আল্লাহর হক

আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করে কিছু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন (আহযাব ৩৩/৭২)। এ দায়িত্বের কারণেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। মানুষের উপর অর্পিত দায়িত্বকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ১. হাক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর হক। ২. হাক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষকেই এ দু’টি প্রাপ্য আদায় করতে হয়। আল্লাহ তা‘আলা দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন আমাদের কল্যাণের জন্য। তিনি মানব ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন কেবলমাত্র তঁার ইবাদতের জন্য (যারিয়াত ৫১/৫৬)। শুধু মানুষ ও জিন জাতি নয়; বরং পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই আল্লাহর প্রশংসায় রত আছে (ইসরা ১৭/৪৪)। সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহকে একক সত্ত্বা মেনে নিয়ে একমাত্র তঁার ইবাদত করবে, এটা আল্লাহর হক। অনুরূপভাবে এক সৃষ্টি অন্য সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ব পালন করবে, তার হক যথাযথভাবে আদায় করবে, এটা আল্লাহর নির্দেশ। আলোচ্য প্রবন্ধে হকের পরিচয় ও আল্লাহর হক্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-

হক এর পরিচয় : ‘হক’ (حق) আরবী শব্দ। এটি একবচন। বহুবচনে ‘হুকূক’ (حقوق)। এটি আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। এর আভিধানিক অর্থ কয়েকটি হ’তে পারে-

(ক) ‘হক’ অর্থ- সত্য, যা মিথ্যার বিপরীত। যেমন আল্লাহ বলেন, وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-শুনে সত্যকে গোপন করো না’ (বাক্বারাহ ২/৪২)। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا ‘আর বল, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েই থাকে’ (ইসরা ১৭/৮১)

(খ) ‘হক’ অর্থ- অংশ, প্রাপ্য। যেমন- আমরা বলি এই জমিতে আমার হক আছে অর্থাৎ এই জমিতে আমার অংশ আছে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ ‘আর এগুলির হক আদায় করে দাও ফসল কাটার দিন’ (আন‘আম ৬/১৪১)। হাদীছে সালমান (রাঃ)-এর বক্তব্য এভাবে এসেছে,فَأَعْطِ كُلَّ ذِى حَقٍّ حَقَّهُ. ‘প্রত্যেক হকদারকে তার প্রাপ্য হক প্রদান কর’।[1]

পরিভাষায় হক দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[2] যথা-

১. هو الحكم المطابق للواقع، ويطلق على الأقوال والعقائد والأديان والمذاهب باعتبار اشتمالها على ذلك ويقابله الباطل ‘এটি বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা উক্তি, বিশ্বাস, ধর্ম এবং মতবাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হিসাবে এবং এটি মিথ্যার বিরোধী’।

২. أن يكون بمعنى الواجب الثابت ‘স্থির কর্তব্য অর্থে ব্যবহার হয়’।

হকের প্রকারভেদ : হক দুই প্রকার। ১. হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক ২. হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক।[3]

১. হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক : হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক হ’ল এমন হক যা কেবল তঁার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা তঁার সাথে কাউকে শরীক না করা।

২. হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক : আল্লাহ ব্যতীত আল্লাহর অন্য সৃষ্টির সাথে সর্ম্পকিত হককে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক বলে। যেমন- পিতা-মাতার হক, স্বামী-স্ত্রীর হক ইত্যাদি।

হকের রুকন বা ভিত্তি : হকের রুকন নিম্নরূপ[4]-

(১) صاحب الحق ‘হকের অধিকারী’ : অর্থাৎ যার জন্য হক সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন- আল্লাহ। কারণ তঁার জন্য ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি সাব্যস্ত হয়েছে। পিতা-মাতা, কারণ তাদের জন্য সন্তানের হক সাব্যস্ত হয়েছে।

(২) من عليه الحق ‘যার উপর হক সাব্যস্ত’ : যিনি হক আদায় করবেন। অর্থাৎ যিনি হক আদায়ের দায়িত্বশীল। যেমন ছালাত আল্লাহর হক। আর এই দায়িত্ব মানুষের উপর।

(৩) محل الحق أي الشي المستحق ‘হকের মাধ্যম’। অর্থাৎ যা দ্বারা হক আদায় করা হয়। যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আল্লাহর হক। পাঁচবার ছালাত আদায়ের মাধ্যমে এ হক আদায় করতে হয়। যাকাত আল্লাহর হক। সম্পদের ২.৫% অংশ নির্ধারিত খাতসমূহে বণ্টন করার মাধ্যমে যাকাত আদায় করতে হয়।

আল্লাহর হক :

মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যরূরী হক হ’ল ‘আল্লাহর হক’। মহান আল্লাহ প্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে নিজ হাতে (ছোয়াদ ৩৮/৭৫), সুন্দর আকৃতিতে (ত্বীন ৯৫/৪) সৃষ্টি করেছেন। আর আদম সন্তানের ভ্রূণ মায়ের পেটে ১২০ দিন হওয়ার পর তাতে রূহ দেন।[5] তারপর মায়ের গর্ভের সুরক্ষিত স্থানে তিলে তিলে তাকে বড় করেন (মুমিনূন ২৩/১৩)। জ্ঞানহীন অবস্থায় তাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করেন (নাহল ১৬/৭৮) এবং দুনিয়াতে চলার জন্য সামান্য জ্ঞান দান করে (ইসরা ১৭/৮৫)। অতঃপর তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের দু’টি রাস্তা দেখিয়ে দেন (দাহর ৭৬/৩)। যিনি এত কিছু করলেন তিনিই তো বান্দার ইবাদত পাওয়ার একমাত্র হকদার। শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) আল্লাহর হক সম্পর্কে বলেন,

