গত
৩৫ দিন ধরে সারাদেশে যে রক্তপাত ঘটছে তাতে আমি বিস্মিত, স্তম্ভিত। এই
রক্তপাত এবং প্রাণহানি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি, সেটি নিয়েও আমি
বিভ্রান্ত। কারণ বেরিয়ে আসার যে সহজ-সরল উপায় সেটিও সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।
ফলে রাজনীতি সোজা পথ থেকে সরে এসে বাঁকা পথে ঘুরে গেছে। সবচেয়ে অবাক
ব্যাপার হ’ল, যদিও সরকার শুধুমাত্র এক পক্ষের প্রাণহানিই দেখাচ্ছে। কিন্তু
বাস্তবে দুই পক্ষই প্রাণ হারাচ্ছে। এক পক্ষ হারাচ্ছে পেট্রোলবোমায়, অন্য
পক্ষ ক্রসফায়ারে এবং পুলিশের গুলিতে। সরকার পক্ষ শুধুমাত্র পেট্রোলবোমার
দিকটাই হাইলাইট করছে। কিন্তু ক্রসফায়ার এবং পুলিশের গুলিতে যে ২৭-৩০ জন লোক
মারা গেছে তাদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার। এর অর্থ এই যে, শুধু
পুলিশের লোকরাই মানুষ, অন্যরা কোন মানুষই নয়। যারা পেট্রোলবোমায় মারা গেছে
তাদের ক্ষতি কোন দিন পূরণ হবার নয়। অনুরূপভাবে যারা ক্রসফায়ার বা পুলিশের
গুলিতে মারা যাচ্ছে তাদের ক্ষতিও কোন দিন পূরণ হবার নয়। নিউইয়র্ক ভিত্তিক
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সহিংসতা এবং অন্যান্য দমন-পীড়নের অবসানের কোন
লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারকে সবার মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা
প্রদর্শন এবং স্বেচ্ছাচারী শক্তি প্রয়োগ, গ্রেফতার এবং গুম বন্ধ করার দাবী
জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সহিংসতার অন্যতম ভয়ঙ্কর সংযোজন হচ্ছে পেট্রোলবোমা। এ সময় বিরোধী দলের হাতে ৪১ জন নিহত হয়েছে বলে দাবী করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে এ ঘটনায় একদল আরেক দলকে দায়ী করছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১৭ জন লোক নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠনের সদস্য। এর কোনটির ক্ষেত্রে পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের কথা বলছে আবার অন্য ক্ষেত্রে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের দাবী করছে। তবে পরিবারের লোকজন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাযতেই তারা নিহত হয়েছেন। সরকার দায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক অ্যাডামস এই প্রেক্ষাপটে বলেছেন, বাংলাদেশে যে নিপীড়ন চলছে তাতে বিশ্ব নীরব থাকতে পারে না। রাজনৈতিক নেতাদের কড়া ভাষায় বলে দেয়া দরকার যে, এই রক্তপাত বন্ধ না হ’লে অন্য দেশের সাথে তাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে।
\দুই\
দেখা যাচ্ছে, যারা পেট্রোলবোমা ছুড়ছে তাদের হামলায় নিহত এবং আহত হচ্ছে অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। কিন্তু অপরপক্ষ যাদের টার্গেট করছে তারা সমাজের অত্যন্ত ওপর তলার মানুষ। ওরা সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে গুলি করেছিল। এবার গুলি করেছে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজুদ্দীনের বাসায়। গত ৮ ফেব্রুয়ারী রোববার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজুদ্দীন আহমাদের বাসা লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় হাতবোমা হামলাও চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার রাত ৯-টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের কাঁটাবন মসজিদের পাশে তার বাসা লক্ষ্য করে এ হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এমাজুদ্দীন তার বাসায় গুলি ও হাতবোমা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাসা লক্ষ্য করে দু’টি হাতবোমা হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় আমি বাসায় ছিলাম। পরপর ছোড়া কয়েকটি গুলিতে বাসার জানালার কাঁচ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এ ঘটনায় বাসার সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
গত ৭
ফেব্রুয়ারী শনিবার মহানগরে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের এক গোল টেবিল বৈঠক
অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে সিপিবির প্রধান মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এখন
দেশে এক অদ্ভূত জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পলিটিশিয়ানরা করছেন পুলিশের
বক্তৃতা। আর পুলিশ করছে পলিটিশিয়ানদের বক্তৃতা। এখানে একজন সিনিয়র পুলিশ
অফিসারের বক্তৃতা উদ্ধৃত করছি। দেখুন, সিপিবি নেতার বক্তৃতা কেমন
সুন্দরভাবে পুলিশ অফিসারের বক্তৃতার সাথে মিলে যায়। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি
এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, যারা
নাশকতা করবে, মানুষ হত্যাসহ এ ধরনের কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে যা যা করার
সব করবেন। শুধু গুলি করা নয়, নাশকতাকারীদের বংশধর পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে
হবে। আমি হুকুম দিয়ে গেলাম, দায়দায়িত্ব সব আমার’। গত ৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার
বিকেলে গাযীপুর পুলিশ লাইনে যেলা পুলিশ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান
অতিথির বক্তব্যে ডিআইজি মাহফুজুল হক এসব কথা বলেন। পুলিশ সদস্যদের
উদ্দেশ্যে ডিআইজি বলেন, আমাদের অস্ত্র দেওয়া হয়েছে জনগণের জানমালের
নিরাপত্তার জন্য, আপনাদের সম্পদ, দেশের সম্পদ রক্ষা করার জন্য। আপনাদের যদি
কেউ হত্যা করে, আমরা কি বসে বসে আঙুল চুষব? তিনি আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদের
রক্তের বিনিময়ে যে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সে স্বাধীনতা কয়েকজন লোকের
