সুষম খাদ্য না খাওয়ার কারণে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। কোন খাবারে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা না জানার কারণে আমরা পুষ্টির অভাবে ভুগি এবং শরীরে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। যেমন- এনিমিয়া, বেরিবেরি, স্কার্ভি, রিকেট ও অষ্টিওম্যারেশিয়া, গলগন্ড ইত্যাদি।
এনিমিয়া : রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হ’লে এনিমিয়া হয়। বিভিন্ন কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হ’তে পারে। যেমন কোন কারণে বেশী রক্তপাত হ’লেও হিমোগ্লোবিন কমে যায়৷ সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে দ্রুত ঐ হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষিত হয় এবং রক্তপাতের কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে৷ কিন্তু খাদ্যে কিছু কিছু পুষ্টি উপাদানের অভাব ঘটলে হিমোগ্লোবিন ও রক্তের লোহিত কণিকার সংশ্লেষণে সমস্যা হয় এবং এনিমিয়া দেখা দেয় যা আপনাআপনি সারে না। এনিমিয়াকে প্রতিরোধ করতে হ’লে লোহা, প্রোটিন, ফলিক এসিড ও ভিটামিন সি ও বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যে সকল খাবারগুলিতে এগুলি পাওয়া যাবে তা হ’ল-
* লোহা বা আয়রনের উৎস : ডিম, কলিজা, ডাল, বাদাম, ছোলা, কচুশাক ইত্যাদি। * প্রোটিনের উৎস: কলিজা, গোশত, মাছ, ডাল ইত্যাদি। * ফলিক এসিডের উৎস: কলিজা, মাছ, গোশত, সবুজ শাক। * ভিটামিন বি ১২: কলিজা, গোশত, ডিম। * ভিটামিন সি: আমলকি, পেয়ারা, টমেটো, কমলা, সবুজ শাক।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়েরাই এনিমিয়ায় ভোগেন। এর কারণ হ’ল মাসিক ঋতুস্রাবের জন্য যে রক্তক্ষয় হয় তা পূরণের জন্য যে পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন মেয়েদের খাবারে তার অভাব থাকে। এছাড়া শুধুমাত্র দুধ পান করালে শিশুদের এনিমিয়া হয়। এজন্য ছয়মাস বয়স থেকেই শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
রাতকানা : অনেকদিন ধরে খাবারে ভিটামিন-এর অভাব ঘটতে থাকলে চোখে একধরনের রোগ দেখা দেয় যার কারণে অল্প আলোতে বা রাতের বেলায় দেখতে অসুবিধা হয়, একে রাতকানা রোগ বলে। রাতকানা ছাড়াও ভিটামিন-এর অভাবে চোখের মণিতে ঘা, চোখে পুঁজ, সজিবতাহীনতা ইত্যাদি রোগ হয়। আমাদের আশপাশে বিদ্যমান সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকে। তাই কচুশাক, পুঁইশাক, লাল শাক, লাউ শাক, কুমড়া শাক ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে এসকল রোগ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া হলুদ ও সবুজ শাক সবজি ও ফল যেমন- গাজর, মিষ্টি কুমড়া, কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, আম, পাকা কলা ইত্যাদিতে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। ছয় মাসের শিশুদের খুব সহজেই এ সকল খাবার খাওয়ানো সম্ভব যেমন শাক চটকিয়ে চালুনি দিয়ে চেলে নরম ভাত ও ডালের সাথে খাওয়ানো যায়। এছাড়া সহজলভ্য ও মোসুমী ফল খাওয়ালে শিশুদের ভিটামিন-এর অভাব দূর হবে।
বেরিবেরি : পা অবশ হয়ে যাওয়া ও চলাচল করার ক্ষমতা না থাকাকে বেরিবেরি বলে। বেরিবেরি হ’লে পা ফুলে এমন হয়ে যে আঙ্গুল দিয়ে টিপলে সে জায়গা দেবে যায়৷ খাদ্যে থায়ামিনের অভাব হ’লে এ রোগ হয়। এ থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রতিদিন গমের আটার রুটি, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এছাড়া ছোলা, মটর, শিমের বীচি, দুধ, কলিজা ইত্যাদিতে যথেষ্ট থায়ামিন রয়েছে।
স্কার্ভি : ভিটামিন-সির অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। স্কার্ভি রোগ হ’লে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, রক্ত পড়ে ও দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায়। ভিটামিন-সির অভাবে হাত-পায়ের গিঁটে ব্যথা হয় এবং শরীরে কোন ক্ষত হ’লে সহজে সারতে চায় না। শিশুদের মধ্যে ভিটামিন-সির অভাব প্রায়ই দেখা দেয়। ভিটামিন-সির প্রধান উৎস হ’ল শাকসবজি ও টক ফল৷ যেমন পাতাবহুল শাকসবজি, কাঁচামরিচ, বাঁধাকপি, টমেটো, আমলকি, পেয়ারা, লেবু, আমড়া ও বাতাবি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। সাধারণত রান্নার সময় আগুনের তাপে অধিকাংশ ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় তাই কাঁচাফল ও সালাদ খাওয়া ভালো।
গলগন্ড : বাংলাদেশের অনেক মহিলাদের এ রোগ দেখা দেয়। এদেশের উত্তরাঞ্চলের মহিলাদের এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলগন্ড রোগকে স্থানীয় ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়। শরীরে আয়োডিনের অভাব হ’লে এ রোগ হয়ে থাকে। আমাদের দেহে যে পরিমাণ আয়োডিনের প্রয়োজন তা খুবই সামান্য, কিন্তু তাও উপযুক্ত খাবার না খাওয়ার কারণে পূরণ হচ্ছে না। আমরা অনেকেই জানি না কোন খাবারে কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। আয়োডিনের প্রধান উৎস হ’ল সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী। আয়োডিনের অভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য আয়োডিন যুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার।