পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । শেষ পর্ব ।
[ফিক্বহে শায়খ আলবানীর স্থান] :
কিতাব ও সুন্নাহ হ’তে মাসআলা উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের নাম হ’ল ফিক্বহ। কিতাব ও সুন্নাহ যার মূল বিষয়বস্ত্ত নয়, তিনি ফিক্বহী মাসআলাসমূহ রায় ও ক্বিয়াস দ্বারাই উদ্ভাবন করবেন; হাদীছ থেকে নয়। যখন আল্লামা আলবানী (রহঃ)-এর ইলমে হাদীছে দক্ষতা এবং গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি স্বীকৃতি পেয়েছে, তখন এটা বলা হয় যে, ফিক্বহ তার বিষয় নয়। মূলতঃ এটি সেই কথারই প্রতিধ্বনি যে, মুহাদ্দিছগণ ফিক্বহী জ্ঞান রাখতেন না। ইমাম যাহাবী সেদিকে ইঙ্গিত করে তাঁর ‘তাযকিরাতুল হুফফায’ গ্রন্থে (২/৬২৮) বলেন যে, ‘আহলে রায় এবং মু‘তাযিলা প্রমুখগণ বলে থাকে যে, আহমাদ (বিন হাম্বল) কে? ইবনুল মাদীনী, আবূ যুর‘আহ, আবূদাঊদ কে? তারা তো মুহাদ্দিছ। তাদের তো ফিক্বহের জ্ঞান নেই’।
ইমাম
ওয়াকী‘ বিন জার্রাহ বলেছেন যে, একদা ইমাম আবূ হানীফার সাথে সাক্ষাৎ হ’ল।
তিনি আমাকে বললেন, যদি আপনি হাদীছ লেখা ছেড়ে ফিক্বহের জ্ঞান হাছিল করেন
তাহ’লে সেটিই কি উত্তম হবে না? ইমাম ওয়াকী‘ বললেন, কেন, হাদীছ কি
পূর্ণাঙ্গ ফিক্বহ নয়? তখন তিনি বললেন, আচ্ছা বলুন তো একজন নারী গর্ভধারণের
দাবী করছে, কিন্তু তার স্বামী তা অস্বীকার করছে; তাহ’লে এর কি সমাধান হবে?
ইমাম ওয়াকী‘ এ ব্যাপারে স্বীয় সনদে ইবনে আববাস (রাঃ)-এর হাদীছ বর্ণনা করলেন
যে, এমতাবস্থায় রাসূল (ছাঃ) লি‘আনের হুকুম দিয়েছেন। অতঃপর ইমাম আবূ হানীফা
প্রস্থান করলেন। এরপর হ’তে তিনি আমাকে যে রাস্তায় আসতে দেখতেন সে রাস্তা
ত্যাগ করে অন্য রাস্তা ধরতেন।[1]
ইমাম ওয়াকী‘ বরং বলতেন, হে আছহাবুল হাদীছ! যদি তোমরা হাদীছের ফিক্বহ অর্জন কর, তাহ’লে আহলুর রায়গণ তোমাদের উপর বিজয়ী হ’তে পারবে না।[2]
নিঃসন্দেহে
যেমনভাবে কেবল ফিক্বহের গ্রন্থ অধ্যয়ন করলে ফিক্বহী দক্ষতা আসে না, তেমনি
স্রেফ হাদীছসমূহ পড়ার মাধ্যমেও ফিক্বহুল হাদীছ তথা হাদীছ বোঝার দক্ষতা
অর্জিত হয় না। এজন্যই তো ইমাম ওয়াকী‘ বলেছেন যে, হে হাদীছ অধ্যয়নকারীরা!
গভীর চিন্তা-গবেষণার সাথে কাজ কর। আবূ হানীফা (রহঃ) যা বলেন সে ব্যাপারে
তিনি হাদীছের মুখাপেক্ষী। অথচ আমরা তো সে ব্যাপারে হাদীছের একটি অনুচ্ছেদই
বর্ণনা করি।[3]
আল্লামা আলবানী (রহঃ)-এর ফৎওয়াসমগ্র প্রায় ত্রিশ খন্ডে প্রকাশিতব্য। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি এর চেয়েও বেশী, যা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। শায়খ শু‘আইব আলবানী (রহঃ)-এর ফিক্বহী জ্ঞান অস্বীকার করলেও তার সমকালীন অসংখ্য আলেম রয়েছেন যারা তাঁর ফিক্বহী দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর তাঁর জীবনীকারগণ তাদের সেসব মতামত উল্লেখ করেছেন।
শায়খ শু‘আইব তার উপরোক্ত বক্তব্য আরও বর্ধিত করে
বলেছেন যে, ‘দেখ! আল্লামা আলবানী ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত ওয়াজিব না হওয়ার
প্রবক্তা ছিলেন। আর ভূমিতে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে মাত্র চার প্রকার ফসলে ওশরের
প্রবক্তা ছিলেন। তিনি নারীদের জন্য স্বর্ণাংলকার হারাম ঘোষণা করেছেন। আর
এতে তিনি আল্লামা ইবনে হাযম এবং আল্লামা শাওকানীর অনুসরণ করেছেন’।[4]
উক্ত মাসআলাগুলিতে আলেমদের ইখতিলাফী অবস্থান সম্পর্কে আমরা অত্র নিবন্ধে আলোচনা করা সমীচীন মনে করছি না। আল্লামা আলবানী হৌন বা হাফেয ইবনে হাযম হৌন কিংবা আল্লামা শাওকানী (রহঃ), হাদীছ ও আছার সমূহের বাহ্যিক অর্থের ভিত্তিতে যদি তারা এই অবস্থান গ্রহণ করেন, তবে আপনি এই অবস্থানকে ইবনু হাযমের যাহেরী মাযহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন। এখন প্রশ্ন এই যে, যাহিরীগণ কি আহলে সুন্নাতের বাইরে এবং তাদের মতামত বর্জন করা কি আবশ্যক? মাসিক বাইয়েনাতের ঐ সংখ্যাতেই ‘ছাহাবায়ে কেরামের যুগে ফিক্বহ চর্চা’ শিরোনামে মাওলানা ডক্টর মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম চিশতী ছাহেবের প্রবন্ধের দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ- لَا يُصَلِّيَنَّ اَحَدٌ الْعَصْرَ اِلَّا فِيْ بَنِيْ قُرَيْظَة ‘তোমাদের প্রত্যেকেই বনী কুরায়যায় পৌঁছে আছরের ছালাত পড়বে’-এর ভিত্তিতে ছাহাবায়ে কেরাম কি আমল করেছিলেন, তার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হয়েছে এভাবে যে, কতিপয় ছাহাবী (রাঃ) রাস্তায় ছালাতের সময়ে ছালাত পড়েছেন। আর কতিপয় বনী কুরায়যায় পৌঁছার পর ছালাত পড়েছিলেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) উভয় দলের কোনটির ব্যাপারে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেননি।
এই হাদীছটি সম্পর্কে ক্বাযী ইয়ায (রহঃ)-এর মন্তব্য এই
যে, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল বনী কুরায়যায় দ্রুত উপস্থিত হওয়া।
ছালাতকে দেরী করে পড়া বা তাতে অলসতা বা ত্রুটি করা উদ্দেশ্য ছিল না’। যিনি
তাঁর বক্তব্যের মর্ম বুঝেছিলেন তিনি ছালাতের সময় শেষ হওয়ার আশংকায় সময়ের
মধ্যেই ছালাত আদায় করেছেন। আর যারা উদ্দেশ্য না বুঝে বাহ্যিক শব্দকে গ্রহণ
করেছেন, তারা ছালাতকে দেরী করে পড়েছেন। সেজন্য এই হাদীছে উভয় মতের দলীল
মওজূদ আছে। এতে যারা বাহ্যিক অর্থের উপর আমল করার প্রবক্তা তাদেরও দলীল
রয়েছে। আর যারা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ও মর্ম মোতাবেক আমলের প্রবক্তা তাদেরও
দলীল রয়েছে’।[5]
আল্লামা নববী এবং আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) থেকেও হাদীছটির অনুরূপ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। সুতরাং হাদীছের বাহ্যিক অর্থের উপর আমল করা এবং অন্যান্য দলীলসমূহের আলোকে বাহ্যিক হুকুমটি বোঝার চেষ্টা করা এ দু’টি পদ্ধতিই ছাহাবীদের থেকে প্রমাণিত এবং এতে আপত্তির কিছু নেই। এতদসত্ত্বেও ইবনে হাযম (রহঃ)-এর অনুসরণে আল্লামা আলবানী (রহঃ) যদি বাহ্যিক দলীলের ভিত্তিতে উক্ত মাসআলাগুলির ভিত্তি স্থাপন করে থাকেন, তাহ’লে এ ব্যাপারে কলমবাজির কি উদ্দেশ্য?