স্বার্থে, বিদেশী প্রভুদের স্বার্থের কারণে আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, তা
হ’তে পারে না। দেশের মাটি ও মানুষকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের
স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে একটি গৃহযুদ্ধ বাধাতে চেষ্টা করছে। দেশের স্বাধীনতা
নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব কুলাঙ্গার, মোনাফেক,
কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। এদের হাত থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদে
রাখতে হবে। গাযীপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে ও
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায়
বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আযমতুল্লাহ খান, যেলা
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কাযী মুযাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়
উপকমিটির সহসম্পাদক আফযাল হোসেন সরকার প্রমুখ।[1]
\তিন\
যখন
বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে আওয়ামী ঘরানা তার স্বরে
চিৎকার করত। এখন ক্রসফায়ার হচ্ছে। আওয়ামী ঘরানা নিশ্চুপ। তবে এই নীরবতার
মাঝেও প্রতিবাদ করেছেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু
মুহাম্মাদ। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য
সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ সরকারের
উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে বলেছেন, দেশের নাগরিকদের কেন ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে?
কেউ অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। কিন্তু এখন
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটকের পর যাদেরকে ক্রসফায়ারে দিচ্ছে
তারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী কি-না তাও জানার সুযোগ পাচ্ছে না দেশবাসী। গত ৭
ফেব্রুয়ারী শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে
তিনি এ কথা বলেন। শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় মর্যাদা রক্ষার
দাবীতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে আনু মুহাম্মাদ বলেন, সরকারের
প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) যখন বলেন, দেখা মাত্র গুলি করতে
তখন আইন-আদালতের দরকার কী? এসময় তিনি সরকারকে গণগ্রেফতার ও ক্রসফায়ার বন্ধ
করার আহবান জানান। একই সঙ্গে তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে হরতাল
ও সহিংস কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহবান জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন
দিলে তাতে সাধারণ মানুষ শান্তি ফিরে পাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন,
নির্বাচনের আগে একটি স্বাধীন শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে। যে কমিশনের
হাতে নির্বাচনকালীন প্রয়োজনীয় ক্ষমতা থাকবে। আইন-শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ থাকবে
কমিশনের হাতে।[2]
ইন্ডিয়ার জোরে না নাচতে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের ছিদ্দীকী। তিনি বলেন, ইন্ডিয়া আপনাদের এই কুকর্মকে আর সাপোর্ট করবে না। বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, দেশে সঙ্কটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্যই সংলাপে বসতে হবে, নির্বাচনও আপনাকে দিতেই হবে। গত ৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার দুপুরে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। যাদের সাথে করতে হবে তাদের সাথেই আলোচনা করুন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করার চিন্তা করছেন বলে জানান এবং তিনি তাকে ফোন করে জানাবেন যে, বাংলাদেশে যা হচ্ছে তাতে আপনার (ভারতের) সম্মান চুরমার হয়ে যাচ্ছে। দেশে (বাংলাদেশ) শান্তি নেই। তিনি কয়েকদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সবাইকে অবহিত করবেন।
কাদের ছিদ্দীকী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের অবস্থা ভালো না। দারোগা পুলিশের ভরসায় থাকবেন না। যেই দিকে সূর্য উঠে সেদিকেই ঝুঁকে পড়ুন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইন্ডিয়ার জোরে নাচেন? আপনি আর পারবেন না। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ভারতের দাসত্ব করতে স্বাধীন হইনি। আমরা ভারতের বন্ধুত্ব চাই, দাসত্ব নয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, দেশে সঙ্কটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একমাত্র পথ হচ্ছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করা। এজন্য অবশ্যই সংলাপে বসতেই হবে। নির্বাচনও আপনাকে দিতেই হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আলোচনায়ও আপনাকে বসতে হবে। আজ দেশবাসীর প্রয়োজন চিন্তা করে আলোচনায় না বসে বিদেশীদের চাপে সেটি করলে জাতি লজ্জিত হবে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ পুড়ছে আর প্রধানমন্ত্রী ভায়োলিন বাজাচ্ছেন। দেশ জ্বলবে আর আপনারা ভায়োলিন বাজাবেন- এটা তো হবে না।
দেশ ও জনগণের এ সঙ্কটকালে নিরোর মতো বাঁশি বাজালে চলবে না। মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কার্যালয়ের সামনে দলটির ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার দুপুরে আয়োজিত জনসভায় বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জনসংহতি নেতা সন্তু লারমার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, সন্তু লারমা কী আগুন লাগায়নি? আপনি কী তার সঙ্গে শান্তির জন্য সংলাপ করেননি? আপনার পিতা কী পাকিস্তানীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি? আপনি এত সহজে সবকিছু ভুলে গেলেন?
