সম্মানিত ভাইয়েরা!
অধঃপতনের নানাবিধ কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি তার ক্ষেত্র প্রস্ত্ততেরও বহু ব্যবস্থা রয়েছে। তার এমন সব রাস্তা রয়েছে যা গোড়াতেই খুব চাকচিক্যময়। ক্ষীণদৃষ্টির লোকেদের তা দেখে প্রথম চোটেই ধোঁকায় পড়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। যে বা যারা ঐ রাস্তা ধরে চলবে বিচ্যুতির ছোঁয়া তার বা তাদের আংশিক হ’লেও লাগবে।
ভাইয়েরা আমার!
কুরআন বর্জন যুবসমাজের অধঃপতনের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি অধঃপতনের সবচেয়ে মারাত্মক কারণ। কেননা কুরআন বর্জন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পথ। আফসোস! আমাদের যুবসমাজের অধিকাংশ এমনকি অধিকাংশ মুসলিম আজ অল্প-স্বল্প ব্যতীত কুরআন পড়ে না। যারা একটু-আধটু পড়ে তারাও তার বক্তব্য বিষয় ভেবে-চিন্তে পড়ে না এবং তার নির্দেশিত পথ মেনে চলার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করে না। ভাইয়েরা, কুরআন বর্জনের কতিপয় ধরন রয়েছে, যেমনটা আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন।-
(১) নিজে কুরআন তেলাওয়াত বর্জন করা এবং কেউ কুরআন তেলাওয়াত করলে মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ না করা।
(২) কুরআন পড়লেও এবং তার উপর ঈমান রাখার দাবী করলেও কুরআন অনুযায়ী আমল না করা এবং কুরআনে ঘোষিত হালাল ও হারাম মেনে না চলা।
(৩) কুরআনিক বিচার বর্জন করা এবং দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি ও শাখা-প্রশাখার মীমাংসায় কুরআনের কাছে বিচার প্রার্থনা পরিহার করা।
(৪) কুরআনে বর্ণিত বিষয়াদি বোঝা এবং তার শেষ অবস্থা কত দূর গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে একটুও চিন্তা-গবেষণা না করা এবং কুরআনের মালিক আল্লাহ তা‘আলা কুরআন থেকে কী ইচ্ছা পোষণ করেছেন তা জানার চেষ্টা না করা।
(৫) আত্মার সকল রোগ-ব্যাধির চিকিৎসায় কুরআনকে মোটেও কাজে না লাগানো এবং আল্লাহর দেওয়া আত্মিক চিকিৎসা বাদ দিয়ে অন্যদের চিকিৎসার শরণাপন্ন হওয়া।
এগুলোর সবই রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক তাঁর প্রভুর সমীপে কৃত অভিযোগের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন,وَقَالَ الرَّسُولُ يَارَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا ‘সেদিন রাসূল বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার উম্মত এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছিল’ (ফুরক্বান ৩০)।
বড় কষ্ট লাগে, বড় দুঃখ লাগে যখন দেখি, কুরআনকে বাদ দিয়ে মুসলিমরা আজ কুরআন বিরোধী আধুনিক নানা বিষয় নিয়ে মেতে আছে। হ’তে পারে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে তাদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধার ফলে এমন হয়েছে, অথবা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় তারা কুরআন বিরোধী বিষয় বেছে নিয়েছে। তারা আজ গান শোনে, গানের মজমায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে; কুরআনের মোকাবেলায় মানব রচিত বই-পুস্তককে প্রাধান্য দেয়; মানুষের বক্তৃতা-ভাষণ শোনে, মানুষের রচিত কবিতা আবৃত্তি করে, মানুষের সুর দেওয়া গান গায়, কিন্তু কুরআন পড়া ও শোনার কথা তারা মোটেও মনে করে না। কুরআনের সঙ্গে যারা এমন আচরণ করবে স্বাভাবিক ভাবেই কুরআনের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হবে, তাদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট বাড়বে, বিপদাপদও বড় হয়ে দেখা দিবে।
প্রিয় ভাতৃমন্ডলী!
একইভাবে প্রিয় নবী (ছাঃ)-এর সুন্নাহ থেকে দূরত্বও আমাদের যুবসমাজের অধঃপতনের অন্যতম বড় কারণ। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا ‘সুপথ স্পষ্ট হওয়ার পর যে ব্যক্তি রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের বিপরীত পথে চলে, আমরা তাকে ঐদিকেই ফিরিয়ে দেই যেদিকে সে যেতে চায় এবং তাকে আমরা জাহান্নামে প্রবেশ করাবো। আর সেটা হ’ল নিকৃষ্ট ঠিকানা’ (নিসা ৪/১১৫)।
আল্লাহ তা‘আলা সতর্ককারী ও ভৎর্সনাকারী রূপে বলেন,فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ‘অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে’ (নূর ২৪/৬৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও তার সুন্নাহ অবজ্ঞাকারীদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى ‘যারা আমার সুন্নাহর প্রতি বিরাগ পোষণ করবে তারা আমার উম্মাহভুক্ত নয়’।[1] তিনি আরো বলেছেন, قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا، لَا يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلَّا هَالِكٌ، ‘আমি তোমাদের আলোকোজ্জ্বল দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি; যার রাত তার দিনের মতোই দৃশ্যমান। আমার পরে ধ্বংসোন্মুখ ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ দ্বীন থেকে বেঁকে বসবে না’।[2] আরেক হাদীছে তিনি বলেছেন,إِنِّى قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনই পথ হারাবে না, আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ’।[3]
সুতরাং আল্লাহর কিতাব পরিত্যাগ এবং আল্লাহর নবীর সুন্নাহ পরিত্যাগ ধ্বংস, পথভ্রষ্টতা ও অধঃপতনের বড় কারণ। আমরা মহান আল্লাহর নিকটে এহেন আচরণ থেকে পানাহ চাই।
এই মরণঘাতী ব্যাধি ও বিপজ্জনক অবস্থার প্রতিকার হিসাবে আমাদের যুবসমাজকে অবশ্যই কুরআনের কাছে ফিরে আসতে হবে। তারা কুরআনী বিধানকে নিজেদের জীবনে অবশ্য পালনীয় করে নিবে। তারা বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করবে, কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে, পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানে তারা কুরআনের ভিত্তিতে প্রতিপালিত হবে।
আফসোস! আমাদের সন্তানেরা পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হয়, কিন্তু তারা কম সংখ্যকই কুরআন পড়ে। কাজেই কুরআনের ভিত্তিতে তাদের প্রতিপালিত হওয়ার প্রশ্নই এখন আর ওঠে না। অথচ প্রতিপালন সূত্রে পিতা-মাতার উপর ফরয ছিল তাদের সন্তানদের কুরআন অধ্যয়ন করানো এবং সততার সাথে পরিচালনার মাধ্যমে কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করানো। অভিভাবকদের উপর এ দায়িত্বও ফরয ছিল যে, তারা মাদরাসা (শিক্ষালয়) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করানোর মাধ্যমে তাদের কুরআনের জ্ঞান পাকাপোক্ত করাবে। ভাইয়েরা আমার, এ জাতি যদি তাদের যুবসমাজকে এবং নিজেদেরকে অবক্ষয় ও অধঃপতন থেকে বাঁচাতে চায়, উদ্ধার করতে চায় তবে এ উম্মাহর ছোট বড় সকলকেই বংশপরম্পরায় এ কাজ আঞ্জাম দিতে হবে।
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘নারী হোক কিংবা পুরুষ হোক সকল মুসলিমের উপর ফরয এই পদ্ধতি অনুসারে চলা এবং হকপন্থী আলেমদের থেকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ অনুধাবন করা। যেমন মালেক ইবনু আনাস (রহঃ) এবং পরবর্তীতে তার অনুসরণে আরও অনেকে বলেছেন, لَنْ يُصْلِحَ آخِرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ إلَّا مَا أَصْلَحَ أَوَّلَهَا ‘এই উম্মতের প্রথম যুগের মানুষেরা যে পদ্ধতিতে সংশোধিত হয়েছে শেষ যুগের মানুষেরাও তা অবলম্বন না করা পর্যন্ত সংশোধিত হ’তে পারবে না’।[4]
শায়খ বিন বায আরো বলেন, ‘উম্মতের প্রথম যুগের লোকেদের আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, কুরআন ও সুন্নাহকে ধরে থাকার জন্য একে অপরকে উপদেশ দেওয়া, এ কাজে পরস্পরে সহযোগিতা করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর পথে জীবন পরিচালনার মাধ্যমে সংশোধন ঘটেছিল। সুতরাং ভাইয়েরা আমার, আমাদেরও সকলের কর্তব্য হবে কুরআন ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরার জন্য একে অপরকে উপদেশ দেওয়া ও এ কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা এবং আমাদের রবের কিতাব ও আমাদের নবীর সুন্নাহকে সবকিছুর উপর স্থান দেওয়া।
যুবসমাজের অধঃপতনের আরেকটি কারণ কুরআন ও সুন্নাহর বাণীকে উম্মাহর সালাফ তথা পূর্বসূরীগণ যে অর্থে বুঝেছেন তা থেকে ভিন্ন অর্থে বুঝা। তাদের অনুধাবিত অর্থ পরিহারকে বৈধ বলে আক্বীদা পোষণ করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর বাণীর নতুন নতুন অর্থ আবিষ্কার করা।
কুরআন ও সুন্নাহর বাণীর নতুন নতুন অর্থ আবিষ্কার এবং হাল যামানার সাথে সঙ্গতির মানসে নতুন নতুন ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে বর্তমান ধার্মিক ও অধার্মিকরা পরস্পরে কিসের আহবান জানাচ্ছে? এসব তো পূর্বসূরী সালাফদের বর্ণিত অর্থ থেকে অনেক অনেক দূরে। আল্লাহর কসম! এ জন্যও আমরা আজ পথভ্রষ্ট হচ্ছি। ক্বাদারিয়া চিন্তা-গোষ্ঠী ছাহাবীদের বুঝ বর্জন ব্যতীত অন্য কোন কারণে বিপথগামী হয়নি। খারেজীরাও ছাহাবীদের বলা অর্থ বর্জন হেতু পথহারা হয়েছিল। আমাদের আক্বীদা ও আমলে যে বিচ্যুতি ঘটেছে তা উম্মতের পূর্বসূরীগণ কুরআন-সুন্নাহর বাণীর যে অর্থ বর্ণনা ও অনুধাবন করেছেন তা থেকে সরে আসা ব্যতীত অন্য কোন কারণে ঘটেনি।
প্রিয় ভ্রাতৃমন্ডলী!