এই কথাটি তো
বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু হাফেয ইবনে
হাযমকে জিজ্ঞেস করুন তিনি কি বলেন? তাঁর বক্তব্য এই যে, রাসূল (ছাঃ) আছরের
ছালাতের ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এমনকি সূর্যের আলোর হলুদ বর্ণ ধারণ
করার সময় আছরের ছালাত আদায় করাকে মুনাফিকদের আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন। এরপরও
তিনি বনী কুরায়যার ঘটনাটিতে বলেছেন যে, আছরের ছালাত সেখানে গিয়ে পড়তে হবে।
ফলে এমতাবস্থায় একটি জামা‘আত প্রথম হুকুমের প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন; অপর
জামা‘আতটি পরবর্তী নির্দেশের প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন। যদি বনী কুরায়যার দিনে
আমরা সেখানে থাকতাম, তাহ’লে বনী কুরায়যাতে গিয়েই ছালাত পড়তাম, যদিও অর্ধেক
রাত অতিক্রান্ত হয়ে যেত। কেননা এটাই রাসূল (ছাঃ)-এর পরবর্তী হুকুম ছিল’।[6]
আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, এই হাদীছটি বোঝার পন্থা ক্বাযী ইয়ায, আল্লামা নববী এবং আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) থেকে ভিন্নতর। এই ভিন্নধর্মী চিন্তাই ইখতিলাফের কারণ। আর এই চিন্তাটি স্বতন্ত্র কিছু নয়। স্বয়ং ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকেই তা গৃহীত। সুতরাং এখানে আপত্তির কি আছে?
হাদীছ অনুধাবনে ফক্বীহদের মানহাজ :
এই
শিরোনামের অধীনে শায়খ শু‘আইবের বরাতে যা কিছু বলা হয়েছে এটাও অন্ধকারে ঢিল
ছোঁড়ার ন্যায় যে, আল্লামা আলবানী (রহঃ) ছহীহ হাদীছকে দেখেন। অথচ এই অবকাশ
বহু বিষয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ার কারণ। যেমন তিরমিযীতে হযরত আনাস (রাঃ) হ’তে
প্রমাণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার অনুমতি
দেননি। কিন্তু মুজতাহিদ ইমামগণ মূল্য নির্ধারণের প্রবক্তা। আর এই হাদীছটি
‘আম মাখছূছ মিনহুল বায’ পর্যায়ের। পারস্পরিক লেনদেন পরিবর্তনের অবস্থায়
মূল্য নির্ধারণ করা অবশ্য কর্তব্য। শায়খ মুহাম্মাদ বাখীত ‘তাকমিলাতুল
মাজমূ’ বইয়ে এই মাসআলা সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তব্য একত্রিত করেছেন। কিন্তু
শায়খ আলবানী (রহঃ) এমন বিষয়ের দিকে দৃকপাত করেন না। তার নিকটে ছহীহ হাদীছের
বিরোধিতা করা জায়েয নয়।[7]
হতবাক হ’তে হয় যে, চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই শায়খ শু‘আইব কি বলে যাচ্ছেন। আর খামাখা আল্লামা আলবানী (রহঃ)-এর উপর অভিযোগ করছেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে, তখন মূল্য নির্ধারণ জায়েয না হওয়ার উক্তিও মুজতাহিদ ইমামদের মধ্য হ’তে কারো মত, নাকি মুজতাহিদ ইমাম স্রেফ তারাই যারা বৈধতার প্রবক্তা?
শায়খ শু‘আইবের কি জানা নেই
যে, ইমাম শাফেঈ এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ) উক্ত হাদীছের ভিত্তিতে মূল্য
নির্ধারণের বৈধতার বিপক্ষে ছিলেন। বরং জমহূরের এটাই মত। অন্যদিকে ইমাম আবূ
হানীফা এবং ইমাম মালেক (রহঃ) এর বৈধতার প্রবক্তা ছিলেন। আর হানাফীদের নিকটে
তো এটা বাধ্যগত অবস্থায় জায়েয। এমনকি হেদায়ার লেখক লিখেছেন,وَعَجِزَ
الْقَاضِيْ عَنْ صِياَنَةِ حُقُوْقِ الْمُسْلِمِيْنِ إِلَّا
بِالتَّسْعِيْرِ، فَحِيْنَئِذٍ لَا بَأْسَ بِهِ بِمَشُوْرَةٍ مِنْ أَهْلِ
الَّرأْيِ وَالْبَصِيْرَةِ، ‘যদি বিক্রেতারা প্রকাশ্যে মূল্য বৃদ্ধি করে
এবং বিচারক মুসলমানদের অধিকার সংরক্ষণে অপারগ হয়ে যান, মূল্য নির্ধারণ
ব্যতীত কোন উপায় না থাকে তাহ’লে জ্ঞানী-গুণী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের
পরামর্শে মূল্য নির্ধারণে কোন দোষ নেই’।[8]
চিন্তা করুন! এমতাবস্থায় এ বৈধতা শুধু ‘তাতে কোন অসুবিধা নেই’ স্তরে থাকে। মূল্য নির্ধারণ করা আবশ্যক ও যরূরী তারাও বলেননি। বরং মূল্য নির্ধারণ না করার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। যেমনটি আল্লামা শামী রাদ্দুল মুহতার গ্রন্থে বলেছেন। সেকারণ হানাফী ফিক্বহী গ্রন্থসমূহে সাধারণত وَلَا يُسَعِّرُ اَحَدُكُمْ -এ জাতীয় শব্দ রয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করা হ’লেও তিনি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেননি। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর চাইতে বড় দয়ালু এবং ক্ষতি ও লোকসান দূর করার চিন্তা কার বেশী হ’তে পারে। এজন্য ইমাম শাফেঈ (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বান মূল্য নির্ধারণের প্রবক্তা নন। শায়খ শু‘আইবের কাছে আমাদের প্রশ্ন এই যে, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ কি ফক্বীহ, নাকি ফক্বীহ নন?