\চার\
সহিংসতা তো শুধুমাত্র এক পক্ষেই হয়নি। এই কয়দিনে যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হয়েছে সেগুলো বলা না হলে অর্ধ সত্য কথা বলা হয়, পূর্ণ সত্য নয়। গত দুই সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আমরা এখানে তাদের একটি তালিকা দিচ্ছি।
১. ৫ জানুয়ারী সোমবার গণতন্ত্র হত্যা দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল হয়। এসব মিছিলে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। ফলে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ৪ জন নেতা নিহত হন।
২. ৭ জানুয়ারী বুধবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা মহসিন উদ্দিন নিহত হন।
৩. ৭ জানুয়ারী বুধবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পুলিশের গুলিতে যুবদল নেতা মিজানুর রহমান রুবেল নিহত হন।
৪. ১৫ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার নোয়াখালী যুবলীগের অস্ত্রবাজদের গুলিতে ছাত্রদল নেতা পারভেজ নিহত হন।
৫. ১৬ জানুয়ারী চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটে ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমানকে যৌথবাহিনী হত্যা করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
৬. ১৮ জানুয়ারী চুয়াডাঙ্গা সদরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন শঙ্কর চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম (৪৭)।
৭. ১৯ জানুয়ারী সোমবার ভোরে মতিঝিলে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর ও জামায়াত নেতা ইমরুল কায়েসকে পুলিশ ধরে নিয়ে হত্যা করেছে বলে পরিবার অভিযোগ করেছে।
৮. ১৯ জানুয়ারী সোমবার খিলগাঁওয়ের জোড়পুকুর মাঠে ছাত্রদল নেতা নূরয্যামান জনির লাশ পাওয়া যায়।
৯. ২০ জানুয়ারী মঙ্গলবার ককটেলের আঘাতে আহত হন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা সাকিবুল ইসলাম। যিনি ২৮ জানুয়ারী বুধবার রাত ৩-টায় অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান। তার অভিভাবকের অভিযোগ, পুলিশ তার চিকিৎসায় অবহেলা করেছে।
১০. চাঁপাই নবাবগঞ্জে সিটি কলেজের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা আসাদুল্লাহ তুহিনকে ২৫ জানুয়ারী রোববার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ১৩ ঘণ্টা পর সোমবার রাত ৩-টার সময় ট্রাক চাপায় তিনি নিহত হন।
১১. নূরুল ইসলাম শাহীন। রাজশাহীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক। গত ২৭ জানুয়ারী মঙ্গলবার তাকে ডিবি পুলিশ উঠিয়ে নেয় এবং ২৮ জানুয়ারী বুধবার তিনি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
১২. ২৭ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাতে ইসলামী ব্যাংকের ল্যাব সহকারী নাহিদ জামালকে রাস্তা থেকে পুলিশ উঠিয়ে নেয়। ২৮ জানুয়ারী বুধবার তিনি ক্রসফায়ারে নিহত হন।
১৩. ৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাত অর্থাৎ শুক্রবার সাতক্ষীরার কাশিমপুর গ্রামের শিবির নেতা শহীদুল ইসলাম ভোর রাতে যশোরে ক্রসফায়ারে নিহত হন।
১৪. ৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাত অর্থাৎ শুক্রবার রাজশাহী শিবির নেতা শাহাবুদ্দীন রাত ১-টার দিকে তিনি ক্রসফায়ারে নিহত হন।
১৫. গত ৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকেলে বাসা থেকে গ্রেফতারের পর সকালে হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপযেলা শিবির সভাপতি সাহাব পাটোয়ারীর।
১৬. গত ৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় বাচ্চু মিয়া (২৬) নামে আরো এক যুবক পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধেহ নিহত হন।
১৭. পুলিশের গাড়ি থেকে পালাতে গিয়ে দুই ব্যক্তি ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।
একটি বাংলা সহযোগীর রিপোর্ট মোতাবেক গত ৫ জানুয়ারী থেকে ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫ জন রাজনৈতিক কর্মী। ঐ দিকে পেট্রোলবোমায় নিহত হয়েছে ৪৯ জন আদম সন্তান। উভয় পক্ষের সহিংসতায় প্রতিদিন যে লাশ পড়ছে সেই লাশ পড়ার শেষ কোথায়?
\ সংকলিত \
মোবায়েদুর রহমান
[1]. দৈনিক প্রথম আলো, ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫।
[2]. দৈনিক আমার দেশ অনলাইন, ৭ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫।