চক্রবর্তীটেক, গাযীপুর সদর, গাযীপুর ৯ই মার্চ শুক্রবার : গাযীপুর যেলার সদর থানাধীন চক্রবর্তীটেক রওশনআরা জামে মসজিদটি অদ্য হ’তে আনুষ্ঠানিকভাবে চক্রবর্তীটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদে রূপান্তরিত হ’ল। এ উপলক্ষে অত্র মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা ডাঃ আব্দুল কুদ্দূসের আহবানে অদ্য সকাল ১০-টা হ’তে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জুম‘আর খুৎবা :
রাস্তায় যানজটে আটকে যাওয়ায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের মোবাইল ফোনের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘আন্দোলন’-এর প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন যথাসময়ে খুৎবা শুরু করেন। তিনি ইত্তিবায়ে সুন্নাহর উপরে নাতিদীর্ঘ ভাষণ দেন। খুৎবার মধ্যেই মুহতারাম আমীরে জামা‘আত মসজিদে এসে উপস্থিত হন। অতঃপর তিনি ছালাতে ইমামতি করেন। খুৎবা ও ছালাতে উপস্থিত ছিলেন ‘বেক্সিমকো গ্রুপ’-এর ভাইস চেয়ারম্যান জনাব সালমান এফ. রহমান।
ছালাত পরবর্তী সুধী সমাবেশ :
ইসলামিক কমপ্লেক্স রাজশাহী-এর সেক্রেটারী ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সুধী সমাবেশে প্রদত্ত স্বাগত ভাষণে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা ৮৫ বছর বয়স্ক ডাঃ আব্দুল কুদ্দূস বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, বিগত ৪০ বছর যাবত আমি এখানে বসবাস করছি। কেউ আমাকে মন্দ বলেনি। কিন্তু আহলেহাদীছ হওয়ার পর থেকেই আমি সবার কাছে খারাপ হয়ে গেছি। এমনকি আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আমি আল্লাহর সাহায্য কামনা ও সকলের সহানুভূতি আশা করি।
অতঃপর সুধী সমাবেশে সভাপতির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন বিশুদ্ধ ইসলামী আন্দোলনের নাম। প্রসিদ্ধ চার ইমামের প্রত্যেকেই ছহীহ হাদীছ মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন। আমরা সেদিকেই সকলকে আহবান জানাই। তিনি অটুট ধৈর্যের সাথে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের উপর দৃঢ় থাকার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবান জানান। সঙ্গে সঙ্গে জমিদাতা ও মসজিদ নির্মাতা ডা. আব্দুল কুদ্দুস-এর এই মহতী দানকে যেন আল্লাহ কবুল করেন, সেজন্য দো‘আ করেন। অতঃপর অত্র সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য সম্মানিত প্রধান অতিথিকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অতঃপর প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব সালমান এফ. রহমান স্থানীয় মুছল্লীগণের উদ্দেশ্যে পারস্পরিক শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার আহবান জানান। তিনি বলেন, আমি শুনেছি অত্র মহল্লায় ৫টি মসজিদ আছে। মুছল্লীগণ স্বাধীনভাবে যেকোন মসজিদে ছালাত আদায় করবেন। কাউকে কোন মসজিদে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। আবার বাধ্যও করা যাবে না। তিনি সকলের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহবান জানান।
সকাল ১০-টা থেকে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ডঃ মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই, আমীন মডেল টাউন স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মুহাম্মাদ আল-আমীন, ঢাকা যেলা ‘যুবসংঘে’র সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ তরীকুল ইসলাম, সাভার-আশুলিয়া উপযেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ঢাকা ও গাযীপুর যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র নেতৃবৃন্দ, সাভার-আশুলিয়া উপযেলা নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিপুল সংখ্যক মুছল্লী উপস্থিত ছিলেন। তিন তলা মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ছাদে ও বাহিরে পৃথক প্যান্ডেলেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
উল্লেখ্য যে, অত্র মসজিদটি প্রথমে মাযহাবী আক্বীদায় গড়ে ওঠে। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি ডাঃ আব্দুল কুদ্দূস ছাহেব নিজস্ব অর্থায়নে ও নিজেদের দানকৃত জমিতে সাত তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে ৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সংলগ্ন হওয়ায় মসজিদটির গুরুত্বও বেশী। তাছাড়া এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় মসজিদে মুছল্লীও হয় ব্যাপক। মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে ডাঃ আব্দুল কুদ্দূস ছাহেব আমীরে জামা‘আতের লেখা ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ সহ অন্যান্য বই-পুস্তক পাঠের মাধ্যমে ছহীহ তরীকার সন্ধান পান। অবশেষে তিনি মাযহাবী তাক্বলীদ ছেড়ে ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আমল শুরু করেন। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। কিন্তু তার এই পরিবর্তন স্থানীয় বিদ‘আতী আলেমদের চোখ জ্বালার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা ডাক্তার ছাহেবের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র শুরু করে ও বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি প্রদান করে। অবশেষে গত বছর রামাযান মাসে সাভারের জিরানী পুকুরপাড় আহলেহাদীছ জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে আমীরে জামা‘আতের সাথে সাক্ষাৎ করে তিনি উক্ত মসজিদটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আহলেহাদীছ আন্দোলনের অনুকূলে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেন। অতঃপর সে মোতাবেক গত ৩০শে জানুয়ারী’১৮ তারিখে গাযীপুর সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স’-এর নামে উক্ত মসজিদটি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়। অদ্যকার সুধী সমাবেশের মাধ্যমে যা আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়িত হ’ল।
অনুষ্ঠান শেষে জনাব সালমান এফ রহমানের সৌজন্যে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ডা. আব্দুল কুদ্দূসসহ অন্যান্য কর্মীদের নিয়ে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শন করেন ও সেখানেই মাগরিবের ছালাত আদায় করেন।