থানচি, বান্দরবান ২৮ ও ২৯শে অক্টোবর বৃহস্পতি ও শুক্রবার :
উক্ত তারিখে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ৩য় বার্ষিক কেন্দ্রীয়
শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয়। দু’দিনব্যাপী উক্ত শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করেন
‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, সাধারণ সম্পাদক
আবুল কালাম, প্রচার সম্পাদক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক
সম্পাদক মুহাম্মাদ আজমাল ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মুহাম্মাদ মুজাহিদুর রহমান,
আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর শিক্ষক শরীফুল ইসলাম
মাদানী, আল-‘আওনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব ও
সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির সহ দেশের ২১টি যেলা থেকে
মোট ৭৭জন কর্মী ও সুধী। শিক্ষা সফরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন
চট্টগ্রাম যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি হাফেয শেখ সাদী, সাধারণ সম্পাদক আরজু
হোসাইন ছাবিবর, ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি জসীমুদ্দীন, কক্সবাজার যেলা
‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুজীবুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক আরমান হোসাইন
প্রমুখ। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান যেলার দু’জন নতুন আহলেহাদীছ
ভাই ইফতিদার মাশফী ও মাহমূদুল হাসান রায়হান, লোহাগড়ার আব্দুল মান্নান ও
কক্সবাজার সোনাপাড়ার মাহবূব আলম।
২৮শে অক্টোবর ভোরে সফরকারীরা বান্দরবান শহরে পৌঁছান। এসময় তাদেরকে স্বাগত জানান ওয়াহিদ খান শিকদার (খোকন), ইয়াসীন আরাফাত, ইফতিদার মাশফী ও আব্দুল্লাহ আল-নোমান প্রমুখ স্থানীয় আহলেহাদীছ ভাইগণ। অতঃপর সকাল ৮-টায় ৬টি চাঁদের গাড়ী রিজার্ভ নিয়ে সফরকারী দলটি বান্দরবান শহর থেকে থানচির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এসময় কেন্দ্রীয় সভাপতি সফরকারীদের সামনে ভ্রমণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন এবং এবারের সফর থেকে তিনটি বিষয় তথা ধৈর্য, আনুগত্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রতি আহবান জানান। বিশেষতঃ সফরকারীরা যেন কোন অবস্থাতেই ব্যবহৃত ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র নিক্ষেপ না করে সে ব্যাপারে যোর তাকীদ দেন। পাহাড়ী পথে ৩ ঘন্টা সফরের পর বেলা সাড়ে ১২-টা নাগাদ দলটি থানচি উপযেলা শহরে পৌঁছে। সেখান থেকে তারা ১৬টি ইঞ্জিন চালিত বিশেষ নৌকায় যাত্রা শুরু করে। অতঃপর খরস্রোতা সাংগু নদী ধরে প্রায় ৩ ঘন্টা চলার পর রেমাক্রি পৌঁছে। দু’পাশে সুউচ্চ পাহাড় মধ্যখানে স্রোতের বিপরীতে উঁচু-নীচু খাদবিশিষ্ট নৌপথের রোমাঞ্চকর ভ্রমণ সফরকারীদের বিমোহিত করে তোলে। অতঃপর রেমাক্রি থেকে বাদ মাগরিব অন্ধকার নদীপথে এবং পাহাড়ী জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আরো প্রায় দু’ঘন্টা চলার পর নাফাখুম ঝর্ণা সংলগ্ন ৩টি পাহাড়ী মাচাং ঘরে অবস্থান নেয়।
রাতের খাবারের পূর্বে দীর্ঘক্ষণ সাংগঠনিক আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মৌলভীবাজারের নওমুসলিম ভাই আব্দুল্লাহ, বান্দরবানের ইফতিদার মাশফীসহ বিভিন্ন যেলার দায়িত্বশীল ও সুধীবৃন্দ তাদের জীবনের কাহিনী শোনান এবং আহলেহাদীছ হওয়ার আবেগময় অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অতঃপর ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য পেশ করেন এবং সাংগঠনিক জীবন যাপনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পরদিন বাদ ফজর পৃথক ৩টি মাচাং ঘরে দারস প্রদান করেন আবুল কালাম, শরীফুল ইসলাম মাদানী, সোহেল বিন আকবার মাদানী ও আরজু হোসাইন ছাবিবর প্রমুখ। এসময় বক্তব্য শ্রবণ করে একটি ঘরের মালিক জনৈক খৃষ্টধর্মাবলম্বী ত্রিপুরা অত্যন্ত খুশী হন এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে এক কাঁদি পাহাড়ী কলা উপহার দেন। তিনি মন্তব্য করেন, এখানে অনেক পর্যটক দল আসে, কিন্তু আপনাদেরকেই প্রথম দেখলাম যারা এখানে এসে গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড়ের বদলে আল্লাহর প্রশংসা করছেন। অতঃপর সকালের সূর্যোলোয়ে অনিন্দ্যসুন্দর নাফাখুম ঝর্ণার পাশে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে বেলা সাড়ে ৮-টায় দলটি রওনা হয় ফিরতি পথে। এরপর রেমাক্রি ঝর্ণায় যাত্রাবিরতি ও গোসল সেরে থানচির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। থানচি পৌঁছানোর পর বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুম‘আর ছালাত আদায় করা হয়। সেখানে ছালাতুর রাসূল, আত-তাহরীক, মীলাদ প্রসঙ্গ প্রভৃতি বই ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। স্থানীয় জনগণ অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তা গ্রহণ করেন।
অতঃপর থানচি থেকে রওয়ানা হয়ে কাফেলা বলিপাড়া বিজিবি চেকপোস্ট ও নীলগিরির ক্যাফে নীল স্পটে যাত্রাবিরতির পর বাদ মাগরিব বান্দরবান শহরের নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় সভাপতি তাদের উদ্দেশ্যে বিদায়ী নছীহত ও দো‘আ করেন। বিশেষ করে বান্দরবান যেলার নতুন আহলেহাদীছ ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বান্দরবান যেলায় আগামীতে আহলেহাদীছদের একটি মারকায প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অতঃপর সফরকারীগণ বান্দরবান থেকে স্ব স্ব গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ফালিল্লাহিল হামদ।