নওদাপাড়া, রাজশাহী ১২ই নভেম্বর শুক্রবার : অদ্য সকাল ৯-টায় রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়াস্থ আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে ‘সোনামণি কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২১’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘সোনামণি’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ -এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্ল­াহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ দেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম।

উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ৭টি দেশের বিশ্বখ্যাত ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ বছরের অধ্যাপনাসহ মোট ৩২ বছর জ্ঞান সাধনার বিরল অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া (ঢাকা)। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কুরআন-হাদীছের ভিত্তিতে একটি সুন্দর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে যারা বিজয় লাভ করবে তারা আনন্দ করবে। কিন্তু অহংকার করবে না। আর যারা বিজয় লাভ করতে পারেনি, তাদের সাময়িক দুঃখ থাকতে পারে, তবে নিরাশ হবে না। উভয়ের কাজ হচ্ছে আরো ভালো করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তিনি সোনামণিদের বলেন, তোমরা কুরআন-হাদীছের যে জ্ঞান অর্জন করছ, এর মধ্যেই সর্বোত্তম আদর্শ, দর্শন ও দিক-নির্দেশনা রয়েছে। যেগুলি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয় পশ্চিমা দার্শনিকদের নামে। অথচ সেখানে কুরআন-হাদীছের নাম নেওয়া হয় না। তোমরা বড় হয়ে মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচীতে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করবে। পরিশেষে তিনি সোনামণি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-অর রশীদ, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ‘সোনামণি’র পৃষ্ঠপোষক ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. হেলালুদ্দীন ও ‘সোনামণি’র প্রথম কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান (খুলনা) প্রমুখ।

অতিথিগণ স্ব স্ব ভাষণে সম্মেলনকে স্বাগত জানান এবং সোনামণি বালক-বালিকাদের রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে গড়ে তোলার এই সুন্দর প্রচেষ্টার জন্য মাননীয় প্রতিষ্ঠাতার ও পরিচালকদের ধন্যবাদ জানান।

সবশেষে সভাপতির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, সন্তানরা আমাদের কাছে আমানত। সন্তান সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হতে হবে। তিনি সূরা তাহরীমের ৬ আয়াত উল্লেখ করে বলেন, সন্তানকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করাই পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের প্রধান দায়িত্ব। এরপর তাদের পরিবারের, সমাজের ও রাষ্ট্রের।

কোমলমতি শিশুরা সঠিক পরিবেশ পেলে আদর্শ রূপে গড়ে উঠবে। তাকে সুন্দর পরিবেশ দিতে হবে। সঠিক ইসলামী শিক্ষা দিতে হবে। ঐ স্কুল-মাদরাসার কোন প্রয়োজন নেই যেখানে নাস্তিক্যবাদ শেখানো হয়। আমাদের ছেলেরা গড়ে উঠবে হক-এর পক্ষে বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন একেকটা স্ফুলিঙ্গের মত। তারা সর্বদা মধ্যপন্থী থাকবে। কখনোই চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী নয়। অলসতা ও বিলাসিতা তাদের স্পর্শ করবে না। তারা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়বে। দেশী বা বিদেশী কোন বাতিল আদর্শের আলোকে নয়।

সবশেষে তিনি সম্মেলনের অতিথিবৃন্দ, ‘আন্দোলন’, ‘যুবসংঘ’, ‘সোনামণি’ ও আল-‘আওনে’র সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল, অভিভাবক ও সোনামণিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সম্মেলনে পরিচালকদের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন সাতক্ষীরা যেলা ‘সোনামণি’র পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল্ল­াহ জাহাঙ্গীর, গাইবান্ধা-পশ্চিম যেলা পরিচালক হাফেয ওবায়দুল্ল­াহ ও বগুড়া যেলার সাবেক পরিচালক মাহবূব হাসান। সম্মেলনে ‘আন্দোলন’, ‘যুবসংঘ’, ‘সোনামণি’ ও ‘আল-‘আওন’-এর কেন্দ্রীয় ও যেলা দায়িত্বশীলবৃন্দ এবং ১৩টি যেলার নির্বাচিত সোনামণি প্রতিযোগীরা ছাড়াও অন্যান্য বিপুল সংখ্যক সোনামণি অংশগ্রহণ করে।

সম্মেলনে কুরআন তেলাওয়াত করে সোনামণি মুহাম্মাদ মামূন (বগুড়া) ও জাগরণী পরিবেশন করে নাযীফ মুহসিন (কুমিল্ল­া)। সম্মেলনে ‘সোনামণি’ সদস্যরা ‘বিবর্তনবাদ ও মাযারপূজা’ বিষয়ে পরপর দু’টি মনোজ্ঞ ‘সংলাপ’ পরিবেশন করে। অতঃপর ‘কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২১’-এ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সভাপতি ও অতিথিবৃন্দ। সম্মেলনে সঞ্চালক ছিলেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় সহ-পরিচালক রবীউল ইসলাম ও আবু রায়হান।

উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় ১১৪ জন বালক ও ৬৩ জন বালিকা সহ মোট ১৭৭ জন সোনামণি অংশগ্রহণ করে। তন্মধ্যে ১ম, ২য় ও ৩য় ৪৭ জন বিজয়ীকে বিশেষ পুরস্কার ও অন্যদের উৎসাহ পুরস্কার দেওয়া হয়। বালকদের কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতা মারকাযের বালক শাখায় এবং বালিকাদের কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতা মারকাযের বালিকা শাখায় তথা মহিলা মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়। নিমেণ প্রতিযোগিতার বিষয় ও বিজয়ীদের নাম সমূহ উল্লেখ করা হ’ল।-

গ্রুপ-ক

১. অর্থসহ হিফযুল কুরআন ও অর্থসহ হিফযুল হাদীছ (সূরা ফাতিহা ও ইখলাছ এবং ১০টি হাদীছ)।

বালক : ১ম : কামরুল হাসান (রাজশাহী), ২য় : আরাফাত (বগুড়া), ৩য় : ইমরান আলী (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)।

বালিকা : ১ম : তামান্না খাতুন (সাতক্ষীরা), ২য় : উম্মে হাবীবা (কুষ্টিয়া), ৩য় : ইশরাত (বগুড়া)।

২. দো‘আ (বিভিন্ন বিষয়ক ৩০টি দো‘আ) :  

বালক : ১ম : তামীম আহমাদ (কুমিল্ল­া), ২য় : সামীউল্ল­াহ (মেহেরপুর), ৩য় : রাজ মাহমূদ (দিনাজপুর)।

বালিকা : ১ম : সা‘দিয়া জান্নাত (বগুড়া), ২য় : সা‘দিয়া (বগুড়া), ৩য় : নাসীফা মুবাশ্বিরা (রাজশাহী)।

৩. সাধারণ জ্ঞান :

বালক : ১ম : রিয়াযুল ইসলাম (বগুড়া), ২য় : ছিয়াম আহমাদ (বগুড়া), ৩য় : মুহাম্মাদ রবীউল হাসান (বগুড়া)।

বালিকা : ১ম : মীম আখতার (বগুড়া), ২য় : তাছনিয়া (রাজশাহী), ৩য় : হাবীবা (কুমিল্ল­া)।

গ্রুপ-খ :

১. হিফযুল কুরআন তাজবীদসহ (২৪ ও ২৫তম পারা)

বালক : ১ম : আব্দুল্ল­াহ জাসিম (কুমিল্ল­া), ২য় : মুহাম্মাদ বাপ্পী (বগুড়া), ৩য় : অলিউল্ল­াহ (রাজশাহী)।

বালিকা : ১ম : ফাতেমা (মেহেরপুর), ২য় : তাযমীন খাতুন (বগুড়া), ৩য় : সাবা (রাজশাহী)।

২. অর্থসহ হিফযুল কুরআন ও অর্থসহ হিফযুল হাদীছ (সূরা কাহফ ১০৭-১১০ আয়াত এবং ১৫টি হাদীছ)।

বালক : ১ম : নাজমুছ ছাকিব (সাতক্ষীরা), ২য় : মুহাম্মাদ মামূন (বগুড়া), ৩য় : খুবায়েব (কুমিল্ল­া)।

বালিকা : ১ম : আনীকা তাসনীম (রাজশাহী), ২য় : সামিয়া আখতার (বগুড়া), ৩য় : হুমায়রা (সাতক্ষীরা)।

৫. জাগরণী :

বালক : ১ম : নাযীফ মুহসিন (কুমিল্ল­া), ২য় : হাবীবুর রহমান (বগুড়া), ৩য় : মুহাম্মাদ গোলাম রাববী (রাজশাহী)।

বালিকা : ১ম : আসমা খাতুন (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ২য় : উম্মে কুলছূম জান্নাত (বগুড়া), ৩য় : সামিয়া সুলতানা (বগুড়া)।

৩. সাধারণ জ্ঞান :

বালক : ১ম : নাহিদ হাসান (নওগাঁ), ২য় : রিফাত (কুমিল্ল­া), ৩য় যৌথভাবে : মুহাম্মাদ শাহরিয়ার (রাজশাহী) এবং মুছ‘আব (ঢাকা)।

বালিকা : ১ম : মায়মূনা আনীকা (কুমিল্ল­া), ২য় : মারিয়া আখতার (কুমিল্ল­া), ৩য় : রমিনা খাতুন (সিরাজগঞ্জ)।

৮. গঠনতন্ত্র ও সোনামণি প্রতিভা (পরিচালকদের জন্য) :

১ম : আব্দুর রহীম (সিরাজগঞ্জ), ২য় : আব্দুল্ল­াহ জাহাঙ্গীর (সাতক্ষীরা), ৩য় যৌথভাবে : ইয়াসীন আরাফাত (মেহেরপুর) এবং শহীদুল ইসলাম (রাজশাহী)।

সোনামণি কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন : সম্মেলনে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ‘সোনামণি’র ২০২১-২৩ সেশনের পুনর্গঠিত কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের নাম ঘোষণা করেন এবং পরের দিন তাদের শপথ নেন।

২০২১-২৩ সেশনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের তালিকা

ক্র.

নাম

দায়িত্ব

যেলা

১.

ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম

পরিচালক

রাজশাহী

২.

রবীউল ইসলাম

সহ-পরিচালক

নওগাঁ

৩.

মুহাম্মাদ মুঈনুল ইসলাম

সহ-পরিচালক

রাজশাহী

৪.

মুহাম্মাদ মুসলিমুদ্দীন

সহ-পরিচালক

সিরাজগঞ্জ

৫.

আবু রায়হান

সহ-পরিচালক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

৬.

নাজমুন নাঈম

সহ-পরিচালক

সাতক্ষীরা

৭.

মুহাম্মাদ আবু তাহের

সহ-পরিচালক

সাতক্ষীরা






আরও
আরও
.