فهذا الحق أحق الحقوق وأوجبها وأعظمها؛ لأنه حق الله تعالى الخالق العظيم المالك المدبر لجميع الأمور، حق الملك الحق المبين الحي القيوم الذي قامت به السماوات والأرض، خلق كل شيء فقدره تقديرا بحكمة بالغة،

‘আল্লাহ তা‘আলার অধিকার’ এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে বড় অধিকার। কেননা এটি মহান সৃষ্টিকর্তা, অধিপতি ও সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রক আল্লাহ তা‘আলার অধিকার। এ অধিকার হ’ল সুমহান বাদশার সুস্পষ্ট অধিকার, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, যিনি আকাশ ও পৃথিবী স্থাপন করেছেন। তিনিই স্বীয় পরিপূর্ণ প্রজ্ঞার দ্বারা সবকিছু সুনিপুণভাবে সৃষ্টি করেছেন’।[6]

মহান আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, পানি, বস্ত্রসহ (বাক্বারাহ ২/২২) বহু নে‘মত দিয়েছেন, যা গনণা করা সম্ভব নয় (নাহল ১৬/১৮)। আর আল্লাহর রহমত ব্যতীত কারো জীবন ধারণ ও বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। তাই তঁার হক আদায় করা আবশ্যক। শায়েখ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, فلو حجب عنك فضله طرفة عين لهلكت ولو منعك رحمته لحفظه لما عشت، فإذا كان هذا فضل الله عليك ورحمته بك فإن حقه عليك أعظم الحقوق. ‘আল্লাহ যদি চোখের এক পলক পরিমাণ সময় তঁার অনুগ্রহ ছিনিয়ে নেন, তবে তুমি তখনই ধ্বংস হয়ে যাবে। তেমনি তিনি যদি তোমার নিকট থেকে এক মুহূর্তও তঁার রহমত বন্ধ রাখেন, তবে তুমি জীবিত থাকতে পারবে না। অতএব তোমার প্রতি যখন আল্লাহর এরূপ অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে, সেকারণ তোমার উপরও আল্লাহর সর্ববৃহৎ অধিকার রয়েছে’।[7]

মহান আল্লাহ তঁার হক সম্পর্কে বলেন,وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ‘আর তোমরা আললাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না’ (নিসা ৪/৩৬)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তঁার ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তঁার একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেছেন এবং তঁার সাথে অন্য কাউকে শরীক করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তিনিই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা রিযিকদাতা, নে‘মত দাতা এবং সমস্ত সৃষ্টজীবের উপর সদা-সর্বদা করুণা বর্ষণকারী। সুতরাং একমাত্র তিনিই হচ্ছেন ইবাদতের হকদার।[8] মু‘আয (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, উফায়র নামক একটি গাধার পিঠে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর পেছনে আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মু‘আয! তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহর হক কি এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তঁার রাসূলই ভাল জানেন। তখন তিনি বললেন, فَإِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوْهُ وَلَا يُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ أَنْ لَا يُعَذِّبَ مَنْ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، ‘নিশ্চয়ই বান্দার উপর আল্লাহর হক হ’ল, বান্দা তঁার ইবাদত করবে এবং তঁার সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হ’ল, তঁার ইবাদতে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ্ তাকে শাস্তি দিবেন না’।[9]

উক্ত হাদীছে আল্লাহর দু’টি হক প্রমাণিত হয়। ১. একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, ২. শিরক না করা।

১. আল্লাহর ইবাদত করা : বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর প্রধান হক হ’ল বান্দা একমাত্র তঁার ইবাদত করবে। ইবাদত শব্দের অর্থ আনুগত্য করা, নত হওয়া ও বিনম্র্ হওয়া। আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকাই ইবাদত। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহ.) বলেন,العبادة هى اسم جامع لكل ما يحبه الله ويرضاه، من الأقوال والأفعال الظاهرة والباطنة. ‘ইবাদত ব্যাপক অর্থবোধক বিশেষ্য। আল্লাহর পসন্দ ও সন্তুষ্টি অর্জিত হয় এমন সব প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ইবাদত বলে’।[10]

আল্লাহর ইবাদত করা এমন গুরুত্বপূর্ণ হক, যেজন্য আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতীকে সৃষ্টি করেছেন (যারিয়াত ৫১/৫৬)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,

أَنَّهُ تَعَالَى خَلَقَ الْعِبَادَ لِيَعْبُدُوهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، فَمَنْ أَطَاعَهُ جَازَاهُ أَتَمَّ الْجَزَاءِ، وَمِنْ عَصَاهُ عَذَّبَهُ أَشَدَّ الْعَذَابِ، وَأَخْبَرَ أَنَّهُ غَيْرُ مُحْتَاجٍ إِلَيْهِمْ، بَلْ هُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَيْهِ فِي جَمِيعِ أَحْوَالِهِمْ، فَهُوَ خَالِقُهُمْ وَرَازِقُهُمْ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদেরকে একমাত্র তঁারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি শুধুমাত্র তঁার ইবাদত করবে এবং তঁার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না তাকে তিনি উত্তম ও পূর্ণ পুরস্কার প্রদান করবেন। আর যারা তঁার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে তাকে তিনি কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। আর তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, বরং সমস্ত সৃষ্টি সর্বাবস্থায় তঁার মুখাপেক্ষী এবং তঁার কাছে সম্পূর্ণরূপে অসহায় ও দরিদ্র। তিনিই তাদের সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা।[11]

এই হক আদায়ের জন্য আল্লাহ মানব জাতির নিকটে যুগে যুগে তিনশত পনের জন রাসূল সহ এক লক্ষ চবিবশ হাযার নবী পাঠিয়েছেন।[12] তঁারা সকলেই তাওহীদ তথা এক আল্লাহর ইবাদত করার এবং আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্য পরিত্যাগ করার আহবান জানিয়েছেন।[13] মহান আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ‘নিশ্চয়ই প্রত্যেক জাতির নিকটে আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর এবং ত্বাগূত থেকে বেঁচে থাকো’ (নাহল ১৬/৩৬)। ইমাম ইবনু জারীর তাবারী (রহঃ) বলেন, আল্লাহ প্রত্যেক উম্মতের কাছে একমাত্র তঁার ইবাদত করা ও তঁার সাথে কাউকে শরীক না করা, তঁার আনুগত্য করা ও একনিষ্ঠভাবে তঁারই ইবাদতের জন্য নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন।[14] ইমাম কুরতবী (রহঃ) বলেন, এক আল্লাহর ইবাদত ও তিনি ব্যতীত অন্য সব মা‘বূদকে ছেড়ে দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।[15]

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

(১) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা : বান্দার প্রতি আল্লাহর অন্যতম হক হ’ল তঁার প্রতি ঈমান আনা।[16] একজন মুমিনকে ছয়টি বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয়।[17] তার প্রথমটি হ’ল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা। মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা (পূর্ণরূপে) বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপরে, তঁার রাসূলের উপরে এবং ঐ কিতাবের উপরে যা তিনি নাযিল করেছেন’(নিসা ৪/১৩৬)। এছাড়া সূরা বাক্বারাহ ১৭৭ ও ২৮৫ নং আয়াতেও এ ব্যাপারে আলোচনা এসেছে। ঈমান কি? জিব্রীল (আঃ)-এর প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ ‘ঈমান হচ্ছেঃ আল্লাহ তা‘আলা, তঁার ফেরেশতা, তঁার কিতাবসমূহ, তঁার রাসূলগণ এবং পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। এছাড়া তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপরে বিশ্বাস করা। অর্থাৎ জীবন ও জগতে কল্যাণ-অকল্যাণ যা কিছু ঘটছে, সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হচ্ছে- এ কথার উপর বিশ্বাস করা।[18]

আল্লাহর প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে সম্পৃক্ত করে। (১) আল্লাহর অস্তিতের প্রতি ঈমান আনা (২) তার রুবুবিয়াতের প্রতি ঈমান আনা (৩) তঁার দাসত্বের প্রতি ঈমান আনা (৪) তঁার নাম ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান আনা।

(২) ঈমানের উপর দৃঢ় থাকা : মুমিনের প্রতি আল্লাহর হক হ’ল ঈমানের উপরে দৃঢ় থাকা। কোন অবস্থায় ঈমান ত্যাগ না করা, ঈমান বিধ্বংসী কাজ না করা ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। অতঃপর তার উপর দৃঢ় থাকে, তাদের উপর ফেরেশতামন্ডলী নাযিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তাম্বিত হয়ো না। আর তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল’ (হা-মীম-সাজদাহ ৪১/৩০)। সুফিয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ আছ-ছাক্বাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন একটি কথা বলুন, যে বিষয়ে আপনার পরে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করব না। আবূ উসামার বর্ণনায় রয়েছে- আপনি ছাড়া অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করব না। তিনি বললেন, قُلْ آمَنْتُ بِاللهِ فَاسْتَقِمْ ‘বল, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অতঃপর এর উপর অবিচল থাক’।[19]

(৩) ইখলাছের সাথে ইবাদত করা : বান্দার নিকটে আল্লাহর অন্যতম হক হ’ল কেবল তঁারই জন্য ইবাদত করা। সূরা ফাতেহায় প্রতি রাক‘আতে আমরা বলি,إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‘আমরা কেবলমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (ফাতিহা ১/৪)। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,إِيَّاكَ نُوَحِّدُ وَنَخَافُ وَنَرْجُو يَا رَبَّنَا لَا غَيْرَكَ ‘হে আমাদের রব! আমরা কেবলমাত্র তোমারই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করি, তোমাকে ভয় করি, তোমার কাছেই আশা করি, অন্য কারো কাছে নয়’।[20] অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَإِيَّايَ فَاعْبُدُونِ ‘অতএব তোমরা আমারই ইবাদত কর’ (আনকাবূত ২৯/৫৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তিনি আদেশ করছেন যে, তঁাকে ব্যতীত তোমরা অন্য কারু ইবাদত করো না’ (ইউসুফ ১২/৪০)

