একজন প্রকৃত মুসলিম চরম বিপদ ও কষ্টের মাঝেও ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখাতে পারেন সেটাই প্রমাণ করলেন পশ্চিমবঙ্গে কট্টরপন্থী হিন্দুদের নির্মম নির্যাতনে পুত্রহারা পিতা ইমদাদুল রাশীদী। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে গত ২৫শে মার্চ রবিবার রামনবমীর শোভাযাত্রার সময় তার কিশোর ছেলে সিবতুল্লাহ রাশীদীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা। হত্যার সময় ১৬ বছরের কিশোরের বুক চিরে কলিজা বের করে টুকরো টুকরো করে কাটে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দাঙ্গাবাজরা।

নিজ এলাকার মসজিদের জনপ্রিয় এই ইমাম নিজের কিশোর সন্তানকে হারানোর পরও সবাইকে শান্ত রাখার যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন, তা শুধু দেশের মধ্যে নয় বরং বিশ্বব্যাপী নাড়া দিয়েছে। নির্মম এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ লাখো মানুষ ছেলেটির জানাযায় উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে জানাযা পড়ানোর আগ মুহূর্তে পিতা ইমদাদুল রাশীদী উপস্থিত মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে আমি আপনাদের ইমামের দায়িত্ব পালন করছি। ...আমার ছেলে চলে গেছে। আমি চাই না আর কোন পরিবার তাদের সন্তানকে হারাক। আমি চাই না আর কোন ঘরে আগুন জবলুক। আল্লাহ আমার সন্তানের যতদিন আয়ু রেখেছিলেন, ততদিন সে বেঁচেছে। আল্লাহর ইচ্ছায় তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে যারা হত্যা করেছে, ক্বিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন। কিন্তু আমার সন্তানের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার আপনাদের কারো নেই। ... অতএব যদি আপনারা শান্তি বজায় রাখতে না পারেন, তাহ’লে আমি আর এই মসজিদে থাকবো না। চিরতরে আসানসোল ছেড়ে চলে যাব।

ইমাম ছাহেবের এই আকুতিভরা বক্তব্য শ্রবণে উপস্থিত জনতার ক্ষোভের আগুন নিমেষেই নিভে যায়। সবাই নীরবে ফিরে যায়। ফলে আসানসোল বেঁচে যায় আরেকটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত থেকে।  

জানাযায় উপস্থিত স্থানীয় কাউন্সিলর নাসীম আনছারী বলেন, সন্তানহারা এক পিতার কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এমনটি আমরা আশাই করিনি। এটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়, পুরো ভারতের জন্যই একটা দৃষ্টান্ত। নিহতের লাশ পাওয়ার পর যুবকরা ক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু তার বক্তব্যের সময় কাঁদছিল না এমন একটি লোকও সেখানে ছিল না। আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। তিনি যদি শান্তির জন্য অনুরোধ না করতেন তাহ’লে আসানসোলে আগুন জ্বলতো। আর তা যে ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়তো না আমি নিশ্চিত করে তা বলতে পারছি না।

আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র বলেন, আমরা ইমাম ছাহেবকে নিয়ে গর্বিত। নিজের সন্তান এভাবে হারিয়েও তিনি শান্তি বজায় রাখতে মানুষের কাছে অনুরোধ করেছেন।







আরও
আরও
.