শায়খ শু‘আইবের আধুনিকতা :
আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আল্লামা আলবানী (রহঃ)-এর এ কথাটিও শায়খ শু‘আইবের পসন্দ হয়নি যে, ‘তিনি (সহশিক্ষায় ছেলে-মেয়েদের) অবাধ মেলামেশা অবৈধ হওয়ার কারণে কোন ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশুনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়াকে হারাম বলতেন এবং তিনি এমন কতিপয় জিনিসের দিকে আহবানকারী ছিলেন, যা বর্জনে বর্তমানে মানুষদের পসন্দসই কোন ফায়েদা হাছিল হয় না। যেমন দাড়ি ছেড়ে দেওয়া এবং প্যান্ট বর্জন করা ইত্যাদি’।
নিন! থলের বিড়াল বেরিয়ে গেল। শায়খ শু‘আইবের এই
চিন্তাধারা এবং নতুনত্বকে পসন্দ করার বিষয়ে অনুবাদকও চুপ থাকতে পারেননি।
শায়খ শু‘আইবের এই চিন্তাধারার ব্যাপারে আমরা আমাদের মন্তব্য পেশ করছি না।
বরং অনুবাদক এর উপর টীকায় যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন সেটি উল্লেখ করেই
ক্ষান্ত হচ্ছি। যেমন অনুবাদক লিখেছেন, ‘আলোচ্য মাসআলা সম্পর্কে এতটুকু
স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া যরূরী যে, ইসলাম গায়ের মাহরাম নারী-পুরুষের অবাধ
মেলামেশাকে অপসন্দ করে। আর এ বিষয়ে ইসলামী বিধি-বিধানের দর্শন একেবারেই
স্পষ্ট। এজন্য আধুনিক যুগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের সহশিক্ষা ইসলামী
মেযাজের সাথে আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই পদ্ধতি অসংখ্য শারঈ, নৈতিক ও
সামাজিক অনাসৃষ্টির উদ্গাতা। নিত্যদিনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে এর সত্যতা মিলেছে।
এরই ভিত্তিতে অধিকাংশ আলেম সর্বদা এর বিরোধিতা করেছেন। আর এ শিক্ষা
ব্যবস্থা সংস্কারের উপায়সমূহও বিস্তারিত আকারে লিখিতভাবে এসেছে। যা
বাস্তবায়নের মাধ্যমে শর্তযুক্ত বৈধতার সম্ভাবনা সৃষ্টি হ’তে পারে। অবশ্য এই
পদ্ধতিকে উৎসাহিত না করা সত্ত্বেও একে অকাট্যভাবে হারামও বলা যায় না।
উপরন্তু পোষাক সম্পর্কে ইসলাম যে মূলনীতিগত দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে তার
আমলগত সমন্বয় উম্মতের মধ্যে পরম্পরাগতভাবে চলে আসছে। যেখানে অন্যান্য
জাতির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন হ’তে বিরত থাকার একটি মৌলিক নীতিগত নির্দেশনা
রয়েছে। রইল দাড়ি রাখার বিষয়টি। এ বিষয়ে শৈথিল্য প্রদর্শনকারীদের সাথে
আলেমদের দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আর জমহূর আলেম ওয়াজিবের
প্রবক্তা। যা হোক, এই মাসআলায় শায়খ আরনাঊত্বের ব্যাখ্যার সাথে পুরোপুরি
একমত হওয়া যায় না’।[9]
শায়খ শু‘আইব তার এই আধুনিকতাকে পসন্দ করার ফলে যদি আল্লামা আলবানী (রহঃ) সম্পর্কে এটা বলেন যে, ‘তিনি ইসলামের সামাজিক নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অনবগত ছিলেন’। তাহ’লে এটা তার মজবুরী। সত্য হ’ল তিনি ইসলামের সামাজিক নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সিলসিলা ছহীহায় এ সম্পর্কে তার পর্যালোচনা এর প্রকৃষ্ট দলীল।
এর
আওতায় এটাও বলা হয়েছে যে, ‘আল্লামা আলবানী (রহঃ)-এর প্রচেষ্টা হ’ল কুরআন ও
সুন্নাহর দলীলের অক্ষরে অক্ষরে আনুগত্য করা, যার দ্বারা দাঊদ যাহিরী এবং
ইবনে হাযমের স্মৃতি জাগরুক হয়ে গেছে’।[10]
আমরা প্রথমে বাইয়েনাতের উদ্ধৃতিতেই নিবেদন করে এসেছি যে, দলীলের বাহ্যিক অর্থের ইত্তিবা ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) হ’তে চলে আসছে। যদি এটি ভৎর্সনার যোগ্য হয় তাহ’লে সেই ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে শায়খ শু‘আইবের মতামত কি?