(৪) আল্লাহকে ভয় করা : আল্লাহ তা‘আলার হক হ’ল একমাত্র তঁাকেই ভয় করা। আল্লাহ বলেন,وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ ‘তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর’ (বাক্বারাহ ২/৪০; নাহল ১৬/৫১)। অন্যত্র তিনি বলেন,أَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের জন্য ভয় করার অধিক হকদার হ’লেন আল্লাহ। যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো’ (তওবা ৯/১৩)। মহান আল্লাহকে ভয় করতে হবে যথাযথভাবে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রকৃত মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’ (আলে ইমরান ৩/১০২)। আবূ যার জুনদুব ইবনু জুনাদাহ এবং আবূ আব্দুর রহমান মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْت، وَأَتْبِعْ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ ‘তুমি যেখানে যে অবস্থায় থাক না কেন আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক মন্দ কাজের পর ভাল কাজ কর, যা তাকে মুছে দেবে। আর মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কর’।[21]

(৫) ছালাত আদায় করা : ঈমানের পরেই ছালাতের স্থান।[22] যা মুমিন ও কাফেরের মধ্যে প্রার্থক্যকারী।[23] একজন মানুষের ঈমান আনয়নের পরে প্রধান দায়িত্ব[24] এবং আল্লাহর অন্যতম হক হ’ল দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা।[25] আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘অতএব তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় কর ও কুরবানী কর’ (কাউছার ১০৮/২)। অন্যত্র তিনি বলেন,قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘বল, আমার ছালাত ও আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ, সবকিছুই জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য’ (আন‘আম ৬/১৬২)

(৬) যাকাত প্রদান করা : ইসলামে ছালাতের পরেই যাকাতের স্থান।[26] যা মুমিনকে কৃপণতা থেকে মুক্ত করে এবং তার সম্পদ পবিত্র করে (তওবা ৯/১০৩)। যাকাত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আর্থিক ব্যবস্থাকে দৃঢ় করে এবং দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পবিত্র কুরআনে ছালাতের সাথে প্রায় ৮২ জায়গায় যাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা বান্দার বিশুদ্ধ ঈমানের দলীল। কেননা মুনাফিকরা একে অস্বীকার করে।[27] এটি বান্দার আর্থিক ইবাদত। সম্পদশালী ব্যক্তির উপর যাকাত প্রদান করা মহান আল্লাহর অন্যতম হক।[28]

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে আবুবকর (রাঃ)-কে খালীফা করা হ’ল। তখন আরবের যারা কাফের হবার তারা কাফের হয়ে গেল। সেসময় ওমর (রাঃ) আবুবকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কি করে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি মানুষের সঙ্গে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ না বলা পর্যন্ত যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। অতএব যে ব্যক্তি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলল, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে হবে’। আবুবকর (রাঃ) তখন বললেন, ‘যারা ছালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা যাকাত হ’ল মালের হক’।[29]

(৭) ছিয়াম পালন করা : ছিয়াম পালন করাও আল্লাহর হক।[30] নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন,كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ له إلّا الصَّوْمَ، فإنّه لي وأنا أجْزِي به ‘বনু আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য করা হয়, ছওম ব্যতীত। ছওম আমার জন্য করা হয়। আমি নিজেই তার পুরস্কার দিব’।[31] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন,الصَّوْمُ لي وأنا أجْزِي به، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وأَكْلَهُ وشُرْبَهُ مِن أجْلِي، ‘ছিয়াম আমার জন্যই, আমিই এর প্রতিদান দিব। সে আমার সন্তোষ অর্জনের জন্যই তার প্রবৃত্তি ও পানাহার ত্যাগ করেছে’।[32]

(৮) হজ্জ পালন করা : সম্পদশালী মুসলিমের উপরে আল্লাহর জন্য তঁার ঘর যিয়ারত করা আল্লাহর অন্যতম হক। আল্লাহ বলেন, وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ ফরয করা হ’ল ঐ লোকদের উপর, যাদের এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে,) আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)

(৯) আল্লাহর জন্য কল্যাণ কামনা করা : নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إنّ الدِّينَ النَّصيحةُ، إنّ الدِّينَ النَّصيحةُ، إنّ الدِّينَ النَّصيحةُ. قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ، وَلِكِتَابِهِ، وَلِرَسُولِهِ، وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ ‘দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা, দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা, দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহ, তঁার কিতাব, তঁার রাসূল, মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং সকল মুসলিমের জন্য’।[33]

আল্লাহর জন্য কল্যাণ কামনা হচ্ছে- ‘আল্লাহর একত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করা এবং নিয়তের মধ্যে ইখলাছ থাকা’।[34] ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন, আল্লাহর জন্য কল্যাণ কামনা দু’টি বিষয়কে সম্পৃক্ত করে- ১. একনিষ্ঠভাবে তঁার ইবাদত করা, ২. আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া রব হিসাবে, ইলাহ হিসাবে এবং তঁার নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে।[35]

(১০) আল্লাহর বিচার ফায়ছালা মেনে নেওয়া : আল্লাহর বিচার ফায়ছালা মেনে নেওয়া তঁার অন্যতম অধিকার। মহান আল্লাহ বলেন,إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ‘আদেশ দানের ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত কারু নেই’ (ইউসুফ ১২/৪০)

(১১) অবিলম্বে তওবা করা : প্রত্যেক প্রাণীই মরণশীল।[36] তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত অনতিবিলম্বে তওবা করা। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকটে তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা’ (তাহরীম ৬৬/৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ‏ ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকটে তওবা করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকটে প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি’।[37]

(১২) শুকরিয়া আদায় করা : মহান আল্লাহ মানুষকে বহু নে‘মত দিয়েছেন (নাহল ১৬/৫৩), যা মানুষ গণনা করে শেষ করতে পারবে না (ইবাহীম ১৪/৩৪)। এজন্য মানুষের প্রতি আল্লাহর অন্যতম হক হ’ল আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ বলেন,فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না’ (বাক্বারাহ ২/১৫২)। তিনি আরো বলেন,لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহ’লে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশী বেশী করে দিব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)

(১৩) তাওয়াক্কুল করা : আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা আল্লাহর অন্যতম হক। তিনি বলেন,وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ ‘স্রে্ফ আল্লাহর উপরে ভরসা কর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’ (মায়েদাহ ৫/২৩)। জান্নাতী মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় নবী করীম (ছাঃ) বলেন,كَانُوا لاَ يَكْتَوُونَ، وَلاَ يَسْتَرْقُونَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ ‘তারা শরীরে দাগ লাগাত না, ঝাড়-ফুঁকের আশ্রয় নিত না এবং শুভ অশুভ লক্ষণ মানত না। আর তারা কেবল তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করত’।[38]

(১৪) আল্লাহকে ভালবাসা : নিরঙ্কুশ ভালবাসা পাওয়ার একমাত্র অধিকারী হ’লেন আল্লাহ তা‘আলা। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيْمَانِ أَنْ يَكُونَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ للهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে- ১. আল্লাহ্ ও তঁার রাসূল তার নিকটে অন্য সকল কিছু হ’তে অধিক প্রিয় হওয়া; ২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা; ৩. কুফরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপসন্দ করা’।[39]

(১৫) দো‘আ করা : দো‘আ হ’ল ইবাদত।[40] আল্লাহ সব সময় বান্দার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন (বাক্বারাহ ২/১৮৬)। এমনকি প্রতিরাতের শেষাংশে বান্দাকে তঁার কাছে দো‘আ করার জন্য আহবান করেন।[41] আর দো‘আ করা মহান আল্লাহর অন্যতম হক। আল্লাহ বলেন,وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত থেকে (আমার নিকট দো‘আ করা থেকে) অহংকার প্রদর্শন করে, তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (মুমিন ৪০/৬০)

(১৬) আমানত যথাযথভাবে আদায় করা : আমানত হ’ল যা পালনে পুরস্কার ও অবাধ্যতায় শাস্তি রয়েছে।[42] অর্থাৎ ফরয বিধানগুলো পালন করা। ইমাম শাওকানী ও নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভঁূপালী বলেন, সমস্ত মুফাচ্ছির একমত যে, আমানত হ’ল আল্লাহর আনুগত্য ও ফরযসমূহ আদায় করা যা পালনে প্রতিদান ও ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে শাস্তি রয়েছে।[43]

আমানতদারিতা ঈমানের লক্ষণ।[44] আর খিয়ানত করা মুনাফেকীর লক্ষণ।[45] আল্লাহর অন্যতম নির্দেশ হ’ল আমানত যথাযথভাবে রক্ষা করা। আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত সমূহকে যথাস্থানে সমর্পণ কর’ (নিসা ৪/৫৮)

(১৭) আল্লাহকে স্মরণ করা : আল্লাহকে স্মরণ করা আল্লাহর অন্যতম নির্দেশ। মহান আল্লাহ বলেন,فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের স্মরণ করব’ (বাক্বারাহ ২/১৫২)। বিপদ-আপদে, সুখে-দুখে তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা আল্লাহর অন্যতম হক। আল্লাহ তঁাকে অধিক হারে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন (জুম‘আ ৬২/১০)

(১৮) আল্লাহর হিফাযত করা : আল্লাহর হিফাযত হ’ল তঁার আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধ থেকে দূরে থাকা। আব্দুল্লাহ্ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর পিছনে (আরোহী) ছিলাম, তিনি আমাকে বললেন, يَا غُلَام! إنِّي أُعَلِّمُك كَلِمَاتٍ: احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْك، احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَك، إذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، ‘হে যুবক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাবো- আল্লাহকে হেফাযত কর, তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন। আল্লাহকে হেফাযত কর (আল্লাহর বিধান হেফাযত কর) তাহলে তঁাকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে।[46]

দুই. শিরক না করা :