বিশ্বাস করুন, পূর্বসূরীগণের কুরআন-সুন্নাহর অনুধাবন থেকে আমরা দূরে সরে পড়েছি বলেই আমাদের এবং আমাদের যুবসমাজের অধঃপতন ও গ্রুপিং বা দলাদলি ঘটেছে। ফলে আমরা মনের দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছি, আমাদের সমাজ আজ অশান্তিতে ভরে গেছে এবং উম্মাহর শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ছে।
নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ‘তোমাদের মধ্যে যারা আমার মৃত্যুর পরে বেঁচে থাকবে অচিরেই তারা অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তোমরা তখন আমার সুন্নাহ এবং সৎপথের পথিক খলীফাদের সুন্নাহ মেনে চলবে। তোমরা মাড়ির দাঁত দিয়ে তা কামড়ে ধরবে। সাবধান! নব আবিষ্কৃত বিষয়ের অনুসরণ থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয়ই বিপদগামী করে’।[5]
এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলে দিয়েছেন যে, তাঁর সুনণাত তরক করা কিংবা খুলাফায়ে রাশেদীন ও ছাহাবায়ে কেরাম তাঁর সুন্নাহকে যে অর্থে বুঝেছেন সেই অর্থে না বুঝলে উম্মাহর মধ্যে মতানৈক্য ও মতভেদ দেখা দিবে। যে মতভেদ মুসলিম জাতির হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিবে এবং তার দেহ ফালি ফালি করে ফেলবে। একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলে দিয়েছেন যে, নিন্দিত মতভেদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার পথ হ’ল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা। অর্থাৎ খুলাফায়ে রাশেদীন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাহকে যে অর্থে বুঝেছেন সেই অর্থ গ্রহণ করা।
ইমাম আবূদাঊদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) একদিন তার সাথীদের বললেন,إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ فِتَنًا يَكْثُرُ فِيهَا الْمَالُ، وَيُفْتَحُ فِيهَا الْقُرْآنُ حَتَّى يَأْخُذَهُ الْمُؤْمِنُ وَالْمُنَافِقُ، وَالرَّجُلُ، وَالْمَرْأَةُ، وَالصَّغِيرُ، وَالْكَبِيرُ، وَالْعَبْدُ، وَالْحُرُّ، ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পিছনে এমন এক ফিৎনা আসছে যখন সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং কুরআন উন্মুক্ত হয়ে যাবে। মুমিন, মুনাফিক, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, দাস, স্বাধীন সবাই কুরআনের ধারক-বাহক হবে’। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে অনেকেই এমন বিদ্যার অধিকারী হবে যে, তারা কুরআন নিয়ে কথা বলবে, মানুষের সামনে কুরআন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে।
মু‘আয (রাঃ) বলেন,فَيُوشِكُ قَائِلٌ أَنْ يَقُولَ: مَا لِلنَّاسِ لَا يَتَّبِعُونِي وَقَدْ قَرَأْتُ الْقُرْآنَ؟ مَا هُمْ بِمُتَّبِعِيَّ حَتَّى أَبْتَدِعَ لَهُمْ غَيْرَهُ، فَإِيَّاكُمْ وَمَا ابْتُدِعَ، فَإِنَّ مَا ابْتُدِعَ ضَلَالَةٌ، ‘তখন কোন বক্তা এমনও বলে বসবে যে, আমি কুরআন পড়ার পরেও কেন লোকেরা আমার অনুসরণ করছে না? তারা আদতে আমার অনুসারী হবে না, যে পর্যন্ত না আমি তাদের জন্য কুরআন ভিন্ন অন্য কিছু আবিষ্কার করব। খবরদার! সে নতুন যা আবিষ্কার করবে তার কাছে তোমরা ঘেঁষবে না। কেননা সে নতুন যা আবিষ্কার করবে তা হবে পথভ্রষ্টকারী’।[6]
বন্ধুগণ! সে যে নতুন কথা আবিষ্কার করবে এবং নতুন বুঝ তৈরি করবে তা হবে পূর্ববর্তীদের বুঝের বিপরীত। তাতে কোন মঙ্গল নেই। তা তো ভ্রান্ত একটা পথ। এ পথ অবলম্বন করলে দেখা যাবে কুরআন-সুন্নাহর কিছু নছ (স্পষ্ট কথা) আমলে নেওয়া হবে তো অন্য কিছু নছ বাতিল করে দেওয়া হবে। কিছু নছকে অকারণে অন্য কিছু নছের উপর প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিচ্যুতি যখন প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার দিকে ঘটবে তখন আমরা দেখতে পাব, যুবকরা প্রতিশ্রুতি, আশা ও ক্ষমামূলক নছকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
তারা মনে করছে আল্লাহ যেহেতু ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তিনি দয়াময় রহমানুর রহীম সেহেতু আমরা প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার ঘোরে বিভোর থাকলেও এবং পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে থাকলেও আমাদের ক্ষমা পেতে অসুবিধা হবে না। সন্দেহের দিকে বিচ্যুতি ঘটলে দেখা যাবে যুবকরা শাস্তিমূলক নছকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আমরা যতই ঈমান-আমলের অধিকারী হই আমাদের কি ক্ষমা হবে? এত এত শাস্তি থেকে কি আমাদের ক্ষমা মিলবে? এমন সন্দেহ থেকে তাদের মনে আল্লাহর রহমত ও পুরস্কারের তুলনায় শাস্তির দিক প্রাধান্য পাবে। তারা হতাশ ও ম্রিয়মাণ হয়ে আমল ছেড়ে দেবে। এসবই কুরআন ও সুন্নাহর নছের অর্থ অনুধাবনে নেককার পূর্বসূরীদের ধারা বা নীতির বিপরীত। বস্ত্তত বিদ‘আতীরা কুরআন ও সুন্নাহর নছের যেসব নতুন অর্থ তৈরি করেছে তা পূর্বসূরীদের নীতির বিরোধী।