অতঃপর
ইমাম দাঊদ যাহিরী হৌন বা আল্লামা ইবনে হাযম, তারা নিষিদ্ধ কোন বস্ত্ত নন;
ইসলামের ইমামদের মাঝে তাদেরকে গণনা করা হয়। তাদের কিছু বিচ্ছিন্ন মতামত
পাওয়া যায়। এই প্রকারের বিচ্ছিন্ন উক্তিসমূহ কার থেকে বর্ণিত নেই? ইমাম
দাঊদ সম্পর্কে ইমাম ইবনে জারীর ত্বাবারী ও ইবনে সুরায়জ বলেছেন,إِذَا
أَرَدْتَ الْفِقْهَ، فَكُتُبُ أَصْحَابِ الْفِقْهِ، كََالشَّافِعِيِّ،
وَدَاودُ، وَنُظَرَائِهِمَا- ‘যদি ফিক্বহের জ্ঞান অর্জন করতে চাও তাহ’লে
ফক্বীহদের গ্রন্থ হ’তে তা অর্জন কর। যেমন শাফেঈ, ইমাম দাঊদ এবং এদের
সমতুল্য যারা রয়েছেন’।[11]
ইমামুল হারামাইন অথবা উস্তাদ আবূ ইসহাক্ব ইসফারাইনী যা কিছু বলেছেন, হাফেয যাহাবী (রহঃ) তার জোরালো প্রতিবাদ করেছেন। যা সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা গ্রন্থে (১৩/১০৫-১০৬) দেখা যেতে পারে। ইমাম দাঊদের স্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমরা শুধু এটা নিবেদন করতে চাই যে, তিনি ইসলামের ইমামদের মধ্যে গণ্য। আর তাকে অনুসরণীয় মাযহাবের কর্ণধার গণ্য করা হয়েছে। হাফেয ইবনে হাযম তাঁরই অনুসরণ করেছেন।
আল্লামা ইয্যুদ্দীন
আব্দুল আযীয বিন আব্দুস সালাম (মৃঃ ৬৬০ হিঃ) যিনি মুজতাহিদ ছিলেন-তিনি
বলেছেন, ‘আমি ইসলামী গ্রন্থসমূহে ইবনে হাযমের আল-মুহাল্লা এবং ইবনে
কুদামার আল-মুগনীর অনুরূপ কোন গ্রন্থ দেখিনি’।[12]
হাফেয যাহাবী (রহঃ) বলেছেন, ‘আল্লামা ইয্যুদ্দীন সঠিক কথা বলেছেন। তৃতীয় গ্রন্থ বায়হাক্বীর আস-সুনানুল কুবরা এবং চতুর্থটি হ’ল ইবনে আব্দিল বার্র-এর আত-তামহীদ’। এই উক্তি থেকে আল্লামা ইবনে হাযমের ‘আল-মুহাল্লা’ গ্রন্থের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
অতঃপর আল্লামা আলবানী (রহঃ)
যখন হানাফী, মালেকী, শাফেঈ, হাম্বলী নন তখন যাহিরী মুক্বাল্লিদ কিভাবে
হ’লেন? তাঁর দাওয়াত তাক্বলীদের দৃষ্টিকোণ হ’তে নয়, (বরং) কুরআন ও সুন্নাহর
আনুগত্যের বিষয়ে। শায়খ শু‘আইব কি জানেন না যে, আল্লামা আলবানী (রহঃ)
গান-বাজনার ব্যাপারে আল্লামা ইবনে হাযমের মত খন্ডন করেছেন? তাহ’লে
যাহিরিয়াত কোথায় গেল? ইবনে হাযম উরু এবং লজ্জাস্থান স্পর্শ করার মাঝে
পার্থক্য করতেন না। শায়খ আলবানী (রহঃ) তার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।[13]
অনুরূপভাবে
হাফেয ইবনে হাযম (রহঃ) যদি একটিই কাপড় হয় তবুও দু’কাঁধকে ঢেকে রাখাকে ফরয
আখ্যা দিয়েছেন এবং কাঁধ খোলা রাখা অবস্থায় ছালাত আদায় করাকে বাতিল বলেছেন।[14]
অথচ আল্লামা আলবানী একথা বলে তার প্রতিবাদ করেছেন-وَأَغْرَبَ ابْنُ حَزْمٍ
كَعَادَتِهِ فِي التَّمَسُّكِ بِظَاهِرِيَّتِهِ ‘ইবনে হাযম তার রীতি
অনুযায়ী যাহিরিয়াতকে অাঁকড়ে ধরতে গিয়ে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ও অদ্ভূত কথা
বলেছেন’।[15]