মহান আল্লাহর দ্বিতীয় হক হ’ল তঁার ইবাদতে কাউকে শরীক না করা। ‘শিরক’ (الشرك) শব্দটি কুরআন ও হাদীছে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। মূল অক্ষর হ’ল (ش ر ك) অর্থ অংশীদার হওয়া, শরীক হওয়া। যেমন বলা হয়, شَارَكْتُ فُلاَنًا فِي الشَّيْءِ অর্থাৎ ‘আমি অমুকের সাথে কোন বিষয়ে অংশীদার হয়েছি’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শিরকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدّاً وَهُوَ خَلَقَكَ ‘আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’।[47] শিরকের মাধ্যমে মহান আল্লাহর হক নষ্ট হয়। শিরক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণার বিষয় ও সবচেয়ে বড় পাপ।[48] অন্যান্য গুনাহ তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন, কিন্তু শিরকের অপরাধ তিনি (তওবা ব্যতীত) ক্ষমা করবেন না (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)। বরং শিরক জান্নাত হারাম করে ও জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেয়।[49] মুশরিক ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না।[50] এমনকি ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন শাফা‘আত উপকারে আসবে না।[51]

শিরক হচ্ছে মূলতঃ আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করা। শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়। একারণেই শিরক জঘন্যতম অপরাধ। অন্যান্য কবীরা গুনাহে আল্লাহর একক প্রভুত্ব ও নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয় না। সেখানে হয় আদেশ লংঘন। শিরক ও অন্যান্য গুনাহের মধ্যে এটিই হচ্ছে মৌলিক পার্থক্য।

আরেকটি পার্থক্য হ’ল, অন্যান্য কবীরা গুনাহে গুনাহগারের মনে অপরাধবোধ জাগ্রত হয়। ফলে একসময় সে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। কিন্তু শিরকের ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা নেই। যে শিরক করে তার মধ্যে অপরাধবোধ সৃষ্টি হয় না। সে তা করে থাকে নেকী মনে করেই। তার বিশ্বাস সে যা করছে তাতে তার দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ হবে। কিন্তু যে মদ পান করে, যে ব্যভিচার করে সে জানে যে, এসব হারাম। যে মিথ্যা বলছে, সে জানে যে, মিথ্যা বলা কবীরা গোনাহ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হ’ল, যে শিরক করছে সে জানে না যে, সে মহাপাপ করছে। ফলে তার মধ্যে কখনো পাপবোধ জাগ্রত হয় না। সে মনে করে না যে, সে আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কাজ করছে। তাই সে কখনো তওবা করার সুযোগ পায় না। আর এ অবস্থায় তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

শিরকের কয়েকটি উদাহরণ :

(১) গায়রুল্লাহর নামে কসম করা : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করা শিরক ও আল্লাহর হকের লঙ্ঘন। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, مَن حلفَ بغيرِ اللهِ فقد كفرَ أو أشرَكَ ‘আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যে শপথ করল সে কুফরী করল অথবা শিরক করল’।[52]

(২) লোক দেখানো আমল করা : আল্লাহর হক হ’ল একমাত্র তঁার জন্য সকল আমল করা (বাইয়্যিনাহ ৯৮/৫)। সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে আল্লাহর হক লংঘন হয়, যা শিরক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, দাজ্জালের চেয়েও যে বিষয়ে আমি তোমাদের জন্য বেশী ভয় পাই সেটি কি তোমাদেরকে বলব না? ছহাবীগণ বললেন, হ্যঁা, বলুন। তিনি বলেন,الشِّركُ الخفِيُّ، أن يقومَ الرجلُ فيصلِّي، فيزيِّنُ صلاتَه لما يَرى من نظَرِ رجلٍ ‘তাহ’ল গোপন শিরক। কোন লোক ছালাতে দাঁড়ায়। অতঃপর সে ছালাত সুন্দর করে যখন সে দেখে যে, মানুষ তাকে দেখছে’।[53]

(৩) আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করা : আল্লাহ ব্যতীত কোন মূর্তি, গাছপালা, মাছ, পাহাড়, বৃক্ষ সহ কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তিকে অথবা তাদের কবরকে সিজদা করা শিরক। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ কর, সিজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর এবং সৎকাজ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (হজ্জ ২২/৭৭)।

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তঁার নিদর্শন সমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কর না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তঁারই ইবাদত কর’ (ফুছছিলাত ৪১/৩৭)। আর ইহুদী-নাছারাদের প্রতি আল্লাহর লা‘নত করার অন্যতম কারণ হচ্ছে তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছিল।[54]

(৪) আল্লাহর সমকক্ষবাচক কথা বলা : আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা হয় এমন কোন কথাও বলা যাবে না। ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... জুহায়না গোত্রের এক মহিলা থেকে বর্ণিত, এক ইহূদী নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, আপনারা তো আল্লাহর সাথে শরীক করে থাকেন। আপনারা বলে থাকেন, যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন আর যা তুমি ইচ্ছা কর। আর আপনারা আরো বলে থাকেন, কা‘বার কসম! তখন রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিলেন,إِذَا أَرَادُوا أَنْ يَحْلِفُوا أَنْ يَقُولُوا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ وَيَقُولُونَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ شِئْتَ ‘যখন কসম করার ইচ্ছা করবে, তখন বলবে, কা‘বার রবের কসম! আরো বলবে, আল্লাহ যা চেয়েছেন। এরপর তুমি চেয়েছ’।[55]

