আমাদের পরিচয় কি শুধুই মুসলিম?

বর্তমানে মুসলিম সমাজে একটি মতবিরোধপূর্ণ বিষয হ’ল- আমাদের পরিচয় কি শুধুই মুসলিম? মুসলমানদের অন্য কোন বৈশিষ্ট্যগত নাম থাকতে পারে কি? নাকি সর্বক্ষেত্রেই আমরা ‘মুসলিম’ পরিচয় দিতে বাধ্য? আল্লাহ রাববুল আলামীন ও রাসলুল্লাহ (ছাঃ) কি মুসলমানদেরকে সর্বক্ষেত্রেই মুসলিম হিসাবে উল্লেখ করেছেন? সম্প্রতি অতি আবেগী কিছু ভাই জোরালো দাবী জানাচ্ছেন যে, মুসলমানদের একমাত্র পরিচয় হ’ল মুসলিম। মুসলিম ভিন্ন আমাদের অন্য কোন পরিচয় বা বৈশিষ্ট্যগত নাম থাকতে পারে না। তারা মনে করেন কোন মুসলমানের ‘আহলেহাদীছ’ বলে পরিচয় দেয়া বৈধ নয়। তাদের এ মতবাদ কতটুকু সঠিক তা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জানা সময়ের দাবী। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

আমরা প্রথমে জানব আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তঁার মুখনিঃসৃত বাণীতে মুসলমানদেরকে কি কি নামে অভিহিত করেছেন।

১. মুসলিম :

মুসলমানদের জাতিগত নাম হচ্ছে ‘মুসলিম’। মহান আল্লাহ বলেন,مِلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ، ‘তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মের উপর (তোমরা দৃঢ় থাক)। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ (হজ্জ ২২/৭৮)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ- ‘ঐ ব্যক্তির চাইতে কথায় উত্তম আর কে আছে, যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয়ই আমি আজ্ঞাবহদের অন্তর্ভুক্ত’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩৩)। তিনি আরো বলেন,قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ مِنْ رَبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِينَ آمَنُوا وَهُدًى وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ- ‘বলে দাও, এটি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে পবিত্র রূহ (জিব্রীল) যথার্থভাবে নাযিল করেছেন। যাতে তিনি মুমিনদের দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটি মুসলমানদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ’ (নাহল ১৬/১০২)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহকে ভয় কর এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’ (আলে ইমরান ৩/১০২)। পবিত্র কুরআনে আরো এসেছে, وَأُمِرْتُ لِأَنْ أَكُونَ أَوَّلَ الْمُسْلِمِينَ- ‘আর আমি আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি মুসলিমদের প্রথম হই’ (যুমার ৩৯/১২)

এ মর্মে হাদীছ সমূহ : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، ‘সেই (প্রকৃত) মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হ’তে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে’।[1] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا، وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا، وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا، فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ ‘যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় ছালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় আর আমাদের যবেহকৃত প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম’।[2] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ- ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেক্বী এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী’।[3] জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,بَايَعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ- ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছি ছালাত ক্বায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করার’।[4]

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ مِنَ الشَّجَرِ شَجَرَةً لاَ يَسْقُطُ وَرَقُهَا، وَإِنَّهَا مَثَلُ الْمُسْلِمِ، ‘গাছগাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে তার পাতা ঝরে পড়ে না। আর এটাই মুসলিমের উদাহরণ’।[5] এভাবে অসংখ্য আয়াত ও হাদীছে আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।

২. মুমিন :

কুরআনুল কারীমের বহু আয়াত ও অনেক ছহীহ হাদীছে আমাদেরকে যেমন মুসলিম নামে অভিহিত করা হয়েছে, তেমনি বহু আয়াত ও হাদীছে মুমিন হিসাবেও অভিহিত করা হয়েছে। কুরআনুল কারীমের দু’টি সূরা এ নামেই নামকরণ করা হয়েছে। সূরা মুমিন ও মুমিনূন। এক্ষণে যেসকল আয়াত ও হাদীছে আমাদেরকে মুমিন বলে অভিহিত করা হয়েছে তন্মধ্য হ’তে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল। মহান আল্লাহ বলেন,قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاَتِهِمْ خَاشِعُونَ- ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হবে মুমিনগণ। যারা তাদের ছালাতে মনোযোগী’ (মুমিনূন ২৩/১-২)। তিনি আরো বলেন,إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ- ‘মুমিন কেবল তারাই, যখন তাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করানো হয়, তখন তাদের অন্তর ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের উপর তঁার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’ (আনফাল ৮/২)। অন্যত্র তিনি বলেন,أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ- ‘তারাই হ’ল সত্যিকারের মুমিন। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক উপজীবিকা’ (আনফাল ৮/৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلاَ يُجْزَى إِلاَّ مِثْلَهَا وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيهَا، بِغَيْرِ حِسَابٍ- ‘যে মন্দকর্ম করবে, সে তার অনুরূপ ফল ব্যতীত পাবে না। আর যে পুরুষ বা নারী সৎকর্ম করবে মুমিন অবস্থায়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা সেখানে অপরিমিত রিযিক প্রাপ্ত হবে’ (মুমিন ৪০/৪০)। পবিত্র কুরআনে আরো এসেছে,وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُمْ مِنَ اللهِ فَضْلاً كَبِيرًا- ‘তুমি মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহা অনুগ্রহ’ (আহযাব ৩৩/৪৭)

এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ সমূহ :

মু‘আবিয়াহ ইবনুল হাকাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললাম,

وَكَانَتْ لِي جَارِيَةٌ تَرْعَى غَنَمًا لِي قِبَلَ أُحُدٍ وَالْجَوَّانِيَّةِ، فَاطَّلَعْتُ ذَاتَ يَوْمٍ فَإِذَا الذِّئْبُ قَدْ ذَهَبَ بِشَاةٍ مِنْ غَنَمِهَا، وَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي آدَمَ، آسَفُ كَمَا يَأْسَفُونَ، لَكِنِّي صَكَكْتُهَا صَكَّةً، فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَظَّمَ ذَلِكَ عَلَيَّ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَفَلاَ أُعْتِقُهَا؟ قَالَ: ائْتِنِي بِهَا فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَقَالَ لَهَا: أَيْنَ اللهُ؟ قَالَتْ: فِي السَّمَاءِ، قَالَ: مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ: أَنْتَ رَسُولُ اللهِ، قَالَ: أَعْتِقْهَا، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ-

‘আমার এক দাসী ছিল। সে ওহোদ ও জাওয়ানিয়্যাহ এলাকায় আমার বকরী চরাত। একদিন আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম, বকরীপাল থেকে একটি বকরী নেকড়ে নিয়ে গেছে। আমি তো অন্যান্য আদম সন্তানের মতো একজন মানুষ। তাদের মতো আমিও রাগে তাকে চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে আসলাম (এবং সব কথা বললাম)। কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হ’ল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি তাকে (দাসীকে) মুক্ত করে দিব? তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। সুতরাং আমি তাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে হাযির করলাম। তিনি তাকে (দাসীকে) জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আকাশে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বললেন, তুমি তাকে মুক্ত করে দাও, কেননা সে একজন মুমিনা নারী’।[6]

যায়েদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,

صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةَ الصُّبْحِ بِالْحُدَيْبِيَةِ فِي إِثْرِ السَّمَاءِ كَانَتْ مِنَ اللَّيْلِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ: هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي كَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي مُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিয়ে হুদায়বিয়াহ প্রান্তরে (বৃষ্টিপাতের পরে) ফজরের ছালাত আদায় করলেন। ছালাত সম্পন্ন করে তিনি উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কি জান রব কি বলেছেন? তারা উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তঁার রাসূল (ছাঃ)-ই ভাল জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহ এরশাদ করেছেন, আমার কতিপয় বান্দা সকালে উঠেছে মুমিনরূপে এবং কতিপয় বান্দা উঠেছে কাফেররূপে। যারা বলেছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় বৃষ্টিপাত হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যারা বলেছে যে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী’।[7]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَالمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ- ‘(প্রকৃত) মুমিন সে ব্যক্তি যার থেকে মানুষ নিজের জীবন ও সম্পদকে সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে করে’।[8]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، ‘কোন ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না। যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে’।[9]

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ! ذَرَارِيُّ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: مِنْ آبَائِهِمْ. فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ بِلاَ عَمَلٍ؟ قَالَ: اللهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ، ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মুমিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কি হুকুম? তিনি উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুগামী হবে। আমি বললাম, কোন নেক আমল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জানেন তারা জীবিত থাকলে কি আমল করত’।[10]

মুত্তাক্বী :

একজন মুসলিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগত নাম হ’ল মুত্তাক্বী। কুরআন মাজীদে অসংখ্যবার পরিপূর্ণ মুসলিমদেরকে মহান আল্লাহ মুত্তাক্বী বলে সম্বোধন করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে সফলতা’ (নাবা ৭৮/৩১)। অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَعِيمٍ- ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাতে ও সুখ সম্ভোগে’ (তূর ৫২/১৭)। তিনি আরো বলেন,وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ- ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। জেনে রেখো আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথে থাকেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৪)। পবিত্র কুরআনে আরো এসেছে, إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ- ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাতে ও নদী সমূহের মাঝে’ (ক্বামার ৫৪/৫৪)। অন্যত্র এসেছে, وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ- ‘আর আল্লাহ হ’লেন মুত্তাক্বীদের বন্ধু’ (জাছিয়াহ ৪৫/১৯)। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ، فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ، يَلْبَسُونَ مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ- ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে। বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণা সমূহের মাঝে। তারা সেখানে পরিধান করবে মিহি ও মোটা রেশমের কাপড় সমূহ এবং বসবে মুখোমুখি’ (দুখান ৪৪/৫১-৫৩)

এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ সমূহ : উক্ববাহ ইবনু আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أُهْدِىَ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُّوجُ حَرِيرٍ فَلَبِسَهُ فَصَلَّى فِيهِ ثُمَّ انْصَرَفَ فَنَزَعَهُ نَزْعًا شَدِيدًا كَالْكَارِهِ لَهُ وَقَالَ: لاَ يَنْبَغِى هَذَا لِلْمُتَّقِينَ- ‘নবী করীম (ছাঃ)-কে একটা রেশমী জুববা হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু ছালাত শেষ হবার সাথে সাথে দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পরা অপসন্দ করছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, মুত্তাক্বীদের জন্য এই পোষাক সমীচীন নয়’।[11]

উরওয়া ইবনু যুবায়ের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ قَامَ بِمَكَّةَ، فَقَالَ: إِنَّ نَاسًا أَعْمَى اللهُ قُلُوبَهُمْ، كَمَا أَعْمَى أَبْصَارَهُمْ يُفْتُونَ بِالْمُتْعَةِ، يُعَرِّضُ بِرَجُلٍ فَنَادَاهُ، فَقَالَ: إِنَّكَ لَجِلْفٌ جَافٍ فَلَعَمْرِي لَقَدْ كَانَتِ الْمُتْعَةُ تُفْعَلُ عَلَى عَهْدِ إِمَامِ الْمُتَّقِينَ- يُرِيدُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ ابْنُ الزُّبَيْرِ: فَجَرِّبْ بِنَفْسِكَ فَوَاللهِ لَئِنْ فَعَلْتَهَا لَأَرْجُمَنَّكَ بِأَحْجَارِكَ،

‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) মক্কায় (ভাষণ দিতে) দঁাড়িয়ে বললেন, কিছু লোক এমন আছে আল্লাহ তা‘আলা যেমন তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন তেমনি অন্তরকেও অন্ধ করে দিয়েছেন। তারা মুত‘আর পক্ষে ফৎওয়া দেয়। এ কথা বলে তিনি এক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করলেন। সে তঁাকে ডেকে বলল, তুমি একটি অসভ্য ও কান্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি। আমার জীবনের শপথ! ইমামুল মুত্তাক্বীন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে মুত‘আহ প্রচলিত ছিল। ইবনু যুবায়র (রাঃ) তঁাকে বললেন, আপনি নিজে একবার করে দেখুন। আল্লাহর শপথ! আপনি যদি তা (মুত‘আহ) করেন তাহ’লে পাথর দিয়েই আপনাকে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) করব।[12]

মুহাজির ও আনছার :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় মুসলিমদের মাঝে দু’টি শ্রেণী ছিল। তাহ’ল মুহাজির ও আনছার। তাদের পরিচয় বা নাম মুসলিম থাকা সত্ত্বেও স্বয়ং আল্লাহ রাববুল আলামীন ও তঁার রাসূল (ছাঃ) তৎকালীন মুসলিমদেরকে বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘মুহাজি’র ও ‘আনছার’ নামে অভিহিত করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ- ‘প্রথম দিকের মুহাজির ও আনছারগণ এবং পরে যারা তাদের অনুসারী হয়েছে নিষ্ঠার সাথে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তঁার প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা’ (তওবা ৯/১০০)। তিনি আরো বলেন, لَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ- ‘নিশ্চিতভাবে আল্লাহ দয়াশীল হয়েছেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনছারদের প্রতি, যারা দুঃসময়ে তার অনুসারী হয়েছিল। যখন তাদের এক দলের অন্তর টলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি দয়াপরবশ হ’লেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়াময়’ (তওবা ৯/১১৭)। অন্যত্র তিনি বলেন,النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ، ‘নবী (মুহাম্মাদ) মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তঁার স্ত্রীগণ তাদের মা। আর আল্লাহর কিতাবে রক্ত সম্পর্কীয়গণ পরস্পরের অধিক নিকটবর্তী অন্যান্য মুমিন ও মুহাজিরদের চাইতে’ (আহযাব ৩৩/৬)

আল্লাহ আরো বলেন,لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلاً مِنَ اللهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ- ‘(ফাই-এর সম্পদ) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য। যারা তাদের ঘর-বাড়ি ও মাল-সম্পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তঁার রাসূলকে সাহায্য করে। এরাই হ’ল সত্যবাদী’ (হাশর ৫৯/৮)

এ বিষয়ে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহ : আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,فِى غَدَاةٍ بَارِدَةٍ وَالْمُهَاجِرُونَ وَالأَنْصَارُ يَحْفِرُونَ الْخَنْدَقَ فَقَالَ : اللَّهُمَّ إِنَّ الْخَيْرَ خَيْرُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ، فَأَجَابُوا نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدَا عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِينَا أَبَدَا- ‘নবী করীম (ছাঃ) শীতের এক সকালে বের হ’লেন। মুহাজির ও আনছাররা তখন খন্দক খনন করছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আখেরাতের কল্যাণই সত্যিকারের কল্যাণ। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। এর জবাবে তারা বলল, আমরা তারাই, যারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর হাতে বায়‘আত করেছি মৃত্যু অবধি জিহাদ করার জন্য।[13]

বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, اسْتُصْغِرْتُ أَنَا وَابْنُ عُمَرَ يَوْمَ بَدْرٍ وَكَانَ الْمُهَاجِرُونَ يَوْمَ بَدْرٍ نَيِّفًا عَلَى سِتِّينَ وَالأَنْصَارُ نَيِّفًا وَأَرْبَعِينَ وَمِائَتَيْنِ- ‘বদরের দিন আমাকে ও ইবনু ওমরকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক গণ্য করা হয়েছিল, এ যুদ্ধে মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ষাটের বেশী এবং আনছারদের সংখ্যা ছিল দু’শত চল্লিশেরও অধিক।[14]

গায়লান ইবনু জারীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,قُلْتُ لأَنَسٍ أَرَأَيْتَ اسْمَ الأَنْصَارِ كُنْتُمْ تُسَمَّوْنَ بِهِ أَمْ سَمَّاكُمُ اللهُ قَالَ بَلْ سَمَّانَا اللهُ كُنَّا نَدْخُلُ عَلَى أَنَسٍ فَيُحَدِّثُنَا مَنَاقِبَ الأَنْصَارِ وَمَشَاهِدَهُمْ، ‘আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের আনছার নামকরণ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি? এ নাম কি আপনারা করেছেন, না আল্লাহ আপনাদের এ নামকরণ করেছেন? আনাস (রাঃ) বললেন, বরং আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এ নামকরণ করেছেন। (গায়লান (রহঃ) বলেন,) আমরা যখন আনাস (রাঃ)-এর নিকট যেতাম, তখন তিনি আমাদেরকে আনছারদের গুণাবলী ও কার্যাবলী বর্ণনা করে শুনাতেন’।[15]

বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,سَمِعْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : الأَنْصَارُ لاَ يُحِبُّهُمْ إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يُبْغِضُهُمْ إِلاَّ مُنَافِقٌ فَمَنْ أَحَبَّهُمْ أَحَبَّهُ اللهُ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ أَبْغَضَهُ اللهُ- ‘আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন ছাড়া আনছারদেরকে কেউ ভালবাসে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তঁাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না। যে ব্যক্তি তঁাদেরকে ভালবাসবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভালবাসবেন আর যে ব্যক্তি তঁাদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঘৃণা করবেন’।[16]

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,لَمَّا قَدِمَ الْمُهَاجِرُونَ الْمَدِينَةَ مِنْ مَكَّةَ وَلَيْسَ بِأَيْدِيهِمْ يَعْنِى شَيْئًا- وَكَانَتِ الأَنْصَارُ أَهْلَ الأَرْضِ وَالْعَقَارِ فَقَاسَمَهُمُ الأَنْصَارُ عَلَى أَنْ يُعْطُوهُمْ ثِمَارَ أَمْوَالِهِمْ كُلَّ عَامٍ وَيَكْفُوهُمُ الْعَمَلَ وَالْمَئُونَةَ، ‘মক্কা হ’তে মদীনায় হিজরতের সময় মুহাজিরদের হাতে কোন কিছু ছিল না। অন্যদিকে আনছারগণ ছিলেন জমি ও ভূসম্পত্তির অধিকারী। তাই আনছারগণ এই শর্তে মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিলেন যে, প্রতি বছর তারা (আনছারগণ)-এর উৎপন্ন ফল ও ফসলের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ তাদের (মুহাজিরদের) দিবেন। আর তারা এ কাজে শ্রম দিবে ও দায়দায়িত্ব নিবে’।[17]

ছাহাবী :

কুরআনুল কারীমে ছাহাবী শব্দের উল্লেখ পাওয়া না গেলেও বহু ছহীহ হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময়কার মুসলিমদেরকে ছাহাবী বলা হয়েছে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِى فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ- ‘তোমরা আমার ছাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি ওহোদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ বা অর্ধমুদ এর সমপরিমাণ ছওয়াব হবে না’।[18]