এ অবস্থার প্রতিকার হিসাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সালাফে ছালেহীন কুরআন ও সুন্নাহর নছের যে অর্থ বুঝেছেন সেই অর্থের ব্যাপক প্রচার করতে হবে। মাদরাসা-মসজিদে খুৎবা ও বক্তৃতায় কোন সংকীর্ণতা ও ক্লান্তি ব্যতিরেকে এবং লোকেরা কী মনে করবে তার পরোয়া না করে পূর্বসূরীদের বক্তব্য অব্যাহত ধারায় বলে যেতে হবে। কেননা এই উম্মতের শেষ যুগে আগত ব্যক্তিই বলি আর জামা‘আতই বলি তাদের কারো সংশোধন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা প্রথম যুগের লোকেরা যে পদ্ধতিতে সংশোধিত হয়েছে সেই পদ্ধতি অবলম্বন করবে।
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ) আল্লাহর বাণীاهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ، صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ، ‘তুমি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর। এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে তুমি পুরস্কৃত করেছ’ (ফাতেহা ১/৫-৬) সম্পর্কে বলেছেন, ‘স্পষ্ট পথের অধিকারী আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তরা হ’লেন তারা, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব কথা বলেছেন সেসব কথা জানেন বা সে সম্পর্কে জ্ঞাত। এ সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিরা হ’লেন নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথী ছাহাবায়ে কেরাম, তারপর তাদের একনিষ্ঠ অনুসারী তাবেঈগণ, তারপর তাদের একনিষ্ঠ অনুগামী তাবে-তাবেঈগণ। যা ‘কুরুনে ছালাছা’ বা শ্রেষ্ঠ তিন যুগ তথা ছাহাবীদের যুগ, তাবেঈদের যুগ এবং তাবে-তাবেঈদের যুগ নামে খ্যাত।
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আল্লাহর কাছে ছিরাতুল মুস্তাক্বীমের দিশা লাভের জন্য কিভাবে দো‘আ করছ? অথচ তুমিই কিনা ছিরাতুল মুস্তাক্বীম জানা-বুঝার জন্য আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তদের সুস্পষ্ট পথ থেকে একেবারে আলাদা নতুন এক পথের দিকে আহবান জানাচ্ছ! আমাকে আল্লাহর কসম করে বল, এমন করে কিভাবে তুমি আল্লাহর হেদায়াত আশা করতে পার এবং কিভাবেই বা তুমি দ্বীনের উপর স্থিরতা কামনা করতে পার?
দ্বীনী ভাইয়েরা আমার!
আমাদের কর্তব্য তো জনগণ যাতে সালাফে ছালেহীন তথা নেককার পূর্বসূরীদের দ্বীনী বুঝের প্রতি ফিরে আসে সেই আহবান জানানোর মাঝে আমাদের সব রকমের চেষ্টা নিবদ্ধ করা। আর তখনই অর্জিত হবে দ্বীনের পথে অবিচলতা; তখনই আল্লাহর বান্দাগণ নাজাত পাবে লজ্জা-অনুশোচনার দুষ্টচক্র থেকে।
ভাইয়েরা! ‘বিদ্যমান শারঈ জামা‘আত থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং তা থেকে ভিন্ন কোন মতবাদ গ্রহণ করা’ যুবকদের আরেকটি বিচ্যুতি। জামা‘আত থেকে এভাবে দূরে সরে যাওয়া খারাপ ও আযাব এবং বিচ্যুতি ও পথভ্রষ্টতার অন্যতম কারণ। হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْخَيْرِ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِى. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا كُنَّا فِى جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ، فَجَاءَنَا اللهُ بِهَذَا الْخَيْرِ، فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ. قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ، وَفِيهِ دَخَنٌ. قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِى تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ. قُلْتُ فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ إِلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ، مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا فَقَالَ هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا، وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِى إِنْ أَدْرَكَنِى ذَلِكَ قَالَ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ. قُلْتُ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا، وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ-
‘লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম যাতে অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ না করে। একবার আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা জাহিলিয়াত ও খারাপের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলাম। তারপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এই কল্যাণ (ইসলাম) দান করেছেন। এখন এ কল্যাণের পর কোন অকল্যাণ আসবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সেই অকল্যাণের পর আবার কল্যাণ আসবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে তার মধ্যে ‘দাখান’ (আরবী দাখান শব্দের অর্থ বিশৃঙ্খলা বা বিশৃঙ্খলাকারী) থাকবে। আমি বললাম, দাখান কী? তিনি বললেন, তারা এমন একদল লোক যারা আমার সুন্নাহ ছেড়ে ভিন্ন মত অনুসরণ করবে, যার কিছু হবে বৈধ এবং কিছু হবে অবৈধ। আমি বললাম, সেই কল্যাণের পর আবার অকল্যাণ আসবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা হবে জাহান্নামের দ্বারদেশের দিকে আহবানকারী লোক। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তারা তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, আমাদেরকে তাদের বর্ণনা দিন। তিনি বললেন, তারা আমাদেরই গোত্রীয় হবে এবং আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম, আমি যদি এ অবস্থার সম্মুখীন হই তাহ’লে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ দিবেন? তিনি বললেন, তুমি মুসলিমদের জামা‘আত এবং তাদের ইমামকে আঁকড়ে ধরে থাকবে। আমি বললাম, তাদের যদি জামা‘আত ও ইমাম কোনটাই না থাকে? তিনি বললেন, তখন তুমি তাদের সকল দল-উপদল থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্ত কোন বৃক্ষমূল দাঁতে কামড়ে ধরে হ’লেও প্রাপ্ত কল্যাণের উপর থাকবে’।[7]
দেখুন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে বলেছেন, দ্বীনের উপর অবিচল থাকার পথ ও পদ্ধতি হ’ল মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের ইমামের সাথে আবশ্যিকভাবে যুক্ত থাকা। কিন্তু জামা‘আত ও ইমাম কোনটাই না থাকলে তখন নিরাপত্তার উপায় হিসাবে তিনি তাকে প্রচলিত যত সব দল আছে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তিনি মানুষের সংস্রব এড়িয়ে চলবেন। এজন্য যদি তাকে আমৃত্যু গাছের শিকড় কামড়ে ধরে বাঁচতে হয় তিনি তাই করবেন, কিন্তু সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরেই থাকবেন।
সুতরাং মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের ইমাম বা শাসক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা পথভ্রষ্টতার অন্যতম কারণ। শয়তান তো বনী আদমকে পথভ্রষ্ট করার জন্য ওঁৎ পেতে অপেক্ষা করছে। সে শারঈ জামা‘আত থেকে দূরে নিঃসঙ্গ অবস্থানকারীকেই তো কেবল তার খাদ্যে পরিণত করে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, يَدُ اللهِ مَعَ الجَمَاعَةِ ‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত রয়েছে’।[8] ছাগপাল থেকে নেকড়ে বাঘ কেবল বিচ্ছিন্নটাকেই খায়। এমনিভাবে যে ব্যক্তি মুসলিমদের জামা‘আত থেকে দূরে সরে যায় সে অভাবনীয় সব চিন্তা-ভাবনার সাথে যোগ দেয় এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুতির শিকার হয়। বাতিল পথের আমন্ত্রকরা তাকে মুসলিমদের জামা‘আত ত্যাগ করে তাদের দলে ভেড়ানোর টার্গেটে পরিণত করে। সুতরাং মুসলিমদের মসজিদে তাদের সাথে ওঠাবসা পরিত্যাগ, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত নামে তাদের যে জামা‘আত রয়েছে তা পরিত্যাগ এবং বিদ্যমান ইমামকে পরিত্যাগ করার ফলে সে নিজেকে বাতিলের দাওয়াতদাতাদের নিশানায় পরিণত করে। তাদের কামনা-বাসনার ঝাঁপি নিয়ে তারা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা তার সামনে কামনা-বাসনার উপকরণাদি মনোমুগ্ধকর করে তুলে ধরে। ফলে সে প্রবৃত্তির জালে ফেঁসে গিয়ে তাদের দলে ভিড়ে যায়। শুধু তাই নয়, বাতিলপন্থীরা তার সামনে নানা সংশয়ও তুলে ধরে। সংশয়ের আবর্তে পাক খেয়ে সে ইসলাম সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়ে।
এ সমস্যার প্রতিকার হিসাবে প্রত্যেক মুসলিম অবশ্যই মুসলিমদের জামা‘আতে শামিল থাকবে এবং তাদের ইমামকে কড়াকড়িভাবে মেনে চলবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তো তাদের এই উপদেশই দিয়েছেন।
হে আল্লাহর বান্দা! তুমি এমন মুমিনকে দেখে অবাক হবে, যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়, ইসলামের রুকনসমূহের হেফাযত করে এবং ভালো ভালো কাজে দৃশ্যত অগ্রণী থাকে সেই কি-না যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপদেশ শুনতে পায়, আর তার মোকাবেলায় জনগণের শাসক কিংবা শায়খের কোন উপদেশ সামনে পায় তখন সে অবলীলায় নবী মুছত্বফা (ছাঃ)-এর উপদেশ পিছনে ছুঁড়ে ফেলে এবং ঐ শাসক কিংবা শায়খের উপদেশ কবুল করে নেয়। অথচ নবী করীম (ছাঃ) প্রবৃত্তির চাহিদা মতো কোন কথা বলেননি, যা বলেছেন তা অহি-র ভিত্তিতে বলেছেন। তিনি মানব জাতির জন্য রহমত এবং সৎপথের দিশারী। তা সত্ত্বেও নবী মুছত্বফা (ছাঃ)-এর উপদেশ ত্যাগ করে সে একজন সাধারণ মানুষের উপদেশ গ্রহণ করে, তাকেই সে দামী ভাবে।
ভাইয়েরা আমার!
এমন অবস্থার প্রতিকার হিসাবে লোকেদের রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপদেশ অনুযায়ী আমলে আগ্রহী করে তুলতে হবে। যুবকরা যাতে জামা‘আতের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে মুমিনরা সেদিকে তৎপর হবে। বিদ্যমান শারঈ জামা‘আত থেকে যেসব কারণে তারা ছিঁটকে পড়ে সেসব কারণের বিরুদ্ধে মুমিনদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এটাই হ’ল অবিচলতার ও স্থিরতার পথ। এটাই বিচ্যুতি ও অনুশোচনার হাত থেকে বাঁচার পথ।
আলেমদের অবজ্ঞা করা অধঃপতনের আরেকটি কারণ। এটা এতটাই জঘন্য যে, এজন্য আমাদের অশ্রুপাত করা উচিত। এটা খোদ অধঃপতন এবং অধঃপতনের কারণও বটে। অনেক যুবককে দেখা যায় তারা সুন্নাহর অনুসারী আলেমদের অসম্মান করে।
ওলামায়ে রববানী, যারা কিনা কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবেক মযবূতভাবে আমল করে, যুবকরা তাদের সম্মানহানি করে। যে ওলামায়ে রববানীরা শরী‘আতের মূল উৎস থেকে শারঈ বিদ্যা অর্জন এবং অন্যদের শিখাতে তাদের জীবন পার করেন, যুবকরা তাদের ঘৃণার চোখে দেখে। যে আলেমগণ আল্লাহর হুকুম পালনে নিজেদের জীবন কুরবানী করেন, পসন্দনীয় লোকেরা যাদের আল্লাহর আনুগত্য ও তার পথে স্থির থাকার সাক্ষ্যদাতা, যাদের বিদ্যা ও ফৎওয়ার পতাকা পতপত করে ওড়ে আমাদের যুবকরা কিনা সেই আলেমদেরই তাদের সমালোচনার পাত্র বানিয়ে নেয়। এভাবেই তারা মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানের শিকারে পরিণত হয়। তারা তাদেরকে নিকৃষ্ট পথের পানে চালিয়ে নিয়ে যায়। যার একদিকে থাকে সন্দেহ-সংশয় এবং অন্যদিকে থাকে কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার আয়োজন।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! যখন কোন যুবককে দেখবেন আল্লাহর হুকুম পালনে সে খুবই অলস, ফরযসমূহ তরককারী এবং হারামে যথেচ্ছা লিপ্ত তখন নিশ্চয়ই আপনি দুঃখ পাবেন। সেই যুবকই আবার আলেমদের সমালোচনা করে বলছে, আমরা সেসব আলেম চাই না, যাদের মধ্যে এমন এমন কিছু রয়েছে। আমরা সেসব আলেমকে চাই, যাদের কথায় এটা হারাম, ওটা ফরয ইত্যাদি বিধি-বিধানের আলোচনা নেই। আমরা কেবল তাদের মুখে ওয়ায-নছীহত শুনব। তারা আমাদের উপর কোন দায়-দায়িত্বের কথা বলবেন না, কোন কর্তব্য চাপাবেন না। যারা বড় আলেম বলে নিজেরা নিজেদের যাহির করছেন তাদের আমাদের কোন দরকার নেই, তাদের মাঝে আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। তারা আজেবাজে ধরনের লোক। আপনি খুবই বিস্ময় বোধ করবেন এবং মনোকষ্ট পাবেন যখন দেখবেন একজন যুবকের মাঝে ভাল ভাল চিহ্ন ফুটে উঠেছে, তার দেহে সুন্নাহ দৃশ্যমান, তার বাহ্যিক কাজকর্ম সবই ভাল, কিন্তু তাকেই দেখবেন সভা-সমিতিতে আলেমদের অপমানসূচক কথা বলছে, তাদের কুৎসা গাইছে, অপদস্থ করছে এবং নানাভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। এ কাজ নিজেই একটি বিপজ্জনক বিচ্যুতি এবং অনেক বিপজ্জনক বিচ্যুতির কারণও বটে।
এহেন অধঃপতনের প্রতিকারে আমাদের যুবকরা যাতে আল্লাহওয়ালা আলেমদের সম্মান করে সেভাবে তাদের প্রতিপালন করতে হবে। তারা তাদের দেওয়া ফৎওয়া মেনে নিবে, তাদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান করবে, তাদের মর্যাদা বজায় রাখবে এবং কেউ তাদের বেইজ্জতি করলে তাতে বাধা দিবে। খতীব ও বক্তা যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন তাদের বক্তৃতায় এমন সব কথা থেকে দূরে থাকতে হবে যাতে যুবসমাজের আল্লাহভক্ত আলেমদের প্রতি ঘৃণা জন্মে। চাই সেসব কথা তারা ভাল খেয়ালে বলুন কিংবা মন্দ খেয়ালে বলুন।
শায়খ ছালেহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বলেন, ‘মুসলিম আলেমদের সম্মান করা ফরয। কেননা তারা নবীদের উত্তরাধিকারী। তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা মানে তাদের পদমর্যাদা এবং নবী করীম (ছাঃ)-এর উত্তরাধিকারকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা; তারা যে বিদ্যা বহন করছেন সেই বিদ্যাকে তুচ্ছ ভাবা। তাদের লব্ধ বিদ্যা, উম্মাহর মাঝে তাদের অবস্থান এবং মুসলিম জাতি ও ইসলামের কল্যাণে তারা যে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন সেজন্যই তাদের সম্মান জানানো ফরয। তিনি আরো বলেন, আলেমদের উপর যদি ভরসা করা না যায় তবে কাদের উপর ভরসা করা যাবে? যখন আলেমদের উপর ভরসা নষ্ট হয়ে যাবে তখন মুসলিমরা তাদের সমস্যা সমাধানে কাদের পানে রুজু হবে? কাদের নিকট থেকেইবা তারা শারঈ হুকুম-আহকাম জানবে? এমন হ’লে তো তখন এ উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তাদের মাঝে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে’।
শায়খ সত্যই বলেছেন। এখন তো আমরা তার কিছু নযীর দেখতে পাচ্ছি। অনেককেই এখন আমরা দেখতে পাই, তারা নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য আলেমদের ফৎওয়া উপেক্ষা করেন এবং এমন সব লোকের মতামতের পিছনে দৌড়ান বিদ্যা বলতে যাদের ভাঙাচুরা ছিঁটেফোঁটার বেশী কিছু নেই। আল্লাহ পাকের নিকট আমরা সকাতর প্রার্থনা জানাই, তিনি যেন আমাদের সঠিক পথ দেখিয়ে দেন এবং আমাদের পরিবার পরিজনকে পাক-পবিত্র আলেমদের সেই বৃক্ষমূলে ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করেন, যার মূল সুদৃঢ় এবং শাখা-প্রশাখা আকাশচুম্বী।
প্রিয় ভাইয়েরা!
