ধর্মকারী ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, অগ্নিসেতু ব্লগ ইত্যাদি নামের ব্লগগুলো অনবরত দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর মদদে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থের পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এদের অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে কোন রহস্যময় কারণে এ পর্যন্ত মিডিয়ায় কিছুই প্রকাশ পায়নি। বর্তমানে যখন দেশব্যাপী এই নাস্তিক ব্লগারদের অপকীর্তি ছড়িয়ে পড়েছে, তখনও সেক্যুলার মিডিয়াগুলো এবং দেশের সরকার তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে বরং প্রকারান্তরে তাদের প্রতি নগ্ন পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছে। ইসলামপন্থী ব্লগ বলে পরিচিত ‘সোনার বাংলা’ ব্লগকে সরকার তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দিলেও এসকল নাস্তিক্যবাদী ব্লগ ও ওয়েব সাইট এখনও বন্ধ করেনি। এদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পর হ’লেও যে আওয়াজ উঠেছে তা অত্যন্ত যরূরী ছিল। এ আন্দোলনের ফলে সরকার ইতিমধ্যে একটি ইন্টারনেট মনিটরিং সেল গঠন করেছে।
[এসব ব্লগাররা তাদের স্বীকৃতির মাধ্যমে নাস্তিক ও মুরতাদ হয়ে গেছে। ইসলামের বিধান মতে রাসূল (ছাঃ)-কে গালি দেওয়ার একমাত্র শাস্তি হ’ল মৃত্যুদন্ড। যা সরকার বাস্তবায়ন করবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশের জন্য রাজীবের বাড়ীতে গেছেন এবং সংসদে তাকে ‘শহীদ’ হিসাবে ঘোষণা করার জন্য প্রস্তাব তোলা হয়েছে। কিন্তু এসব ব্লগ বন্ধের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি (স.স.)]
ধর্মহীনতার প্রসারে নব্য ষড়যন্ত্র
মাধ্যমিক ক্লাসের সরকারীভাবে প্রণীত একাধিক বইয়ে অশ্লীল ও ধর্মবিরোধী আলোচনার ছড়াছড়ি
সরকারীভাবে সদ্য প্রণীত মাধ্যমিক শ্রেণীর বইগুলির মধ্যে পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির অনুকরণে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যৌন সুড়সুড়িমূলক আলোচনা। ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে শিশুদের দেয়া হয়েছে যৌনতার ধারণা। শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয় বইটিতে ছেলে-মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালে ঝুঁকি শিরোনামের সাথে ছেলেমেয়েরা যেসব ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তা উল্লেখ করে ২ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, কৌতূহলের বশে বা খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ধূমপান, মাদকাসক্তি, অবৈধ ও অনিরাপদ যৌন-আচরণসহ নানা ধরনের অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া বইটির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে কেবল ঋতুস্রাব কথাটিই ১৭ বার এসেছে এবং বীর্যপাত কথাটি ৮ বার। ৮ম শ্রেণীর পাঠ্যবইতে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে ব্লুফিল্ম, পর্ণোগ্রাফি, কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র এবং অশ্লীল প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে হবে। ‘ব্লুফিল্ম’, ‘পর্ণোগ্রাফি’ এবং ‘অশ্লীল প্রকাশনা’র মতো নিষিদ্ধ, স্পর্শকাতর বিষয়ের কারণে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকেরা এ বিষয়ে পাঠদান করার সময় বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অন্যদিকে ৯ম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ নামক বইতে লেখা হয়েছে ‘দেবদেবী বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নামে উৎসর্গকৃত পশুর মাংস খাওয়া হারাম’। আল্লাহর সাথে দেবদেবীর তুলনা করা কেবল জঘন্য শিরকই নয় বরং এটা স্পষ্টতঃ ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি চরম আঘাত। [১৭ বছর পরে ৫২৫ জন সমমনা লেখকদের দিয়ে লেখানো এবং ভারত থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ছাপিয়ে আনা বইসমূহে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষকরা এসব বই বয়কট করুন এবং সরকারকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারী দিন (স.স.)]।
মহানবী (ছাঃ) ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন!