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي- ‘বনু ইস্রাঈল ৭২ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে’।[19]

আবু ইদরীস আইযুল্লাহ হ’তে বর্ণিত, উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) যিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে এবং আকাবার রাতে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীদের একটি দলকে লক্ষ্য করে বললেন, এসো তোমরা আমার কাছে একথার উপর বায়‘আত কর যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, তোমরা চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না; তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, কারো উপর অপবাদ আরোপ করবে না যা তোমরা নিজ হাতে বানিয়ে নাও, তোমরা নেক কাজে আমার নাফরমানী করবে না, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এসব শর্ত পূরণ করে চলবে সে অবশ্যই আল্লাহর নিকট তার প্রতিদান পাবে। আর যে এসবের কোন কিছুতে লিপ্ত হয় এবং তাকে এ কারণে দুনিয়াতে শাস্তি দেয়া হয়, তবে এ শাস্তি তার প্রতি কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এসবের কোনটিতে লিপ্ত হয় আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন, তবে তার ব্যাপারটি আল্লাহ তা‘আলার ওপর ন্যস্ত। তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন। উবাদাহ (রাঃ) বলেন, আমিও এসব শর্তের উপর নবী করীম (ছাঃ)-এর হাতে বায়‘আত করেছি’।[20]

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, خَرَجَ عَامَ الْفَتْحِ فِي رَمَضَانَ، فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ الْكَدِيدَ ثُمَّ أَفْطَرَ قَالَ: وَكَانَ صَحَابَةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّبِعُونَ الْأَحْدَثَ فَالْأَحْدَثَ مِنْ أَمْرِهِ- ‘মক্কা বিজয়ের বছর রামাযান মাসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিয়ামরত অবস্থায় সফরে বের হ’লেন। অতঃপর কাদীদ নামক স্থানে পৌঁছাবার পর তিনি ছওম ভেঙ্গে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে যখনই কোন নতুন বিষয় প্রকাশ পেত, তঁার ছাহাবীগণ তা অনুসরণ করতেন’।[21]

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ، أَقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ صَحَابَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: فُلاَنٌ شَهِيدٌ فُلاَنٌ شَهِيدٌ حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ، فَقَالُوا: فُلاَنٌ شَهِيدٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلاَّ، إِنِّي رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ فِي بُرْدَةٍ غَلَّهَا أَوْ عَبَاءَةٍ- ‘খায়বার যুদ্ধের দিন নবী করীম (ছাঃ)-এর একদল ছাহাবী বলতে লাগলেন অমুক অমুক শহীদ হয়েছেন। অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে তঁারা বললেন, সেও শহীদ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কখনই না। গণীমতের মাল থেকে চাদর আত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি’।[22]

পর্যালোচনা :

উল্লেখিত আয়াতে কারীমা ও হাদীছ সমূহ হ’তে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমানদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলে করীম (ছাঃ) শুধু মুসলিম নামেই অভিহিত করেননি। বরং মুসলিম, মুমিন, মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির, ছাহাবী স্থান-কাল পাত্রভেদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন। এতে বুঝা যায়, আমাদের পরিচয় সর্বক্ষেত্রে মুসলিমই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং মুমিন, মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির ও ছাহাবী এ পরিচয়গুলো ‘মুসলিম’ শব্দের চেয়ে অনেক বেশী অর্থবহ এবং আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রিয়তর শব্দ। মূলতঃ মুমিন, মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির, ছাহাবী প্রতিটি শব্দের মধ্যেই ‘মুসলিম’ শব্দটি উহ্য বা লুক্কায়িত আছে। মুমিন ব্যক্তি মুসলিম তো বটেই বরং তিনি একনিষ্ঠ মুসলিম। অর্থাৎ সকল মুমিনই মুসলিম। কিন্তু সকল মুসলিম মুমিন নয়। বিষয়টিকে আমরা ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ ও ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করতে পারি। মুসলিম রাষ্ট্র বলা হয়, ‘যে রাষ্ট্রে মুসলিমদের সংখ্যা বেশী কিন্তু ইসলামী শরী‘আতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না’। যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি। পক্ষান্তরে ইসলামী রাষ্ট্র হ’ল যে মুসলিম দেশ ইসলামী শরী‘আতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। যেমন- সঊদী আরব। সকল মুত্তাক্বী, আনছার, মুহাজির, ছাহাবী মুসলিম তো বটেই বরং তারা ১ম সারির মুসলিম। কিন্তু সকল মুসলিম মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির বা ছাহাবী নয়। অনুরূপভাবে আহলেহাদীছগণ মুসলিম তো বটেই বরং তারা ১ম সারির মুসলিম।

সর্বক্ষেত্রে মুসলিম পরিচয় দিলে সমস্যা কি?

অতি আবেগী মুসলমানগণ প্রশ্ন তুলতে পারেন সর্বক্ষেত্রে মুসলিম পরিচয় দিতে সমস্যা কি? তাদের প্রশ্নের জবাবে আমরা নিম্নরূপ বিষয়গুলি উল্লেখ করছি :

১. যদি সর্বক্ষেত্রে মুসলিম বলে পরিচয় দিলেই যথেষ্ট হ’ত তবে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বক্ষেত্রেই মুসলমানদেরকে মুসলিম বলেই সম্বোধন করতেন। কিন্তু তঁারা স্থান-কাল-পাত্রভেদে মুসলমানদেরকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন। অতএব সর্বক্ষেত্রে মুসলিম পরিচয় দিতে হবে, অন্য কোন বৈশিষ্ট্যগত নামে পরিচয় দেয়া যাবে না এমন দাবী বা আক্বীদা পোষণ আল্লাহ ও তঁার রাসূল (ছাঃ)-এর রীতিনীতির বিরুদ্ধাচরণ। কেননা তঁারা সর্বক্ষেত্রেই মুসলিম শব্দ ব্যবহার করেননি।

২. এ উম্মতের ৭৩ ফিরক্বার ৭২ ফিরক্বা জাহান্নামী। তারাও মুসলিম। অর্থাৎ শী‘আ, খারেজী, মু‘তাযেলী, ক্বাদারিয়া, জাবারিয়া, জাহামিয়্যা, আশ‘আরিয়া, মুজাসসিমা পথভ্রষ্ট এ সকল সম্প্রদায়ের সকলেই মুসলিম। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,تَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، ‘আমার উম্মত ৭৩ ফিরক্বায় বিভক্ত হবে। তাদের সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি ফিরক্বা ব্যতীত’।[23]

উক্ত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) تَفْتَرِقُ أُمَّتِي ‘আমার উম্মাত বিভক্ত হবে’ বলেছেন। অতএব সর্বক্ষেত্রে মুসলিম পরিচয় দিলে স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যাবে আপনি কোন শ্রেণীর মুসলিম। শী‘আ, খারেজী, মু‘তাযেলী, জাবারিয়া, ক্বাদারিয়া ও মাযহাবী? নাকি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের পদাংক অনুসরণকারী ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ? তথা আহলেহাদীছ। তাই মুসলিম সমাজে নিজেদেরকে ‘আহলেহাদীছ’ তথা কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসাবে পরিচয় দিলে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, আমরা মুসলিম তো বটেই, বরং আমরা ফিরক্বায়ে নাজিয়াহর অন্তর্ভুক্ত একনিষ্ঠ মুসলিম।

৩. প্রত্যেক নবীর উম্মত মুসলিম। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذْ أَوْحَيْتُ إِلَى الْحَوَارِيِّينَ أَنْ آمِنُوا بِي وَبِرَسُولِي قَالُوا آمَنَّا وَاشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُونَ- ‘আর (হে ঈসা! তুমি স্মরণ কর) যখন আমি হাওয়ারীদের অন্তরে জাগ্রত করে দিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তখন তারা বলল, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, নিশ্চয়ই আমরা মুসলিম’ (মায়েদাহ ৫/১১১)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَإِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ- ‘যখন তাদের নিকট এটি পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে আমরা এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এটা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে আগত সত্যবাণী। আর আমরা ইতিপূর্বেও মুসলিম ছিলাম’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৩)। তিনি আরো বলেন,فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُمْ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى اللهِ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ- ‘(নূহ বলল) এরপরেও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে মনে রেখ, আমি তোমাদের কাছে কোনরূপ বিনিময় চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আর আমি তো আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত থাকি’ (ইউনুস ১০/৭২)

মূলতঃ ‘মুসলিম’ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। সুতরাং যে সকল স্থানে মুসলিমও রয়েছে এবং অমুসলিমও রয়েছে সে সকল স্থানে পরিচয় দানের ক্ষেত্রে মুসলিম হিসাবে পরিচয় দেয়া উচিত এবং যে সকল স্থানে শুধু মুসলিম রয়েছে সে সকল স্থানে নিজকে ‘আহলেহাদীছ’ হিসাবে পরিচয় দেয়া উচিত। মুসলমানদের মধ্যে যেহেতু ৭৩ ফিরক্বা হয়েই গেছে সেহেতু নাজী ফিরক্বা হিসাবে নিজকে ‘আহলেহাদীছ’ হিসাবে পরিচয় দেয়াই বাঞ্ছনীয়।

কেন আহলেহাদীছ বলে পরিচয় দিতে হবে?

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী হিসাবে তঁার মৃত্যুর পর ৩৭ হিজরী হ’তে একের পর এক ভ্রান্ত ফিরক্বার আবির্ভাব হ’তে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর মাত্র ২৫ বছর পর অর্থাৎ ৩৭ হিজরীতে আত্মপ্রকাশ করে মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে ভ্রান্ত ফিরক্বা খারেজী ও শী‘আ। প্রথম শতাব্দী হিজরীর শেষ দিকে উদ্ভব হয় ক্বাদারিয়া, জাবারিয়া, মুরজিয়া। অতঃপর মু‘তাযিলা প্রভৃতি ভ্রান্ত দলসমূহের।[24] এরপর উৎপত্তি ঘটে জাহমিয়া, আশ‘আরিয়া, রাফেযিয়া, মুশাববিহা প্রভৃতি ভ্রান্ত দলের। এ সকল ভ্রান্ত দলের ছড়াছড়িতে একনিষ্ঠ মুসলিমগণ নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ বলে পরিচয় দিতে থাকেন। কালক্রমে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ হানাফী, শাফেঈ, মালেকী, হাম্বলী এভাবে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় একদল একনিষ্ঠ মুসলিম মাযহাবী গেঁাড়ামী থেকে মুক্ত থেকে নিজেদেরকে ‘আহলেহাদীছ’ তথা কুরআন ও হাদীছের একনিষ্ঠ অনুসারী হিসাবে পরিচয় দিতে থাকেন। আহলেহাদীছগণ মূলতঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর পদাংক অনুসরণকারী ‘ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ’। সে হিসাবে আহলেহাদীছদের উদ্ভব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময়কাল থেকেই।

বর্তমানে এদেশে ‘হানাফী ও আহলেহাদীছ’ এ দু’শ্রেণীর লোক রয়েছে। এদেশের হানাফীগণ দেওবন্দী, ব্রেলভী, রেজভী, কাদেরিয়া, চিশতিয়া, মুজাদ্দেদিয়া, নকশবন্দিয়া, মাইজভান্ডারী, মাযারপূজারী এভাবে বিভিন্ন দলে বিভক্ত। এমন পরিস্থিতি নিজেদের শুধু মুসলিম বলে পরিচয় দিলে স্বভাবতই প্রশ্ন থেকে যাবে আপনি কোন মতাদর্শের মুসলিম? কেননা উপরিউক্ত সকল দলই মুসলিম হিসাবে গণ্য। আর যদি ‘আহলেহাদীছ’ হিসাবে পরিচয় দেয়া হয় তাহ’লে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় উল্লিখিত যাবতীয় দলের বিপরীতে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর পদাংক অনুসরণকারী একনিষ্ঠ মুসলিম।

আহলেহাদীছ নামকরণের দলীল কোথায়?

অনেকেই প্রশ্ন করেন মুসলিম, মুমিন, মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির, ছাহাবী এ নামগুলো কুরআনুল কারীমের আয়াত ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এগুলোর কোন একটিকে গ্রহণ না করে নতুন করে ‘আহলেহাদীছ’ নাম গ্রহণ করেছেন। ‘আহলেহাদীছ’ নামকরণ শরী‘আতের দলীল দ্বারা সাব্যস্ত কি?