‘অবসরকে কাজে না লাগানো এবং সময়ের সদ্ব্যবহার না করা’ যুবসমাজের অধঃপতনের আরেকটি কারণ। মানুষ যখন অবসর পায় তখন যদি তা কল্যাণমূলক কাজে না লাগায় তবে তা তাকে ক্ষতিকর কাজের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তখন সেই অবসরই তার গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেয়। ইমাম বুখারী (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ ‘দু’টি নে‘মত নিয়ে অনেক মানুষ ধোঁকায় পতিত হয়, স্বাস্থ্য ও অবসর’।[9] এখানে নবী (ছাঃ) অবসরকে বান্দার জন্য আল্লাহর নে‘মত গণ্য করেছেন। যখন বান্দা তার অবসরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে ব্যবহার করবে তখন তা আল্লাহর নে‘মতে পরিণত হবে। কিন্তু যুবকরা যদি তাকে মূল্যবান ভেবে কাজে না লাগায় তাহ’লে সেই অবসর নে‘মত না হয়ে আযাবে পরিণত হবে এবং উপহারের বদলে কষ্টে রূপায়িত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ-এর উপর আল্লাহ রাযী থাকুন। তিনি বলেন,إِنِّي لَأَمْقَتُ الرَّجُلَ أَنْ أَرَاهُ فَارِغًا لَيْسَ فِي شَيْءٍ مِنْ عَمَلِ الدُّنْيَا، وَلَا عَمَلِ الْآخِرَةِ ‘আমি সেই লোককে অবশ্যই ঘৃণা করি যে তার অবসর সময়কে না দুনিয়ার কাজে লাগায়, না আখেরাতের কাজে লাগায়’।[10]
ভাইয়েরা! এ ব্যাধির প্রতিকারে যুবকদের সময়ের গুরুত্ব জানতে হবে। তাদের অবসর সময়কে তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণে লাগাতে হবে। আমরা নিজেদের এবং আমাদের যুবকদের নবী করীম (ছাঃ)-এর নিম্নের বাণী অনুযায়ী আমলে উদ্বুদ্ধ করতে পারি, যা কিনা তিনি আদেশ ও নছীহত সূত্রে আমাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ، شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغُلُكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ ‘তুমি পাঁচটি অবস্থার পূর্বে পাঁচটি অবস্থাকে দামী গণ্য করবে। তোমার বার্ধক্যের আগে তোমার যৌবনকে, তোমার অসুস্থতার আগে তোমার সুস্থতাকে, তোমার দারিদ্রের আগে তোমার ধনাঢ্যতাকে, তোমার ব্যস্ততার আগে তোমার অবসরকে এবং তোমার মৃত্যুর আগে তোমার হায়াতকে’।[11]
ভাইয়েরা, এ সমস্যার প্রতিকারে সময় যে একটা সুযোগ এবং অবসর যে একটি নে‘মত তা আমাদের জানতে হবে। সেই সাথে আমাদের যুবকদেরও তা জানাতে হবে। হাতছাড়া হয়ে গেলে এগুলোর নাগাল ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই এগুলো আমাদের হাতছাড়া হওয়ার আগেই কিংবা আমাদের উপর আযাব হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বেই আমাদেরকে নবী করীম (ছাঃ)-এর কথামত এ দু’টিকে কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করতে হবে।
অসৎসঙ্গ গ্রহণ যুবসমাজের অধঃপতনের আরেকটি কারণ। সঙ্গী একজন আকর্ষণকারী বটে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‘ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীন-ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং তোমাদের কে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন লক্ষ্য করে’।[12]
ভাইয়েরা! এক বন্ধুর আচরণ-অভ্যাসই অন্য বন্ধুর আচরণ-অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। কারণ অভ্যাস করাতের মত খাঁজে খাঁজে মিলে যায় এবং যে কোন সাহচর্য বা সঙ্গ প্রভাব বিস্তার করে।
আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً
‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মেশক বহনকারী ও হাপরে ফুঁদাতা কামারের মত। মেশক বহনকারী হয় তোমাকে কিছু এমনিতে দিবে অথবা তুমি তার থেকে কিছুটা কিনতে পারবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি এমনিতেই সুগন্ধ পাবে। পক্ষান্তরে হাপরে ফুঁদাতা হয় তোমার কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দিবে, নয় তুমি তার নিকট থেকে কটু গন্ধ পাবে’।[13]
এ ধরনের অধঃপতন চুলকানি-পাঁচড়ার মতো সংক্রামক, এমনকি তার থেকেও এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শয়তান এরূপ যুবকের ঘাড়ে সওয়ার হয়, যাতে তাকে কেন্দ্র করে তার অন্য সাথী-সঙ্গীদের পথভ্রষ্ট করতে পারে। তাইতো দেখা যায়, কত যুবক আজ অসৎ সঙ্গীর পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে গেছে! চরিত্রবান কত যুবক খারাপ সঙ্গীর কুহকে জড়িয়ে পাক-পঙ্কিলতায় আকণ্ঠ ডুবে গেছে! এমন কত মানুষ আছে যারা একদিন নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য অনুগ্রহ-অনুকম্পা ছিল, তারাই আজ স্বীয় পরিবার ও সমাজের জন্য সাক্ষাৎ আযাবে পরিণত হয়েছে। এর পিছনে কারণ ঐ খারাপ সঙ্গী। বিকৃত চিন্তাধারী এমন অনেক সাথী যে কতজনের চিন্তায় বিকৃতি ধরিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এমন চিন্তার ফলে তারা হয় পুরোপুরি কাফের হয়ে গেছে, নয় দুষ্কৃতিকারী পাপাচারী বনে গেছে।[14]
এ সমস্যার প্রতিকার হিসাবে যুবকরা এমন লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করবে যারা নিজেরা ভাল মানুষ, সঠিক পথের অনুসারী এবং বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন। যারা সুন্নাহ অনুসরণের জন্য প্রসিদ্ধ এবং যারা নিজেদের ভাল আচরণ, নিজেদের অবলম্বিত যথার্থ পথ ও নিজেদের লব্ধ বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যুবশ্রেণী ও অন্যদের ভাল কাজে যুক্ত করেন এবং জামা‘আতবদ্ধ হ’তে উদ্বুদ্ধ করেন।
সুতরাং ভাইয়েরা আমার,
লোকদের সঙ্গ গ্রহণের আগে একজন যুবকের কর্তব্য হবে তাদের ওযন করে দেখা, মূল্যায়ন করে দেখা। সে যেন তাদের হাল-হকিকত ও খ্যাতি খুব খেয়াল করে। যদি সঙ্গ লাভের জন্য বাছাইকৃতরা মাহাত্ম্যপূর্ণ ও ভাল আচরণের অধিকারী হন, সুস্পষ্ট দ্বীন মেনে চলেন এবং দ্বীন পালনে সমাজে তাদের সুনাম-সুখ্যাতি আছে, তবে তারাই হবে তার কাঙ্ক্ষিত হারানো ধন। তাদের দরজায় গিয়েই তার বাহন থামবে। কিন্তু যদি মূল্যায়িত ও বাছাইকৃতরা উক্ত মানের না হয়, তাহ’লে অবশ্যই তাদের থেকে সাবধান ও দূরে থাকতে হবে। মিষ্টি মিষ্টি কথা এবং বাহ্যিক জাঁকজমক দেখে যেন সে
ধোঁকা না খায়। কেননা এসব মিষ্টি কথা ও বাহ্যিক সৌন্দর্য এমন প্রতারণা ও গোমরাহীর কারণ হ’তে পারে যার আড়ালে সময় বিশেষে বড় রকমের বিশৃঙ্খলা লুকিয়ে থাকে।
সন্তান যাতে সৎ সঙ্গীদের সঙ্গ গ্রহণে সক্ষম হয় সেজন্য পিতা-মাতার সহযোগিতাপূর্ণ ভূমিকা পালন করা আবশ্যক। পিতা-মাতা দু’জনেরই নিজ সন্তানদের সঙ্গে সঙ্গদান বা সময় ব্যয় করা অবশ্য কর্তব্য। যার-তার সঙ্গে সঙ্গদানের জন্য সন্তানদের ছেড়ে দেওয়া পিতা-মাতার জন্য মোটেও উচিত নয়। এমন করলে যখন সন্তান পিতার মাথায় কুড়াল মারবে তখন সে কাঁদবে আর বলবে, আমার ছেলে এখন আমার অবাধ্য হয়ে গেছে! আমার ছেলে একসময় মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত নিয়মিত জামা‘আতে আদায় করত; অথচ এখন সে মোটেও ছালাত আদায় করে না!! আমার ছেলে ছিল রহমত বরকত অথচ এখন সে আমার জন্য আযাবে পরিণত হয়েছে!!!
পিতা-মাতাকে শুরু থেকেই এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকতে হবে। সন্তানেরা যাতে সৎ সঙ্গী বেছে নেয় সেজন্য তারা গোড়া থেকেই তাদের উৎসাহিত করবে। একজন যুবকের অবশ্যই সাথী-সঙ্গী দরকার। আমরা এ কথা বলতে পারি না যে, আমাদের যুবকদের আমরা ঘরে আবদ্ধ করে রাখব, তাদের কোন সাথী-বন্ধু থাকবে না। কিন্তু যুবকদের কর্তব্য হবে নিজেদের জন্য এমন সব বন্ধু গ্রহণ করা, যারা তাদের উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে, জান্নাতের পানে চালিত করবে। যাদের মধ্যে খারাপ কাজ ও খারাপ আচরণ দেখতে পাবে, যাদের দেখবে তারা খারাপ পথ ও অবক্ষয়ের দিকে ডাকে তাদের বন্ধুত্ব গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে, যদিও তারা হাসিমুখে তাদের পানে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন কারো সঙ্গে একবার বন্ধুত্ব করে ফেললে দহরম-মহরমের আগেই সরে পড়তে হবে, যাতে পদস্খলন না ঘটে। (ক্রমশঃ)
মূল (আরবী) : ড. সুলায়মান আর-রুহাইলী
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ঝিনাইদহ।
[1]. বুখারী হা/৫০৬৩।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/৪৩।
[3]. হাকেম ১/১৭১ পৃ., হা/৩১৮।
[4]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/৩৭৫।
[5]. আবুদাউদ হা/৪৬০৭; তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪২।
[6]. আবুদাউদ হা/৪৬১১, সনদ ছহীহ।
[7]. বুখারী হা/৩৬০৬।
[8]. তিরমিযী হা/২১৬৭।
[9]. বুখারী হা/৬৪১২।
[10]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৪৫৬২।
[11]. হাকেম মুস্তাদরাক ৪/৩৪১, হা/৭৮৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৭৭।
[12]. আবুদাউদ হা/৪৮৩৩; তিরমিযী হা/২৩৭৮।
[13]. বুখারী হা/৫৫৩৪; মুসলিম হা/৬৫৮৬।
[14]. ধূমপান, মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, পর্দাহীনতা, দ্বীন পালনে অনীহা, দ্বীনের বিরোধিতা, নাস্তিকতার বিস্তার ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাথী ও সহপাঠীদের যে ব্যাপক ভূমিকা আছে তা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। আবার সৎসঙ্গীদের চেষ্টা ও প্রভাবে অনেকেই এসব খারাপ আচরণ ছেড়ে দিয়ে ভাল পথে ফিরে এসেছে, দ্বীন-ধর্মের খাঁটি অনুসারী হয়ে গেছে তাও চির সত্য। তাই খারাপ কাউকে ঘৃণা না করে অনেকে মিলে সঙ্গ দিয়ে তাকে বা তাদেরকে ভাল পথে আনার চেষ্টা করতে হবে। খারাপ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার কী হ’তে পারে তা খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে হবে। হতাশ কিংবা নিশ্চেষ্ট বসে থাকা আমাদের বর্তমান যে স্বভাব তার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শরী‘আতের আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি আনিল মুনকার আমাদের সে কথাই বলে।- অনুবাদক।