১৩. ইলম অর্জন করা : নেক
আমল করার জন্য ইলমের কোন বিকল্প নেই। কোন কাজ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না
থাকলে যেমন তা সুচারুরূপে করা যায় না তেমনি ইবাদত সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না
থাকলে সে ইবাদত যথার্থরূপে আদায় করা যায় না। সেজন্য আল্লাহর নির্দেশ-
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে
আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপরে জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরয’।[1]
ইলমের
গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي
الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ ‘বল, যারা জানে এবং
যারা জানে না তারা কি সমান?’ (যুমার ৩৯/৯)। তিনি অন্যত্র
বলেন,قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَالْبَصِيْرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي
الظُّلُمَاتُ وَالنُّوْرُ- ‘বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হ’তে পারে? আলো ও
অন্ধকার কি এক হ’তে পারে?’ (রা‘দ ১৩/১৬)। ইলম না থাকলে
জাহান্নামে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন আল্লাহ পবিত্র কুরআনে
জাহান্নামীদের উক্তি উল্লেখ করেছেন এভাবে-وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ
أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِيْ أَصْحَابِ السَّعِيْرِ- ‘তারা আরও বলবে, যদি
আমরা সেদিন (নবীদের কথা) শুনতাম এবং তা অনুধাবন করতাম, তাহ’লে আজ
জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হ’তাম না’ (মুলক ৬৭/১০)। সুতরাং আমল
সম্পর্কে জানা ও তা না করার পরিণতি অবহিত হওয়ার জন্য ইলম অর্জন করা যরূরী।
জ্ঞানার্জনের গুরুতেবর উপরে ভিত্তি করে ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা
করেছেন- باب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ ‘কথা ও কর্মের পূর্বে
জ্ঞানার্জন করা’ অনুচ্ছেদ।[2]
জ্ঞানার্জনের
ফযীলত অত্যধিক। জ্ঞানের কারণেই আল্লাহ মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ
বলেন,يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ أُوْتُوْا
الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ- ‘তোমাদের মধ্যে
যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন তাদেরকে উচ্চ
মর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)।
ইলম অর্জনের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ سَلَكَ طَرِيْقًا
يَلْتَمِسُ فِيْهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيْقًا إِلَى الْجَنَّةِ.
‘যে ব্যক্তি ইলম হাছিল করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের
পথ সুগম করে দিবেন’।[3] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ سَلَكَ طَرِيْقًا يَطْلُبُ
فِيْهِ عِلْمًا سَلَكَ اللهُ بِهِ طَرِيْقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ
وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ
وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِى
الأَرْضِ وَالْحِيْتَانُ فِىْ جَوْفِ الْمَاءِ- ‘যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করার
উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তাকে জান্নাতের কোন
একটি পথে পেঁŠছে দেন এবং ফেরেশতাগণ ইলম অন্বেষণকারীর উপর খুশি হয়ে নিজেদের
ডানা বিছিয়ে দেন। এছাড়া আলেমদের জন্য আসমান ও যমীনের সকল অধিবাসী আল্লাহর
নিকট দো‘আ ও প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে বসবাসকারী মাছও (তাদের জন্য
দো‘আ করে)’।[4]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ)
বলেন,يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَوْحَى إِلَيَّ أَنَّهُ مَنْ
سَلَكَ مَسْلَكًا فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ سَهَّلْتُ لَهُ طَرِيْقَ
الْجَنَّةِ وَمَنْ سَلَبْتُ كَرِيْمَتَيْهِ أَثَبْتُهُ عَلَيْهِمَا
الْجَنَّةَ وَقَصْدٌ فِيْ عِلْمٍ خَيْرٌ مِنْ فَضْلٍ فِيْ عِبَادَةٍ.
‘আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী প্রেরণ করেছেন এই মর্মে, যে ব্যক্তি ইলম
হাছিলের লক্ষ্যে কোন পথ গ্রহণ করবে, তার জন্য আমি জান্নাতের পথ সহজ করে দেব
এবং যার দু’টি সম্মানিত বস্ত্ত (দু’চক্ষু) আমি ছিনিয়ে নিয়েছি (অন্ধ করেছি)
তার বদলে আমি জান্নাত দান করব। আর ইবাদত অধিক করার তুলনায় অধিক ইলম অর্জন
করা উত্তম’।[5]
অতএব প্রতি দিন অন্ততঃ ২-৫টি হাদীছ ও কুরআনের আয়াত অর্থসহ অধ্যয়ন করা এবং অন্যান্য ইসলামী বই অন্ততঃ ১০ পৃষ্ঠা পাঠ করার মাধ্যমে ইসলামী জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা প্রত্যেকের জন্য যরূরী।
১৪. দাওয়াতী কাজ করা : ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ সংশোধনের অনন্য মাধ্যম হচ্ছে দাওয়াত। মানুষকে হকের পথে দাওয়াত দেওয়া ইসলামের নির্দেশ। আল্লাহ বলেন,وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ- ‘আর তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। বস্ত্ততঃ তারাই হ’ল সফলকাম’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,قُلْ هَـذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْ إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيْرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، ‘বল, এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ آيَةً ‘একটি আয়াত জানা থাকলেও তা আমার পক্ষ থেকে তোমরা পৌঁছে দাও’।[6] তিনি আরো বলেন,مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجِرْ مِثْلَ أُجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ لاَيَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلَ آثَامِ مَنْ تِبَعَهُ لاَيَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا. ‘যে ব্যক্তি মানুষকে হেদায়াত বা কল্যাণের দিকে আহবান করে, সে ব্যক্তি হেদায়াতের অনুসারী ব্যক্তির সমান নেকী পাবে। তবে হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের নেকীতে কোন কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি লোকদেরকে গোনাহ বা গুমরাহীর দিকে আহবান করবে সেই ব্যক্তিকেও গুমরাহীর অনুগামীদের সমান গুনাহ দেওয়া হবে। এতে এ লোকদের গোনাহে কোন কম করা হবে না’।[7] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ دَلَّ عَلَي خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ ‘কল্যাণের পথ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি কল্যাণকারীর ন্যায় নেকীর অধিকারী হবে’।[8] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন,فَوَاللهِ لَأَنْ يَّهْدِىَ اللهُ بِكَ رَجُلاً واَحِدًا خَيْرٌ لَّكَ مِنْ حُمُرُ النَّعْمِ. ‘আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে মহান আল্লাহ কোন একজন লোককে হেদায়াত দিলে সেটা তোমার জন্য (মূল্যবান) লাল উটের চেয়েও উত্তম’।[9] তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য করণীয় হ’ল যে যেখানে থাকে সেখানে দাওয়াতী কাজ করা। এতে নিজে উপকৃত হবে এবং ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ সংশোধিত হবে।
খ. মু‘আমালাত : মানুষ ইবাদতের পরে জীবন ধারণের প্রয়োজনে যে কাজগুলি করে থাকে তাকে মু‘আমালাত হিসাবে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় পেশ করা হ’ল।-
১. পানাহার করা : পানাহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদব বা শিষ্টাচার রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হ’ল।-
ক. হালাল ও পবিত্র রূযী খাবে (বাক্বারাহ ২/১৬৮)। খ. খাবার পূর্বে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিবে।[10] গ. ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করবে।[11] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ আহার করে, তখন সে যেন বলে,بِسْمِ اللهِ (বিস্মিল্লাহ) ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি’।[12] ঘ. ডান হাত দিয়ে খাবে ও পান করবে।[13] ঙ. পাত্রের মধ্যস্থল থেকে খাবে না বরং নিজের পার্শ্ব থেকে খাবে।[14] চ. প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে স্মরণ হ’লে بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهُ وَاَخِرَهُ (বিসমিল্লাহি আউয়ালাহূ ওয়া আখেরাহূ) বলবে।[15] অথবা বলবে, بِسْمِ اللهِ فِى أَوَّلِهِ وَأَخِرِهِ(বিস্মিল্লা-হি ফী আওয়ালিহী ওয়া আ-খিরিহি) ‘খাওয়ার শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে’।[16] ছ. প্লেট ও আঙ্গুল ভালভাবে চেটে খাবে।[17] জ. খাবার পড়ে গেলে তা উঠিয়ে পরিস্কার করে খেয়ে নিবে। কারণ সে জানে না কোন খাবারে বরকত আছে।[18] ঝ. একাকী না খেয়ে একত্রে খাবে। এতে বরকত রয়েছে।[19] ঞ. পান করার সময় পাত্রের বাইরে ৩ বার নিঃশ্বাস ফেলবে।[20] ট. পানির পাত্রে বা খাবারে নিঃশ্বাস ছাড়বে না বা ফুঁক দিবে না।[21] ঠ. দাঁড়িয়ে পানাহার করবে না।[22] দুধ পান করার পর বলবে,اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ- (আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া যিদনা মিনহু)। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দান কর এবং তা বৃদ্ধি করে দাও’।[23]
ড. পেটের একভাগ খাদ্য দিয়ে ও একভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ করবে এবং একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।[24] ণ. কাত হয়ে বা ঠেস দিয়ে খাবে না।[25] ত.