(৫) অমঙ্গল বা অশুভ বিশ্বাস করা : কোন কাজকে ভবিষ্যতের জন্য অকল্যাণ মনে করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الطِّيَرَةُ شِركٌ، الطِّيَرَةُ شِركٌ، الطِّيَرَةُ شِركٌ، وما منا إلا، ولكنَّ اللهَ يُذهِبُه بالتَّوَكُّلِ، ‘অশুভ বিশ্বাস করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (তিন বার বলেছেন) এমন কেউই আমাদের মধ্যে নেই যার মনে এর ধারণা আসে না। তবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর (মুমিন লোকের) ভরসার কারণে তা দূর করে দেন’।[56]

(৬) তাবীয বা কোন কিছু লটকানো : তাবীয লটকানোকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শিরক বলেছেন।[57] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الرُّقَى، وَالتَّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ ‘যাদু, তাবীয ও মন্ত্র শির্ক-এর অন্তর্ভুক্ত’।[58] এমনকি একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে আগত দশজনের একটি দলের নয়জনকে বায়‘আত করালেন আর তাবীয থাকার কারণে একজনকে বায়‘আত করাননি’।[59] শুধু তাবীয নয় বরং যে ব্যক্তি রিং, বালা, পাথর, সুতা, তাগা ইত্যাদি পরিধান করে এবং এর দ্বারা বালা-মুছীবত দূর হয় কিংবা তা প্রতিরোধ করা যায় বলে বিশ্বাস করে সে আল্লাহর সাথে শিরক করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকায় তাকে ঐ বস্ত্তর প্রতি সোপর্দ করা হয়’।[60]

(৭) গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা : যবেহ করা একটি ইবাদত। আর প্রত্যেক ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য করতে হবে (ফাতিহা ১/৪; বাইয়িনাহ ৯৮/৫)। তাই যবেহও কেবল আল্লাহর জন্য করতে হবে (আন‘আম ৬/১৬২; কাওছার ১০৮/২)। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহ করলে আল্লাহর হক লঙ্ঘন হয়।

(৮) আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করা : কোন মৃত বা জীবিত ব্যক্তি কাউকে দেখেন, গায়েব জানেন, তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন, এরূপ বিশ্বাস করে বিপদকালে পীর-মুরশিদ, অলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল প্রমুখের নাম নেওয়া, মৃত অলী-আউলিয়া মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাদের অসীলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা যাবে বিশ্বাস করা সুস্পষ্ট শিরক।

শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ) বলেন, যদি কেউ কোন নবী, অলী, জিন, ফেরেশতা, ইমাম, পীর, শহীদ, জ্যোতিষ্ক, ভবিষ্যৎ প্রবক্তা, পন্ডিত, ভূত বা অন্য কারো সম্পর্কে এমন ধারণা রাখে যে, সে গায়েবের ইলম জানে, তাহ’লে সে মুশরিক। হ্যঁা, যদি ঘটনাক্রমে কোথাও কোন জ্যোতিষীর বা অন্য কারো কথা বাস্তবের সাথে মিলেও যায় তবুও একথা বলা যাবে না যে, সে গায়েবের জ্ঞান রাখে। কারণ অধিকাংশ সময়তো তাদের কথা মিথ্যা ও অবাস্তব হয়ে থাকে।[61]

পরিশেষে বলব, মহান আল্লাহর হক প্রত্যেক মানুষের জানা এবং যথাযথভাবে তা আদায় করা আবশ্যক। আল্লাহ আমাদেরকে কেবল তঁার ইবাদত করা ও যাবতীয় শিরক থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে তঁার হক যথাযথভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুক-আমীন!

মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ

তুলাগাঁও (নোয়াপাড়া), দেবিদ্বার, কুমিল্লা।


[1]. বুখারী হা/১৯৬৮, ৬১৩৯; তিরমিযী হা/২৪১৩।

[2]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, (কুয়েত: ৩য় প্রকাশ ১৪১০ হিঃ/১৯৯০ খ্রিঃ) ১৮/৭।

[3]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ১৮/৭।

[4]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ১৮/১২।

[5]. বুখারী হা/৬৫৯৪

[6]. শাইখ ছালেহ আল-উছায়মীন, হুকুক দা‘আত ইলায়হাল ফিত্বরাত ওয়া ক্বারারাতহাশ শারী‘আহ (حقوق دعت إليها الفطرة وقررتها الشريعة) পৃ. ৮।

[7]. হুকুক দা‘আত ইলায়হাল ফিত্বরাত ওয়া ক্বারারাতহাশ শারী‘আহ পৃ. ৮-৯।

[8]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, সূরা নিসা ৩৬নং আয়াতের তাফসীর দ্র.।

[9]. বুখারী হা/২৮৫৬; মুসলিম হা/৩০; তিরমিযী হা/২৬৪৩; আবূদাউদ হা/২৫৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৪২৯৬; আহমাদ হা/১৩৩৩১।

[10]. মাজমূঊল ফাতাওয়া ১০/১৪৯।

[11]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, সূরা যারিয়াত ৫৬নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.।

[12]. আহমাদ, তাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭; ছহীহাহ হা/২৬৬৮।

[13]. কুরআনুল কারীম (বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর), মদীনা: বাদশাহ্ ফাহাদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স, ১/১৪০৬।

[14]. তাফসীর আত-তাবারী সূরা নাহল ৩৬ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.।

