বাতাবি লেবু পুষ্টিগুণে
ভরপুর এক ফলের নাম। এই ফল জাম্বুরা বা ছোলম নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে মৌসুমী
ফল হিসাবে এর যথেষ্ট সমাদর রয়েছে। অনেক ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ বাতাবি লেবু
ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
শরীরের দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী রোগ
প্রতিরোধে বাতাবি লেবুর রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাতাবি
লেবুর রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যে কোনো ধরনের কাটা, ছেঁড়া ও ক্ষত
সারাতে, যকৃৎ, দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায় বাতাবি লেবু অতুলনীয়। তাছাড়া
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় বাতাবি লেবু বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং বুড়িয়ে
যাওয়া বিলম্বিত করে।
১০০ গ্রাম সমপরিমাণ এক কাপ বাতাবি লেবুতে আছে ক্যালরি ৩৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯.২ গ্রাম, প্রোটিন ২.৪ গ্রাম, চর্বি ২ গ্রাম, ফাইবার বা অাঁশ ১.২ গ্রাম এবং চিনি ৭ গ্রাম।
বাতাবি লেবু কেন খাবেন?
অ্যাসিডিক হওয়ার কারণে খাদ্য পরিপাকে বাতাবি লেবু অত্যন্ত সহায়ক। হজম হওয়ার পর বাতাবি লেবুর রস অ্যালকালাইন রি-অ্যাকশন তৈরি করে হজমে সহায়তা করে। বাতাবি লেবুর খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বায়োফ্লাভোনয়েড, যা ক্যান্সার কোষ বিস্তাররোধে সহায়তা করে। অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন থেকে শরীরকে মুক্ত রাখার কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় বাতাবি লেবু ভূমিকা রেখে থাকে। অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকার কারণে ধমনীর ইলাস্টিক অবস্থা ও দৃঢ়তা রক্ষায়ও বাতাবি লেবু অত্যন্ত কার্যকর। জ্বর, ডায়াবেটিস, নিদ্রাহীনতা, গলার ক্ষত, পাকস্থলী ও প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ চিকিৎসা ও প্রতিরোধে এবং শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূরীকরণে বাতাবি লেবুর জুড়ি নেই। বাতাবি লেবুতে রয়েছে পেকটিন, যা ধমনীর রক্তে দূষিত পদার্থ জমা হ’তে বাধা দেয় এবং দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃৎপিন্ড সুরক্ষা এবং হৃদরোগজনিত জটিলতা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। বাতাবি লেবুর ফ্যাটিবার্নিং এনজাইম শ্বেতসার ও সুগার শোষণ করে ওযন কমাতে সহায়তা করে। রক্তের লোহিত কণিকাকে টক্সিন ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।
নানাবিধ রোগের মহৌষধ আদা
‘আদা নুন প্রাতে খাই, অরুচি থাকবে না ভাই’। আদার বহু উপকারিতা বিজ্ঞানীরা বের করেছেন। ঠান্ডা লেগে গেলে কিংবা কাজের মধ্যে হাঁপিয়ে উঠলে আদা খাওয়া যায়। কারণ আদা কাশি কমাতে সহায়ক। আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফরফরাসের মতো খনিজ পদার্থ। এছাড়া অল্প পরিমাণে আছে সোডিয়াম, জিঙ্ক ও ম্যাঙ্গানিজ। আদায় ভিটামিন- ই এ বি ও সি-এর পরিমাণও অনেক। আদা রান্না অথবা কাঁচা দু’ভাবেই খাওয়া যায়।
গলার খুসখুসে ভাব কমাতে কাঁচা আদা খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আদা থাকলে যে কোন ধরনের ঠান্ডা সংক্রান্ত রোগবালাই, কাঁশি ও হাঁপানির তীব্রতা কমিয়ে দেয়। চুলপড়া ও বমি রোধক হিসাবে আদা বেশ কার্যকর। এছাড়া আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রেও ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে আদা। রক্তের অনুচক্রিকা এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতেও আদা দারুণ কার্যকর। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা শুকিয়ে খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপা রোগে আদা চিবিয়ে বা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া গলা পরিষ্কার রাখার জন্য আদা ও লবণ খাওয়া যায়। আসলে মসলা ছাড়াও আদার রয়েছে বিভিন্ন গুণ। ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্যের সঙ্গে নিয়মিত আদা খেলে গিঁটের ব্যথা সারে। শীত কমাতে এককাপ আদার চা খেলে বেশ আরাম বোধ হয়। আদা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে রক্ত পরিসঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং রক্তনালী প্রসারিত করে। ফলে শরীর গরম থাকে দীর্ঘক্ষণ। এছাড়া যাদের মোশন সিকনেস আছে, তারা আদার সাহায্যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
অনিদ্রা ও তার প্রতিকার
নিদ্রা একটা শারীরবৃত্তের কাজ। বর্তমান পৃথিবীতে বিশেষ করে ভোগপ্রবণ মানুষের মধ্যে এখন সুনিদ্রার অভাব অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় শতকরা ২০ জন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ রাত্রে সুনিদ্রার অভাবে দিনেরবেলার স্বাভাবিক কাজকর্মে অসুবিধে ভোগ করেন যা মানসিক সুস্থতার প্রতিবন্ধক হ’তে পারে। যখন কেউ মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে অনিদ্রায় (লং টার্ম ইনসমনিয়া বা ক্রোনিক ইনসমনিয়া) কষ্ট পান তখনই তা স্বাস্থ্যহানি আর পরের দিনের কর্মকুশলতা বিঘ্নিত হওয়ার কারণ হয়।
অনিদ্রার হাত থেকে রেহাই পাবার কয়েকটি উপায় নিম্নরূপ। যেমন- (১) রাতে টিভি দেখা বন্ধ করুন (২) তাড়াতাড়ি শুতে যান ও সকালে খুব ভোরে শয্যা ত্যাগ করে হালকা ধরনের ব্যায়াম করুন। যোগ ব্যায়াম খুব ভালো (৩) রাতে বেশি আহার করবেন না। মদ্যপান বা ধূমপান একেবারেই নয় (৪) সন্ধ্যার পর চা, কফি বা কোলা জাতীয় পানীয় পরিহার করুন (৫) মনকে সবসময় দুশ্চিন্তা মুক্ত করে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন এবং (৬) কোনো কারণেই মন খারাপ করবেন না ও অন্যের দোষ দেখার চেষ্টা করবেন না।
\ সংকলিত \