ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলে মধ্য আগষ্ট থেকে সপ্তাহকালের ব্যবধানে পরপর দু’দফা শতাব্দীকালের ভয়াবহতম বন্যায় উত্তরাঞ্চলের ২০টি যেলা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ যেলা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বানভাসি মানুষের সহায়তায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ত্রাণ কর্মসূচী হাতে নেয়। প্রথম দফা বন্যায় দিনাজপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, লালমণিরহাট ও কুড়িগ্রামের পানিবন্দী পরিবার সমূহের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। অতঃপর দ্বিতীয় দফা বন্যা আরও ভয়াবহ ও ব্যাপক রূপ ধারণ করায় নগদ অর্থের পাশাপাশি শুকনা খাবার ও স্যালাইন সহ অন্যান্য বস্ত্ত প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। রাজশাহী থেকে চাউল, ডাল, তেল, পেয়াজ, মরিচ, চিড়া, মুড়ি সহ মোট ১২টি আইটেম সমৃদ্ধ ত্রাণের প্যাকেট প্রস্ত্তত করে ট্রাক যোগে পাঠানো হয়। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও সংশ্লিষ্ট যেলা নেতৃবৃন্দ এইসব ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দফা বন্যার সময় ত্রাণের সাথে সাথে দুর্গত এলাকায় কুরবানীর গোশত বিতরণ করা হয়। বিস্তারিত রিপোর্ট নিম্নরূপ :
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা ২২শে আগস্ট মঙ্গলবার : অদ্য সকাল ৭-টায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ও তাঁর সফরসঙ্গীগণ মাইক্রো যোগে রাজশাহী হ’তে গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সকাল সাড়ে ৯-টায় বগুড়ার মাটিডালীতে পৌঁছলে বগুড়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আব্দুর রহীমের আমন্ত্রণে তিনি সেখানে যাত্রাবিরতি করেন এবং সফরসঙ্গীদের নিয়ে হোটেলে সকালের নাশতা গ্রহণ করেন। এখান থেকে বগুড়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি সহ সমাজকল্যাণ সম্পাদক রফীকুল ইসলাম পৃথক প্রাইভেটকার যোগে আমীরে জামা‘আতের সফরসঙ্গী হন। অতঃপর বেলা সাড়ে ১১-টায় তিনি যেলার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন কাটাখালী করতোয়া ব্রীজের নিকটে পৌঁছেন। আমীরে জামা‘আতের পৌঁছার পূর্বেই ট্রাক আনলোড করে ত্রাণ সামগ্রী নৌকায় উঠানো হয়। অতঃপর আমীরে জামা‘আত নৌকা যোগে বানভাসি মানুষদের কাছে গিয়ে নৌকায় দাঁড়ানো অবস্থায় পানিবন্দীদের হাতে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেন।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ১ম দফায় তিনি রঘুনাথপুর, ফুলবাড়ীর কিছু অংশ, পাড়-রঘুনাথপুর, ফতেউল্লাপুরের কিছু অংশ ও চন্ডিপুর গ্রামে ত্রাণ বিতরণ করেন। এখানে পৌঁছে তিনি সাথীদের নিয়ে চন্ডিপুর আহলেহাদীছ জামে মসজিদে যোহর ও আছর ছালাত জমা ও ক্বছর আদায় করেন। অতঃপর এখানে অপেক্ষমাণ পূর্ব তালিকাভুক্ত বন্যার্ত পরিবার সমূহের মধ্যে ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বানভাসি মানুষের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত নছীহত করেন। তিনি তাদেরকে বিপদে ধৈর্যধারণ এবং যাবতীয় অন্যায় ও হারাম কাজ থেকে বিরত থেকে ছবর-ছালাত ও তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার আহবান জানান।
প্রথম দফা ত্রাণ বিতরণ শেষে আমীরে জামা‘আত সাথীদের নিয়ে যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রধান উপদেষ্টা জনাব নূরুল ইসলাম প্রধানের আমন্ত্রণে তার গোবিন্দগঞ্জের বাসায় দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। অতঃপর পুনরায় ফিরে এসে নৌকা যোগে দ্বিতীয় দফা ত্রাণ বিতরণে বেরিয়ে পড়েন। বাদ মাগরিব পর্যন্ত তিনি এভাবে উপযেলার ছয়ঘরিয়া, শ্যামপুর-পার্বতীপুর, সন্দৈল গুচ্ছগ্রাম, পাড়-সন্দৈল গুচ্ছগ্রাম, মালাধর প্রভৃতি গ্রামে ত্রাণ বিতরণ করেন। সন্দৈল গুচ্ছগ্রামে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি দেখতে পান যে, জনৈকা মধ্য বয়সী নারী বিস্তীর্ণ ও খরস্রোতা করতোয়া নদীর উত্তর পাড়ের গুচ্ছগ্রাম থেকে খালী হাতে নদী সাঁতরিয়ে এপারের দিকে আসছে। আমীরে জামা‘আত দ্রুত নৌকা উত্তর পাড়ের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। এটা দেখে মহিলাটি দক্ষিণ পাড়ের কাছাকাছি পৌঁছে পুনরায় উত্তর পাড়ের দিকে সাঁতরাতে শুরু করলেন। তখন সবাই মহিলাটিকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার দিতে শুরু করল। অথচ ত্রাণ নিতে আসা পাশের একটি নৌকা ও কলার ভেলার যাত্রীরা কেউ-ই তার কাছে এগিয়ে গেল না। সবারই লক্ষ্য আগে পৌঁছে ত্রাণ গ্রহণ করা। মহিলাটিকে নিলে তাদের একটি প্যাকেট কমে যাবে।... উত্তর পাড়ে পৌঁছানোর সামান্য পরে মহিলাটি হাসফাস করতে করতে নৌকার কিনারে আসে। তখন আমীরে জামা‘আত সর্বপ্রথম তার হাতেই ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেন এবং সঙ্গে নগদ টাকা দেন। যা অন্যদেরকে দেননি। মহিলাটির নাম পারুল বেগম। আমীরে জামা‘আত মন্তব্য করলেন, এই সাথে তোমরা ক্বিয়ামতের দিনের অবস্থার তুলনা কর। সেদিন কেউ কারু কাজে আসবে না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। পরবর্তীতে ঈদুল আযহার পরদিন আমীরে জামা‘আতের নির্দেশে ঐ মহিলাকে অন্যদের তুলনায় চারগুণ কুরবানীর গোশত ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়।
এসময় মোট ৫০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয় এবং পরবর্তীতে রাজশাহী হ’তে ২৭শে আগষ্ট গাইবান্ধা-পূর্বের সাথে আরও ১০০ প্যাকেট ত্রাণ পাঠানো হ’লে যেলা দায়িত্বশীলদের তত্ত্বাবধানে তা উপযেলার কানিপাড়া ও হাতিয়াদহ গ্রামের দুস্থ বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক আলতামাসুল ইসলাম এবং গাইবান্ধা যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র দায়িত্বশীলদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উক্ত ত্রাণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা-পশ্চিম যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রধান উপদেষ্টা জনাব নূরুল ইসলাম প্রধান, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও বগুড়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আব্দুর রহীম, স্বেচ্ছাসেবী নিরাপদ রক্তদান সংস্থা ‘আল-আওন’-এর সভাপতি ডা. আব্দুল মতীন, বগুড়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সমাজকল্যাণ সম্পাদক রফীকুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগরী ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, আমীরে জামা‘আতের জ্যেষ্ঠপুত্র ও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা বিভাগের পরিচালক আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, গাইবান্ধা -পশ্চিম ও পূর্ব যেলা ‘যুবসংঘে’র দায়িত্বশীলবৃন্দ। গাইবান্ধা-পূর্বের সভাপতি মাওলানা ফযলুর রহমান ও সেক্রেটারী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলামও ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন।
এভাবে পাঁচশতাধিক বন্যাদুর্গত পরিবারের মধ্যে দিনব্যাপী ত্রাণ বিতরণ শেষে রাত ৮-টায় গোবিন্দগঞ্জ টিএ্যান্ডটি আহলেহাদীছ জামে মসজিদে মাগরিব-এশা জমা ও ক্বছর শেষে আমীরে জামা‘আত সফরসঙ্গীদের নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং রাত ১-টায় রাজশাহী মারকাযে পৌঁছেন।