খাওয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে খাবে। অহেতুক গল্প-গুজব করবে না। আল্লাহর
শুকরিয়া আদায় করবে এবং শেষে বলবে ‘আল-হামদুল্লিাহ’ এবং অন্যান্য দো‘আ পড়বে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট হন, যে খাওয়া ও
পান করার মাঝে اَلْحَمْدُ لِلّهِ (আলহাম্দু লিল্লা-হ) বলে।[26]
খাবার শেষে আরো কয়েকটি দো‘আ হচ্ছে-
১. اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَاَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ (আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া আত‘ইমনা খইরাম মিনহু)। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এই খাদ্যে বরকত দাও এবং এর চেয়ে উত্তম খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও’।[27]
২. اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنِىْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّىْ وَلاَ قُوَّةَ- (আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গায়রি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুউওয়াহ)।
অর্থ : ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ পানাহার করালেন এবং
এর সামর্থ্য প্রদান করলেন, যাতে ছিল না আমার কোন উপায়, ছিল না কোন শক্তি’।[28]
৩. اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِىْ اَطْعَمَ وَسَقَى وَسَوَّغَهُ وَجَعَلَ لَهُ مَخْرَجًا-
(আলহাম্দু লিল্লাহিল্লাযী আত‘আমা ওয়া সাক্বা ওয়া সাউওয়াগাহূ ওয়া জা‘আলা লাহূ মাখরাজা)। অর্থ : ‘ঐ আল্লাহর প্রশংসা, যিনি খাওয়ালেন, পান করালেন এবং সহজভাবে প্রবেশ করালেন ও তা বের হওয়ার ব্যবস্থা করলেন’।[29]
উল্লেখ্য,
সমাজে প্রচলিতاَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنَا وَسَقَنَا
وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ মর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ।[30]
থ.
খাওয়া শেষে প্লেট বা দস্তরখান উঠানোর সময় বলবে, اَلْحَمْدُ لِلَّهِ
حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِىٍّ وَلاَ
مُوَدَّعٍ وَلاَ مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا- (আলহামদুলিল্লা-হি হামদান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি গায়রা মাকয়্যিন ওয়ালা মুওযাদ্দায়িন ওয়ালা মুস্তাগনান আনহু রববানা)।
অর্থ : ‘পাক পবিত্র, বরকতময় আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। তাঁর নে‘মত হ’তে
মুখ ফিরানো যায় না, তাঁর অন্বেষণ ত্যাগ করা যায় না এবং এর প্রয়োজন থেকেও
মুক্ত থাকা যায় না’।[31]
দ. মেযবানের জন্য এ দো‘আ করবে,اَللَّهُمَّ اَطْعِمْ مَنْ اَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ. (আল্লাহুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াসক্বি মান সাক্বানী’)। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল তুমি তাকে আহার করাও, যে আমাকে পান করাল তুমি তাকে পান করাও’।[32] অথবা বলবে, اَللّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيْمَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْلَهُمْ وَارْحَمْهُمْ- (আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফীমা রাযাকতাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম)।
অর্থ
: ‘হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে যে রিযিক প্রদান করেছ, তাতে তাদের জন্য বরকত
প্রদান কর। তাদের পাপসমূহ ক্ষমা কর এবং তাদের প্রতি রহমত নাযিল কর’।[33]
২. পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা : পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন
থাকা এবং অপবিত্রতা হ’তে দূরে থাকা আল্লাহর নির্দেশ। তিনি বলেন,
وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ ‘অপবিত্রতা হ’তে দূরে থাক’ (মুদ্দাচ্ছির৭৪/৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,طَهِّرُوْا أَفْنِيَتَكُمْ؛ فَإِنَّ الْيَهُوْدَ لاَ
تُطَهِّرُ أَفْنِيَتَهَا ‘তোমরা তোমাদের বাড়ীর আঙ্গিনা ও সম্মুখভাগ
পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখ। কেননা ইহুদীরা তা পরিস্কার রাখে না’।[34]
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা দু’প্রকার। যথা- ১. পোষাক-পরিচ্ছদের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ২. দৈহিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। পোষাক-পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে আল্লাহ রাসূলকে বলেন, وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ‘তোমার পোষাক পবিত্র কর’ (মুদ্দাচ্ছির৭৪/৪)। পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন। আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/২২২)। ২. দৈহিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। যেমন-
ক. গোসল : গোসল
বড় ধরনের অপত্রিতা থেকে পাক-পবিত্র হওয়ার মাধ্যম। যদি কোন কারণে মানুষের
শরীর অপবিত্র হয়ে যায় এবং গোসল ব্যতীত পবিত্র না হয়, তখন গোসল ফরয হয়।
আল্লাহ বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا- ‘আর যদি তোমরা নাপাক
হয়ে যাও, তাহ’লে গোসল কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,حَقٌّ
عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ أَنْ يَّغْتَسِلَ فِىْ كُلِّ سَبْعَةِ أَيَّامٍ
يَوْمًا يَغْسِلُ فِيْهِ رَأْسَهُ وَجَسَدَهُ- ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক্ব
রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত
করবে’।[35]
খ. ওযূ : ছোট-খাট অপবিত্রতা যেমন বায়ু নির্গত হওয়া, পেশাব-পায়খানা করা ইত্যাদি কারণে ওযূ করতে হয়। বিশেষ করে ছালাত আদায়, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ইত্যাদি ইবাদতে জন্য ওযূ করতে হয়। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ- ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হবে, তখন (তার পূর্বে ওযূবিহীন থাকলে ওযূ করার জন্য) তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন,لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ ‘যে
ব্যক্তির হাদাছ (বায়ু নির্গত) হয় তাঁর ছালাত কবুল হবে না, যতক্ষণ না সে ওযূ
করে’।[36] তিনি আরো বলেন, لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ- ‘ওযূ ব্যতীত ছালাত কবুল হয় না’।[37]
উত্তমরূপে ওযূ করার ফযীলত অত্যধিক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَوَضَّأَ
لِلصَّلاَةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلاَةِ
الْمَكْتُوبَةِ فَصَلاَّهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ مَعَ الْجَمَاعَةِ أَوْ فِى
الْمَسْجِدِ غَفَرَ اللهُ لَهُ ذُنُوْبَهُ- ‘যে ব্যক্তি ছালাতের জন্য ওযূ
করে এবং পরিপূর্ণভাবে ওযূ করে, অতঃপর ফরয ছালাতের উদ্দেশ্যে হেঁটে গিয়ে
লোকজনের সঙ্গে ছালাত আদায় করে, কিংবা তিনি বলেন, জামা‘আতের সঙ্গে ছালাত
আদায় করে, কিংবা তিনি বলেন, মসজিদে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির
গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন’।[38]
গ. তায়াম্মুম : কেউ যদি পানি না পায় অথবা পানি ব্যবহার করতে না পারে তাহ’লে সে তায়াম্মুম করবে। আল্লাহ বলেন,وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ- ‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা টয়লেট থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর এবং এজন্য তোমাদের মুখমন্ডল ও দু’হাত উক্ত মাটি দ্বারা মাসাহ কর’ (মায়েদাহ ৫/৬; নিসা ৪/৪৩)।
তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আম্মার (রাঃ) বলেন,
بَعَثَنِى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِى حَاجَةٍ فَأَجْنَبْتُ، فَلَمْ أَجِدِ الْمَاءَ، فَتَمَرَّغْتُ فِى الصَّعِيْدِ كَمَا تَمَرَّغُ الدَّابَّةُ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ أَنْ تَصْنَعَ هَكَذَا. فَضَرَبَ بِكَفِّهِ ضَرْبَةً عَلَى الأَرْضِ ثُمَّ نَفَضَهَا، ثُمَّ مَسَحَ بِهَا ظَهْرَ كَفِّهِ بِشِمَالِهِ، أَوْ ظَهْرَ شِمَالِهِ بِكَفِّهِ، ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ-
রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে কোন এক প্রয়োজনে পাঠালেন।
(পথিমধ্যে) আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম এবং পানি পেলাম না। তখন আমি মাটিতে
গড়াগড়ি দিলাম চতুষ্পদ জন্তু যেভাবে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়। তারপর আমি
রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে এ ঘটনা বললাম। তিনি বললেন, তোমার জন্য হাত
দিয়ে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল, এই বলে তিনি স্বীয় দু’হাত একবার মাটিতে মারলেন।
অতঃপর তা ঝেড়ে ফেললেন। তারপর বাম হাত দিয়ে ডান হাত মাসাহ করলেন এবং উভয়
হাতের কব্জির উপরিভাগ ও মুখমন্ডল মাসাহ করলেন’।[39]
ঠান্ডা
লাগার ভয়ে তায়াম্মুম করা যায়। আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, যাতুস সালাসিল
যুদ্ধের সময় খুব শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হ’ল, আমি গোসল করলে
ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই আমি তায়াম্মুম করে লোকদের ছালাত আদায় করালাম। পরে
তারা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জানালো। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে
আমর! তুমি নাকি জুনুবী অবস্থায় তোমার সাথীদের সঙ্গে ছালাত আদায় করেছ! তখন
আমি গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর
এই বাণীও শুনেছি, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ
তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান’ (নিসা ৪/২৯)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হেসে দিলেন এবং কিছুই বললেন না’।[40]
ঘ. প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটানো : মানুষ
প্রাকৃতিক প্রয়োজনে পেশাব-পায়খানা করে। এক্ষেত্রে কিছু করণীয় রয়েছে। (১)
পায়খানায় প্রবেশকালে বলবে,اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ
الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুব্ছে ওয়াল খাবা-ইছ) ‘হে আল্লাহ! আমি পুরুষ ও মহিলা জিন (-এর অনিষ্টকারিতা) হ’তে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[41] অন্য বর্ণনায় শুরুতে بِسْمِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হ’ বলার কথা এসেছে।[42] অতঃপর বের হওয়ার সময় বলবে, غُفْرَانَكَ (গুফরা-নাকা) ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করছি’।[43]
উল্লেখ্য যে, পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় ‘আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আযহাবা ‘আন্নিল আযা ওয়া ‘আ-ফা-নী’ বলার হাদীছটি যঈফ।[44]
(২) উন্মুক্ত জায়গা হ’লে দূরে গিয়ে আড়ালে পেশাব-পায়খানা করবে।[45] এ সময় ক্বিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ ফিরিয়ে পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ।[46] তবে ক্বিবলার দিকে আড়াল থাকলে বা চারিদিকে ঘেরা স্থানে হ’লে জায়েয আছে।[47] (৩) সামনে আড়াল বা পর্দা রেখে বসে পেশাব করবে।[48] বাধ্যগত কারণ ব্যতীত দাঁড়িয়ে পেশাব করা যাবে না।[49] (৪) রাস্তায় বা কোন ছায়াদার বৃক্ষের নীচে (যেখানে মানুষ বিশ্রাম নেয়) পেশাব-পায়খানা করা যাবে না।[50] বদ্ধ পানি, যাতে গোসল বা ওযূ করা হয়, তাতে পেশাব করা যাবে না।[51]
(৫)
নরম মাটিতে পেশাব করবে। যেন পেশাবের ছিটা কাপড়ে না লাগে। পেশাব হ’তে
ভালভাবে পবিত্রতা হাছিল করা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,تَنَزَّهُوْا مِنَ
الْبَوْلِ فَإِنَّ عَامَّةَ عَذَابِ الْقَبْرِ مِنْهُ ‘তোমরা পেশাব থেকে
পবিত্রতা অর্জন কর। কেননা অধিকাংশ কবরের আযাব একারণেই হয়ে থাকে’।[52] (৬) পায়খানার পর পানি দিয়ে বাম হাতে ইস্তেঞ্জা বা সৌচকার্য সম্পন্ন করবে।[53] অতঃপর মাটিতে (অথবা সাবান দিয়ে) ভালভাবে ঘষে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলবে।[54] (৭) পানি পেলে কুলূখ (মাটির ঢেলা) ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।[55] পানি না পেলে কুলূখ ব্যবহার করবে। এজন্য তিনবার বা বেজোড় সংখ্যক ঢেলা ব্যবহার করবে।[56] ডান হাত দিয়ে ইস্তেতঞ্জা করা যাবে না এবং শুকনা গোবর, হাড় ও কয়লা একাজে ব্যবহার করা যাবে না।[57]
(৮) কুলূখ ব্যবহার করার পর পুনরায় পানির প্রয়োজন নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,إِذَا ذَهَبَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْغَائِطِ فَلْيَذْهَبْ مَعَهُ
بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ يَسْتَطِيْبُ بِهِنَّ فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ-
‘তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে যেন তিনটি পাথর সাথে নিয়ে যায় এবং ওগুলো দ্বারা
পবিত্রতা অর্জন করে। কারণ তার জন্য তাই যথেষ্ট’।[58] কুলূখের পরে পানি ব্যবহার করার প্রচলিত বর্ণনা ভিত্তিহীন।[59] (৯) পেশাবে সন্দেহ দূর করার জন্য কাপড়ের উপর থেকে বাম হাতে লজ্জাস্থান বরাবর সামান্য পানি ছিটিয়ে দিবে।[60]