জবাব : ১. আমাদের মূল নাম মুসলিম। আর মুমিন, মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির, ছাহাবী, তাবেঈ, তাবা তাবেঈ এ নামগুলো বৈশিষ্ট্যগত নাম। কালের পরিক্রমায় পরিচয় সুস্পষ্ট করণের লক্ষ্যে একেক সময় একেক নাম ব্যবহার হয়ে আসছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাহচর্য লাভে ধন্য মুসলিমগণ ‘ছাহাবী’ নামে অভিহিত। প্রশ্ন হ’ল তঁাদের নাম শুধু মুসলিম হ’লেই তো চলতো। তাহ’লে ছাহাবী এ বৈশিষ্ট্যগত নামের কি প্রয়োজন ছিল? হ্যঁা প্রয়োজন এজন্যই ছিল যে, ক্বিয়ামত অবধি আগত সকল মুসলিম থেকেও তাদের পৃথক মর্যাদা রয়েছে’।

আবার ছাহাবীদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টিকোণে ছাহাবীগণ তিন বিশেষিত নামে অভিহিত। যেমন (১) আনছার (২) মুহাজির (৩) সাধারণ ছাহাবী। ছাহাবীদের একদল এমন ছিলেন যঁারা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছেন। তাদেরকে আলাদাভাবে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে ‘মুহাজির’ তথা হিজরতকারী। আবার মদীনায় যেসকল ছাহাবী মুহাজিরদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন এবং আশ্রয় দিয়েছেন তঁারা ‘আনছার’ তথা সাহায্যকারী নামে অভিহিত হয়েছেন। এ দু’শ্রেণীর বাইরে যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন তঁারা শুধু ‘ছাহাবী’ নামে খ্যাত। মূলতঃ আনছার-মুহাজির সকলেই ছাহাবী এবং সকল ছাহাবীই মুসলিম।

অপরদিকে যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাক্ষাৎ পাননি কিন্তু ঈমানের সাথে ছাহাবীদের সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন তাদেরকে বলা হয় ‘তাবেঈ’। আর যারা তাবেঈদের সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন তাদেরকে বলা হয় ‘তাবা-তাবেঈ’।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হ’ল যে, ছাহাবী, আনছার-মুহাজির, তাবেঈ, ‘তাবা-তাবেঈ’ তারা সকলেই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও সময়ের প্রয়োজনে তাদের আলাদা আলাদা মর্যাদা বুঝানোর জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যগত নামগুলো সর্বসম্মতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তদ্রূপ মুসলমানদের মধ্যকার ভ্রান্ত দল, ভ্রান্ত আক্বীদা-মানহাযের লোকদের থেকে সরাসরি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারীদের বুঝানোর জন্যই আহলেহাদীছ, আছহাবুল হাদীছ, সালাফী বৈশিষ্ট্যগত নাম হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ছাহাবী, আনছার-মুহাজির, তাবেঈ, তাবা-তাবেঈ নামগুলো নির্দিষ্ট সময়ের নির্দিষ্ট লোকদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। বিধায় এ নামগুলো বর্তমান যামানার মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। উক্ত আলোচনা থেকে আরও প্রমাণিত হ’ল যে, বৈশিষ্ট্যগত নাম পরিবর্তনশীল।

এবার থাকল মুমিন ও মুত্তাক্বী নাম দু’টো। এ নাম দু’টোও নিজের পরিচয় দানের জন্য প্রযোজ্য নয় এ কারণে যে, এ নাম দু’টো প্রশংসা জ্ঞাপক শব্দ। যা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খঁাটি মুসলমানদের প্রশংসায় ব্যবহার করেছেন। নিজের ক্ষেত্রে নিজে প্রশংসাজ্ঞাপক নাম ব্যবহার করা বৈধ নয়। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন,فَلاَ تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى- ‘তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই সম্যক জানেন মুত্তাক্বী কে’ (নাজম ৫৩/৩২)

২. আহলেহাদীছ নামকরণের বিষয়ে সরাসরি হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যায়। প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কোন যুবককে দেখলে বলতেন,مَرْحَبًا بِوَصِيَّةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُوَسِّعَ لَكُمْ فِي الْمَجْلِسِ وَأَنْ نُفَهِّمَكُمُ الْحَدِيثَ فَإِنَّكُمْ خُلُوْفُنَا وَأَهْلُ الْحَدِيْثِ بَعْدَنَا، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অছিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাদেরকে ‘স্বাগত’ জানাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে তোমাদের জন্য মজলিস প্রশস্ত করার ও তোমাদেরকে হাদীছ বুঝাবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। কেননা তোমরাই আমাদের পরবর্তী বংশধর ও পরবর্তী ‘আহলুল হাদীছ’।[25]

৩. আহলেহাদীছ বর্তমান যুগে আবিষ্কৃত কোন মত, পথ বা পদ্ধতির নাম নয়। বরং এটা ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের যুগ থেকে চলে আসা একটি বৈশিষ্ট্যগত ও পরিচিতিমূলক নাম।

সাহায্যপ্রাপ্ত দল, নাজাতপ্রাপ্ত ফিরক্বা এবং হক-এর অনুসারীদের বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘আহলেহাদীছ’। এরা ঐ সমস্ত মহান ব্যক্তি, যারা সর্বযুগে ছিলেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى مَنْصُورِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُوْمَ السَّاعَةُ- ‘আমার উম্মতের মধ্যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি দল (আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হ’তে) সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হ’তে থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[26] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন,إِنْ لَّمْ تَكُنْ هَذِهِ الطَّائِفَةُ الْمَنْصُورَةُ أَصْحَابَ الْحَدِيثِ فَلاَ أَدْرِي مَنْ هُمْ؟ ‘সাহায্যপ্রাপ্ত এই দলটি যদি আছহাবুল হাদীছ (আহলেহাদীছ) না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা’?[27]

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন,إِذَا رَأَيْتُ رَجُلاً مِّنْ أَصْحَابِ الْحَدِيْثِ فَكَأَنِّيْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيًّا- ‘আমি যখন কোন আহলেহাদীছকে দেখি তখন যেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জীবন্ত দেখি’।[28]

