পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । শেষ পর্ব ।

ইখলাছের নিদর্শনাবলী

ইখলাছের কিছু আলামত রয়েছে। একজন মুখলিছ মানুষের মধ্যে তা ফুটে ওঠে। যেমন- খ্যাতি প্রত্যাশী না হওয়া, প্রশংসা-গুণ-কীর্তন লাভের আকাঙ্ক্ষী না হওয়া, দ্বীনের জন্য পাগলপারা হয়ে আমল করা, কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া, ছওয়াবের নিয়তে কাজ করা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা অবলম্বন করা, অভিযোগ না করা, আমল গোপন করতে আগ্রহী থাকা, গোপনে আমল করতে অভ্যস্ত হওয়া, প্রকাশ্যে কৃত আমলের তুলনায় গোপনে আমলের সংখ্যা বেশী হওয়া।

এসবই ইখলাছের আলামত। তবে হে মুসলিম ভাই আমার! তুমি সতর্ক থেকো। কেননা ইখলাছের মধ্যেও ইখলাছ আছে কি-না তা খুব খেয়াল রাখতে হবে। ইখলাছও ইখলাছের মুখাপেক্ষী। আমরা আল্লাহর নিকট দো‘আ করি তিনি যেন আমাদের ও আপনাদের সকলকে মুখলিছ মানুষ বানান এবং আমাদের মন ও আমলকে লৌকিকতা ও মুনাফিকী থেকে পবিত্র রাখেন-আমীন!

ইখলাছ সংক্রান্ত কিছু মাসআলা

কখন আমল প্রকাশ্যে করা শরী‘আতসম্মত?

ইখলাছ সম্পর্কে আমাদের পূর্বসূরীদের অবস্থা কেমন ছিল আর কিভাবে তারা তাদের আমল গোপন করার চেষ্টা করতেন তা আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এটাও আলোচনা করেছি যে, আমল গোপনে করা ইখলাছের অন্যতম নিদর্শন। তা সত্ত্বেও কখনো কখনো লোকচক্ষুর সামনে আমল করা শরী‘আতসম্মত। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে তা গোপনে করা থেকে প্রকাশ্যে করা উত্তম।

ইবনু কুদামা (রহঃ) ‘নেকীর কাজ প্রকাশ্যে করার নিয়তের অনুমতি’ অনুচ্ছেদে বলেছেন, ‘প্রকাশ্যে আমল করলে তা অনুসরণ করার সুযোগ মেলে। মানুষ সৎকাজে অনুপ্রাণিত হ’তে পারে। কিছু আমল তো এমন আছে যে, ইচ্ছা করলেও তা গোপনে করা যায় না। যেমন হজ্জ ও জিহাদ। সেগুলো তো প্রকাশ্যেই করতে হয়। তবে প্রকাশ্যে আমলকারীর নিজের মন নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থাকতে হবে। যাতে লোকরঞ্জন লাভের সুপ্ত বাসনা মনে আদৌ জাগ্রত হ’তে না পারে। বরং উক্ত প্রকাশ্য আমল দ্বারা সে রাসূলের অনুসরণের নিয়ত করবে’।

তিনি আরো বলেছেন, দুর্বলমনা লোকদের প্রকাশ্য আমল দ্বারা নিজেকে ধোঁকায় ফেলা মোটেও উচিত নয়। যারা দুর্বলমনা অথচ আমল যাহির করে তাদের উদাহরণ ঐ লোকের ন্যায়, যে দুর্বল সাঁতারু কোনরকম সাঁতরাতে পারে।

একদল লোককে ডুবে মরতে দেখে তার মনে দয়ার উদ্রেক হ’ল। সে তাদের পানে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তখন ডুবন্ত লোকেরা তাকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু সে ভালমত সাঁতরাতে না পারায় তারা সবাই ডুবে মারা গেল’।[1]

মাসআলাটি বিশদভাবে বুঝার জন্য আমরা আরো কিছু কথা বলছি। আমল প্রকাশ্যে ও গোপনে করার বেশ কিছু অবস্থা রয়েছে। অবস্থা বুঝে আমলকারীকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