জাতীয় সংসদে হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ধর্মনিরপেক্ষ বলা হয়েছে এবং মদীনার উম্মতের সাথে বাঙ্গালী উম্মতের তুলনা করা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মদীনা রাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী বনু কুরায়যার ছয়’শ লোকের কল্লা কেটে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা কেন বাঙ্গালী উম্মতের বিরোধিতাকারীদের বিচার করতে পারবো না। পাশাপাশি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে হাদীছের অপব্যাখ্যাকারী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। গত ৪ঠা মার্চ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বামপন্থী নেতা জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান এ কথা বলেন। বাদল বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মক্কায় ছিলেন, তখন তিনি ছিলেন ধর্মপ্রচারক। তিনি মদীনায় গিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। যারা মদীনা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে মদীনা থেকে চলে যেতে বলেছেন। রাসূল যদি ৬০০ বিদ্রোহীর বিচার করতে পারেন, তবে আমি কেন আমার পিতা-মাতা, বোন-ভাই হত্যার বিচার করতে পারবো না। তাহ’লে আমরা কেন বাঙ্গালী উম্মতের বিরোধীতাকারীদের বিচার করতে পারবো না। নাসিম ওসমান বলেন, হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হ’তে পারে। তবে স্বয়ং ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণ করে। আমরা নাস্তিকদের সমর্থক নই। রাজীব নাস্তিক ছিলেন না। এজন্য আমরা রাজীবের সমর্থক।
[তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভায় দেশের চিহিত নাস্তিকদের স্থান দিয়েছেন। ১৯৯৮-২০০১-এর সময় একজন আলেমকে অন্ততঃ তিনি ধর্মমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন। এবারের সরকারে তিনি কাউকে খুঁজে পাননি। এসব বামদের স্পর্ধা এত বেড়ে গিয়েছে যে, তারা এখন রাসূল (ছাঃ) ও দেশের খ্যাতনামা আলেমদের নিয়ে বাজে কথা বলছে। আমরা ঐসব লোকদের ইসলাম সম্পর্কে জেনে কথা বলার আহবান জানাচ্ছি। তাদের জানা উচিত, বনু কুরায়যা ইহুদী গোত্র সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে শত্রুবাহিনীকে সাহায্য করেছিল। ফলে তাদের অবরোধ করা হয়। অতঃপর তাদের প্রস্তাবমতে তাদেরই সাবেক মিত্র আউস নেতা সা‘দ বিন মু‘আয ঐ শাস্তি দিয়েছিলেন, রাসূল (ছাঃ) নন। আর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ একটি কুফরী মতবাদ। এটি এমন একটি সামাজিক আন্দোলনের নাম, যা মানুষকে আখেরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে কেবলমাত্র পার্থিব বিষয়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করায়’ (ব্রিটানিকা)। অথচ ইসলামী জীবনব্যবস্থা তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত বিশ্বাসের উপর ভিত্তিশীল। আল্লাহ সরকারকে হেদায়াত দান করুন! (স.স)]।
হরতালে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ দেড় হাযার কোটি টাকা
হরতালে প্রতিদিন দেশের অর্থনীতিতে দেড় হাযার কোটি টাকারও বেশী ক্ষতি হচ্ছে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা। সম্প্রতি ডিসিসিআই থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হরতালে একদিনে ক্ষতি ১৬০০ কোটি টাকা। গবেষণার তথ্য তুলে ধরে ডিসিসিআই সভাপতি আব্দুছ ছবূর খান বলেন, ১৫ দিনের হরতালে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা দিয়ে অনায়াসে একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, একদিনের হরতালে সরাসরি আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। বিজিএমইএ-এর তথ্য মতে, একদিনের হরতালে পোশাকখাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪০ কোটি টাকা। পরিবহন মালিকদের মতে, গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় হরতালের দিন কমপক্ষে ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।