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) আরও বলেছেন, ‘আমার নিকট ঐ ব্যক্তিই আহলেহাদীছ, যিনি হাদীছের উপর আমল করেন’।[29] ইমাম বুখারীর উস্তায আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) (মৃতঃ ২৩৪ হি.) হক্বপন্থী দলের পরিচয় প্রদানে বলেছেন, هُمْ أَهْلُ الْحَدِيْثِ ‘তারা হ’লেন আহলুল হাদীছ’।[30]

ইমাম বুখারী (রহঃ) ও (মৃঃ ২৫৬ হি.) বলেছেন,يَعْنِى أَهْلُ الْحَدِيْثِ -এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘আহলেহাদীছ’।[31]

ইমাম আহমাদ ইবনু সিনান আল-ক্বাত্ত্বান (রহঃ) বলেন,لَيْسَ فِي الدُّنْيَا مُبْتَدِعٌ إِلاَّ وَهُوَ يُبْغِضُ أَهْلَ الْحَدِيثِ، ‘দুনিয়াতে এমন কোন বিদ‘আতী নেই যে, আহলেহাদীছদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না’।[32]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) (মৃঃ ৭৫১ হি.) স্বীয় ‘ক্বাছীদা নুনিয়া’তে লিখেছেন,يا مبغضا أهل الحديث وشاتما + أبشر بعقد ولاية الشيطان- ‘হে আহলেহাদীছদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ও গালি প্রদানকারী! তুমি শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের সু-সংবাদ গ্রহণ কর’।[33]

হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) সূরা বণু ইসরাঈলের ৭১ আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,هَذَا أَكْبَرُ شَرَفٍ لِأَصْحَابِ الْحَدِيثِ؛ لِأَنَّ إِمَامَهُمُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- ‘আহলেহাদীছদের জন্য এটি সবচেয়ে বড় মর্যাদা যে, তাদের ইমাম হ’লেন নবী করীম (ছাঃ)’।[34]

জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহঃ)।[35] ইবনু মুফলিহ আল-মাক্বদেসী (রহঃ) বলেছেন,أَهْلُ الْحَدِيثِ هُمْ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ الْقَائِمُونَ عَلَى الْحَقِّ- ‘আহলে হাদীছরাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল’। যারা হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন’।[36]

উল্লিখিত আলোচনা হ’তে প্রতীয়মান হয় যে, ‘আহলেহাদীছ’ নতুন সৃষ্ট কোন নাম নয়। এটা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে সালাফে ছালেহীনের নিকট অতি প্রিয় ও পসন্দনীয় নাম। যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত, কুসংস্কার, ভ্রান্ত মতবাদ থেকে মুক্ত নাজাতপ্রাপ্ত দলের নাম ‘আহলেহাদীছ’। যারা ক্বিয়ামত অবধি হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে ইনশাআল্লাহ। বিদ‘আতী ও ভ্রান্ত খারেজী মতাদর্শের লোকেরাই কেবল ‘আহলেহাদীছ’ নামকে অপসন্দ করে এবং আহলেহাদীছদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।

আহলেহাদীছ বিভিন্ন নামে :

আহলেহাদীছগণ বিভিন্ন হাদীছের কিতাব ও বিশ্বস্ত ফিক্বহ গ্রন্থসমূহে ‘আছহাবুল হাদীছ’ আহলুস সুন্নাহ, আহলুস সুন্নাতে ওয়াল জামা‘আত, আহলুল হক, আহলুল আছার, মুহাদ্দেছীন, মুহাম্মাদী, আছারী প্রভৃতি নামে কথিত হয়েছেন। সালাফে ছালেহীনের অনুসারী হওয়ার কারণে তঁারা ‘সালাফী’ হিসাবেও পরিচিত।[37] আহলেহাদীছগণ মিসর, সূদান, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে আনছারুস সুন্নাহ, সঊদী আরব ও কুয়েত প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে ‘সালাফী, ইন্দোনেশিয়াতে ‘জামা‘আতে মুহাম্মাদিয়্যাহ’ এবং ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ প্রভৃতি এলাকায় ‘মুহাম্মাদী’ ও ‘আহলেহাদীছ’ নামে পরিচিত।[38]

উপসংহার :

একই ব্যক্তির পরিচয় স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ভিন্নতর হ’তে পারে। কোন লোক নিজ উপযেলার গন্ডির মধ্যে থাকাকালে তার বাড়ী কোথায় জিজ্ঞেস করলে নিজের গ্রামের নাম বলে। ঐ একই ব্যক্তি নিজ উপযেলার গন্ডি পেরিয়ে যেলার গন্ডিতে অবস্থানকালে তার বাড়ী কোথায় জিজ্ঞেস করলে নিজ উপযেলার নাম বলে থাকে। ঐ ব্যক্তি অন্য যেলায় অবস্থানকালে তার বাড়ী কোথায় জিজ্ঞেস করলে নিজ যেলার নাম বলে থাকে। ঐ ব্যক্তি বিদেশে অবস্থানকালে বাড়ী কোথায় জিজ্ঞেস করলে নিজ দেশের নাম বলে থাকে। এটাই হ’ল বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বরং এর বিপরীত হ’লে লোকে তাকে পাগল আখ্যা দেবে। অর্থাৎ সে তার উপযেলার গন্ডিতে অবস্থানকালে তার বাড়ী কোথায় জিজ্ঞেস করা হ’লে যদি উত্তরে বলে ‘বাংলাদেশ’, তাহ’লে লোকেরা হাসবে ও পাগল বলবে। আবার বিদেশে অবস্থানকালে তার বাড়ী কোথায় জিজ্ঞেস করা হ’লে যদি সে তার গ্রামের নাম বলে তবুও লোকেরা হাসবে এবং তাকে পাগল মনে করবে। কেননা তার দুই উত্তরের কোনটাতেই তার সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় না।

অনুরূপভাবে আমাদের জাতীয় বা ধর্মীয় পরিচয় হ’ল মুসলিম। যে স্থানে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকবে, সেখানে যদি ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয়, তাহ’লে বলতে হবে মুসলিম। যেখানে শী‘আ, খারেজী, মু‘তাযেলী, ক্বাদারিয়া, জাবারিয়া ইত্যাদি ভ্রান্ত ফিরক্বার লোকের সমাগম থাকবে সেখানে আমাদের পরিচয় হবে ‘আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’। আর যেখানে বিভিন্ন মাযহাবী লোকের সমাগম থাকবে সেখানে আমাদের পরিচয় হবে ‘আহলেহাদীছ’। অর্থাৎ আমাদের ধর্মীয় পরিচয় হ’ল মুসলিম। আর আক্বীদা ও মানহাজ হ’ল ‘আহলেহাদীছ’। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ মুসলিম সমাজে অবস্থানকালে নিজের পরিচয় ‘মুসলিম’ বললে হাস্যকর হবে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় লোকদের মাঝে অবস্থানকালে নিজের পরিচয় ‘আহলেহাদীছ’ বললেও হাস্যকর হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন-আমীন!

উপাধ্যক্ষ, বেলটিয়া কামিল মাদ্রাসা, জামালপুর।


[1]. বুখারী হা/১০, ৬৪৮৪; মুসলিম হা/৪০; মিশকাত হা/৬।

[2]. বুখারী হা/৩৯১-৯৩; মিশকাত হা/১৩।

[3]. বুখারী হা/৪৮, ৬০৪৪; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪।

[4]. বুখারী হা/৫৭, ৫২৪; মুসলিম হা/৫৬; মিশকাত হা/৪৯৬৭।

[5]. বুখারী হা/৬১, ৭২; মুসলিম হা/২৮১১; আহমাদ হা/৬৪৭৭।

[6]. মুসলিম হা/৫৩৭, ‘মাসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৩০৩।

[7]. বুখারী হা/৮৪৬, ১০৩৮, ৪১৪৭; মুসলিম হা/৭১; মিশকাত হা/৪৫৯৬।

[8]. তিরমিযী হা/২৬২৭; নাসাঈ হা/৪৯৯৫; মিশকাত হা/৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭১০।

[9]. বুখারী হা/২৪৭৫, ৫৫৭৮; মুসলিম হা/৫৭; মিশকাত হা/৫৩।

[10]. আবু দাঊদ হা/৪০৮৯; মিশকাত হা/১১১, সনদ ছহীহ।

[11]. বুখারী হা/৩৭৫, ৫৮০১; মুসলিম হা/২০৭৫; মিশকাত হা/৭৫৯।

[12]. মুসলিম হা/১৪০৬, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।

[13]. বুখারী হা/৭২০১, ‘আহকাম’ অধ্যায়।

[14]. বুখারী হা/৩৯৫৬, ‘মাগাযী’ অধ্যায়।

[15]. বুখারী হা/৩৭৭৬, ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়।

[16]. বুখারী হা/৩৭৮৩, ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৭৫; মিশকাত হা/৬২০৭।

[17]. বুখারী হা/২৬৩০, ৩১২৮; মুসলিম হা/১৭৭১।

[18]. বুখারী হা/৩৬৭৩; মুসলিম হা/২৫৪০; মিশকাত হা/৫৯৯৮।

[19]. তিরমিযী হা/২৬৪১; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২; আবুদাঊদ হা/৪৫৯৬; মিশকাত হা/১৭১; ছহীহাহ হা/১৩৪৮।

[20]. বুখারী হা/৩৮৯২ ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়।

[21]. মুসলিম হা/১১১৩ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়।

[22]. মুসলিম হা/১১৪ ‘ঈমান’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৪০৩৪।

[23]. তিরমিযী হা/২৬৪১; আবূ দাঊদ হা/৪৫৯৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২; ছহীহাহ হা/১৩৪৮।

[24]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ‘ফিরক্বা নাজিয়াহ’ (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৪৩৪ হি./২১১৩ইং), ৮ পৃ.।

[25]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/১৭৪১; ইমাম আবু বকর আহমাদ বিন আলী আল-খতীব বাগদাদী, ‘শায়খুল আছহাবিল হাদীছ’ লাহোর: রিপন প্রেস, তাবি), ১২ পৃ.; গৃহীত, মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আহলেহাদীছ আন্দোলন, উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ, ৬৬ পৃ.।

[26]. ইবনু মাজাহ হা/৬; তিরমিযী হা/২১৯২, সনদ ছহীহ।

[27]. ইমাম হাকেম, মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, ২ পৃ., সনদ হাসান।

[28]. শারফু আছহাবিল হাদীছ হা/৮৫।

[29]. খতীব বাগদাদী, আল-জামে‘ ১/৪৪ পৃ.।

[30]. শারফু আছহাবিল হাদীছ ৫ পৃ.; তিরমিযী হা/২২২৯, সনদ ছহীহ।

[31]. খতীব বাগদাদী, মাসআলাতুল ইহতিজাজ বিশ শাফেঈ, ৪৭ পৃ.।

[32]. মা‘রিফাতূ উলূমিল হাদীছ হা/৬, ৪ পৃ.।

[33]. আল-কাফিয়াতুশ শাফিয়াহ ফিল ইনতিছার লিল ফিরক্বাতিন নাজিয়াহ ১৯৯ পৃ.।

[34]. তাফসীর ইবনু কাছীর, সূরা বনী ইসরাঈলের ৭১ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[35]. তাদরীবুর রাবী ২/১২৬।

[36]. আল-আদাবুল শারঈয়াহ ১/২১১ পৃ.।

[37]. ইবরাহীম মীর শিয়ালকোটি, তারীখে আহলেহাদীছ (নয়াদিল্লী : মাকতাবা তাওহীদ ২য় সংস্করণ ১৯৮৩ ইং), ১২৮ পৃ.।

[38]. আল-ই‘তিছাম উর্দু সাপ্তাহিক (লাহোর : শীশ মহল রোড ৪০বর্ষ ২৫ সংখ্যা আহলেহাদীছ আন্দোলন (থিসিস), ৬৩ পৃ.।






বিষয়সমূহ: বিবিধ
নিয়মের রাজত্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
কুরআন তেলাওয়াতের আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
বিতর্কের ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় - আসাদ বিন আব্দুল আযীয
আদর্শ সমাজ গঠনে সালামের ভূমিকা - মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম
আতিথেয়তার আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
যুবসমাজের অধঃপতন : কারণ ও প্রতিকার (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আধুনিক বিজ্ঞানে ইসলামের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
মুসলিম উম্মাহর পদস্খলনের কারণ (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মীযানুর রহমান মাদানী
আকাশের দরজাগুলো কখন ও কেন খোলা হয়? (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
শিশুদের চরিত্র গঠনে ‘সোনামণি’ সংগঠনের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
আরও
আরও
.