২৪ ও ২৫শে আগস্ট, বৃহস্পতি ও শুক্রবার

স্থান : নওদাপাড়া, রাজশাহী।

সকাল ৯-টায় ১ম অধিবেশনের পরিচালক কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইনের পরিচালনায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে হিফয বিভাগের পরিচালক হাফেয লুৎফর রহমানের অর্থ সহ কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। অতঃপর আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য মুহাম্মাদ রাক্বীবুল ইসলাম (মেহেরপুর) ও তার সাথীদের সম্মিলিত কণ্ঠে জাগরণী পরিবেশন করা হয়। এরপর স্বাগত ভাষণ পেশ করেন কর্মী সম্মেলনের আহবায়ক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম।

অতঃপর বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য শুরু হয়। প্রথমে (১) ‘কর্মীদের তাক্বওয়া অর্জনের গুরুত্ব’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুররুল হুদা। এরপর (২) ‘সমাজ বিপ্লবের ধারা’ বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের উপর ১০ জনের এক একটি গ্রুপে সামষ্টিক পাঠ অনুষ্ঠিত হয়, যা পরিচালনা করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন, শূরা সদস্য মুহাম্মাদ তরীকুয্যামান, জামালপুর-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলার সাধারণ সম্পাদক ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী ও ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম। সামষ্টিক পাঠ শেষে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথম স্থান অধিকার করেন আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (সাতক্ষীরা), ২য় স্থান আশরাফুল আলম (রংপুর), ৩য় স্থান অধিকার করেন যৌথভাবে মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম (বগুড়া) ও আব্দুছ ছামাদ (কুষ্টিয়া-পশ্চিম)। একই সময়ে মারকাযের মহিলা শাখার মসজিদে ‘আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা’র দায়িত্বশীল ও কর্মীদের নিয়ে একই বিষয়ে সামষ্টিক পাঠ ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ১ম স্থান অধিকার করেন যৌথভাবে আনজুমান আরা ও ক্বামারুন্নাহার (মেহেরপুর), ২য় স্থান ফাহমীদা পারভীন (কুষ্টিয়া), ৩য় স্থান অধিকার করেন যৌথভাবে জাহানারা ও খাদীজা (মেহেরপুর)।

অতঃপর (৩) বাদ আছর ‘আল-‘আওন-এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আল-‘আওন-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্ল­াহ শাকির (মারকায), (৪) ‘সংস্কৃতি দর্শন (বর্ষবরণ, দিবস পালন ইত্যাদি সহ) বিষয়ে আলেম ও ইমাম সমাজের ভূমিকা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদের খতীব মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা)। (৫) ‘আন্দোলন-এর অগ্রগতিতে অঙ্গ সংগঠনসমূহের ভূমিকা’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), (৬) ‘আমর বিল মা‘রূফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার’ বিষয়ে মারকাযের শিক্ষক হাফেয আব্দুল মতীন (রাজশাহী)।

অতঃপর (৭) সংগঠনের উন্নতি ও অগ্রগতি বিষয়ে যেলা সভাপতি ও প্রতিনিধিগণের মধ্য হ’তে পরামর্শমূলক বক্তব্য পেশ করেন কিশোরগঞ্জ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি অধ্যাপক এস.এম নূরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম যেলা সাধারণ সম্পাদক আরজু হোসাইন ছাববীর, টাঙ্গাইল যেলা সভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ যিয়াউর রহমান, দিনাজপুর-পশ্চিম সাংগঠনিক যেলার বীরগঞ্জ উপযেলা সভাপতি মাওলানা হারূণুর রশীদ ও শেরপুর যেলা সভাপতি ডা. এনামুল হক প্রমুখ।

অতঃপর (৮) বাদ মাগরিব ‘মুসলিম ও আহলেহাদীছ’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, (৯) ‘আদর্শ সমাজ গঠনে যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য’ বিষয়ে ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম, (১০) ‘সমাজ সংস্কারে দাওয়াতের গুরুত্ব ও মাধ্যম সমূহ’ বিষয়ে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও আত-তাহরীক অনলাইন টিভির পরিচালক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, (১১) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর শিক্ষা দর্শন’ বিষয়ে মারকাযের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম। অতঃপর (১২) বাদ এশা ‘হিংসা ও অহংকার : সংগঠনের অগ্রগতিতে দু’টি বড় অন্তরায়’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ।

২য় দিন শুক্রবার বাদ ফজর মারকাযের পশ্চিম পার্শ্বস্থ মসজিদে সূরা ছফ ১০-১১ আয়াতের উপর দরসে কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, যা সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে পূর্ব পার্শ্বস্থ মসজিদেও শুনানোর ব্যবস্থা করা হয়।

