চলতি বছরের গ্রীষ্মে পুরো পৃথিবী জুড়েই ছিল তীব্র দাবদাহ। ফলে ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা থেকে শুরু করে হিমালয় পর্বতমালা পর্যন্ত সবখানেই বরফের গলন অতীতের সব নযীর ছাড়িয়ে গেছে। অথচ উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাইরে সবচেয়ে বেশী স্বাদু পানি জমা আছে হিমালয় পর্বতমালা ও এর শাখা পর্বতশ্রেণীতে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তাদের ধারণার চাইতেও উদ্বেগজনক মাত্রায় গলিয়ে ফেলছে হিমালয়ের হিমবাহগুলিকে। হিমবাহ গলায় আবহাওয়ার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে হাযার হাযার বছর ধরে চলে আসা পানিচক্র। এতে একদিকে অকাল বন্যা, অন্যদিকে ভবিষ্যতে মিঠা পানির চরম সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে উপমহাদেশ।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই পাকিস্তানের সিন্ধু নদীর স্রোত ও তার বয়ে আনা উর্বর পলি সভ্যতা ও মানব বসতির পৃষ্ঠপোষক। তাই সিন্ধু অববাহিকাতেই জনবসতি বেশী পাকিস্তানে। হিমবাহের এই অজস্র স্রোতধারায় উপমহাদেশের প্রধান প্রধান নদীগুলি জন্মলাভ করেছে। এই প্রভাব বর্তমানে সবচেয়ে বেশী দৃশ্যমান হচ্ছে পাকিস্তানে। সেখানে বন্যায় ডুবে যাচ্ছে লাখো একর কৃষিজমি আর জনপদ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ কোটির অধিক মানুষ। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫শ’ তে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আরও উষ্ণ হয়ে উঠেছে আরব সাগরের পানি। বাষ্পীভবন বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর বর্ষায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয় পাকিস্তানে। তার সাথে ছিল আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেখা দেওয়া ‘লা নিনা’র প্রভাব। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিপর্যয় কেবল শুরু হয়েছে। সামনে আসছে আরও ভয়ঙ্কর দশা। কারণ সাধারণতঃ রেকর্ড বন্যার পরই ধেয়ে আসে চরম খরা।
বিজ্ঞানী দলের সদস্য হিমবাহবিদ মুহাম্মাদ ফারূক আযম বলেন, এ বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেখা দেয় চরম তাপদাহ, যা বিগত ১০০ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গে। তার ফলে বিপুল গতিতে গলেছে হিমবাহ। তিববত থেকে যাত্রা শুরু করে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে করাচীতে সিন্ধু নদী গিয়ে মিশেছে আরব সাগরে। নদী অববাহিকার দৈর্ঘ্য ফ্রান্সের দ্বিগুণ। পাকিস্তানের ৯০ শতাংশ খাদ্য এখানেই উৎপাদন হয়। যখন এই অববাহিকায় বন্যা আসে, তখন মাটির পানি শোষণ খুব একটা বাড়েনা। অধিকাংশ পানিই সরাসরি গিয়ে পড়ে আরব সাগরে। তাতে করে পানি সংকট দেখা দেয় শুষ্ক মৌসুমে।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় প্রাক্কলন করা হয়েছে যে, ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার ১৫০-১৭০ কোটি মানুষ ক্রমহ্রাসমান সুপেয় পানির সংকটে পড়তে পারে।
তাই পাকিস্তানে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার অনেক পরেও এর অভিঘাত পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতেই অনুভূত হ’তে থাকবে। কারণ এবার বিরূপ আবহাওয়া ব্রাজিল থেকে শুরু করে ফ্রান্স, চীন, আমেরিকা সবখানেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে কৃষিকাজ ও খাদ্য উৎপাদন। তার সাথে এবার যোগ হবে পাকিস্তানের বুভুক্ষ জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা।
হিমালয় এবং এর বর্ধিত দু’টি প্রশাখা পর্বতশ্রেণী কারাকোরাম ও হিন্দুকুশে রয়েছে ৫৫ হাযারেরও অধিক স্থল-হিমবাহ। এরমধ্যে ৭ হাযারের বেশী রয়েছে পাকিস্তানে। সাম্প্রতিক দশকে হিমবাহগুলি গলে সেখানে ৩ হাযারের অধিক ছোট বড় হরদ সৃষ্টি হয়েছে।
[পরাশক্তিগুলির শিল্পকারখানা সমূহের অবিরত ধারায় কার্বণ নিঃসরণই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এসব পাপীদের পাপের কারণে বিশ্ব আজ ধ্বংসের মুখে। আর সেজন্যই আল্লাহ বলেছেন, ‘স্থলে ও সমুদ্রে সর্বত্র বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের ফল হিসাবে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের কর্মের কিছু শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে’ (রূম ৩০/৪১) (স.স.)]।