স্কুলশিক্ষিকা
সায়েদা মেহেরুন্নেসা নবজাতককে সুস্থ করে তোলার জন্য সম্প্রতি কুষ্টিয়ার
কুমারখালী উপযেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তিন দিন পর
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মেহেরুন্নেসার বুকের সঙ্গে একটি শিশু
একেবারে ল্যাপটানো রয়েছে। মেহেরুন্নেসা বললেন, ক্যাঙারু এভাবে নিজের শাবককে
বড় করে তোলে নিজের শরীরের তাপ দিয়ে। এই তিন দিনে তার শিশুর ওযন বেড়েছে,
আগের চেয়ে বেশী করে বুকের দুধও খাচ্ছে। হাসপাতালের একটি কক্ষকে ক্যাঙারু
মাদার কেয়ার সেন্টার’ নাম দেওয়া হয়েছে। কর্তব্যরত নার্স জানালেন, এই
কেন্দ্রে সময়ের আগে জন্ম নেওয়া ও কম ওযনের শিশুদের বিশেষ সেবা দেওয়া হয়।
ক্যাঙারু কেয়ার পদ্ধতিতে নবজাতককে মায়ের বুকের ওপর এমনভাবে রাখা হয় যেন
দু’জনের ত্বক স্পর্শ করে থাকে। এতে মায়ের শরীরের তাপে শিশু উষ্ণ হয়। বুকের
ওপরে থেকেই শিশু দুধ খায়। আন্তর্জাতিক শিশুকল্যাণ বিষয়ক সংস্থা ‘সেভ দ্য
চিলড্রেন’ এই সেবায় কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। সংস্থাটির এই কর্মসূচীর পরিচালক
সাইদ রুবায়েত জানান, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কুষ্টিয়ার ৬টি হাসপাতালে মোট
২৬২টি শিশু এই সেবা পেয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছে ৩টি। তিনি বলেন,
ইনকিউবেটরের তুলনায় এই পদ্ধতি বেশি কার্যকর।
আফ্রিকার প্রায় সব দেশে এবং ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ায় সরকারী কর্মসূচীতে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পদ্ধতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। এর জন্য বিশেষ নির্দেশিকাও আছে সংস্থাটির। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) চাঁদপুরের মতলব হাসপাতালে প্রথম এই পদ্ধতি চালু করা হয়। গত সাত বছরে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ৮৯০টি অপরিণত নবজাতককে সুস্থ করা হয়েছে। বিশ্বে এটা চালু হয় সত্তরের দশকে। বাংলাদেশে প্রথম আসে ১৯৯০-এর দশকে দিনাজপুরের ল্যাম্ব হাসপাতালে। আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতাল ছাড়াও এ পর্যন্ত ১১টি হাসপাতালে প্রায় ১ হাযার ১০০ জন নবজাতককে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৩১ জন। এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শৈশবকালীন অসুস্থতার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কর্মসূচীর (আইএমসিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ হোসাইন বলেন, আগে এ ধরনের শিশুর ইনকিউবেটরে রেখে সুস্থ করে তোলা হ’ত। ইনকিউবেটরে খরচ অনেক বেশী, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে। অনেক সরকারী হাসপাতালে একটি ইনকিউবেটরে একাধিক শিশু রাখা হয়, এতে সংক্রমণ অনেক বেশী হয়। পরবর্তী স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচীতে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার পদ্ধতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমে সব সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও যেলা হাসপাতালে এটা চালু করা হবে। এরপর সব উপযেলা হাসপাতালেই চালু করা হবে।