প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যু
বাংলাদেশের ১৯তম প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ জিল্লুর রহমান গত ২০শে মার্চ শ্বাসকষ্টজনিত কারণে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্বরত অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সজ্জন, মিতবাক ও বিবেকবান ব্যক্তি হিসেবে এবং সর্বজনমান্য রাজনীতিক হিসাবে তিনি ছিলেন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হ’তে আইনে স্নাতক ও ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৫৪ সালে আইন পেশায় যোগ দেন।
ঢাকা কলেজে ছাত্র থাকাকালে ১৯৪৬ সালে ‘পাকিস্তান’ আন্দোলনের পক্ষে গণভোটের প্রচারকালে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন ঢাকা রোজ গার্ডেনে ‘আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠাকালে তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই থেকে তিনি আমৃত্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩, ’৮৬, ’৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৯৬-এর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তিনি এলজিআরডি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। ২০০৮ সালে তিনি সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।
[আমরা তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে কিছু কিছু বিষয়ের দিকে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যেমন (১) ইসলামী বিধান মতে দ্রুত জানাযা হওয়া আবশ্যক। কিন্তু সেটা হ’ল ৪৮ ঘন্টা পরে (২) জানাযা ব্যতীত মাইয়েতের জন্য অন্য কিছুই করার নেই। অথচ দেখা গেল শ্রদ্ধা নিবেদনের নামে তাঁর লাশের উপর ফুলের ছড়াছড়ি (৩) মাইয়েতের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্মানের নামে গার্ড অব অনার, গান স্যালুট, বিউগলে করুণ সূর বাজানো (৪) অতঃপর দু’মিনিটি নীরবতা পালন করা। (৫) দাফনের সময় ২১ বার তোপধ্বনি (৬) দাফন শেষে দু’বার ‘হলি ফায়ার’ (৭) জানাযা শেষে পূনরায় দলবদ্ধ মুনাজাত (৮) অতঃপর কবরে বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণ। (৯) একদিন পরেই আবার দো‘আ ও কুলখানির অনুষ্ঠান। ইসলামে এগুলির কোনই অনুমোদন নেই। (১০) আশ্চর্যের বিষয় হ’ল স্বীয় স্ত্রী আইভি রহমানের কবরেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে, যিনি ৯ বছর পূর্বে গ্রেনেড হামলায় মারা গেছেন। যুদ্ধাবস্থায় বা বিশেষ কোন কারণে এক কবরে একাধিক লাশ দাফনের অনুমতি থাকলেও স্বাভাবিক অবস্থায় একাধিক লাশ বিশেষতঃ স্বামী-স্ত্রীর লাশ এক কবরে দাফন করার কোন বিধান ইসলামে নেই। (১১) এরপর তিনদিন ব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালন ও জাতীয় পতাকা অবনমিত রাখা স্রেফ বিজাতীয়দের অনুকরণ মাত্র। মনে রাখা আবশ্যক যে, মাইয়েত বেঁচে থাকেন তাঁর আদর্শে ও মহান স্মৃতিতে, ছবি-মূর্তি বা প্রতিকৃতিতে নয়। তাঁর জন্য করণীয় হ’ল স্রেফ দো‘আ ও ছাদাক্বা। বাকী সবই বাড়াবাড়ি ও লোক দেখানো কর্ম মাত্র।
তাছাড়া কিছু কিছু মিডিয়া জানাযার এই ইসলামী অনুষ্ঠানকে ‘ধর্মনেরপেক্ষ’ বানানোর অপচেষ্টা করেছে। যেমন ‘৭১ টিভি মাননীয় প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে ‘ইন্নালিল্লাহ’ বলেনি। জানাযার পুরা সময়টা তারা ‘প্রয়াত প্রেসিডেন্টের শবযাত্রা’ বলেছে। কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় ‘মরহূম’ বলেনি। ‘ইন্ডেপেন্ডেণ্ট’ ও ‘সময়’ টিভিও এক্ষেত্রে প্রচুর অসাবধানতার পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া সেক্যুলার মিডিয়াগুলি জানাযার বদলে ‘অন্তেষ্টিক্রিয়া’, ‘শেষকৃত্য’ এবং দো‘আ ও মুনাজাতের বদলে ‘প্রার্থনা’ বলে থাকেন। আমরা এ সবের জোর প্রতিবাদ করছি (স.স.)]