উল্লেখ্য, ভালভাবে ইস্তেঞ্জা করার নামে ও সন্দেহ দূর করার জন্য কুলূখ ধরে ৪০ কদম হাঁটা ও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে পেশাব বের করার চেষ্টা করা যেমন ভিত্তিহীন, তেমনি জঘণ্য বেহায়াপনার শামিল। এসব করা বাড়াবাড়ি ও বিদ‘আতের পর্যায়ভুক্ত। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। (১০) হাজতরত অবস্থায় (যরূরী প্রয়োজন ব্যতীত) কথা বলা যাবে না।[61]
ঙ. মেসওয়াক করা : মেসওয়াক করা দশটি স্বভাবগত আচরণের অন্যতম।[62] এর ফযীলত ও উপকারিতা অনেক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, السِّوَاكَ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ- ‘মেসওয়াক করা মুখ পবিত্র রাখার ও প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়’।[63] অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنَّ الْعَبْدَ
إِذَا تَسَوَّكَ، ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي قَامَ الْمَلَكُ خَلْفَهُ،
فَتَسَمَّعَ لِقِرَاءَتِهِ فَيَدْنُو مِنْهُ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا
حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيهِ فَمَا يَخْرُجُ مِنْ فِيْهِ شَيْءٌ مِنَ
الْقُرْآنِ، إِلاَّ صَارَ فِيْ جَوْفِ الْمَلَكِ، فَطَهِّرُوْا
أَفْوَاهَكُمْ لِلْقُرْآنِ ‘বান্দা যখন ছালাতে দন্ডায়মান হয় তখন ফেরেশতা
তার পিছনে দন্ডায়মান হয়ে তার ক্বিরাআত শুনতে থাকেন। ফেরেশতা তার নিকটবর্তী
হন। পরিশেষে তিনি নিজ মুখ তার (বান্দার) মুখে মিলিয়ে দেন। ফলে তার মুখ হ’তে
কুরআনের যেটুকু অংশ বের হয় সেটুকু অংশই ফেরেশতার পেটে ঢুকে যায়। সুতরাং
কুরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর’।[64]
তিনি
বলেন,طَيِّبُوْا أَفْوَاهَكُمْ بِالسِّوَاكِ؛ فَإِنَّهَا طُرُقُ
الْقُرْآنِ- ‘মেসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর। কারণ মুখ হ’ল
কুরআনের পথ’।[65] তিনি আরো বলেন, أُمِرْتُ بِالسِّوَاكِ حَتَّى خِفْتُ
عَلَى أَسْنَانِيْ- ‘আমাকে (এত বেশী) মেসওয়াক করতে আদেশ করা হয়েছে যে, তাতে
আমি আমার দাঁত ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছি’।[66]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আরো বলেন,أُمِرْتُ بِالسِّوَاكِ حَتَّى خَشِيْتُ أَنْ يُّكْتَبَ
عَلَىَّ، ‘আমাকে মেসওয়াক করতে আদেশ করা হয়েছে, এতে আমার ভয় হয় যে, হয়তো
মেসওয়াক করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে’।[67]
৩. বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়া : বাড়ীতে
প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا
دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ وَعِنْدَ
طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ لاَ مَبِيْتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ. وَإِذَا
دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ
أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ. وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ
قَالَ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ وَالْعَشَاءَ- ‘কোন ব্যক্তি তার ঘরে
প্রবেশকালে এবং খাবার গ্রহণকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে (বিসমিল্লাহ বললে)
শয়তান (তার সংগীদেরকে) বলে, তোমাদের রাত্রিযাপন এবং রাতের আহারের কোন
ব্যবস্থা হ’ল না। কিন্তু কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না
করলে (বিসমিল্লাহ না বললে) শয়তান বলে, তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গা পেয়ে
গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে (বিসমিল্লাহ না বললে) শয়তান
বলে, তোমাদের রাতের আহার ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল’।[68] আর গৃহে প্রবেশকালে সালাম দেওয়া যরূরী।[69] এমনকি গৃহে কেউ বসবাস না করলেও সালাম দিতে হবে।[70]
৪. পোষাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা : পোষাক আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মতের অন্যতম (আ‘রাফ ৭/২৬), যা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয় (আ‘রাফ ৭/৩১)।[71] পোষাকের ক্ষেত্রে হারাম ও হালাল পোষাক বেছে পরিধান করা মুমিনের জন্য অবশ্য করণীয়। ইসলামে কতিপয় পোষাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন- ১. পুরুষের জন্য রেশমী ও স্বর্ণের কারুকার্য খচিত পোষাক।[72] ২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোষাক[73] ৩. মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোষাক[74] ৪. খ্যাতি ও অহংকার প্রকাশক পোষাক[75] ৫. অমুসলিমদের ধর্মীয় পোষাক[76] ৬. আঁটসাঁট পোষাক[77] প্রভৃতি।
পোষাক পরিধানের ক্ষেত্রে কিছু কর্তব্য রয়েছে। যা প্রত্যেক মুমিনের পালন করা উচিত। এতে সুন্নাত পালনও হবে এবং ছওয়াবও অর্জিত হবে। যেমন-
ক. ডান দিক থেকে পরিধান করা ও বাম দিক থেকে খোলা : আবু
হুরায়রা (রাঃ) বলেন,كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا لَبِسَ
قَمِيْصًا بَدَأَ بِمَيَامِنِهِ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জামা পরিধান কালে ডান
দিক থেকে শুরু করতেন’।[78] অপরদিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন,إِذَا لَبِسْتُمْ
وَإِذَا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَءُوْا بِأَيَامِنِكُمْ. ‘তোমরা যখন পোশাক
পরিধান করবে এবং যখন ওযূ করবে তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে’।[79]
কেবল
পোষাকই নয় জুতা পরিধানের ক্ষেত্রেও ডান দিক থেকে শুরু করার ব্যাপারে রাসূল
(ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,إِذَا انْتَعَلَ أَحَدُكُمْ
فَلْيَبْدَأْ بِالْيَمِيْنِ وَإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدَأْ بِالشِّمَالِ،
لِتَكُنِ الْيُمْنَى أَوَّلَهُمَا تُنْعَلُ وَآخِرَهُمَا تُنْزَعُ. ‘তোমরা
যখন জুতা পরিধান করবে তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে এবং যখন খুলবে তখন বাম
দিক থেকে শুরু করবে। যাতে ডান পা প্রথমে আবৃত ও শেষে অনাবৃত হয়’।[80]
খ. পোষাক পরিধানকালে দো‘আ : পোষাক পরিধানকালে দো‘আ করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শিক্ষা দিয়েছেন। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ إِمَّا قَمِيْصًا أَوْ عِمَامَةً ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهِ وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ.