দরসের পর সামান্য বিরতি শেষে পশ্চিম পার্শ্বের মূল প্যান্ডেলে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য শুরু হয়। (১) ‘সাপ্তাহিক তা‘লীমী বৈঠক পরিচালনা পদ্ধতি’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (২) ‘ইহতিসাব : কেন রাখব, কিভাবে রাখব?’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা) (৩) ‘নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), (৪) ‘আন্দোলন’-এর ‘অনলাইন কার্যক্রম পরিচিতি’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর আইটি বিভাগের ম্যানেজার জি. এম অলিউল্লাহ (রাজশাহী) (৫) ‘ইক্বামতে দ্বীন : ভ্রান্তি নিরসন’ বিষয়ে জামালপুর-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলার সাধারণ সম্পাদক ক্বামারুয্যামান (৬) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর রাজনৈতিক দর্শন’ বিষয়ে সাতক্ষীরা যেলার উপদেষ্টা অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম এবং (৭) ‘সাংগঠনিক জীবনে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার গুরুত্ব’ বিষয়ে ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম।

নাশতার বিরতির পর (৮) ‘আন্দোলন’-এর অগ্রগতিতে ‘আহলেহাদীছ পেশাজীবী ফোরামে’র ভূমিকা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মাদ ছাবিত (কুষ্টিয়া) (৯) ‘সাংগঠনিক জীবনে নেতৃত্ব ও আনুগত্যের গুরুত্ব’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (মারকায) (১০) ‘ইনফাক্ব ফী সাবীলিল্লাহ’ বিষয়ে খুলনা যেলা সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য পেশ করেন।

অতঃপর বিগত ২০২১-২৩ সেশনের বার্ষিক সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। অতঃপর আমীরে জামা‘আতের উপস্থিতিতে তাঁর মনোনীত আগামী ২০২৩-২৫ সেশনের মজলিসে আমেলা, শূরা, যেলা সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অতঃপর আমীরে জামা‘আত তাদের সহ উপস্থিত সকলের আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন।

কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য সম্মেলন : সম্মেলনের ২য় দিন শুক্রবার সকাল ৮-টা থেকে ১০-টা পর্যন্ত পশ্চিম পার্শ্বস্থ মসজিদে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পরিচালনায় ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক উদ্বোধনী বক্তব্যের পর সভাপতির নির্দেশক্রমে ২০২১-২০২৩ সেশনে কেন্দ্রের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের অডিটকৃত হিসাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম (কুষ্টিয়া)। এরপর সংগঠনের ২০২৩-২৫ সেশনের কেন্দ্রীয় বাজেট ও পরিকল্পনা অবহিত করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। অতঃপর সংগঠনের অগ্রগতি সম্পর্কে পরামর্শমূলক বক্তব্য পেশ করেন রাজশাহী-সদর যেলার উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জারজিস আহমাদ, পাবনা যেলার সভাপতি ও সদ্য কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য মুহাম্মাদ সোহরাব আলী, নওগাঁ যেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শহীদুল আলম। সবশেষে কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে হেদায়াতী ভাষণ প্রদান করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।

সম্মেলনের অন্যান্য রিপোর্ট : দু’দিন ব্যাপী কর্মী সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেয লুৎফুর রহমান (মারকায), হাফেয রবীউল ইসলাম (মারকায), হাফেয মুখলেছুর রহমান (বগুড়া), মাওলানা জামীলুর রহমান (কুমিল্লা) ও ক্বারী আব্দুল আউয়াল (মারকায)। জাগরণী পরিবেশন করে আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), রাক্বীবুল ইসলাম ও ইয়াকূব হোসাইন (মেহেরপুর), কেরামত আলী (পাবনা), আলে-ইমরান ও রাতুল আসলাম (রাজশাহী), আব্দুল্লাহ আল-ফাহীম (কুষ্টিয়া) প্রমুখ।

সম্মেলনের ৬টি অধিবেশনের পরিচালক ছিলেন যথাক্রমে ‘আন্দোলন’-এর (১) কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন, (২) দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, (৩) প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন। তার সাময়িক অনুপস্থিতিতে তার অনুমতিক্রমে পরিচালনা করেন শূরা সদস্য কাযী হারূণুর রশীদ (৪) শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুররুল হুদা, (৫) যুববিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার (৬) সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।

সম্মেলনে ৬৪টি সাংগঠনিক যেলার ১২৯৪ জন বাছাইকৃত কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনেক উপদেষ্টা যোগদান করেন। সম্মেলনের ২য় দিন সকালে ৩১ জন কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য এবং ৪০ জন সাধারণ পরিষদ সদস্য মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের নিকট আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন।

জুম‘আর খুৎবা : মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা আলে ইমরানের ১০৪-০৫ আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, জীবনে সফলকাম হ’তে গেলে আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করতে হবে এবং নিজে সৎকর্মশীল হ’তে হবে। সেই সাথে অলসতা ও বিলাসিতা পরিহার করে আমাদেরকে সমাজ সংস্কারে ব্রতী হ’তে হবে। অতঃপর তিনি সবাইকে অহি-র বিধান আঁকড়ে ধরে আপোষহীন গতিতে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। সবশেষে তিনি কর্মী সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।






আরও
আরও
.