ইসুবগুলের ভুষি মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাংলাদেশ, ভারত সহ অনেক দেশেই এটি বেশ পরিচিত। এর অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে : ইসবগুলে থাকে কিছু অদ্রবণীয় ও দ্রবণীয় খাদ্যআঁশের চমৎকার সংমিশ্রণ, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুব ভালো কাজ করে। এটি পাকস্থলীতে গিয়ে ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিকভাবে পানি গ্রহণকারী হওয়ায় পরিপাকতন্ত্র থেকে পানি গ্রহণ করে মলের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ২ চামচ ইসবগুল এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে পান করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে : ইসবগুল একই সাথে ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দু’টিই প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসবগুল দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। কারণ দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক পাকস্থলীর ইনফেকশন সারায় এবং ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে খুব কম সময়ে ডায়রিয়া ভালো করতে পারে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে ২ চামচ ইসবগুল ৩ চামচ টাটকা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাবার পর খেতে হবে। এভাবে দিনে ২ বার খেলে বেশ কার্যকরী ফল পাওয়া সম্ভব।
অ্যাসিডিটি প্রতিরোধে : অধিকাংশ মানুষেরই অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে। ইসবগুল খেলে তা পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে একটা প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। এছাড়া এটি সঠিক হজমের জন্য এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সাহায্য করে। ইসবগুল অ্যাসিডিটিতে আক্রান্ত হওয়ার সময়টা কমিয়ে আনে। প্রতিবার খাবার পর ২ চামচ ইসবগুল আধা গ্লাস ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে পান করতে হবে। এটি পাকস্থলীতে অত্যধিক এসিড উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে অ্যাসিডিটির মাত্রা কমায়।
ওযন কমাতে : ওযন কমাতে ইসবগুল হচ্ছে উত্তম হাতিয়ার। এটি খেলে বেশ লম্বা সময় পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয় এবং ফ্যাটি খাবার খাওয়ার ইচ্ছাকে কমায়। এছাড়াও ইসবগুল কোলন পরিষ্কারক হিসাবেও পরিচিত। কুসুম গরম পানিতে ২ চামচ ইসবগুল ও সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে ভাত খাবার ঠিক আগে খেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেলেও তা ওযন কমাতে সাহায্য করবে।
হজমক্রিয়ার উন্নতিতে : দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্যআঁশে ভরপুর ইসবগুল হজম প্রক্রিয়াকে সঠিক অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে। এটি শুধু পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতেই সাহায্য করে না, বরং এটি পাকস্থলীর ভেতরের খাবারের চলাচলে এবং পাকস্থলীর বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনেও সাহায্য করে। তাই হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে নিয়মিতভাবে ইসবগুল খেতে হবে। এছাড়া মাঠা বা ঘোলের সাথে ইসবগুল মিশিয়ে খাওয়া যায় ভাত খাওয়ার পরপরই। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ইসবগুল মিশিয়ে রেখে না দিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হবে।
হৃদরোগের সুস্থতায় : ইসবগুলে থাকা খাদ্যআঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা আমাদেরকে হৃদরোগ থেকে সুরক্ষিত করে। হৃদরোগের সুস্থতায় ইসবগুল সাহায্য করে। কারণ এটি উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালরিযুক্ত। ডাক্তাররা হৃদরোগ প্রতিরোধে সর্বদা এমন খাবারের কথাই বলে থাকেন। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে একটা পাতলা স্তরের সৃষ্টি করে, যার ফলে তা খাদ্য হ’তে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়। বিশেষ করে রক্তের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দেয়, যা থাকলে ধমনীতে ব্লকের সৃষ্টি হ’তে পারে। এর ফলে তা হৃদরোগ এবং কোরোনারী হার্ট ডিজিজ থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে নিয়মিতভাবে খাবারের ঠিক পরে বা সকালে ঘুম থেকে উঠে ইসবগুল খাওয়া ভাল।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে : যাদের ডায়াবেটিস আছে ইসবগুল তাদের জন্য খুবই উপকারী। এটি পাকস্থলীতে যখন জেলির মত একটি পদার্থে রূপ নেয় তখন তা গ্লুকোজের ভাঙ্গন ও শোষণের গতিকে ধীর করে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। খাবার পর নিয়মিতভাবে দুধ বা পানির সাথে ইসবগুল মিশিয়ে পান করলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হবে। তবে দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবে না, এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
পাইলস প্রতিরোধে : প্রাকৃতিকভাবে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্যআঁশে ভরপুর ইসবগুল পায়ুপথে ফাটল এবং পাইলসের মত বেদনাদায়ক রোগীদের জন্য উত্তম পথ্য। এটা শুধু পেট পরিষ্কার করতেই সাহায্য করে না মলকে নরম করতেও সাহায্য করে অন্ত্রের পানিকে শোষণ করার মাধ্যমে এবং ব্যথামুক্ত অবস্থায় তা দেহ থেকে বের হ’তেও সাহায্য করে। এটি প্রদাহের ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে। ২ চামচ ইসবগুল কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ঘুমাতে যাবার আগে পান করা যায়।
সতর্কতা : এটি শুধুমাত্র উল্লেখিত সমস্যাগুলোর ঘরোয়া সমাধান। অবস্থা অতি গুরুতর হ’লে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ইসবগুল কেনার সময় লক্ষ্যণীয় : আমাদের দেশে বাজার থেকে শুরু করে সুপার মার্কেটসহ সর্বত্রই ইসবগুল বেশ সহজলভ্য। তবে কেনার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
* প্যাকেটজাত ইসবগুল কেনা ভাল। * খোলা ইসবগুল নষ্ট ও ভেজাল থাকতে পারে, যার ফলে এতে ভালো ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। * আজকাল প্যাকেটজাত বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম স্বাদের ইসবগুল পাওয়া যায়। ভালো ফলাফলের জন্য এসব কৃত্রিম স্বাদের ইসবগুল অপেক্ষা সাধারণ ইসবগুল খাওয়া ভাল। * বিভিন্ন দোকানে সাধারণ ইসবগুলে কৃত্রিম স্বাদ ও রঙ যোগ করে বিশেষ কার্যকারিতার কথা বলে বিক্রয় করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই সাধারণ ইসবগুল খাওয়াই সর্বোত্তম।
\ সংকলিত