‘রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) নতুন পোষাক পরিধান করলে তার নাম উল্লেখ করতেন, জামা বা পাগড়ি যাই
হোক। অতঃপর বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনারই সকল প্রশংসা, আপনিই আমাকে এই পোষাকটি
পরিধান করিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ ও মঙ্গল প্রর্থনা করছি এবং এর
উদপাদনের মধ্যে যত কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে তা প্রার্থনা করছি। আর আমি আপনার
আশ্রয় গ্রহণ করছি এর অকল্যাণ থেকে এবং এর উৎপাদনের মধ্যে যা কিছু
অকল্যাণলকর রয়েছে তা থেকে’।[81]
পোষাক
পরিধানকালে নিম্নোক্ত দো‘আও বর্ণিত হয়েছে,الْحَمْد لِلَّهِ الَّذِيْ
كَسَانِيْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْر حَوْل مِنِّيْ وَلاَ قُوَّة،
‘সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাকে বিনা শ্রমে ও শক্তি প্রয়োগ ব্যতীত
এই পোষাক পরিধান করিয়েছেন এবং রূযী দান করেছেন’।[82]
অন্যকে
নতুন পোষাক পরিহিত দেখলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিম্নোক্ত দো‘আ করতেন,الْبَسْ
جَدِيْداً وَعِشْ حَمِيْداً وَمُتْ شَهِيْداً وَيَرْزُقُكَ اللهُ قُرَّةَ
عَيْنٍ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، ‘নতুন পোশাক পর, প্রশংসিতভাবে জীবন
যাপন কর, শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ কর এবং আল্লাহ তোমাকে পৃথিবীতে এবং আখিরাতে
পরিপূর্ণ শান্তি ও আনন্দ দান করুন’।[83]
৪. দুপুরে বিশ্রাম বা কায়লূলা করা : দুপুরে
বিশ্রাম করা উত্তম। এতে কর্মক্লান্তি দূর হয়। শরীর ও মনে সতেজতা ফিরে আসে।
কায়লূলা করার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ হচ্ছে- قِيْلُوْا فَإِنَّ
الشَّيَاطِيْنَ لاَ تَقِيْلُ ‘তোমরা কায়লূলা কর, কেননা শয়তান কায়লূলা করে
না’।[84] কায়লূলা করার সময় হচ্ছে দুপুরের পর। আনাস (রাঃ) বলেন, كُنَّا
نُبَكِّرُ بِالْجُمُعَةِ، وَنَقِيْلُ بَعْدَ الْجُمُعَةِ- ‘আমরা জুম‘আর
দিনে আগেভাগে মসজিদে গমন করতাম এবং জুম‘আর পরে কায়লূলা করতাম’।[85] সাহল
ইবনে সা‘দ (রাঃ) বলেন, مَا كُنَّا نَقِيلُ وَلاَ نَتَغَدَّى إِلاَّ بَعْدَ
الْجُمُعَةِ- ‘আমরা জুম‘আর পরে ব্যতীত দুপুরের খাবার গ্রহণ করতাম না এবং
কায়লূলাও করতাম না’।[86]
৫. হালাল উপার্জন করা : হালাল জীবিকা অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যিক। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ- ‘হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
তিনি আরো বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি, সেখান থেকে পবিত্র বস্ত্ত সমূহ ভক্ষণ কর। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই দাসত্ব করে থাক’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)। অন্যত্র তিনি বলেন,فَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلاَلاً طَيِّبًا وَاشْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ- ‘অতএব আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তার মধ্যে বৈধ ও পবিত্র খাদ্য তোমরা ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদতকারী হয়ে থাক’ (নাহল ১৬/১১৪)।
আর হালাল জীবিকা উপার্জনের জন্য মুমিন দিনের বেলায় চেষ্টা করবে। আল্লাহ বলেন,فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘অতঃপর যখন ছালাত শেষ হবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (জুম‘আ ১০)।
হালাল
উপায়ে জীবিকা উপার্জনের জন্য হাদীছে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,لَنْ تَمُوتَ نَفْسٌ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا، فَاتَّقُوا اللهَ
وَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ، وَلاَ يَحْمِلَنَّكُمُ اسْتِبْطَاءُ
الرِّزْقِ أَنْ تَطْلُبُوهُ بِمَعَاصِي اللهِ، فَإِنَّهُ لاَ يُدْرَكُ مَا
عِنْدَ اللهِ إِلاَّ بِطَاعَتِهِ- ‘নিশ্চয়ই কোন প্রাণী মরবে না যতক্ষণ না
সে তার রূযী পূর্ণভাবে প্রাপ্ত হবে। অতএব সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং
সম্পদ উপার্জনে উত্তম (অর্থাৎ বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর। প্রাপ্য রিযিক
পৌঁছতে দেরী হওয়া যেন তোমাদেরকে তা অন্বেষণে অন্যায় পথ অবলম্বনে প্ররোচিত
না করে। কেননা আল্লাহর নিকটে যা রয়েছে, সেটা তাঁর আনুগত্য ব্যতীত লাভ করা
যায় না’।[87]
৬. হাট-বাজারে গমন ও কেনাকাটা : বিক্রেতা তার পণ্য বিক্রি করতে এবং ক্রেতা প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে বাজারে গমন করে। ফলে সেখানে সবাই থাকে ব্যতিব্যস্ত। তাছাড়া বাজার উদাসীনতা, দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ, ঝগড়া-বিবাদ, প্রতারণা, মিথ্যাচার ও খেয়ানতের স্থান। কিন্তু মানুষকে প্রয়োজনে হাট-বাজারে যেতেই হয়। তবে সেটা খুব ভাল জায়গা নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ أَسْوَاقُهَا ‘আল্লাহ তা‘আলার কাছে সর্বাধিক প্রিয় জায়গা হ’ল মসজিদসমূহ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হ’ল বাজারসমূহ’।[88] এজন্য সেখানে অনর্থক সময় ব্যয় করা এবং আড্ডা দেওয়ার জন্য অবস্থান করা সমীচীন নয়। সালমান (রাঃ) বলেন,لاَ تَكُوْنَنَّ إِنِ اسْتَطَعْتَ أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ السُّوْقَ وَلاَ آخِرَ مَنْ يَخْرُجُ مِنْهَا فَإِنَّهَا مَعْرَكَةُ الشَّيْطَانِ وَبِهَا يَنْصِبُ رَايَتَهُ. ‘তুমি যদি পার, তাহ’লে সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী এবং সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থানকারী হবে না। কারণ বাজার শয়তানের আড্ডাস্থল, সেখানে সে নিজের ঝান্ডা গাড়ে’।[89] মায়ছাম নামক জনৈক ছাহাবী বলেন,بَلَغَنِيْ أَنَّ الْمَلَكَ يَغْدُو بِرَايَتِهِ مَعَ أَوَّلِ مَنْ يَغْدُو إِلَى الْمَسْجِدِ فَلاَ يَزَالُ بِهَا مَعَهُ حَتَّى يَرْجِعَ يَدْخُلُ بِهَا مَنْزِلَهُ وَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَغْدُو مَعَ أَوَّلِ مَنْ يَغْدُو بِرَايَتِهِ إِلَى السُّوْقِ فَلَا يَزَالُ بِهَا حَتَّى يَرْجِعَ فَيُدْخِلَهَا مَنْزِلَهُ- ‘আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, যে ব্যক্তি সকালে প্রথমে মসজিদে গমন করে একজন ফেরেশতা তার ঝান্ডা নিয়ে ঐ ব্যক্তির সাথে থাকে, যতক্ষণ সে বাড়ীতে ফিরে না আসে। আর যে ব্যক্তি তার ঝান্ডা নিয়ে সকালে প্রথম বাজারে প্রবেশ করে শয়তান তার সাথে থাকে যতক্ষণ সে বাড়ী ফিরে না আসে’।[90] তাই বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কতিপয় আদব মেনে চলা যরূরী। যথা-
১.