সাঘাটা, গাইবান্ধা ২৭শে আগষ্ট রবিবার : ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে চলমান ত্রাণবিতরণ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে অদ্য গাইবান্ধা যেলার সাঘাটা উপযেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকাসমূহে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সকাল ৭-টায় রাজশাহী হ’তে রওয়ানা হয়ে বেলা ১২টায় যেলার সাঘাটা থানাধীন জুমারবাড়ী বাজার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে সাঘাটা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন থৈকরের পাড়া খেয়াঘাটে পৌঁছেন। সেখানে যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ফযলুর রহমান সহ ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র কর্মীরা এবং অন্যান্য সুধীবৃন্দ আমীরে জামা‘আতকে স্বাগত জানান।
উল্লেখ্য, পূর্বেই ট্রাক হ’তে ৫০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী আনলোড করে বড় দু’টি নৌকায় উঠিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্ত্তত রাখা হয়। অতঃপর সাথীদের নিয়ে আমীরে জামা‘আত বড় বড় দু’টি নৌকায় রওয়ানা হয়ে সোয়া এক ঘণ্টা চলার পর বিশাল যমুনা নদীর মাঝখানে চারিদিকে অথৈ পানিবেষ্টিত প্রত্যন্ত চরাঞ্চল হলদিয়া ইউনিয়নের গারামারা এলাকায় পৌঁছেন। সেখানে পৌঁছে জীর্ণ টিনের মসজিদে জামা‘আতের সাথে তিনি যোহর ও আছর ছালাত জমা ও ক্বছর আদায় করেন। অতঃপর নৌকার মধ্যে রোদে দাঁড়িয়ে পূর্বে কৃত তালিকা অনুযায়ী অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে গারামারা, কানাইপাড়া ও আশপাশের গ্রাম সমূহ থেকে আগত বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট সমূহ বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণকালে তিনি অনেকের গলার তাবীয, হাতের বালা ইত্যাদি খুলে দেন এবং যাবতীয় শিরক ও বিদ‘আত থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেন। তিনি আসন্ন ঈদুল আযহায় এই চরের অধিবাসীদের মধ্যে কুরবানীর গোশত বিতরণের এবং সময়সাপেক্ষে কিছু নলকূপ বসানোরও আশ্বাস দেন।
গাইবান্ধা-পূর্ব যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র দায়িত্বশীলদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উক্ত ত্রাণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর গবেষণা সহকারী আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব, ‘আন্দোলন’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় দাঈ শরীফুল ইসলাম (বাহরাইন), ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সিঙ্গাপুরের সহ-সভাপতি মো‘আযযম হোসাইন, বগুড়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য আব্দুর রহীম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রফীকুল ইসলাম, বগুড়া যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি আল-আমীন, সিরাজগঞ্জ যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি শামীম হোসাইন এবং গাইবান্ধা-পশ্চিম যেলা ‘যুবসংঘে’র দায়িত্বশীলবৃন্দ।
এ সময় প্রায় চার শতাধিক দুর্গত পরিবারের মধ্যে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট শতাধিক ত্রাণের পা্যাকেট পরদিন উপযেলার ভরতখালী ও পাতিয়ারপুর (কচুয়া) গ্রামে যেলা দায়িত্বশীলদের তত্ত্বাবধানে বিতরণ করা হয়।
কুলাঘাট-লালমণিরহাট ও ভুরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম ২৯শে আগষ্ট মঙ্গলবার : অদ্য সকাল সোয়া ৬-টায় দারুল ইমারত নওদাপাড়া, রাজশাহী হ’তে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত মাইক্রো যোগে লালমণিরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে বগুড়ার চারমাথায় সকাল সাড়ে ৮-টায় বগুড়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম ও ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি আল-আমীন সহ অন্যান্য দায়িত্বশীলগণ আমীরে জামা‘আতের সাথে সাক্ষাৎ করেন। অতঃপর সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাত্রা বিরতি করেন এবং সেখানে একটি হোটেলে গাইবান্ধা-পশ্চিম সাংগঠনিক যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রধান উপদেষ্টা জনাব নূরুল ইসলাম প্রধানের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।