[15]. তাফসীরে কুরতবী, সূরা নাহল ৩৬নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.।

[16]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ, ১৮/১৫।

[17]. বাক্বারাহ ২/১৭৭; ক্বামার ৫৪/৪৯; মুসলিম হা/৮।

[18]. মুসলিম হা/৮; আবূদাউদ হা/৪৬৯৫।

[19]. মুসলিম হা/৩৮, ছহীহুল জামে হা/৪৩৯৫।

[20]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১/৩৯, সূরা ফাতিহা ৪নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.।

[21]. তিরমিযী হা/১৯৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৬০।

[22]. বুখারী হা/৮; মুসলিম হা/১৬

[23]. মুসলিম হা/৮২; ইবনে হিববান হা/১৪৫৪, নাসাঈ হা/৪৬২।

[24]. বুখারী হা/১৩৯৫; মুসলিম হা/১৯।

[25]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ, ১৮/১২,১৫।

[26]. বুখারী হা/৮; মুসলিম হা/১৬।

[27]. মুসলিম হা/২২৩; মিরকাতুল মাফাতীহ ২/৫।

[28]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৮/১২।

[29]. বুখারী হা/৭২৮৪; মুসলিম হা/২০।

[30]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৮/১২,১৫।

[31]. বুখারী হা/৫৯২৭; মুসলিম হা/১১৫১।

[32]. বুখারী হা/৭৪৯২; তিরমিযী হা/৭৬৪; নাসাঈ হা/২২১৫; ইবনে মাজাহ হা/১৬৩৮।

[33]. মুসলিম হা/৫৫, আবু দাউদ হা/৪৯৪৪; নাসাঈ হা/৪১৯৭।

[34]. আবু দাউদ ৪৯৪৪ নং হাদীছে ব্যাখ্যা দ্র. পৃ.২২৬৮।

[35]. শরহু আরবাঈন লিন-নববী (সঊদী আরব: দারুস ছুরায়া, ৩য় প্রকাশ ১৪২৫ হি.) ৭নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্র. পৃ. ১৩৬।

[36]. আলে ইমরান ৩/১৮৫; আম্বিয়া ২১/৩৫; আনকাবূত ২৯/৫৭।

[37]. মুসলিম হা/২৭০২।

[38]. বুখারী হা/৬৫৪১, মুসলিম হা/২২০।

[39]. বুখারী হা/১৬; মুসলিম হা/৪৩।

[40]. আবু দাউদ হা/১৪৭৯; তিরমিযী হা/২৯৬৯; ছহীহুল জামে হা/৩৪০৭।

[41]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮।

[42]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, সূরা আহযাব ৭২নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.।

[43]. তাফসীরে ফতহুল বায়ান ও তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, সূরা আহযাব ৭২নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র.।

[44]. আহমাদ হা/১২৪০৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১৭৯।

[45]. মুসলিম হা/৫৯।

[46]. তিরমিযী হা/২৫১৬; ছহীহুল জামে হা/৭৯৫৭।

[47]. বুখারী হা/৪২০৭; মুসলিম।

[48]. বুখারী হা/২৬৫৩, ২৬৫৪; মুসলিম হা/৮৮, ২৫৫।

[49]. মায়েদা ৫/৭২; মুসলিম হা/১৭১।

[50]. তওবা ৯/১১৩; বুখারী হা/৪৬৭৫

[51]. মুদ্দাছছির ৭৪/৪৮; বুখারী হা/৩৩৫০, ৪৭৬৮

[52]. তিরমিযী হা/১৫৩৫; আবুদাউদ হা/৩২৫১; ছহীহুত তারগীব হা/২৯৫২।

[53]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪০৮; ছহীহুত তারগীব হা/৩০; ছহীহুল জামে হা/২৬০৭।

[54]. বুখারী, হা/১৩৩০।

[55]. নাসাঈ হা/৩৭৭৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৬।

[56]. আবুদাউদ হা/৩৯১০; তিরমিযী হা/১৬১৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৯৮।

[57]. আহমাদ হা/১৭৪০৪; আবু ই‘আলা হা/১৭৫৭।

[58]. আবু দাউদ হা/৩৮৮৩।

[59]. আহমাদ হা/১৭৪২২; সিলসিলা ছহীহাহ ১/৮৮৯।

[60]. আহমাদ হা/১৬৭৭১; মিশকাত হা/৪৫৫৬ ‘চিকিৎসা ও ঝাড়ফঁুক’ অনুচ্ছেদ।

[61]. তাকভিয়াতুল ঈমান, পৃ. ৩০।






বিষয়সমূহ: বিবিধ
কুরবানীর মাসায়েল
আদর্শ সমাজ গঠনে সালামের ভূমিকা - মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম
তওবা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
অহীভিত্তিক তাওহীদী চেতনা - আব্দুল মান্নান-এম.এম. এম.এ, মান্দা, নওগাঁ।
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (শেষ কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি আমাদের কর্তব্য (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - আব্দুল আলীম বিন কাওছার
বৃদ্ধাশ্রম : মানবতার কলঙ্কিত কারাগার - মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম
অছিয়ত নামা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানব জাতির সাফল্য লাভের উপায় (৭ম কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
নফল ছালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
আরও
আরও
.