আল্লাহর যিকর করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে
বলবে,لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ
وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ
الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ- (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য
নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁর। তিনি
জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁর হাতেই
সকল কল্যাণ। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী)। আল্লাহ তার জন্য দশ লক্ষ নেকী
লিখবেন, দশ লক্ষ গোনাহ মোচন করবেন এবং তার দশ লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন’।[91]
২. শোরগোল ও উচ্চবাচ্য পরিহার করা।[92] ৩. বাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করা। ৪. ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষী বা লেখার মাধ্যমে সুদৃঢ় করা (বাক্বারাহ ২/২৮২) এবং ওয়াদা পূর্ণ করা (মায়েদাহ ৫/১)। ৫. ক্রয়-বিক্রয়ে উদার ও নম্র হওয়া।[93] ৬. সততা বজায় রাখা এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা।[94] ৭. ক্রয়-বিক্রয়ে অধিক কসম খাওয়া পরিহার করা।[95] ৮. ধোঁকা-প্রবঞ্চনা, ভেজাল ও অত্যধিক মুনাফা লাভ করা থেকে বিরত থাকা।[96] ৯. ওযন ও পরিমাপে কম না দেওয়া (মুতাফফিফীন ১-৩)। ১০. সূদী কারবার থেকে বিরত থাকা।[97] ১১. বাজারকে হারাম পণ্য ক্রয়-বিক্রয় থেকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করা। ১২. চড়া মূল্য চেয়ে ক্রেতাকে প্রতারিত না করা।[98] ১৩. আত্মসাৎকৃত ও চোরাই দ্রব্য ক্রয় থেকে দূরে থাকা (নিসা ৪/২৯)। ১৪. মহিলাদের থেকে চোখ নত রাখা, তাদের সাথে সংমিশ্রণ ও তাদের ভিড় এড়িয়ে চলা (নূর ২৪/৩০-৩১)। ১৫. বেচা-কেনায় লিপ্ত হয়ে আল্লাহর যিকর ও ছালাত থেকে দূরে না থাকা (নূর ২৪/৩৭)।
৭. রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা : মানুষ প্রয়োজনে বাড়ী থেকে বের হয় এবং রাস্তায় চলাচল করে। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা মুমিনের জন্য কর্তব্য। ক. দৃষ্টি অবনমিত রাখা (নূর ২৪/৩০-৩১)। খ. এদিক সেদিক না তাকানো। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,كَانَ إِذَا مَشَى لَمْ يَلْتَفِتْ ‘তিনি পথে চলার সময় এদিক সেদিক তাকাতেন না’।[99] গ. সতর্কতার সাথে পথ চলা, যাতে অন্যের বা নিজের কোন ক্ষতি না হয়।[100] ঘ. অহংকার পরিহার করে বিনয়ের সাথে পথ চলা (ইসরা ১৪/৩৭; ফুরকান ২৫/৬৩)। ঙ. মধ্যম গতিতে পথ চলা (লোকমান ৩১/১৯)। চ. মহিলারা রাস্তার মধ্যস্থল দিয়ে না চলে একপার্শ্ব দিয়ে চলবে।[101]
ছ. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করা।[102]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِىْ بِطَرِيْقٍ وَجَدَ غُصْنَ
شَوْكٍ عَلَى الطَّرِيقِ فَأَخَّرَهُ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ-
‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে
তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তা‘আলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে
দিলেন’।[103] তিনি আরো বলেন,لَقَدْ رَأَيْتُ رَجُلاً يَتَقَلَّبُ فِى
الْجَنَّةِ فِىْ شَجَرَةٍ قَطَعَهَا مِنْ ظَهْرِ الطَّرِيْقِ كَانَتْ
تُؤْذِى النَّاسَ- ‘আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। যে
(পৃথিবীতে) রাস্তার মধ্য হ’তে একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি
মুসলিমদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল’।[104] তিনি অন্যত্র বলেন,مَرَّ رَجُلٌ بِغُصْنِ
شَجَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ طَرِيْقٍ فَقَالَ وَاللهِ لأُنَحِّيَنَّ هَذَا عَنِ
الْمُسْلِمِيْنَ لاَ يُؤْذِيْهِمْ. فَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ- ‘এক ব্যক্তি
রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলার সময় একটি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের শাখা দেখে বলে,
আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই মুসলমানদের যাতায়াতের পথ থেকে এটা সরিয়ে ফেলব,
যাতে তা তাদের কষ্ট না দেয়। ফলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়’।[105]
আবূ
বারযা (রাঃ) বলেন যে, আমি বললাম,يَا نَبِىَّ اللهِ عَلِّمْنِىْ شَيْئًا
أَنْتَفِعُ بِهِ قَالَ اعْزِلِ الأَذَى عَنْ طَرِيْقِ الْمُسْلِمِيْنَ ‘হে
আল্লাহর নবী (ছাঃ)! আপনি আমাকে এমন একটি জিনিস শিক্ষা দিন, যার দ্বারা
উপকৃত হ’তে পারি। তিনি বললেন, মুসলমানদের যাতায়াতের রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক
বস্ত্ত সরিয়ে দিবে’।[106]
জ. সালাম দেওয়া[107] ও সালামের উত্তর দেওয়া।[108] ঝ. পথহারাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়া।[109]
৮. মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করা : মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করা আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ বলেন, وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ- ‘তুমি তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হও’ (শু‘আরা ২৬/২১৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,وَإِنَّ اللهَ أَوْحَى إِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتَّى لاَ يَفْخَرَ
أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلاَ يَبْغِىْ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ- ‘আল্লাহ তা‘আলা
আমার প্রতি অহী করেছেন যে, তোমরা পরস্পর বিনয় প্রদর্শন করবে, যাতে কেউ কারো
উপর বাড়াবাড়ি ও গর্ব না করে’।[110]
আল্লাহ
মানুষকে যেসব নে‘মত দান করেছেন, তন্মধ্যে উত্তম চরিত্র অন্যতম। হাদীছে
এসেছে, ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষকে প্রদত্ত সর্বোত্তম
জিনিস কি? তিনি বলেন, উত্তম স্বভাব-চরিত্র’।[111]
ক্বিয়ামতের
দিন মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হবে তার উত্তম চরিত্র। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,مَا شَىْءٌ أَثْقَلُ فِىْ مِيْزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ مِنْ خُلُقٍ حَسَنٍ وَإِنَّ اللهَ لَيَبْغَضُ الْفَاحِشَ
الْبَذِىءَ ‘ক্বিয়ামত দিবসে মুমিনের দাড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে
অধিক ভারী কোন জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল ও কর্কশভাষীকে
ঘৃণা করেন’।[112]
উপসংহার : পার্থিব জীবন আল্লাহর দেওয়া নে‘মত। এখানকার কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরকালে জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের করণীয় হবে এ জীবনে সাধ্যপক্ষে নেক আমলের মাধ্যমে পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের চেষ্টা করা। জীবনের প্রতিটি দিন তাই যথাযথভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা যরূরী। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে দিন অতিবাহিত করার তাওফীক দিন-আমীন!