বিদেশ
পোপের নযীরবিহীন পদত্যাগ : নতুন পোপ ফ্রান্সিস
প্রকৃত কারণ ভ্যাটিক্যানের লাম্পট্য ও দুর্নীতি
১২০ কোটি ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট গত ২৮ ফেব্রুয়ারী পোপের দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলা হ’লেও প্রকৃত কারণ নিয়ে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভ্যাটিকানে ধারাবাহিক ব্ল্যাক মেইল, ঘুষ-দুর্নীতি এবং গোপন সমকামী যৌন কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়ার পর পোপ এ সিদ্ধান্ত নেন। তার পদত্যাগের পর নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটিক্যানের ১১৫ জন কার্ডিনাল সিস্টিন চ্যাপেলের গোপন সভাকক্ষে ঢুকে বৈঠক শুরু করেন। চারদফা ভোটাভুটির পর ১৩ মার্চ আর্জেন্টিনার হোর্হে মারিও বেরগোগলিও (৭৬) রোমান ক্যাথলিকদের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন। গত ১৩শ’ বছরের মধ্যে প্রথম অইউরোপীয় এবং প্রথমবারের মতো লাতিন আমেরিকার কোন ব্যক্তি ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের পোপ নির্বাচিত হ’লেন। সাদাসিধে জীবন যাপনের অধিকারী এই ধর্মীয় নেতা তার প্রথম বক্তব্যে বলেন, ‘চার্চ হবে অনাড়ম্বর এবং এর প্রধান লক্ষ্য থাকবে দরিদ্রদের সাহায্য করা।’ এখন থেকে তিনি ‘ফ্রান্সিস’ নামে পরিচিত হবেন।
চীনে ৪০ বছরে ৩৩ কোটি গর্ভপাত
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি গ্রহণের পর গত ৪০ বছরে চীনে প্রায় ৩৩ কোটি গর্ভপাত হয়েছে। চীনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সরকার ১৯৮০ সালে গৃহীত এক সন্তান নীতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নীতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো এগিয়ে নেবে বলে মনে করছে তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা যায়, ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট ৩২ কোটি ৮৯ লাখ গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। এর কিছু দিন আগেই সরকার সন্তান কম নিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯৮০ সালে কার্যকরী হয় এক সন্তান নীতি। ২০১০ সালের সর্বশেষ আদমশুমারীতে বলা হয়, এক সন্তান নীতি না থাকলে দেশের বর্তমান জনসংখ্যা আরো ৪০ কোটি বেশী থাকত। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৫ কোটিরও বেশী।
[কোটি কোটি আদম সন্তানের হত্যাকান্ডের জন্য চীনের সরকারকে ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হবে। আর অদূর ভবিষ্যতে চীন বৃদ্ধদের ভারে অচল রাষ্ট্রে পরিণত হবে (স.স)]
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কণ্ঠস্বর হুগো শ্যাভেজের মৃত্যু
প্রায় দু’বছর ধরে ক্যানসারে ভোগার পর অবশেষে ভেনিজুয়েলার বিপ্লবী নেতা ও প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ (৫৮) গত ৫ মার্চ মারা গেছেন। ২০১১ সালের মধ্যভাগে শ্যাভেজের দেহে ক্যানসার ধরা পড়ে। চতুর্থবারের মতো অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি কিছুদিন পূর্বে কিউবার হাভানায় যান। কিউবায় ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে গত মাসে দেশে ফেরেন শ্যাভেজ এবং রাজধানী কারাকাসের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য, তিনি ১৪ বছর যাবৎ ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। ২০১২ সালের অক্টোবরে তিনি আরও ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর এখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। যিনি ছিলেন একসময় বাসচালক। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হ’তে হবে। সদ্য পরলোকগত এই বিপ্লবী নেতা সাধারণ স্কুলশিক্ষকের ঘরে জন্ম নিয়ে অভাবের তাড়নায় শৈশবে চকোলেটও বিক্রি করেছেন। অতঃপর স্বীয় কর্মগুণে দেশকালের ঊর্ধ্বে উঠে পৌঁছে গিয়েছিলেন সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকা সহ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অন্তরে। সিক্ত হয়েছিলেন তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসায়। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস, ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেযাদ ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র। নানা হুঁশিয়ারী ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি আমৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শাসকদের কড়া সমালোচক ছিলেন। অবিরত লড়েছেন তাদের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে। যা তাকে শোষিত মানুষের অঘোষিত নেতায় পরিণত করেছিল।