আল্লামা ইবনে হাযম ইমাম ও মুক্তাদী সবার জন্যই ছালাতের প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করাকে ফরয বলেছেন।[16] পক্ষান্তরে আল্লামা আলবানী (রহঃ) জেহরী ছালাতে মুক্তাদীর জন্য ফাতেহা পাঠ করার অনুমতি দেননি। আল্লামা ইবনে হাযম রুকূ পাওয়া ব্যক্তির রাক‘আত পাওয়ার প্রবক্তা নন।[17] কিন্তু আল্লামা আলবানী (রহঃ) এর প্রবক্তা ছিলেন।
বলুন! যাহিরিয়াত কোথায় গেল? এজন্য আমরা নিবেদন করছি যে, শায়খ শু‘আইব বা তার সমমনাদের আল্লামা আলবানীর উপর ‘যাহিরী মাযহাবের অনুসারী হওয়ার’ অপবাদ ভিত্তিহীন। যাহিরী মাযহাব ও দলীলের প্রকাশ্য অর্থের উপর আমল করা দু’টি ভিন্ন বিষয়। দলীলের প্রকাশ্য অর্থের প্রতি আমলের জন্য তিরস্কার করা ঐরূপ, যেভাবে ‘বাতেনী’ সম্প্রদায় আহলে সুন্নাত ও আহলেহাদীছের উপর আরোপ করে এবং বলে যে, এরা হাকীকত ও তরীকত সম্পর্কে অনবগত। অন্যদিকে হকপন্থীদের বক্তব্য হ’ল, তরীকত ও শরী‘আতের মধ্যে পার্থক্য করা নাস্তিক্যবাদের নামান্তর। আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করুন!
এভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার গুণাবলীর মাসআলা হোক বা শাখা-প্রশাখাগত বিষয়ে হোক, বাহ্যিক অর্থ হ’তে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে স্বীয় মাযহাবের দৃষ্টিকোণে তাবীল করার পথ গ্রহণ করা নিশ্চিতভাবে ছিরাতে মুস্তাক্বীম নয়। অবশ্য যদি গ্রহণযোগ্য কোন কারণ যাহিরী অর্থকে গ্রহণ করায় প্রতিবন্ধক হয় তাহ’লে তাবীল করা সঠিক। প্রত্যেক যুগে এই যুক্তিযুক্ত তাবীলকে গ্রহণ করা হয়েছে।
বিরোধীদের প্রতি কঠোর মনোভাব প্রদর্শন :
আল্লামা
আলবানী (রহঃ) সম্পর্কে শায়খ শু‘আইবের শেষ অভিযোগ হল, ‘বিরোধীদের ব্যাপারে
তার অবস্থান সঠিক নয়। তিনি আলেমদের সম্পর্কে কঠিন শব্দ ব্যবহার করতেন এবং
সালাফদের মধ্যকার বিতর্কিত মাসআলাতে মুজতাহিদের উপর নিন্দা করতেন। যা لا
ينكر المختلف فيه ‘মতভেদকৃত বিষয়কে নিন্দা করা যাবে না’ মূলনীতি থেকে দূরে
থাকার ফল।[18]
এই অপবাদ সম্পর্কে অনেক কিছু
বলা প্রয়োজন। বরং এ ব্যাপারে স্বয়ং আলবানী (রহঃ)-এর বক্তব্য বিদ্যমান
রয়েছে। তিনি যেভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন এবং বন্ধুদের দ্বারা কষ্টের সম্মুখীন
হয়েছেন, তার কাহিনী অনেক দীর্ঘ। আবার তার বিরোধীরা বরং কতিপয় সমকালীন
ব্যক্তি তার ইলম ও শ্রেষ্ঠত্বের উপর যে ছুরি চালিয়েছেন সে সম্পর্কে তিনি
খোদ মাযলূম ছিলেন। তিনি লিখেছেন,فَاِنِّي مَظْلُوْمٌ مِنْ كَثِيْرٍ مِمَّنْ
يَدَّعُوْنَ الْعِلْمَ ‘যারা আলেম হওয়ার দাবী করেন তাদের অনেকের হাতে আমি
অত্যাচারিত’।[19]
এজন্য আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে যদি তার কলম থেকে কঠিন বাক্য বের হয়ে থাকে তবে اَلْبَادِيْ أَظْلَمَ ‘সূচনাকারী আসল অপরাধী’ হিসাবে গণ্য হবে। তা সত্ত্বেও আমরা মনে করি যে, প্রত্যুত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে তা উচিৎ হয়নি। ক্ষমা, নম্র ব্যবহার এবং নম্র আচরণই প্রশংসাযোগ্য।
বাকী থাকল সালাফদের মধ্যকার মতবিরোধপূর্ণ মাসআলাসমূহে মুজতাহিদগণকে নিন্দা করার বিষয়টি। এটা স্রেফ অপবাদ বৈ কিছুই নয়। আমরা প্রথমে ছিফাতু ছালাতিন নবীর ভূমিকার উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করে এসেছি যে, সম্মানিত মুজতাহিদ ইমামদের পক্ষ থেকে যদি ভুলও হয়ে যায় তবুও তিনি একটি নেকীর হকদার। আফসোসের বিষয় এই যে, এ ধরনের নির্জলা (মিথ্যা) অপবাদের কারণে যদি অন্তর বিষাক্ত হয়ে যায় এবং বক্তব্যে কাঠিন্য এসে যায় তাহ’লে উল্টা অপবাদ লাগানো হয় যে, তিনি তার বিরোধীদের সম্পর্কে কঠোর মনোভাব পোষণ করতেন। কবিতা :
اۤپ ہی اپنی اداؤں پہ ذرا غور كريں
‘আপনি নিজেই নিজের আচরণের ব্যাপারে একটু চিন্তা করুন’।
শায়খ শু‘আইব কি এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন যে, একজন সাক্ষী ও কসমের দ্বারা ফায়ছালা করার যে অবস্থান ইমাম শাফেঈ প্রমুখের রয়েছে, সে সম্পর্কে কি বলা হয়েছে? যেমন উছূলে ফিক্বহেمَبْحَثُ الْاَهْلِيَّةِ -এর অধীনে উল্লেখ রয়েছে যে, অজ্ঞতার একটি প্রকার এই যে, ক্বিয়ামতের দিনও যার কোন ক্ষমা নেই। আর না তার ব্যাপারে এই ওযর শোনা হবে যে, ‘আমি এটা জানতাম না’। যেমন নাফরমানদের কুফরী এবং মু‘তাযিলাদের ন্যায় গোমরাহ ফিরক্বাসমূহের কবরের আযাব, আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ এবং শাফা‘আতের বিষয়গুলিকে অস্বীকার করা। এই প্রকার অজ্ঞতার একটি উদাহরণ এটাও উল্লেখ করা হয়েছে-
كَجَهْلِ الشَّافِعِيِّ فِيْ جَوَازِ الْقَضَاءِ بِشَاهِدٍ وَيَمِيْنٍ- فَاِنَّهُ مُخَالِفٌ لِلْحَدِيْثِ الْمَشْهُوْرِ وَهُوَ قَوْلُهُ : اَلْبَيِّنَةُ عَليَ الْمُدَّعِي وَالْيَمِيْنُ عَلَي مَنْ اَنْكَرَ- وَاَوَّلُ مَنْ قَضَي بِهِ مُعَاوِيَةُ-
‘যেমন শাফেঈর এই অজ্ঞতা যে, তিনি একজন সাক্ষী এবং একজন বাদীর কসমের উপর (ভিত্তি করে) ফায়ছালা দেওয়ার ফৎওয়া দিয়েছেন। কেননা এই ফৎওয়াটি প্রসিদ্ধ হাদীছের বিরোধী। আর সেটা এই যে, ‘বাদীকে প্রমাণ পেশ করতে হবে এবং অস্বীকারকারীকে ক্বসম করতে হবে। সর্বপ্রথম
মু‘আবিয়া এই ফায়ছালা প্রদান করেছিলেন’।[20]
জী জনাব! এই ফিক্বহী মতভেদপূর্ণ মাসআলায় ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-কে এমন অজ্ঞতার দোষে অভিযুক্ত আখ্যা দেওয়া হয়েছে যার ক্ষমা ক্বিয়ামত দিবসেও হবে না। আরো আশ্চর্যের কথা এই যে, নূরুল আনওয়ারের লেখক মোল্লাজিঊন নামে পরিচিত শায়খ আহমাদ অজ্ঞতার এই উদাহরণটি উল্লেখ করে এটাও খোলাছা করেছেন যে,وقد نقل كل هذا علي نحو ما قال أسلافنا وان كنا لم نجتر عليه- ‘আমরা ঐসবই বর্ণনা করেছি যা আমাদের পূর্বসূরীগণ বলেছেন। নতুবা আমরা এসব বলার সাহস করতাম না’।
আর এটা তিনি বাস্তবেই সঠিক বলেছেন। কেননা অজ্ঞতার এসব উদাহরণ উছূলে বাযদূবী সহ অন্যান্য উছূলে ফিক্বহের প্রায় সকল গ্রন্থেই রয়েছে। আত-তাওযীহ গ্রন্থের বাক্যগুলি নিম্নরূপ-
وذكر فى المبسوط ان القضاء بشاهد ويمين بدعة واول من قضى به معاوية-
‘আল-মাবসূত্ব
গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, একজন সাক্ষী এবং বিবাদীর কসম দ্বারা ফায়ছালা করা
বিদ‘আত। আর সর্বপ্রথম মু‘আবিয়া এই ফায়ছালা করেছিলেন’।[21]
অথচ এই ফায়ছালা শুধু হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) প্রদান করেছেন তা নয়। আল্লামা নববী (রহঃ) বলেছেন, ‘ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম এবং তাঁদের পরের অনেক শহরের
জমহূর আলেমের ফায়ছালা এটাই’।[22]
আর তাঁরা কারা? তারা হ’লেন হযরত আবূবকর ছিদ্দীক্ব, হযরত আলী, ওমর বিন আব্দুল আযীয, মালেক, শাফেঈ, মদীনার ফক্বীহগণ। এমনকি সমগ্র হিজাযের আলেমগণ (ঐ)।
এখানে এই মাসআলাটি বিশ্লেষণ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। স্রেফ এটাই বলা উদ্দেশ্য যে, সালাফদের মধ্যকার এই ইখতিলাফী ফিক্বহী মাসআলায় মুজতাহিদগণের উপর ‘জাহালাত’ (অজ্ঞতা)-এর কৌতুক করার সাহস কারা করেছিল? আল্লামা আলবানী তো এই ধরনের ‘দুঃসাহস’ করার পাপ করেননি। কিন্তু তারপরও আল্লামা আলবানীর উপরই অপবাদ দেওয়া হচ্ছে! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজে‘ঊন।
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ছালাতে তাশাহহুদে আঙ্গুল নাড়ানো সম্পর্কে কি ফৎওয়া প্রদান করা হচ্ছিল? এটাও কি মতভেদপূর্ণ মাসআলা, নাকি তা নয়? আমাদের সামনে এ ধরনের আরো অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু এখানে সবগুলো আলোচনা করা উদ্দেশ্য নয়। শুধু নিজের চেহারা দেখা উদ্দেশ্য। কাঁচের মহল থেকে কারো উপর পাথর বর্ষণ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে যথাযথভাবে হক প্রদর্শন করুন এবং তার অনুসরণের তাওফীক দিন। আর আমাদেরকে বাতিলকে বাতিলরূপে দেখান এবং তা থেকে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন।- আমীন!!
(সাপ্তাহিক ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান, বর্ষ ৬৬, সংখ্যা ৩৯-৪৩, ২০১৪ইং)
[1]. আল-ফাক্বীহ ওয়াল-মুতাফাক্কিহ ২/১৬১।
[2]. ঐ, ২/১৬২।
[3]. ঐ।
[4]. মাসিক বাইয়েনাত, পৃঃ ৩৭, ৩৮।
[5]. ইকমালুল মু‘আল্লিম ৬/১১০।
[6]. আল-ইহকাম ৩/২৮।
[7]. মাসিক বাইয়েনাত, পৃঃ ৩৮ (সংক্ষেপায়িত)।
[8]. হেদায়া ৪/৪৫৬. কিতাবুল কারাহিয়াত।
[9]. মাসিক বাইয়েনাত, পৃঃ ৪০, টীকা দ্রঃ।
[10]. ঐ।
[11]. সিয়ার ১৩/১০২, ১০৬।
[12]. ঐ, ১৮/১৯৩।
[13]. তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৬০।
[14]. আল-মুহাল্লা ৪/৭১।
[15]. তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৬৩।
[16]. আল-মুহাল্লা ৩/২৩৬।
[17]. ঐ, ৩/২৪৩।
[18]. মাসিক বাইয়েনাত পৃঃ ৪০, ৪১।
[19]. যঈফা ১/২৯।
[20]. নূরুল আনওয়ার, ছাপা : ১৯৫৩ইং, পৃঃ ৩১০।
[21]. আত-তাওযীহ মা‘আত তাওশীহ, পৃঃ ৪৭৭।
[22]. শরহে মুসলিম ২/৭৪।