[1]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮, সনদ হাসান।
[2]. বুখারী তরজমাতুল বাব নং-১০।
[3]. তিরমিযী হা/২৬৪৬; ইবনু মাজাহ হা/২২৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৯৮।
[4]. আবুদাঊদ হা/৩৬৪১; মিশকাত হা/২১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৯৭।
[5]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান; মিশকাত হা/২৫৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭২৭।
[6]. বুখারী হা/৩৪৬১; মিশকাত হা/১৮৭, ‘ইলম’ অধ্যায়।
[7]. মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৫৮।
[8]. মুসলিম হা/১৮৯৩; মিশকাত হা/২০৯।
[9]. বুখারী হা/৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০; মুসলিম হা/২৪০৬; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৭৫।
[10]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৮৫।
[11]. আবুদাউদ হা/৩৭৬৭; ইরওয়া হা/১৯৬৫।
[12]. আবুদাউদ হা/৩৭৬৭; ইবনু মাজাহ হা/৩২৬৪; তিরমিযী হা/১৮৫৮।
[13]. মুসলিম হা/২০২০; মিশকাত হা/৪১৬২।
[14]. বুখারী হা/৫৩৭৬, তিরমিযী হা/১৮০৫; মিশকাত হা/৪১৫৯, ৪২১১।
[15]. আবুদাউদ হা/৩৭৬৭; মিশকাত হা/৪২০২ ‘খাওয়া-দাওয়া’ অধ্যায়; ছহীহাহ হা/৩৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩২৩; ইরওয়া হা/১৯৬৫।
[16]. তিরমিযী হা/১৮৫৮; ইবনু মাজাহ হা/৩২৬৪; ছহীহাহ হা/১৯৮।
[17]. মুসলিম হা/২০৩৪; আবুদাউদ হা/৩৮৪৫।
[18]. মুসলিম হা/২০৩৪; তিরমিযী হা/১৮০৩।
[19]. আবুদাউদ হা/৩৭৬৪; মিশকাত হা/৪২৫২।
[20]. বুখারী হা/৫৬৩১; ছহীহাহ হা/৩৮৭।
[21]. বুখারী হা/১৫৩; মিশকাত হা/৪২৭৭।
[22]. মুসলিম হা/২০২৬; মিশকাত হা/৪২৬৭।
[23]. আবুদাউদ হা/৩৭৩০; ইবনু মাজাহ হা/৩৩২২; মিশকাত হা/৪২৮৩ ‘পান করা’ অধ্যায়; ছহীহাহ হা/২৩২০।
[24]. তিরমিযী হা/২৩৮০।
[25]. বুখারী হা/৫৩৯৮; মিশকাত হা/৪১৬৮।
[26]. মুসলিম হা/২৭৩৪; তিরমিযী হা/১৮১৬; মিশকাত হা/৪২০০।
[27]. আবুদাউদ হা/৩৭৩০; তিরমিযী হা/৩৪৫৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৩২২।
[28]. আবুদাউদ হা/৪০২৩; তিরমিযী হা/৩৪৫৮; ইবনু মাজাহ হা/৩২৮৫; মিশকাত হা/৪৩৪৩, সনদ ছহীহ।
[29]. আবুদাউদ হা/৩৮৫১; মিশকাত হা/৪২০৭; ছহীহাহ হা/৭০৫।
[30]. আবুদাউদ, হা/৩৮৫০; তিরমিযী হা/৩৪৫৭; ইবনু মাজাহ হা/৩২৮৩; মিশকাত হা/৪২০৪; যঈফুল জামে‘ হা/৪৪৩৬।
[31]. বুখারী হা/৫৪৫৮; আবুদাউদ হা/৩৮৪৯; মিশকাত হা/৪১৯৯।
[32]. মুসলিম হা/২০৫৫; আহমাদ হা/২৩৮৬০।
[33]. মুসলিম হা/২০৪২; আবুদাউদ হা/৩৭২৯; মিশকাত হা/২৪২৭।
[34]. তাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত্ব; ছহীহাহ হা/২৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯৩৫।
[35]. বুখারী হা/৮৯৭; মিশকাত হা/৫৩৯।
[36]. বুখারী হা/১৩৫।
[37]. মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৮৪।
[38]. মুসলিম হা/২৩২; নাসাঈ হা/৮৫৬; ছহীহুল জামে হা/৬১৭৩।
[39]. বুখারী হা/৩৭৪; মুসলিম হা/৩৬৮; আবু দাউদ হা/৩২১।
[40]. আহমাদ হা/১৭৮৪৫; আবু দাউদ হা/৩৩৪; ইরওয়া হা/১৫৪, সনদ ছহীহ।
[41]. বুখারী হা/১৪২; মুসলিম হা/৩৭৫; মিশকাত হা/৩৩৭।
[42]. ইবনু মাজাহ হা/২৯৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭১৪।
[43]. আবুদাউদ হা/৩০; তিরমিযী হা/৭; ইবনু মাজাহ হা/৩০০; মিশকাত হা/৩৫৯ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ।
[44]. ইবনু মাজাহ হা/৩০১; মিশকাত হা/৩৭৪; যঈফুল জামে‘ হা/৪৩৭৮।
[45]. তিরমিযী হা/২০; ইবনু মাজাহ হা/৩৩০১, সনদ ছহীহ।
[46]. মুসলিম হা/২৬৪; আবুদাউদ হা/৯; মিশকাত হা/৩৩৪।
[47]. বুখারী হা/১৪৮; মিশকাত হা/৩৩৫।
[48]. আবুদাঊদ হা/২২; নাসাঈ হা/৩০; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৬; মিশকাত হা/৩৭১, সনদ ছহীহ।
[49]. বুখারী হা/২২৪-২৬; মুসলিম হা/২৭৩; মিশকাত হা/৩৬৪।
[50]. আবুদাঊদ হা/২৬; ইবনু মাজাহ হা/৩২৮; মিশকাত হা/৩৫৫, সনদ হাসান।
[51]. বুখারী হা/২৩৯; মুসলিম হা/২৮২; তিরমিযী হা/৬৮; নাসাঈ হা/৫৭-৫৮; মিশকাত হা/৩৫৩।
[52]. দারাকুৎনী হা/৪৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০২; ইরওয়া হা/২৮০।
[53]. আবুদাঊদ হা/৩৩; মিশকাত হা/৩৪৮, সনদ ছহীহ।
[54]. আবুদাঊদ হা/৪৫; মিশকাত হা/৩৬০, সনদ হাসান।
[55]. তিরমিযী হা/১৯; নাসাঈ হা/৪৬; ইরওয়া হা/৪২; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৪৪৩।
[56]. মুসলিম হা/২৬২; আবুদাউদ হা/৭; তিরমিযী হা/১৬; মিশকাত হা/৩৩৬; ছহীহাহ হা/৩৩১৬।
[57]. মুসলিম হা/২৬২; নাসাঈ হা/৪০; ইবনু মাজাহ হা/৩১৩; মিশকাত হা/৩৩৬, ৩৪৭, ৩৭৫।
[58]. আবুদাঊদ হা/৪০; নাসাঈ হা/৪৪, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৭।
[59]. ইরওয়াউল গালীল হা/৪২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[60]. আবুদাঊদ হা/১৬৬-৬৮; নাসাঈ হা/১৩৪-৩৫; ইবনু মাজাহ হা/৪৬১; মিশকাত হা/৩৬১, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ।