অতঃপর সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে বেলা দেড়টায় লালমণিরহাট যেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ শিবের কুঠি আহলেহাদীছ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় তিনি গত শীত মৌসুমে শীতবস্ত্র বিতরণে এখানে আসতে পুলিশী বাধার কথা স্মরণ করেন এবং এবারে বন্যাত্রাণ বিতরণে বাধা না দেওয়ায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন ও সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় যেলা ‘আন্দোলন’ ‘যুবসংঘ’ ও কুড়িগ্রাম-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলার দায়িত্বশীলবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। অতঃপর ফেরীতে ধরলা নদী পার হয়ে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থানাধীন ধাউড়ার কুঠি গ্রামে বিকাল ৫-টা ৫০ মিনিটে পৌঁছেন। এখানে তিনি বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। সমবেত লোকজনদের উদ্দেশ্যে নছীহত মূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এ সময় কুড়িগ্রাম-উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলার দায়িত্বশীলগণ উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর সেখান থেকে তিনি ভুরুঙ্গামারী থানাধীন আন্দারীঝাড় গ্রামের মুস্তাফীযুর রহমানের বাড়ীতে যাত্রা বিরতি করেন এবং বাদ মাগরিব দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। অতঃপর রাত সোয়া ৮-টায় তিনি কুড়িগ্রাম হয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। প্রচন্ড যানজটের মধ্যে রাত ১-টায় রংপুর শহরের পার্ক মোড়স্থ যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর কার্যালয়ে অপেক্ষমাণ কর্মীদের সাথে মিলিত হন। ঐ গভীর রাতে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি আমরা আল্লাহর বিধান মানার মাধ্যমে তাঁকে সাহায্য করি, তাহ’লে তিনি আমাদেরকে সাহায্য করবেন। তিনি মূসা (আঃ)-কে তার কওমের কষ্টদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ছবর ও ইয়াক্বীনের মাধ্যমে দ্বীনের নেতৃত্ব লাভ করা সম্ভব। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র বিশুদ্ধ দাওয়াতে বাধা ও কষ্ট দুই-ই রয়েছে। আর এটাই স্বাভাবিক। আন্দোলন পরিচালনার জন্য চাই একদল দৃঢ়বিশ্বাসী ও দৃঢ়চিত্ত নেতা ও কর্মী। আমাদেরকে আল্লাহ তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, এই দো‘আ করি।
অতঃপর এখানে রাতের খাবার শেষে রাত সোয়া ২-টার দিকে তিনি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পরদিন সকাল পৌনে ৮-টায় রাজশাহী মারকাযে পৌঁছেন। ফালিল্লাহিল হামদ।
এই সফরে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় যুব বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ইহসান এলাহী যহীর, রাজশাহী সদর সাংগঠনিক যেলা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সিরাজুল ইসলাম, আমীরে জামা‘আতের জ্যেষ্ঠপুত্র ও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা বিভাগের প্রধান আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, আল-‘আওন (নিরাপদ রক্তদান সংস্থার) সভাপতি ডা. আব্দুল মতীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ ছাকিব এবং হাদীছ ফাউন্ডেশন গবেষণা বিভাগের আইটি সহকারী জিএম ওয়ালিউল্লাহ প্রমুখ। উল্লেখ্য এই সফরে লালমণিরহাটে কুলাঘাট, মহিষখোচা ও ছিটমহল এলাকায় ৩৮০ এবং কুড়িগ্রামে ৫৩০ মোট ৯১০ টি ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করা হয়।