১ম অবস্থা : সুন্নাহ অনুসারে আমলটি গোপনে করার কথা। এক্ষেত্রে গোপনে আমল করতে হবে। যেমন তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় ও বিনয়-নম্রতা বজায় রাখা।

২য় অবস্থা : সুন্নাহ অনুসারে আমলটি প্রকাশ্যে করার কথা। এক্ষেত্রে প্রকাশ্যে আমল করতে হবে। যেমন জুম‘আ, জামা‘আতে নিয়মিত হাযির থাকা, সত্য কথা জোরে-শোরে বলা ইত্যাদি।

৩য় অবস্থা : আমলটা প্রকাশ্যেও করা যায় আবার গোপনেও করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রকাশ্যে করলে যার মনে রিয়া বা লোক দেখানোর ভাব জাগরিত হবে তার জন্য আমলটি গোপনে করা সুন্নাত হবে। আর যে মনে করবে তার আমল প্রকাশ পেলে অন্য লোকেরা তার অনুসরণ-অনুকরণ করবে তার জন্য আমল প্রকাশ্যে করা সুন্নাত হবে। যেমন নফল দান।

এরূপ দানকালে কারো যদি মনে হয় লোকে দেখলে তার মনে প্রদর্শনেচ্ছা জাগবে তার জন্য গোপনে দান করা আবশ্যক। আর যদি তার মনে হয় দান করা দেখে অন্যেরা তার দানের অনুকরণ-অনুসরণ করবে এবং লোক দেখানো ভাবের ক্ষেত্রে সে তার মনের সাথে সংগ্রাম করতে পারবে, তাহ’লে তার জন্য প্রকাশ্যে দান করা সুন্নাত। অনুরূপভাবে কোন আলেম মসজিদে জনসমক্ষে নফল ছালাত আদায় করে যাতে নফল ছালাত কী এবং তার রাক‘আত সংখ্যা কত লোকে তা জানতে পারে। এ জাতীয় আরো অনেক বিষয় আছে যা অবস্থা ও নিয়ত ভেদে প্রকাশ্যে করা যায়।

কিছু পূর্বসূরী সম্পর্কে জানা যায় যে, তারা তাদের কিছু মর্যাদাপূর্ণ আমল প্রকাশ্যে করতেন যাতে লোকেরা তাদের অনুকরণ-অনুসরণ করে। যেমন জনৈক পূর্বসূরী মৃত্যুকালে তার পরিবারের সদস্যদের বলেছিলেন, তোমরা আমার জন্য
কেঁদো না। কেননা ইসলাম গ্রহণ করা অবধি আমি কোন পাপ কাজ করিনি। আবুবকর ইবনু ‘আইয়াশ তার ছেলেকে বলেছিলেন,يابنى إياك أن تعصي الله تعالى في هذه الغرفة، فإني ختمت فيها اثني عشر ألف ختمة- ‘হে আমার প্রিয় পুত্র! এই কামরায় তুমি আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত থাকবে। কেননা আমি এখানে বার হাযার বার কুরআন খতম করেছি’।[2]

এখানে একটি বিষয়ে সতর্ক না করলেই নয়। বিষয়টি এই যে, যে ব্যক্তি সর্বপ্রকার আমল সকল মানুষের দৃষ্টির আড়ালে করার আহবান জানায় সে একজন কুৎসিত বদমাশ লোক। ইসলামকে মিটিয়ে দেওয়াই তার অভিলাষ। মুনাফিকরা যখন কাউকে বড় অঙ্কের দান করতে দেখত তখন বলত এ রিয়াকার লোক দেখাতে দান করছে। আবার যখন দেখত কেউ অল্প কিছু দান করছে তখন বলত, আল্লাহর এই সামান্য দানের কোনই প্রয়োজন নেই। যাতে সমাজে কোন নেক আমল না থাকে এবং নেক্কারদের দেখাদেখি অন্যেরা তা না করে সেই লক্ষ্যে এসব কথা তারা বলাবলি করত।

এ কারণে যখন কোন ভাল মানুষ তার কোন নেক কাজ প্রকাশ্যে করে আর সেজন্য মুনাফিকরা তাকে মনোকষ্ট দেয়, তখন সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে। ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ সে মহাকল্যাণ লাভ করবে।

রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছার ভয়ে আমল পরিহার :

ফুযাইল বিন আইয়ায (রহঃ) বলেছেন, تَرْكُ الْعَمَلِ مِنْ أَجْلِ النَّاسِ رِيَاءٌ، وَالْعَمَلُ مِنْ أَجْلِ النَّاسِ شِرْكٌ وَالْإِخْلَاصُ أَنْ يُعَافِيَكَ اللهُ عَنْهُمَا ‘মানুষের কথা ভেবে আমল ত্যাগ করা রিয়া বা লৌকিকতা এবং মানুষের কথা ভেবে আমল করা শিরক।  আর ইখলাছ হ’ল এতদুভয় থেকে তোমার আল্লাহর ক্ষমা লাভ’।[3] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, যে কোন ইবাদত করতে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার পর তা মানুষের নযরে পড়ার ভয়ে পরিত্যাগ করে সে একজন রিয়াকার বা লৌকিকতাকারী।

উল্লেখিত নির্দেশনা কেবল তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে গোপনে-প্রকাশ্যে সব রকম আমল ত্যাগ করে বসে থাকে। কিন্তু যে গোপনে আমল করার জন্য জনসমক্ষে আমল পরিহার করে তার কোন দোষ নেই। লৌকিকতার উক্ত বিধানের মাঝে কিছু জাহিল-মূর্খও পড়ে, যারা লৌকিকতা থেকে বাঁচার নাম করে দাড়ি ছাঁটে ও মুন্ডন করে। তারা বলে, দাড়িওয়ালা তার দাড়ি দ্বারা নিজেকে ঈমানদার ও ভাল মানুষ হিসাবে যাহির করে। যা সুস্পষ্ট রিয়া বা লৌকিকতা। এ লৌকিকতা থেকে বাঁচার জন্যই আমরা দাড়ি ছাঁটি বা মুন্ডন করি। কিন্তু এই লোকগুলো নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণিত দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ও মুন্ডন না করা সংক্রান্ত বহু সংখ্যক সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হাদীছের কি জবাব দেবে? আমরা আল্লাহর নিকট দ্বীনের সঠিক বুঝ লাভের প্রার্থনা জানাই।

রিয়া ও আমলের মধ্যে একাধিক নিয়তের পার্থক্য :

রিয়া/লৌকিকতা : আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে খুশি করার নিয়তে কোন শারঈ আমল করা হ’লে তাকে রিয়া বা লৌকিকতা বলে।

আমলের মধ্যে একাধিক উদ্দেশ্য বা অংশীদার বানানো :
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়াও অন্য কিছু লাভের নিয়তে শারঈ কোন আমল করা হ’লে তাকে আমলের মধ্যে একাধিক উদ্দেশ্য বা অংশীদার বানানো বলে। উল্লেখিত দু’টি বিষয়ের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, শারঈ আমলের বেশ কয়েকটি শ্রেণী রয়েছে। যথা:

প্রথম শ্রেণী : ব্যক্তি শুধুই আল্লাহর জন্য আমল করবে, অন্য কোন কিছুর প্রতি ভ্রুক্ষেপমাত্র করবে না। এ প্রকার আমল সবার ঊর্ধ্বে এবং সর্বোত্তম।

দ্বিতীয় শ্রেণী : ব্যক্তি আল্লাহর জন্য আমল করবে এবং সে সঙ্গে বৈধ আছে এমন কিছু অর্জনের নিয়ত করবে। যেমন ছিয়াম রাখবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য, আর সে সাথে নিয়ত করবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য। হজ্জের সফর করবে আল্লাহকে রাযী-খুশী করার জন্য। সে সঙ্গে নিয়ত করবে ব্যবসায়ের জন্য। জিহাদ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। সে সঙ্গে নিয়ত করবে পরিবার-পরিজনকে খাওয়াতে-পরাতে গণীমত লাভের জন্য।

পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য, সে সাথে নিয়ত করবে হাঁটার ব্যায়ামের জন্য। এতে আমল অবশ্য বাতিল হবে না, তবে ছওয়াব কমে যাবে। বান্দার উচিত, তার আমলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া অন্য কিছুর নিয়ত না করা।

তৃতীয় শ্রেণী : ব্যক্তি আল্লাহর জন্য আমল করবে, তবে সেই সঙ্গে এমন কিছু আশা করবে যা আশা করা বৈধ নয়। যেমন
মানুষের প্রশংসা লাভের আশা করা, ছালাত আদায় করে তার বিপরীতে অর্থ লাভের আকাঙ্ক্ষা করা। এটির আবার বেশ
কয়েকটি অবস্থা রয়েছে। যেমন-

এক. আমল শুরুর আগেই তার মধ্যে প্রশংসা কিংবা অর্থ লাভের আকাঙ্ক্ষা জাগবে। আর সেটাই তার আমলের মূল কারণ হবে। এক্ষেত্রে পুরো আমল বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন মানুষ দেখুক এমন নিয়তে নফল ছালাত শুরু করা।

দুই. আমল শুরুর পরে উক্ত কামনা মনে জেগে উঠছে। তারপর সে তা দূর করতে চেষ্টা করছে। যেমন সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে ছালাত শুরু করেছিল। পরে দেখল যে, একজন তার দিকে তাকাচ্ছে। তার এ দৃশ্য ভাল লাগল এবং সে তাদের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য লালায়িত হয়ে উঠল। তারপর সে এই কামনা-বাসনা মন থেকে দূর করার জন্য চেষ্টা করতে করতে ছালাত শেষ করল। এক্ষেত্রে তার আমল ছহীহ হবে এবং সে তার প্রচেষ্টার জন্য ছওয়াব পাবে। তিন. আমল চলাকালে তার মাঝে উক্ত অসদুদ্দেশ্যের উদয় হ’ল কিন্তু সে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করল না। এক্ষেত্রে তার আমল বাতিল গণ্য হবে।

৪র্থ শ্রেণী : ব্যক্তি তার আমল দ্বারা জায়েয কিছু নিয়ত করবে কিন্তু শারঈ প্রতিদানের জন্য আকাঙ্ক্ষী হবে না। যেমন- শুধু জোশ দেখানোর জন্য ছিয়াম রাখা। স্রেফ গণীমতের জন্য জিহাদ করা, শুধু সম্পদ বৃদ্ধির আশায় যাকাত দেওয়া। এতে তার আমল বাতিল গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا ‘যে ব্যক্তি দুনিয়া কামনা করে, আমরা সেখানে যাকে যা ইচ্ছা করি দিয়ে দেই। পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি। সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (বনী ইসরাঈল ১৭/১৮)

৫ম শ্রেণী : ব্যক্তি তার আমল দ্বারা এমন কিছু চাইবে যা চাওয়া শারঈভাবে মোটেও জায়েয নয়। সে সঙ্গে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দিকে মোটেও নযর দেবে না। যেমন শুধুই লোক দেখানোর জন্য ছালাত আদায় করা। এ শ্রেণীর লোকদের আমল বাতিল তো বটেই তদুপরি তারা গুনাহগার হবে।

রিয়া বা লৌকিকতা থেকে বাঁচতে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ :

রিয়া বা লৌকিকতা থেকে বাঁচার জন্য কোন কোন মুসলমান মিথ্যার আশ্রয় নেওয়াকে বৈধ মনে করে। এটা তাদের দাবীও বটে। এটি জঘন্য ভুল এবং কদর্য আমল। কেননা মিথ্যা কখনও মুসলিমের চরিত্রে পড়ে না। যেমন কোন একজন নিজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে মসজিদ কিংবা মাদরাসা বানাচ্ছে। কিন্তু তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলছে, অমুক লোকে এটা বানাচ্ছে। তার কথা তো আসলে মিথ্যা। অনুরূপভাবে কথা ঘুরিয়ে বলাও এ পর্যায়ভুক্ত। যেমন সে বলল, মসজিদটা আমি বানিয়েছি জনৈক মুসলিমের অর্থে। জনৈক মুসলিম বলতে সে কিন্তু নিজেকে বুঝাচ্ছে।

কিছু কিছু জিনিস মনে হয় রিয়া বা লৌকিকতা, কিন্তু আসলে
তা নয় :

* কেউ না চাইতেই মানুষ তার ভালো কাজের প্রশংসা করে। এটা বরং মুমিনের জন্য আগাম সুসংবাদ।

* দাবী-দাওয়া ছাড়াই খ্যাতি অর্জন। যেমন কোন আলিম কিংবা দ্বীন শিক্ষার্থী লোকদের দ্বীন-ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে থাকেন। তাদের কাছে যা দুর্বোধ্য ও জটিল তার সমাধান তারা প্রদান করেন। এভাবে জনগণের মাঝে কখনো কখনো তাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। লৌকিকতা থেকে দূরে থাকার নামে তাদের এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন এবং নিয়ত ঠিক রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

* কেউ কেউ কখনো কোন উদ্যমী ইবাদতকারীকে দেখে তার মতো ইবাদতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এটা কোন লৌকিকতা বা রিয়া নয়। সে তার ইবাদতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করলে অবশ্যই ছওয়াব পাবে।

* পোশাক-পরিচ্ছদ এবং জুতা সুন্দর ও পরিপাটি করে পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি। এর কোনটাই রিয়া বা লৌকিকতা নয়।

* পাপ গোপন রাখা এবং সে সম্পর্কে কাউকে কিছু না বলা রিয়া নয়। বরং শারঈভাবে আমরা নিজেদের ও অন্যদের দোষ গোপন রাখতে আদিষ্ট। কিছু লোকের ধারণা অপরাধ প্রকাশ করা যরূরী, যাতে করে সে মুখলিছ বা খাঁটি মানুষবলে গণ্য হবে। এটি একটি ভুল ধারণা এবং ইবলীসের ধোঁকা। কেননা পাপের কথা বলে বেড়ানো মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত।

উপসংহার :

আমার প্রিয় মুসলিম ভাই! বর্তমান মুসলিম উম্মাহ যে সংকট ও সমস্যার মাঝে কালাতিপাত করছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের ইখলাছের বড়ই প্রয়োজন। অনেক বড় বড় ইসলামী প্রচার ও কল্যাণমূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা লাভের পর আজ ইখলাছের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোন কোন দায়িত্বশীল ইখলাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে রিয়া বা লৌকিকতা, খ্যাতি ও দুনিয়ার স্বার্থকে লক্ষ্যভূত করেছে। ফলে তারা এমন এমন কাজ করেছে যদ্দরুণ সংস্থাগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।

ব্যক্তির নিজের আমলেও ইখলাছ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু আফসোস! যে নিয়তের হাকীকত বা তাৎপর্য জানে না সে কিভাবে নিয়ত ছহীহ-শুদ্ধ করবে? যে ইখলাছের হাকীকত বা পরিচয় জানে না সে কিভাবে ইখলাছ ছহীহ-শুদ্ধ করবে?

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ইখলাছ দাও এবং আমাদের অন্তরে তা বদ্ধমূল করো। আল্লাহ তা‘আলার ছালাত ও সালাম বর্ষিত হৌক আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ), তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর ছাহাবীদের উপর।


[1]ইবনু কুদামা, মুখতাছার মিনহাজুল ক্বাছিদীন, পৃঃ ২২৩-২২৪।

[2]ঐ, পৃঃ ২২৪।

[3]শু‘আবুল ঈমান হা/৬৮৭৯।





ওয়াহ্হাবী আন্দোলন : উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ এবং মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
গাদ্দাফী, সাম্রাজ্যবাদ ও লিবিয়ার রক্তাক্ত জনগণ - ফাহমীদুর রহমান
বাহাছ-মুনাযারায় ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা - ড. নূরুল ইসলাম
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (২য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আল-কুরআনের আলোকে ক্বিয়ামত - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
অপরিবর্তনীয় জ্ঞান বনাম পরিবর্তনীয় জ্ঞান - প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
ই‘তিকাফ : গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
মানবাধিকার ও ইসলাম (১০ম কিস্তি) - শামসুল আলম
আল্লাহর উপর ভরসা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৫ম কিস্তি ফেব্রুয়ারী সংখ্যার পর) - মুযাফফর বিন মুহসিন
আরও
আরও
.