[61]. আবুদাঊদ হা/১৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৫৫; ছহীহাহ হা/৩১২০।
[62]. মুসলিম হা/৬২৭।
[63]. আহমাদ হা/২৪২০৩; নাসাঈ হা/৫; ইরওয়া হা/৬৫; মিশকাত হা/৩৮১; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৯৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/২০২।
[64]. বাযহাক্বী হা/১৬১, বাযযার হা/৬০৩; ছহীহ তারগীব হা/২১৫।
[65]. বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/২১১৯, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯৩৯।
[66]. মুসনাদ বাযযার হা/৬৯৫২; সিলসিলাহ ছহীহাহ হা/১৫৫৬।
[67]. আহমাদ হা/১৬০০৭; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩৭৬।
[68]. মুসলিম হা/২০১৮; আবুদাউদ হা/৩৭৬৫; মিশকাত হা/৪১৬১।
[69]. নূর ২৪/৬১; ছহীহ ইবুন হিববান, হা/৪৯৯; আবুদাউদ হা/২৪৯৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২১, সনদ ছহীহ।
[70]. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৫৩৫; আদাবুল মুফরাদ হা/১০৫৫, সনদ হাসান।
[71]. মুসলিম হা/৯১; আবুদাউদ হা/৪০৯২; তিরমিযী হা/১৯৯৯; মিশকাত হা/৫১০৮।
[72]. বুখারী হা/৫৬৩৩, ৫৮৩১; আবুদাউদ হা/৩৭২৩; তিরমিযী হা/১৮৭৩।
[73]. আবুদাঊদ হা/৪০৯৮; মিশকাত হা/৪৪৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৯৫।
[74]. বুখারী হা/৫৮৮৫; মিশকাত হা/৪৪২৯।
[75]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; মিশকাত হা/৪৩৪৬, সনদ হাসান।
[76]. মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৭৩।
[77]. মুসনাদ আহমাদ হা/১৯৪৯৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০১৮।
[78]. তিরমিযী হা/১৭৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৭৯; মিশকাত হা/৪৩৩০।
[79]. আবুদাউদ হা/৪১৪১; মিশকাত হা/৪০১, সনদ ছহীহ।
[80]. বুখারী হা/৫৮৫৫; তিরমিযী হা/১৭৭৯; মিশকাত হা/৪৪১০।
[81]. আবুদাউদ হা/৪০২০; তিরমিযী হা/১৭৬৭; মিশকাত হা/৪৩৪২, সনদ ছহীহ।
[82]. আবুদাঊদ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/৪১৪৯।
[83]. ইবনু মাজাহ হা/৩৫৫৮; ছহীহাহ হা/৩৫২।
[84]. ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৩১; ছহীহাহ হা/১৬৪৭।
[85]. বুখারী হা/৯০৫; মুসলিম হা/৮৫৯; মিশকাত হা/১৪০২।
[86]. বুখারী হা/৯৩৯; মুসলিম হা/৮৫৯; মিশকাত হা/১৪০২।
[87]. বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান হা/১০৩৭৬; মিশকাত হা/৫৩০০; ছহীহুল জামে‘ হা/২০৮৫; ছহীহাহ হা/২৮৬৬।
[88]. মুসলিম হা/৬৭১; মিশকাত হা/৬৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৭।
[89] . মুসলিম হা/২৪৫১।
[90]. আবু নু‘আইম, মা‘রিফাতিছ ছাহাবাহ; ছহীহ আত-তারগীব হা/৪২২, মাওকূফ ছহীহ।
[91]. তিরমিযী হা/৩৪২৮-২৯; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৫; মিশকাত হা/২৪৩১, সনদ ছহীহ।
[92]. বুখারী হা/২১২৫; মিশকাত হা/৫৭৫২, ৫৭৭১।
[93]. বুখারী হা/২০৭৬; ইবনু মাজাহ হা/২২০৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৪৯৫।
[94]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪৬; ইরওয়া হা/১৩২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭০৫।
[95]. মুসলিম হা/১৬০৭; নাসাঈ হা/৪৪৬০; ইবনু মাজাহ হা/২২০৯; মিশকাত হা/২৮৬০।
[96]. মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০।
[97]. আহমাদ হা/৩৭২৫; ছহীহাহ হা/২৩২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৮৯-৯০।
[98]. বুখারী হা/৬৯৬৩; মুসলিম হা/১৫১৬; ইবনু মাজাহ হা/২১৭৩।
[99]. হাকেম হা/৭৭৯৪; ছহীহাহ হা/২০৮৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৮৬।
[100]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০।
[101]. আবুদাঊদ হা/৫২৭২; ইবনু হিববান, ছহীহাহ হা/৮৫৬।
[102]. মুসলিম হা/৩৫; আবুদাঊদ হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫।
[103]. বুখারী হা/৬৫২, ২৪৭২; মুসলিম হা/১৯১৪।
[104]. মুসলিম হা/১৯১৪; মিশকাত হা/১৯০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৩৪।
[105]. মুসলিম হা/১৯১৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৯৭৬।
[106]. মুসলিম হা/২৬১৮; মিশকাত হা/১৯০৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৯৬৮।
[107]. বুখারী হা/৬২৩১-৩৪; মুসলিম হা/২১৬০; আবুদাঊদ হা/৫১৯৯; মিশকাত হা/৪৬৩২-৩৩।
[108]. মুসলিম হা/২১৬২; আবুদাঊদ হা/৫০৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৪১।
[109]. বুখারী হা/২৮৯১; ছহীহাহ হা/১০২৫।
[110]. মুসলিম হা/২৮৬৫; আবুদাঊদ হা/৪৮৯৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭২৫; ছহীহাহ হা/৫৭০।
[111]. হাকিম হা/৭৪৩০; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৩৬; ছহীহাহ হা/৪৩৩; মিশকাত হা/৪৫৩২।
[112]. তিরমিযী হা/২০০২; মিশকাত হা/৫০৮১; ছহীহাহ হা/৮৭৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩৫।